আমি মোশাররফ করিম এর ফ্যান। ভিষণ ফ্যান।
তার এত বাজাইরা কাজের ভিতরেও ভার্সাটাইল অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ।
বাংলাদেশে ভাল অভিনেতা হইলে সমস্যা আছে। তারে দিয়া একধারে আবরা জাবরা কাজ করাইয়া পচাইয়া ফেলা হয়। হুমায়ুন ফরিদীর মত অভিনেতাকে বাংলা সিনেমায় নাচাইয়া কুদাইয়া রসা বের করে ফেলা হইসে। সমস্যা নাই, মোশাররফ করিমেরও রসা বের করা হচ্ছে। তার কাজ একসময় সে নিজেই ভুলে যাবে এমন পথের দিশা দেখা যাচ্ছে।
যাই হোক মোশাররফ করিম অভিনীত শোয়া বাবা নামের একটা নাটক দেখসিলাম। বেশি ভালো জাতের কিছু না। তবে তাতে শুরুর দিকে একটা অংশ আছে খুবই ইন্টারেস্টিং। সেটা নিয়ে বলি
আঞ্চলিক উচ্চারনে মোশাররফ চাকরীর ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। দুই আদম তাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে
- সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কী
- যে আগ্নে গিরি গুমায়ে তাকে, তাতে সুপ্ত আগ্নেগিরি বলে যেমন, বিসুবিয়াস।
- বানান করেন লেফটেন্যান্ট, ডায়রিয়া
ঠিক ঠাক বানান করা হল
- "গুঞ্জরিয়া আসে অলি, কুঞ্জে কুঞ্জে ধেয়ে" এর পরের লাইন কী ?
- তারা পুলের উপর গুমিয়ে পরে, পুলের মদু কেয়ে।
- এই গানের রচয়িতা কে ?
- ডি এল রায়
- পুরা নাম বলেন
- ধিজেন্দ্রলাল রায়
- বনফুল কার ছদ্মনাম ?
- বলাইছাঁদ মুকোপাদ্দায়
- ঘানার রাজধানীর নাম কী ?
- আক্রা
তারপরেই মোশাররফ ক্ষেপে যায় । চিল্লায়া বলতে থাকে
আমারে নিতেন না, চাকরী টা অইন্য কাউরে দি ফালাইসেন ? বইলতে সমস্যা কী ?এত নাটক করেন কেন ? ইত্যাদি
কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, জেনারেল নলেজ, এইটাইপের কিছু জিনিস্পাত্তি আছে এই দেশে চাকরী পাবার জন্য পড়ে লোকজন। এইগুলা জানা শুধু মাত্র চাকরী পাবার জন্যই । তবে চাকরী তাতে হবেই এমন গ্যারেন্টি নাই। এই দেশে আসলে কি জানলে যে কি হবে সেটারই কোন লাইন নাই।
শিক্ষা এই দেশে শুধু মাত্র জীবিকার লক্ষ্যপূরণের অস্ত্র। তাই মুখস্ত, ঠোটস্ত, ভাজা ভাজা ইত্যাদি পন্থায় কিছু গবদা জিনিস পত্র পেটে ভরে নিতে হয়। অবজেকটিভ, সৃজনশীল নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট টিউবের ভেতরে পোলাপাইন ভরে ঝাঁকানো হয়। সব এক্সপেরিমেন্ট ই ফেল করে কারন শিক্ষা ব্যাবস্থাটাই দাঁড়ায়া আছে শর্টকাটের উপরে। পোলাপাইন কম পইড়া পাশ করতে চায়। টিচার ফাঁকি মাইরা পয়শাওয়ালা হইতে চায়। বাপ মা পীছের রাস্তায় টেকা দিয়া পোলাপাইনের ফিউচার কিনতে চায়। শুধু এক গোষ্টির মুখে নেপালের রাজধানী নেপচুন দেইখা সুশীল আস্ফালন করে কি হবে। ইগনোর দেম, এ্যাজ ইউ ইগনোরড দা সিস্টেম।
১০ বছর স্কুলে পড়ার পর এস এস সিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছেলে পিথাগোরাস কে উপন্যাসিক বললে আমরা সবাই বলি - কয় কি হালায় !!
বোঝাই যায় এই ছেলে কোনো একটা ফল্টি সিস্টেমের এ্যাডভান্টেজ নিয়ে মার্কশীটে ধনী হয়ে গেলেও মাথায় বিদ্যা ভরতে ব্যার্থ হইসে।
কিন্তু বুয়েট থেকে পাশ করা, কয়েক বস্তা কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়া, বিসিএস ক্যাডার ইঞ্জিনিয়ার যখন বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের আশে পাশে ঘুরে, ভয়ে দাম জিজ্ঞেস করে না। আর নকল করে মেট্রিক পাশ কন্ট্রাক্টার সরকারী কন্সট্রাকশানে লোহার বদলে বাশ দিয়ে ঢালাই দিয়ে, বুক ফুলায়ে ৬ হাজার টাকায় ইলিশ মাছ কেনে। তখন কেউ বলে না - কয় কি হালায় !!!
চমতকার এই দেশ।
সার্টিফিকেটের শিক্ষায় ভরসা রাখারও উপায় নাই, ভরসা হারালেও দোষ।
বাচ্চা পোলাপাইনের কি দোষ। সমাজ দেখে সংখ্যা। সেটা জিপিএ'র ৩/৪/৫ হোক আর উপার্জনের পীছনের শূন্য হোক। যত বেশি, তত হাতে তালি।
আমার বেতনে কয়েকটা "০" কম হলে আমি নিজেও এখন এত ব্রড স্পেক্ট্রামের কথা বার্তা বলতাম না। চিন্তা করতাম কেমনে কনি মাইরা আরেকজনরে ধাক্কাইয়া আগে বাসে উঠা যায়। নেপালের রাজধানীর মায়েরে বাপ। নিজের দেশের রাজধানীর এই মাথা থেকে ঐ মাথায় বাসে কইরা যাইতে বাপের নাম ভুইলা যাইতে হয়। এই দেশে কর্যকর শিক্ষা হইল একটাই-
নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
কোনো সিলেবাসে নাই কিন্তু আসলে আমরা এটাই শিখি, শেখাই, শিখাচ্ছি।
সেদিন আর বেশি দুরে নাই, সারা দেশ একসাথে বলবে
I am GPA five !!!!!!
No comments:
Post a Comment