সে আসে ধীরে
এই নামে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই আছে।
যার কথা বলা হবে, সে কোন বই না, সে আসলেই ধীরে ধীরে আসছে। তার নাম ? তার আসলে নাম টামের বালাই নাই। থাকলেও আমি জানি না, তবে তার ব্যাপারে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করতে পারি।তার চাল চলন খুবই মিডিওকার। অনেকটা প্রতিদিন যারা গুতাগুতি করে, আবাবিল, সালসাবিল, অনাবিল মার্কা বাসে ঠুঁসে অফিসে যাবার জন্য ঘর থেকে বের হয়। বেঢপ ভুড়ির অনেক নীচে মিস-ম্যাচ কালারের প্যান্ট পরে, পায়ে থাকে অযাচিত চুক্ষা, লম্বা নাকের আর্টিফিশিয়াল লেদারের সস্তা ব্র্যান্ডের জুতা। বাসে আরেকজনের কাধেঁ মাথা রেখে হা করে ঘুমায়। অফিসে গিয়ে কাজের চেয়ে গল্প বেশি করে, বসকে ফাঁকি দিয়ে আগে আগে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। বাজারে গিয়ে মুলামুলি করে সব্জি কিনে, রাতে বাসায় এসে টিভিতে খবর দেখে। ঘরে ভাত তরকারী খায়। এইধরনের যে কারো সাথে তার স্বভাব মেলানো যাবে। বউ এর সাথে গাউসিয়া বা নিউমার্কেটের অস্থায়ী দোকানে শপিং করার সময় যারা মুখ বাকা করে হাতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ এর গাদা নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাটে সেই সব লোকদের সাথে তার খুব মিল, আচার আচরণে। সে খুবই ফ্যামিলি পার্সন।তবে সে কোনো পার্সন না। সে একটা মশা।
সে খুব হেলে দুলে ধীরে সুস্থে এসে ঘরে ঢুকে একটা বডি স্প্রে'র বোতলের মাথায় বসলো। এই জাতীয় উচা জায়গায় বসার একটা আরাম আছে।ভিউটা ভালো দেখায়। কাজ শুরু করার আগে একটু জিরায়ে টিরায়ে নেয়া তার অভ্যাস। তাড়া তো নাই।মাত্র রাত বাজে সাড়ে দশটা।মানুষ এখনো খায়ও না। রাতের খাওয়া শেষ না করলে তো ঘুমানোর প্রশ্নও আসে না। আর জেগে থাকা মানুষকেতো গিয়ে কাঁধে টোকা মেরে বলা যায় না-
"ব্রাদার একটু কম নড়াচড়া করেন। আমার ওয়াইফ আপনার ঘাড়ে কুচ করে হুল ফুটায়ে দিয়ে চু চু করে একটু রক্ত চুষে খাবে। ইয়ে মানে সামনে আমাদের বেবী হবে তো। আপনাদের ভাবী আবার প্রেগনেন্ট! ব্লাড না খাইলে তো সে আবার এ্যামনেশিয়া, ম্যাল নিউট্রেশানে সাফার করবে, বুঝেন না ? নো হার্ড ফিলিং। আপনি রিচ ম্যান, এইটুক ব্লাড খাইয়া ফেললে আপনার তো লস নাই। হালকা যে একটু পেইন পাবেন, সেইটার জন্য সরি বস। তবে কথা একটা আছে, আমার ওয়াইফ আপনাকে সাক করে যাবার পর, সরি! আই মীন আপনার ব্লাড সাক করে উড়ে যাবার পর, ওই জায়গায় চুলকায়ে যে একটা আরাম পাবেন না বস ! ট্রাই করে দেইখেন, ঠিকাসে ? "
জেগে থাকা মানুষের কানের কাছে পোঁওওওওও করে ডিস্ট্র্যাক্ট করার কোনো ফায়দা নাই। সে ঠিকই যেই জায়গায় লেডিসরা সাক করতে বসবে সেই জায়গায় ফ্যাটাশ করে থাপ্পড় বসায়ে চ্যাপ্টা করে ফেলবে। এর আগে জেগে থাকা পাবলিকের ব্লাড সাক করতে গিয়ে তার দুই বউ মারা গেছে। আর তার জিগরী দোস্ত মারা গেছে, বউকে নিয়ে ডিনার ডেটে ভাল ট্রিট দেয়ার জন্য কলেজ হোস্টেলে গিয়ে, রাত আটটায়। এপ্লাইড ক্যামিস্ট্রির থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্টের কানের কাছে পোঁওওওওও মারাইতে গেসিলো। বউ এর জন্য স্পট সিলেক্ট করসে পায়ের গোড়ালিতে। ভাবসে, সেইরকম ডিনার করাবে বউকে। কিসের কী! কে জানতো, সেই ছেলে আবার নার্ড টাইপ। তিনদিন পরে ছিল তার মিডটার্ম। রাত আটটায় পড়তে বসা সেই ছেলে, চোখের পলকে দুই হাতে কানের পাশে তালি মেরে তার দোস্তরে চ্যাপ্টা বানায়া, তারপরে বাম হাতের চড়ে বন্ধুর বউরেও ভর্তা করে ফেললো। বন্ধুর বউ এর পেট ফাটা ব্লাড চ্যাটকায়া লেগে থাকলো সেই পায়ের চামড়ায়। এক মিনিটের মাথায় তীব্র এক চুলকানী দিয়া বন্ধুর বউ এর ডেডবডিও চ্যাটকায়া মিশায়া ফেললো চামড়া আর নখের সাথে। শুনেই তার বমি পাইসিলো। সেই থেকে সে খুব হুঁশিয়ার। এখন থার্ড ওয়াইফের বেলায় তার রিস্ক নেয়ার কোনো ইচ্ছাই নাই। বউ কে বলেও আসছে, রেডি হয়ে আস্তে ধীরে আসতে।
বউ আসার আগে বডি স্প্রে'র বোতলের উপর বসে সে, মানে আমাদের মশা, আজকের ডাইনিং প্ল্যান টা আরেকবার চিন্তা করে।
মেনু খারাপ না।
ঘরে একটা মেইল, বয়স ৩৭ প্লাস কিছু একটা হবে। দেখে মনে হচ্ছে প্রাইভেট সার্ভিস করে। স্পোর্টস শর্টস আর টিশার্ট পরে ল্যাপটপে উপ্তা হয়ে আছে। ভ্যাদভ্যাদা টাইপ ডাইল ভাত খাওয়া ব্যাটা না। তাহলে লুঙ্গী পরে, চ্যাগায়ে বসে পেটের উপর গেঞ্জী উঠায়ে ব্যাক্কলের মতন বসে বসে টিভিতে বাংলা চ্যানেলে ঘুরে ঘুরে খবর বা টক শো দেখতো আর হাই তুলতো, কখন বাচ্চাটা ঘুমাবে আর লাইট নিভায়ে সে বউরে নিয়ে বিছানায় যাবে। এই লোক স্মার্ট। দেখলেই বোঝা যায় ভালোমন্দ খায়, এই টাইপ লোক মাঝে মাঝে ঘরেই হালকা পাতলা ড্রিংক করে ফেলে। বেশি না, এই দুই তিন পেগ ভদকা বা একটু হুইস্কি টুইস্কী খায় আরকী। তখন মশাদের বউদের যে কী খুশি লাগে। ব্লাড সাক করে ফিরে কয়েক ঘন্টা খুব হাই থাকে। রক্তের সাথে কিছুটা এলকো পেটে যায় তো। তখন তাদের মুডও খুব খোলে। রোমান্স, টোমান্স জমে। আজকে ড্রিংক করা পাবলিক কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। উপ্তা হয়ে ল্যাপটপে কি জানি দেখতেসে আর নীচের ঠোট কামড়াইতেসে। টেনশানে আছে নাকি ? টেনশানে থাকলে তো মুশকিল। অফিসের কাজ কর্ম বা অন্য কোনো ইশুতে টেনশানে থাকলে, এই মাল তো ঘুমাবে না সহজে। ডিনার করতে দেরী হয়ে যাবে, রিস্ক ও থেকে যাবে। ভদ্রলোকের ওয়াইফকে দেখে কিছুটা মনে জোর আসলো। ওয়াইফ পাজামা আর ঢোলা টিশার্ট পরা। কপাল ভালো পাজামা কিছুটা খাটো আছে। পায়ের দিকে এক বিঘতের মতো গোড়ালী দেখা যাচ্ছে। এতেই চলবে। এই টুকুতেই ৪/৫ টা মশা ফ্যামিলির ডিনার হয়ে যাবে। ভদ্রমহিলা ওভেনে তরকারীর বাটি গরম করে করে টেবিলে রাখতেসে, উড়ে গিয়ে একপাকে তাদের রাতের খাবারের মেনুটা দেখে আসা যায়। রাতের খাবারের উপর অনেক কিছু ডিপেন্ড করে। ভারী ঝাক্কাস টাইপ মেনু হলে, মানুষ খায়দায় বেশি। ঘুমটাও তখন গাঢ় হয় ভালো। তাদের ব্লাড খেতে সুবিধা বেশি। কিন্তু মেনু যদি হয় ডায়েট টাইপ, ঘুম ও হয় লাইট । ভেজাল বেশি।যাক। মহিলা তরকারী টেবিলে নিয়ে বসে পড়সে, মেয়েকে খাওয়াতে। মেয়ে পিচ্চি, বয়স হবে ৫/৬ বছর। গুল্লু গাল্লু টাইপ। সে, মানে মশা তাকে ভাল করে দেখে। বেবীদের ব্লাড হল বেস্ট ডীশ। এই গুল্লুটার হাতের থেকে চু করে এক টান দিলে, মনটা ভরে যাবে। ফুল প্লেট কাচ্চি খেয়ে বোরহানীর গ্লাসে চোঁ করে চুমুক দেয়ার পর মানুষ যেমন ঘ্রোঁত করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, তেমন ঢেকুর দিবে তার ওয়াইফ, বেবীটার রক্ত চুষে নিয়ে। এই পিচ্চি গুল্লুটা যাদি আলাদা রুমে শোয়, তাহলে তো আজকে পার্টি হবে। সব বন্ধুদের ইনভাইট করে আসতে হবে, সবাই বউ, শালী টালী নিয়ে আসতে পারবে, সারা রাত ব্লাড সাক করতে পারবে লেডিসরা। আর সে আর তার বন্ধুরা, মানে যত জেন্টস মশা আছে, তাদেরও ডিউটি করা লাগবে না, কানের কাছে উড়ে উড়ে পোঁ পোঁ সানাই বাজাতে হবে না। তারা একটা কিছু নিয়ে আড্ডা মারতে পারবে, কার্ড খেলতে বসতে পারবে। বয়েজ টাইম কাটাবে আরামে। বউরা কেউ বিরক্তও করবে না। এক রুমে পিচ্চিরা ঘুমালে, সব মশা মিলে যদি তাকে চ্যাংদোলা করে তুলে উড়ায়ে নিয়েও যায়, তাও তারা জাগে না। ফুড সোর্স হিসাবে তাই দুনিয়ার বেস্ট হচ্ছে একা রুমে বাচ্চা। ভদ্রমহিলা মেয়েকে ডিম দিয়ে ভাত মেখে নলা তুলে মুখে দিয়ে আবার বলেও দিচ্ছে -"চাবাও ! গেলো ! চাবাচ্ছো না কেন ? কতক্ষন বসে থাকবো বাবা ?" পিচ্চি মেয়ে মুখে ভাত নিয়ে ব্যাং এর মতন মুখ ফুলায়ে বসে টিভির দিকে তাকায় আছে। মোটুপাতলু দেখতেসে। উফফফ ! এই এক জিনিস। এই এক কার্টুন ছবি এসে, মানুষের বাচ্চাগুলার লাইফ শেষ করে দিতেসে। এরা খেতে খেতে মটু পাতলু দেখে, খেলতে খেলতে মটু পাতলু দেখে, পটিতে হাগতে বসেও মটু পাতলু। মানে এদের চোখ আঠা দিয়ে লাগানো। টিভিতে মটু পাতলুর দিকে তাকায়ে তাকায়ে এরা দুনিয়ায় চলবে কেমনে ? মুখে খাবার ঠুশে দিয়ে বলতে হয় - চাবাও ! এটা কোনো কথা হইল ? চাবাও কোনো বাচ্চাকে বলে দিতে হয় ? মশার বাচ্চা যদি এমন গবেট হত, এক উস্টা মেরে তার শুঁড় ভেঙ্গে লুলা করে দিত সে। সেদিন এক বাসায় গিয়ে দেখলো, ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে পটিতে বসে এক বাচ্চা মটু পাতলু গিলতেসে, আর কাজের বেটি, পেতনীর মতন চিপা গলায় চিঁ চিঁ করে বলতেসে - মনা কুঁত দেও, উঁ উঁ উঁ কর। কুঁউত দেওনা, হাগু আইবো না তোও ও । এটা কিছু হইল ? যার হাগা তার খেয়াল নাই, আরেকজন কুঁতায়ে হাগু করানো যায় ? রাবিশ যত্তসব। আর বাচ্চাদের কথা বাদই দিলাম, বড় মানুষও কি কম নাকি ? তার আরেক বন্ধু, টানা ৫ দিন তার বউদেরকে পেট ভরে এক ছেলের ব্লাড খাওয়াইছে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে। অই ছেলে ফোন হাতে কমোডে বসলে আর দিন দুনিয়ার খবর থাকেনা। ফেসবুক করতেই থাকে করতেই থাকে, হাগা শেষ করে, আরেক ব্যাচের খাবার হজম হয়ে বের হয়ে আসার সময় হয়, সেই ছেলে বাথরুম থেকে বের হয় না। আর তখন তার রক্ত তো রক্ত, পাছা কেটে নিয়ে চলে আসলেও টের পেতনা। বন্ধুতো সেই ছেলের গল্প করতে করতে হাসতে হাসতে পড়ে গিয়ে ৫ নাম্বার পা'ই মচকায়ে ফেললো।
না, মেনু মোটের উপর খারাপ না। ফ্যামিলি ভালো, ফার্নিচার মডার্ন। এই টাইপ ফ্যামিলির এটিকেট আছে। বক্স খাটে অর্থপেডিক্স ম্যাট্রেস ইউজ করে, বেডরুমের সাজ গোছ দেখে মনে হচ্ছে এরা হুট করে খ্যাতের মতন মশারী টাঙ্গায়ে ফেলবে না। এরা পুতা দিয়ে দেয়ালে পেরেক টাঙ্গানো টাইপ পাবলিক না। এদের দেয়ালে মাইল্ড কালারের ওক উডের ফ্রেম করা ওয়াটার কালারের ছবি ঝুলতেসে, রুচি আছে। মশা তাড়ানোর জন্য এরা স্প্রে ট্রে কিছু ইউজ করতে পারে। আগে কয়েল এর চল ছিল। এখন মডার্ন ফ্যামিলি কয়েল জ্বালায় না। কয়েলের মধ্যে একটা ফাতরা ব্যাপার আছে। মশার জন্য কয়েল জ্বালায়ে আসলে মানুষ নিজেরাই কষ্ট পায় বেশি। ইদানিং তাই মানুষ কয়েল কম ইউজ করে।
রেকি টেকি করে সে খুব সন্তুষ্ট হয়। নাহ, খুব ভাল পার্টি পাওয়া গেছে। মশারী নাই, কয়েল নাই, স্প্রেও দেখা যাচ্ছেনা। ইলেকট্রিক ব্যাট একটা দেখা যাচ্ছে চার্জে দেয়া। সেটা বড় কোনো সমস্যা না। ঘুমায়ে যাবার পর, মশা যতই জ্বালাক, বিছানা থেকে নেমে কেউ মশা মারার ব্যাট নিয়া টেনিস প্র্যাকটিস করে না।
সাড়ে ১১ টার মতন বাজে। ভদ্রলোকের বউ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে, কি সব ক্রিম টিম মাখতেসে, ভদ্রলোক ও ঠ্যাপাস করে ল্যাপটপের ডালা নামায়ে বিছানার পাশে নামায়ে রাখলো, ঘুমের পূর্ব প্রস্তুতি, খুবই সুলক্ষণ। ঘুম ছাড়া অন্য কিছু হইলে মহিলা এত ক্রিম টিম ঘষাঘষিতে যাইতো না। তারচেয়ে বড় কথা, পিচ্চি মেয়েটা শুয়ে আছে বিছানার মাঝখানে। পিচ্চি যদিও এখনো ঘুমায় নাই, তবে ঘুমায় যাবে, মা এসে শুইলে। আর জামাই বউ যেহেতু দুইজন দুই পাশে, এক ঘন্টার মধ্যে ঘুম, ব্যাস ডিনার রেডি হয়ে যাবে।
বউ চলে আসছে। বডি স্প্রে'র ক্যানের মাথা থেকে উড়ে গিয়ে বুক শেলফের কাছে গিয়ে বউ কে হাই বলে, বউ শুকনা মুখে বসে আছে মোটা একটা বই এর উপর। চেহারাটাই হাংরী হয়ে আছে, আহারে। কাছে গিয়ে সে বলে,
- টেনশানের কিছু নাই বেইব। আজকে ডিনার খুব ভালো।
- কই আর ভাল, এ্যাভারেজ। পিচ্চি মেয়েটাকে দেখসো ? কেমন গাবদা গুবদা।
- আরে ! গাবদা গুবদা মানে তো জোস, ইজি ক্যাচ, চোঁ করে টান দিবা, চিলড বিয়ারের মতন এক টানে টামি ফুল।
- টামি ফুল না কচু, এখনকার এই গুবদা গাবদা মানুষের পিচ্চি গুলা বোগাস, এগুলার ব্লাড পাইনশা। একদমই মজা না। মনে নাই , এডিস ভাবী খাইলো সেদিন? ফুড পয়জনিং হয়ে, বমি টমি করে অস্থির বেচারী। কি টেনশানে ছিল, নতুন ডিমগুলা না তার আবার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। অন্য ভাবীদের কাছেও শুনছি। এখনকার বেবী ব্লাড ফালতু। কি সব হাবিজাবি ছাতামাথা খায় এরা কে জানে। এদের ব্লাডে কেমিকেল টক্সিকেশান রেট খুব হাই। খেলাধুলা করে টরে নাতো, ব্লাডে টেইস্ট এড হয় না।
- বাছাবাছি বাদ দিয়ে যা পাচ্ছ খেয়ে নাও না। এখন তোমার জন্য খাশ দেশী পিচ্চি আমি পাব কই ? বস্তি এখান থেকে ম্যালা দুর। পরিষ্কার পরিবেশে ব্লাড খাবা, চলে যাবা । এত বায়না বাদ দিতে পারো না ?
- যা বোঝোনা , তা নিয়া আজাইরা জ্ঞান দিবা না, ব্লাড তুমি খাও, না আমি ? তুমি বেশি পক পক করতেসো কেন ? ফরমালিন-টিন মেশানো ব্লাড খেয়ে আমার ডিম মিসক্যারেজ হয়ে টয়ে গেলে তোমার খুব ভাল্লাগবে ? ফালতু একটা। যাও । উড়ে গিয়া ব্যাটার কানের কাছে গিয়া দেখো ঘুমাইসে কিনা, হাফপ্যান্ট পরা ব্যাটা, হাটুর পেছনে, নীচের দিকে বসে, একটু খেয়ে চলে যাই।
সে উড়ে এসে বিছানার উপর এক চক্কর দেয়। ভদ্রলোক মোবাইল টিপতেসে, মহিলার গলা জাপটায়ে ধরে পিচ্চি শুয়ে আছে। মহিলার হাত উল্টা করে চোখের উপর রাখা। ঘুমায় নাই মনে হচ্ছে । বাচ্চাটা ঘুমালো কিনা বোঝার জন্য একটু নীচু দিয়ে উড়ে গিয়ে দেখার সময় মহিলা চোখের উপর থেকে হাত সরাল, ব্যাস্ত চোখে তাকে খুজলো। এহহেরে !! ঝামেলা। আওয়াজ কানে গেছে মহিলার। উঠে গিয়ে ব্যাট নিয়ে আসবে নাকি ? মহিলা লোকটাকে ফাস্টকার্ড জ্বালাতে বলল। বেড সাইড ড্রয়ার থেকে বের করে লোকটা গোলাপী রং এর একটুকরা কাগজ নিয়ে কোনায় আগুন ধরায়ে দিল। সে উড়ে গিয়ে তার বউ এর পাশে বুকসেলফে বসলো। বউ চোখ কুচকায়ে জিজ্ঞেস করে
- ব্যাটায় করে কী ?
- জানিনা, ফাস্টকার্ড না কি জানি জ্বালাতে বলসে।
- কি জিনিস এটা ? আগে দেখসো ?
- না দেখিনাই। ননলেথাল টাইপ কিছু হবে হয়ত, চিন্তা কইরো না। বাচ্চা আছে তো রুমে, বেশি টক্সিক কিছু হইলে জ্বালাইতো না। মানুষের এখন এইসব বিষয়ে নজর টনটনা।
- বুইঝো বল্লাম, তোমার তো কিছুনা, কিছু হইলে হবে আমার, মইরা পইরা থাকবো, তুমি সকালে আবার বিয়া করবা, আগামীকাল সন্ধায় সেই নতুন বউরে ডিনারে নিয়া আসবা।
- আরে ধুর যত ফালতু কথা। আমার অইযে চিকনা কইরা লম্বা কিউলেক্স দোস্তটা মারা গেলনা ? ভাবীরে রাইখা, স্প্রে করা রুম রেকী করতে ঢুইকা। কে বলসে তোমারে, সব সময় বউই মরে ? আরে বাল মরার হইলে সবাই মরে। টেনশান কইরো না।
- তাও, আমার খুব ভয় লাগে। ইদানিং আননোন কত ক্রাইসিস যে আসছে।
বউকে অভয় দেয়ার জন্যই হয়তো সে হিরোইজম দেখাতে এক চক্কর ঘুরে আসার চিন্তা করলো। ঘরে আরো দুই ফ্যামিলি মশাকে দেখা যাচ্ছে। মাস্তান টাইপ কালচে এক মোটা ব্যাটা মশা আসছে তার দুই বউ নিয়ে, সাহস কতরে ব্যাটার। আবার ঘুরতেসেও বউ সহ বিছানার পায়ের কাছে। পায়ের উপর খেতে বসলে যদি আরেকপা দিয়ে ডলা দেয়, ভর্তা হয়ে যাবে সেই চিন্তা কি নাই নাকি ? এই রেকলেস মশাগুলাই নিজেরা আগে মরে, অন্যদেরও মরার ব্যাবস্থা করে। হোপলেস যত সব। চক্কর কেটে সে দেখার চেষ্টা করে, ভদ্রলোক যেই কাগজের টুকরায় আগুন দিলো, সেটার কি অবস্থা। দেখে তেমন আহামরি কিছু লাগতেসে না। হালকা করে বুনকা ধোয়া উঠসে, হালকা একটা স্মেল ও আছে। চক্কর শেষ করে সে মোড় কেটে উড়ে বুকশেলফের দিকে ফিরে যাবার চেষ্টা করে। দুরে তার বউকে দেখা যাচ্ছে বই এর উপর বসে আছে। কিন্তু বউকে কেমন জানি ঘোলা ঘোলা দেখাচ্ছে। সমস্যা কি ? তারপর আর তার কিছু মনে নাই।
বই এর উপর থেকে বসে তার বউ স্পষ্ট দেখলো মোড় কেটে উড়ে আসার মাঝ পথে তার স্বামী ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দিয়ে উপ্তা হয়ে গেল। সর্বনাশ। মিড ফ্লাইং এ ফেইন্ট হয়ে গেল নাকি বেচারা। হায় হায় । কি হবে এখন। ফ্লোরে পড়লে তো সমস্যা। সাদা মার্বেল টাইলস এর ফ্লোর। একটা মশা পড়ে থাকলে স্পষ্ট দেখা যায়। থাবা দিয়ে মেরে ভর্তা করে ফেলবে তো। কি উপায়!! ভাবতে ভাবতেই সে টের পায় হালকা একটা গন্ধ ভেসে আসতেছে। এই গন্ধেই তাহলে তার স্বামী সেন্সলেস হয়ে গেল ? হুশ থাকতে থাকতে সে উড়ে বের হয় রুম থেকে। জান হাতে করে উড়ে গিয়ে জানালার পর্দার পিছনে থাই উইন্ডোর চিপা ফাঁকা দিয়ে কোনো মতে যখন সে বের হয়, তখন সে জানেনা, তার স্বামী কি বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে।
তার সেন্স ফিরে ঝাঁকিতে।
চোখ খোলার পর সে দেখে তার উপর মিশকা কালা একটা ব্যাটা মশা উপ্তা হয়ে তাকে ঝাঁকি দিচ্ছে। কানের ভোঁ ভোঁ কাটার পর সে শুনতে পায় সেই মশাটা তাকে বলতেসে
- ওই মিয়া, খোলা ময়দানে পইড়া রইলা কোন আক্কেলে ? মাল খাইসো নাকি ? ওয়াইফ কই তোমার ? ডিনার শেষে মানুষের বেডরুমে শুইয়া ঘুমাইতেস, তোমার কি সেন্স নাই নাকি ? উঠো, উইঠা বাড়ি যাও।
ভ্যাবদা মারা ভাব কাটেনা তার, প্রথম কিছুক্ষন সে বুঝতেই পারে না সেই কোথায় আছে, ঘরের আলো দেখে তার চিন্তা আরো এলোমেলো হয়ে যায়, সকালের আলো কেন ? এই ঘরে তো সে আসছিলো রাতে। বউ কই তার ? বেহুশ হয়ে গেল কিভাবে ? বউ কি আছে এখানে ? বেহুশ টেহুশ হয়ে আছে ? নাকি মরেই গেছে ?
কি থেকে যে কি হয়ে গেল , তার কিছুই মাথায় ঢুকতেসে না। এক ফাস্ট কার্ডের ধোঁয়ায় সে একরাত বেহুশ হয়ে পড়ে থাকলো। কি জিনিস রে বাবা, মরেও তো যেতে পারতো সে। কপালগুনে জানটা আছে। উড়তে গিয়ে দেখলো কাহিল লাগতেসে। কোনোমতে জানালা দিয়ে বের হয়ে নিজের এলাকায় এসে দেখলো সবাই তার দিকে কেমন করে জানি তাকাইতেসে। মদ খেয়ে সারারাত মাতলামী করা লোকের দিকে সকাল বেলায় এলাকাবাসী যেভাবে তাকায়, তার দিকে সবাই সেভাবে তাকাইতেসে। আরে ভাই, সে কি ইচ্ছা করে বেহুশ হইসে নাকি ? ভালোভাবে বউ নিয়ে ডিনারে গেসিলো ফ্ল্যাটবাড়িতে। এখন কেমিকেল এটাক হবে, এটা কে জানতো ? কেউ কি ইচ্ছা করে ডিনারে গিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে ? তার খুব খারাপ লাগতে থাকে। এত টায়ার্ড যে বউকে খুঁজে বের করার এনার্জিও পাচ্ছেনা। একরকম টলতে টলতে সে পাতাবাহার গাছের পাতার পিছে ঘুমায় পড়ে।
দুইদিন পর, উস্কোখুস্কো চেহারা নিয়ে সে সন্ধার সময় নিউ ইস্কাটনের ফ্লাই ওভারের কাছে উড়ে যাবার সময় দেখে, তার বউ হাসতে হাসতে একটা খুব ড্যাশিং মার্কা এডিফিলিস মশার সাথে গল্প করতে করতে উড়তেসে। বউ বেঁচে আছে দেখে সে কি যে খুশি হয়। হাত দিয়ে কোনো মতে ডানা ঠিক ঠাক করে উড়ে যায় বউ এর কাছে। কথার মাঝখানে তার বউ তাকে দেখে হঠাত হাসি থেমে যায় । তারপর তাকে বলে
- ও তুমি বেঁচেও আছো
- বেঁচেও আছি মানে ? কি বললা এইটা ? কি ক্রাইসিসে যে পড়সিলাম তুমি জানো ?
- জানবোনা কেন ? আমার চোখের সামনেই তো তুমি উড়তে উড়তে হঠাত ফ্লিপ কইরা পড়ে গেলা ফ্লোরে, একটা প্রেগনেন্ট বউ কি খাবে, কিভাবে বাঁচবে, সেইসব কোনো চিন্তা তো তোমার করতে হয় নাই ।
- আরে, এটা কোনো কথা ? তোমার ডিনারের জন্য ঘুমাইসে কিনা দেখতে গিয়াই তো আমি বেহুশ হয়ে গেলাম। আমি কি ইচ্ছা করে বেহুশ হইসি নাকি ?
- তা হও নাই। এনি ওয়ে। বেচে যখন আছই, নাউ উই নীড টু টক।
- নীড টু টক মানে ?
- মানে আমি তোমাকে বলতে চাই, আমি তোমার সাথে আর নাই । আমি মুভ অন করসি। এই যে আমার নতুন ফিয়াসে এডিফিলিস। আমি তার সাথে ঘর করবো, তার বাচ্চার মা হব।
- কি বলতেসো এসব?
- ইয়েস। তোমার মত ইরেস্পন্সিবল মশার সাথে আমি জীবন কাটাবোনা। যার এতটুকু মিনিমাম সেন্স নাই । বউ কে নিয়ে যে ডিনারে গিয়ে ফাস্টকার্ডের ধোয়া খেয়ে বেহুস হয়ে পড়ে। তার প্রেগনেন্ট বউ, কিভাবে বেচে থাকবে সেই সিকিউরিটি দিতে পারে না, তাকে আমার স্বামী বলতে ঘৃণা হয়।
- হারামজাদী, মাতারী মশা। তোর মতন খা**কী মশার জন্য আমি জান হাতে করে ফ্ল্যাটবাড়ি ঘুরে ঘুরে ডিনার খুজছি, আর তুই আমার বিপদের দিনে বাজাইরা ব্যাডামশা খুইজা বের কইরা মজা করোস ???
- মুখ খারাপ করবা না। তোমার মুখে গালি মানায় না। তোমার চেয়ে এই এডিফিলিস অনেক বেটার হাজবেন্ড। অন্তত সে আমাকে ফ্ল্যাটের বেডরুমে ডিনারে নিবেনা। আজীবন আমাকে বেগুনবাড়িবস্তিতে নিয়া রিস্কফ্রি ডিনার করাবে বলসে। হাতিরঝিলের পাড়ে আমরা বাসা নিব। কোনো টক্সিক এটাকের রিস্ক নাই। সে আমাকে রেখে বেহুস হয়ে পড়ে থাকার মত মশা না। আমি আমার ডিসিশান নিয়ে ফেলসি। নাউ ইউ গেট লস্ট।
খুব মনভাঙ্গা হয়ে সে বসে থাকে ফ্লাইওভারের রেলিং এ। কি হল এটা তার জীবনে? একরাতে এইভাবে তার আস্ত জীবন ওলট পালট হয়ে গেল ধোঁয়া খেয়ে বেহুশ হয়ে ? পাশ দিয়ে তরুনী একটা মশা উড়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গামন হলেও তরুনী মশার দিকে তার চোখ যায়, এখনো কনসিভ করে নাই। আলাপ করে দেখবে নাকি ? সে তো এখন ব্যাচেলারই। মনে মনে চিন্তা করতে করতেই সে শুনতে পায়, তরুনী মশাটা তাকে বলতেসে
- তুমি সেই মশা না ? ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে ধোঁয়ায় বেহুশ হয়ে গেছিল বউ নিয়ে ডিনারে গিয়ে, বউ পরে ভেগে গেছে আরেক এডিফিলিস এর সাথে ? আমার দিকে এভাবে তাকায়ে লাভ নাই, নো চান্স । আমি গবেট না। ইরেসপন্সিবল মশাকে আমি ডেট করিনা। ফাক অফ ।
লজ্জায় অপমানে মশার মরে যেতে ইচ্ছা করে। ফ্লাইওভারের রেলিং থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যদি মরে যাওয়া যেত সে তাই করতো। আফসোস, উচু থেকে লাফ দিয়ে মশারা মরতে পারে না।
লেডিস মশারা এমনই হয়।
বুকভাঙ্গা কষ্ট নিয়ে সে মনে মনে অভিশাপ দেয়। সেই দিনের সেই ভদ্রলোককে, যে ফাস্টকার্ড জ্বালায়ে তার জীবনটা তামা তামা করে দিল ???
No comments:
Post a Comment