মানুষ চেষ্টা করলে যে কোনো বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারে। সেটা নিজের লিমিটের বাইরে হলেও পারে। মানুষ পাখীর চেয়ে ভাল উড়তে পারে, বানরের চেয়ে ভাল করে ঝুলতে পারে, চিতার চেয়ে জোরে ছুটতে পারে, ডলফিনের চেয়ে দ্রুত সাঁতরাতে পারে। মাথা হল ব্যাপার। মাথা খাটায়ে মানুষ এক্সপার্ট হতে পারেনা এমন কিছু নাই।
জহির একজন এক্সপার্ট।
মাথা খাটায়ে জহির এক্সপার্ট হইসে।
তার স্পেশালিটি হচ্ছে সে বিনা দাওয়াতে বিয়ে খাবার এক্সপার্ট।
শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলায় শীতকালে লেগে থাকা বিয়ের ধুমে ঠিক কখন গেলে খাবার পাওয়া যাবে, কোন টেবিলে, কোন ব্যাচে বসলে ভাল খাবারটা পাতে আসবে, কিভাবে খেতে হবে, ইত্যাদি ব্যাপারে জহির একজন এক্সপার্ট।
আজকেও জহির নীল ফুলহাতা শার্ট এর উপর সাদা আর মেরুন স্ট্রাইপের হাফ সোয়েটার চাপায়ে হালকা মেজাজে ঢুকে পড়ে আপ্যায়ন কমিউনিটি সেন্টারে। রাত নয়টার দিকে কমিউনিটি সেন্টারের পার্কিং ভরে আছে। জহির চোখ বুলায়ে একটা সিলভার কালার এলিয়নের পাশে গিয়ে নীচু হয়। তারপর সোয়েটারের ভেতর থেকে চ্যাপ্টা একটা র্যাপিং মোড়ানো প্যাকেট বের করে হাতে নেয়। বেগুনী রিবন প্যাচানো প্যাকেটটা দেখে মনে হতে পারে ছোট কিন্তু ভাল কোন গিফট রয়েছে এতে। প্যাকেট হাতে নিয়ে জহির মাথা তুলে কমিউনিটি সেন্টারের সিকিউরিটি গার্ডকে ডাক দেয়। উচা করা হাতে ধরা গিফট এর প্যাকেট। সিকিউরিটি গার্ড কাছে এসে সালাম দেয়। জহির খুব কেতাদুরস্ত ভঙ্গীতে বলে
- আমার ড্রাইভার টাকে দেখেছেন ?
- না স্যার।
- ওহ হো, ফোনটাও ধরে না কেন বেকুব টা
- স্যার, মনে হয় টয়লেটে গেসে
- হু হতে পারে। আচ্ছা পরে খুঁজে দেখবো। আসলে বইলেন আমি খুঁজতেসি, ওকে ?
- জ্বে স্যার, বলবো।
বাম হাত পকেটে ভরে জহির হাটা দেয় কমিউনিটি সেন্টারের এন্ট্রি গেটের দিকে। এন্ট্রি গেটের কাছেই কিছু তরুন স্যুট পরে দাঁড়ায়ে আছে। বর বা কনের কাজিন গোষ্টি এরা, পরিচিত গেস্ট দের এটেন্ড করার দায়িত্ব এদের। বাচ্চা কাচ্চা পোলাপান নিজেরা নিজেদের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। এদের কাছাকাছি গিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে তাকায়ে জহির মুখ খুশি খুশি করে উচা গলায় বলে
- বড় আপা আসছে নাকি ?
আমি আগে চলে আসলাম ?
স্যুট পরা, কায়দা করে চুল ছাটা কাজিনদের দলটা জহিরকে না চিনলেও খেয়াল করে
না। জহির গেট পার হয়ে ঢুকে পড়ে। সেকেন্ড লেয়ারে থাকার কথা বর/কনের
মামা, খালু, ফুপা পর্যায়ের মুরুব্বীরা। এরা সবাইকে চেনে। অন্তত না চিনলেও
চেনার চেষ্টা করে যায় পুরাদমে। এদের নজর ফাঁকি দেয়া একটু চ্যালেঞ্জিং।
তবে জহিরের জন্য সেটা কোন সমস্যাই না। জহির এই লাইনে পাকা খেলোয়াড়। সোজা
হেটে গরদের পাঞ্জাবী পরা, কাশ্মীরি শাল কাঁধে ফেলা তালেবর টাইপ মুরুব্বীর
কাছে গিয়ে জহির মিষ্টি হেসে বলে
- খালু, গিফট কাউন্টারটা কোন দিকে ?
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে জহিরকে পরখ করে দেখে, চেনার চেষ্টা করতে থাকে। ততক্ষনে জহির পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ঠেকিয়ে কথা বলে যাচ্ছে
- খালু, গিফট কাউন্টারটা কোন দিকে ?
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে জহিরকে পরখ করে দেখে, চেনার চেষ্টা করতে থাকে। ততক্ষনে জহির পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ঠেকিয়ে কথা বলে যাচ্ছে
- আরে কত্ত পীছে পড়লা তোমরা, আমি সিএঞ্জি নিয়েই তো আগে চলে আসলাম, আসো
আসো, এখানে আমাকে তো চিনবে না। অকোয়ার্ড লাগে না ব্যাপারটা ?
ততক্ষনে কাশ্মীরীশাল ভদ্রলোকের ভ্রু সমান হয়ে গেছে, কান থেকে ফোন নামানো জহিরকে তিনি ডান হাত উচা করে কাউন্টার দেখায়ে দিয়ে নিজে সামনের লোকদের সাথে কথায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। জহির ডানে মোড় নেয় ঠিকই। কাউন্টার পর্যন্ত আগায় না, তার আগেই দেয়াল মুখো হয়ে গিফটের প্যাকেটটা শ্রেফ সোয়েটারের ভেতরে ভরে ফেলে। তারপর উল্টা ঘুরে এসে কমিউনিটি সেন্টারের মূল হলে ঢুকে এলোমেলো পায়চারী করতে থাকে। আড়চোখে যখনই মনে হয় কেউ তার দিকে ৫ সেকেন্ডের বেশি তাকায়ে আছে, সে মৃদু পায়ে স্টেজের দিকে হাসি হাসি মুখ করে আগাতে থাকে পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের ক্যামেরা অন করে স্টেজ বরাবর তাক করে এদিকে ওদিকে বেশ কয়েক মিনিট কাটায়ে দেয়। ফার্স্ট ব্যাচ খেয়ে উঠবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। ফিরনীর বাটি ভরা ট্রে নিয়ে বেয়ারারা ছুটে আসছে ব্যাক কিচেন থেকে। জহির ফোন টিপে, কানে ফোন ঠেকিয়ে মাথা নীচু করে পায়চারী করতে করতে কথা বলার নিপুন অভিনয় করে। কিচেন থেকে ছুটে আসা হ্যাংলা পাতলা এক বেয়ারার বুকে নেমপ্লেটে নাম লেখা কিসমত। পাশ দিয়ে যাবার সময় আগেই দেখে রাখা। হাতে করে নতুন টেবিল ক্লথ নিয়ে কিসমত নামের বেয়ারা ছুটে যাবার সময় জহির এক গাল হাসি নিয়ে বলে
- কিসমত ভাই এর টেবিল কোনটা ? আইজকা কিন্তু ভাল খাওয়াইতে হইবে
ততক্ষনে কাশ্মীরীশাল ভদ্রলোকের ভ্রু সমান হয়ে গেছে, কান থেকে ফোন নামানো জহিরকে তিনি ডান হাত উচা করে কাউন্টার দেখায়ে দিয়ে নিজে সামনের লোকদের সাথে কথায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। জহির ডানে মোড় নেয় ঠিকই। কাউন্টার পর্যন্ত আগায় না, তার আগেই দেয়াল মুখো হয়ে গিফটের প্যাকেটটা শ্রেফ সোয়েটারের ভেতরে ভরে ফেলে। তারপর উল্টা ঘুরে এসে কমিউনিটি সেন্টারের মূল হলে ঢুকে এলোমেলো পায়চারী করতে থাকে। আড়চোখে যখনই মনে হয় কেউ তার দিকে ৫ সেকেন্ডের বেশি তাকায়ে আছে, সে মৃদু পায়ে স্টেজের দিকে হাসি হাসি মুখ করে আগাতে থাকে পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের ক্যামেরা অন করে স্টেজ বরাবর তাক করে এদিকে ওদিকে বেশ কয়েক মিনিট কাটায়ে দেয়। ফার্স্ট ব্যাচ খেয়ে উঠবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। ফিরনীর বাটি ভরা ট্রে নিয়ে বেয়ারারা ছুটে আসছে ব্যাক কিচেন থেকে। জহির ফোন টিপে, কানে ফোন ঠেকিয়ে মাথা নীচু করে পায়চারী করতে করতে কথা বলার নিপুন অভিনয় করে। কিচেন থেকে ছুটে আসা হ্যাংলা পাতলা এক বেয়ারার বুকে নেমপ্লেটে নাম লেখা কিসমত। পাশ দিয়ে যাবার সময় আগেই দেখে রাখা। হাতে করে নতুন টেবিল ক্লথ নিয়ে কিসমত নামের বেয়ারা ছুটে যাবার সময় জহির এক গাল হাসি নিয়ে বলে
- কিসমত ভাই এর টেবিল কোনটা ? আইজকা কিন্তু ভাল খাওয়াইতে হইবে
কমিউনিটি সেন্টারের এই বেয়ারাদের সাথে সবার দেখা হয় মাত্র একটা দিন। কেউ
এদের মনে রাখে না। কেউ এদের নাম জানে না । নিজের নাম শুনতে না পারার একটা
গোপন স্পৃহা এদের মনে থেকে যায়। যাদের এরা এত এত কষ্ট করে খাবার এনে
খাওয়ায়, তাদের কাছে এরা জাস্ট সিস্টেমের একটা অংশ। কেউ নাম ধরে এদের ডেকে
কথা বলে না। কিসমত, জহিরের মুখে নিজের নাম শুনে ঝপ করে দাঁড়ায়ে যায়।
জহিরের হাসি হাসি মুখ দেখে কিসমত বুঝতে পারে না লোকটা তাকে কিভাবে চেনে। না
চিনলে নাই, সুন্দর করে নাম ডেকে কথা বলসে, এইটাই অনেক। সে লাজুক হেসে বলে
- মাইজের সারির দুই নাম্বার টেবিল ।
- আইচ্ছা বইতেসি, ডাবল খাওয়াইবেন কিন্তু আইজকা।
- আইচ্চা ব্যাপারনা বহেন আগে।
সিস্টম করা শেষ। জহির বিভিন্ন টেবিলের আশে পাশে পায়চারী করে বোন প্লেট দেখে। লোকজনের এটো তুলে রাখার পরিমান দেখে একটা আন্দাজ পাওয়া যায় খাবার কেমন হইসে। বিয়ের মেনু সব জায়গায় মোটামুটি এক রকম হলেও, রান্নায় বিশাল হেরফের এর ব্যাপার আছে। সব বিয়ের খাবার ভাল হয় না। সানাই নামের এক কমিউনিটি সেন্টারে রোস্টের মুরগী ছিল মরা, দুনিয়ার বাসি। রোস্টে কামড় দিয়ে বমি চলে আসার মত অবস্থা। বহুত কিচ্ছা কাহিনী করে সেই বিয়েতে শেষমেষ খাসীর রেজালা দিয়ে ৩ প্লেট পোলাও খেয়ে কনের বাবাকে শর্মিন্দা করে আসে জহির। আরেক বিয়ের জালী কাবাব কেউই এক কামড়ের বেশি খেতে পারে নাই। মাঝে মাঝে কিছু বিয়ের রেজালার মাংসে চর্বি থাকে বেশি। দেখা যায় বোনপ্লেটে চাক চাক আধখাওয়া ঝাল মাংসের টুকরা পড়ে আছে।
কিসমতের টেবিলে এঁটো তোলা হচ্ছে। জহির টাইমিং মিলায়ে ঠিক যেই কোনায়
বেয়ারা ঢুকে খাবারের ডিস সার্ভ করবে সেখানের একটা চেয়ারের ব্যাকরেস্টে এক
হাত ভর দিয়ে পা কেচি মেরে দাড়ায়ে ফোন টেপাটেপি শুরু করে। টেবিলে নতুন
কাপড় পড়ে, গ্লাস, প্লেট, বোনপ্লেট পড়ছে, জহির বসে পড়ে। সেকেন্ড ব্যাচে
খাবার জন্য অন্যরাও বসতে শুরু করছে। জহিরের টেবিলে ৪ সদস্যের একটা পরিবার
আর একটা কাপল বসে পড়ে। সেকেন্ড ব্যাচের সুবিধা হচ্ছে আয়োজক পরিবারের
লোকজন প্রথম ব্যাচকে এন্টারটেইন করে একটু জিরায়। আবার শেষের দিকের ব্যাচে
গুরুত্বপূর্ণ গেস্টরা খেতে বসবে তখন উঠে টেবিলে টেবিলে পায়চারী করবে। জহির
সতর্ক চোখে মেপে ফেলে, তার টেবিলে এমন কোন হোমড়া চোমড়া কেউ বসে নাই।
দেখে মনে হচ্ছে এরা নিতান্তই মামুলী আত্মীয়। যাদের খাওয়া কেমন হচ্ছে এটা
নজরদারী এমন কোনো গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। বোরহানীর জগ আসতেই জহির জগ ধরে
প্রথমেই নিজের ডান পাশের লোকটার একটা গ্লাসে বোরহানী ঢেলে দেয়। লোকটা
মুচকি হেসে ভদ্রতা দেখায়। জহির বাম পাশের বয়স্ক লোকটার গ্লাসেও বোরহানী
ঢালে সেই লোকের এতে তেমন চ্যাতভ্যাত হয় না। এরপর জহির নিজের গ্লাসে
বোরহানী নিয়ে জগটা নিজের সামনে রাখে। কায়দা করে আধা জগ বোরহানীর দখল
নিয়ে ফেলার পর জহিরের ভাল্লাগে। খেলাটা ভাল ভাবেই শুরু হইসে আজকে। সালাদ
আসে, এবার জহির আর ভদ্রতার ধারে কাছে যায় না। বাটি কাছে টেনে ভাল ভাল তিন
টুকরা লেবু, কয়েক পিস শশা, পেয়াজ, সালাদ আর দুইটা কাচামরিচ নিয়ে বাটি
উল্টাদিকে ঠেলে দিয়ে বলে "নেন"।- মাইজের সারির দুই নাম্বার টেবিল ।
- আইচ্ছা বইতেসি, ডাবল খাওয়াইবেন কিন্তু আইজকা।
- আইচ্চা ব্যাপারনা বহেন আগে।
সিস্টম করা শেষ। জহির বিভিন্ন টেবিলের আশে পাশে পায়চারী করে বোন প্লেট দেখে। লোকজনের এটো তুলে রাখার পরিমান দেখে একটা আন্দাজ পাওয়া যায় খাবার কেমন হইসে। বিয়ের মেনু সব জায়গায় মোটামুটি এক রকম হলেও, রান্নায় বিশাল হেরফের এর ব্যাপার আছে। সব বিয়ের খাবার ভাল হয় না। সানাই নামের এক কমিউনিটি সেন্টারে রোস্টের মুরগী ছিল মরা, দুনিয়ার বাসি। রোস্টে কামড় দিয়ে বমি চলে আসার মত অবস্থা। বহুত কিচ্ছা কাহিনী করে সেই বিয়েতে শেষমেষ খাসীর রেজালা দিয়ে ৩ প্লেট পোলাও খেয়ে কনের বাবাকে শর্মিন্দা করে আসে জহির। আরেক বিয়ের জালী কাবাব কেউই এক কামড়ের বেশি খেতে পারে নাই। মাঝে মাঝে কিছু বিয়ের রেজালার মাংসে চর্বি থাকে বেশি। দেখা যায় বোনপ্লেটে চাক চাক আধখাওয়া ঝাল মাংসের টুকরা পড়ে আছে।
রাইসের ডিস আসার পর জহির হাতই বাড়ায় না। কাচ্চি হলে ভিন্ন কথা। প্লেইন পোলাও এমনেই রয়ে সয়ে নেয়া বেটার। আর জহিরের ধান্ধা পোলাও ঠাসানো না। যদি সিস্টেম কাজে দেয় আজকে, কিসমত তার প্লেটে কি দেয় দেখা যাক। রোস্টের ডিস নিয়ে কিসমত আসে, জহির তাকে আগেই বলে
- ওইদিক থেকে দিয়া আসেন
কিসমত মুচকি হেসে উল্টাপাশ থেকে রোস্ট দেয়া শুরু করে, টেবিলের বাকিদের ধারনা হয় জহির বুঝি বিয়ে বাড়ির পক্ষের কেউ। সবাইকে দিয়ে জহিরের কাছে এসে কিসমত তাকে একটা রানের মাংশ তুলে দেয়। জহির এক চামচ পোলাও তুলে নিয়েছিল। রোস্টের উপর লেবু চিপে এক টুকরা গাজর সহ রোস্ট করা রানের টুকরাটা ছিড়ে গিলে ফেলতে জহিরের সময় লাগে দেড় মিনিট। এর মধ্যে সে এক লোকমা পোলাও ও মুখে দেয় না। তারপর কিসমতের দিকে তাকায়ে সবাইকে শুনায়ে বলে
- বুকের পিস দাও দেখি কেমন হইসে
কিসমত চলে যায়, ফিরে আসে পিরিচে করে ২ পিস ঢাসা ঢাসা বুকের রোস্ট পিস নিয়ে। সামনে পিরিচ রেখে আরাম করে আধামুঠ পোলাও দিয়ে সেই দুই পিস মাংস খেয়ে হাড় না চাবায়ে তুলে ফেলে জহির। বোরহানীতে চুমক চলছেই ফাঁকে ফাঁকে। আসে ঝাল মাংস। কিসমত ততক্ষনে লাইনে এসে গেছে। হাজার মানুষের খাবার নাড়াচাড়া করছে সে। নিজের মর্জিতে কাকে বেশি খাওয়াবে সেটা সে নিজে ঠিক করতেই পারে। তাই একটা রেজালার বাটি পড়ে জহিরের ডান পাশের লোকটার সামনে। জহির বাটি ধরে ডান পাশের লোককে বলে
- মাংস দেই একটু ?
লোকটা বলে
- আপনি নেন, আমি নিব পরে।
জহির স্বর্গীয় হাসি দিয়ে মনে মনে বলে
"পাইলেই না নিবা মদন, দেখ, থাকে নাকি কিছু !!!"
সতর্ক ভাবে চামচ কাত করে ঝোল-তেল এড়ায়ে ৩ টুকরা বড় বড় মাংসের পিস নেয়। সিনার মাংস নেয় না। ছাগলের সিনায় কিছু নাই। আছে খালি ফ্যাপসা। নিতে হয় পীঠের পীস, তাতে মাংস ও থাকে হাড্ডী চাবায়েও মজা। আর খেতে হয় পায়ের মাংস। তাও উপরের রান আর নলি মিলায়ে। মাংসের গায়ে গায়ে লাগায়ে অল্প পোলাও সহ দলা দলা মাংস চাবায়ে পেটে ভরে ফেলে জহির। তারপর আবার বাটি রিফিল হলে আরো ৩ পিস সাঁটায়। এরপর আসে জর্দা। কমলা জর্দার উপর কোয়েলের ডিম সাইজের মিষ্টি সহ। জহির এক বাটির তিনভাগের একভাগ একাই মেরে দেয় ৫ টা মিষ্টি সহ। তারপর জগের শেষ বোরহানীটুকু গ্লাসে ঢেলে গিলে ফেলে ঢেকুর তুলতে তুলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে, হাতে ফিরনীর বাটি নিয়ে।
কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হবার আগে জহির স্টেজের সামনে গিয়ে একটা সেলফি তুলে তারপর কিসমতকে আন্তরিক ভাবে পীঠে চাপড় মেরে, আরো দুইটা খাতিরের কথা শুনায়। আসার পথে গেটের মুরুব্বীদেরকে সালাম দেয়। কাউন্টার থেকে একখিলি পান খায় তারপর গুন গুন করে গান ভাজতে ভাজতে বের হয়ে আসে এই বছরের ২১ নাম্বার হাকুইল্লা বিয়ে খেয়ে।
এই শহরে এক প্লেট মোরগ পোলাও খেতে লাগে মিনিমাম ৮০ টাকা। সিস্টেম বুঝে জহির এক্সপার্ট হয়েছে পুরা শীতকাল মাগনা বিরিয়ানী খাবার ব্যবস্থাতে। একটা র্যাপিং করা গিফট বক্স, এক সেট ভাল কাপড় আর মাথায় বুদ্ধি দিয়ে জহির জয় করে ফেলসে এই শহর জুড়ে ছড়ানো সব কমিউনিটি সেন্টার। সারা শীতকাল জুড়ে যেখানে লেগে আছে বিয়ে আর সুবাস বের হচ্ছে ভাল খাবারের।
চাইলে মানুষ কি না পারে, জহির তো একাই বিনা দাওয়াতে খেয়ে ফেলসে ৫০০ বিয়ের খাবার।
No comments:
Post a Comment