Wednesday, December 19, 2018

কেক তল্লাসী।

ভার্সিটিতে পড়ার সময় কিছুদিন স্কুলের বন্ধু কাউসার থাকতো আমার সাথে। রুমে  তখনও গেস্ট হিসাবে বন্ধুর বেডে থাকাটা কবিরা গুনাহ'র পর্যায়ে পড়ে নাই। কাউসারও তেমন সময়ে আমার সাথে বেশ কিছুদিন ছিল।
তো সেইসময় একদিন কাউসার নোয়াখালী থেকে ফিরলো, বাসে করে আসছে, তখন সন্ধা। এসেই হাউ মাউ করে উঠলো, তার খিদা পাইসে, তখনো রাতের খাবারের সময় হয় নাই, তাই হলের সামনের সারী ধরা চায়ের দোকানে গেলাম। গিয়েই কাউসারের প্রথম কথা হল
- মামা পিস কেক দেন,
উত্তর আসলো পিস কেক নাই। না থাকতেই পারে, অন্য কিছু খা। কিন্তু তার দেখি চোখে মুখে উদভ্রান্ত ভাব, সে এই দোকান রেখে সামনের দোকানে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো। সে দোকানেও নাই, পরের দোকানেও নাই, তার পরের দোকানেও নাই। এই ছাতার পিস কেক এমন কোন মহার্ঘ বস্তু না যে হটকেকের মত সেল হয়ে যাবে। আর এটা খাবার জন্যও কেউ এমন উতলা হতে পারে, তাও আমার ধারণা ছিল না। নরমালী সব টং টাইপ দোকানেই এই ফ্যাকাসে হইলদা পিস কেক নামক বস্তুটা পলিব্যাগে ঝুলে, তিন টাকা করে বিক্রি হয়, রিকশাওয়ালা বা এই শ্রেণীর লোকজন কিনে খায় সারাদিন শেষেও দেখা যায় পলিব্যাগের অর্ধেক কেক ফুরায় না, কিন্তু অইদিন পর পর এতগুলা দোকানে পিস কেক না থাকাটা অদ্ভুত লাগলো। কাউসার বিরস মুখ করে বিস্কিট আর কলা খেতে খেতে বললো, তার নাকি নোয়াখালী থেকে বাসে উঠার আগে মনে হইসিল চা আর পিস কেক খাবে, বাস কাউন্টারের আশে পাশে খুইজা পায় নাই। তারপর বাস যখন খাবার বিরতি দিল, তখন খাবে ভেবে দোকানে গিয়ে পায় নাই। কেক খাওয়ার বিশাল ক্রেভিং নিয়ে সে কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে নামলো, সেখানেও মরার পিস কেক পাওয়া গেল না। অবশেষে হল এলাকায়ও পাইলো না।
তার কাছে শুনে আমারো ইন্টারেস্টিং লাগলো, একদিনে এতবার কোইন্সিডেন্টলি পিস কেকের মত মামুলী জিনিস না পাওয়াটা একটু কেমন না ?
হতাস মনে ঠাট্টা করে কাউসার বলে
- সরকার মনে হয় পিস কেক ব্যান করে দিসে
- ধুর, এইটা কোনো কথা হইল ?
- আরে, তুই দেখনা, এত জায়গায় খুইজা পাইলাম না। এমন কইরা খুজলে ডাইল, গাঞ্জা, হেরোইনও পাইয়া যাইতাম ব্যাটা টং দোকানে।
তারপর আমাদের পিস কেক বিষয়ক ফ্যান্টাসী ডানা মেললো।
ধর, এমন হইল, পিস কেক খাইয়া পোলাপাইন নেশা করে, তাইলে কেমন হইত ?
কেউ দিনে দুপুরে টং দোকানে পিস কেক খুজলে দোকানদার গরম মেজাজ দেখায়া বলতো
- আরে যান যান আমি কেক টেক বেচিনা। পুলিশ ডাকুম এইসব খুজলে ...
পাশ থেকে টাউট চেহারার কেউ হয়ত সিগারেট টানতে টানতে হালকা হিন্ট দিত
- গলি দিয়া সামনে আগাইলে নাপিতের দোকানের পীচে চিপায় এক খালা আছে তার কাছে পাইবেন, এই জিনিস কেউ রাস্তার পাশে দোকানে বেচে নি ?
কুমিল্লায় যেখানে বাস দাড়ায় সেখানে বালতিতে পানির মধ্যে সফট ড্রিংকের বোতল চুবায়ে যেই হকার রা ডাকাডাকি করে, যুবক শ্রেণীর পাশে এসে বলে
- এই কোক ফান্টা সেভেনাপ এই কোক ফান্টা সেভেনাপ, ডাইল লাগে নি মামা ?
লাইনের শেষের কথা আস্তে করে বলে, দেখা যাবে সেও আস্তে করে বলতেসে ডাইল, পিস কেক লাগে নি মামা।
এলাকার মুরুব্বীরা হয়ত আলাপ করবে
- ইলিয়াস সাবের পোলাডারে ভাল জানতাম, দেখতে শুনতে প্রিন্সের মতন, লেখা পড়াও ভাল ছিল এখন শুনি কেক খায় !! চিন্তা করসেন অবস্থা ?
কোনো কোনো বাসায় রেগে পাগলা হয়ে যাওয়া কোনো বাবার চিতকার শোনা যেত
- কি দেই নাই আমি এই ছেলেরে, যখন যা চাইসে, আইনা হাজির করসি। দরকার, শখ, বিলাসীতা, কিচ্ছু মানা করসি কোনো দিন ? তাইলে আমার ছেলে কেন চিপাই বইসা আজকে পিস কেক খায় ? কেক খাওয়ার লাইগা এই কুত্তার বাচ্চা জন্ম দিসি আমি ??? কি কথা বল না কেন ?
অসহায় মা হয়ত মিন মিন করে বলতেসে
- ও খায় না তো, বন্ধু বান্ধব খায়, তারে কোনা ভাইঙ্গা এট্টু দিসে, তাও পুরা খায় নাই, থুঃ কইরা ফালায় দিসে, নেশা মেশাও হয় নাই ।
- তুমি চুপ থাক!! বেকুব মহিলা, কেকের কোনা খাইসে!! পোলার হইয়া ওকালতি করবা না। কেক কেকই!! কোনা খাইলেও যা, ৩ পিস খাইলেও তা। আর থু কইরা ফালাইসে কেন ? ওরে বলতা ৫ পিস কেক খাইয়া ঘরে আইসা মাতলামী করতে । যত্তসব!!!
কারো কারো বিয়ের আলাপ মাঝ পথে এসে থেমে যেত, কানাঘুশা শোনা যেত,
- ছেলে একশ তে একশ কিন্তু উড়া খবর হইল ছেলের কেক খাওয়ার অভ্যাস আছে ।
কারো বাড়ির মেয়ে ব্যাগ গুছায়ে বাপের বাড়ি চলে আসতো, ফ্যাচ ফ্যাচ করে কানতে কানতে নাক  লাল করে বলতো
- মা, আমাকে আর অই জানোয়ারের কাছে যাইতে বলবা না। তোমারা ধইরা বাইন্ধা ডাক্তার পোলা দেখে নাচতে নাচতে আমারে তুলে দিলা। খোজ নিসিলা ? তোমার ডাক্তার জামাই কি খায় ? ডেইলি সে কেক খাইয়া বাসায় আসে। তাও আমি মাইনা নিতাম, ইদানিং কেক খাইয়া হুশ জ্ঞান হারাইয়া বাসায় আইসা আমার গায়ে হাত তোলে। খবরদার আমাকে অর কাছে পাঠাইতে চাইলে আমি গলায় দড়ি দিয়া ঝুইলা যাব।
যুবসমাজের আলাপ হতো এমন
- দোস্ত চাকরী পাইছস ট্রিট দে, মোগলাই টোগলাই বইলা লাভ নাই মামা, কেক খাওয়াইতে হবে।
অথবা ধুন্ধুমার পার্টি করে এসে গল্প দিতো
- আরে কইস না, সেইরকম পার্টি হইসে, আমরা কেক নিসিলাম ৩ পিস, আবার মিনহাজ ও কেক আনসে ৫ পিস। সয়লাব হইয়া গেল কেকে, উড়সি মামা, সেইরকম পিনিক হইসে। এখনো হ্যাংওভার যায় নাই। ঢেকুর দিলে কেকের গন্ধ পাবি।
টিভিতে খবর হত -
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাবের একটা দল দুরপাল্লার বাসে তল্লাসী করে সাড়ে তিন হাজার পিস কেক উদ্ধার করে। ৩ যুবক আটক।
অথবা, পেপারে ছবি আসতো। কেরানীগঞ্জের বড়পুলের কাছে মডার্ন বেকারীতে পুলিশের হানা, বেকারীর মালিক আটক। বহুদিন ধরে এই কারখানায় গোপনে পিস কেক বানানো হচ্ছিল। পুলিশের ধারনা ঢাকার ভেতরে বিভিন্ন স্থানে এই পিস কেক সরবরাহ ও বিক্রী করে আসছিল একটা চক্র। যাদের বানানো পিস কেক খেয়ে হাজার হাজার স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা নেশাসক্ত হয়ে পড়ছিল। পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন তাদের তল্লাসী জারী থাকবে। ঢাকায় একটাও কেক বানানোর কারখানা থাকা পর্যন্ত তারা থামবেন না।

... শালার কি দিন ছিল !!!
৩ টাকা দামের গোল্ডলীফ খেতে খেতে মামুলী কেক নিয়ে কি রমরমা একটা সোরগোল ভাইবা ফেলসিলাম তখন। ব্যাপারটা এতদিন মনের চিপায় পড়ে ছিল নিছক আড্ডার বিষয় হিসাবে। এত বছর পরে আইসা দেখি, সরকার আমাদের চেয়ে তিন কাঠি সরেস। আমরা কেক কে আর কতটুকু অপবাদ দিতে পারলাম, সরকার নাকি পর্ন নিয়া বিশাল সিরিয়াস।
আমাদের মত করে ভাবতে থাকেন, কেকের জায়গায় পর্ন বসান
দেখবেন এমন করে সব মিলে যাবে ...

No comments:

Post a Comment