Sunday, December 9, 2018
আরবান পোয়েট
সে আসে ধীরে,
নিঃশব্দ চাকায় কালো অডিতে চড়ে।
সদরে দাঁড়ানো গার্ড
খুলে, মেলে ধরে
চলমান বেহেস্তের দরজা,
তা থেকে নামে বৃদ্ধ এক
অজর, দিব্যকান্তি
কালো কোট, কাল স্যু
এক কনা ধুলা নাই,
জীর্নতা, জরা, ক্লেশ তাকে
ছুঁতে পারে না।
তার ক্ষমতা আর দম্ভের উঁচু দেয়াল ডিঙ্গিয়ে
কখনো উঁকি মারেনি অভাব।
সে কোন সুদুর অতীত হতে
প্রাচুর্যের বজরা ভাসিয়ে
বয়ে যায় মহাকাল ধরে ...
২০১২ সালে দেড় মিনিটে এই কবিতাটা নির্মান করেছিলাম, এক চাকুরীর ইন্টারভিউয়ে অপেক্ষার সময়। একে কবিতা বলা যায় কি-না জানিনা, কবিতা সাধারণত লেখা হল বলা উচিত। কিন্তু আমি কবিতাটা লেখার সুযোগ পাইনি। মাথার মধ্যে শব্দ আর লাইনগুলা সাজায়ে নিয়েছিলাম শুধু। এই কবিতা লেখা হবে এমন সম্ভাবনাও নাই। হাতের কাছে কবিতা লেখার কাগজ কলম ছিলনা, তাই মুখস্থ করা ছাড়া উপায় ছিলোনা। মোবাইলে লেখা যায়, কিন্তু তখন আড়াই মাস যাবত আমার টাচ মোবাইলের স্ক্রিণের টাচ সেন্সর ঠিক মত কাজ করছিলো না। নির্দিষ্ট কিছু অক্ষরে টিপতে টিপতে আঙ্গুলের মাথা ভেংগে ফেল্লেও টাইপ হয় না। সময়ের সাথে সাথে প্রেমিকাও প্রেমময় স্পর্শে পুলকিত হওয়া ভুলে যায়, আর এটা তো দুই বছরের পুরোনো সাড়ে ছয় হাজার টাকার সিম্ফোনি সস্তা মোবাইল। আমি মাথার মধ্যে গরম কবিতা নিয়ে বসে আছি, কথাটা মনে হয় ঠিক হল না, কবিতা গরম হয় না। মাত্র রান্না করা খাবার গরম হতে পারে, কবিতা সদ্য নির্মিত হলেও গরম হবার কথা না। আচ্ছা, নবজাত কবিতার তাপমান কেমন হতে পারে ? হিম ঠান্ডা কি ? অনেক বরফ কুঁচি দেয়া মিন্ট মোহিতো'র মত ? নাকি তেতুল, মরিচ গুড়া দিয়ে মাখানো কচি ক্ষিরা ভর্তার মত ? নির্দিষ্ট কোন তাপ নাই, স্বাদই মূখ্য? আমার কাজই তো ভাবা। যেন তরতাজা একজন আরবান পোয়েট। কবিতা লিখলেই যে কবি হয়ে যাব এমন কোথাও লিখা নেই আর কবি বল্লেই যে শ্বাশত একটা আউলা, উদাস, আত্মভোলা চেহারা মাথায় আসে, আমি মোটেই সেই ছকে পড়ি না। আমি হচ্ছি আধুনিক নাগরিক। মানুষ যেই পরিবেশে জন্মে, বেড়ে উঠে, সেই উপাদানে কল্পনা করতে অভ্যস্ত হয়। পরিবেশ আর সমাজের মৌলিকতা দিয়ে কবির পোশাক, অভ্যাস, চেহারা দাঁড়ায়। পল্লিনকবি লুঙ্গী পরবে, পুষ্কুনীতে ডুব দিয়ে গোসল করে, গামছা দিয়ে গা মুছবে, বড় বড় নলা করে মোটা চালের দুই থালা ভাত খাবে এটাই স্বাভাবিক। মধ্যবিত্ব মফস্বলের কবি নারকেল তেল দিয়ে চুল আঁচড়াবে, সস্তার হাফশার্ট আর ফালতু রেক্সিনের খোলা স্যান্ডেল পড়বে, ডারবি সিগারেট খাবে, ব্যার্থ প্রেমের প্যানপ্যানানী বিরহের কবিতা লেখবে। আমি হচ্ছি মেট্রোসিটির নাগরিক, আমারতো উদাস, আলাভোলা হবার দরকার নাই। সুচতুর মহানগর সিটিজেনের চেহারায় চতুরতা থাকবে, আমারও আছে।
গত দেড় ঘন্টা ধরে, বসে আছি এক অফিসের লবিতে। আপনাদের আরবান পোয়েট এখানে অপেক্ষমান ইন্টার্ভিউ এর জন্য। ফিল্ড রিপ্রেজেন্টেটিভ নেয়া হবে, এপ্লাই করেছিলাম, ৪৩ জনের সাথে আমারও ডাক পড়েছে ইন্টার্ভিউতে। আমার সিরিয়াল ৫। এরা লোক নিবে ১৫ জন। ৪০ মিনিট আগে হ্যাংলা পাতলা, স্কুলের ফার্স্টবয়ের মত দেখতে এক যুবক এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এসে জানিয়েছে ইন্টার্ভিউ শুরু হতে দেরি হবে। হঠাত করেই গ্রুপের চেয়ারম্যান একটা মিটিং ডেকেছে সাড়ে দশটায়। যারা ইন্টার্ভিউ নেবার কথা, তাঁরা সবাই সেই মিটিং এ থাকবেন। সেটা শেষ হবার পর ইন্টার্ভিউ শুরু হতে পারে।
ভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েশন করার সময় নিজের নামের উপর প্রথম ক্রিয়েটিভিটিটা খাটিয়েছিলাম। ২১ বছরের আধুনিক ছেলের জন্য সারনেমটা নামটা একটু বেশি ভারী। মাঝে মাঝে মনে হত, তার নামের শেষ অংশ টা এতই পুরানো যে এর থেকে পুরানো ভাংগা বাড়ির দেয়ালের স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ বের হয়। অন্য কেউ সেই গন্ধ পায় কিনা জানা নাই, কিন্তু নতুন নতুন সুন্দরী কোর্সমেটদের সাথে এনরোলমেন্টের সময় নাকে সেই গন্ধ যেত। মনে মনে কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিজের নামটা আউড়াতাম।
ধুর বাল, কোনো ভাবেই এই চটের বস্তা নামটাকে কুল ভাবে প্রোন্যান্স করার উপায় নাই। নাম নাকি রাখসিলো ছোট মামা। মনে পড়লেই একবার করে বলে উঠি "হারামজাদা"-বাদামভাজা।
ভার্সিটিতে থাকতে নাম খুব কায়দা করে রাখসিলাম শুভ্র দি ম্যান। শুভ্রকে কে আধুনিকায়ন করে দি ম্যান। খারাপ না। হঠাৎ একদিন মনে হল, এসব সাধারন শিক্ষা দিয়ে তার কিছু হবে না। আমি আসলে কথার শিল্পী। কথা দিয়েই আমি দুনিয়া আউলায়ে ফেলবো।
কিন্তু কথা দিয়ে দুনিয়া আউলানো সম্ভব না। দুনিয়া আউলানোর কথা শুধু ধর্মগ্রন্থে থাকে। বাস্তব জীবনে কথার কোন দাম নাই। ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখে কিছু অল্প বিস্তর লাইক পাওয়া যায়। তবে সুবিধা হচ্ছে, নেশা পানির বদভ্যাস থাকলে, মাগনা খাতির জোটে। থার্ড ইয়ারে দুক্লাস জুনিয়র মুমুর এর সাথে রিলেশান ছিল। প্রথম কয়েক সপ্তাহ মুমু খুব পাত্তা টাত্তা দিচ্ছিলো। সময় খুব ভাল গেল সেই চারমাস। ফেসবুকে রিলেশানশীপ চেঞ্জ হয়েছিল। ৯ মাসের মাথায় মুমু মিন্টুর চা দোকানের চিপায় বসে ক্যাপ্টেন সিগারেট খেতে দেখে ডেকে বলেছিল
- ইউ নো, দিস থিংস আর নট ওয়ার্কিং ...।
আরো কি কি জানি ইতং বিতং কথা বলে যাচ্ছিল। সে সব মাথায় ঢোকে নাই। মাথায় শুধু ঘুরতেসিল থিংস আর নট ওয়ার্কিং মানে কি ? আর কিভাবে ওয়ার্ক করবে ? মুমুর ফুট ফরমাশ খেটে ৭/৮ মাস নষ্ট করার পর আমি যখন আস্তে আস্তে মিয়া খলিফার বদলে মুমুর ছবি ভাবতে শুরু করলাম, তখন শুনলাম এটা নাকি ওয়ার্ক করছে না। যাই হোক ছ্যাকা টা খাবার পর ভালোবাসা টাসা থেকে মন উঠে গেল। এক রাতে ৪ স্টিক গোল্ডলিফ খেয়ে লিখে ফেলেছিলাম......
মুমু তুমি হট ছিলে
আমি কুল ছিলাম না,
তাই ফলাফল যেনো-
মলম পার্টির হাতে পড়ে
খুইয়ে ফেলেছি সর্বস্ব,
আর জ্বলতে জ্বলতে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
ক্লাস নোটের খাতায় এই লেখা দেখে তার বন্ধু জীবন বলসিলো এইটা কি ?
- কেন কি মনে হয়
- আরে কস না কি এইটা ?
- কবিতা। বলে ঐদিন আকাশের দিকে তাকায়ে দাড়ি চুলকানোর চেষ্টা করসিলাম
- কানশা বরাবর চটকানা দেয়া দরকার তোরে, এই গু এর নাম কবিতা ? এইটা গুবিতা হইসে । কাঁচা গুয়ের গন্ধ আসতেসে।
- না বুইঝা কথা বলস কেন ?
- না বোঝার কি আছে ? মুমু তোরে উষ্টাইসে, আর তুই সেইটারে মিলাইছস মলম পার্টির লগে । বেকুব ।
- নাগরিক কবিতায় কষ্টের উপমাও নাগরিক হওয়া উচিত। তুই এগিলি বুঝবিনা ।
- তুমি খুব বুজছো , না ? ওর লগে যে তোর যায় না, এইডা তোরে আমি গত বছর কইসিলাম , মনে আছে ? তখন তো পাত্তা দেস নাই, এখন গুবিতা বাইর হইতাসে , না ?
তো মূল গল্পে আসি, কোম্পানীর চেয়ারম্যান এসে নামলো অফিসের সামনে । তার অডি গাড়ি, হাব ভাব দেখে তখনই মাথায় কবিতাটা তৈরি হয়েছিল। এই মহাজন মিটিং করবেন, তারপরে তার ইন্টার্ভিউ হবে। নীল পলিস্টারের সাফারি টাইপ ইউনিফর্ম পরা একজন পিয়ন এসে আমার সামনে চা দেয়। আমি ছাড়াও আরো দুই তরুন আর এক জন তরূনী বসে আছে ফাঁকা ফাঁকা হয়ে লাউঞ্জে পাতা সোফায়। তাদের চেহারা , হাব ভাব দেখে মন হয় কঠিন প্রস্তুতি নিয়ে আসছে ইন্টার্ভিউ এর জন্য। চশমা চোখে হালকা বাদামী শার্ট পরা এক তরুন কে দেখে মনে হয় বিসিএস গাইড চাবায়ে খাইয়া আসছে। চেহারার ভেতর অতি বেকুব জ্ঞানী একটা ভাব। বলদটা একদম রেডিমেড একজিকিউটিভ সেজে ফর্মাল প্যান্ট -শার্টের সাথে লাইন টানা প্রিন্টের এক টাই ও ঝুলায় আসছে। চাকরী এদেরই মানায়। এরা অতি দক্ষ বিনয়ী প্রাণী। বসের ইশারা ছাড়া হাগামুতাও বন্ধ করে রাখতে পারবে। চায়ের কাপ দেখে আমার খুব সিগারেটের নেশা চাপে। এই কাঁচের একুরিয়ামে বসে সিগারেট খাবার কথা চিন্তাও করা যায় না। একুরিয়ামের মাছদেরকে চা দেয়া হইসে, মাছেরা এখন চুক চুক করে চা খাবে। সিগারেট না।
অদ্ভুত একুরিয়ামে
চারটা রঙ্গীন মাছ, ভাসে, খাবি খায়
জোড়াবিহীন, সকলে স্বতন্ত্র।
মাছেদের সামনে চায়ের কাপ
প্রতিটি মাছ সুযোগ খুঁজছে
একটু সুযোগ পেলেই গিলে খাবে
চা না, অন্য মাছেদের।
এই একুরিয়ামে কে কাকে খেয়ে
শেষমেষ কে টিকে যাবে, কেউ জানেনা......
পান্থপথের রাস্তার পাশে অফিস। আমি এক পাশে একটু দুরে গিয়ে সিগারেট ধরাই। এতক্ষন ফুসফুস পানিতে ডোবানো ছিল যেন। সিগারেটে লম্বা টান মেরে ভাল্লাগে। এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি, সেখান থেকে কাচেঁর দেয়ালের ওপাশে অফিসের লাউঞ্জের কোনা দেখা যায়। ইন্টার্ভিউতে কারো ডাক পড়লে ক্যান্ডিডেটদের ওঠাবসা দেখা যাবে। আমাকে চা দেয়া পিয়নটা বের হয়ে আসে। আমার কাছাকাছি এসে সেও একটা সিগারেট ধরায়, আমার কাছ থেকে আগুন চেয়ে নেয়।
আমাদের মধ্য কথা হয়ঃ-
- আমনের সিরিয়াল কত
- পাঁচ,
- আমি নুরিস্লাম, এই কোম্ফানীতে আইজ চাইর বচ্ছর।
- আচ্ছা
- কোম্ফানী বালা। সুযুগ সুবিধা দেয় । আল্লার নাম লই হান্দাই যাইতে ফাইরলে শাইন করবেন জীবনে
- তাই নাকি ? কিসের সুযোগ দেয় আপনাদের ?
- মনে করেন, ইদে চান্দে বোনাস ছাড়াও, ফ্রপিট বোনাস দিসে গেলোবারে ১২ হাজার টেঁয়া। আর আমনেরা যেই ফোস্টে ইন্টারবিউ দিবেন এটা লই তো মেলা কম্পিটিশন। খুব ডিমান্ড। ফিল্ডে তো টেঁয়ার অবাব নাই, আতাই উতাই ধইরতে ফাইরবেন। এই পজিশনে এখন ২ লাক দিও ঢুকোন যায় না এমন ফেশার।
- ২ লাখ দিয়ে কি বল্লেন ?
- বইলছি যে, এই ফজিশনে এখন হান্দাইতে ২ লাকের উরফে লাগে।
- অইত্তরী, টাকা না দিলে নিবেনা ?
- কিত্তো নিবো ? আমনে টেঁয়া কামাইবেন, চারকী দিতে, টেয়া ঢাইলতো অইবো না ?
আমার কাছে 'নুরিস্লাম' এর এলিবাই এখন পরিষ্কার হয়।
নুরিস্লাম (নুর ইসলাম) পিয়ন শুধু নামে, তার আসল কাজ দালালী। বড় কোম্পানীতে দুই চারটা সিঁদ কাটা ইন্দুর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। নুর ইসলাম এমন কোনো ধুরন্ধর অফিসারের দালাল। চাকরীপ্রার্থীদের মধ্যে টোপ ফেলে টাকা খাবার সিস্টেমের প্রথম ধাপ হচ্ছে এই মাল। মাথায় হঠাত মাথায় বুদ্ধি আসে।
- তাহলে টাকা ছাড়া হবেনা বলতেসেন ?
- আম্নে ইন্টারবিউ দি বাড়িত যাই বড় খতমের দোয়া ফইড়তে থাকেন, দেখেন হয় কিনা
- তার মানে কোনো সম্ভাবনাই নাই ?
- টু ফারসেন্ট থাইকতে পারে, এর বেশি না। এত এস্টাবলিস কোম্ফানী, খালি হাতে চারকী দেয়না। অয় ক্যাশে আইবেন, নয় লাইন গাড থাইকতো অইবো।
- ও আচ্ছা। হটাত দুম করে বলে বসলাম -
- নুরিস্লাম ভাই, আপনের কথাগুলা রেকর্ড কইরা রাখলাম, ইন্টার্ভিউ দিয়ে শুনায়ে দিব উনাদের, কি বলেন ?
নুর ইসলাম নামের লোকটা বাতাসে চটকানা খেল যেন । আমতা আমতা করতে থাকে,
- আরে কিয়া কন, আমি তো কতার কতা বইল্লাম আরকী।
আমি সিগারেট ফেলে হেঁটে আগাতে থাকে, পিছ থেকে পিয়ন ডাকে
- বাই, শুনেন বিষয়টা সেটেল করি যান না, আরে কি জাইরগা ব্যাডায়ে না রে।
আমি আবার গিয়ে লাউঞ্জে বসি। অপেক্ষমানের তালিকা আরেকটু বড় হয়ে এখন লাউঞ্জে ৭ জন বসে আছে। নতুন আগত এক তরুনী এসেছে শাড়ি পড়ে। চৌকষ জর্জেট বা শিফন না। সুতি শাড়ি পড়া তরুনীকে দেখে ভালো লাগে। বাহ বেশ তো দেখতে। এমন কারো সাথে হাত ধরে জারুল ঝরা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে প্রেম করা যায়। চাকরীর ইন্টারভিউ এর দ্বৈরথে দেখা বড়ই আনরোমান্টিক। নুর ইসলামের কাছ থেকে যা বোঝা গেল, এই অফিসে রিক্রুটমেন্ট এ ভালো রকম করাপশান আছে, হয়ত এসে বসে থাকা এখানের সবাই বিফল হবে, চাকরী পাবে অন্য কেউ, টাকা নাহয় অন্য কোনো সিস্টেমে।
মেয়েটা কেমন মুখ নীচু করে নার্ভাস ভংগীতে বসে আছে। আমার মাথায় শব্দ খেলা করে...
তুমি আমি অপেক্ষায় একই লক্ষ্যে
যেন সিএঞ্জি পাম্পের দীর্ঘ লাইনে বসে আছি,
একদম মাথায় লাইন ভেংগে অনিয়মে
কে ভরে নিচ্ছে সিলিন্ডার
জানিনা জানিনা
এক সময় ইন্টার্ভিউ শুরু হয়।
একে একে প্রথম ৪ জন ভেতরে ডাক পেয়ে যায়। ফিরে আসে ১৫-২০ মিনিট পর। পুরোটা সময় এলোমেলো কত কী চিন্তা করি, এইসব চাকরী বাকরী করে কি হবে ? নয়টা ছয়টা এই নিয়ম ধরা হুকুমের কাজ করে নিজেকে বিক্রী করে দিয়ে লাভ কি ? দিন দিন একটু একটু করে বেতন বাড়বে, কয়টা টাকা বেশি আসবে, বিয়ে, বউ, বাসার ফার্নিচার, ট্যা ট্যা বাচ্চা, বাচ্চার স্কুলের ফিস, কোচিং এর ফিস, ডিপোজিট, ছেলে মেয়ের বিয়ে, বুড়ো বয়সে নিজের ডায়বেটিস , হার্টের অপারেশান, তারপর দুম করে একদিন ফিউজ। সিস্টেমেটিক ওর্থলেস লিভিং। কোনো মানে হয় ?
এক সময় আমার ডাক আসে।
ভেতরে ইন্টার্ভিউ বোর্ডের সামনে আমি বসে, পাঁচজন দিব্যকান্তি পুরুষ যেন পঞ্চ পান্ডব। আর আমি কর্ণের মত ধীর, নির্ভয়। চাকরীর জন্য আমি লালায়িত না। ইয়েস বস এই এক শব্দ জীবনে লাখ লাখ বার বলার চেয়েও সে লাখ লাখ আলাদা শব্দ গেঁথে গেঁথে এক জীবন ভরায়ে ফেলতে পারবে।
গম্ভীর এক পান্ডব প্রথম প্রশ্নের তীর ছুঁড়ে
- ১০ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান ?
- কোথাও না
- কেন ?
- আমার বয়স ২৫, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মরেই গেসেন ৩৪ বছর বয়সে, সো ৩৫ বছরে আমি কই আছি এটা ম্যাটার না
- গেট লস্ট !!!!!!!!!!!
গেট লস্ট বলে হারিয়ে যেতে বলা হলেও, আমরা হারাই না।
নগর যতরকম চতুরতার জাল বিছায়ে রাখুক। জাল কেটে, ফাঁদ পার হয়ে আমরা টিকে থাকি এই নগরে।
এবং আজ-অবদি আছি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment