১৭ বছর বয়স থেকে ইউসুফ ভালোবাসে জুলেখাকে।
জুলেখার বাড়ির আশে পাশে
ইস্ত্রি করা শার্ট পরে গায়ে সেন্ট মেখে অনেক ঘুরসে ইউসুফ। জুলেখা পাত্তা
দেয় নাই। রাস্তা দিয়ে জুলেখা পাশের বাড়ির দুই মেয়ে সহ বুকে বই চেপে যখন
স্কুলে যাইতো তখন কখনো শিস দিসে, কখনো পোতাইন্না গোলাপ ফুল ফিক্কা মারসে,
কখনো মাসুম মিয়ার মটর সাইকেলে চইড়া পাশ দিয়া গান গাইতে গাইতে গেসে, কখনো
রাস্তা ফাঁকা বুইঝা জুলেখার ওড়নাও টান দিসে, কাজ হয় নাই। জুলেখা পাত্থরের
মত মুখ কইরা সব উড়াইয়া দিসে। কথা কয় নাই। কইলেও একলাইন -
- আব্বারে কইয়া দিমু কিন্তু !!!
জুলেখার
আব্বা তেমন বড় হেডম না। তাও ইউসুফ এই এক কথায় চিনা জোঁকের মত কুকড়াইয়া
সইরা গেসে সব সময়। আসলে ইউসুফের মনে প্রেম পিরিতি যাও বা দুই চাইর চামুচ
আছে, সাহস তো এক ফোটাও নাই। পাতলা পাতলা মোচ উঠার বয়সে যেই জুলেখারে তার
মনে ধরসে, এখন ২৬ বছর বয়সে গালভরা গ্যাজগ্যাজা দাড়ি চুলকাইতে চুলকাইতে
ইউসুফ ভাবে, জুলেখারে কেমনে পাওনা যাইব । যাদের এমন প্রেম হয় ১৭ বছর বয়সে,
তাদের আক্কেল হয়না সময় মত। ইউসুফেরও হয় নাই। এই এক জুলেখার লগে সিস্টেম
কইরা দেওনের লোভ দেখাইয়া ইউসুফরে অনেকেই ভাঙ্গাইয়া খাইসে। বন্ধু বান্ধবের
কাছে ইউসুফ যে কাঠ বলদের চেয়ে বেশি দাম পায় না এইটা বুঝার আক্কেলও ইউসুফ
এখনো জোগাড় কইরা উঠতে পারেনাই। রিকশায় কইরা জুলেখা যাওনের টাইমে চা দোকানের
আড্ডার ভিতর থেকে কেউ হয়ত দাঁত কেলাইয়া হাসতে হাসতে কয়
- কেডা যায় ? ইউসুফের বিবি নি ?
শুনে
বাকিরা খ্যাক খ্যাক করে হাসে, ইউসুফের বড় ভাল্লাগে। এইটুকুই তার পাওয়া।
লেখাপড়া তো সেই ক্লাস নাইনের পর আর আগায় নাই। কিন্তু দুনিয়া তো ইউসুফের
লাইগা বইসা নাই। দুনিয়া আগাইসে, জুলেখাও আগাইসে। এলাকার স্কুল, থানার কলেজ
পার কইরা জুলেখা এখন ভার্সিটিতে পড়ে। ইউসুফ আর জুলেখার দেখা পায় না সরাসরি।
বন্ধুবান্ধবের বুদ্ধিতে ইউসুফ ২৭ হাজার টেকা দিয়া স্মার্টফোন কিনসে,
ইন্টারনেট চালায়, জুলেখারে ফেসবুকে দেখে ফোন খুইলা দিনে কমসেকম ২০ বার। ৪
বার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইসে, জুলেখা এক্সেপ্ট করে নাই। এক প্যাকেট বেনসন
কিনা দিবার পর দোস্ত বাদল সিস্টেম কইরা ফলো করাইয়া দিসে, তাই জুলেখার ছবি
টবি দেইখা হা পিত্তাশ কইরা ইউসুফের দিন যায়।
বেক্কল ইউসুফের এই
বাদাইম্মা প্রেম এমনেই শুকাইয়া ধুলা ধুলা হইয়া যাইতে পারতো । কিন্তু একটা
ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরাইয়া দিসে। হাজার হাজার এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে
জুলেখার বাবা ঘোষনা করসে, ইউসুফের লগে জুলেখার বিয়া দিবে। বিয়ার তারিখও
পড়সে। সামনের শবে বরাতের পরের দিন।
চা দোকানে আজকে ইউসুফের দামই আলাদা।
কেউ ফিচকা কোনো বদমাইসী করতেসেনা ইউসুফের লগে। কি কামডা করসে ইউসুফ!!
জুলেখার মতন সুন্দর, শিক্ষিত মাইয়ারে বিয়া কইরা ফালাইতেসে, মুখের কথা ?
কেমনে কী ? একজন খুব লেহাজ কইরা ইউসুফের দিকে এক কাপ চিনি বেশি, কড়া পাত্তি
দুধ চা আগাইয়া দিয়া কইলো
- দোস্ত ঘটনা ঘটাইলা কেমনে ?
ইউসুফ মিটিমিটাইয়া হাসে। আর মাথা নাড়ে। তারপর বিজ্ঞের মতন মাথা দুলাইয়া দুলাইয়া কয় ।
- আল্লাহ আছে । বুচ্ছনি মিয়া, আল্লাহ আছে। আল্লাহর ঘরে ডাক দিলে কপাল খুলে ।
এমন মারফতি কথার মানে কেউ বুঝেনা। সবার চোখে প্রশ্ন। ইউসুফ বলে ।
-
রাজাকারের বিচারের বছর মসজিদের মাইকে কইসিলো না, সাইদী হুজুররে চান্দের
গায়ে দেখা গেসে ? কইসিলো । বিশ্বাস করসিলা না ? সবাই মিল্লা মিছিল করসিলা
না ? পুলিশে পিডাইয়া ঘরে উডানির পরেই না ক্ষ্যান্ত দিসিলা।
সম্মিলিত
যুবকেরা মাথা দুলায় । কথা সত্য। সবাই মাইকে শুইনা বিশ্বাস কইরা কত আন্দোলন
করসিলো। পরে অবশ্য অনেকে বুঝসে চান্দের গায়ে দেখার মতন বুজুর্গ হুজুর সে না
। তাতে কী, যা হবার তা তো হইসেই। ইউসুফ বলে যাইতেসে
- ঢাকায় হেফাজতের জেহাদের সময় মসজিদে মাইকে কইসিল না ? লাখ লাখ মুমিন মাইরা লাশ গুম হইসে ? বিশ্বাস গেসিলা না ? গেসিলা তো ।
মসজিদের
মাইকে কইসে, হেড মাস্টারে স্কুলে ধর্ম লইয়া কু কথা কইসে বিশ্বাস করসিলা না
? সবাই মিল্লা গিয়া হেই বেডারে কানে ধইরা উঠান বসান করাইসো না ? করাইসো তো
। হাতে তালিও দিস, শ্লোগানও দিস। দিস না ? আমি ভাইবা দেখলাম এই মসজিদের
মাইকের উপরে জিনিস নাই। তাই পরশুদিন আসরের আজানের আগে দিয়া আমি মসজিদে
হান্দাইয়া মাইকে চিক্কুর দিয়া কইসি "প্রিয় এলাকা বাসী এই আসরের ওয়াক্তে আমি
আপনাদেরকে ঘোষনা করিতেসি আমি ইউসুফ মিয়া, ভুইয়া বাড়ির জুলেখা আক্তারকে
ভালোবাসি। আমার সাথে তার বিয়ার ব্যাবস্থা কইরা দ্বীন ও দুনিয়ার অশেষ নেকী
হাসিল করুন।"
মসজিদের মাইকের ঘোষনা এলাকাবাসী ফেলতে পারে নাই। কার
বুকে এত বড় পাটা মাইকের ঘোষণা অগ্রাহ্য করে? মসজিদের মাইক বইলা কথা। তাই হই
হই কইরা এলাকার লোকজন জুলেখার বাড়ি ঘিরা দিয়া ফালাইসিলো। জুলেখার বাপেরে
ধইরা ডলা দেওনের আগেই ব্যাডায় রাজি হইয়া গেসে, শেষে না উত্তেজিত এলাকাবাসী
বাড়িতে আগুন দিয়া জুলেখারে পাথর মাইরা কতল করে এই ভয়ে...
একটা মসজিদের মাইক কি না পারে ???
No comments:
Post a Comment