Wednesday, December 19, 2018

কবি

আমায় ছুয়েছিল তোমার
দারুচিনি ভালোবাসা।
হাত বাড়িয়ে খুঁজেছি মৃদু সুবাস কিন্তু
বারবার ঘষা খেয়ে রক্তাক্ত হই
নীরস শুষ্ক ছালে
১০০ গ্রাম ৩৮ টাকা ...

- দুহাজার উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় আপনি এমন বাস্তব রূপকের আরেকটা একজাম্পল দেখাতে পারবেন ? পাবেন কিছু, কিন্তু এমন শক্তিশালী না। আরে অন্যরা উপমা ধার করে কেটে কেটে এনে বসায়ে দেয়, আমি তো তাদের মত না। বুঝলেন ? আমি আপনার, মনে করেন রূঢ় বাস্তবতা থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রূপক টুকু তুলে খামচি দিয়ে এনে কবিতায় বসাই । আমার কবিতা সদ্য কাটা ধমনী থেকে গলগল করে বের হওয়া রক্তের মত, পবিত্র, আপোষহীন। নোংরা নর্দমার কালো কাদাপানির ভেতর থেকে ...

- খাইসেন দুপুরে ?

- না, সময় পেলেম কোথায় ? আপনার সাথে কাব্য আলোচনায় জড়িয়ে খিদে ভুলে যাচ্ছিলাম প্রায়। আপনি বলার পর সামান্য খিদে টের পাচ্ছি। আমার অবশ্য এইসব শারীরিক ছোটখাট কষ্ট সয়ে যেতে ভালোই লাগে, খিদের জ্বালাটুকু, তুমুল পেশাবের চাপ, তারপর মনে করেন দীর্ঘ মৈথুনবিহীন যৌবনের অন্তর্দহন ।

- খাবেন এখন ?

- আরে কি বলেন না বলেন? আমি মন ভাংতে জানিনা। প্রতিটা আত্মা নিসৃতঃ পবিত্র মায়ার একটা আলো আছে জানেন ? সবাই সেই আলো দেখতে পায় না। কবিরা পায় । সে আলোয় প্রকৃত কবিরা অন্ধ উই পোকার মত এগিয়ে যায়। মায়ার আহবান ফেরানোর শক্তি কবিদের নাই। আপনি এত মায়াসিক্ত আহবান করলেন  খাবারের জন্য, আমি ফেরাবো না।

- আচ্ছা দাঁড়ান খাবার দিতে বলি, কি খাবেন ?

- হা হা হা হা । আমাকে প্রশ্ন করবেন না সুজনেষু, আমি বাছবিচারের তূল্যমূল্যের বিভেদে আটকাতে চাইনা নিজেকে। তাহলে তো আর কবি হতে পারতাম না। ভালোবেসে নেমন্তন্ন করেছেন, আপনার আয়োজনের পুরোপুরি স্বার্থকতা নির্ভর করবে আমার গ্রহনে, বর্জনে নয়। দিতে বলেন যা যা আছে। সব খেয়ে নেব চেটেপুটে, তারপর রৌদ্র  খাব, সংস্কৃতি খাব, নগর - গ্রাম সব খাব। সব শেষে এক চুমুকে খেয়ে নেব কবিতাটুকু। তারপুর তুলবো তৃপ্তির ঢেকুর।

- এই মামা, আমাদের দুইটা সমুচা দাও, কাচামরিচ দিও সাথে

- শুধুই সমুচা ? আপনি রসিকতা করলেন মনে হোল। বেলা দ্বিপ্রহর। এমন বেলায় ভারী মধ্যভোজন ছাড়া কি জমে ? হতে পারে আপনি স্বল্পাহারী। তবে আমি এই বাংলারই লোক। বাংলার আলো হাওয়ায় আমার ভেতরে সৃষ্টি করে মেঠো কৃষকের মতন, হাপর টানা কামারের মতন দাউ দাউ খিদে। সে খিদের অনলে শান্তি জুড়ুতে পারে শুধু থালা ভরা পলান্ন, হাহাহা

- আসলে ভাই টাকা নাই আমার কাছে । ৩৬ টাকা আছে পকেটে, আবার বাসায় যাব তো ।

- ফইন্নির পোলা। মশকারী চোদাস ? তোর সমুচা আমি তোর হোগা দিয়া ভইরা দিমু মাদারীর পুত। ব্যাডা তোর পীছে আধ ঘন্টা টাইম দিসি । এতক্ষন হুদা কথা কইলেও মানুষে ভাত খাওয়ায় । ৮ ফর্মার কবিতার বই গিফট দিসি তোরে আর তুই আমারে এই বিকাল ৩ টার সময় সুমুচা সাধোস । ২০০ পীস রাইটার্স কপি বই কি আমি মাগনা মাগনা হোগার তলে দিয়া বইসা থাকুম ? কবিতা কি খালি পেডে পাদ মারলে বাইর হয় ?? তাড়াতাড়ি ভাতের অর্ডার দে,  তুই কি মনে করছস আমারে ?
টান দিয়া গলা ফাইড়া তোর কলিজার ভিত্তের তে কবিতা বাইর কইরা আগামী মেলায় ছাপাইয়া দিমু ...

ক্ষুদার্ত কবি খুব হিংস্র। কামড়ায়ে দিতে টিতে পারে, সময় খারাপ...

No comments:

Post a Comment