মাঝহার কোনোদিন জিপিএ ফাইভ পায় নাই।
পাইবো কেমনে ? মাঝহার তো এস এস সি পরীক্ষাই দেয় নাই।
ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষার পর মাঝহারের আব্বারে স্কুলে ডাকাইসিল। হেডস্যার
এর রুমে মাঝহারের বাপ ১৭ মিনিট ছিল, মাথা নীচু করে। সেই দিন রাতে মাঝহার
বাসায় ঢুকার পর প্রথমে কষাইয়া একটা লাত্থি আর তারপরে প্যান্ট থেকে বেল্ট
খুইলা আচ্ছামত মাঝহাররে বানাইসিলো। সেই দিনের পর থেকে মাঝহার সোজা হইয়া
গেল। পড়ালেখার লাইনেই আর মাঝহার নাই। পরীক্ষা জিনিসটা খুবই খারাপ। এই
ছাতার মাথা পরীক্ষা দিলেই আসে রেজাল্ট, আর রেজাল্ট খারাপ হইলেই আসে
মাইরধরের ব্যাপার। তার চে" ভাল পরীক্ষার সাইডেই না যাওয়া।
তো মাঝহার লেখাপড়া করেনাই করসেটা কী ?
মাঝহার স্কুল কলেজের ভিত্রে হান্দায় নাই ঠিকই, কিন্তু এই গত ৬ বছর স্কুল
কলেজের বাইরে, রাস্তা ঘাটে ঠিকই ছিল। আদর্শ বাদাইম্মা জীবনে মাঝহার যে কিছু
শিখে নাই তাও না। মাঝহার শিখসে অনেক কিছু। সবই জীবনমুখী শিক্ষা। কাজের
জিনিস। কাজে লাগানোর জিনিস। স্কুল কলেজে শিক্ষিতরা নানা মতে, নানা পথে
মতবিভেদ করে, দুই দলে বা নানা দলে ভাগ হইয়া পড়ে। তর্ক বিতর্ক, হাতাহাতি
বা কোপাকুপি করে। মাঝহার কিন্তু এইসব সামাজিক তুচ্ছতার ভাগাভাগির ভিত্রে
নাই। মাঝহার খুবই অসাম্প্রদায়িক। খুবই উদার। তার কাছে হিন্দু-মুসলমান,
আওয়ামী লীগ - বিএনপি, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব, গুলশান - কামরাঙ্গীর
চর, দিন-রাত কোনো ভেদাভেদ নাই। মাঝহারের কাছে সব সমান।
করেটা কি, মাঝহার ?
খুব ভাল প্রশ্ন। কর্মহীন, সুখী, যৌনতাড়িত মাঝহার মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।
এটাই তার নেশা, এটাই তার পেশা।
সকালে ফুটপাথে হেটে হেটে নাইট-টেনের মেয়েদের সাথে কাঁধে হালকা ধাক্কামারা
দিয়া শুরু হয়। কলেজের মেয়ে ধাক্কা খায়, ভার্সিটির মেয়ে ধাক্কা খায়।
অফিসে যাওয়া মেয়ে যেমন ধাক্কা খায়, গার্মেন্টসের কর্মী মেয়েও ধাক্কা
খায়। মাঝহারের ধাক্কা খাওয়া মেয়ে দেখতে কেমন, ধর্ম কী, বাবা কি করে, বা
মেয়েটার চলাফেরা কেমন এইসব বাছবিচারে পড়ে না।
বাসে উঠলে মাঝহার যেমন বয়সের বিচার করাও ছেড়ে দেয়। মেয়ের গায়ে হাত
দেয়, মেয়ের মায়ের গায়ে ও হাত দেয়। মার্কেটের ভীড়ে, বিবাহিত হোক
অবিবাহিত হোক কনুয়ের খোঁচা বুকে নিয়ে যায় মাঝহারের সামনে পড়া রমনী।
উপলক্ষের বেলায় ও মাঝহার কি সুন্দর সাম্য মানে, ঈদের চানরাতেও মার্কেটের
ভীড়ে মজা নেয়, লক্ষ্মীপূজার ভীড়েও মজা নেয়। মজা নিতে তো অসুবিধা নাই।
সুরাইয়া হোক আর সুচরিতা দাস হোক, গায়ে হাত পড়লেও মুখ কারো খুলে না।
মাঝহার থার্টি ফার্স্টের ডিজে পার্টিতে খোলামেলা পোশাকের মেয়েদের কচলায়,
বৈশাখের মেলায় খোপায় মালা গাঁথা মেয়েদের শাড়িও টান মারে।
বিয়ে বাড়ির হলুদে নাচা হাসিখুশি মেয়েদের কেউ হঠাত যেমন মাঝহারের চাপ
খেয়ে হঠাত হাসি থামায়ে ভয় ভয় চোখে এদিক ওদিক দেখে, দোলযাত্রার হোলীর রং
খেলার কোন মেয়েও একই রকম হাসি থামায়ে নিজের জামা কাপড় সাঁটায়ে চেপে
ধরে ভয় ভয় চোখে।
মাঝহারের চোখে স্কার্ট, লেগিংস, সালোয়ার, প্যান্ট, শাড়ি, বোরকা কোনো
পোশাকই ছোট না, বড় ও না। মাঝহারের কিছু আসে যায় না। ভেতরে তো একদলা নরম
মাংস। একই তো কথা। হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না, মুসলমানে খায় না শুয়োরের
মাংস। মাঝহারের এই সংশয় নাই। তার কাছে সব রমনীর মাংসই সমান স্বাদ।
থার্টি ফার্স্টে , ক্রিসমাসে খুব বিদেশী সংস্কৃতির হাওয়া উঠে। বৈশাখ বা
বসন্তে বাজে দেশী ঢোল। মাঝহারের কানে তো কিছুই ঢোকে না। মাঝহার জানে, যতই
কচলাক, যেখানেই কচলাক, সব চুপচাপ।
শপিং এ আসা একা সাহসী মেয়ে, সন্ধ্যায় টিউশনী করে ঘরে ফেরা একটু ভীরু মেয়ে দুজনই সমান।
সুযোগ মাঝহারের কাছে আসে না। মাঝহার সুযোগ বানায়ে নেয়।
মাঝহার সুখী, মাঝহারই পুরুষ।
কোনো সিসি ক্যামেরা, টিভি ক্যামেরা, মোবাইলের ক্যামেরায় মাঝহারের মুখ চেনা যায় না।
সব মুখই মাঝহারের মুখ, সব চেহারাই মাঝহারের চেহারা
মাঝে মাঝে মাঝহারই যেন বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment