Thursday, December 27, 2018

গালগপ্প মহাভারত

ভারতীয় পুরাণ ঘেটে ইতিহাস খুঁজতে যাওয়ার সব থেকে বড়ো ঝামেলাটা হল এসব পুরাণের রচয়িতা ঋষি কিংবা কবিদের অন্য কোন বিষয়ে কোন জ্ঞান ছিল, আর কোন বিষয়ে ছিল না তা নিশ্চিত হওয়া যায়না। তবে সেটা নিশ্চিত না হলেও একটা বিষয় পরিষ্কার যে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সময়-সংখ্যা কিংবা ইতিহাস জ্ঞানের কোনো অস্তিত্ব ছিল না; অথবা অদরকারি মনে করে তারা এই তিনটা জিনিসের সাথে বাচ্চা শিশুদের মতো খেলা করে গেছেন। সময় মাপতে গিয়ে তারা ষাট বছর আর ষাট হাজার বছরে যেমন কোনো ফারাক করেননি; তেমনি সৈন্যসংখ্যা একশোরে একশো কোটি বলতেও আপত্তির কিছু দেখেননি। একইভাবে নতুন কবিরা যখন সাহিত্য রচনা করছেন কিংবা পুরাতন সাহিত্য সম্পাদনা করছেন তখনো কিন্তু আশপাশের ঐতিহাসিক উপাদানগুলোকে বাদ দিয়ে কোন কালের সেই কল্পিত ঐতিহ্যর লোকস্মৃতি ঢেলে সাজিয়েছেন নিজের পুস্তকের সমাজ বাস্তবতা। যার জন্য দুই হাজার বছর আগের আর পরের সাহিত্যে সমাজ বাস্তবতা মূলত কপিপেস্ট ছাড়া কিছু না...

ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইতিহাস চর্চার মূল কনসেপ্টাই হল কাল্পনিক এক সমৃদ্ধ অতীতের কাবিক্য চিত্রকল্প নির্মাণ। অনেকটা শাহ আবদুল করিমের গানের মতো- আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম-এর নস্টালজিয়া অথবা জীবনানন্দের মতো কোনো এক শ্রাবস্তির কারুকার্য কল্পনা করে তাব্দা খেয়ে বসে থাকা। সকলেই মনে করে আগের দিনগুলা ছিল খুবই দারুণ। মূলত এটা একটা নতুনত্বভীতি আর বুড়ামির প্রতীক। এর জন্য সকলেই  শুধু কল্পিত এক নতুন দিনের সাধনা করে; আর কবিরা সেটা নতুন করে রচনা করে আবার প্রচারও করেন নতুনের মতো। কল্পিত রঙিন অতীত নির্মাণের এই বাজে অভ্যাসটা এখনো আছে আমাদের সংস্কৃতির মাঝে। বর্তমান সময়ে রচিত আমাদের গানগুলায় এখনো নদীর পাড়ে বসে রাখাল বাঁশি বাজায় আর মেয়েরা কলসি নিয়ে পানি তুলতে নদীঘাটে যায়। অথচ গত তিন দশক ধরে যেমন রাখাল পেশাটাই বাংলাদেশ থেকে নাই হয়ে গেছে আর চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ নদীর পানি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সেইটার কোনো সংবাদ নেই এইসব লোক সাহিত্যের পাতায়....

পুরাণগুলোর মধ্যে যে টুকটাক ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায় সেইগুলো মূলত সাহিত্যে ছড়ানো ঘৃণার বাক্য কিংবা লেখকের মূর্খতার ফাক ধরে। রামায়ণে যখন রামের মুখ থেকে জাবালিকে বৌদ্ধ বলে গালি শুনি তখন আমাদের বুঝে নিতে হয় যে, যেই সমাজে বসে রামায়ণ লেখা হয়েছে সেই সমাজে তখন বৌদ্ধ বিপ্লবের ঠেলায় হিন্দু ধর্ম বিপন্ন। আবার বিশ্বামিত্রের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যখন বশিষ্ঠের কামধেনুরে যবন সৈন্য উৎপাদন করতে দেখি তখন আমাদের ধরে নিতে হয় যে মহাভারতের এই বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্র যুদ্ধটা হয় হয়েছে ভারতে গ্রিকদের আগমণের পর; না হয় যারা এই গপ্পটা মহাভারত-রামায়ণে ঢুকিয়েছেন তারা ভারতে গ্রিক অভিবাসনের পরের মানুষ। অথচ ঘটনার বর্ণনাগুলা কিন্তু সেই আদি কাল্পনিক। বশিষ্ঠ সেখানে যেমন তার আদি কাল্পনিক অলৌকিকত্ব নিয়া বসে আছেন তেমনি তার কামধেনুও কাল্পনিক; তার অস্ত্রপাতিও কাল্পনিকতার কপি পেস্ট...

মহাভারতে কুরুযুদ্ধ হোক বা না হোক; যুদ্ধ শেষে পাণ্ডবপক্ষ জিতুক বা কুরুপক্ষ জিতুক; যুধিষ্ঠিরের কিন্তু ঐতিহাসিকতা আছে। আর সেই ঐতিহাসিকতার হিসাবে যুধিষ্ঠির ভারতে লোহার ব্যবহার শুরু হবার আগের যুগের মানুষ। অথচ যুধিষ্ঠিরকে ঘিরে কবিরা যে কুরুযুদ্ধ রচনা করছেন তাতে সম্পূর্ন লোহার খনি ঢেলে দিয়েছেন। পুরো কুরুযুদ্ধই লোহার অস্ত্রে ঝনঝন করছিলো। মহাভারতে রাজপুত্ররা প্রাচীন গদাযুদ্ধ মল্লযুদ্ধই শিখত; রামায়ণে গদার উল্লেখ নেই। তীর ধনুকের ব্যবহারই বেশি। অথচ যুধিষ্ঠিরের সমসাময়িক মানুষ মরে গিয়েছিলেন লোহা আবিষ্কাররে অনেক যুগ আগে। কিন্তু সেই হিসাবটা ছিল না কবিদের মাথায়...

হরপ্পায় পাথরের দালান ছিল; খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালে। আর্য প্রভাবিত ভারতীয়রা যখন আবার স্থাপনা বানাতে শুরু করে তখন সেটা  খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০। এবং এটা শুরু হয় কাঠের দালান দিয়ে। পাথর না। ভারতে আর্যদের হাতে প্রথমরের মতো পাথরের দালান বানানো শুরু হয় গুপ্ত যুগে; ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। তাহলে রাবণের বাড়িতে অত দালান আসে কেমন করে?

মহাভারতে কোনো স্থাপনার কথা কিন্তু ছিল না। রামায়ণে ইটের দালানের কথা আছে কিন্তু পুরা মহাভারতে কোনো বাস্তুশিল্পের উদাহারণ নাই। পুরোচন বারণাবতে সম্রাজ্ঞী আর যুবরাজের জন্য যে ঘরটা বানানো হয় সেটা কিন্তু কিন্তু বাঁশ-বেত শনের ঘর। অন্যদিকে রামায়ণে স্থপতিরা বেশ উপস্থিত। ইটের ব্যবহারও আছে। দালানও আছে। তবে লঙ্কায় ইটের দালান ছিল বলে মনে হয় না। লঙ্কার সবগুলা বাড়িঘর প্রাচীরই ছিল সাধারণভাবে দাহ্য; মানে কাঠ বাঁশের স্থাপনা। যদিও রাবণের দশটা গুণ বা দক্ষতার মধ্যে একটা ছিল বাস্তুশিল্প বা আজকের যুগের স্থাপত্যশিল্প...


অতঃপর হনুমানের ল্যাঞ্জা বিষয়ক মারামারি বিজ্ঞানি আর ভক্তজনেরা করবে। এই পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষ যুগ যুগ রামায়ণকে নিরঙ্কুশ সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে এবং রামকে ভগবানের অবতার হিসাবে। সমস্যা হয় তখন, যখন তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরা এর প্রতিটি লাইনকে আক্ষরিক অর্থে ধরে ইতিহাস রচনায় ব্রতী হয়ে পড়েন।

[বিঃদ্রঃ চিন্তক ও শীর্ষ অংশটুকুর কৃতিত্ব মাহবুব ভাইয়ের।]

Tuesday, December 25, 2018

মুসলমানদের মানসিকতা...

মুক্তচিন্তার প্রসার এবং ইসলাম ও পাশ্চাত্যের মধ্যকার বর্তমান বিপজ্জনক সংঘাত নিরসন করতে হলে যুক্তিগ্রাহ্য ও নিরপেক্ষ ভাবে ঠাণ্ডামাথায় গালগল্প থেকে প্রকৃত তথ্যকে আলাদা করতে হবে, মুসলমানদের মানসিকতা বুঝতে হবে এবং উভয় পক্ষের যে কোন অভিযোগ থাকলে সেগুলো মিটাতে হবে।

মুসলমানদের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা, অতীতের সকল ঔপনিবেশিক শক্তি এবং সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদেরকে দশকের পর দশক এমনকি শতাব্দীর পর শতাব্দী শোষণ-নির্যাতন করেছে। সকল দিক থেকে সেই একই ধারা এখনো চলছে। পাশ্চাত্য কর্তৃক কৃত অন্যায়ের অভিযোগের গান অনেকটা এনসাইক্লোপিডিয়া ভিত্তিক। পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসলামী জাহানের বিরাট অংশকে ভেঙ্গে টুকরো করে নানান রাষ্ট্রে বিভক্ত করে দিয়ে মুসলিম দেশগুলোর বৈধ অধিকারের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছে। এদের সম্পদ লুট করে চলছে। তাদের অপরাধের শীর্ষে রয়েছে মুসলিম দেশগুলোর হৃৎপিণ্ড ভেদ করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের পত্তন।

একটি প্রাচীন প্রবচন হচ্ছেঃ ‘‘বিশ্বাসযোগ্যভাবে মিথ্যার পর্বত তৈরী করার জন্য এক কণা সত্যই যথেষ্ট।’’ মুসলমানদের প্রতি সততা বজায় রাখতে গেলে স্বীকার করতেই হবে যে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে মুসলমানদের অভিযোগের মধ্যে কিছুটা হলেও সারবস্তু আছে। এখন মুসলমানদের সাধারণ মানসিকতার উপর আলোকপাত করা যাক। এই মানসিকতা পাশ্চাত্যের প্রতি চরম শত্রুভাবাপন্ন। এই শত্রুতা ভয়ঙ্কর সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

১। পিতৃতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদঃ কর্তৃত্ববাদ মুসলমানদের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। এর শুরু আল্লাহর সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের ধারণা থেকে। এই ধারা তার এক এবং একমাত্র নবী মুহাম্মদ, তার খলীফারা অথবা ইমামগণ এবং সম্মানিত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব থেকে গ্রাম্য মোল্লা পর্যন্ত প্রবাহিত। এই কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা মুসলমানদের জীবনের সকল দিককে ঘিরে রেখেছে। যেমনঃ ইশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে রাজা এবং তার আধিপত্য, আমীর এবং তার যথাচ্ছাচারের ক্ষমতা, খান এবং তার গোত্রের উপর তার অপ্রতিরোধ্য শাসন, গ্রাম প্রধান এবং তার ব্যাপক ক্ষমতা, এবং সর্বশেষে পিতা এবং বাড়ীতে নারী ও সন্তানদের উপর তার বজ্রমুষ্ঠি। এইসব কর্তৃত্বকারী চরিত্র হচ্ছে পুরুষ।

কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা অসংখ্য সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করে। এখানে এসবের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে বিশ্লেষণ করা হল। এটা উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে, কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যে কোন মানুষ চরমপন্থী হয়। সে একাধারে বিশেষ পরিস্থিতিতে বিনয়ের অবতার সাজতে পারে, আবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে হয়ে উঠতে পারে নিষ্ঠুর উন্মাদ ঘাতক। সে হচ্ছে এমন ধরনের লোক, যে নির্দেশিত হলে আনন্দের সঙ্গে বিস্ফোরক ভর্তি পোশাক পরবে এবং বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে নিরীহ মানুষের জটলার মাঝে তার বিস্ফোরণ ঘটাবে।

২। অন্ধ আনুগত্যঃ কর্তৃত্ববাদী ব্যক্তিত্বের বিপজ্জনক লক্ষণ হচ্ছে স্বাধীন চিন্তার তুলনামূলক ঘাটতি। এই ঘাটতির কারণে সে অতি সহজেই প্রভাবিত হয়। ইসলাম তার কঠোর কর্তৃত্ববাদী কাঠামো দ্বারা মুসলমানদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকে এমনভাবে হরণ করে যে, বিশ্বাসী মুসলমান ইসলামকে তার বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে অন্ধভাবে মেনে নেয়। তাই ধর্ম হিসাবে ইসলাম প্রচুর সংখ্যক মানুষকে কর্তৃত্বকারী ব্যক্তিগণ দ্বারা সহজে প্রভাবিত হওয়ার যন্ত্রে পরিণত করার অপরাধে অপরাধী।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, কর্তৃত্বপরায়ণ মানসিকতার মানুষ সব জাতির মধ্যে, এমনকি আমেরিকানদের মধ্যেও পাওয়া যায়।তবে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে এর মাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে। ইসলাম বিপুল সংখ্যক চরমপন্থী পয়দা করে, পক্ষান্তরে আমেরিকায় চরমপন্থীদের উপস্থিতি অনেক কম, তাদের উগ্রতাও কম।

৩। লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাতঃ মুসলমানদের জন্য লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে সবকিছু। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ হিসাবে ইসলাম তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। ইসলামের চুড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে গোটা বিশ্বকে ইসলামী উম্মাহর অধীনে শাসন করা। অবশ্য উম্মাহ সম্পর্কে এবং কারা উম্মাহর শাসক হবে তা নিয়ে জীবন বাজী রাখা আল্লাহর সৈনিকদের মধ্যে তীব্র মত পার্থক্য রয়েছে। এটা তাদের ‘পারিবারিক বিরোধ’। এ বিরোধ তাদের প্রিয় পদ্ধতি নিষ্ঠুর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমেই মিটানো হবে। প্রতিটি ইসলামী গোষ্ঠী বিশ্বাস করে যে নবী এবং আল্লাহ তাদের পক্ষে আছেন। তারাই অন্য গোষ্ঠীগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করবে। এখন তাদের কাজ হচ্ছে অবিশ্বাসীদের পরাজিত করে অন্তর্বর্তী লক্ষ্য অর্জন  করা। মুসলমানদের দিকনিদের্শক নীতি যে ‘লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে উপায়ের যৌক্তিকতা প্রতিষ্টিত হয়’­ এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। এই নীতি অনুসৃত হচ্ছে মুহাম্মদের আমল থেকে। মুহাম্মদ বারবার তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি নিজের অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সে সব চুক্তি লংঘন করেছেন। বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং চূড়ান্ত মিথ্যাকে পুরোপুরি ব্যবহার করা হয়েছে ইসলামের কাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামের কার্যক্রম নির্ধারিত হয় প্রভাবশালী মোল্লাদের দ্বারা। তারা ফতোয়া দেয়, যা বিশ্বাসীদের জন্য নির্দেশ ও আইনে পরিণত হয়।

ইরানী ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা খোমেনী ফতোয়ার ব্যাপক ব্যবহার করেছেন। একটি বই লেখার জন্য সালমান রুশদীকে মৃতুদণ্ড দিয়ে ঘোষিত তার ফতোয়া পাশ্চাত্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বিগত ইরান-ইরাক যুদ্ধকালে দেওয়া খোমেনীর একটি কম পরিচিত ফতোয়া হাজার হাজার ইরানী শিশুর মৃত্যু ঘটিয়েছিল। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্লাস্টিকের একটা চাবি দিয়ে বলা হয় যে, এটা স্বর্গের চাবি; ফতোয়া দিয়ে তাদের মাইন ক্ষেত্র পরিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয় যাতে তাদের পিছন পিছন ট্যাংকগুলো নিরাপদে চলতে পারে। রক্তপিপাসু এই আল্লাহর মানুষের ফতোয়া কার্যকর করার জন্য ইসলামী ঘাতকরা শিশুদের হাতে চীনে প্লাস্টিকের তৈরী স্বর্গের চাবি তুলে দিতে ইতস্তত করে নাই।

ইসলামের হুমকি এতটাই ভয়ঙ্কর। এটা একটা কঠোর প্রস্তর যুগীয় কর্তৃত্বপরায়ণ ব্যবস্থা যার নিয়ন্ত্রণে আছে প্রায় দেড়শ’ কোটি মানুষ।

৪। নিয়তিবাদঃ পশ্চিমা লোকজন এবং মুসলমানদের মানসিকতায় একটা  গুরুত্বপূর্ণ সূক্ষ্ম পার্থক্য হচ্ছে মুসলমানরা অনেক বেশী নিয়তিবাদী। মুসলমানরা আল্লাহর ইচ্ছা  এই শর্ত ছাড়া কোন কথা বলে না। ‘আল্লাহ  চাইলে তোমার সঙ্গে কাল আমার দেখা হবে।’ ‘আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি এটাকে বাড়ী হিসাবে ব্যবহার করতে পার।’ ‘আল্লাহর ইচ্ছা হলে কাজগুলো করা যাবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মুসলমানদের ধারণা আল্লাহ সব কাজ করছেন। আল্লাহ তার বিশাল অদৃশ্য হস্ত দ্বারা দুনিয়ার সব কাজ করেন। ‘আল্লাহর হাত সবার হাতের উপরে অবস্থান করে।’ এটাই হচ্ছে সর্ব শক্তিমান হাতের উপর মুসলমানদের নিয়তি নির্ভরতা ও আনুগত্য। যদি কোন কিছু ঘটে, সেটা আল্লাহর ইচ্ছায় ঘটছে। যদি কোন কিছু না ঘটে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন নাই বলে ঘটে নাই। যেন মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ইচ্ছা বলে কিছু নাই। সকল দায়দায়িত্ব আল্লাহর উপর অর্পিত। এই মানসিকতা আমেরিকান এবং অন্যান্যদের ‘দায়িত্ব নাও’ এবং ‘পারা যাবে’ জাতীয় মানসিকতার একেবারে বিপরীতে।

৫। মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যঃ গোষ্ঠীগত অথবা ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে এবং কেউ মনস্তাত্ত্বিকভাবে শতভাগ সুস্থ নয়। জীবনের অমসৃণ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আমাদের গাড়ী একেবারে নড়বড়ে। তারপরও অধিকাংশ মানুষ বেশীর ভাগ সময় সঠিক রাস্তায় চলতে পারে। সম্ভবত দু’-একবার মনোরোগ চিকিৎসকের মেরামত কারখানায় থামতে হয় মাত্র।

অধিকাংশ মানসিক জটিলতার উৎস হচ্ছে সাধারণভাবে স্বীকৃত রীতি ও মূল্যবোধ থেকে বিচুøতি, অথবা এ নিয়ে বাড়াবাড়ি কিংবা  ঘাটতি। এই রীতি যা-ই হোক না কেন। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, যখন সতর্কতা সন্দেহকে ছাড়িয়ে যায় তখন আমরা মানসিক বৈকল্যের শিকার হই। যখন কোন যুক্তি ছাড়াই ভয়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয় তখন জন্ম নেয় আতঙ্ক। যে কোন পরিস্থিতির মাত্রাভেদ প্রায়ই মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি নির্ধারণ করে।

মুসলমানরা অভিন্ন ইসলামী মনস্তাত্ত্বিক প্রতিবেশের বাসিন্দা। তারা ইসলামী ‘খাদ্য’ খায়। মুসলিম রাষ্ট্র বা অমুসলমান দেশ নির্বিশেষে তারা এটা করে। গোষ্ঠীগত বা ব্যক্তিগত ভাবে যে কোন মুসলমানের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা সরাসরি নির্ভর করে সে কী পরিমাণ ইসলামী খাদ্য খায় তার উপর। ইসলামী খাদ্যে নানান উপাদান আছে। এর কিছু পূর্ণাঙ্গ, আবার কিছু অত্যন্ত উত্তেজক, আর কিছু এ দুইয়ের মাঝামাঝি।

বছরের পর বছর ইসলামী নেতারা অনুভব করছেন যে তাদের নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মুসলমানদের উত্তেজক খাদ্য খাওয়ানো দরকার। দৃষ্টান্ত স্বরূপ, বিশ্বাসীদের সমাবেশ ঘটানোর জন্য ঘৃণার জারক রস ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটা গোষ্ঠীর মধ্যে সংহতি জোরদার করে। এবং তাদের সত্যিকার ও কাল্পনিক দুর্ভাগ্যের জন্য অপরকে দোষারোপ করা ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত কার্যকর। শুরু থেকে ইহুদীরা হচ্ছে তাদের প্রিয় বলির পাঁঠা। আজকের দিনেও নাৎসীদের মত সত্যিকার ফ্যাসিস্ট্‌ হিসাবে মুসলমানরা সবকিছুর জন্য ইহুদীদেরকে দায়ী করে।

মুসলমানদের মনস্তাত্ত্বিক প্রোফাইলের একটা বিস্তারিত ইনভেন্টরী করার সুযোগ এ নিবন্ধে নাই। অব্যশ্য প্রশ্নাতীতভাবে মুসলমানদের মানসিক গড়ন অমুসলমানদের চেয়ে আলাদা। এই পার্থক্য প্রায়ই দৃশ্যমান হয়, যেমন এখন হচ্ছে। এটাই ইসলাম এবং পাশ্চাত্যের সংঘাতের মূল ব্যাপার।

পরিশেষে স্বীকার করতেই হবে যে, ইসলাম বহির্ভূত সংস্কৃতি সকল রোগের মহৌষধ নয়। তবে  এর  এমন একটা বৈশিষ্ট্য আছে যা ইসলামী সংস্কৃতিতে নাই। সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার  অনুষঙ্গ  ভাল, মন্দ, উদাসীন যেমন হোক যে একবার স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে তাকে কোন কিছুর বিনিময়ে এ থেকে সরিয়ে আনা যাবে না। বিশেষ করে ইসলামপন্থীদের  গালগল্পমূলক প্রতিশ্রুতি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে বাধ্য, যা অতীতে ব্যর্থ হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হতে বাধ্য।

কঠিন হলেও এই সংঘাতের সর্বোত্তম সমাধান হচ্ছে লাখ লাখ  মুসলমান ইতিমধ্যে যা করেছে সেটা অনুসরণ করা। তার দাস প্রথার ধারক ইসলামকে পরিত্যাগ করেছে। তারা শোষণকারী মোল্লাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কুরআন ও হাদীসের বৈষম্যমূলক উদ্ভট   শিক্ষা ঝেড়ে ফেলেছে। জীবনদায়ী স্বাধীনতার স্বর্গ পাওয়ার জন্য ইসলামের শ্বাসরুদ্ধকর তাঁবু ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে।

স্বাধীনতার মুক্তিকামী ও সমন্বয়সাধক স্বর্গের  মধ্যে থেকে যারা মুসলমান থাকতে  ইচ্ছুক, তারা ইসলামের ভাল শিক্ষাগুলো ধারণ ও অনুশীলন করতে পারে। কিন্তু তাদের অসহিংষ্ণুতা, ঘৃণা ও সহিংসতা পরিত্যাগ করতে হবে। দাসত্বের অবমাননাকর গহ্বর থেকে মুক্তির পর্বতে উঠে আসার জন্য প্রচুর চেষ্টা ও সাহসের প্রয়োজন। তারপরও এটা সম্ভব এবং এ কাজ উল্লাসজনক। কারণ অনেকেই তা সফলভাবে এবং আনন্দের সঙ্গে করতে সফল হয়েছেন। যত বেশী মানুষ ধর্মীয় দাসত্বের শিকল পরিত্যাগ করবে, ততই আরও বেশী মানুষ তাদের অনুসরণ করবে। ইসলামের শিকার হয়ে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তারা মুক্ত মানুষে পরিণত হবে এবং স্বাধীন মানুষ হিসাবে নিজেদের জীবন ও ভাগ্যের দায়িত্ব নিবে। মানব জাতির স্বাধীন সদস্যদের সঙ্গে নিগড়বদ্ধদের পথ চলা বেদনাদায়ক।

মনের দাসত্ব শরীরের দাসত্বের মতই অশুভ। ইসলাম নামের ফ্যাসিবাদ উভয় দাসত্বের জন্য দায়ী।

(নিবন্ধটি Amil Imani-এর Understanding the Muslim Mindset-এর  বাংলা অনুবাদ। ইংরাজী নিবন্ধটি ইসলাম ওয়াচ-এ ২০ জুন, ২০১০ তারিখে প্রকাশিত হয়)

Monday, December 24, 2018

I am GPA five !!!!!!

আমি মোশাররফ করিম এর ফ্যান। ভিষণ ফ্যান।
তার এত বাজাইরা কাজের ভিতরেও ভার্সাটাইল অভিনয় দেখে আমি মুগ্ধ।
বাংলাদেশে ভাল অভিনেতা হইলে সমস্যা আছে। তারে দিয়া একধারে আবরা জাবরা কাজ করাইয়া পচাইয়া ফেলা হয়। হুমায়ুন ফরিদীর মত অভিনেতাকে বাংলা সিনেমায় নাচাইয়া কুদাইয়া রসা বের করে ফেলা হইসে। সমস্যা নাই, মোশাররফ করিমেরও রসা বের করা হচ্ছে। তার কাজ একসময় সে নিজেই ভুলে যাবে এমন পথের দিশা দেখা যাচ্ছে।
যাই হোক মোশাররফ করিম অভিনীত শোয়া বাবা নামের একটা নাটক দেখসিলাম। বেশি ভালো জাতের কিছু না। তবে তাতে শুরুর দিকে একটা অংশ আছে খুবই ইন্টারেস্টিং। সেটা নিয়ে বলি
আঞ্চলিক উচ্চারনে মোশাররফ চাকরীর ইন্টারভিউ দিচ্ছেন। দুই আদম তাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে
- সুপ্ত আগ্নেয়গিরি কী
- যে আগ্নে গিরি গুমায়ে তাকে, তাতে সুপ্ত আগ্নেগিরি বলে যেমন, বিসুবিয়াস।
- বানান করেন লেফটেন্যান্ট, ডায়রিয়া
ঠিক ঠাক বানান করা হল
- "গুঞ্জরিয়া আসে অলি, কুঞ্জে কুঞ্জে ধেয়ে" এর পরের লাইন কী ?
- তারা পুলের উপর গুমিয়ে পরে, পুলের মদু কেয়ে।
- এই গানের রচয়িতা কে ?
- ডি এল রায়
- পুরা নাম বলেন
- ধিজেন্দ্রলাল রায়
- বনফুল কার ছদ্মনাম ?
- বলাইছাঁদ মুকোপাদ্দায়
- ঘানার রাজধানীর নাম কী ?
- আক্রা
তারপরেই মোশাররফ ক্ষেপে যায় । চিল্লায়া বলতে থাকে
আমারে নিতেন না, চাকরী টা অইন্য কাউরে দি ফালাইসেন ? বইলতে সমস্যা কী ?এত নাটক করেন কেন ? ইত্যাদি
কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স, জেনারেল নলেজ, এইটাইপের কিছু জিনিস্পাত্তি আছে এই দেশে চাকরী পাবার জন্য পড়ে লোকজন। এইগুলা জানা শুধু মাত্র চাকরী পাবার জন্যই । তবে চাকরী তাতে হবেই এমন গ্যারেন্টি নাই। এই দেশে আসলে কি জানলে যে কি হবে সেটারই কোন লাইন নাই।
শিক্ষা এই দেশে শুধু মাত্র জীবিকার লক্ষ্যপূরণের অস্ত্র। তাই মুখস্ত, ঠোটস্ত, ভাজা ভাজা ইত্যাদি পন্থায় কিছু গবদা জিনিস পত্র পেটে ভরে নিতে হয়। অবজেকটিভ, সৃজনশীল নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট টিউবের ভেতরে পোলাপাইন ভরে ঝাঁকানো হয়। সব এক্সপেরিমেন্ট ই ফেল করে কারন শিক্ষা ব্যাবস্থাটাই দাঁড়ায়া আছে শর্টকাটের উপরে। পোলাপাইন কম পইড়া পাশ করতে চায়। টিচার ফাঁকি মাইরা পয়শাওয়ালা হইতে চায়। বাপ মা পীছের রাস্তায় টেকা দিয়া পোলাপাইনের ফিউচার কিনতে চায়। শুধু এক গোষ্টির মুখে নেপালের রাজধানী নেপচুন দেইখা সুশীল আস্ফালন করে কি হবে। ইগনোর দেম, এ্যাজ ইউ ইগনোরড দা সিস্টেম।
১০ বছর স্কুলে পড়ার পর এস এস সিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়া ছেলে পিথাগোরাস কে উপন্যাসিক বললে আমরা সবাই বলি - কয় কি হালায় !!
বোঝাই যায় এই ছেলে কোনো একটা ফল্টি সিস্টেমের এ্যাডভান্টেজ নিয়ে মার্কশীটে ধনী হয়ে গেলেও মাথায় বিদ্যা ভরতে ব্যার্থ হইসে।
কিন্তু বুয়েট থেকে পাশ করা, কয়েক বস্তা কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়া, বিসিএস ক্যাডার ইঞ্জিনিয়ার যখন বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের আশে পাশে ঘুরে, ভয়ে দাম জিজ্ঞেস করে না। আর নকল করে মেট্রিক পাশ কন্ট্রাক্টার সরকারী কন্সট্রাকশানে লোহার বদলে বাশ দিয়ে ঢালাই দিয়ে, বুক ফুলায়ে ৬ হাজার টাকায় ইলিশ মাছ কেনে। তখন কেউ বলে না - কয় কি হালায় !!!
চমতকার এই দেশ।
সার্টিফিকেটের শিক্ষায় ভরসা রাখারও উপায় নাই, ভরসা হারালেও দোষ।
বাচ্চা পোলাপাইনের কি দোষ। সমাজ দেখে সংখ্যা। সেটা জিপিএ'র ৩/৪/৫ হোক আর উপার্জনের পীছনের শূন্য হোক। যত বেশি, তত হাতে তালি।
আমার বেতনে কয়েকটা "০" কম হলে আমি নিজেও এখন এত ব্রড স্পেক্ট্রামের কথা বার্তা বলতাম না। চিন্তা করতাম কেমনে কনি মাইরা আরেকজনরে ধাক্কাইয়া আগে বাসে উঠা যায়। নেপালের রাজধানীর মায়েরে বাপ। নিজের দেশের রাজধানীর এই মাথা থেকে ঐ মাথায় বাসে কইরা যাইতে বাপের নাম ভুইলা যাইতে হয়। এই দেশে কর্যকর শিক্ষা হইল একটাই-
নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
কোনো সিলেবাসে নাই কিন্তু আসলে আমরা এটাই শিখি, শেখাই, শিখাচ্ছি।
সেদিন আর বেশি দুরে নাই, সারা দেশ একসাথে বলবে
I am GPA five !!!!!!

Saturday, December 22, 2018

নারীবাদ মানে কি পুরুষের প্রতি বিষেদেগার?

পুরুষ আর পুরুষতন্ত্র অনেকেই হামেশাই গুলিয়ে ফেলেন। নারীবাদী আন্দোলন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, ব্যক্তি পুরুষের বিরুদ্ধে নয় । অনেক পুরুষ আছে যারা নারীবাদ বলতে বোঝেন পুরুষের বিরুদ্ধাচরণ । অনেক নারী আছেন যারা নারীবাদের দোহাই পেড়ে ব্যক্তিপুরুষকে আক্রমন করে বসেন । কিন্তু পুরুষতন্ত্র একটা সিষ্টেম যা আদ্যিকাল ধরে চলে আসছে । নারীদের মতো পুরুষরাও এই সিষ্টেমের শিকার । পার্থক্যটা হল নারীরা পুরুষতন্ত্রের শিকার এটা সমাজসিদ্ধ, কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে নয় । নারীর লড়াইটা গোষ্ঠীর, পুরুষের লড়াইটা একার । বিংশ শতকের মাঝামাঝি নারীবাদী তাত্ত্বিক সিমন দ্য বোভায়ের তাঁর "সেকেন্ড সেক্স" গ্রন্থে "নারীরা নারী হয়ে জন্মায় না, সমাজ তাকে নারী বানায়" বলে মন্তব্য করেন । কিন্তু শুধুই কি নারী ? একই কথা কি পুরুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয় -- "পুরুষরা পুরুষ হয়ে জন্মায় না, সমাজ তাকে পুরুষ বানায়।" নারীকে যেমন এ সমাজে নারী হয়ে উঠতে হয় তেমনি পুরুষকেও পুরুষ হয়ে উঠতে হয় । তাত্ত্বিকরা বলেন নারী আর পুরুষের জেন্ডার পরিচিতির এই যে বিভাজন, সেটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই তৈরি।

যৌন পরিচিতির দুই ধরনের ওরিয়েন্টেশেন আছে -- একটা শারীরবৃত্তীয় ( সেক্স) আর একটি মনোসামাজিক (জেন্ডার) । সমাজ মূলত এই মনোসামাজিক দিকটাই দুমড়েমুচড়ে একটি ছাঁচে ঢালে । মানব শিশু শিশ্ন নিয়ে জন্মালে সমাজ যৌন পরিচিতি চাপিয়ে দেয় --- "ছেলে হয়েছে গো" । কিন্তু শিশ্ন নিয়ে জন্মালেই যে সে "ছেলে হবে" তার কোন মানে নেই । সংখ্যায় লঘুত্ব থাকলেও শিশ্ন নিয়ে জন্মানো শিশুর মনোলৈঙ্গিক (জেন্ডার) পরিচিতি মেয়েও হতে পারে । সেক্স ও জেন্ডার পরিচিতি যাদের এক তারা সমাজের চোখে "স্বাভাবিক", আর যাদের আলাদা তারাই "রূপান্তরকামী" । যাই হোক, বেশি তত্ত্ব আউড়ে লাভ নেই । মূল বক্তব্যে আসি । যেদিন থেকে "ছেলে হয়েছে" শব্দটা পরিবারের লোক শোনে সেদিন থেকেই শুরু হয় শিশুটাকে "আল্ট্রা ম্যাসকুলাইন" বানানোর পালা । কিন্তু পুরোমাত্রাই পুরুষ বলে কিছু হয় না, পুরুষের মধ্যে কমবেশি নারীত্ব যেমন আছে, তেমন নারীর মধ্যেও কমবেশি পুরুষত্ব থাকে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী ও পুরুষ ভেদে আলাদা পালনীয় ভূমিকা থাকে । একটি বিশেষ সমাজ ও সাংস্কৃতিতে সেই পালনীয় গুলো বাচ্চা বয়স থেকে ক্রমাগত পালন করতে করতে মানব শিশু আলাদা করে নারী এবং পুরুষ হয়ে ওঠে । শিশ্নধারী শিশু যখন হামাগুড়ি টানতে শেখে খেলনা হিসাবে পুতুলের বদলে পরিবারের লোক ধরিয়ে দেয় খেলনা বন্দুক । পুরুষ মানে লড়াকু ও আগ্রাসী , সেটা হয়ে উঠতে হবে, তাই অস্ত্রের ডেমো দিয়ে উদ্বোধন । মানব শিশু যখন হাঁটতে শেখে হোঁচট খেলে কাঁদে । মা কোলে নিয়ে আদর করে বলে "কাঁদে না বাবু, ছেলেরা কাঁদে না" । প্রিয়জন বিয়োগ হয়েছে, বুকফাটা কষ্টে চোখের জল বেরিয়ে আসছে নতুন কিশোরের । আত্মীয়া চুপিসারে বলে দেয় "ছেলেদের কাঁদতে নেই রে, ছেলেদের শক্ত হতে হয়" । একদিকে প্রিয়জন হারার বেদনা আর অন্য দিকে পুরুষ হয়ে ওঠার চাপ, জাঁতাকলে পিষ্ট হয় কিশোর মন । বোনেরা যখন খেলনা হাঁড়িকুড়ি নিয়ে সংসার-সংসার খেলে তারও ইচ্ছা জাগে পুতুল খেলার সাথী হতে । বোন বলে দেয় "তোকে খেলা নেব না, তুই মেয়ে নাকি, তুই তো ছেলে"।

স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো আর হামেশাই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে কিশোর । ততদিনে সে শিখে নিয়েছে হাতাহাতি মারপিট না করলে পুরুষ হয়ে ওঠা যায় না । যখন বন্ধুর সঙ্গে পেরে উঠছে না, মনের মধ্যে তৈরি হয় চাপ, অবচেতনে কাজ করে "আমি পুরুষ হয়ে উঠতে পারছি না"। ক্রমাগত পুরুষ হয়ে ওঠার চাপ তাকে তেড়ে নিয়ে বেড়ায় । সকালবেলা ছেলের বিছানা অগোছালো পড়ে থাকতে দেখলে মা খুশি হন, ভবিষ্যতের সুপুরুষ হওয়ার রসদ খুঁজে পান ছেলের অগোছালো ঘরে । মাধ্যমিক পাশ করে গেছে ছেলে, বন্ধুদের দু একজন সিগরেট ফুঁকে পুরুষালী ধোঁয়া ছাড়তে শিখে গেছে । মাথায় ভাবনা গজিয়েছে সিগরেট না ফুঁকলে বোধ হয় পুরুষ হয়ে ওঠা যায় না । একটু একটু করে পুরুষের মতো পুরুষ হয়ে ওঠে কিশোর।

বন্ধুদের দু একজনের তখন ষোড়শী প্রেয়সী জুটে গেছে । পাশে প্রেয়সীকে নিয়ে বন্ধুর হাঁটার অহং তাঁকে ঈর্ষান্বিত করে । পাশে প্রেয়সীকে না থাকলে তার পৌরুষ সার্থক নয় যে । সিঙ্গেল থাকার চাপ তাকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয় । রাস্তায় মেয়ে পেরোলে দু একটা টিটকেরি না মারলে বন্ধু মহলে সে "মেয়েলি" পরিচয় পাবে, সেটাও সে জেনে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে পুরুষ হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা । মুখে গোঁফ দাড়ির রেখা না গজালে, হাত পা লোমশ না হলে বান্ধবীদের ব্যঙ্গ "তুই মাকু নাকি রে ?"। যেহেতু দাড়িগোঁফ না থাকলে শরীর পেশীবহুল না হলে পুরুষ হওয়া যায় না, তাই পুরুষবোধে আঘাত লাগে সামনে উচ্চ মাধ্যমিক দিতে যাওয়া কিশোরের । রাগে ক্ষোভে কিশোর তখন পাল্টা দেয় "তুইও তো সাবালিকা হতে চললি, এখনও তুই বিপিএল কেন ?" । নারীত্ববোধে আঘাত লাগা বান্ধবী চুপসে যায় । কারন তারও চাপ আছে পুরোদস্তুর নারী হয়ে ওঠার । সেটা হতে না পারার ইমোশোনাল ক্রাইশিস বান্ধবীকেও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।

এরপর কলেজ । বন্ধুরা 160 সিসির পাছাউঠো বাইক গাঁঙিয়ে ঢোকে কলেজ । ক্লাস এইটে বাবার কিনে দেওয়া বাইসাইকেলটা গোঙানো বাইকের চাপে "মেয়েলি" হয়ে যায় তখন । এটা দিয়ে হবে না, পুরুষ হতে গেলে জোরে বাইক চালিয়ে কলেজ আসতে হবে । কলেজের সুন্দরীদের কাছে পৌরুষত্ব প্রমানে এছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই । সেই সঙ্গে ব্র্যান্ডেড জিন্স, পনিটেল বেনি, হেয়ার কালার, স্পাইক, হাতে বালা, শার্টের উপর দিক থেকে দুটো বোতাম খোলা যাতে গোটা কয়েক বুকের চুল দেখানো যায় । এগুলো না হলে পুরুষ বলে মান্যতা পাওয়া দুস্কর । বন্ধুদের হাতে হাতে তখন পর্ন ভিডিওর ছড়াছড়ি । গোটা কয়েক নিজের মোবাইলেও সঞ্চিত রাখতে হয়, না হলে পুরুষ হিসাবে মান থাকবে না । যৌন আলোচনা, ননভেজ জোক্স, বান্ধবীর সাথে ফ্লার্ট, টুকটাক দুষ্টুমি, হাহাহোহোহিহি সবই চলতে থাকে, পুরুষ হয়ে উঠতে হবে, আরও আরও পুরুষ হয়ে উঠতে হবে।

কলেজ পেরিয়ে মাষ্টার্সে মেস জীবন । পোড়াশোনা শিকেয় তুলে রাত জেগে তাস, কেরাম, মাঝেমধ্যে ঢুকুঢুকু । মেস জীবনে "ভাল্লুক" খায় না, সিগারেট ছুঁই না বলাটা যথেষ্ট অপমানের, পৌরুষের অপমান । খেতেই হবে, মেসের "পুরুষ" বলে কথা । এই যে বিলিতি মদ পান করে পুরুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা এর আবার একটা মজার ইতিহাস আছে । ব্রিটেনে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে তরুনেরা খুব চাপে থাকত । তাদের পৌরুষত্ব প্রমান করতে হত তিনভাবে --- Drinking, Fighting আর Heterosexuality .. ভাবুন, মদ গাঁজা খেয়ে টুকটাক পেশী শক্তি দেখিয়ে কিছুটা পৌরুষত্ব হয়ত প্রমান করা গেল, কিন্তু Heterosexuality ? সেটা কিভাবে প্রমান করা যাবে ? পাহাড়প্রমান চাপ । আমাদের সমাজের মতোই সেসময় ইংল্যান্ডে Homosexuality ছিল "ক্ষমাহীন অপরাধ", আর সেসময়ের ধ্যানধারণা অনুযায়ী Homosexual পুরুষ "পুরমাত্রার পুরুষ" নন । কলোনিয়াল হ্যাংওভারে দুলে পুরুষ হওয়ার লিগেসি মেনেই ব্র‍্যাণ্ডেড পুরুষালী পোশাক, দামী পারফিউম ( যেটা মাখলে সুন্দরীরা ভ্রমরের মতো পিছু ধাওয়া করবে), মেল ফেসক্রিম থেকে শুরু করে সিগরেট, বিলিতি মদের মধ্য দিয়ে পৌরুষেরও বাজারিকরণ হয়ে যায়।

যাইহোক, আলোচনায় ফিরি । পড়াশোনা শেষ করে এবার বেকার জীবন । "আমার ছেলে বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে" এই আপ্ত বাক্য কিশোর বয়স থেকেই পুরুষকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলে । কিন্তু সংসারের হাল ধরতে না পারা বেকারত্ব যে কি জ্বালা কি নির্মম, সেটা কেবল বেকারই জানে । বেকার বলতে আমরা পুরুষই বুঝি, নারী বুঝি না কিন্তু । ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া নারীরা উচ্চশিক্ষিত হলেও পয়সাওয়ালা বরের ঘাড়ে চেপে বসার একটা বাড়তি অপশন পেতে থাকে । না না, এ দোষ সেই নারীর নয়, বরং নারী এমন ভাবনার শিকার । আসলে নারী পুরুষ ভেদে এমন মানসিক গঠন পুরুষতান্ত্রিক সমাজেরই নির্মান । ততদিনে বন্ধুদের কেউকেউ ছোট মাঝারি মাপের সরকারী চাকরি পেতে শুরু করেছে । তাদের কারোর কারোর মোটা পনে বিয়েও হয়ে যাচ্ছে । বেকার মনে তৈরি হয় হতাশা, চাপ আর হীনম্মন্যতা । মেয়ের বাবারা বিয়ের জন্য সম্মন্ধ তো দূর, ফিরেও তাকায় না । এরপর কোন বেসরকারী ব্যাঙ্ক বা কোম্পানিতে স্বল্প মাইনের চাকরি, বা টুকটাক টিউশন পড়িয়ে সেই চাপ থেকে মুক্তির অদম্য প্রয়াস । সে জানে, সে পুরুষ, "সংসারের হাল" শত কষ্টে তাকেই ধরতে হবে ।

এবার হয়ত কোন মেয়ের বাবার কৃপাদৃষ্টি দৈবক্রমে তার উপর পড়তে পারে, হয়ত বিয়েও হয় । স্বল্প আয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি স্ত্রীর নিত্য নতুন আবদার মেটানোর চাপ । তবুও প্রানপন চেষ্টা করে যায় । তার ইচ্ছা করতে পারে স্ত্রীর রান্নাবান্নার কাজে একটু হাত লাগিয়ে দেবে । কিন্তু পারে না, পারে না কারন তার মেল ইগোতে লাগে, পাছে কেউ "জুরু কা গোলাম" বলে খোটা দেয় । বৌকে সাহায্য করার স্বাভাবিক ব্যাপারটাতেও "ইগো" এনেছে পুরুষতন্ত্র, শিকার হয়েছে নারীর পাশাপাশি পুরুষও । একদিকে মায়ের ইডিপাস কমপ্লেক্স, অন্যদিকে বৌ এর কাছে পুরদস্তুর রোমান্টিক পুরুষ হয়ে ওঠার চাপ, দুই এর মাঝে স্যান্ডুইচ হয়ে যায় পুরুষ মন । সদ্য কিশোর বয়স থেকে মাথায় ঢুকে থাকা নারীর সতী-অসতীর ধারনা স্ত্রীর উপর অবচেতভাবে প্রয়োগ করে । পুরুষতান্ত্রিক ভাবনার শিকার হয়ে নিজের মনকে অশান্ত করে তোলে । আবার যেহেতু সে পুরুষ তাই স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চাপ থেকে যায়, সেটা না করতে পারলে সমাজ "স্ত্রৈণ" বলে ব্যঙ্গ করবে । সংসারে নারী পুরুষের মধ্যেও চলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব । পুরুষের মনে হয়, এই বুঝি তার স্ত্রী ঘাড়ের উপর চেপে বসল । কর্তৃত্ব বজায়ের চাপ অহরহ পুরুষকে অবচেতন মনে তাড়া করে বেড়ায় ।

কয়েকদিন আগে "প্যাডম্যান" দেখলাম । সেখানে প্যাডম্যান (অক্ষয়কুমার) একজায়গায় তার স্ত্রীকে (রাধিকা আপ্তে) বলছে "আশলি মর্দ ওহি হ্যায় যো আপনি অন্দরকি অওরতোকো জাগা শাক্তা হ্যায়" --- আসল পুরুষ হচ্ছে সেই যে নিজের ভিতরের নারীত্বকে জাগাতে পারে । কিন্তু দূর্ভাগ্য এটাই যে পুরুষের মধ্যে যে নারীত্ব আছে সেটাকে অহরহ ধর্ষন করতে করতে একসময় হত্যা করে ফেলে পুরুষতন্ত্র অথবা নারীর পুরুষবিদ্বেষী মনোভাবে। শত চেষ্টাতেও পুরুষ এই মৃত স্বত্বাকে জাগিয়ে তুলতে পারে না, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ও মানসিকতা সেটা হতে দেয় না । মেল ইগো আর অন্তরে থাকা নারীত্বের দ্বন্দ্বে পিষ্ট পুরুষ মন । পুরুষ ধর্ষিত হয় প্রতিদিন, ক্ষনে ক্ষনে ।

Thursday, December 20, 2018

ফার্স্টকার্ড

সে আসে ধীরে
এই নামে হুমায়ুন আহমেদের একটা বই আছে।
যার কথা বলা হবে, সে কোন বই না, সে আসলেই ধীরে ধীরে আসছে। তার নাম ? তার আসলে নাম টামের বালাই নাই। থাকলেও আমি জানি না, তবে তার ব্যাপারে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করতে পারি।তার চাল চলন খুবই মিডিওকার। অনেকটা প্রতিদিন যারা গুতাগুতি করে, আবাবিল, সালসাবিল, অনাবিল মার্কা বাসে ঠুঁসে অফিসে যাবার জন্য ঘর থেকে বের হয়। বেঢপ ভুড়ির অনেক নীচে মিস-ম্যাচ কালারের প্যান্ট পরে, পায়ে থাকে অযাচিত চুক্ষা, লম্বা নাকের আর্টিফিশিয়াল লেদারের সস্তা ব্র্যান্ডের জুতা। বাসে আরেকজনের কাধেঁ মাথা রেখে হা করে ঘুমায়। অফিসে গিয়ে কাজের চেয়ে গল্প বেশি করে, বসকে ফাঁকি দিয়ে আগে আগে অফিস থেকে বের হয়ে যায়। বাজারে গিয়ে মুলামুলি করে সব্জি কিনে, রাতে বাসায় এসে টিভিতে খবর দেখে। ঘরে ভাত তরকারী খায়। এইধরনের যে কারো সাথে তার স্বভাব মেলানো যাবে। বউ এর সাথে গাউসিয়া বা নিউমার্কেটের অস্থায়ী দোকানে শপিং করার সময় যারা মুখ বাকা করে হাতে পলিথিনের শপিং ব্যাগ এর গাদা নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হাটে সেই সব লোকদের সাথে তার খুব মিল, আচার আচরণে। সে খুবই ফ্যামিলি পার্সন।তবে সে কোনো পার্সন না। সে একটা মশা।

সে খুব হেলে দুলে ধীরে সুস্থে এসে ঘরে ঢুকে একটা বডি স্প্রে'র বোতলের মাথায় বসলো। এই জাতীয় উচা জায়গায় বসার একটা আরাম আছে।ভিউটা ভালো দেখায়। কাজ শুরু করার আগে একটু জিরায়ে টিরায়ে নেয়া তার অভ্যাস। তাড়া তো নাই।মাত্র রাত বাজে সাড়ে দশটা।মানুষ এখনো খায়ও না। রাতের খাওয়া শেষ না করলে তো ঘুমানোর প্রশ্নও আসে না। আর জেগে থাকা মানুষকেতো গিয়ে কাঁধে টোকা মেরে বলা যায় না-
 "ব্রাদার একটু কম নড়াচড়া করেন। আমার ওয়াইফ আপনার ঘাড়ে কুচ করে হুল ফুটায়ে দিয়ে চু চু করে একটু রক্ত চুষে খাবে। ইয়ে মানে সামনে আমাদের বেবী হবে তো। আপনাদের ভাবী আবার প্রেগনেন্ট! ব্লাড না খাইলে তো সে আবার এ্যামনেশিয়া, ম্যাল নিউট্রেশানে সাফার করবে, বুঝেন না ? নো হার্ড ফিলিং। আপনি রিচ ম্যান, এইটুক ব্লাড খাইয়া ফেললে আপনার তো লস নাই। হালকা যে একটু পেইন পাবেন, সেইটার জন্য সরি বস। তবে কথা একটা আছে, আমার ওয়াইফ আপনাকে সাক করে যাবার পর, সরি! আই মীন আপনার ব্লাড সাক করে উড়ে যাবার পর, ওই জায়গায় চুলকায়ে যে একটা আরাম পাবেন না বস ! ট্রাই করে দেইখেন, ঠিকাসে ? "
জেগে থাকা মানুষের কানের কাছে পোঁওওওওও করে ডিস্ট্র্যাক্ট করার কোনো ফায়দা নাই। সে ঠিকই যেই জায়গায় লেডিসরা সাক করতে বসবে সেই জায়গায় ফ্যাটাশ করে থাপ্পড় বসায়ে চ্যাপ্টা করে ফেলবে। এর আগে জেগে থাকা পাবলিকের ব্লাড সাক করতে গিয়ে তার দুই বউ মারা গেছে। আর তার জিগরী দোস্ত মারা গেছে, বউকে নিয়ে ডিনার ডেটে ভাল ট্রিট দেয়ার জন্য কলেজ হোস্টেলে গিয়ে, রাত আটটায়। এপ্লাইড ক্যামিস্ট্রির থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্টের কানের কাছে পোঁওওওওও মারাইতে গেসিলো। বউ এর জন্য স্পট সিলেক্ট করসে পায়ের গোড়ালিতে। ভাবসে, সেইরকম ডিনার করাবে বউকে। কিসের কী! কে জানতো, সেই ছেলে আবার নার্ড টাইপ। তিনদিন পরে ছিল তার মিডটার্ম। রাত আটটায় পড়তে বসা সেই ছেলে, চোখের পলকে দুই হাতে কানের পাশে তালি মেরে তার দোস্তরে চ্যাপ্টা বানায়া, তারপরে বাম হাতের চড়ে বন্ধুর বউরেও ভর্তা করে ফেললো। বন্ধুর বউ এর পেট ফাটা ব্লাড চ্যাটকায়া লেগে থাকলো সেই পায়ের চামড়ায়। এক মিনিটের মাথায় তীব্র এক চুলকানী দিয়া বন্ধুর বউ এর ডেডবডিও চ্যাটকায়া মিশায়া ফেললো চামড়া আর নখের সাথে। শুনেই তার বমি পাইসিলো। সেই থেকে সে খুব হুঁশিয়ার। এখন থার্ড ওয়াইফের বেলায় তার রিস্ক নেয়ার কোনো ইচ্ছাই নাই। বউ কে বলেও আসছে, রেডি হয়ে আস্তে ধীরে আসতে।

বউ আসার আগে বডি স্প্রে'র বোতলের উপর বসে সে, মানে আমাদের মশা, আজকের ডাইনিং প্ল্যান টা আরেকবার চিন্তা করে।
মেনু খারাপ না।
ঘরে একটা মেইল, বয়স ৩৭ প্লাস কিছু একটা হবে। দেখে মনে হচ্ছে প্রাইভেট সার্ভিস করে। স্পোর্টস শর্টস আর টিশার্ট পরে ল্যাপটপে উপ্তা হয়ে আছে। ভ্যাদভ্যাদা টাইপ ডাইল ভাত খাওয়া ব্যাটা না। তাহলে লুঙ্গী পরে, চ্যাগায়ে বসে পেটের উপর গেঞ্জী উঠায়ে ব্যাক্কলের মতন বসে বসে টিভিতে বাংলা চ্যানেলে ঘুরে ঘুরে খবর বা টক শো দেখতো আর হাই তুলতো, কখন বাচ্চাটা ঘুমাবে আর লাইট নিভায়ে সে বউরে নিয়ে বিছানায় যাবে। এই লোক স্মার্ট। দেখলেই বোঝা যায় ভালোমন্দ খায়, এই টাইপ লোক মাঝে মাঝে ঘরেই হালকা পাতলা ড্রিংক করে ফেলে। বেশি না, এই দুই তিন পেগ ভদকা বা একটু হুইস্কি টুইস্কী খায় আরকী। তখন মশাদের বউদের যে কী খুশি লাগে। ব্লাড সাক করে ফিরে কয়েক ঘন্টা খুব হাই থাকে। রক্তের সাথে কিছুটা এলকো পেটে যায় তো। তখন তাদের মুডও খুব খোলে। রোমান্স, টোমান্স জমে। আজকে ড্রিংক করা পাবলিক কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। উপ্তা হয়ে ল্যাপটপে কি জানি দেখতেসে আর নীচের ঠোট কামড়াইতেসে। টেনশানে আছে নাকি ? টেনশানে থাকলে তো মুশকিল। অফিসের কাজ কর্ম বা অন্য কোনো ইশুতে টেনশানে থাকলে, এই মাল তো ঘুমাবে না সহজে। ডিনার করতে দেরী হয়ে যাবে, রিস্ক ও থেকে যাবে। ভদ্রলোকের ওয়াইফকে দেখে কিছুটা মনে জোর আসলো। ওয়াইফ পাজামা আর ঢোলা টিশার্ট পরা। কপাল ভালো পাজামা কিছুটা খাটো আছে। পায়ের দিকে এক বিঘতের মতো গোড়ালী দেখা যাচ্ছে। এতেই চলবে। এই টুকুতেই ৪/৫ টা মশা ফ্যামিলির ডিনার হয়ে যাবে। ভদ্রমহিলা ওভেনে তরকারীর বাটি গরম করে করে টেবিলে রাখতেসে, উড়ে গিয়ে একপাকে তাদের রাতের খাবারের মেনুটা দেখে আসা যায়। রাতের খাবারের উপর অনেক কিছু ডিপেন্ড করে। ভারী ঝাক্কাস টাইপ মেনু হলে, মানুষ খায়দায় বেশি। ঘুমটাও তখন গাঢ় হয় ভালো। তাদের ব্লাড খেতে সুবিধা বেশি। কিন্তু মেনু যদি হয় ডায়েট টাইপ, ঘুম ও হয় লাইট । ভেজাল বেশি।যাক। মহিলা তরকারী টেবিলে নিয়ে বসে পড়সে, মেয়েকে খাওয়াতে। মেয়ে পিচ্চি, বয়স হবে ৫/৬ বছর। গুল্লু গাল্লু টাইপ। সে, মানে মশা তাকে ভাল করে দেখে। বেবীদের ব্লাড হল বেস্ট ডীশ। এই গুল্লুটার হাতের থেকে চু করে এক টান দিলে, মনটা ভরে যাবে। ফুল প্লেট কাচ্চি খেয়ে বোরহানীর গ্লাসে চোঁ করে চুমুক দেয়ার পর মানুষ যেমন ঘ্রোঁত করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, তেমন ঢেকুর দিবে তার ওয়াইফ, বেবীটার রক্ত চুষে নিয়ে। এই পিচ্চি গুল্লুটা যাদি আলাদা রুমে শোয়, তাহলে তো আজকে পার্টি হবে। সব বন্ধুদের ইনভাইট করে আসতে হবে, সবাই বউ, শালী টালী নিয়ে আসতে পারবে, সারা রাত ব্লাড সাক করতে পারবে লেডিসরা। আর সে আর তার বন্ধুরা, মানে যত জেন্টস মশা আছে, তাদেরও ডিউটি করা লাগবে না, কানের কাছে উড়ে উড়ে পোঁ পোঁ সানাই বাজাতে হবে না। তারা একটা কিছু নিয়ে আড্ডা মারতে পারবে, কার্ড খেলতে বসতে পারবে। বয়েজ টাইম কাটাবে আরামে। বউরা কেউ বিরক্তও করবে না। এক রুমে পিচ্চিরা ঘুমালে, সব মশা মিলে যদি তাকে চ্যাংদোলা করে তুলে উড়ায়ে নিয়েও যায়, তাও তারা জাগে না। ফুড সোর্স হিসাবে তাই দুনিয়ার বেস্ট হচ্ছে একা রুমে বাচ্চা। ভদ্রমহিলা মেয়েকে ডিম দিয়ে ভাত মেখে নলা তুলে মুখে দিয়ে আবার বলেও দিচ্ছে -"চাবাও ! গেলো ! চাবাচ্ছো না কেন ? কতক্ষন বসে থাকবো বাবা ?" পিচ্চি মেয়ে মুখে ভাত নিয়ে ব্যাং এর মতন মুখ ফুলায়ে বসে টিভির দিকে তাকায় আছে। মোটুপাতলু দেখতেসে। উফফফ ! এই এক জিনিস। এই এক কার্টুন ছবি এসে, মানুষের বাচ্চাগুলার লাইফ শেষ করে দিতেসে। এরা খেতে খেতে মটু পাতলু দেখে, খেলতে খেলতে মটু পাতলু দেখে, পটিতে হাগতে বসেও মটু পাতলু। মানে এদের চোখ আঠা দিয়ে লাগানো। টিভিতে মটু পাতলুর দিকে তাকায়ে তাকায়ে এরা দুনিয়ায় চলবে কেমনে ? মুখে খাবার ঠুশে দিয়ে বলতে হয় - চাবাও ! এটা কোনো কথা হইল ? চাবাও কোনো বাচ্চাকে বলে দিতে হয় ? মশার বাচ্চা যদি এমন গবেট হত, এক উস্টা মেরে তার শুঁড় ভেঙ্গে লুলা করে দিত সে। সেদিন এক বাসায় গিয়ে দেখলো, ড্রয়িং রুমে টিভির সামনে পটিতে বসে এক বাচ্চা মটু পাতলু গিলতেসে, আর কাজের বেটি, পেতনীর মতন চিপা গলায় চিঁ চিঁ করে বলতেসে - মনা কুঁত দেও, উঁ উঁ উঁ কর। কুঁউত দেওনা, হাগু আইবো না তোও ও । এটা কিছু হইল ? যার হাগা তার খেয়াল নাই, আরেকজন কুঁতায়ে হাগু করানো যায় ? রাবিশ যত্তসব। আর বাচ্চাদের কথা বাদই দিলাম, বড় মানুষও কি কম নাকি ? তার আরেক বন্ধু, টানা ৫ দিন তার বউদেরকে পেট ভরে এক ছেলের ব্লাড খাওয়াইছে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে। অই ছেলে ফোন হাতে কমোডে বসলে আর দিন দুনিয়ার খবর থাকেনা। ফেসবুক করতেই থাকে করতেই থাকে, হাগা শেষ করে, আরেক ব্যাচের খাবার হজম হয়ে বের হয়ে আসার সময় হয়, সেই ছেলে বাথরুম থেকে বের হয় না। আর তখন তার রক্ত তো রক্ত, পাছা কেটে নিয়ে চলে আসলেও টের পেতনা। বন্ধুতো সেই ছেলের গল্প করতে করতে হাসতে হাসতে পড়ে গিয়ে ৫ নাম্বার পা'ই মচকায়ে ফেললো।

না, মেনু মোটের উপর খারাপ না। ফ্যামিলি ভালো, ফার্নিচার মডার্ন। এই টাইপ ফ্যামিলির এটিকেট আছে। বক্স খাটে অর্থপেডিক্স ম্যাট্রেস ইউজ করে, বেডরুমের সাজ গোছ দেখে মনে হচ্ছে এরা হুট করে খ্যাতের মতন মশারী টাঙ্গায়ে ফেলবে না। এরা পুতা দিয়ে দেয়ালে পেরেক টাঙ্গানো টাইপ পাবলিক না। এদের দেয়ালে মাইল্ড কালারের ওক উডের ফ্রেম করা ওয়াটার কালারের ছবি ঝুলতেসে, রুচি আছে। মশা তাড়ানোর জন্য এরা স্প্রে ট্রে কিছু ইউজ করতে পারে। আগে কয়েল এর চল ছিল। এখন মডার্ন ফ্যামিলি কয়েল জ্বালায় না। কয়েলের মধ্যে একটা ফাতরা ব্যাপার আছে। মশার জন্য কয়েল জ্বালায়ে আসলে মানুষ নিজেরাই কষ্ট পায় বেশি। ইদানিং তাই মানুষ কয়েল কম ইউজ করে।

রেকি টেকি করে সে খুব সন্তুষ্ট হয়। নাহ, খুব ভাল পার্টি পাওয়া গেছে। মশারী নাই, কয়েল নাই, স্প্রেও দেখা যাচ্ছেনা। ইলেকট্রিক ব্যাট একটা দেখা যাচ্ছে চার্জে দেয়া। সেটা বড় কোনো সমস্যা না। ঘুমায়ে যাবার পর, মশা যতই জ্বালাক, বিছানা থেকে নেমে কেউ মশা মারার ব্যাট নিয়া টেনিস প্র্যাকটিস করে না।
সাড়ে ১১ টার মতন বাজে। ভদ্রলোকের বউ ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে, কি সব ক্রিম টিম মাখতেসে, ভদ্রলোক ও ঠ্যাপাস করে ল্যাপটপের ডালা নামায়ে বিছানার পাশে নামায়ে রাখলো, ঘুমের পূর্ব প্রস্তুতি, খুবই সুলক্ষণ। ঘুম ছাড়া অন্য কিছু হইলে মহিলা এত ক্রিম টিম ঘষাঘষিতে যাইতো না। তারচেয়ে বড় কথা, পিচ্চি মেয়েটা শুয়ে আছে বিছানার মাঝখানে। পিচ্চি যদিও এখনো ঘুমায় নাই, তবে ঘুমায় যাবে, মা এসে শুইলে। আর জামাই বউ যেহেতু দুইজন দুই পাশে, এক ঘন্টার মধ্যে ঘুম, ব্যাস ডিনার রেডি হয়ে যাবে।
বউ চলে আসছে। বডি স্প্রে'র ক্যানের মাথা থেকে উড়ে গিয়ে বুক শেলফের কাছে গিয়ে বউ কে হাই বলে, বউ শুকনা মুখে বসে আছে মোটা একটা বই এর উপর। চেহারাটাই হাংরী হয়ে আছে, আহারে। কাছে গিয়ে সে বলে,
- টেনশানের কিছু নাই বেইব। আজকে ডিনার খুব ভালো।
- কই আর ভাল, এ্যাভারেজ। পিচ্চি মেয়েটাকে দেখসো ? কেমন গাবদা গুবদা।
- আরে ! গাবদা গুবদা মানে তো জোস, ইজি ক্যাচ, চোঁ করে টান দিবা, চিলড বিয়ারের মতন এক টানে টামি ফুল।
- টামি ফুল না কচু, এখনকার এই গুবদা গাবদা মানুষের পিচ্চি গুলা বোগাস, এগুলার ব্লাড পাইনশা। একদমই মজা না। মনে নাই , এডিস ভাবী খাইলো সেদিন? ফুড পয়জনিং হয়ে, বমি টমি করে অস্থির বেচারী। কি টেনশানে ছিল, নতুন ডিমগুলা না তার আবার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। অন্য ভাবীদের কাছেও শুনছি। এখনকার বেবী ব্লাড ফালতু। কি সব হাবিজাবি ছাতামাথা খায় এরা কে জানে। এদের ব্লাডে কেমিকেল টক্সিকেশান রেট খুব হাই। খেলাধুলা করে টরে নাতো, ব্লাডে টেইস্ট এড হয় না।
- বাছাবাছি বাদ দিয়ে যা পাচ্ছ খেয়ে নাও না। এখন তোমার জন্য খাশ দেশী পিচ্চি আমি পাব কই ? বস্তি এখান থেকে ম্যালা দুর। পরিষ্কার পরিবেশে ব্লাড খাবা, চলে যাবা । এত বায়না বাদ দিতে পারো না ?
- যা বোঝোনা , তা নিয়া আজাইরা জ্ঞান দিবা না, ব্লাড তুমি খাও, না আমি ? তুমি বেশি পক পক করতেসো কেন ? ফরমালিন-টিন মেশানো ব্লাড খেয়ে আমার ডিম মিসক্যারেজ হয়ে টয়ে গেলে তোমার খুব ভাল্লাগবে ? ফালতু একটা। যাও । উড়ে গিয়া ব্যাটার কানের কাছে গিয়া দেখো ঘুমাইসে কিনা, হাফপ্যান্ট পরা ব্যাটা, হাটুর পেছনে, নীচের দিকে বসে, একটু খেয়ে চলে যাই।

সে উড়ে এসে বিছানার উপর এক চক্কর দেয়। ভদ্রলোক মোবাইল টিপতেসে, মহিলার গলা জাপটায়ে ধরে পিচ্চি শুয়ে আছে। মহিলার হাত উল্টা করে চোখের উপর রাখা। ঘুমায় নাই মনে হচ্ছে । বাচ্চাটা ঘুমালো কিনা বোঝার জন্য একটু নীচু দিয়ে উড়ে গিয়ে দেখার সময় মহিলা চোখের উপর থেকে হাত সরাল, ব্যাস্ত চোখে তাকে খুজলো। এহহেরে !! ঝামেলা। আওয়াজ কানে গেছে মহিলার। উঠে গিয়ে ব্যাট নিয়ে আসবে নাকি ? মহিলা লোকটাকে ফাস্টকার্ড জ্বালাতে বলল। বেড সাইড ড্রয়ার থেকে বের করে লোকটা গোলাপী রং এর একটুকরা কাগজ নিয়ে কোনায় আগুন ধরায়ে দিল। সে উড়ে গিয়ে তার বউ এর পাশে বুকসেলফে বসলো। বউ চোখ কুচকায়ে জিজ্ঞেস করে
- ব্যাটায় করে কী ?
- জানিনা, ফাস্টকার্ড না কি জানি জ্বালাতে বলসে।
- কি জিনিস এটা ? আগে দেখসো ?
- না দেখিনাই। ননলেথাল টাইপ কিছু হবে হয়ত, চিন্তা কইরো না। বাচ্চা আছে তো রুমে, বেশি টক্সিক কিছু হইলে জ্বালাইতো না। মানুষের এখন এইসব বিষয়ে নজর টনটনা।
- বুইঝো বল্লাম, তোমার তো কিছুনা, কিছু হইলে হবে আমার, মইরা পইরা থাকবো, তুমি সকালে আবার বিয়া করবা, আগামীকাল সন্ধায় সেই নতুন বউরে ডিনারে নিয়া আসবা।
- আরে ধুর যত ফালতু কথা। আমার অইযে চিকনা কইরা লম্বা কিউলেক্স দোস্তটা মারা গেলনা ? ভাবীরে রাইখা, স্প্রে করা রুম রেকী করতে ঢুইকা। কে বলসে তোমারে, সব সময় বউই মরে ? আরে বাল মরার হইলে সবাই মরে। টেনশান কইরো না।
- তাও, আমার খুব ভয় লাগে। ইদানিং আননোন কত ক্রাইসিস যে আসছে।
বউকে অভয় দেয়ার জন্যই হয়তো সে হিরোইজম দেখাতে এক চক্কর ঘুরে আসার চিন্তা করলো। ঘরে আরো দুই ফ্যামিলি মশাকে দেখা যাচ্ছে। মাস্তান টাইপ কালচে এক মোটা ব্যাটা মশা আসছে তার দুই বউ নিয়ে, সাহস কতরে ব্যাটার। আবার ঘুরতেসেও বউ সহ বিছানার পায়ের কাছে। পায়ের উপর খেতে বসলে যদি আরেকপা দিয়ে ডলা দেয়, ভর্তা হয়ে যাবে সেই চিন্তা কি নাই নাকি ? এই রেকলেস মশাগুলাই নিজেরা আগে মরে, অন্যদেরও মরার ব্যাবস্থা করে। হোপলেস যত সব। চক্কর কেটে সে দেখার চেষ্টা করে, ভদ্রলোক যেই কাগজের টুকরায় আগুন দিলো, সেটার কি অবস্থা। দেখে তেমন আহামরি কিছু লাগতেসে না। হালকা করে বুনকা ধোয়া উঠসে, হালকা একটা স্মেল ও আছে। চক্কর শেষ করে সে মোড় কেটে উড়ে বুকশেলফের দিকে ফিরে যাবার চেষ্টা করে। দুরে তার বউকে দেখা যাচ্ছে বই এর উপর বসে আছে। কিন্তু বউকে কেমন জানি ঘোলা ঘোলা দেখাচ্ছে। সমস্যা কি ? তারপর আর তার কিছু মনে নাই।

বই এর উপর থেকে বসে তার বউ স্পষ্ট দেখলো মোড় কেটে উড়ে আসার মাঝ পথে তার স্বামী ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দিয়ে উপ্তা হয়ে গেল। সর্বনাশ। মিড ফ্লাইং এ ফেইন্ট হয়ে গেল নাকি বেচারা। হায় হায় । কি হবে এখন। ফ্লোরে পড়লে তো সমস্যা। সাদা মার্বেল টাইলস এর ফ্লোর। একটা মশা পড়ে থাকলে স্পষ্ট দেখা যায়। থাবা দিয়ে মেরে ভর্তা করে ফেলবে তো। কি উপায়!! ভাবতে ভাবতেই সে টের পায় হালকা একটা গন্ধ ভেসে আসতেছে। এই গন্ধেই তাহলে তার স্বামী সেন্সলেস হয়ে গেল ? হুশ থাকতে থাকতে সে উড়ে বের হয় রুম থেকে। জান হাতে করে উড়ে গিয়ে জানালার পর্দার পিছনে থাই উইন্ডোর চিপা ফাঁকা দিয়ে কোনো মতে যখন সে বের হয়, তখন সে জানেনা, তার স্বামী কি বেঁচে আছে, নাকি মরে গেছে।

তার সেন্স ফিরে ঝাঁকিতে।
চোখ খোলার পর সে দেখে তার উপর মিশকা কালা একটা ব্যাটা মশা উপ্তা হয়ে তাকে ঝাঁকি দিচ্ছে। কানের ভোঁ ভোঁ কাটার পর সে শুনতে পায় সেই মশাটা তাকে বলতেসে
- ওই মিয়া, খোলা ময়দানে পইড়া রইলা কোন আক্কেলে ? মাল খাইসো নাকি ? ওয়াইফ কই তোমার ? ডিনার শেষে মানুষের বেডরুমে শুইয়া ঘুমাইতেস, তোমার কি সেন্স নাই নাকি ? উঠো, উইঠা বাড়ি যাও।
ভ্যাবদা মারা ভাব কাটেনা তার, প্রথম কিছুক্ষন সে বুঝতেই পারে না সেই কোথায় আছে, ঘরের আলো দেখে তার চিন্তা আরো এলোমেলো হয়ে যায়, সকালের আলো কেন ? এই ঘরে তো সে আসছিলো রাতে। বউ কই তার ? বেহুশ হয়ে গেল কিভাবে ? বউ কি আছে এখানে ? বেহুশ টেহুশ হয়ে আছে ? নাকি মরেই গেছে ?
কি থেকে যে কি হয়ে গেল , তার কিছুই মাথায় ঢুকতেসে না। এক ফাস্ট কার্ডের ধোঁয়ায় সে একরাত বেহুশ হয়ে পড়ে থাকলো। কি জিনিস রে বাবা, মরেও তো যেতে পারতো সে। কপালগুনে জানটা আছে। উড়তে গিয়ে দেখলো কাহিল লাগতেসে। কোনোমতে জানালা দিয়ে বের হয়ে নিজের এলাকায় এসে দেখলো সবাই তার দিকে কেমন করে জানি তাকাইতেসে। মদ খেয়ে সারারাত মাতলামী করা লোকের দিকে সকাল বেলায় এলাকাবাসী যেভাবে তাকায়, তার দিকে সবাই সেভাবে তাকাইতেসে। আরে ভাই, সে কি ইচ্ছা করে বেহুশ হইসে নাকি ? ভালোভাবে বউ নিয়ে ডিনারে গেসিলো ফ্ল্যাটবাড়িতে। এখন কেমিকেল এটাক হবে, এটা কে জানতো ? কেউ কি ইচ্ছা করে ডিনারে গিয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে ? তার খুব খারাপ লাগতে থাকে। এত টায়ার্ড যে বউকে খুঁজে বের করার এনার্জিও পাচ্ছেনা। একরকম টলতে টলতে সে পাতাবাহার গাছের পাতার পিছে ঘুমায় পড়ে।
দুইদিন পর, উস্কোখুস্কো চেহারা নিয়ে সে সন্ধার সময় নিউ ইস্কাটনের ফ্লাই ওভারের কাছে উড়ে যাবার সময় দেখে, তার বউ হাসতে হাসতে একটা খুব ড্যাশিং মার্কা এডিফিলিস মশার সাথে গল্প করতে করতে উড়তেসে। বউ বেঁচে আছে দেখে সে কি যে খুশি হয়। হাত দিয়ে কোনো মতে ডানা ঠিক ঠাক করে উড়ে যায় বউ এর কাছে। কথার মাঝখানে তার বউ তাকে দেখে হঠাত হাসি থেমে যায় । তারপর তাকে বলে
- ও তুমি বেঁচেও আছো
- বেঁচেও আছি মানে ? কি বললা এইটা ? কি ক্রাইসিসে যে পড়সিলাম তুমি জানো ?
- জানবোনা কেন ? আমার চোখের সামনেই তো তুমি উড়তে উড়তে হঠাত ফ্লিপ কইরা পড়ে গেলা ফ্লোরে, একটা প্রেগনেন্ট বউ কি খাবে, কিভাবে বাঁচবে, সেইসব কোনো চিন্তা তো তোমার করতে হয় নাই ।
- আরে, এটা কোনো কথা ? তোমার ডিনারের জন্য ঘুমাইসে কিনা দেখতে গিয়াই তো আমি বেহুশ হয়ে গেলাম। আমি কি ইচ্ছা করে বেহুশ হইসি নাকি ?
- তা হও নাই। এনি ওয়ে। বেচে যখন আছই, নাউ উই নীড টু টক।
- নীড টু টক মানে ?
- মানে আমি তোমাকে বলতে চাই, আমি তোমার সাথে আর নাই । আমি মুভ অন করসি। এই যে আমার নতুন  ফিয়াসে এডিফিলিস। আমি তার সাথে ঘর করবো, তার বাচ্চার মা হব।
- কি বলতেসো এসব?
- ইয়েস। তোমার মত ইরেস্পন্সিবল মশার সাথে আমি জীবন কাটাবোনা। যার এতটুকু মিনিমাম সেন্স নাই । বউ কে নিয়ে যে ডিনারে গিয়ে ফাস্টকার্ডের ধোয়া খেয়ে বেহুস হয়ে পড়ে। তার প্রেগনেন্ট বউ, কিভাবে বেচে থাকবে সেই সিকিউরিটি দিতে পারে না, তাকে আমার স্বামী বলতে ঘৃণা হয়।
- হারামজাদী, মাতারী মশা। তোর মতন খা**কী মশার জন্য আমি জান হাতে করে ফ্ল্যাটবাড়ি ঘুরে ঘুরে ডিনার খুজছি, আর তুই আমার বিপদের দিনে বাজাইরা ব্যাডামশা খুইজা বের কইরা মজা করোস ???
- মুখ খারাপ করবা না। তোমার মুখে গালি মানায় না। তোমার চেয়ে এই এডিফিলিস অনেক বেটার হাজবেন্ড। অন্তত সে আমাকে ফ্ল্যাটের বেডরুমে ডিনারে নিবেনা। আজীবন আমাকে বেগুনবাড়িবস্তিতে নিয়া রিস্কফ্রি ডিনার করাবে বলসে। হাতিরঝিলের পাড়ে আমরা বাসা নিব। কোনো টক্সিক এটাকের রিস্ক নাই। সে আমাকে রেখে বেহুস হয়ে পড়ে থাকার মত মশা না। আমি আমার ডিসিশান নিয়ে ফেলসি। নাউ ইউ গেট লস্ট।

খুব মনভাঙ্গা হয়ে সে বসে থাকে ফ্লাইওভারের রেলিং এ। কি হল এটা তার জীবনে? একরাতে এইভাবে তার আস্ত জীবন ওলট পালট হয়ে গেল ধোঁয়া খেয়ে বেহুশ হয়ে ? পাশ দিয়ে তরুনী একটা মশা উড়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গামন হলেও তরুনী মশার দিকে তার চোখ যায়, এখনো কনসিভ করে নাই। আলাপ করে দেখবে নাকি ? সে তো এখন ব্যাচেলারই। মনে মনে চিন্তা করতে করতেই সে শুনতে পায়, তরুনী মশাটা তাকে বলতেসে
- তুমি সেই মশা না ? ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে ধোঁয়ায় বেহুশ হয়ে গেছিল বউ নিয়ে ডিনারে গিয়ে, বউ পরে ভেগে গেছে আরেক এডিফিলিস এর সাথে ? আমার দিকে এভাবে তাকায়ে লাভ নাই, নো চান্স । আমি গবেট না। ইরেসপন্সিবল মশাকে আমি ডেট করিনা। ফাক অফ ।
লজ্জায় অপমানে মশার মরে যেতে ইচ্ছা করে। ফ্লাইওভারের রেলিং থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যদি মরে যাওয়া যেত সে তাই করতো।  আফসোস, উচু থেকে লাফ দিয়ে মশারা মরতে পারে না।
লেডিস মশারা এমনই হয়।
বুকভাঙ্গা কষ্ট নিয়ে সে মনে মনে অভিশাপ দেয়। সেই দিনের সেই ভদ্রলোককে, যে ফাস্টকার্ড জ্বালায়ে তার জীবনটা তামা তামা করে দিল ???

Wednesday, December 19, 2018

প্রকাশনা বাণিজ্য

একটা ছোট্ট মেয়ে নার্সারীতে উঠলো। বয়স মাত্র সাড়ে চার। আমাদের সময় এই বয়সটা মায়ের কোলে বসে স্লেটে অ আ লেখা শুরু করার চেষ্টা হতো। আর এসময়ে জন্ম নেয়ায় মেয়েকে সাড়ে তিন বছরেই স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ কাবার করতে হলো। জিনিষটার ভালোদিক দেখায় সবাই আমাকে। কিন্তু আমাকে চিন্তিত করে এর পেছনের অন্ধকার দিকটা।

অনেকেই ভাবেতে পারেন প্লে গ্রুপের বাচ্চার পড়াশোনায় আবার অন্ধকার দিক কী থাকে। বলছি, প্রথমত প্লে গ্রুপের পাঠ্যসূচীর কোনো সরকারী নীতিমালা নেই। এক এক স্কুল এক এক ঢং এ পড়ানো শুরু করে। কি পড়ানো হবে কতটুকু পড়ানো হবে নেই কোনো হিসাব। চার বছরের বাচ্চার জন্য এই পাঠ্যসূচী আদৌ উপযোগী কিনা সেই বিচারও কেউ করেনা। অভিভিবকরা তো বেতন দিয়ে আশায় থাকেন বাচ্চার জন্য ঠিকঠাক শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একটু ভালো করে তাকালে্ই দেখবেন শিক্ষাবাণিজ্যের প্রথম বলি হলো দুধের বাচ্চারা।

সিলেবাস শেষ করার নামে ক্লাসে এক চিমিটি পড়িয়ে এক গামলা হোমওয়ার্ক, নানান রঙ্গের লম্বা লম্বা ছুটি, এর মাঝেও পাহাড় সমান হাতের লেখা। আর সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো বাচ্চাদের বর্ণমালার বই। স্কূল ভেদে পাঠ্যবই নির্বাচন নিয়ে চলে বাণিজ্য। এমন এমন বই প্লে গ্রুপ, নার্সারীতে পাঠ্য করা হয় যা আসলে কোন বয়সের বাচ্চার পাঠ্য বিবেচনা করে লেখা, তা বোঝার কোনো সাধ্য নাই। বই এর ডিজাইন, হরফ, তুলনা চিত্র সবিকছুতে খামখেয়ালি। প্রকাশনা বাণিজ্যের সস্তা চাকচিক্য।

একটা বাচ্চা যে প্রথমবারের মতো একটা বর্ণের সঙ্গে পরিচিত হতে যাচ্ছে তার বই এর বর্ণমালার হরফ অবশ্যই হওয়া উচিত প্রমিত বিদ্যাসাগর টাইপ। কিন্তু দেখে অবাক হতে হয় বিচিত্র জটিল টাইপফেস দিয়ে বর্ণমালা লেখা এই বই নাকি প্লে গ্রুপের জন্য। যে বই এর "ম" এবং "য' এর পার্থক্য বুঝতেই পারছেনা বাচ্চারা। তার পর আসে শব্দ নির্মাণ এর পাঠ। আমরা ছোট বেলায় পড়েছি বর্ণ দিয়ে শব্দ চেনানো হয় এমন পরিচিত বস্তুর, যার নাম সহজ সরল ২/৩ অক্ষরে লেখা হয়। আর যার চিত্রটা বাচ্চা সহজে চিনতে পারে। কিন্তু এখনকার বই এ এসবের কোনো বালাই নেই। যাচ্ছেতাই একটা শব্দ দিয়ে দিলেই হলো। যেমন "শ" দিয়ে আমি প্রথম শিখেছিলাম "শাক" পাশে ছিল শাকের ছবি। আর এই বাচ্চাটার বইএ আছে শনি, পাশে শনি গ্রহের ছবি। চার বছরের বাচ্চা শাক চেনা যত সোজা শনি চেনা কি ততটাই সোজা বলে মনে হয় ??

তার পর আরও আছে । বাচ্চাদের বইতে বর্ণ পরিচয় করানোর ক্ষেত্রে ছবি ও অক্ষর হতে হয় সরল, যেন বাচ্চা চট করে তার পরিচিত বস্তুটির ছবি চিনতে পারে। কিন্তু এখনকার বই এর ইলাস্ট্রেশন করানো হয় সস্তা চিত্রকর দিয়ে যারা অনেকটাই অপ্রাসংগিক একটা কিছু এঁকে কাজ সারে। যেমন "স" তে সাইকেল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটা লোক সাইকেল ধরে দাড়িয়ে আছে, সাইকেলের হ্যান্ডেলে বেলুন বাধা। বাচ্চার চোখ যায় আগে বেলুনের দিকে।
যারা বইগুলো লেখে তারা কারো কাছে জবাবদিহিতায় বাধ্য কিনা আমি জানিনা। কিন্তু আমার ভাবতে কষ্ট হয়। আমাদের বাচ্চারা কচি বয়সেই কিছু অর্থলোভী মানুষের লোভের সস্তা শিকারে পরিণত হয়। সহজ ভাবে আনন্দ নিয়ে যে শিক্ষা পাবার অধিকার তাদের আছে সেটা তারা পায়না। তাদের হাতের বই, তাদের স্কুলের হামবড়া কার্যক্রম সবকিছু তাদের ওপর কঠিনভাবে চেপে বসে। স্কুলগুলোর বই সিলেকশনের সস্তা দূর্নীতি একটা ছোট্ট বাচ্চার শিক্ষার শুরুটাকেই লন্ডভন্ড করে দেয়।

সর্বেশষ কষ্ট বলে লেখাটা শেষ করি। গতবছর যে পুতুলটা ১-৩০ বলতে শিখেছিল শুধু, এবার তার বই এর ৪ নং পাতায় যোগ অংক করতে বলা হচ্ছে !!!! ৭ +১১ = ? এই ২ মাসে তাকে এটা শিখতে হবে!!!! নতুন প্রিন্সিপাল এসে এই নতুন বই পাঠ্য করেছেন ( মোটা কমিশন পেয়ে হয়তো) এখন বাচ্চকে এটা শিখতে হবে, না হলে ফেল !!! এখন হয়তো বাচ্চারা নিজ থেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করবে যে তার মাথায় বুদ্ধি নেই নয়তো অংক জিনিসটা অনেক বাজে রকম কঠিন!!!!

পতাকা কাহন

কবি বলেছিলেন -
তোমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবার দাও শক্তি।
খুবই খাটি কথা। বুড়া কবি আজাইরা কথা কম বলে গেছেন। পতাকা মানেই যারা মনে করে লাঠির আগায় একটুকরা কাপড় বান্ধা, তাঁদের হাতে পতাকা আর বান্দরের হাতে লোহা ... একই কথা। মান মর্যাদা না জেনে পকেট থেকে ফস করে টাকা বের করে যারা পলিস্টার কাপড়ের লাল সবুজ পতাকা কিনে ফেলে, কিভাবে তা উড়াতে হয়, কিভাবে পতাকা কে তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে হয় এই ভাবনা করে না, তারা পতাকাবাহী হবার যোগ্য না। যে কোন দেশের পতাকাই সে দেশের সবচেয়ে সম্মানের বস্তু। পতাকা অর্জন করতে গিয়ে আমাদের দেশ এর মত এত দাম আর খুব কম জাতিকে দিতে হয়েছে। আমরা যারা স্বাধীনতা উত্তর প্রজন্ম, আমরা হয়ত কোনদিন বুঝতে পারবো না; পুরো পরিবারের সবার মৃতদেহ উঠানে পড়ে পচতে শুরু করেছে, আর পুকুরে তিন দিন ধরে কচুরীপানায় লুকিয়ে কাপতে থাকা কিশোর ছেলে গোলাগুলির শব্দ থেমে যাবার পর চোখ খুলে বাড়ির সামনে দিয়ে উল্লাস করতে থাকা যুবকের হাতে এই লাল সবুজ পতাকা দেখে তার কেমন লেগেছিল।
আমাদের কাছে পতাকার অনেক রকম মানে থাকতে পারে, কিছুটা গর্বের, কিছুটা কাব্যিক, কিছুটা উল্লাসের, কিছুটা হয়ত দেশপ্রেমের। কিন্তু কারো কারো কাছে পতাকাটাই গোটা অস্তিত্ব। তাঁদের মত করে ভাবতে না পারলেও, স্বাধীন দেশের সভ্য নাগরিক হিসাবে আমাদের অন্তত নিজেদের পতাকাটাকে কেমন করে ব্যবহার করা উচিত তা জানা দরকার। আমরা অনেকেই জানিনা আবেগ প্রকাশ করার জন্য যে আমরা টান মেরে পতাকা মাথায় বেধে ফেলি, খেলা দেখার সময় সুপারম্যান এর মত পতাকা পীঠে বেধে ফেলি, খেলায় জিতলে পতাকা গাড়ির বনেটে কায়দা করে সেট করে ফেলি, এগুলো অনুচিত আচরন। নিয়ম মত নির্মিত জাতীয় পতাকা এইরকম ভাবে ব্যবহার করা যায় না। তবে লাল সবুজ রঙ্গে অন্য কোন ডিজাইন নিয়ে আমরা একই উল্লাসটাই করতে পারি, তাতে কিছু কমতি হয় না। মাঝখান দিয়ে পতাকার ইজ্জত টা বেঁচে যায় ।

আমরা আমাদের পতাকা সম্মান নিয়ে তুলে ধরতে জানিনা বলেই কিছু বান্দরের হাতে আবার লোহার সঙ্গে আগুনও উঠে। তারা মহা উল্লাসে ক্রিকেটের মাঠে , মহররমের মিছিলে উসিলা পেলেই পাকিস্তানি ঝান্ডা উচা করে ধরে। টেবিলে বসে ভাগ হয়ে দেশের মালিক হবার পর যেই ঝান্ডা তারা পেয়েছিল সেই ঝান্ডার নিচে তারা নিজেরাই এক হতে পারেনি এখনো, আর আমার দেশের মর্কটকূল সেই ঝান্ডা উচা করে ধিতাং ধিতাং করছে।

আসলে দেশপ্রেম কাউকে বলে শেখানো যায় না। যেমন শেখানো যায় না যুদ্ধ করা। অস্ত্র ধরার ট্রেনিং তো সেনাবাহিনী প্রতিদিনই নেয়, তারপরেও আবেগে উদ্ধত মুক্তিবাহিনীর কাছে পৃথিবীর ৮ম চৌকষ সেনাবাহিনী যুদ্ধে হেরে বসেছিল। দেশপ্রেমের শিক্ষা নিজের ভেতর থেকেই নিতে হয়। নিজেকে যদি কেউ প্রশ্ন করে দেশ আগে না খেলা আগে ? তাহলে উত্তরটা পেয়ে যাবার কথা। "রাজনীতির সঙ্গে খেলা মেশাবেন না" এই জাতীয় একটা পুরান ত্যানা পেচানো কৈফিয়ত শোনা যায়। যারা এই ত্যানা মুখে নিয়ে ঘোরেন, তাদের সঙ্গে তর্ক করে লাভ হয় না। তাদের ব্রেন একটু ট্যাপ খাওয়া। তারা কিসের সঙ্গে কি মেশাতে হয় এটাই জানেন না। অস্তিত্বের সঙ্গে যে দেশ, গৌরব আর সার্বভৌমত্ব না মেশালে মানুষ হওয়া যায় না এটাই জানেন না। এইসব হাফ হিউম্যানদেরকে; কেউ মরে গিয়ে দেশ স্বাধীন করে দেবে, কেউ সম্ভ্রম হারিয়ে সম্মান এনে দিবে, কেউ পুরো জীবনের অর্জন তুলে দিয়ে গৌরব এনে দিবে, অন্য নাগরিকদের ট্যাক্সের টাকায় এদের পালতে হবে, গ্যাস, কারেন্ট, পানি, স্যুয়ারেজ, টেলিফোন, হসপিটাল দিতে হবে। মোটকথা এরা বাংলার আগা পাশ তলার সব সুবিধা নিয়ে আরাম করে পাকি জোয়ানদের খেলা দেখবেন আর মারহাবা মারহাবা করবেন। যেন এরা জন্মেছেন ক্রিকেট খেলা দেখে পৃথিবীকে ধন্য করে দিতে। কিছু হাফব্লাড কনফিউসড লোক যদি সঠিক সময়ে কন্ডম ব্যবহার করতেন তাহলে এই তামাশা দেখতে হত না আমাদের। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা এত জরুরী।

নিজের দেশের মাটিতে ভিন্ন যে কোন দেশের পতাকা উচা করে ফেলা যে আসলে নিজের দেশের পতাকাকেই অপমান করে বসা, যারা এই সত্যটুকু উপলব্ধি করেন তারা শুধু সমালোচনা করেই ক্ষ্যান্ত দিয়ে দিলে এই ঘটনা কমবে না। সঠিক শিক্ষা আর সামাজিক প্রেরণা জাগানোর কাজটা শুরু করে দেয়া উচিত মনে হয়। তা না হলে দিকভ্রান্ত প্রজন্ম আরো বড় বড় ভুলের পথে পা বাড়াতে থাকবে নিজের অজান্তেই।

আমরা বাঙ্গালী, এই পরিচয় ভুলে যারা যে কোন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানী পতাকা উচা করে ধরে রাখে, তাদেরকে বুঝাতে হবে দৃশ্যটা তাদের লুঙ্গি উচা করে ধরে রাখার মতই উৎকট, নোংরা। কে বুঝাবে ? আমাদেরকেই বুঝাতে হবে। ইচ্ছা করলেই শুরু করে দেয়া যায়। ইচ্ছাটাই জরুরী।

পতাকা বহন করার জন্য একটা শক্তি দরকার, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই শক্তি প্রবাহিত হতে হয়। তা না হলে শুধু একটা দন্ড একটা জাতীয় পতাকা তুলে ধরে রাখতে পারে না। সেটা সম্ভব না।

ইয়া মাবুদ

হে মাবুদ,
যদিও তোমার কালামে কোথাও পৃথিবীতে পূণর্জন্মের রেফারেন্স নাই, তবুও;
তুমি কি মনে কর না, সবারই এই প্ল্যানেট আর্থে একটা সেকেন্ড চান্স পাওয়া উচিত?
আমরা শত শত কোটি মানুষ এক জীবনে নিজের বুদ্ধি বিবেচনায় কাজ কাম করে ঠগ খাইয়া যাই প্রতিনিয়ত। আমরা বুঝিনা কোন পথে গেলে, কোন কাম করলে এই দুনিয়াতেই আমার জীবন জান্নতুল ফেরদাউসের বারান্দা হয়ে যাবে ।।
মাবুদ গো,
আমরা বোকা,
আমরা সময়ের সিদ্ধান্ত সময়ে নিতে পারিনা, কুন সুময় কুন দিকে ছাতি ধরতে হবে বুঝিনা, তাই আমরা শত শত কুটি মানুষ জীবনে বার বার পুটু মারাই খাই ।
আমাদের ভেতরের অল্প ২/৪ জন আশরাফুল মাখলুকাত শুধু বুঝতে পারে, আবহাওয়া কুন দিক যাইতেছে, কার লগে মিশলে কি ফলাফল, কারে আব্বা ডাক্তে হবে, আর কার পুটু মেরে দিতে হবে। এই মহান মাখলুকাতে সবার তো সেই বিবেচনা নাই গো মাবুদ।
তোমার কাছে আমার আকূল আবেদন,
মাআআআআআআবুদ,
আমার মাতার বিরিন বাড়াই দিও।
দুনিয়াতে আমারে আবার একটা চান্স দিও।
আমি ধান্ধায় থাকুম মাবুদ, যুদ্ধমুদ্ধ লাগুক আর না লাগুক আমি রাজাকার হমু গো মাবুদ। রেপ, মার্ডার, মুনাফেকী যাই করি না কেন মাবুদ। ক্যাজুয়াল্টি ওফ ওয়ার ভুইলা গিয়া আমি দাড়ি লাল করিয়া তোমার পাক কালামের তফসির করিয়া বেড়ামু আর মুমিন মুসল্মানেগো ভালোবাসায় কোটিপতি বনিয়া পুরা দুনিয়ায় তোমার কালাম প্রচার করিতে আমিরাতের বিমানে বিজনেস ক্লাসে ফ্লাই করিব।
আমি কথা দিলাম মাবুদ,
একটা চান্স পাইলে আমি এবারের মত আ**দা থাকিব না। মেশিনগানের মতন মেশিন চালাইব। শত সন্তানের গুপ্ত পিতা হইব। পান চলবে আর মেশিন চলবে এই ওয়াদা দিলাম মাবুদ।
সব শেষে একটাই আবেদন মাবুদ।
আমরা সবাই তোমার বান্দা, কিন্তু কয়জনকে তুমি এমন কপাল দিসো যে, কারো বাবাকে মারিয়া ,মা কে রেপ করার পর সেই সন্তানের হক কামাই খাইয়া তোমার শোকর গুজরান করতে পারে। আমরা কেন এমন একখান কপাল লইয়া সেকেন্ড এন্ট্রি মারিতে পারবো না, বল মাবুদ।
শেষ কথা মাবুদ,
পাঠাইলা দুনিয়ায়, তুলিয়াও নিবা দুনিয়া থেকে,
আমরা কী মাবুদ একবারের জন্য ও চান্দে যাবো না ?
আমাদের মুরিদ, ওয়ারিস, ফ্রেন্ড, ওয়েল ইউশার, সিক্রেট ক্রাশ - এরা কী একবারের জন্য ও আমাদিগকে চান্দের গায়ে দেখিবে না ?

বাংলাদেশের মুখ

মাঝহার কোনোদিন জিপিএ ফাইভ পায় নাই।
পাইবো কেমনে ? মাঝহার তো এস এস সি পরীক্ষাই দেয় নাই।
ক্লাস টেনের টেস্ট পরীক্ষার পর মাঝহারের আব্বারে স্কুলে ডাকাইসিল। হেডস্যার এর রুমে মাঝহারের বাপ ১৭ মিনিট ছিল, মাথা নীচু করে। সেই দিন রাতে মাঝহার বাসায় ঢুকার পর প্রথমে কষাইয়া একটা লাত্থি আর তারপরে  প্যান্ট থেকে বেল্ট খুইলা আচ্ছামত মাঝহাররে বানাইসিলো। সেই দিনের পর থেকে মাঝহার সোজা হইয়া গেল। পড়ালেখার লাইনেই আর মাঝহার নাই। পরীক্ষা জিনিসটা খুবই খারাপ। এই ছাতার মাথা পরীক্ষা দিলেই আসে রেজাল্ট, আর রেজাল্ট খারাপ হইলেই আসে মাইরধরের ব্যাপার। তার চে" ভাল পরীক্ষার সাইডেই না যাওয়া।

তো মাঝহার লেখাপড়া করেনাই করসেটা কী ?
মাঝহার স্কুল কলেজের ভিত্রে হান্দায় নাই ঠিকই, কিন্তু এই গত ৬ বছর স্কুল কলেজের বাইরে, রাস্তা ঘাটে ঠিকই ছিল। আদর্শ বাদাইম্মা জীবনে মাঝহার যে কিছু শিখে নাই তাও না। মাঝহার শিখসে অনেক কিছু। সবই জীবনমুখী শিক্ষা। কাজের জিনিস। কাজে লাগানোর জিনিস। স্কুল কলেজে শিক্ষিতরা নানা মতে, নানা পথে মতবিভেদ করে, দুই দলে বা নানা দলে ভাগ হইয়া পড়ে। তর্ক বিতর্ক, হাতাহাতি বা কোপাকুপি করে। মাঝহার কিন্তু এইসব সামাজিক তুচ্ছতার ভাগাভাগির ভিত্রে নাই। মাঝহার খুবই অসাম্প্রদায়িক। খুবই উদার। তার কাছে হিন্দু-মুসলমান, আওয়ামী লীগ - বিএনপি, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-গরীব,  গুলশান - কামরাঙ্গীর চর, দিন-রাত কোনো ভেদাভেদ নাই। মাঝহারের কাছে সব সমান।

করেটা কি, মাঝহার ?
খুব ভাল প্রশ্ন। কর্মহীন, সুখী, যৌনতাড়িত মাঝহার মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।
এটাই তার নেশা, এটাই তার পেশা।
সকালে ফুটপাথে হেটে হেটে  নাইট-টেনের মেয়েদের সাথে কাঁধে হালকা ধাক্কামারা দিয়া শুরু হয়। কলেজের মেয়ে ধাক্কা খায়, ভার্সিটির মেয়ে ধাক্কা খায়। অফিসে যাওয়া মেয়ে যেমন ধাক্কা খায়, গার্মেন্টসের কর্মী মেয়েও ধাক্কা খায়। মাঝহারের ধাক্কা খাওয়া মেয়ে দেখতে কেমন, ধর্ম কী, বাবা কি করে, বা মেয়েটার চলাফেরা কেমন এইসব বাছবিচারে পড়ে না।
বাসে উঠলে মাঝহার যেমন বয়সের বিচার করাও ছেড়ে দেয়। মেয়ের গায়ে হাত দেয়, মেয়ের মায়ের গায়ে ও হাত দেয়। মার্কেটের ভীড়ে, বিবাহিত হোক অবিবাহিত হোক কনুয়ের খোঁচা বুকে নিয়ে যায় মাঝহারের সামনে পড়া রমনী।

উপলক্ষের বেলায় ও মাঝহার কি সুন্দর সাম্য মানে, ঈদের চানরাতেও মার্কেটের ভীড়ে মজা নেয়, লক্ষ্মীপূজার ভীড়েও মজা নেয়। মজা নিতে তো অসুবিধা নাই। সুরাইয়া হোক আর সুচরিতা দাস হোক, গায়ে হাত পড়লেও মুখ কারো খুলে না। মাঝহার থার্টি ফার্স্টের ডিজে পার্টিতে খোলামেলা পোশাকের মেয়েদের কচলায়, বৈশাখের মেলায় খোপায় মালা গাঁথা মেয়েদের শাড়িও টান মারে।

বিয়ে বাড়ির হলুদে নাচা হাসিখুশি মেয়েদের কেউ হঠাত যেমন মাঝহারের চাপ খেয়ে হঠাত হাসি থামায়ে ভয় ভয় চোখে এদিক ওদিক দেখে, দোলযাত্রার হোলীর রং খেলার কোন মেয়েও একই রকম হাসি থামায়ে নিজের জামা কাপড় সাঁটায়ে চেপে ধরে ভয় ভয় চোখে।

মাঝহারের চোখে স্কার্ট, লেগিংস, সালোয়ার, প্যান্ট, শাড়ি, বোরকা কোনো পোশাকই ছোট না, বড় ও না। মাঝহারের কিছু আসে যায় না। ভেতরে তো একদলা নরম মাংস। একই তো কথা। হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না, মুসলমানে খায় না শুয়োরের মাংস। মাঝহারের এই সংশয় নাই। তার কাছে সব রমনীর মাংসই সমান স্বাদ।
থার্টি ফার্স্টে , ক্রিসমাসে খুব বিদেশী সংস্কৃতির হাওয়া উঠে। বৈশাখ বা বসন্তে বাজে দেশী ঢোল। মাঝহারের কানে তো কিছুই ঢোকে না। মাঝহার জানে, যতই কচলাক, যেখানেই কচলাক, সব চুপচাপ।

শপিং এ আসা একা সাহসী মেয়ে, সন্ধ্যায় টিউশনী করে ঘরে ফেরা একটু ভীরু মেয়ে দুজনই সমান।
সুযোগ মাঝহারের কাছে আসে না। মাঝহার সুযোগ বানায়ে নেয়।
মাঝহার সুখী, মাঝহারই পুরুষ।
কোনো সিসি ক্যামেরা, টিভি ক্যামেরা, মোবাইলের ক্যামেরায় মাঝহারের মুখ চেনা যায় না।
সব মুখই মাঝহারের মুখ, সব চেহারাই মাঝহারের চেহারা
মাঝে মাঝে মাঝহারই যেন বাংলাদেশ।

কেক তল্লাসী।

ভার্সিটিতে পড়ার সময় কিছুদিন স্কুলের বন্ধু কাউসার থাকতো আমার সাথে। রুমে  তখনও গেস্ট হিসাবে বন্ধুর বেডে থাকাটা কবিরা গুনাহ'র পর্যায়ে পড়ে নাই। কাউসারও তেমন সময়ে আমার সাথে বেশ কিছুদিন ছিল।
তো সেইসময় একদিন কাউসার নোয়াখালী থেকে ফিরলো, বাসে করে আসছে, তখন সন্ধা। এসেই হাউ মাউ করে উঠলো, তার খিদা পাইসে, তখনো রাতের খাবারের সময় হয় নাই, তাই হলের সামনের সারী ধরা চায়ের দোকানে গেলাম। গিয়েই কাউসারের প্রথম কথা হল
- মামা পিস কেক দেন,
উত্তর আসলো পিস কেক নাই। না থাকতেই পারে, অন্য কিছু খা। কিন্তু তার দেখি চোখে মুখে উদভ্রান্ত ভাব, সে এই দোকান রেখে সামনের দোকানে গিয়ে একই প্রশ্ন করলো। সে দোকানেও নাই, পরের দোকানেও নাই, তার পরের দোকানেও নাই। এই ছাতার পিস কেক এমন কোন মহার্ঘ বস্তু না যে হটকেকের মত সেল হয়ে যাবে। আর এটা খাবার জন্যও কেউ এমন উতলা হতে পারে, তাও আমার ধারণা ছিল না। নরমালী সব টং টাইপ দোকানেই এই ফ্যাকাসে হইলদা পিস কেক নামক বস্তুটা পলিব্যাগে ঝুলে, তিন টাকা করে বিক্রি হয়, রিকশাওয়ালা বা এই শ্রেণীর লোকজন কিনে খায় সারাদিন শেষেও দেখা যায় পলিব্যাগের অর্ধেক কেক ফুরায় না, কিন্তু অইদিন পর পর এতগুলা দোকানে পিস কেক না থাকাটা অদ্ভুত লাগলো। কাউসার বিরস মুখ করে বিস্কিট আর কলা খেতে খেতে বললো, তার নাকি নোয়াখালী থেকে বাসে উঠার আগে মনে হইসিল চা আর পিস কেক খাবে, বাস কাউন্টারের আশে পাশে খুইজা পায় নাই। তারপর বাস যখন খাবার বিরতি দিল, তখন খাবে ভেবে দোকানে গিয়ে পায় নাই। কেক খাওয়ার বিশাল ক্রেভিং নিয়ে সে কমলাপুর বাসস্ট্যান্ডে নামলো, সেখানেও মরার পিস কেক পাওয়া গেল না। অবশেষে হল এলাকায়ও পাইলো না।
তার কাছে শুনে আমারো ইন্টারেস্টিং লাগলো, একদিনে এতবার কোইন্সিডেন্টলি পিস কেকের মত মামুলী জিনিস না পাওয়াটা একটু কেমন না ?
হতাস মনে ঠাট্টা করে কাউসার বলে
- সরকার মনে হয় পিস কেক ব্যান করে দিসে
- ধুর, এইটা কোনো কথা হইল ?
- আরে, তুই দেখনা, এত জায়গায় খুইজা পাইলাম না। এমন কইরা খুজলে ডাইল, গাঞ্জা, হেরোইনও পাইয়া যাইতাম ব্যাটা টং দোকানে।
তারপর আমাদের পিস কেক বিষয়ক ফ্যান্টাসী ডানা মেললো।
ধর, এমন হইল, পিস কেক খাইয়া পোলাপাইন নেশা করে, তাইলে কেমন হইত ?
কেউ দিনে দুপুরে টং দোকানে পিস কেক খুজলে দোকানদার গরম মেজাজ দেখায়া বলতো
- আরে যান যান আমি কেক টেক বেচিনা। পুলিশ ডাকুম এইসব খুজলে ...
পাশ থেকে টাউট চেহারার কেউ হয়ত সিগারেট টানতে টানতে হালকা হিন্ট দিত
- গলি দিয়া সামনে আগাইলে নাপিতের দোকানের পীচে চিপায় এক খালা আছে তার কাছে পাইবেন, এই জিনিস কেউ রাস্তার পাশে দোকানে বেচে নি ?
কুমিল্লায় যেখানে বাস দাড়ায় সেখানে বালতিতে পানির মধ্যে সফট ড্রিংকের বোতল চুবায়ে যেই হকার রা ডাকাডাকি করে, যুবক শ্রেণীর পাশে এসে বলে
- এই কোক ফান্টা সেভেনাপ এই কোক ফান্টা সেভেনাপ, ডাইল লাগে নি মামা ?
লাইনের শেষের কথা আস্তে করে বলে, দেখা যাবে সেও আস্তে করে বলতেসে ডাইল, পিস কেক লাগে নি মামা।
এলাকার মুরুব্বীরা হয়ত আলাপ করবে
- ইলিয়াস সাবের পোলাডারে ভাল জানতাম, দেখতে শুনতে প্রিন্সের মতন, লেখা পড়াও ভাল ছিল এখন শুনি কেক খায় !! চিন্তা করসেন অবস্থা ?
কোনো কোনো বাসায় রেগে পাগলা হয়ে যাওয়া কোনো বাবার চিতকার শোনা যেত
- কি দেই নাই আমি এই ছেলেরে, যখন যা চাইসে, আইনা হাজির করসি। দরকার, শখ, বিলাসীতা, কিচ্ছু মানা করসি কোনো দিন ? তাইলে আমার ছেলে কেন চিপাই বইসা আজকে পিস কেক খায় ? কেক খাওয়ার লাইগা এই কুত্তার বাচ্চা জন্ম দিসি আমি ??? কি কথা বল না কেন ?
অসহায় মা হয়ত মিন মিন করে বলতেসে
- ও খায় না তো, বন্ধু বান্ধব খায়, তারে কোনা ভাইঙ্গা এট্টু দিসে, তাও পুরা খায় নাই, থুঃ কইরা ফালায় দিসে, নেশা মেশাও হয় নাই ।
- তুমি চুপ থাক!! বেকুব মহিলা, কেকের কোনা খাইসে!! পোলার হইয়া ওকালতি করবা না। কেক কেকই!! কোনা খাইলেও যা, ৩ পিস খাইলেও তা। আর থু কইরা ফালাইসে কেন ? ওরে বলতা ৫ পিস কেক খাইয়া ঘরে আইসা মাতলামী করতে । যত্তসব!!!
কারো কারো বিয়ের আলাপ মাঝ পথে এসে থেমে যেত, কানাঘুশা শোনা যেত,
- ছেলে একশ তে একশ কিন্তু উড়া খবর হইল ছেলের কেক খাওয়ার অভ্যাস আছে ।
কারো বাড়ির মেয়ে ব্যাগ গুছায়ে বাপের বাড়ি চলে আসতো, ফ্যাচ ফ্যাচ করে কানতে কানতে নাক  লাল করে বলতো
- মা, আমাকে আর অই জানোয়ারের কাছে যাইতে বলবা না। তোমারা ধইরা বাইন্ধা ডাক্তার পোলা দেখে নাচতে নাচতে আমারে তুলে দিলা। খোজ নিসিলা ? তোমার ডাক্তার জামাই কি খায় ? ডেইলি সে কেক খাইয়া বাসায় আসে। তাও আমি মাইনা নিতাম, ইদানিং কেক খাইয়া হুশ জ্ঞান হারাইয়া বাসায় আইসা আমার গায়ে হাত তোলে। খবরদার আমাকে অর কাছে পাঠাইতে চাইলে আমি গলায় দড়ি দিয়া ঝুইলা যাব।
যুবসমাজের আলাপ হতো এমন
- দোস্ত চাকরী পাইছস ট্রিট দে, মোগলাই টোগলাই বইলা লাভ নাই মামা, কেক খাওয়াইতে হবে।
অথবা ধুন্ধুমার পার্টি করে এসে গল্প দিতো
- আরে কইস না, সেইরকম পার্টি হইসে, আমরা কেক নিসিলাম ৩ পিস, আবার মিনহাজ ও কেক আনসে ৫ পিস। সয়লাব হইয়া গেল কেকে, উড়সি মামা, সেইরকম পিনিক হইসে। এখনো হ্যাংওভার যায় নাই। ঢেকুর দিলে কেকের গন্ধ পাবি।
টিভিতে খবর হত -
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাবের একটা দল দুরপাল্লার বাসে তল্লাসী করে সাড়ে তিন হাজার পিস কেক উদ্ধার করে। ৩ যুবক আটক।
অথবা, পেপারে ছবি আসতো। কেরানীগঞ্জের বড়পুলের কাছে মডার্ন বেকারীতে পুলিশের হানা, বেকারীর মালিক আটক। বহুদিন ধরে এই কারখানায় গোপনে পিস কেক বানানো হচ্ছিল। পুলিশের ধারনা ঢাকার ভেতরে বিভিন্ন স্থানে এই পিস কেক সরবরাহ ও বিক্রী করে আসছিল একটা চক্র। যাদের বানানো পিস কেক খেয়ে হাজার হাজার স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা নেশাসক্ত হয়ে পড়ছিল। পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন তাদের তল্লাসী জারী থাকবে। ঢাকায় একটাও কেক বানানোর কারখানা থাকা পর্যন্ত তারা থামবেন না।

... শালার কি দিন ছিল !!!
৩ টাকা দামের গোল্ডলীফ খেতে খেতে মামুলী কেক নিয়ে কি রমরমা একটা সোরগোল ভাইবা ফেলসিলাম তখন। ব্যাপারটা এতদিন মনের চিপায় পড়ে ছিল নিছক আড্ডার বিষয় হিসাবে। এত বছর পরে আইসা দেখি, সরকার আমাদের চেয়ে তিন কাঠি সরেস। আমরা কেক কে আর কতটুকু অপবাদ দিতে পারলাম, সরকার নাকি পর্ন নিয়া বিশাল সিরিয়াস।
আমাদের মত করে ভাবতে থাকেন, কেকের জায়গায় পর্ন বসান
দেখবেন এমন করে সব মিলে যাবে ...

কবি

আমায় ছুয়েছিল তোমার
দারুচিনি ভালোবাসা।
হাত বাড়িয়ে খুঁজেছি মৃদু সুবাস কিন্তু
বারবার ঘষা খেয়ে রক্তাক্ত হই
নীরস শুষ্ক ছালে
১০০ গ্রাম ৩৮ টাকা ...

- দুহাজার উত্তর আধুনিক বাংলা কবিতায় আপনি এমন বাস্তব রূপকের আরেকটা একজাম্পল দেখাতে পারবেন ? পাবেন কিছু, কিন্তু এমন শক্তিশালী না। আরে অন্যরা উপমা ধার করে কেটে কেটে এনে বসায়ে দেয়, আমি তো তাদের মত না। বুঝলেন ? আমি আপনার, মনে করেন রূঢ় বাস্তবতা থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রূপক টুকু তুলে খামচি দিয়ে এনে কবিতায় বসাই । আমার কবিতা সদ্য কাটা ধমনী থেকে গলগল করে বের হওয়া রক্তের মত, পবিত্র, আপোষহীন। নোংরা নর্দমার কালো কাদাপানির ভেতর থেকে ...

- খাইসেন দুপুরে ?

- না, সময় পেলেম কোথায় ? আপনার সাথে কাব্য আলোচনায় জড়িয়ে খিদে ভুলে যাচ্ছিলাম প্রায়। আপনি বলার পর সামান্য খিদে টের পাচ্ছি। আমার অবশ্য এইসব শারীরিক ছোটখাট কষ্ট সয়ে যেতে ভালোই লাগে, খিদের জ্বালাটুকু, তুমুল পেশাবের চাপ, তারপর মনে করেন দীর্ঘ মৈথুনবিহীন যৌবনের অন্তর্দহন ।

- খাবেন এখন ?

- আরে কি বলেন না বলেন? আমি মন ভাংতে জানিনা। প্রতিটা আত্মা নিসৃতঃ পবিত্র মায়ার একটা আলো আছে জানেন ? সবাই সেই আলো দেখতে পায় না। কবিরা পায় । সে আলোয় প্রকৃত কবিরা অন্ধ উই পোকার মত এগিয়ে যায়। মায়ার আহবান ফেরানোর শক্তি কবিদের নাই। আপনি এত মায়াসিক্ত আহবান করলেন  খাবারের জন্য, আমি ফেরাবো না।

- আচ্ছা দাঁড়ান খাবার দিতে বলি, কি খাবেন ?

- হা হা হা হা । আমাকে প্রশ্ন করবেন না সুজনেষু, আমি বাছবিচারের তূল্যমূল্যের বিভেদে আটকাতে চাইনা নিজেকে। তাহলে তো আর কবি হতে পারতাম না। ভালোবেসে নেমন্তন্ন করেছেন, আপনার আয়োজনের পুরোপুরি স্বার্থকতা নির্ভর করবে আমার গ্রহনে, বর্জনে নয়। দিতে বলেন যা যা আছে। সব খেয়ে নেব চেটেপুটে, তারপর রৌদ্র  খাব, সংস্কৃতি খাব, নগর - গ্রাম সব খাব। সব শেষে এক চুমুকে খেয়ে নেব কবিতাটুকু। তারপুর তুলবো তৃপ্তির ঢেকুর।

- এই মামা, আমাদের দুইটা সমুচা দাও, কাচামরিচ দিও সাথে

- শুধুই সমুচা ? আপনি রসিকতা করলেন মনে হোল। বেলা দ্বিপ্রহর। এমন বেলায় ভারী মধ্যভোজন ছাড়া কি জমে ? হতে পারে আপনি স্বল্পাহারী। তবে আমি এই বাংলারই লোক। বাংলার আলো হাওয়ায় আমার ভেতরে সৃষ্টি করে মেঠো কৃষকের মতন, হাপর টানা কামারের মতন দাউ দাউ খিদে। সে খিদের অনলে শান্তি জুড়ুতে পারে শুধু থালা ভরা পলান্ন, হাহাহা

- আসলে ভাই টাকা নাই আমার কাছে । ৩৬ টাকা আছে পকেটে, আবার বাসায় যাব তো ।

- ফইন্নির পোলা। মশকারী চোদাস ? তোর সমুচা আমি তোর হোগা দিয়া ভইরা দিমু মাদারীর পুত। ব্যাডা তোর পীছে আধ ঘন্টা টাইম দিসি । এতক্ষন হুদা কথা কইলেও মানুষে ভাত খাওয়ায় । ৮ ফর্মার কবিতার বই গিফট দিসি তোরে আর তুই আমারে এই বিকাল ৩ টার সময় সুমুচা সাধোস । ২০০ পীস রাইটার্স কপি বই কি আমি মাগনা মাগনা হোগার তলে দিয়া বইসা থাকুম ? কবিতা কি খালি পেডে পাদ মারলে বাইর হয় ?? তাড়াতাড়ি ভাতের অর্ডার দে,  তুই কি মনে করছস আমারে ?
টান দিয়া গলা ফাইড়া তোর কলিজার ভিত্তের তে কবিতা বাইর কইরা আগামী মেলায় ছাপাইয়া দিমু ...

ক্ষুদার্ত কবি খুব হিংস্র। কামড়ায়ে দিতে টিতে পারে, সময় খারাপ...

Tuesday, December 18, 2018

সাবধানে থাকিও বাঁদর, পর্দার আড়ালে

দুপুরবেলা চিড়িয়াখানার আর সব খাচায় আটক অধিবাসীরা যখন ক্ষুধায় কাহিল হইয়া ঝিমায় তখন একমাত্র বান্দরের খাচার সামনে ভীড় থাকে। এই এক জাত এরা পেট খালি থাকলেও বিনোদন দিয়া যায় সমানে। দর্শকরা বাদাম, কলা, চিপ্স খাইতে খাইতে এগো বান্দ্রামী দেইখা আমোদ পায়।
তো হইসে কি, এই রকম এক দুপুর বেলা খাচার পাশে বেদম ভীড় দেইখা বান্দরেরা মন দিয়া ডিউটি করতেছিল। আই মিন লাফ , ঝাপ ডিগবাজী দিয়া মানুষরে আমোদ দিতেছিল। গন্ডোগল লাগাইলো এক তরুন বান্দর। মানুষরে বেশী বিশ্বাস কইরা ঝুলতে ঝুলতে সে গিয়া খারাইলো খাচার পাশে। পাব্লিক আমোদ পাইয়া তারে কলা বিস্কুট সাধলো, সে কলা খাইলো। পাব্লিক খুশিতে শীষ মাইরা উঠলো। তা দেইখা বান্দরেও মজা পাইলো। আরো কাছে আগাইয়া খারাইলো। অঘটন ঘটলো তারপরে। এক দর্শক হাতের নাগালে পাইয়া তার নুন্টু ধইরা দিল এক রাম চিপ্পি। ব্যাথায় বান্দরের জান বাইর হইয়া যাইতে নিসিল। বিশাল এক চিক্কুর দিয়া দূরে গিয়া স্বজাতির দলের পাশে গিয়া ভয়ে কাঁপতে থাকলো বেচারা বান্দর। অবাক হইয়া দেখলো, এত মানুষ তার এই ব্যাথা পাওয়া চিক্কুরে যেন আরো বেশী মজা পাইলো। নতুন কইরা ভীড় জমতে শুরু হইল। খাচার আরেকদিকে আরেক বয়স্ক পুরুষ বান্দরের অন্ডকোষ চিপ দিয়া ধইরা আরেক দর্শক মোবাইলে সেলফি উঠাইতে লাগলো।
দিশাহারা বান্দর এদিক ওদিক তাকাইয়া ঘটনা বুঝতে পারলোনা। কী হইতাসে এসব। ডাক দিয়া সব বান্দররে কাছে আইতে কইল। তারপর কঠিন গলায় কইল
"এইটা হইতে পারে না, আমরা দর্শকগোরে বিশ্বাস কইরা কত কসরত দেখাই। তাগোরে মজা দেওনের লাইগা কত কি করি। তারা আমাগো গোপোনাঙ্গে ব্যাথা দিতাসে ক্যারে ? তাগো তো এই অধিকার নাই"
দূরে বইসা বাচ্চার উকুন বাচতেসিলো এক আধা বুড়ি বান্দরনী। সে উইঠা আইসা খুব গম্ভীর গলায় কইলো-
"দোষ তো তোমাগো মিয়া। বুরখা পরনা ক্যান ? বুরখা পরলে তো আর এই আকাম ডা হইত না। রেগুলার বুরখা পরবা, আর হাতের নাগালে যাইবা না তাইলেই এই আকাম আর হইব না।"
তরুন বান্দর বুঝতে পারলো না বুরখার লগে এই নষ্টামীর যোগাযোগ কই। তার চেহারা দেইখাই বুড়ি বান্দর বুঝলো যে পোলা কনভিন্সড হয় নাই। তখন বুড়ি বান্দর কইল -
" যাগো লগে আকাম ঘইটা যায়, শাস্ত্রে তাগো পর্দা করার বিধান ছাড়া অইন্য তরিকা নাই, বুঝলা ???"
তারপর, বুড়ি বান্দর গুন গুন কইরা গান গাইতে গাইতে নিজের উকুন বাছার কামে ফেরত গেল -
সাবধানে থাকিও বাঁদর, পর্দার আড়ালে এ এ এ এ এ এ
কিতাবে হারাম বলে , অইন্যে দেখিলে ...

একজন এক্সপার্ট

মানুষ চাইলে কি না পারে ?
মানুষ চেষ্টা করলে যে কোনো বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারে। সেটা নিজের লিমিটের বাইরে হলেও পারে। মানুষ পাখীর চেয়ে ভাল উড়তে পারে, বানরের চেয়ে ভাল করে ঝুলতে পারে, চিতার চেয়ে জোরে ছুটতে পারে, ডলফিনের চেয়ে দ্রুত সাঁতরাতে পারে। মাথা হল ব্যাপার। মাথা খাটায়ে মানুষ এক্সপার্ট হতে পারেনা এমন কিছু নাই।
জহির একজন এক্সপার্ট।
মাথা খাটায়ে জহির এক্সপার্ট হইসে।
তার স্পেশালিটি হচ্ছে সে বিনা দাওয়াতে বিয়ে খাবার এক্সপার্ট।
শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলায় শীতকালে লেগে থাকা বিয়ের ধুমে ঠিক কখন গেলে খাবার পাওয়া যাবে, কোন টেবিলে, কোন ব্যাচে বসলে ভাল খাবারটা পাতে আসবে, কিভাবে খেতে হবে, ইত্যাদি ব্যাপারে জহির একজন এক্সপার্ট।

আজকেও জহির নীল ফুলহাতা শার্ট এর উপর সাদা আর মেরুন স্ট্রাইপের হাফ সোয়েটার চাপায়ে হালকা মেজাজে ঢুকে পড়ে আপ্যায়ন কমিউনিটি সেন্টারে। রাত নয়টার দিকে কমিউনিটি সেন্টারের পার্কিং ভরে আছে। জহির চোখ বুলায়ে একটা সিলভার কালার এলিয়নের পাশে গিয়ে নীচু হয়। তারপর সোয়েটারের ভেতর থেকে চ্যাপ্টা একটা র‍্যাপিং মোড়ানো প্যাকেট বের করে হাতে নেয়। বেগুনী রিবন প্যাচানো প্যাকেটটা দেখে মনে হতে পারে ছোট কিন্তু ভাল কোন গিফট রয়েছে এতে। প্যাকেট হাতে নিয়ে জহির মাথা তুলে কমিউনিটি সেন্টারের সিকিউরিটি গার্ডকে ডাক দেয়। উচা করা হাতে ধরা গিফট এর প্যাকেট। সিকিউরিটি গার্ড কাছে এসে সালাম দেয়। জহির খুব কেতাদুরস্ত ভঙ্গীতে বলে
- আমার ড্রাইভার টাকে দেখেছেন ?
- না স্যার।
- ওহ হো, ফোনটাও ধরে না কেন বেকুব টা
- স্যার, মনে হয় টয়লেটে গেসে
- হু হতে পারে। আচ্ছা পরে খুঁজে দেখবো। আসলে বইলেন আমি খুঁজতেসি, ওকে ?
- জ্বে স্যার, বলবো।
বাম হাত পকেটে ভরে জহির হাটা দেয় কমিউনিটি সেন্টারের এন্ট্রি গেটের দিকে। এন্ট্রি গেটের কাছেই কিছু তরুন স্যুট পরে দাঁড়ায়ে আছে। বর বা কনের কাজিন গোষ্টি এরা, পরিচিত গেস্ট দের এটেন্ড করার দায়িত্ব এদের। বাচ্চা কাচ্চা পোলাপান নিজেরা নিজেদের গল্প নিয়ে ব্যস্ত। এদের কাছাকাছি গিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে তাকায়ে জহির মুখ খুশি খুশি করে উচা গলায় বলে
- বড় আপা আসছে নাকি ?
  আমি আগে চলে আসলাম ?

স্যুট পরা, কায়দা করে চুল ছাটা কাজিনদের দলটা জহিরকে না চিনলেও খেয়াল করে না। জহির গেট পার হয়ে ঢুকে পড়ে। সেকেন্ড লেয়ারে থাকার কথা বর/কনের মামা, খালু, ফুপা পর্যায়ের মুরুব্বীরা। এরা সবাইকে চেনে। অন্তত না চিনলেও চেনার চেষ্টা করে যায় পুরাদমে। এদের নজর ফাঁকি দেয়া একটু চ্যালেঞ্জিং। তবে জহিরের জন্য সেটা কোন সমস্যাই না। জহির এই লাইনে পাকা খেলোয়াড়। সোজা হেটে গরদের পাঞ্জাবী পরা, কাশ্মীরি শাল কাঁধে ফেলা তালেবর টাইপ মুরুব্বীর কাছে গিয়ে জহির মিষ্টি হেসে বলে
- খালু, গিফট কাউন্টারটা কোন দিকে ?
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকে জহিরকে পরখ করে দেখে, চেনার চেষ্টা করতে থাকে। ততক্ষনে জহির পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ঠেকিয়ে কথা বলে যাচ্ছে 
- আরে কত্ত পীছে পড়লা তোমরা, আমি সিএঞ্জি নিয়েই তো আগে চলে আসলাম, আসো আসো, এখানে আমাকে তো চিনবে না। অকোয়ার্ড লাগে না ব্যাপারটা ?
ততক্ষনে কাশ্মীরীশাল ভদ্রলোকের ভ্রু সমান হয়ে গেছে, কান থেকে ফোন নামানো জহিরকে তিনি ডান হাত উচা করে কাউন্টার দেখায়ে দিয়ে নিজে সামনের লোকদের সাথে কথায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েন। জহির ডানে মোড় নেয় ঠিকই। কাউন্টার পর্যন্ত আগায় না, তার আগেই দেয়াল মুখো হয়ে গিফটের প্যাকেটটা শ্রেফ সোয়েটারের ভেতরে ভরে ফেলে। তারপর উল্টা ঘুরে এসে কমিউনিটি সেন্টারের মূল হলে ঢুকে এলোমেলো পায়চারী করতে থাকে। আড়চোখে যখনই মনে হয় কেউ তার দিকে ৫ সেকেন্ডের বেশি তাকায়ে আছে, সে মৃদু পায়ে স্টেজের দিকে হাসি হাসি মুখ করে আগাতে থাকে পকেট থেকে ফোন বের করে। ফোনের ক্যামেরা অন করে স্টেজ বরাবর তাক করে এদিকে ওদিকে বেশ কয়েক মিনিট কাটায়ে দেয়। ফার্স্ট ব্যাচ খেয়ে উঠবে কিছুক্ষনের মধ্যেই। ফিরনীর বাটি ভরা ট্রে নিয়ে বেয়ারারা ছুটে আসছে ব্যাক কিচেন থেকে। জহির ফোন টিপে, কানে ফোন ঠেকিয়ে মাথা নীচু করে পায়চারী করতে করতে কথা বলার নিপুন অভিনয় করে। কিচেন থেকে ছুটে আসা হ্যাংলা পাতলা এক বেয়ারার বুকে নেমপ্লেটে নাম লেখা কিসমত। পাশ দিয়ে যাবার সময় আগেই দেখে রাখা। হাতে করে নতুন টেবিল ক্লথ নিয়ে কিসমত নামের বেয়ারা ছুটে যাবার সময় জহির এক গাল হাসি নিয়ে বলে
- কিসমত ভাই এর টেবিল কোনটা ? আইজকা কিন্তু ভাল খাওয়াইতে হইবে 
কমিউনিটি সেন্টারের এই বেয়ারাদের সাথে সবার দেখা হয় মাত্র একটা দিন। কেউ এদের মনে রাখে না। কেউ এদের নাম জানে না । নিজের নাম শুনতে না পারার একটা গোপন স্পৃহা এদের মনে থেকে যায়। যাদের এরা এত এত কষ্ট করে খাবার এনে খাওয়ায়, তাদের কাছে এরা জাস্ট সিস্টেমের একটা অংশ। কেউ নাম ধরে এদের ডেকে কথা বলে না। কিসমত, জহিরের মুখে নিজের নাম শুনে ঝপ করে দাঁড়ায়ে যায়। জহিরের হাসি হাসি মুখ দেখে কিসমত বুঝতে পারে না লোকটা তাকে কিভাবে চেনে। না চিনলে নাই, সুন্দর করে নাম ডেকে কথা বলসে, এইটাই অনেক। সে লাজুক হেসে বলে
- মাইজের সারির দুই নাম্বার টেবিল ।
- আইচ্ছা বইতেসি, ডাবল খাওয়াইবেন কিন্তু আইজকা।
- আইচ্চা ব্যাপারনা বহেন আগে।
সিস্টম করা শেষ। জহির বিভিন্ন টেবিলের আশে পাশে পায়চারী করে বোন প্লেট দেখে।  লোকজনের এটো তুলে রাখার পরিমান দেখে একটা আন্দাজ পাওয়া যায় খাবার কেমন হইসে। বিয়ের মেনু সব জায়গায় মোটামুটি এক রকম হলেও, রান্নায় বিশাল হেরফের এর ব্যাপার আছে। সব বিয়ের খাবার ভাল হয় না। সানাই নামের এক কমিউনিটি সেন্টারে রোস্টের মুরগী ছিল মরা, দুনিয়ার বাসি। রোস্টে কামড় দিয়ে বমি চলে আসার মত অবস্থা। বহুত কিচ্ছা কাহিনী করে সেই বিয়েতে শেষমেষ খাসীর রেজালা দিয়ে ৩ প্লেট পোলাও খেয়ে কনের বাবাকে শর্মিন্দা করে আসে জহির। আরেক বিয়ের জালী কাবাব কেউই এক কামড়ের বেশি খেতে পারে নাই। মাঝে মাঝে কিছু বিয়ের রেজালার মাংসে চর্বি থাকে বেশি। দেখা যায় বোনপ্লেটে চাক চাক আধখাওয়া ঝাল মাংসের টুকরা পড়ে আছে। 
কিসমতের টেবিলে এঁটো তোলা হচ্ছে। জহির টাইমিং মিলায়ে ঠিক যেই কোনায় বেয়ারা ঢুকে খাবারের ডিস সার্ভ করবে সেখানের একটা চেয়ারের ব্যাকরেস্টে এক হাত ভর দিয়ে পা কেচি মেরে দাড়ায়ে ফোন টেপাটেপি শুরু করে। টেবিলে নতুন কাপড় পড়ে, গ্লাস, প্লেট, বোনপ্লেট পড়ছে, জহির বসে পড়ে। সেকেন্ড ব্যাচে খাবার জন্য অন্যরাও বসতে শুরু করছে। জহিরের টেবিলে ৪ সদস্যের একটা পরিবার আর একটা কাপল বসে পড়ে। সেকেন্ড ব্যাচের সুবিধা হচ্ছে আয়োজক পরিবারের লোকজন প্রথম ব্যাচকে এন্টারটেইন করে একটু জিরায়। আবার শেষের দিকের ব্যাচে গুরুত্বপূর্ণ গেস্টরা খেতে বসবে তখন উঠে টেবিলে টেবিলে পায়চারী করবে। জহির সতর্ক চোখে মেপে ফেলে, তার টেবিলে এমন কোন হোমড়া চোমড়া কেউ বসে নাই। দেখে মনে হচ্ছে এরা নিতান্তই মামুলী আত্মীয়। যাদের খাওয়া কেমন হচ্ছে এটা নজরদারী এমন কোনো গুরুত্ব দেয়ার কিছু নাই। বোরহানীর জগ আসতেই জহির জগ ধরে প্রথমেই নিজের ডান পাশের লোকটার একটা গ্লাসে বোরহানী ঢেলে দেয়। লোকটা মুচকি হেসে ভদ্রতা দেখায়। জহির বাম পাশের বয়স্ক লোকটার গ্লাসেও বোরহানী ঢালে সেই লোকের এতে তেমন চ্যাতভ্যাত হয় না। এরপর জহির নিজের গ্লাসে বোরহানী নিয়ে জগটা নিজের সামনে রাখে। কায়দা করে আধা জগ বোরহানীর দখল নিয়ে ফেলার পর জহিরের ভাল্লাগে। খেলাটা ভাল ভাবেই শুরু হইসে আজকে। সালাদ আসে, এবার জহির আর ভদ্রতার ধারে কাছে যায় না। বাটি কাছে টেনে ভাল ভাল তিন টুকরা লেবু, কয়েক পিস শশা, পেয়াজ, সালাদ আর দুইটা কাচামরিচ নিয়ে বাটি উল্টাদিকে ঠেলে দিয়ে বলে "নেন"।
রাইসের ডিস আসার পর জহির হাতই বাড়ায় না। কাচ্চি হলে ভিন্ন কথা। প্লেইন পোলাও এমনেই রয়ে সয়ে নেয়া বেটার। আর জহিরের ধান্ধা পোলাও ঠাসানো না। যদি সিস্টেম কাজে দেয় আজকে, কিসমত তার প্লেটে কি দেয় দেখা যাক। রোস্টের ডিস নিয়ে কিসমত আসে, জহির তাকে আগেই বলে
- ওইদিক থেকে দিয়া আসেন
কিসমত মুচকি হেসে উল্টাপাশ থেকে রোস্ট দেয়া শুরু করে, টেবিলের বাকিদের ধারনা হয় জহির বুঝি বিয়ে বাড়ির পক্ষের কেউ। সবাইকে দিয়ে জহিরের কাছে এসে কিসমত তাকে একটা রানের মাংশ তুলে দেয়। জহির এক চামচ পোলাও তুলে নিয়েছিল। রোস্টের উপর লেবু চিপে এক টুকরা গাজর সহ রোস্ট করা রানের টুকরাটা ছিড়ে গিলে ফেলতে জহিরের সময় লাগে দেড় মিনিট। এর মধ্যে সে এক লোকমা পোলাও ও মুখে দেয় না। তারপর কিসমতের দিকে তাকায়ে সবাইকে শুনায়ে বলে
- বুকের পিস দাও দেখি কেমন হইসে
কিসমত চলে যায়, ফিরে আসে পিরিচে করে ২ পিস ঢাসা ঢাসা বুকের রোস্ট পিস নিয়ে। সামনে পিরিচ রেখে আরাম করে আধামুঠ পোলাও দিয়ে সেই দুই পিস মাংস খেয়ে হাড় না চাবায়ে তুলে ফেলে জহির। বোরহানীতে চুমক চলছেই ফাঁকে ফাঁকে। আসে ঝাল মাংস। কিসমত ততক্ষনে লাইনে এসে গেছে। হাজার মানুষের খাবার নাড়াচাড়া করছে সে। নিজের মর্জিতে কাকে বেশি খাওয়াবে সেটা সে নিজে ঠিক করতেই পারে। তাই একটা রেজালার বাটি পড়ে জহিরের ডান পাশের লোকটার সামনে। জহির বাটি ধরে ডান পাশের লোককে বলে
- মাংস দেই একটু ?
লোকটা বলে
- আপনি নেন, আমি নিব পরে।
জহির স্বর্গীয় হাসি দিয়ে মনে মনে বলে
"পাইলেই না নিবা মদন, দেখ, থাকে নাকি কিছু !!!"
সতর্ক ভাবে চামচ কাত করে ঝোল-তেল এড়ায়ে ৩ টুকরা বড় বড় মাংসের পিস নেয়। সিনার মাংস নেয় না। ছাগলের সিনায় কিছু নাই। আছে খালি ফ্যাপসা। নিতে হয় পীঠের পীস, তাতে মাংস ও থাকে হাড্ডী চাবায়েও মজা। আর খেতে হয় পায়ের মাংস। তাও উপরের রান আর নলি মিলায়ে। মাংসের গায়ে গায়ে লাগায়ে অল্প পোলাও সহ দলা দলা মাংস চাবায়ে পেটে ভরে ফেলে জহির। তারপর আবার বাটি রিফিল হলে আরো ৩ পিস সাঁটায়। এরপর আসে জর্দা। কমলা জর্দার উপর কোয়েলের ডিম সাইজের মিষ্টি সহ। জহির এক বাটির তিনভাগের একভাগ একাই মেরে দেয় ৫ টা মিষ্টি সহ। তারপর জগের শেষ বোরহানীটুকু গ্লাসে ঢেলে গিলে ফেলে ঢেকুর তুলতে তুলতে চেয়ার ছেড়ে উঠে, হাতে ফিরনীর বাটি নিয়ে।

কমিউনিটি সেন্টার থেকে বের হবার আগে জহির স্টেজের সামনে গিয়ে একটা সেলফি তুলে তারপর কিসমতকে আন্তরিক ভাবে পীঠে চাপড় মেরে, আরো দুইটা খাতিরের কথা শুনায়। আসার পথে গেটের মুরুব্বীদেরকে সালাম দেয়। কাউন্টার থেকে একখিলি পান খায় তারপর গুন গুন করে গান ভাজতে ভাজতে বের হয়ে আসে এই বছরের ২১ নাম্বার হাকুইল্লা বিয়ে খেয়ে।

এই শহরে এক প্লেট মোরগ পোলাও খেতে লাগে মিনিমাম ৮০ টাকা। সিস্টেম বুঝে জহির এক্সপার্ট হয়েছে পুরা শীতকাল মাগনা বিরিয়ানী খাবার ব্যবস্থাতে। একটা র‍্যাপিং করা গিফট বক্স, এক সেট ভাল কাপড় আর মাথায় বুদ্ধি দিয়ে জহির জয় করে ফেলসে এই শহর জুড়ে ছড়ানো সব কমিউনিটি সেন্টার। সারা শীতকাল জুড়ে যেখানে লেগে আছে বিয়ে আর সুবাস বের হচ্ছে ভাল খাবারের।
চাইলে মানুষ কি না পারে, জহির তো একাই বিনা দাওয়াতে খেয়ে ফেলসে ৫০০ বিয়ের খাবার।

Monday, December 17, 2018

ডিজিটাল হেদায়েত

সাড়ে ১৪০০ বছর আগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাহিসালাম দুনিয়া ছেড়ে যাবার পর মুস্লিম উম্মাহর কাছে ২ টা আমানত দিয়ে গিয়েছিলেন। একটা হল দ্বীন ইসলাম কায়েম করা দুই নাম্বার হল হেদায়েত করা। দুইটার একটাও সোজা কাজ না। দায়িত্ব বড় কঠিন।
প্রথম কাজটা তুলনামূলক ভাবে সোজা ছিল খেলাফতের যুগে। কিন্তু দ্বিতীয় কাজটা করা আসলেই টাফ। নিজেকে মুমিন বানানোর ক্ষেত্রে আল্লাহ বিচারক। ভুল ত্রুটি তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ আছে। শুধরানোর রাস্তা আছে। কিন্তু হেদায়েত করতে হয় অন্য মানুষকে। সেক্ষেত্রে নিজেকে আগে গ্রহনযোগ্য একটা অবস্থানে তুলতে না পারলে হেদায়েতের পুরা প্রচেষ্টাই মাঠে মারা যায়। তাই যথেষ্ট জ্ঞান, যুক্তি, উন্নত চারিত্রিক বৈশিষ্ঠ অর্জন করতে না পারলে হেদায়েতের চেষ্টা করা উচিত না। কারন মানুষ হেদায়েতকারীকে দিয়ে হেদায়েতের জ্ঞানকে বিচার করে। ভুল হেদায়েত মানুষকে বরং ধর্ম থেকে দূরে ঠেলে দেয়।
এত কথা বলার কারন, আমাদের দেশে ইদানিং হঠাত করে ইসলাম কায়েম করা আর হেদায়েত করার জন্য উঠেপড়ে লাগা মানুষজনের লম্বা লাইন লেগে গেছে। কে যে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ঝাপ দিয়ে পড়ে ইসলামের পতাকা উচা করে নাড়াতে থাকে সেটাও বোঝার উপায় কম। ইসলাম নিয়ে কেউ রাজনীতির মাঠে শক্তি বাড়ায়, কেউ ইসলাম কে পুজি করে পকেট ভরায়। কেউ বা শুধুই নিজের পেশী প্রভাবকে শক্তিশালী করার জন্য ইসলামের মলম মাখে। এই রকম আরো নানান তালের ধান্দা আছে।
সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিশ হচ্ছে ইহুদী জুকারবার্গ এর ফেসবুক হাতে পেয়ে যার কোন ধান্দায় ইসলাম বেচার বুদ্ধি নাই, সে নেমে পড়েছে হেদায়েতে। হাতে একটা মোবাইল বা একটা কম্পিউটার পাইলেই হইল।
আমি আমার যতসামান্য জ্ঞানবিচারে এই হেদায়েতকারী গোষ্টিকে বোঝার চেষ্টা করে কিছু জিনিস পেলাম।

১। যারা কোন না কোন ইসলামী দলের সমর্থক, এরা ফেসবুকে সেলফি, চেক ইন, পেতি স্ট্যাটাস, লাভ , লাস্ট আর গ্লোবাল এন্টারটেইনমেন্টের দুনিয়া ফেসবুকে, টুপি মাথায় দিয়ে ঝাপ দেয় হেদায়েত করতে। এরা এটাকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে।এরা সংঘবদ্ধ। এদের কন্টেন্ট মনো ডিরেকশনাল। আল্লাহ আর ইসলামের গুন গান করা। এদের কমন ডায়লগ - ভালো লাগ্লে লাইক দিন, শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। এরা বাংলা বানানই ভুল করে ৭০% সময়। ইংলিশ পারেনা। এরা দেশ টেশ বুঝেনা। ইসলামের আইনের বাইরে বাকি সব কিছু কে এরা নাজায়েজ লেভেল দিয়ে দেয় এক কথায়।

২। এজেন্ডাধারী ইসলামীমুখোশধারী দলের কর্মী। এরা মূলত প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, আল্লাহর কুদরত এর নমুনা খোজে গাছ, মাছ, পশু পাখী আকাশ বাতাস সব খানে। এতে ফলোয়ার বাড়ে। তারপর সেই সমর্থন যোগাড় করে সবাধীনতাবিরোধী নেতার মুক্তির জন্য কাজ করার চেষ্টা করে। ভারত - আমেরিকা বিরোধী পোস্ট মারে সমানে। সেলিব্রেটিদের ইসলাম গ্রহন করার ফেইক পোস্ট মারে। আওয়ামীলিগ কে গালি মারে। শেখ হাসিনার উপর এরা চরম বিলা। এরা বলে এই পোস্টে ১০০০ লাইক চাই, যদি মুমিন হন দ্রুত শেয়ার করুন ইত্যাদি। এদের ও বাংলা বানানের জঘন্য অবস্থা। তবে এদের ফলোয়ারদের কেউ অনেক লম্বা পোস্টে ভুল ব্যাকরণে বাংলা আর খুব প্রাইমারী লেভেলের ইংলিশে লজিকাল ডিবেট করার চেষ্টা করে, যেটা অনেক টা গো-মুর্খামীর উত্তম নমুনা। এদের মুল আক্রমনের লক্ষ্য হল বাংলাদেশী জাতিয়তা । এরা নিজেদেরকে বাংলাদেশী দাবী করে কিন্তু দেশটাকে আফগানিস্থান বানানোর ইচ্ছাও গোপন করে না।

৩। শিক্ষিত ছাগু সমাজ। এরা ধার্মিক। ফেসবুকে সব কিছুকেই ইস্লামের ফিল্টার দিয়ে ধুয়ে দেখতে চায়। জোর করে তর্ক লাগাতে চায়। এরা মনে করে এদের যুক্তি দিয়ে এরা কমন মানুষের বিহেবিয়ার শিফট করতে সক্ষম। এরা দাবী করে আমিও আগে ভুল পথে ছিলাম। আপনার মতন আমারো অনেক যুক্তি ছিল। আল্লাহ আমাকে হেদায়েত করেছেন তাই এখন আমি আল্লাহর পথে হাটছি...ইত্যাদি।ভিন্নমতের প্রতি আক্রমন এদের কাছে ইবাদত। এদের হেদায়েতে ইসলামে কারোরই সবাধীনতা নাই, না ছেলেদের, না মেয়েদের। এরা পৃথীবির বিভিন্নদেশের নিপীড়িত মুসলমানের জন্য খুব উদ্বিগ্ন থাকে সবসময়।এরা টেক স্যাভি। লেখায় ভুল কম। এরা ভয়ংকর বিলা নাস্তিকদের উপর। কতলের ফতোয়া খুব ভালবাসে। এদের কিন্তু বান্ধবী আছে, ভালোযায়গায় খাবার সময় এরা সেলফি দেয়। এদের সোশাল লাইফে এরা অনেকটাই নমনীয়। কিন্তু ফেসবুকে এক একজন খলিফা।

৪। আইডেন্টিটি সিকার- এরা মূলত অর্ধ শিক্ষিত, এরা দুই নৌকায় পা রাখা মুমিন, চটি পেইজ, হট মডেলের পেইজ, হর্নি পেইজেও আছে আবার বোরখা পরে মুনাজাতে বসা ২ বছরের বাচ্চা মেয়ের ছবিতে এই সোনামনির ছবিতে কয়টি লাইক ? এই জাতীয় জিনিস পোস্ট করে, নিজের আজগুবি সাহিত্য প্রতিভা দিয়ে এরা আল্লাহর শোকরানা আদায়, মায়ের হক, বোরখার ফজিলত ইত্যাদি নিয়ে লো রেজুলেশান পোস্ট বানায় আর শেয়ার মারে। এরা মেয়েদের সংগ পাবার জন্য উম্মুখ থাকে কিন্তু এ্যাপ্রোচ করতে পারে না। এদেরও যথারীতি বাংলায় আঞ্চলিকতা প্রচন্ড রকম বেশি। কথায় যুক্তি নাই। এদের একটা বড় অংশ প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক। জীবন নিয়ে এদের ফ্রাস্ট্রেশান থেকেই এরা ধর্মকেই আশ্রয় হিসাবে বেছে নিয়েছে। আর একটা অংশ হচ্ছে দেশী নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা বেকার তরুন। এরা ফেসবুকে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়, ধর্ম্প্রচার দিয়ে শুরু করে প্রেম করে শেষ করতে চায়, এদের আশা এই ধর্ম্প্রচারের ফাকেই তারা একজন মুমিন বান্ধবী খুজে পাবে। মাঝে মাঝেই হিজাব পরা কিশোরী কাজিনের সঙ্গে ছবি তুলে ফটোশপে গোলাপফুল লাগিয়ে পোস্ট দেয় - মনের মত মানুষটাকে যে কবে খুজে পাবো ...ইত্যাদি।

৫। আমার সোজা ভাষায় জোগালী। এক কথায় অশিক্ষিত। স্কুল কলেজে গিয়ে থাকতে পারে কিন্তু এদের নিরেট শীশাভরা মাথায় বিদ্যা নাই। এদের সর্বোচ্চ বিদ্যা কয়েকটা সুরা মুখস্ত আছে, নামাজ পড়তে পারে, আর কয়েকটা ওয়াজ শুনে মুগ্ধ হইসিলো, প্রতি সপ্তাহে জুমা'র নামাজে শোনা খুতবা। এই নিয়ে এরা ফেসবুকে ঝাপ দিয়ে পরেছে। এদের মুল কর্ম হল মেয়েদের ছবিতে কমেন্ট করা, বোরখার হেদায়েত করা, নত হওয়ার হেদায়েত করা, নারী যে মাংশের দলা এইটা মুখে লালা নিয়ে বলা। কিন্তু কোন লজিক জানেনা। প্রতিবাদ করলেই মেয়েদেরকে মাগী বলে গালি দিয়ে ফেলে। আবার অন্য মেয়ের পেইজে এ্যাড মি এ্যাড মি করতে থাকে। হেজাব পরা ছবি দেখলে মাশাল্লাহ বলে, অন্য পোশাক পরা দেখলে নাইচ, পাইন ইত্যাদি প্রশংসা করে তারপর নামে হেজাবের হেদায়েত করতে। এরা সবাই একটা যুক্তি জানে, সেটা হল কলা যুক্তি। ছিলা কলা কেউ খায় না, ছিল্কাসহ কলার কদর বেশি। এরা লজিকাল ডিবেটে কাউকে পরাস্ত করতে না পারলে "নাস্তিক বলগার" বলে গালি দিয়ে সরে যায়। এদের লেখা পড়লে যদিও হাসি পায়, দুর্বোধ্য অসীম ভুলে ভরা, অনেকে বাংলা টাইপও করতে পারেনা। এরাই মুরাদ টাক্লা ভাষার জনক।
আশচর্য জনক ভাবে সত্য হল এই নানান লেভেলের হেদায়েত কারীদের দখলে ফেসবুকের ৪০% চলে গেছে প্রায়, আরো যাবে । একসময় এই রেশিউ চলে যাবে ৭০-৩০ তে। অশিক্ষাকে উদার চোখে দেখতে দেখতে আমরা এই পর্যায়ে এসে গেছি। যার যেই বিষয়ে কথা বলার মত তিল মাত্র জ্ঞান নাই, সেও এই দেশে পন্ডিতি ঝাড়ে। এটাতে আমরা দোষ ধরিনা। তাই এখন বিভিন্ন ইশুতে যার কেউ নাই তাঁর আল্লাহ আছে টাইপ জনতার বিশাল মিছিল দিন দিন বাড়ছেই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা - রাজাকার, পাকি দালাল
হেফাজতে ইসলাম - মুক্তচিন্তা ( আরো উপরের লেভেলে গেলে নাস্তিকতা)
বাংগালী সংস্কৃতি - ধর্মীয় সংস্কৃতি
লিংগসমতা- নারী নিয়ন্ত্রণ ( হিজাব, একা চলাফেরা না করা, এমন কি সাইকেল, বাইক না চালানোও আছে)
ইত্যাদী নানা ইশুতে এখন বাংগালী জাতী যুক্তি খোজার বদলে হেদায়েতে নেমে পড়ে। ইসলামের নাম ব্যাবহার করার আগে এরা চিন্তাও করে না। ইসলাম বহন করার মতন জোর এর কাঁধে এখনো তৈরী হয় নাই। তাতে কি ? সো্যাব তো পাওয়া যাবে...
ক্লিভেজ দেখানো মেয়ের ছবিতে উকি মেরে এসে যেই গুনাহ হল, টিএসসিতে নির্যাতিত মেয়েদেরকে বোরকা পরার হেদায়েত করলে যেই সোহাব হবে তাতে কাটাকুটি হয়ে যাবে না ? যক্তি ফুক্তি খুজে লাভ কী ? বাংগালী এখন হেদায়েত আর গুনাহর কাটাকুটি খেলা শিখসে, ফেসবুকে খেলছে, রিয়েল লাইফে খেলছে। এক সময় এই খেলা বাড়তেই থাকবে। জাতি বিদাত আর হেদায়েতের দোলাচালে গবেট নাগরিক এর বিশাল পাল নিয়ে উলটা পথে যেতে থাকবে। কিন্তু সেই উলটো যাত্রাকে জায়েজ করা হবে ডিজিটাল উন্নতি নাম দিয়ে।
১৪০০ বছর আগে যেই ইহুদী জাতির হাত থেকে ধর্মকে সুরক্ষা দেবার জন্য হেদায়েত শু্রু।
১৪০০ বছর পর ইসলামের হেদায়েত করার এই অপার সুগোগ করে দেবার জন্য ইহুদী মার্ক জুকারবার্গ কি বেহেস্তে বসে আপেল খাবার সুযোগ পাবার কথা না ?? কি মনে হয় ?

Saturday, December 15, 2018

এক মহান চীনা জাতির বন্দনা

মানব সভ্যতায় চৈনিক জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
আমাদের মহানবী তো ১৪০০ বছর আগে বলেই গিয়েছিলেন
জ্ঞানের অন্বেষণে সুদুর চীন যাও।

চাকা, ঘড়ি, চা, কাগজ এইরকম ছোটখাটো আবিষ্কার চীনারা বহু করেছে। সভ্যতা এগিয়ে রাখার আবিষ্কারে চীনারা ছাড়াও আরো নানা জাতি টুকটাক অবদান রেখেছে। তবে সভ্যতা টিকিয়ে রাখার আবিষ্কার নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে খুব কম জাতি।

সভ্যতা টিকিয়ে রাখার জন্য মহান চীনা জাতি যেই যন্ত্র আবিষ্কার করেছে, তারকাছে মাঝে মাঝে পেনিসিলিন, যক্ষার টিকা কেও ক্ষুদ্র মনে হয়। বিশ্বাস হয় না ?

ইলেক্ট্রিক চার্জড মশা মারার ব্যাট !!!!
৩য় বিশ্বের ক্ষুধা, দারিদ্রের দেশগুলার প্রায় সবগুলায় এক কমন আজাব এই মশা ।
ইউরোপ আমেরিকায় মশা নাই, তাই তারা মশার বিপক্ষে মানব সমাজের লড়াইয়ে অস্ত্র আবিষ্কারে তত বেশি মন দেয় নাই। মহান চীনা জাতি এই এক অস্ত্র আবিষ্কার করে আমাদের মত গরিব দেশের কোটী কোটি মানুষের বুকে সাহস এনে দিয়েছে। সভ্যতাকে সামনে ঠেলতে অনেকেই পারে। কিন্তু কঠিন কাজ হইল মানুষের লাইফ ইজি করা। এই এক কাজে চীনা জাতি ছাড়া মানব সমাজের পাশে আর কেউ নাই।
মাত্র ২৫০ টাকার এক ব্যাট একজন মানুষের মনে যেই শান্তি সাহস দিতে পারে, মশার বিরুদ্ধে সশব্দ বিজয় এনে দিতে পারে, পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানে এমন নজীর কই ? এক একটা মশা ফুটুস করে ফুটে, মানব মেধার বিজয় ঘোষনা করে। এরোসল, কয়েল, মশারী এরা সবই ছিল মশার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। চীনা ব্যাট হাতে আসার পর, ঘটনা ঘুরে গেছে। আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ।

হে মহান চীনা জাতি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসা গ্রহন কর। তোমরা এই ব্যাট না বানালে আজ বাঙ্গালী জাতি তথা ২৫০০ বছরের পুরোনো ভারতীয় সভ্যতার অস্তিত্ব সংকটে পড়ত। আশরাফুল মাখলুকাত এর হাতে মশা মাখলুকাতের উচিত শিক্ষা দেবার জ্ঞান আবিষ্কারের মত মহান কাজ আর কে করিবে ??

শুধু এই এক ব্যাট বানানোর কারনে, দুনিয়ার তামাম ইলেক্ট্রনিক্সের চিপ ক্লোন কপি করার তুচ্ছতা ভুলে গেলাম। আরো বড় হও চীনা জাতি। আমার বিশ্বাস একদিন তোমরাই পারবা মাত্র ৪০০ টাকায় অমর হবার ঔষধ বানাতে। কিংবা ১২০০ টাকায় জোড়া মানুষ ক্লোন বিক্রি করতে। না জানি আরো কত কী ! পারলে তোমরাই পারবা, আর কেউ পারবে না...

ঘুম ভাঙ্গে না।

শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ !!!
ধুড়ুম...উম...ম...ম...ম !!
কামানের শব্দটা দুর থেকে আসে, আসার পথে দালানে দালানে বাড়ি খেয়ে পীছে করে প্রতিধ্বনী নিয়ে আসে কানে। ফাঁপা, ভোঁতা এই শব্দটার ভেতর শত শত বছরের আতংক মেশানো আছে। জয়ের, গৌরবের, শক্তির বা সাহসেরও মনে হয় রেশ লুকানো আছে কামানের এই শব্দে।
শীতের ভোরের আরামের ঘুম এই শব্দে কাটে না পুরাটা। একটু পাতলা হয়ে আসে হয়ত। আমিও ঘুমন্ত থাকলে হয়ত একঠু নড়ে চড়ে কাঁথাটা ঘুমের ঘোরে টেনে গলা পর্যন্ত তুলে আবার তলায়ে যেতাম গভীর ঘুমে। শান্তি কালীন সময়ের নাগরিকের ঘুম ভাঙ্গানোর জোর, কামানের গোলার নাই। তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি, মোবাইলে সেট করা অ্যালার্মের। আজ কামানের গোলার আওয়াজ ফুটছে, মোবাইল গুলা অফ। সবাই ঘুমে, আজ ছুটি।
আমি জেগে জেগে গুনি ২৯
আজ বিজয় দিবস,
দিন শুরু হবে দীপ্ত গৌরবে ৩১ বার তোপধ্বনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সৈনিক আর শহীদদের সালাম জানিয়ে। এখন ২৯, আর মাত্র ২ বার।

আনুষ্ঠানিকতার র‍্যাপিং পেপারে বিজয় দিবস টা এত বেশি মোড়ানো যে, দিন পার হয়ে যায় মোড়ানো র‍্যাপিং খুলতে খুলতে। ভেতরের আসল উপহারটা আর দেখা হয় না। কাল থেকে আবার নাগরিকদের ছুটাছুটির জীবন শুরু। আধখোলা র‍্যাপিং এ জড়ানো বিজয়ের চেতনা না দেখাই পড়ে থাকে আরো এক বছরের জন্য। আজ সকাল থেকেই জাতীর জনক, শহীদ, বীর, মুক্তিসেনা, বীরাংগনা নানান বিশেষ্য বিশেষণ চুষে নির্যাস বের করার প্রাণান্ত চেষ্টা হবে। সস্তা দরের ফুডকোর্টের সেট মেনুর মত। আমাদের টিভি চ্যানেলের হাটের কিছু দূর্বল বেপারী, অতি দূর্বল কিছু সেট কন্টেন্ট দিয়ে পর্দা ভরানোর চেষ্টা করবেন। রাজনৈতিক স্বার্থ সন্ধানীদের দুর্বার মিছিলে স্মৃতিসৌধের সড়কে লেগে যাবে দীর্ঘ যানজট। দেখানো আয়োজনের বাড়াবাড়ি চলবে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যাক্তিগত পর্যায়ে। আগের কোন এক বিজয় দিবসে দেখসিলাম এক তরুনীর উপরের ঠোট সবুজ, নীচের ঠোটে লাল লিপস্টিক। আয়োজনের বিচিত্র উদ্ভাবনী চিন্তার চাপে, শ্রদ্ধাটা কেমন জানি চ্যাপ্টা টিশ্যুর মত কই দলামোছা হয়ে কোনায় পড়ে থাকে যেন।
স্বাধীন দেশের নাগরিকের বিজয় উদযাপনের কত নানান মাধ্যম। পতাকাটা হাতে পেতে মাত্র ২০টাকা লাগে। গাড়ির রেডিও এন্টেনায় বেঁধে ছোট। লাল সবুজ বুটিকের ফ্যাশান। মাইকের হেড়ে আওয়াজ বদলে এখন ভালো মানের লাউড স্পিকারে বাজাও মুক্তির গান। টিভিতে দেখ ফিকে হয়ে আসা, সাদা কালো স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরানা ফুটেজ। পাল্লায় করে মেপে মেপে ক্রেডিট তুলে দাও দলভারী নেতার কোচড়ে। আজ সবাই বিজয়ী।
৩১ বার তোপ দাগানো সেনা বাহিনী বিজয়ী।
দলীয় ব্যানার নিয়ে সাভারের রাস্তা জ্যাম করা কর্মীবাহিনী বিজয়ী।
আয়োজোন করে মঞ্চ সাজানো আয়োজক, গায়ক, গায়িকা, নর্তক, নর্তকী, দর্শক সবাই বিজয়ী।
১২ ঘন্টার প্রোগ্রাম বানিয়ে ঠুশে দেয়া টিভিওয়ালারা বিজয়ী।
ছুটির দিনের আমেজে ঘরে বসে ভুনা খিছুড়ি খাওয়া ছা পোষা মধ্যবিত্ত সে ও বিজয়ী।

শত শত এই আয়োজনের মাঝে দেখানো ভালোবাসায় গৌন হয়ে যায় যে মানুষটা স্বাধীনতার এই বিশাল পাহাড়ে অন্ধকারের ভেতর জাতীকে মশাল হাতে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলেছিলেন, তার কথা গুলা
- সেক্যুলার এক বাংলা বানানোর কথা।
সিংহের মত শরীরে বজ্রকন্ঠে কান্না চাপতে চাপতে বলেছিলেন
- আমি বাংগালী, আমি মানুষ।
খুব মৃদুস্বরে দু একবার শোনা যাবে নিঃসংগ সারথী সেই ছোট খাটো মানুষটার কথা। রামের জুতা সিংহাসনে রেখে রাজ্য শাসন করা ভরতের মতো। কিংবা ব্রেভহার্ট সিনেমার রবার্ট ব্রুসের শেষ যুদ্ধে উইলিয়াম ওয়ালেসের তলোয়ার সামনে ছুঁড়ে দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া সৈন্যের মত। দুইশ বছরের ফুঁশতে থাকা স্বাধীনতার স্বপ্নটাকে নেতার অবস্থান সমুন্নত রেখে বাস্তবায়ন করার নীলনকশা কাটা অন্ধকারের ঘোড়সওয়ার বংগতাজের কথা। চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধটাকে ৯ মাসে আটকে ফেলে, বিজয় এনে দিয়ে যিনি সরে গেলেন এক পাশে। সেই সেকুলার বাংলা বানানোর কারিগরের না জানা সংগ্রামের গল্প, শোনায় কেউ ?
কত কত বড় বড় কথা শোনায় কতজনে, কেউ শোনায় না- সেই অসুর বধের যুদ্ধে, ঝোপের আড়ালে তিন দিন পর এক শানকীতে ভাত আর পোড়া মরিচ ডলে ভাত খেয়েছিল মৌলভী আর ব্রাহ্মনের যোদ্ধা ছেলে ?
বিজয় দিবস আসবে, যাবে, প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের কলেবর আরো বাড়বে, আয়োজনের মাত্রা নিয়ে বাড়াবাড়ি হবে, প্রতিযোগীতা হবে, সবাই যার যার অবস্থানে বিজয়ী হবে।

শুধু বার বার মুক্তি পাবেনা সেকুলার বাংলা বানানোর স্বপ্নটা।
বাংগালী জবাব দেবার আগে দ্বিধায় ভুগবে, সে বাংগালী, না  মোসলমান, কোনটা আগে...
পাদপ্রদীপের নেপথ্যে মগজে শান দেয়া অভিজিত, অনন্ত, নীলাদ্রী, দীপন রা মরে যাবে।
পতাকার আড়ালের নীচে শুওরের পাল বড় হবে। ধর্মের দোহাইয়ে, খেলার দোহাইয়ে, রুপের দোহাইয়ে, বার বার ছোট করে দেবে জাতীয়তার গৌরব।
কেউ টুটী চেপে ধরবে না, পাইক্কা হারামজাদা গুলার, যারা এখন বলে ৭১ এ গনহত্যা হয় নাই।

বিজয় দিবস আসে,
৩১ টা তোপধ্বনী হয়।
...আমাদের ঘুম ভাঙ্গে না।

Friday, December 14, 2018

সর্বশক্তিমান মাইক

১৭ বছর বয়স থেকে ইউসুফ ভালোবাসে জুলেখাকে।
জুলেখার বাড়ির আশে পাশে ইস্ত্রি করা শার্ট পরে গায়ে সেন্ট মেখে অনেক ঘুরসে ইউসুফ। জুলেখা পাত্তা দেয় নাই। রাস্তা দিয়ে জুলেখা পাশের বাড়ির দুই মেয়ে সহ বুকে বই চেপে যখন স্কুলে যাইতো তখন কখনো শিস দিসে, কখনো পোতাইন্না গোলাপ ফুল ফিক্কা মারসে, কখনো মাসুম মিয়ার মটর সাইকেলে চইড়া পাশ দিয়া গান গাইতে গাইতে গেসে, কখনো রাস্তা ফাঁকা বুইঝা জুলেখার ওড়নাও টান দিসে, কাজ হয় নাই। জুলেখা পাত্থরের মত মুখ কইরা সব উড়াইয়া দিসে। কথা কয় নাই। কইলেও একলাইন -
- আব্বারে কইয়া দিমু কিন্তু !!!
জুলেখার আব্বা তেমন বড় হেডম না। তাও ইউসুফ এই এক কথায় চিনা জোঁকের মত কুকড়াইয়া সইরা গেসে সব সময়। আসলে ইউসুফের মনে প্রেম পিরিতি যাও বা দুই চাইর চামুচ আছে, সাহস তো এক ফোটাও নাই। পাতলা পাতলা মোচ উঠার বয়সে যেই জুলেখারে তার মনে ধরসে, এখন ২৬ বছর বয়সে গালভরা গ্যাজগ্যাজা দাড়ি চুলকাইতে চুলকাইতে ইউসুফ ভাবে, জুলেখারে কেমনে পাওনা যাইব । যাদের এমন প্রেম হয় ১৭ বছর বয়সে, তাদের আক্কেল হয়না সময় মত। ইউসুফেরও হয় নাই। এই এক জুলেখার লগে সিস্টেম কইরা দেওনের লোভ দেখাইয়া ইউসুফরে অনেকেই ভাঙ্গাইয়া খাইসে। বন্ধু বান্ধবের কাছে ইউসুফ যে কাঠ বলদের চেয়ে বেশি দাম পায় না এইটা বুঝার আক্কেলও ইউসুফ এখনো জোগাড় কইরা উঠতে পারেনাই। রিকশায় কইরা জুলেখা যাওনের টাইমে চা দোকানের আড্ডার ভিতর থেকে কেউ হয়ত দাঁত কেলাইয়া হাসতে হাসতে কয়
- কেডা যায় ? ইউসুফের বিবি নি ?
শুনে বাকিরা খ্যাক খ্যাক করে হাসে, ইউসুফের বড় ভাল্লাগে। এইটুকুই তার পাওয়া। লেখাপড়া তো সেই ক্লাস নাইনের পর আর আগায় নাই। কিন্তু দুনিয়া তো ইউসুফের লাইগা বইসা নাই। দুনিয়া আগাইসে, জুলেখাও আগাইসে। এলাকার স্কুল, থানার কলেজ পার কইরা জুলেখা এখন ভার্সিটিতে পড়ে। ইউসুফ আর জুলেখার দেখা পায় না সরাসরি। বন্ধুবান্ধবের বুদ্ধিতে ইউসুফ ২৭ হাজার টেকা দিয়া স্মার্টফোন কিনসে, ইন্টারনেট চালায়, জুলেখারে ফেসবুকে দেখে ফোন খুইলা দিনে কমসেকম ২০ বার। ৪ বার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইসে, জুলেখা এক্সেপ্ট করে নাই। এক প্যাকেট বেনসন কিনা দিবার পর দোস্ত বাদল সিস্টেম কইরা ফলো করাইয়া দিসে, তাই জুলেখার ছবি টবি দেইখা হা পিত্তাশ কইরা ইউসুফের দিন যায়।

বেক্কল ইউসুফের এই বাদাইম্মা প্রেম এমনেই শুকাইয়া ধুলা ধুলা হইয়া যাইতে পারতো । কিন্তু একটা ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরাইয়া দিসে। হাজার হাজার এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে জুলেখার বাবা ঘোষনা করসে, ইউসুফের লগে জুলেখার বিয়া দিবে। বিয়ার তারিখও পড়সে। সামনের শবে বরাতের পরের দিন।
চা দোকানে আজকে ইউসুফের দামই আলাদা। কেউ ফিচকা কোনো বদমাইসী করতেসেনা ইউসুফের লগে। কি কামডা করসে ইউসুফ!! জুলেখার মতন সুন্দর, শিক্ষিত মাইয়ারে বিয়া কইরা ফালাইতেসে, মুখের কথা ? কেমনে কী ? একজন খুব লেহাজ কইরা ইউসুফের দিকে এক কাপ চিনি বেশি, কড়া পাত্তি দুধ চা আগাইয়া দিয়া কইলো
- দোস্ত ঘটনা ঘটাইলা কেমনে ?
ইউসুফ মিটিমিটাইয়া হাসে। আর মাথা নাড়ে। তারপর বিজ্ঞের মতন মাথা দুলাইয়া দুলাইয়া কয় ।
- আল্লাহ আছে । বুচ্ছনি মিয়া, আল্লাহ আছে। আল্লাহর ঘরে ডাক দিলে কপাল খুলে ।
এমন মারফতি কথার মানে কেউ বুঝেনা। সবার চোখে প্রশ্ন। ইউসুফ বলে ।
- রাজাকারের বিচারের বছর মসজিদের মাইকে কইসিলো না, সাইদী হুজুররে চান্দের গায়ে দেখা গেসে ? কইসিলো । বিশ্বাস করসিলা না ? সবাই মিল্লা মিছিল করসিলা না ? পুলিশে পিডাইয়া ঘরে উডানির পরেই না ক্ষ্যান্ত দিসিলা।
সম্মিলিত যুবকেরা মাথা দুলায় । কথা সত্য। সবাই মাইকে শুইনা বিশ্বাস কইরা কত আন্দোলন করসিলো। পরে অবশ্য অনেকে বুঝসে চান্দের গায়ে দেখার মতন বুজুর্গ হুজুর সে না । তাতে কী, যা হবার তা তো হইসেই। ইউসুফ বলে যাইতেসে
- ঢাকায় হেফাজতের জেহাদের সময় মসজিদে মাইকে কইসিল না ? লাখ লাখ মুমিন মাইরা লাশ গুম হইসে ? বিশ্বাস গেসিলা না ? গেসিলা তো ।
মসজিদের মাইকে কইসে, হেড মাস্টারে স্কুলে ধর্ম লইয়া কু কথা কইসে বিশ্বাস করসিলা না ? সবাই মিল্লা গিয়া হেই বেডারে কানে ধইরা উঠান বসান করাইসো না ? করাইসো তো । হাতে তালিও দিস, শ্লোগানও দিস। দিস না ? আমি ভাইবা দেখলাম এই মসজিদের মাইকের উপরে জিনিস নাই। তাই পরশুদিন আসরের আজানের আগে দিয়া আমি মসজিদে হান্দাইয়া মাইকে চিক্কুর দিয়া কইসি "প্রিয় এলাকা বাসী এই আসরের ওয়াক্তে আমি আপনাদেরকে ঘোষনা করিতেসি আমি ইউসুফ মিয়া, ভুইয়া বাড়ির জুলেখা আক্তারকে ভালোবাসি। আমার সাথে তার বিয়ার ব্যাবস্থা কইরা দ্বীন ও দুনিয়ার অশেষ নেকী হাসিল করুন।"

মসজিদের মাইকের ঘোষনা এলাকাবাসী ফেলতে পারে নাই। কার বুকে এত বড় পাটা মাইকের ঘোষণা অগ্রাহ্য করে? মসজিদের মাইক বইলা কথা। তাই হই হই কইরা এলাকার লোকজন জুলেখার বাড়ি ঘিরা দিয়া ফালাইসিলো। জুলেখার বাপেরে ধইরা ডলা দেওনের আগেই ব্যাডায় রাজি হইয়া গেসে, শেষে না উত্তেজিত এলাকাবাসী বাড়িতে আগুন দিয়া জুলেখারে পাথর মাইরা কতল করে এই ভয়ে...

একটা মসজিদের মাইক কি না পারে ???

দূর্গাপুজায় লাড্ডূ খাইতে মন চায় ..

হিন্দু হইয়া পড়সো বিপদে,
আইজ রাতে আর খানা জুটবে না বইলা আমার বিশ্বাস !! হাহাহাহাহা

গরুর মাংশ দিয়ে পোলাও খাইতে খাইতে হিন্দু ড্যান্স মাস্টারকে ঘেঁটুদলের মুসলমান অধিপতি এই কথা বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে থাকবে, এমন একটা দৃশ্য শুধু হুমায়ুন আহমেদই পারতেন তুলে ধরতে।

ধর্মটা আসলে রেসলিং এর মতন।
যার যখন জোর, সে তখন ধুনবে। যার জোর কম, সে ধুকবে।
এই উপমহাদেশে সনাতন ধর্মের জোর দৌর্দন্ড প্রতাপে বিরাজ করতো। প্রাথমিক স্তরের মুসলমানরা সেই জোরে পিষ্ট হইসে, বৌদ্ধরা নিগৃহীত হইসে। জোরের চোটে সনাতন ধর্মের লোকেরা নিজেদের পুটুও নিজেরা মারসে। নিম্ব বর্ণের হিন্দুদের উপর প্রেশার কম যায় নাই। ইতিহাস বদলাইসে, সমাজ ব্যাবস্থা বদলাইসে। উচ্চবর্ণের হিন্দুত্বের নাক উঁচামী করার অবস্থা নাই। কিন্তু রেসলিং খেলা তো থামে নাই। যারা আগের রাউন্ডে ধুনা খাইসে, তাদের জেনেটিক ডিসেন্ডাররা সেই রেসলিং এর রিং এ টাইনা আনতে চায় সব সময়। আরেক রাউন্ড খেইলা ধুনা টা দেয়া যায় নাকি সেই চেষ্টা জারী রাখে। সমস্যা হচ্ছে, সেই অরিজিনাল কন্টেস্টেন্ট তো নাই। অত্যাচারী হিন্দু রাজা, জমিদার, জোতদার হারায় গেসে, টিকে আছে হিন্দু নাম ধারী সাদামাটা হরিপদ রা। ঘেডির রগ সামান্য তেড়া মুসলমানেরা পূর্বপুরুষের জীন থেকে প্রাপ্ত জিদ এই গোবেচারাদের উপর মিটাইতে চেষ্টা করে।
অন্যধর্মের ঘাড়ের উপর চাপা না দিলে নিজের ধর্মটারে টেকসই দেখায় না, এই আদীম ধর্মতত্ব খুব অল্প সময়ে বিলীন হবে এমন সম্ভাবনা আসলে নাই।
যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন। উদার ধর্মতত্বের কথা বলেন, তারা আসলে নিজেরাই সংখ্যালঘু। এইটা মাথায় থাকেনা। বড় অংশের মানুষ, আসলে হিংস্র না হলেও নিজ ধর্মপ্রেম প্রকাশের পথ হিসাবে পর ধর্ম পেষণ এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় না কোনোকালেই।

আমার স্কুল জীবনের বন্ধু মলয় সরকার।
জাতে হিন্দু, কিন্তু তারে আমি কখনো সংখ্যালঘু মনোবৃত্তিতে আটকাইতে দেখি নাই। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় হিন্দুদের একটা ডার্টি নিক নেম আছে। কোন কারনে তুচ্ছার্থে একজন হিন্দুকে "ড্যাঁডা" বলা হয়। পরিবার থেকে শেখানো হয়ত হয়না। কিন্তু এটা বলতে মানা করতেও শুনিনাই কাউকে। মুখের উপর বলার মত পরিস্থিতি হয়ত খুব ছিলনা। তবে, সেই সাতচল্লিশে ধর্মীয় দাংগা শুরু করার দাবীদার নোয়াখালীর মোসলমান সমাজ হিন্দুদের সাথে সহাবস্থানে উদার হইতে পারে নাই। হিন্দুরাও জানে এই জিনিস। তো মলয় ছিল ভিন্ন। একবার ক্লাস এইটে মলয় লক্ষীপুজার নাড়ু আনসিল ক্লাসে, অল্পকয়টা। আমি চাওয়ার আগেই শেষ। আমি যখন বল্লাম আমারে দিলি না ?
মলয়ের জবাব ছিল - হালারপুত, লাড্ডূ খাওনের সময় ড্যাঁডার খোজ লও, না ?
কথা আংশিক সত্য। আমি হিন্দু -মুসলমান আলাদা করার লেসন পাই নাই। তখনো আমার হিন্দু বিষয়ক ধারণা- শুধু তারা গরু খায় না, আর পুজার সময় ধুমধাম করে লাড্ডূ খায়, এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।
মলয় ছিল ডানপীঠে, মারামারি, খেলা কোনোকিছুতে পিছানো না। তারমধ্যে আমি কখনো কমপ্লেক্স দেখিনাই। সাপ্রেশানের সামনে নুইয়া না পইড়া মলয়ের সাহস ছিল বুক ফুলাইয়া দাঁড়ানোর। মায়া হোটেলে গরুর কলিজার সিংগারা খাইয়া মুন্না নামের আরেক বন্ধুকে মলয় ব্ল্যাক মেইল করসিলো
- তুই আমারে গরু খাওয়াইছস, স্যার রে কইয়া দিমু বলে।
মুন্নার কাছ থেকে ৫ টাকা আদায় করে, আমাকে নিয়ে আবার কলিজার সিংগারাই খাইসিল।
এই ছিল মলয়। সব হিন্দুরা এমন হয় না। হতে পারে না। এত সাহস সবার নাই।
যদিও বিশাল কমপ্লেক্স নিয়ে চলা কিছু হিন্দু টিচার আমার দেখতে হইসে। তাদের প্রশংগে বলার কিছু নাই।
ধীরে ধীরে দেশের আনাচে কানাচে মোসলমানিত্বের মহড়া দেখে দেখে বড় হইসি। পুজার আগে মূর্তি ভাঙ্গা। ভোটের আগে শাঁসানী। ভোটের পর অত্যাচার। চাকরীর বেলায় মাথা গোনা।
পূর্ব শতাব্দীর হিন্দুত্বের চোটপাট, পাকিস্তান প্রেম, ভারত বিদ্বেষ এর সব কিছুর লোড চেপে বসে বাজারের কোনায় জুতা সেলাই করা নিত্যানন্দ কিংবা পিএইচডি করা কোন অজয় দত্তের ঘাঁড়ে।

ঢাকেশ্বরী, ধামরাই বা বনানী মাঠে পুজা দেখতে যাওয়া বাংগালী মুসলমান খুব কিউট। এরা ঈদেও খুশি, পুজায় ও খুশি। এদের খুশির সীমা নাই। এরা কোরবানীতে গরু খায়, পুজার প্রসাদ খায়, বৌদ্ধ পূর্নিমার সন্দেশ খায় আবার ক্রিসমাসে কেক-ওয়াইনও খায়।
কিন্তু বাকী দেশটা এদের মতন কিউট না।
বাকি দেশে কেউ ইসলাম কায়েম করার পতাকা উচা করে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাঙ্গে। পুরোহিত, সেবাইতের গলা কাটে।
কেউ জাতিয়তাবাদ বুঝায় হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করে আর হিন্দুপুরুষকে পিটায়ে লুলা বানায়ে। দোকান-বাড়ি লুট করে।
সহাবস্থান বুঝায় মসজিদের মাইক বাজবে, কিন্তু মন্দিরে আরাধনা হইলেও মন্দিরা কাসার আওয়াজ যেন বাইরে না শোনা যায় এই সীমানা টেনে।
কেউ আঘাত করার দায় নাই বলে শুধু মুখে "ড্যাঁডা" বলেই মাফ করে দেয়।
আর বিশাল, বিশাল একটা অংশের বাংগালী মুসলমান মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে
- গরু খাওনা কেন ? গরুতে কি সমস্যা ?

হুমায়ুন আহমেদ বুঝতেন। উপরে উপরে যতই মাখন মারা হোক না কেন, মেজরিটি বাংগালী মুসলমান হল সেই ঘেঁটুদলের অধীকারীর মতন। হিন্দুর সাথে চলবে ফিরবে, কিন্তু গরু দিয়া টিপ্পনী দিতে ছাড়বে না।

মানসিকতা যখন মেজরিটি আর মাইনরিটিতে ভাগ হওয়া। তখন রেসলিং চলবে তলে তলে এটাই স্বাভাবিক।
পুজার লাড্ডু খাইতে চাইলে, মোসলমানিত্বের লাগামটা টেনে ধরা দরকার।
দেশে তো ইদানিং উচ্চ মাত্রার মোসলমানিত্বের মহড়া শুরু হইসে। তাতে হিন্দু তো কোন ছাড়। মোসলমান ও কাটা পড়তেসে। মাওলানা, মুয়াজ্জিন সহ।
নিজের ঘর থেকে মানসিকতা বদলায়ে না বের হলে, একসময় পুজা দেখা বা লাড্ডু খাওয়ার জন্য আর হিন্দু খুজে পাওয়া যাবেনা। বিটিভিতে বইসা বইসা রাত দশটার পর দূর্গা-মহীশাসুরের ৩৫ বছরের পুরান স্ক্রিপ্টের বিশেষ অনুষ্ঠান দেখা লাগবে।
ভালয় ভালয় পূজাপর্ব শেষ হোক সারা দেশে। আনাচে কানাচেও যেন মন্ডপে দিয়া জ্বলে।
ধর্মটা যার যার থাকুক। উতসব টা সবার হোক।

গৃহপালিত লেখক।

দুইটা গল্প বলি।
দুইটা কেন ? ব্যাপার আছে। ছোটদেরকে একটা গল্প বললেই হয়। বড়দেরকে বলতে হয় দুইটা। এর একটা থাকে কমন গল্প। যেটা আগে সবাই শুনসে, আরেকটা থাকে সিস্টেমের গল্প। আগে শোনা হয় নাই এমন। সেই গল্পের মধ্যেই "কিন্তু" থাকে। তবে চিন্তার কিছু নাই এই গল্প শোনার বা পড়ার পর সৃজনশীল পদ্ধতির প্রশ্ন করা হবেনা।

তো প্রথম গল্পটা এক নাপিতের।
যার কামাই রুজি কম। ধুকে ধুকে চলতেসে। একদিন তার দোকানে এক কাস্টোমার আসলো। চুল কাটার পর, দাড়ি কামাতে গেলে সেই কাস্টোমার কোঁও করে কাঁকিয়ে উঠলো। নাপিত দেখলো কাস্টোমারের গালে এক ফোঁড়া। তো সে কাস্টোমারকে বললো -"দেন আপনার ফোঁড়াটা কেটে পুজ বের করে দেই, আরাম পাবেন"। দুইদিন ধরে ফোঁড়ার যন্ত্রণায় কাহিল বেচারা চিন্তা করলো খারাপ কী!! যদি একটু আরাম হয়। অনুমুতি পেয়ে নাপিত তার ক্ষুর চালিয়ে নিখুঁতভাবে ফোঁড়া কেটে দিল। কাস্টোমারের ব্যাথা কমে গেল। ঘটনা সেখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু এই কাস্টোমার জনে জনে বলে রাষ্ট্র করে দিল যে, এই নাপিতের হাতে গুণ আছে। ফোঁড়া কাটতে পারে নিখুঁতভাবে। তারপর একজন দুইজন করে নাপিতের দোকানে ফোঁড়া নিয়ে ব্যাথায় কোঁকানো রোগীর ভিড় বাড়তে লাগলো। নাপিতও সিস্টেম বুঝে চুল দাড়ি কাটা কমিয়ে দিয়ে ফোঁড়া কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কামাই রুজি বেড়ে গেল। দিনে দিনে নাপিতের হাতযশ বাড়তে লাগলো। আগের চেয়ে দ্রুত, আগের চেয়ে কম ব্যাথায় ফোঁড়া কেটে দিয়ে ছাই পট্টি বেঁধে দিতে পারে। রোগীও সুস্থ হয় তাড়াতাড়ি। ঢলের মতো রোগীর লাইন লেগে গেল নাপিতের দোকানে। যা হয় আরকী সাধারণত। একজনের নাম ডাক ছড়ালে তার কাছেই সবাই লাইন দেয়। ভালোই চলছিল। কিন্তু চিন্তায় পড়ে গেল এলাকার ডাক্তার সমাজ। তাদের এন্টিবায়োটিক, ডায়গনোস্টিক, সার্জারী ব্যাবসার লাল্বাত্তি জ্বলার অবস্থা। তারা ভেবে পেলনা এইভাবে সব রোগী যদি নাপিতের কাছে গিয়ে ধর্ণা দেয়, তাদের আয় রোজগারের ব্যবস্থা কী? তো তারা একটা ফন্দি করলো। তারা নাপিতকে ডেকে বলল- " তুমি তো শল্যবিদ্যা না জেনেই ফোঁড়া কাটাকাটি করছো হে বাপু, তার চেয়ে আসো তোমাকে শল্যবিদ্যা, স্নায়ুবিদ্যা, জীবাণুমুক্তকরণ ইত্যাদি জ্ঞান শিখিয়ে দেই। আরো ভালোভাবে ফোঁড়া কেটে বেড়াও"।
নাপিত খুশি মনে রাজী হল। শিখলো সব কিছু। তারপর নিজের দোকানে গিয়ে কানে ফোঁড়া নিয়ে আসা এক কিশোর ছেলের ফোঁড়া কাটতে গিয়ে সে ভাবলো কান খুবই স্পর্শকাতর অংগ, অনেক স্নায়ু কানের পাশে থাকে। কাটাকাটি বিশাল রিস্কের ব্যাপার হয়ে যায়। তার উপর কাটার পর সেপ্টিক হয়ে ইনফেকশানের ভয় আছে। নাপিত ফিরিয়ে দিল ছেলেকে। এভাবে একে একে পীঠে ফোড়া, কপালে ফোড়া, বগলে ফোড়া সব রোগীকেই নাপিতের ফিরিয়ে দিতে হল। ফোড়া কাটতে গেলেই নানান সাবধানতা, সতর্কতায় তার হাত কাপতে লাগলো, ক্ষুর কাপতে লাগলো। একসময় নাপিত ফোঁড়া কাটার ব্যবসা ছেড়ে দিল।
এই গল্প থেকে আমরা কী শিখলাম ? যে যা সাবলীল ভাবে করতে পারে, তাকে সেটার ব্যাপারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান দিয়ে দিলে, সে তার সাবলীলতা হারায়।
প্রথম গল্প শেষ। একটা ব্রেক নিয়ে আসেন দ্বিতীয় গল্পে যাই।

এক বাসায় ছিল এক লোক ( এক দেশে এক রাজা ছিল স্টাইলে শুরু আরকী !!)
তো সেই লোকের কাজ ছিল মাথা ভাড়া দেয়া, মানে পয়সার বিনিময়ে অন্যকে বুদ্ধি বিক্রী করতো সে। নানান রকম বুদ্ধি বেচতে হয়। কখনো ভালো বুদ্ধি, কখনো দুষ্টবুদ্ধি, কোন সময় বড় বুদ্ধি, কোন সময় চিপা বুদ্ধি। যার যা লাগে আরকী। তো এইভাবে মাথা খাটিয়ে বুদ্ধি বেচতে বেচতে হাঁপিয়ে গেল লোকটা একসময়। ভাবলো সব বুদ্ধি অন্যের জন্য বিক্রি করে মজা নাই। কিছু বুদ্ধি না বিক্রী করে মজা করলে কেমন হয় ? আগ পীছ না ভেবে লোকটা একসময় শুরু করলো নিজের আনন্দে মাথা খাটানো। কাউকে দুইটা ভালো কথা বলে। কাউকে বলে এক লাইন জ্ঞানের কথা। আর কাউকে হয়তবা বলে এক চুটকি রসিকতা। তো এই ভাবে চলতে চলতে তার অন্য কথার মাঝ থেকে রসিকতাটা লেগে গেল। লোকে তাকে রসিক লোক হিসেবে চেনা শুরু করলো। তার রসিকতা শোনার জন্য লোকের ভীড় বেড়ে গেল। লোকটাও প্রথম প্রথম মজা পেল। আরে !! খারাপ কী ? দার্শনিক টাইপ কথা বললে লোকে শুনে না। সুবচন বললে লোকে আড়ালে টিটকারী করে। তারচে রসিকতার কদর বেশি। চলুক রসিকতা। ভালই চলছিল। পরিচিত গন্ডিতে রসিকতা বলে লোকটাও মজা পাচ্ছিল। কিছুদিন পর, একটু দূর দূর থেকে লোকজন আসা শুরু করলো রসিকতা শুনতে। চেনা নেই জানা নেই লোকেরা এসে বলে "ভাই, দুইটা হাসির কথা শোনান তো। মনটা ভালো করে চলে যাই।" লোকটা একটু ফাপড়ে পড়ে গেল। এত রসিকতার সাপ্লাই দেয়া তো মুখের কথা না। তাও সে টেনে টুনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। খুজে খুজে রসিকতার বিষয় বের করতে তার হিমসিম অবস্থা। লোকের ভীড় আরো বাড়তে শুরু করলো। রসিকতা শোনার জন্য তার বাড়ির বাইরে লোকজন অপেক্ষা করতে লাগলো। লোকটা খুশি মনে খাটাখাটনি বাড়িয়ে দিল।
একদিন তাকে ডেকে বসলো এক প্রকাশক রসিকতা ছাপিয়ে যিনি বেশ ফুলে ফেপে গেছেন !!!! বলল,
ভালোই তো রসিক আপনি। কি সুন্দর সব কিছু নিয়ে মশকরা করে ফেলেন। দারুন ক্ষমতা আপনার। লিখে ফেলেন তো দুই চারপাতা মশকরা, ছাপিয়ে দেই। লোকে পড়ুক। হাসুক।
তো লোকটা এই কথা শুনে প্রথমে বেশ খুশি হয়ে গেল। বাহ, খারাপ না তো। কড়া কথা হালকা ভাবে বলে বলে এতদিন মজা করতে করতে এই জায়গায় চলে আসাটা তো ভালোই মনে হয়। বিখ্যাত রসিক লোকজনও তার রসিকতার কদর করতে চাচ্ছে। এতদিন আশে পাশের মানুষকে রসিকতা শোনানো হল, এবার না হয় আরো দুরদুরান্তের লোকে শুনুক।
ঝামেলা লেগে গেল এর পর। এতদিন লোকটা রসিকতা করতো তার আশেপাশে। যা মনে চায়, তাই নিয়ে একটা মশকরা করে ফেলতো। কিন্তু এখন কী নিয়ে মশকরা করবে সে?
দেশের অবস্থা নিয়ে করা যায়। দেশের অবস্থা এমনিতেও বেশি যুতের না। মশকরা করার একশ একটা জিনিস চোখের সামনে নেচে বেড়ায় প্রতিদিন। কিন্তু কথা হল এই মশকরা করে খুব একটা মজা নেই। কারন দেশটাই একটা মশকরা হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। লোকে দেশ নিয়ে মশকরা করলে সত্যবচন ভেবে বসে।
রাজা-মন্ত্রী এদের নিয়ে করা যায়। এরাও বেশ ফানি। এদের কাজ কর্মে ব্যাপক কৌতুক খুজে পাওয়া যায়। কিন্তু এতে রিস্ক আছে বেশ। হোমড়া চোমড়া কাউকে নিয়ে ফান করার পর সে যদি মাইন্ড করে বসে, ৫৭ ধারায় ভরে দেবে লাল দালানে। বলা যায় না, শুলে চড়ানোর আইন বদলালেও , শুল তো বদলায়নি। একেবারে শুল ভরে দিতে পারে জায়গা মতো। ডিম তো অহরহ ভরছে শোনা যায় একে ওকে। না থাক বাপু। রাজা -উজির ঘেটে লাভ নাই।
সমাজ নিয়ে করা যায়। কিন্তু সমস্যা হল সমাজ বড় অদ্ভুদ। সব ভালো ভালো কথা সবাই জানে। মানে না কেউ। সমাজের সবাই ভাবে সবাই ঠিক পথে আছে। যে ডাইনে আছে সে ভাবে সে ঠিক লাইনে আছে, যে বামে আছে সেও ভাবে সে লাইনে আছে। ছেলেদের লুলামী নিয়ে করলে ছেলেরা ক্ষেপে যায়। মেয়েদের সেলফি ছ্যাবলামী নিয়ে করলে মেয়েরা তো ক্ষেপেই, সঙ্গে ফেউ এর মতন কিছু ছেলেও ক্ষেপে যায়। হিজাব নিয়ে রসিকতা করলে লোকে ভাবে বিকিনি বিক্রি করা হচ্ছে। ন্যুডিটি নিয়ে রসিকতা করলে সিরিয়াস হয়ে কেউ কেউ ঘোষনা দিয়ে দিচ্ছে আই এস এর চর বলে। টেনশান অনেক। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে গেলে লোকে চোখ লাল করে বলে " তুই ব্যাটা এত জ্ঞান দেবার কে ? নিজের চরকায় তেল দে !!!" থাক সমাজ বাদ।
ধর্ম ? ধর্ম নিয়ে মশকরা ?? বিশাল রিস্কের ব্যাপার তো। এটা নিয়ে মুখ খুললে পরে তেলেস্মাতি হয়ে যাবে। পৈত্রিক সম্পদ কল্লাটাই থাকবে না। নাস্তিক বলে ধরে জবাই করে দিবে। বলা যায় না, কাওরান বাজারে নিয়ে খাশির মাংশ বলে বলে মাংশ, মগজ, গিলা কলিজাও বেচে দিতে পারে। বড় হুশিয়ার। আল্লাহ , খোদা, দেব দেবী, বুদ্ধ, জেসাস, সাইন্স, ডারউইন, স্টিফেন হকিং, সবার ফলোয়ার লাখে লাখে। কাকে লাঈড়তে কে লঈড়ে যায় পরে বেড়ার আগুন লেজে লেগে যাবে। থাক বাবা। ধর্ম না লাড়াই।
পরিবার ?? খারাপ না ইশুটা। বউ, শশুর, শালী, সম্বুন্ধী এদের নিয়ে করা যায় মশকরা। জমেও ভালো। তবে কীনা, লোকটার বউ আবার একটু মারকুটে। তাকে নিয়ে মজা করার পরে আসল মজা টের পাইয়ে দিতে পারে। বলা যায় না ঘুমের ভেতর বালিশ চাপা দিয়ে খুন টুন করে ফেলাও অসম্ভব না। শশুরবাড়ি নিয়ে রসিকতা করতে হয় শশুরবাড়িতে খাবার টেবিলে বসে। সেটা সেইফ। কেউ মাইন্ড করে না। বউকে নিয়ে হাসি মজাক করতে হয় অবশ্যই বউ এর বন্ধু বান্ধবীদের কাছে। তাতে বউ মুচকী হেসে প্রশ্রয় দেয়। ভিন্ন ভাবে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। অচেনা কাউকে বউ নিয়ে রসিকতা শোনানোর পরিণাম বড় করুন। ভিন্ন ফোরামে রসিকতার পরিনাম সাদ্দাম হোসেনের মত হয়। বাইরে থেকে এক্কেরে হুতায়াল্বাম টাইপ শক্তি এসে ডেমোক্রেসী শিখায়ে দেবে।
অফিস নিয়ে করা যেত। কিন্তু অফিসের জোক বাইরে ভালো বাজার পায় না। সবার অফিসেই আলাদা আলাদভাবে মশকরা করার মত বিষয় বা ব্যক্তি থাকেই। কিছু বললেই দেখা গেল কমন পড়ে যায়। লোকে হাসে না। মুখ চেপে শক্ত করে ফেলে। যেই জোক সবাই জানে, সেটা করতে যাবার মত গাধামীর কোনো মানে হয় না। এটাও বাদ।

প্রকাশকের উতসাহ পাবার পর, লোকটা রসিকতার বিষয় বাছতে বাছতে নিজের জীবন কষা করে ফেলল। চিন্তিত মুখ নিয়ে ঘুরাফিরা করে, বিড়বিড় করে কি যেন বলে, আবার মাথা নেড়ে নিজেই নিজের চিন্তা বাতিল করে দেয়। আশে পাশের মানুষকেও আর হুট হাট হাসির কিছু বলে না। ভুরু কুচকে বসে সিগারেট টেনে টেনে পকেট খালি করে ফেলতে শুরু করলো।
কিন্তু...
লোকটার তো বুদ্ধি ছিল, সে তো আর নাপিত না। তাই সে একদিন ভোররাতে আইডিয়া খুজে পেল। পটাপট ল্যাপ্টপে। টাইপ করা শুরু করলো। তারপর লেখা শেষ করে আরাম করে ঘুমাতে গেল। যাক শালা। ঘাড়ের থেকে টেনশন নামানো গেছে। কাল থেকে আরামে অফিস শুরু করা যাবে।

তারপর, এই লেখাটা প্রকাশককে মেইল করে দিল !!!!

... মেইলের সাবজেক্টে লিখে দিল-
"যে নাপতালি করে আরাম পায়, তাকে নাপতালিটাই করতে দেন আরাম করে"।