প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশ পাপ অনাচারে আকুন্ঠ নিমজ্জিত ছিল বলিয়া ধারনা করা হয়। আর তাহা না হইলে সকল অবতারেরা কেনইবা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মগ্রহন করিবেন; ইরাক-ইরান কিংবা জাপান-জার্মানে জন্মগ্রহন করিবার দুঃসাহস দেখান নাই? অথবা ইসলামের নবী পয়গম্বরেরা কেবল এরাবিয়ান অঞ্চলেই জন্মগ্রহন করিতে হইলো? অথবা ধরুন যখন বিজ্ঞান বা প্রত্নতত্বের এত অগ্রসর হয় নি, অনুবীক্ষন যন্ত্রের আবিস্কার হয়নি তখন পরম করুনাময় কেন ডাইনোসর বা অ্যামিবার অস্থিত্বের কথা কেন বয়ান করেন নাই? এইরুপ প্রশ্ন করিলে চরম নরম মানসিকতাও ফুটন্ত জলে ফেলা তিন মিনিটের ম্যাগি নুডুলের মত কিলবিল করিয়া উঠে! ফলে আহত অনুভূতি নিয়ে একরাত এবং আরো এরপর অনেকরাত ধার্মিক বাঙালী ঘুমোতে যায়।
আজ বহুদিন পর বিদ্যালয় জীবনের ভাব সম্প্রসারনের কথা মনে পড়িয়া গেল। অন্তরের মধ্যখানি থেকে হইতে অনুভব করিলাম কিছু শব্দের ব্যবচ্ছেদ করা প্রয়োজন। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর আমাদের বাঙালী ধার্মিক মুসলমান, হালকা-ধার্মিক মুসলমান এবং মডারেট মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি স্ফুলিঙ্গ দিয়া মসজিদ, পাড়ার চায়ের দোকান, রাস্তায় মিছিলের মাধ্যমে প্রকাশ পাইতে লাগিলো। তাহারা সর্বত্র ডাব্লিউ বুশকে সন্ত্রাসী এবং বিন লাদেনকে নিরামিষাশী আখ্যা দিয়া মানসিক প্রশান্তি খুজিইয়া পাইলো। অবিরত অভিশাপ আর বদ-দোয়ার মিসাইলে বুশ দ্বিতীয় মেয়াদের বেশী ক্ষমতায় থাকিতে পারিলেন না। এই ধর্মীয় অনুভূতির স্ফুলিঙ্গ পরিবারের ধার্মিক ব্যক্তি থেকে শুরু করিয়া শৈশব পার হওয়া কিশোরদের কচি হৃদয়ও আক্রমন করলো। সেই সময় আমাদের বিদ্যালয়ে একদল ফেরিওয়ালা অনুভূতিকে কিশোরকন্ঠ নাম দিয়া স্কুলে স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতা করিয়া বিক্রি করিতে শুরু করিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামাজিক সুবোধ পরিচয়, অধিকাংশই নির্ঝঞ্ঝাট থাকিতে ভালোবাসেন, ধার্মিক সাধু এমন মানসিকতায় তাহারা এইসব কুইজের ব্যাপারে কর্নপাত করিলেন না। বোধদয় হইলো তখন একসাথে ষষ্ঠজন ছাত্র বিদ্যালয় আসার নাম করিয়া নিখোজ হইয়া গেল যখন। তাহারা ইসলামের পথে জিহাদ করিতে এগোইতেছে বলিয়া মুঠোফোনে জানাইলে সকলের পিতার বুক গর্বে ফুলিয়া ঊঠিল। অবশেষেঃ বীনার মর্ম ভেদিয়া আফগানিস্থানগামী ট্রলার মিস করিয়া তথাপি বিদ্যালয়ের তোরজোরে পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়া পতেঙ্গা বন্দর হইতে জেহাদী সৈনিকেরা সদর্পে ফেরত আসিলো। আর্থিক কারনে পিতার পকেট, মায়ের পার্স ফাকা করিলেও ছিচকে চোর অপবাদ না দিয়া তাহাদের নিয়া চারিদিকে "ব্রাভো ব্রাভো" শব্দাবলী উচ্চারিত হইতে লাগিলো। পাড়া মহল্লায় তৌহিদি জনতা বেঙ্গল টাইগার জন্তু উপাধি দিয়া পিঠ চাপড়াইয়া দিলেন।
সময় গিয়াছে,নেশা অনন্তকাল থাকেনা । তাই বাস্তবতার ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাইলো। খেজুর পাতার চাটাই হইতে পা ফসকাইয়া আজ জিহাদী সৈনিকের অনেকেই সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা হইতে বঞ্চিত । আবার অনেকেই পূর্বের ধুলিকর্দমে চেতিয়া উঠিয়া বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্টীর সহিত সম্পৃক্ত হইয়াছে। ধর্মের সেবকর্মের ভিত্তিতে একটি সফটওয়্যার ফার্মে নিযুক্ত হইবার পর অ্যানোমিয়াসের মত হ্যাকার গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত হইয়া জার্মান-আমেরিকা-লন্ডন-সিরিয়া-পাকিস্থান ভ্রমন করিবার ফ্রি সু্যোগ পাইতেছে। আমি ঘষেটি মাতার বিধর্মী হীরকসন্তান বলিয়া এই ফার্মে যুক্ত হইতে না পারিয়া ডুকরাইয়া উঠি। আবার বেনামে সিভি প্রদান করিয়া সুযোগ পাইয়া দিন দশেকে নাসিকা ভাঙিয়া যা বুজিবার বুঝিয়া লইলাম। দিন দশেকে বুঝা ওমর খলিফা সুফীদের এইসব সফটওয়্যার ফার্মের বাহ্যিক কার্যক্রমের আড়ালে কতটা সাইবার অপরাধ চলমান তাহা আমাদের ডিজিটাল প্রশাসন দশ বছরেই বুঝিতে পারিল না, পারিবেও না। তবে পাব্লিক প্রশাসন সকলেই ইহা বুঝে এইসব অপরাধ রোধে খেয়ালিপনায় মজিয়া ৫৭, ৫৪, ৫৩ সহ কিছু ধারা উদ্ভব হইয়াছে।
শেষ লাইনটি পড়ে যদি আপনার আক্কেল গুড়ুম হইয়া যায়, তাহলে ধরে নিতে বাধ্য হইবেন এই দেশে আপনি ভুল করে একশ বছর অগ্রসর করিয়া ফেলাইয়াছেন! পৃথিবীর আর কোন দেশের দণ্ডবিধিতে এই একবিংশ শতাব্দে এমন চিত্তাকর্ষক দ্বিতীয় কোন ধারা খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। কেন চিত্তাকর্ষক সেই প্রসঙ্গে নাহি গেলাম বরং যে অপরাধের শাস্তির জন্যে এই ধারাটি বরাদ্ধ সেই অপরাধটি কারা করিতেছে তাই লইয়া একটু কর্নপাত করিতেছিলাম।
No comments:
Post a Comment