Sunday, July 8, 2018

আঘাতহীন অনুভূতি

ভাবছিলাম একটি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক ও অনুভূতিতে আঘাতহীন লিখা লিখবো যাতে তেলে তেলতেলে আঘাতপ্রবন ব্যাক্তিরও বিন্দুমাত্র আঘাত না লাগে। বর্তমানে প্রগতিশীল লেখকরাও  " নাস্তিকরা কেন কেবল ধর্ম আর ঈশ্বর নিয়া পড়িয়া থাকে?"ফেবু অনেক যুক্তিবাদীদের যুক্তি কেড়ে নেয়! আমরা ভুলে যাই যুক্তি বুদ্ধি আমাদের নিজেদের আছে! পুনশ্চঃ মানসিক ব্যাধির জগতে কিছুদিন পূর্বে শিলং-এ নতুন তত্ব আবিস্কার হইয়াছে। মানসিক রোগীর কিছুই মনে রাখতে না পারিলেও স্ত্রীর ফোন নাম্বার মনে থাকে। ইহা একটি বিবাহতান্ত্রিক অনুভূতি হইতে পারে !!
 আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে।


বিভিন্ন অনুভূতির বিস্তর ক্ষেত্রে পেলেও  ধর্মানুভূতির কোনো সঙজ্ঞায়ন করা হয় নি।  আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধর্মীয় অনুভূতি প্রতিটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষেরই আছে। যদি সে অর্থেই  আসাদকে গ্রেফতার করা হয়, তবে কেনো কিছুদিন আগে নৃশংসতায় ভাঙা মন্দির, পোড়া মসজিদ, ছিন্নভিন্ন প্রতিমা ধর্মানুভূতিকে আঘাত করবে না? তবে কেনো তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিলো না? আপনি শুনতে না চাইলেও আপনাকে শুনতে হবে  কারন এটা ধর্মানুভূতি নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বক্তব্য। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে ‘ধর্মানুভূতি’ এবং ‘ভাবমূর্তি’ দুইটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হয়, কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ভাবমূর্তি’ বিপন্ন হয়। এবং সব সরকারের আমলেই বিপন্ন হয় আমাদের মতিষ্ক, আমাদের আত্ম-পরিচয়, বাঙালি হিশেবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের মহাকাব্যিক আখ্যান, আমাদের সংসদ- লুই কানের অমোঘ সৃষ্টি, আমাদের জাতীয়তাবোধ, বঙ্গবন্ধু- আমাদের নেতা, জয় বাঙলা- আমাদের স্লোগান এবং আমরা, বাঙালীরা। বড় বিপন্ন বোধ করি চব্বিশ ঘণ্টা, সাত দিন, ত্রিশ দিন তিনশত পঁয়ষট্টি দিন.. ..এবং এইভাবে বিপন্ন বোধ করছি দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর। যদিও ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হবার বিরুদ্ধে আজ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করে  রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ব্লগারকে। এতে অনেকেই খুশি হয়েছেন, বিজয় মিছিলের খবর যদিও মেলেনি। তবুও শুনতে পাই, নখ-দন্ত বিকশিত শকুনেরা না কি তৃপ্তি লাভ করেছে। উচ্চমার্গীয় সারমেয়রা না কি এটাকেও মনে করছে একটা ‘আই ওয়াশ’। সত্যি! আজকাল সারমেয়-শকুনদের তৃপ্ত হবার উপাদান বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনাটিতে স্বস্তি পাই নি আমি, আর আমার টেবিল জুড়ে ধ্রুবতারার মতোন জ্বলতে থাকা একটি বই। বইটির নাম- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা দুজন মিলে বেশ বুঝেছি যে- এদেশে এখন সবাই অস্থির; এখানে নাস্তিকরা ভালো নেই, সংশয়বাদীরা ভালো নেই, আস্তিকরা ভালো নেই, নিবিড় ধর্মানুরাগীরাও ভালো নেই। সবাই অস্থির হয়ে আছেন, কারণ নাস্তিক ব্যাতীত সবাই চাই  আস্তিকতার মোড়কে নিরাপত্তার সনদ জাহির করতে। আস্তিকদের কাউকে দেখি নি ইমাম গাজ্জালী’র দর্শন নিয়ে কোনো লেখা তৈরি করতে, গৌতম বুদ্ধের জীবনীর আলোকে একটি অসাধারণ না হোক, সাধারণ ছোটোগল্প লিখতে, ইসলামের শেষ নবী এবঙ দার্শনিক মোহাম্মদের বিদায় হজ্বের ভাষণের দার্শনিক আলোচনা কিঙবা কোরআনের কাব্যিক মাধুর্য নিয়ে কোনো লেখা আমার চোখে পড়ে না, ব্লগে কিংবা ফেসবুকে।

রাষ্ট্রযন্ত্রের আদেশটি পড়া হলে দেখা যায়, সেখানে ‘ধর্মানুভূতির’ কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কেবল এক চোখ দিয়ে দেখা ‘ধর্মানুভূতি’। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় রাষ্ট্রযন্ত্র ধর্ম বলতে কেবল ইসলাম ধর্মকেই বোঝে এবং সেই মর্মেই আদেশটি দেয়া হয়েছে। তাহলে ‘ধর্মানুভূতি’ শব্দটির ব্যবহার কেনো? ফেসবুক খুঁজলে দেখা যাবে- সেখানে অজস্র পেইজ রয়েছে যেগুলো ক্যাথলিক ধর্মানুসারীদের কটাক্ষ করছে, অনেকগুলোতেই দেখা যাবে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে উপহাস এমনকি যৌন-বিষয়ক গল্পেও তার ব্যবহার করা হচ্ছে; আদালত কী সে বিষয়ে কিছু বলবে না? যদি না বলে, তবে ধরেই নিতে হবে, আদালত কেবল একটি ধর্ম দিয়েই গোটা ‘ধর্মানুভূতির’ কনসেপ্টকে বিচার করতে চাইছে, যেটা ‘ধর্ম’ শব্দটির মূল ভাবগত অর্থের সাথে সাঙঘর্ষিক। আদালত একচোখা আদেশ করেছে, এবঙ আদেশটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তবুও আমরা আইন-আদালতকে সমীহ করি।সম্ভবত  আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে। 
ফেসবুকে অন্তত একশ পেইজের নাম বলে দেয়া যাবে- যেগুলোর নামই নারীদের জন্যে অপমানজনক। প্রতিমুহূর্তে সেই পেইজগুলোর মাধ্যমে বাঙালি নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অশালীনতা আর অশোভনতা প্রকাশ পায়। এগুলো একদিকে যেমন আমাদের সঙস্কৃতির স্নিগ্ধ প্রদীপে অসুরের বাতাস দিচ্ছে, অন্যদিকে বাঙালি নারীকে উপস্থাপন করছে বিকৃতরূপে। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ওইসব পেইজের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে আরও কিছু পেইজের বক্তব্য, যারা ফটোশপে ছবি সম্পাদনা করে হাস্যকরভাবে স্রষ্টার মাহাত্ম্য বাড়াতে চায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে- যারা ইসলামকে উচ্চ করার নামে বুলি সর্বস্ব পেইজ খুলছে, তারাই আবার ইসলাম-পর্দা-শরীয়তের দোহাই দিয়ে বাঙালি নারীদের অপমানজনক ছবি প্রকাশ করছে এবং অশালীন মন্তব্যও করছে। অথবা ধর্মের চাড়ালরা যখন বাউলের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলে মিছিল করে, তখন বাউল গান প্রেমী বাংলার জনগন 'ইসলাম'কেই তো দোষারোপ করবে, তাই না? এরপরও আপনি যদি এখানেও ইঙ্গ-মার্কিন ষড়যন্ত্র তত্ব খুঁজতে আসেন, তাহলে সেটা কি আপনারই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে না? এবার যদি সমীকরণের বামপক্ষ আর ডানপক্ষ মেলাই, তবে দেখা যাবে, গোটা সমীকরণটা আসলে একটি ধর্ম-কেন্দ্রীক উগ্র-জঙ্গীগোষ্ঠী বা তাদের অন্তর্বাস সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য। হায়  গণিত! রাষ্ট্রযন্ত্র সবই বুঝলো, গণিত বুঝলো না। শতাব্দী ভবের পঙত্তিটি যথার্থই মনে হয় " আইনটা এক বিশাল বড় বাড়া, জায়গামত শিথীল বেজায়গায় খাড়া"।

আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক জীবন ব্যাবস্থায় দর্শন ও মানবতা এমনই স্তরে পৌঁছে গেছে, যে প্রাচীন এই ধর্ম নামক অ-ব্যাবস্থা খানায় ধীরে ধীরে ব্যাক্তির ভরসা কমে যাচ্ছে।জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই মানতে পারিনি! কিন্তু অনেকটাই চোখ বন্ধ করে মেনে গেছি! আশা করি আমার উত্তরপুরুষ মানবে না!সেই অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে আসতে সাতচল্লিশ বছরের, এই বাঙলাদেশ, এখন দিকভ্রান্ত এবং মানুষকে  প্রতিনিয়ত আরও বিভক্ত দিকভ্রান্ত করে তোলা হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতালাভের লালসায় । যদি এখনই প্রতিরোধ না করেন, যদি এখনও মনে করেন, সামনের আকাশটা নীল- তবে ভুল করছেন, ভুল ভাবছেন। আর যদি না পারেন, দয়া করে নিজের সন্তানদের হত্যা করুন। মানব-মানবীর কোনো অধিকার নেই, জোড়া দেহে শীর্ষ অনুভূতির পরিমলে পরিভ্রমণের ফলস্বরূপ একটি মানবসন্তানকে পৃথিবীতে এনে, অতঃপর তাকে নরককুণ্ডে নিক্ষেপ করবার।

No comments:

Post a Comment