ট্রেনের ভিতরের জানালায় লিখা ছিল Rauchen verbote। যার বাংলা প্রতিশব্দ করলে দাঁড়ায় ধূমপান নিষিদ্ধ। শেষ স্টেশনের আগের স্টেশন থাকায় Fächer(বগি)-এ ৩০-৩৫ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন না। আর তখনি এক মেক্সিকান লোক সিগারেট ধরালো। লোকটা বেশ উচু আর মোটাসোটা, টিভিতে দেখা পরাক্রমশালী রাবনের মত ছিল তাই কেউ অযথা ঝামেলায় জড়াতে চাইলো না। কিছুক্ষন পর এটেন্ডেন্স এসে লোকটাকে প্রশ্ন করলো চলন্ত ট্রেনে যে ধূমপান নিষেধ ত কি সে জানে না। এছাড়া Rauchen verbote লেখা আছে তাও কি সে দেখেনি। লোকটা বললো I can't read or Write German. এবার এটেন্ডেন্স আমাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো How people you are, Der Mann hätte verboten werden sollen,অর্থাৎ আমরা কেন লোকটাকে নিষেধ করলাম না। নির্ভেজাল লোকগুলো কেউ কোন উত্তর দেয়নি, এরাএস্টাবলিশমেন্টের পক্ষের লোক বলে মনে হয় হয়তো । এ্যান্টিএস্টাবলিশমেন্ট একটা সামগ্রিক ব্যাপার।
নেমে একটাই প্রশ্ন বারবার মাথায় ঘুরপাক খচ্ছিলো, রিপোর্টটা কে করেছিল। অনেক্ষন ভেবে খেয়াল হলো, সিগারেট ধরানোর পর বাচ্চা সাথে এক মহিলা অন্য Fächer এ চলে গিয়েছিলেন। বোধহয় ঐ মহিলাই রিপোর্ট করেছিলেন। ভেবে লজ্জাই হচ্ছিলো। আমাদের সমস্যা এটাই যতক্ষন পর্যন্ত নিজেরা সমস্যার মুখোমুখি না হই ততক্ষন ঐ বিষয়ে নূন্যতম প্রতিবাদ করি না।
এবার আসি যে প্রলাপ পড়িয়াছেন তা টেনে আনার কারন প্রসঙ্গে। "আমরা কেন ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি" এমন প্রশ্নবানে নিয়মিত জর্জরিত হই। এমনতো নয় যে, ধর্ম কোন সুন্দরী উর্বশী তাকে টিজ করবো অথবা ধর্মের সাথে আমার পৈত্রিক ঋণাত্মক যোগসূত্র।
প্রথমত, ধর্মের উপকারিতা থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তিনির্ভর। ধর্মের ব্যাখ্যা ও প্রচারণা দেশ-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন নয়। ধর্মের কোন পরিবর্তন, বিবর্তন নেই। পরিবর্তন আর বিবর্তনে ধর্মের ভয়। যে অন্ধকারে ধর্মের উৎপত্তি, সেই অন্ধকার থেকে ধর্ম বের হতে চায় না, ধর্ম নিজেই এর বিবর্তন ও পরিবর্তনকে নিষিদ্ধ করে।ধর্ম মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, ধর্মগ্রন্থ আর ধর্মীয় আচারগুলো এর প্রমাণ। আধুনিক শিক্ষা থেকে যারা যত বেশী দূরে, ধর্ম তাদের ঠিক ততটাই কাছে। একারণেই, ধর্ম সেইসব পরিবেশে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।ধর্মের স্বরূপ, সংজ্ঞা বা এদের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ধর্ম স্বাভাবিকভাবেই, নিজের স্বরূপগত কারনেই মানুষের অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। বাট্রার্ন্ড রাসেল তাঁর “Why I Am Not A Christian” বইতে বলেছেন –“Religion is based, I think, primarily and mainly upon fear”. বর্তমান সময়ে আমরা পোশাক নিয়ে কিঞ্চিত দুশ্চিন্তায় আছি, অথচ আমাদের অগ্রজ কিছুকাল আগেই বলেছিলেন "সকল বাঙালী পল্লীবাসীর পোশাক পরিচ্ছদ অলংকারপত্র প্রসাধন দ্রব্য প্রভৃতি আগেও অভিন্ন ছিল, কিঞ্চিত উন্নতির পর এখনও অভিন্ন আছে [সূত্র : লোকায়ত সমাজ ও বাঙালী সংস্কৃতি আবু জাফর শামসুদ্দীন]"
স্বিতীয়ত,দ্ব্যার্থহীনভাবে বলা যায় ধর্ম নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য অবশম্ভ্যাবী হয়ে পড়ে। যতক্ষন পর্যন্ত ধর্ম আমার বাকে, শ্বসনে চেপে ধরছে না ততক্ষন পর্যন্ত ততক্ষন পর্যন্ত আমি মৌন থাকি। যতক্ষন আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করছে, তখনও কেউ এর বিরুদ্ধাচারন করছে না। আমি কি খাবো, কি পরবো, আমার প্যাশান কি হবে তা নিয়ে জোলাপ না তুলছে; মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করছে, ছোট্ট কচিকাচাদের চিন্তচেতনার উপর জোর করে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়া না হচ্ছে রুপকথার গালগল্পগুলো; ধর্ষন, অশ্লীলতা কে ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্মের পুথিসাহিত্যের আদলে বৈধতা না দিচ্ছে; যতক্ষন না আমার আদি সংস্কৃতিকে ধর্মের ছাঁচে ঢেলে পরিবর্তিত করে নিচ্ছেন; আমার অর্জিত সাফল্যকে এক মহাশক্তিশালী স্রষ্টার দয়া বলে চাপিয়ে না দিচ্ছে ততক্ষন কেউ কিছু বলছে না। আর যখনি এসব ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটছে আমার নৈতিক দ্বায়িত্ব তাকে বেদম প্রহারের উপর রাখা। সময় এসেছে ধর্মচর্চার ধরন পাল্টানোর ; প্রথাগত ধর্মের দাপট চূর্ণ করে মানব ধর্মের পথ প্রসারের।
No comments:
Post a Comment