Tuesday, July 31, 2018
Monday, July 16, 2018
অক্সিজেন আর বিষাক্ত গ্যাসের মিশ্রণ
জীববিজ্ঞানের ব্যাবহারিক ক্লাসে তেলাপোকার ব্যবচ্ছেদ করার অভিযোগে
হারিয়েছিলাম তোমার হাত ধরার অধিকার। প্রথম চুম্বনের পথে বাধার দেয়াল হয়েছিল
নিকোটিন, সেই দেয়াল আজ আকাশ ছুঁয়েছে।
অক্সিজেন আর বিষাক্ত গ্যাসের মিশ্রণ মিশে গেছে নাম না জানা পাখির ডাকে, স্বপ্নরা আজ ব্যাবসার খপ্পরে।। তুমি বরং সার্টিফিকেট পোড়ানো ছাই দিয়ে ফেসিয়াল করে সৌন্দর্য বর্ধন করো।
প্রিয়তমা নীতিকথা আজ নষ্টদের ব্যাবসার উপকরন, এখানে ইশ্বর বিক্রি হয়ে গেছে তাদের ঝুলিতে। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো আবেগ আর দেশপ্রেমই যে আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আর পড়ে আছি তাই নিয়ে। পড়ন্ত রাতে শহরের শেষ বাড়ীর বারান্দায় তোমার হাসিমুখ দেখে বিদায় জানাতে চাই প্রিয়তমা নগরীকে।
অক্সিজেন আর বিষাক্ত গ্যাসের মিশ্রণ মিশে গেছে নাম না জানা পাখির ডাকে, স্বপ্নরা আজ ব্যাবসার খপ্পরে।। তুমি বরং সার্টিফিকেট পোড়ানো ছাই দিয়ে ফেসিয়াল করে সৌন্দর্য বর্ধন করো।
প্রিয়তমা নীতিকথা আজ নষ্টদের ব্যাবসার উপকরন, এখানে ইশ্বর বিক্রি হয়ে গেছে তাদের ঝুলিতে। জাতীয় পতাকায় মোড়ানো আবেগ আর দেশপ্রেমই যে আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আর পড়ে আছি তাই নিয়ে। পড়ন্ত রাতে শহরের শেষ বাড়ীর বারান্দায় তোমার হাসিমুখ দেখে বিদায় জানাতে চাই প্রিয়তমা নগরীকে।
অভিসন্ধির মানচিত্র
হাঁটছি...
পেছনে আমার ছায়া
আমার নিত্য সঙ্গী ।
আমি তাকে পাই না।
সেও আমাকে পায় না।
সত্যিকারের সঙ্গী কি একেই বলে যে,
না পাওয়া সত্ত্বেও সঙ্গ ছাড়ে না ।
প্রযত্নের প্রবঞ্চনা
হাঁটতে হাঁটতে মগজ হাতড়ে দেখি— অভিসন্ধির মানচিত্র হারিয়ে গেছে কোথাও। শুধু
মনে পড়ে উদ্বৃতি, হাসি আর হুঙ্কারের কথা। বন্দী পাখিটির চোখেই কেবল আকাশ
দেখার প্রতীক্ষা। প্রযত্নের প্রবঞ্চনা ছাড়া নেই কোন স্থাবর সাকিন, কোন
শব্দহীনতায় ঝরে যাওয়া পাতার ইতিহাস আমাকে রক্ত সঞ্চয় করতে শেখায়- এ
চিন্তায় সামনে-পিছনের সমান দ্বন্দ্বে নিত্যবৃত্ত ছন্দে ঘুরপাক খায় বর্তমান।
পাখিটির চোখে চোখ রাখার প্রাণান্ত ইচ্ছে জিওল আতুর নয়নের বিছানায় অথচ হটাৎ
বাক্যের ব্যাপ্তি তার পরিসমাপ্তি ঘটে নতুন প্রবঞ্চনায়। এই অনুভবেই আমার রক্ত ক্ষয় হয়, ইতিহাস আমাকে রক্ত সঞ্চয় করতে শেখায় ।
জটিলতাকে আমি দুরই রাখি, ঘেষতে দেই না কাছে সাধারন্যেই আমার বাস। বিষ নিয়ে
বিষ জালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ভিতর শরীর অসাহায়ত্বটাকে টেনে আনে বাহির থেকে
ভিতরে এক দুর্বল রক্তের দল তৈরি করে যা ভংঙুর হৃদয়ের ভিত্তি স্থাপন করে,
নিরবে আস্তে আস্তে নির্জীব করে এই জীবন …
প্রেত হাসি
কাঠ পেন্সিলের লেখাকে যেমন কাঠপেন্সিল দিয়ে স্কেচ করে পাওয়া যায় না,তেমনি
জীবনের ভুল গুলোকেও দ্বিতীয়বার শোধরানোর কোন উপায় থাকে না।ভুলের বোঝা নিয়েই
পাড়ি দিতে হয় মানব জীবনের বিশাল পথ। প্রতিদিন রাতের আধারে হারিয়ে যায়
আরেকটি দিন।নির্জন কালোরাত গ্রাস করে নেয় হতাশা, ব্যার্থতা।যোগ্যতা নিয়ে
শুরু হয় আরেকটি স্বপ্ন, আরেকটি নতুন আলো।বিভৎস চিড় ধরা আয়না আলোয় বিলুপ্ত
হয়।মৃতশহর শাণিত করে রাখে উত্তপ্ত বালি।গভীর জ্যোৎস্নাঙ্কিত স্ট্রীটের
মাথায় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ি ক্রেনের কংকাল, জং পড়া লোহালক্কর আর হিংস্র
ঘাসের ভৌতিক নির্জনতায়। প্রেত হাসির শব্দে ফের যুদ্ধ শেষের শহর জেগে উঠে।
অনিঃশেষ যাত্রা
এক অনিঃশেষ নৌযাত্রা শুরু করেছিলাম সেই সুদূর শৈশবে। মাধ্যমিক স্কুলের
পরীক্ষার খাতায় নৌকা এঁকে নিজের জীবনের নৌকা ভাসিয়েছিলাম চিত্রশিল্পের
গহীন দরিয়ায়। এরপর থেকে রং তুলির মাধ্যমে বিচিত্র বর্ণ বিভা ছড়িয়ে
পানির ঢেউ, কাঠের নৌকা আর জীবন একাকার হয়ে এগিয়ে চলছে মহাসমুদ্রের পথে।
সময় কত দ্রুতই না পেরিয়ে যায়! শৈশব, কৈশোর আর তারুন্যের উচ্ছ্বল দিনগুলো
পেরিয়ে এসে বারবারই শুধু মনে হয় অনেকটা পথ চলে এসেছি আর ফিরে যাবার উপায়
নেই। সময় গুলো চলে যায় ঠিক যেন বায়োস্কোপে দেখা ছবির মতো। আর জীবন নামক
মহাসমুদ্রের প্রতিটি ঢেউয়ে লেপ্টে থাকে বোকা শৈশবের ভীড় । মহাসমুদ্রের
উপরিভাগে উত্তাল ঢেউ থাকলেও তলদেশ যেরকম শান্ত থাকে, বহমান জল যেরকম কঠিন
প্রস্তরখন্ডের মধ্যে দিয়ে নীরবে চলে যায় এবং জমে যাওয়া জল যেরকম কঠিন,
তীক্ষ্ণ এবং তরল অবস্থায় যেকোন স্থানে মানিয়ে নিতে পারে, দুর্বোধ্য
নাবিকও সমরূপ। বড় হবার সাথে সাথে একটা ব্যপার খুব লক্ষ করছি, কেমন যেন
আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি এই মহাসমুদ্র থেকে। আশপাশের সবকিছুর প্রতি এতটা
নিস্পৃহতা দেখে নিজের মনেই খুব অবাক হই মাঝে মাঝে,বিভ্রান্তিতে জড়াই। কিছু
কিছু বিভ্রান্তি এমন যে আপনি বুঝতেই পারবেন না আপনি এর শিকার। যখন বুঝবেন
তখন আপনি নাবিক মহাসমুদ্রে ডুবে গেছেন।
Sunday, July 8, 2018
আপোষকামী ভদ্রলোক
আমার কাছে ভদ্রলোক মানেই আপোষকামী মনে হয়। গত তিনদিনে মোশারফ করিম ইস্যুতে নাট্যপাড়ায় অনেক ভদ্রলোকের জন্ম হয়েছে, ঠিক যতটা ভদ্রলোক জন্ম হয়েছে গাজী রাকায়েতের লাম্পট্যকে ডিফেন্স করতে। PK-র রাজকুমার হিরানি, OMG-র উমেশ শুক্লা থেকে শুরু করে হাল সমাজের জাফর ইকবাল বা মোশারফ করিম সকলেই কিন্তু ইচ্ছে করলেই স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন না। কারন এখানে সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সাথে ভাবমূর্তির ব্যাপারস্যাপার জড়িত। এসব ভদ্রলোকদের ধর্মীয় ম্যাস মেন্টালিটিই সীমানা টেনে বেঁধে দিয়েছি তাদের আপোষকামী জীবন প্রণালী। নিজের ভঙ্গুর মানসিক শক্তি দিয়ে হাটুবিদ্যের সীমা ডিঙ্গানোর চেষ্টাকে বাকী সবাই মিলে চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে নিজের দলে টেনে আনার একটা নোংরা চর্চায় আছে এরা। পেটে বিদ্যের তারতম্য হলে যা হয় আরকি।
লোকে ভাল বললে তবেই এরা ভাল থাকে, এর আগ পর্যন্ত যত ভালই থাকুক না কেন, তাদের নিজের উপরেই নিজের কনফিডেন্স থাকেনা। শুধু যে কনফিডেন্সের অভাব এটাও একমাত্র সমস্যা না, আরো বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা অন্যের সবকিছুতেই জাজমেন্টাল হবার অধিকার দাবী করে। অন্যে কি করে, কেমনে করে, কেন করে, তার সব কিছুতেই নাক গলাতে হবে তাদের। মোটাদাগে যদি বাংগালী ধার্মিক ভদ্রলকদের সমাজের একটা চিত্র আঁকা হয় তাহলে ছবিটা দেখতে হবে এমন-
সারিবাঁধা মানুষ, কিন্তু কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না। চেহারা দেখে কাউকে আলাদা করে চেনার উপায় নাই, কারন প্রত্যেকে নিজের নাক সহ আস্ত মাথাটাই গুঁজে দিয়ে রেখেছে সামনের জনের পাছার ভিতরে।
এবার যদি দেখা যায় রাস্তায় একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে তাদের পাছায় ছ্যাকা লাগে। মেয়েদের কাপড় এর উপর তাদের যৌন নিরাপত্তার দায়ভার ঠেলার চেষ্টা করা লাগে।
কোন মেয়ে কারো সাথে হেসে কথা বললে তাদের পাছায় আবার ছ্যাকা লাগে। তখন তারা নির্ধারন করে দেয় নির্ধারন করে দেয়, কে বেশ্যা, কে জাউরা, কে কুলাংগার, কে খুব ভাল, কে সমাজে থাকার যোগ্য না।
ছ্যাকার মাত্রা আরো বেড়ে যায় যদি সন্ধ্যারাতে বিরে যায়। পতিতাদের বিশেষনে এদের কথা শুনলেই ঘেন্নায় নাক সিটকায়, অথচ সমাজে পতিতাদের ধর্ণাদারদের পরিচয় খুজতে গেলেই বুকটা কতই না গর্বে ফুলে ঊঠে।
প্রযুক্তি বদলায়, সমাজের গতি বদলায়, কিন্তু "খাসলত" বদলায় না। খাচ্চরগুলো পেটে থাকা বর্জ্যের এর মত, সমাজে থেকেই যাবে মনে হয় সারাজীবন।
লোকে ভাল বললে তবেই এরা ভাল থাকে, এর আগ পর্যন্ত যত ভালই থাকুক না কেন, তাদের নিজের উপরেই নিজের কনফিডেন্স থাকেনা। শুধু যে কনফিডেন্সের অভাব এটাও একমাত্র সমস্যা না, আরো বড় সমস্যা হচ্ছে, তারা অন্যের সবকিছুতেই জাজমেন্টাল হবার অধিকার দাবী করে। অন্যে কি করে, কেমনে করে, কেন করে, তার সব কিছুতেই নাক গলাতে হবে তাদের। মোটাদাগে যদি বাংগালী ধার্মিক ভদ্রলকদের সমাজের একটা চিত্র আঁকা হয় তাহলে ছবিটা দেখতে হবে এমন-
সারিবাঁধা মানুষ, কিন্তু কারো চেহারা দেখা যাচ্ছে না। চেহারা দেখে কাউকে আলাদা করে চেনার উপায় নাই, কারন প্রত্যেকে নিজের নাক সহ আস্ত মাথাটাই গুঁজে দিয়ে রেখেছে সামনের জনের পাছার ভিতরে।
এবার যদি দেখা যায় রাস্তায় একটা মেয়ে হেটে যাচ্ছে তাদের পাছায় ছ্যাকা লাগে। মেয়েদের কাপড় এর উপর তাদের যৌন নিরাপত্তার দায়ভার ঠেলার চেষ্টা করা লাগে।
কোন মেয়ে কারো সাথে হেসে কথা বললে তাদের পাছায় আবার ছ্যাকা লাগে। তখন তারা নির্ধারন করে দেয় নির্ধারন করে দেয়, কে বেশ্যা, কে জাউরা, কে কুলাংগার, কে খুব ভাল, কে সমাজে থাকার যোগ্য না।
ছ্যাকার মাত্রা আরো বেড়ে যায় যদি সন্ধ্যারাতে বিরে যায়। পতিতাদের বিশেষনে এদের কথা শুনলেই ঘেন্নায় নাক সিটকায়, অথচ সমাজে পতিতাদের ধর্ণাদারদের পরিচয় খুজতে গেলেই বুকটা কতই না গর্বে ফুলে ঊঠে।
প্রযুক্তি বদলায়, সমাজের গতি বদলায়, কিন্তু "খাসলত" বদলায় না। খাচ্চরগুলো পেটে থাকা বর্জ্যের এর মত, সমাজে থেকেই যাবে মনে হয় সারাজীবন।
ধর্মপ্রাণ বাঙালি ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-আচার সংস্কার-কুসংস্কারের পার্থক্য বুঝে না
ধর্মপ্রাণ বাঙালি ঐতিহ্য-সংস্কৃতি-আচার সংস্কার-কুসংস্কারের পার্থক্য বুঝে না। বুঝো ধর্ম আর ধর্মের বিরোধী। এরা সবকিছুকেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করে তালগোল পাকিয়ে ফেলে। এরা নবান্ন থেকে পহেলা বৈশাখ সবকিছুকেই ধর্মীয় আচার অনুষ্টান মনে করে। তাই ধর্ম ও সংস্কৃতি আজ মুখোমুখি অবস্থানে। এটি কোন নতুন বিষয় নয় সংস্কৃতির ভিন্নতা থাকলে জাতি নির্মানে সংকট সৃষ্টি হয়। তাও যদি হয় সেই সংস্কৃতি ধর্মের ভিত্তিতে। আমরা বাঙালিরা সেই সংকট পেরিয়ে এসেছি অনেক পূর্বে। কিন্তু বর্তমান কালে ধর্ম ও সংস্কৃতির মধ্যে সেই সংকটটি প্রকট আকার ধারণ করে আছে তা হচ্ছে ধর্মের মুখুশে ধর্মান্ধতা। যুগ যুগ ধরে ধর্ম নিয়ে যে অতিরঞ্জিত বারাবারি, ধর্মের কুসংস্কার ও ধর্মীয় আধিপত্যবাদের যে প্রভাব আমাদের জনজীবনকে আক্রান্ত করেছে সেগুলো থেকে মুক্তির একমাত্র পথই হচ্ছে সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চা। কারণ সংস্কৃতি নিয়ে এই পর্যন্ত যারাই লেখালেখিতে মেতেছিলেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আহম্মদ শরীফ, আবুল কাশেম ফজললু হক, যতিন সরকার, বদরুদ্দীন উমর সহ সকলেই শিকার কারেছেন যে-ধার্মিকের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে শাস্তির ভয় আর পুস্কারের লোভ।
সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনার প্রথম দিকে আমাদের এই উপমহাদেশের বিগত কয়েক শতক ধরে যে সংস্কৃতি পূর্ণাঙ্গ চর্চা হয়ে এসেছে সেই সংস্কৃতির সাথে আপোষ ও বিরুদ্ধতার একটি নমুনা উপস্থাপন করলাম।যেহেতু বাংলাদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু যে ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান তারা মেনে চলেন, তার স্বরূপটি বুঝে নিতে হলে আমাদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে কথা বলার। ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বিনয়কুমার সরকার বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় "বেঙ্গলি কালচার অ্যাজ এ সিস্টেম অব মিউচু্যয়াল আককুলটুরেশনস" আর্টিকেল লিখেন। ১৯৪২ সালে এই লেখাটির বাংলা অনুবাদ করেন ক্ষিতি মুখোপাধ্যায়। শুধু অনুবাদই নয়, রচনাটির অনুপঙ্খু বিশ্লেষণও হাজির করেন তিনি। এই লেখা ও এর বিশ্লেষণের মূল কথটি হলো সংস্কৃতির বিনিময় আককুলটুরেশনস কথাটির মানে পারস্পরিক সংস্কৃতি-বিনিময়।
তাঁরা দেখালেন, আদি বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির বিনিময়ের ফলে নতুন সংস্কৃতির ধরন কীভাবে পাল্টে গেলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটার প্রতি তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, সেটি হলো বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের প্রবেশ এবং এর প্রভাবে বাঙালি সংস্কৃতির রূপান্তর, একইভাবে বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাবে বাইরে থেকে আসা ধর্মগুলোর রূপান্তর। তাঁদের মতে- শুধু ইসলামই নয়, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মও বাংলা অঞ্চলের বিদেশী ধর্ম। এইসব ধর্মের আগমনের আগেও এ অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব কোনো ধর্ম ছিলো- তারা এর নাম দিয়েছেন বাঙালি ধর্ম। তাঁরা এ-ও বললেন- ইসলাম আসার আগে এ অঞ্চলের সমস্ত মানুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ ছিলো- ঐতিহাসিক এই ধারণাটিই ভুল। বরং এক বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠি অ-হিন্দু বা অ-বৌদ্ধ রয়ে গিয়েছিলো, বা কেউ কেউ সেসব ধর্ম গ্রহণ করলেও তা এমনভাবে তাঁদের আদি সংস্কৃরি ছাঁচে ঢেলে পরিবর্তিত করে নিয়েছিলো যে তাদেরকে বড়জোর নিম-হিন্দু বা নিম-বৌদ্ধ বলা যায়। ইসলাম আগমনের ফলে এই অঞ্চলের অ-হিন্দু বা অ-বৌদ্ধ এক বিরাট সংখ্যক লোক, সঙ্গে কিছু হিন্দু এবং কিছু বৌদ্ধও নতুন ধর্ম গ্রহণ
করে। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়া এ ক্ষেত্রেও ঘটেনি। ফলে প্রত্যেক ধর্মই বাঙালি ধর্মের দাপটে নিজেদের আদি রূপ খুইয়ে নতুন এক রূপ লাভ করে।
কিন্তু বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলমানদের আচার-ব্যবহার ও চালচলনে মিল আছে। কারণ কি? সাধারণের ধারণা- হিন্দুদের কেউ কেউ মুসলমান হয়ে যাওয়ায় এইরূপ ঘটেছে। কথাটার ভিতর কিছু সত্য আছে। কিন্তু আসল কারণ- হিন্দু ধর্মের মতো মুসলমান ধর্মেও অনার্য বাঙালী আদিম লোকদের আচার-ব্যবহার আর চালচলন ঢুকে গিয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান দুই ধর্মেই 'বাঙ্লামি'র প্রলেপ পড়েছে। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের উপর খাঁটি স্বদেশী সংস্কৃতি দিগবিজয় চালাচ্ছে। এই কথাটা মনে রাখলে বাঙালী হিন্দু এবং মুসলমানদের রীতিনীতির ভিতর ঐক্য ও সাদৃশ্যগুলো সহজে বুঝতে পারব। দুই সংস্কৃতিই 'বাঙালীকরণের' প্রভাবে অনেকটা একরূপ দেখিয়ে থাকে।
এতো গেল সদৃশ্যবার্তা। তার উল্টোপিঠে আরেকদল প্রতিক্রিয়াশীলরা ভাবেন বাঙালি সংস্কৃতি মানেই হিন্দুদের সংস্কৃতি।তাই এইসব ইতিহাস ঐতিহ্যের সংস্কৃতির বিরোধিতা করে আমদানিকারকের দ্বায়িত্ব নেয়। এর আগমন স্বাভাবিক হলে স্বাভাবিকই থাকতো, কিন্তু বিপর্যয় হচ্ছে যখন ধর্মের জোলাপে সংস্কৃতির আগমন ঘটছে। আর এইখানেই ইতিহাস আমাদেরকে আরও একটি ভয়াবহ সত্যের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। গাছ কেটে আগাছার চাষ হচ্ছে। ধর্মেরও ধর্মীয় সংস্কৃতি রয়েছে কিন্তু এই ধর্মীয় সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল খাবে না। বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের জাতিগত সংস্কৃতি কিন্তু ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিন দেশী।ধর্মকে সংস্কৃতির সাথে এক করে চিন্তা করাটা এক ধরনের বোকামি। ধর্মের একটা আর্ন্তজাতিকতাবাদ রয়েছে কিন্তু সংস্কৃতির রয়েছে জাতিয়তাবাদ।
সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের আলোচনার প্রথম দিকে আমাদের এই উপমহাদেশের বিগত কয়েক শতক ধরে যে সংস্কৃতি পূর্ণাঙ্গ চর্চা হয়ে এসেছে সেই সংস্কৃতির সাথে আপোষ ও বিরুদ্ধতার একটি নমুনা উপস্থাপন করলাম।যেহেতু বাংলাদেশে মুসলমান জনগোষ্ঠীই সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু যে ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান তারা মেনে চলেন, তার স্বরূপটি বুঝে নিতে হলে আমাদের প্রয়োজন হয়ে পড়ে ইসলামের ইতিহাস নিয়ে কথা বলার। ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বিনয়কুমার সরকার বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় "বেঙ্গলি কালচার অ্যাজ এ সিস্টেম অব মিউচু্যয়াল আককুলটুরেশনস" আর্টিকেল লিখেন। ১৯৪২ সালে এই লেখাটির বাংলা অনুবাদ করেন ক্ষিতি মুখোপাধ্যায়। শুধু অনুবাদই নয়, রচনাটির অনুপঙ্খু বিশ্লেষণও হাজির করেন তিনি। এই লেখা ও এর বিশ্লেষণের মূল কথটি হলো সংস্কৃতির বিনিময় আককুলটুরেশনস কথাটির মানে পারস্পরিক সংস্কৃতি-বিনিময়।
তাঁরা দেখালেন, আদি বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির বিনিময়ের ফলে নতুন সংস্কৃতির ধরন কীভাবে পাল্টে গেলো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দিকটার প্রতি তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন, সেটি হলো বাংলায় বিভিন্ন ধর্মের প্রবেশ এবং এর প্রভাবে বাঙালি সংস্কৃতির রূপান্তর, একইভাবে বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাবে বাইরে থেকে আসা ধর্মগুলোর রূপান্তর। তাঁদের মতে- শুধু ইসলামই নয়, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মও বাংলা অঞ্চলের বিদেশী ধর্ম। এইসব ধর্মের আগমনের আগেও এ অঞ্চলের মানুষের নিজস্ব কোনো ধর্ম ছিলো- তারা এর নাম দিয়েছেন বাঙালি ধর্ম। তাঁরা এ-ও বললেন- ইসলাম আসার আগে এ অঞ্চলের সমস্ত মানুষ হিন্দু বা বৌদ্ধ ছিলো- ঐতিহাসিক এই ধারণাটিই ভুল। বরং এক বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠি অ-হিন্দু বা অ-বৌদ্ধ রয়ে গিয়েছিলো, বা কেউ কেউ সেসব ধর্ম গ্রহণ করলেও তা এমনভাবে তাঁদের আদি সংস্কৃরি ছাঁচে ঢেলে পরিবর্তিত করে নিয়েছিলো যে তাদেরকে বড়জোর নিম-হিন্দু বা নিম-বৌদ্ধ বলা যায়। ইসলাম আগমনের ফলে এই অঞ্চলের অ-হিন্দু বা অ-বৌদ্ধ এক বিরাট সংখ্যক লোক, সঙ্গে কিছু হিন্দু এবং কিছু বৌদ্ধও নতুন ধর্ম গ্রহণ
করে। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়া এ ক্ষেত্রেও ঘটেনি। ফলে প্রত্যেক ধর্মই বাঙালি ধর্মের দাপটে নিজেদের আদি রূপ খুইয়ে নতুন এক রূপ লাভ করে।
কিন্তু বাঙালী হিন্দু ও বাঙালী মুসলমানদের আচার-ব্যবহার ও চালচলনে মিল আছে। কারণ কি? সাধারণের ধারণা- হিন্দুদের কেউ কেউ মুসলমান হয়ে যাওয়ায় এইরূপ ঘটেছে। কথাটার ভিতর কিছু সত্য আছে। কিন্তু আসল কারণ- হিন্দু ধর্মের মতো মুসলমান ধর্মেও অনার্য বাঙালী আদিম লোকদের আচার-ব্যবহার আর চালচলন ঢুকে গিয়েছে। হিন্দু ও মুসলমান দুই ধর্মেই 'বাঙ্লামি'র প্রলেপ পড়েছে। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের উপর খাঁটি স্বদেশী সংস্কৃতি দিগবিজয় চালাচ্ছে। এই কথাটা মনে রাখলে বাঙালী হিন্দু এবং মুসলমানদের রীতিনীতির ভিতর ঐক্য ও সাদৃশ্যগুলো সহজে বুঝতে পারব। দুই সংস্কৃতিই 'বাঙালীকরণের' প্রভাবে অনেকটা একরূপ দেখিয়ে থাকে।
এতো গেল সদৃশ্যবার্তা। তার উল্টোপিঠে আরেকদল প্রতিক্রিয়াশীলরা ভাবেন বাঙালি সংস্কৃতি মানেই হিন্দুদের সংস্কৃতি।তাই এইসব ইতিহাস ঐতিহ্যের সংস্কৃতির বিরোধিতা করে আমদানিকারকের দ্বায়িত্ব নেয়। এর আগমন স্বাভাবিক হলে স্বাভাবিকই থাকতো, কিন্তু বিপর্যয় হচ্ছে যখন ধর্মের জোলাপে সংস্কৃতির আগমন ঘটছে। আর এইখানেই ইতিহাস আমাদেরকে আরও একটি ভয়াবহ সত্যের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। গাছ কেটে আগাছার চাষ হচ্ছে। ধর্মেরও ধর্মীয় সংস্কৃতি রয়েছে কিন্তু এই ধর্মীয় সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিল খাবে না। বাঙালি সংস্কৃতি আমাদের জাতিগত সংস্কৃতি কিন্তু ধর্মীয় সংস্কৃতি ভিন দেশী।ধর্মকে সংস্কৃতির সাথে এক করে চিন্তা করাটা এক ধরনের বোকামি। ধর্মের একটা আর্ন্তজাতিকতাবাদ রয়েছে কিন্তু সংস্কৃতির রয়েছে জাতিয়তাবাদ।
বিরল ধর্মীয় রোগ
দেশে বিরল ধর্মীয় রোগ বাড়িতেছে ,চিকিৎসায় সক্ষমতা নাই বঙ্গবাসীর। যারা চিকিৎসার দায়িত্ব নিবার যান তাদের ডান্ডফটাশের শিষ্য কইয়া সাইলেন্ট করার চেষ্টা করা হইতেছে। ধর্ম ডিঙাইয়া বাংলাদেশে থাকনে কারো বুকের পাটা নাই ; পিটাইয়া তক্তা বানাইয়া ফালাইব মক্কাফেরত সেনাবাহিনী। জীবন বাচাইতে নীরবে পয়লাবারের মতো উড়াল নৌকায় উঠে ভাগতেছে চিকিৎসকরা। ধর্মে অবিশ্বাসীদের খেদাইয়া খড় ঘাসের বিছানায় ঘুমাইয়া বেশ মজাই পায় রাজার পোলারা। অন্যদিকে গভীর সমবেদনা আর তীব্র নিন্দায় জর্জরিত এক বাঙালি জাতির ভাবমূর্তির কথা ভাবিয়া সর্বদা মিউট থাকে সিদাসাদা মানুষগুলা।
এদের মাইরা খেদাইয়া বহুত পুণ্য সঞ্চয় করছে আল্লার বান্দারা। এইটা খুব পুণ্যের কাম। এই মারামারি, পাড়াপাড়ি এইটা কিন্তু নতুন কিছু না কইলাম......যুগে-যুগে ইসলাম ও মানুষ মারার ইতিহাস হইতে আমরা হুনসি যে, পয়লা মানব আদম ও হাওয়ার প্রথম দুই পুলা কাবিল হাবিলকে পাথরের ঢিল মাইরা হত্যা করে। আদিম যুগে অঞ্চল দখল নিয়া এক টিমের লগে অন্য টিমের যুদ্ধ হইতো এবং পরাজিত টিমেরে জিতা টিম মাইরা ভ্যানিশ কইরা দিতো। এই টিমগুলাতে বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবল টিম চাইতে বেশী মাইনসে থাকতো। হেই থাইক্যা মানুষ মারা আরম্ভ। সভ্য সমাজে মানুষ মাইরা ফালানো কেউ সমর্থন করেনা। হেরপরেও মানুষ হত্যা থামে নাই, যুগে যুগে এই হত্যাকাণ্ড হইছে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে, আলাদা আলাদা রেফারেন্স দিয়া । কখনো অঞ্চলকে লইয়া কখনো ধর্মকে লইয়া। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যীশু খ্রিষ্ট (হযরত ঈশা) কেও হত্যা করা হইছে ধর্মের কারনেই। তেমনি পৃথিবীর অন্যতম শান্তির ধর্ম ইসলামেরও জন্ম মানব হত্যার শুরু দিয়াই।
পার্সিয়ান সাম্রাজ্য মুটামুটি ধংশের শেষ প্রান্তে তখন। সমগ্র ইউরোপ তখন উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করতেছে। এশিয়ায় সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্যময় শাসন ব্যবস্থা বিরাজ করছিলো। হেইসময় মদিনায় ছিল খ্রিষ্টানদের আধিপত্য, আর জেরুজালেম এ ছিল ইহুদিগো আধিপত্য। মক্কায় সহ অন্যান্য আরব অঞ্চল সমূহে ছিল আরব বেদুঈনদের বিচরণ শুধুমাত্র মক্কা ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলবাসী ছিল অনেকটা যাযাবর জাতীয়। এক জায়গায় অধিক সময় তারা বসবাস করতনা। খালি এইখান ওইখান চক্কর দিয়া ঘুরতো।
মক্কার গোড়াপত্তন হইছিল নবী ইব্রাহীম (আব্রাহাম) এর সময়। গোত্র-প্রথা ছিল অঞ্চলবাসীর শাসন ব্যবস্থা। মক্কায় প্রভাবশালী আধিপত্য আছিল কুরাইশ গোত্রের, মিশর ও ভারতীয় ধর্মীয় প্রভাবে প্রভাবিত আছিল মক্কার অধিবাসীগণ, যার দরুন অনেক দেব দেবীর মূর্তি স্থাপিত হইছিলো মক্কায়, ঢোল পিডাইয়া ধর্মীয় উৎসব পালন করতো তারা। এর কারণে অনেক দেশের মানুষ আইতো সেইখানে, স্বভাবত মক্কায় ব্যবসাও আছিল জমজমাট এসব কারণে।
টেকাটুকাজনিত কারণে এই অবস্থান ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল কুরাইশ গোত্রের। পরিস্থিতির বিবেচনায় নতুন - নতুন ধর্মীয় রীতি - নীতি প্রথা প্রচলন করে, মূলত তাদের বসে থেকে আয়ের ব্যবস্থাদি করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। টাঙ্কুর উপরে প্যান্ট পড়া, নত হইয়া বসা, বইসা পানি খাওয়া সব কিছুর লগে আল্লা খোদার কাহিনী যুক্ত করা সেইটার মহান কইরা তুলতো।
ওই গোত্রের আব্দুল্লার পুলা মুহাম্মদ, মক্কায় আল-আমিন নামে হক্কলের কাছে পরিচিত আছিল। ইনি কিন্তু জন্মাইছিলেন ক্ষত্রিয় মুল্লাগো রাজা হইয়া। বেডার নামের অর্থ হইল সত্যবাদী। যুবক অবস্থায় স্থানীয় রাজনীতিতে সে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে থাকে, যা স্থানীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ পছন্দের চোখে দেখেননি, সমস্যা বাইড়া যায় যখন, মোহাম্মদ নিজেকে আল্লাহর নবী হিসেবে দাবী করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করে। ইতোমধ্যে তার অনেক অনুসারী স্যারেন্ডার হইয়া যায়, ইটা দেইখ্যা কুরাইশ গোত্রের নেতাগো ডরাই যায়। একদিকে নতুন ধর্মের বিস্তার অন্যদিকে তাগো বহুতদিনের ধর্মকেন্দ্রীক ব্যবসা-বাণিজ্য ধংশ হইবার ডর। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মুহাম্মদ কে ভ্যানিশ কইরা ফালাইবো। মুহাম্মদ পূর্বেই টের পাইয়া শিষ্যগো লইয়া ভাইগ্যা যান যা ইসলামে বলা হয় হিজরত করেছিলেন। সেইখানেও ইটিশপিটিশ কাহিনি আছে। বহুতদিন পলাইয়া থাইকা, শেষমেষ দৌ্ড়াইতে দৌড়াইতে টায়ার্ড হইয়া মদিনায় খ্রিষ্টানদের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বলে এখন থাইকা আপনেরা যা কন; সেইমতোই চলমু আমরা। আমাগো থাকতে দেন। ক্রিষ্টানরা ভাবলো নিশ্চয়ই ইনি একটু বিশেষ কিসিমের মুল্লা। না হইলে বডিগার্ড হিসাবে কি আর এমন ফেরেসতারদের নিয়া চলাফিরা করেন? মদিনার খ্রিষ্টানগণ তাদের সাদরে মেহমান হিসেবে গ্রহণ করেন, ভালোই খাতিরযত্ন করে। জায়গাটাতে বহুতদিন মুহাম্মদ ও তার শিষ্যরা ঘাপটি দিয়া আছিল।
মুহাম্মদ বেবাক চালাক আছিল। ভাগনার মহনীয় বক্তব্য অনেককেই প্রভাবিত করতো, এবং বেবাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হইয়া যায়। এছাড়া বহুত খ্রিষ্টান পরিবার, সংখ্যালঘু থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে থাকা ইসলাম ধর্মীয় বেডাগো প্রতিনিয়ত অত্যাচারে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশসমূহে পালাইয়া যান।
কিছুদিন যাইবার পর, উনি নিজ শক্তি সঞ্চয় কইরা অনেক অনুসারী নিয়া (শক্তিপ্লাস আছিল না কিন্তু সেই সময়), নিয়মিত বেশ কয়েকটি যুদ্ধে খুবই দক্ষতার লগে মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেন, এবং যুদ্ধে অনেক কাফের(মালাউন) মাইরা ফালান এবং মক্কা বিজয় করেন। হেই সময়ের কুরাইশ গোত্রের অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরও মারেন, যারা মূলত আছিল উনার নিজ গোত্রীয় ও অনেকেই ফেভিকল আত্মীয়। ধর্মের লাইগ্যা কাফির(মালাউন/বিধর্মী) হত্যার বৈধতা দেন। মুহাম্মদের সময়ে রাজ্য বিস্তার আরব দেশসমূহেই সীমাবদ্ধ আছিল, আরব বেদুঈনদের ধর্মান্তর করা অথবা ভ্যানিশ করে সায়েস্তা করাই ছিল তার মূল লক্ষ্য। প্রতিবেশী খ্রিষ্টান রাজাদের দরবারে উনি বিভিন্ন সময়ে উপহারসহ দূত পাঠাইয়া সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।
তার আন্ডারে মক্কায় পুনরায় বাৎসরিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান হইতে থাকে,যা মূলত মক্কায় পূর্বে স্থাপিত মূর্তি সরিয়ে তার স্থলে কাবাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হইতে থাকে। পুনরায় ধর্মকে কেন্দ্র করে মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে এর ফলে স্থানীয় কুরাইশ গোত্রের আয় রোজগারের স্থায়ী বন্দোবস্ত হয়। কুরাইশ বংশওয়ালারা তারে পেন্নাম করিতে থাকিলো।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর, তার ডিয়ার সিনিয়র অনুসারীদের নিয়ে গঠিত(যাদের বলা হয়,সাহাবীয়ে কেরাম) হয় মজলিশে শুরা। যার প্রধান হিসেবে আবু বক্কর খলিফা নিযুক্ত হন। আবু বকর দুই বছরেরও অধিক সময় রাজ্য পরিচালনা করেন। তার শাসনকালে তিনি ইসলাম ত্যাগীদের আল্লার নামে বলি দেন, সাসানীয় এবং বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যে অভিযান পরিচালনা করেন, যদিও ততটা অভিযান কইরা ধইন্য হইতে পারেন নাই ।
তার সম্পর্কে উইলিয়াম মন্টগোমারি ওয়াট লিখেছেন :
"From 622 to 632 he (Abu Bakr) was Mohammed's chief adviser, but had no prominent public functions except that he conducted the pilgrimage to Mecca in 631, and led the public prayers in Medina during Mohammed's last illness."
৬১ বছর বয়সে তার ইতি গজব হয়।
তারপর শাসন করবার দায়িত্ব পান, প্রভাবশালী সাহাবী উমর বিন খাত্তাব, আবু বক্করের তুলনায় উনি যথেষ্ট ঘ্যাচাং ও সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন। খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
উমরের শাসনামলে রাজ্য সীমা যথেষ্ট বাইড়া যায়। হেইসময়ের সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুইতৃতীয়াংশ মুসলিমগো নিয়ন্ত্রণে আসে (যদিও নির্ভরযোগ্য তথ্যসুত্র পাওয়া যায়নি) এবং জেরুজালেম মুসলিমগো হস্তগত হয়। এসব যুদ্ধে লক্ষাধিক মাইনসেরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, যার বেশীরভাগই আছিল খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী। শেষমেষ পার্সিয়ান এক ঘাতকের ছোরার আঘাতে তার ইতি গজব ঘটে।
তার মৃত্যুর পর রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব বর্তায় অন্যতম অনুসারী উসমান এর উপর। তার রাজ্য পরিচালনা সম্পর্কে ততটা তথ্য পাওয়া যায়না, যতদূর জানা যায়, উনি একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছিলেন। রাজ্য জয়ের চাইতে স্থানীয় বিদ্রোহী খেদাইতেই উনাকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হইত,তার রাজত্বের পুরোটা সময়। অজ্ঞাতনামা আততায়ীর হাতে উনি নিহত হইছিলেন। তার মিত্যুর পর, ইসলামী সাম্রাজ্য নেতৃত্বদানকারীদের মাঝে ঝগড়া লাইগ্যা যায়। উসমান কে হত্যার বিচার দাবী করে প্রভাবশালী সাহাবী-গন।
এই অস্থিতিশীল টাইমে চতুর্থ শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, মুহাম্মদের জামাতা আলী ইবনে আবু তালিব। মুহাম্মদের জ্যৈষ্ঠ অনুসারীদের মাঝে ক্ষমতা গ্রহণের লোভ চরম আকার ধারণ করে (বেহেসতের লোভ নয় কিন্তু)। অনেক গুলো যুদ্ধ লইয়া তাকে ব্যস্ত থাকতে হইত, নিজ ধর্মীয় সাহাবীদের(মুহাম্মদের অনুচর) বিরুদ্ধে। অনেকেই উনি হত্যা করতে সক্ষম হন। অনেকেই নিরুদ্দেশ বা পালাইয়া যান। সর্বশেষ ইমাম মুয়াবিয়ার হাঙ্কিপাঙ্কির সাথে পেরে না উঠার কারনে, সন্ধি করতে বাধ্য হন। তার লগে চুক্তি হয়, রাজ্য ভাগ করে শাসন করার এবং ইমাম মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর আলীর পুত্র হাসান কে খলিফা করবেন। এরমাঝে আলী আততায়ীর হাতে নির্মমভাবে অক্কা পান। এবং ইসলামী খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে।
ইমাম মুয়াবিয়া শেষ পর্যন্ত তার কথার হেরফের কইরা ফালান। তিনি পুত্র ইয়াজিদ কে শাসনকর্তা নিযুক্ত কইরা যান। ইয়াজিদ ক্ষমতায় আরোহণ কইরাই প্রথমেই কৌশলে ইমাম হাসানকে তার নিজ স্ত্রী কর্তৃক বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন, এবং অরেক পুলা ইমাম হুসাইনকে কৌশলে অন্য আঞ্চলিক শাসনকর্তার মাধ্যমে আমন্ত্রণ করিয়ে, পথিমধ্যে কারবালার ময়দানে তার সহস্রাধিক অনুচর সহ নৃশংসভাবে হত্যা করেন। যার মাধ্যমে ইসলামের শিয়া মতাদর্শ জন্ম লয়।
পরবর্তী ইসলামের শাসন পরিক্রমায় মক্কার প্রভাব কমতে থাকে এবং আঞ্চলিক শাসনকর্তাগণ প্রভাবশালী হইতে থাকে এতে কইরা অনেকেই মক্কায় অভিযান চালিয়ে রাজ্য ক্ষমতা দখল করে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিলেন। তাদের মধ্যে উসমানী খিলাফত,আব্বাসীয় খিলাফত,উমাইয়া খিলাফত-মামুর বেডাগো নাম উল্লেখ্য যোগ্য।
এইসব খিলাফত এর শাসনামলে সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার চর্চা হইতে থাকে এবং ব্যাপকহারে একদিকে লক্ষ-লক্ষ খ্রিষ্টান হত্যা কইর্যা ইউরোপের স্পেন পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে, ইহুদী হত্যা করে জেরুজালেম পর্যন্ত ও হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হত্যা করে সমগ্র ভারতবর্ষে রাজত্ব কায়েম করে। আফ্রিকার উপকূলীয় দেশ সমূহে অভিযান চালিয়ে রাজ্য জয় করে অনেক মানুষকে হত্যা করে অনেককেই বন্দি কইরা দাস হিসেবে ধর্মান্তরিত করে মুসলিম বানাইয়া আরবে নিয়া আসে এবং এর ফলে পৃথিবীতে দাসপ্রথার ব্যাপক প্রচলন ঘটে।
#সারমর্ম: ইসলাম প্রচার থেকে শুরু হয় মানুষ হত্যা, যা হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এখনো ইসলামের দোহাই দিয়ে, ভিন্ন ধর্মী, ভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী, মানুষদের কে ব্যাপক হারে হত্যা করা হচ্ছে, কখনো বোমা মেরে, কখনো গুলি করে, কখনো জবাই করে, কখনো বিমান হামলা করে। এ পর্যন্ত কত কোটি মানুষ শুধু ইসলাম না মানার কারনে হত্যা করা হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান কোন দেশ বা কোন জাতীর পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়।
ভালোবাসার সংজ্ঞা
ভারতবর্ষের অধিকাংশ মুভিগুলোই রোম্যান্টিক ভালোবাসাকে সম্বল করে এর পটভূমি তৈরি করে। এক্ষেত্রে হলিউড বা পাশ্চাত্য কিন্তু এই ব্যাপারে বাতিক্রম। তারা আমাদের পরিচালক অথবা গীতিকারদের মত ভালোবাসা নিয়ে এতটা আচ্ছন্ন নয়। জানিনা আমাদের এরকম প্রবণতা কেন। এখানকার গানের কথাগুলোর ক্ষেত্রে একই বিষয় প্রযোজ্য। মুভিকে যদি একটি দৃষ্টিকোণ থেকে কল্পনা বিলাস বলা যায়,যেখানে অপূর্ণ ইচ্ছাগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাহলে বলা যেতে পারে এখানকার মানুষগুলো বড়ই ভালোবাসা বঞ্চিত। মুভি নামক কল্পনার জগতে নিজের অপ্রাপ্তিগুলোকে পূরণ হতে দেখে চাপা পড়া ব্যাথাগুলো কিছুটা উপশম হয় আরকি। গান বা কবিতার মাঝে দুঃখগুলোকে উড়িয়ে দেয়া যায় সহজেই , হালকা হয় মন। শৈশব অথবা বিবাহিত জীবনের মাঝে ভালোবাসাকে যেন অদেখার স্বর্গের মত মনে হয়; যা সত্য, কিন্তু কেউ কোনোদিন এর ব্যাপারে চাক্ষুষ কোন জ্ঞান লাভ করে নি । বস্তুবাদী সমাজে, অ্যারেঞ্জড ম্যারেজের মাধ্যমে বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলে অথবা মেয়েটিকে বিয়ে করা, তারপরে বনিবনা না হওয়ার পর্যায়ে চূড়ান্ত ভাবে অভিযোজনের প্রচেষ্টা। ব্যর্থ হলে শেষমেশ চক্ষু লজ্জার কারণে বহু কষ্টে ঘৃণা নিয়ে বাকীটা জীবন বসবাস করার প্রয়াস। অথবা প্রেমের টানে আকৃষ্ট হয়ে যার সাথে নিজের জীবনকে বেঁধে নিয়েছে,করেছে জীবন সঙ্গী, সেই মানুষটিকে আজ কেন যেন বড় অচেনা লাগে এবং বহু দুরের মানুষ মনে হয়। ভালোবাসা শুধু ক্ষণিকের অনুভূতি অথবা মরীচিকা!!! তখন ভালোবাসাকে খোজা হয় ফিল্মের পর্দায়, গানের কথায় কিংবা লাইলী মজনুর রুপকথায়। আসলে কি আমরা ভালোবাসার সংজ্ঞার ব্যাপারে খুবই দ্বিধান্বিত?, নাকি নিজেরাই আসলে অবগত নই আমারা আসলে কি চাই ?
সে যেটাই হোক না কেন, ভারতবর্ষের মানুষগুলোর মাঝখানে ভালোবাসার অভাব তা এখানকার মুভিগুলোর একঘেয়েমি রোম্যানটিক ধারার জন্য দায়ী। এবং দুঃখের বিষয় হল মুভিগুলোর প্রেম নিছক অভিনয় ছাড়া কিছু নয়।
এই দেশকে হয়তো আপনি ভুল করে একশ বছর অগ্রসর করিয়া ফেলাইয়াছেন!
প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশ পাপ অনাচারে আকুন্ঠ নিমজ্জিত ছিল বলিয়া ধারনা করা হয়। আর তাহা না হইলে সকল অবতারেরা কেনইবা ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মগ্রহন করিবেন; ইরাক-ইরান কিংবা জাপান-জার্মানে জন্মগ্রহন করিবার দুঃসাহস দেখান নাই? অথবা ইসলামের নবী পয়গম্বরেরা কেবল এরাবিয়ান অঞ্চলেই জন্মগ্রহন করিতে হইলো? অথবা ধরুন যখন বিজ্ঞান বা প্রত্নতত্বের এত অগ্রসর হয় নি, অনুবীক্ষন যন্ত্রের আবিস্কার হয়নি তখন পরম করুনাময় কেন ডাইনোসর বা অ্যামিবার অস্থিত্বের কথা কেন বয়ান করেন নাই? এইরুপ প্রশ্ন করিলে চরম নরম মানসিকতাও ফুটন্ত জলে ফেলা তিন মিনিটের ম্যাগি নুডুলের মত কিলবিল করিয়া উঠে! ফলে আহত অনুভূতি নিয়ে একরাত এবং আরো এরপর অনেকরাত ধার্মিক বাঙালী ঘুমোতে যায়।
আজ বহুদিন পর বিদ্যালয় জীবনের ভাব সম্প্রসারনের কথা মনে পড়িয়া গেল। অন্তরের মধ্যখানি থেকে হইতে অনুভব করিলাম কিছু শব্দের ব্যবচ্ছেদ করা প্রয়োজন। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর আমাদের বাঙালী ধার্মিক মুসলমান, হালকা-ধার্মিক মুসলমান এবং মডারেট মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি স্ফুলিঙ্গ দিয়া মসজিদ, পাড়ার চায়ের দোকান, রাস্তায় মিছিলের মাধ্যমে প্রকাশ পাইতে লাগিলো। তাহারা সর্বত্র ডাব্লিউ বুশকে সন্ত্রাসী এবং বিন লাদেনকে নিরামিষাশী আখ্যা দিয়া মানসিক প্রশান্তি খুজিইয়া পাইলো। অবিরত অভিশাপ আর বদ-দোয়ার মিসাইলে বুশ দ্বিতীয় মেয়াদের বেশী ক্ষমতায় থাকিতে পারিলেন না। এই ধর্মীয় অনুভূতির স্ফুলিঙ্গ পরিবারের ধার্মিক ব্যক্তি থেকে শুরু করিয়া শৈশব পার হওয়া কিশোরদের কচি হৃদয়ও আক্রমন করলো। সেই সময় আমাদের বিদ্যালয়ে একদল ফেরিওয়ালা অনুভূতিকে কিশোরকন্ঠ নাম দিয়া স্কুলে স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতা করিয়া বিক্রি করিতে শুরু করিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামাজিক সুবোধ পরিচয়, অধিকাংশই নির্ঝঞ্ঝাট থাকিতে ভালোবাসেন, ধার্মিক সাধু এমন মানসিকতায় তাহারা এইসব কুইজের ব্যাপারে কর্নপাত করিলেন না। বোধদয় হইলো তখন একসাথে ষষ্ঠজন ছাত্র বিদ্যালয় আসার নাম করিয়া নিখোজ হইয়া গেল যখন। তাহারা ইসলামের পথে জিহাদ করিতে এগোইতেছে বলিয়া মুঠোফোনে জানাইলে সকলের পিতার বুক গর্বে ফুলিয়া ঊঠিল। অবশেষেঃ বীনার মর্ম ভেদিয়া আফগানিস্থানগামী ট্রলার মিস করিয়া তথাপি বিদ্যালয়ের তোরজোরে পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়া পতেঙ্গা বন্দর হইতে জেহাদী সৈনিকেরা সদর্পে ফেরত আসিলো। আর্থিক কারনে পিতার পকেট, মায়ের পার্স ফাকা করিলেও ছিচকে চোর অপবাদ না দিয়া তাহাদের নিয়া চারিদিকে "ব্রাভো ব্রাভো" শব্দাবলী উচ্চারিত হইতে লাগিলো। পাড়া মহল্লায় তৌহিদি জনতা বেঙ্গল টাইগার জন্তু উপাধি দিয়া পিঠ চাপড়াইয়া দিলেন।
সময় গিয়াছে,নেশা অনন্তকাল থাকেনা । তাই বাস্তবতার ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাইলো। খেজুর পাতার চাটাই হইতে পা ফসকাইয়া আজ জিহাদী সৈনিকের অনেকেই সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা হইতে বঞ্চিত । আবার অনেকেই পূর্বের ধুলিকর্দমে চেতিয়া উঠিয়া বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্টীর সহিত সম্পৃক্ত হইয়াছে। ধর্মের সেবকর্মের ভিত্তিতে একটি সফটওয়্যার ফার্মে নিযুক্ত হইবার পর অ্যানোমিয়াসের মত হ্যাকার গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত হইয়া জার্মান-আমেরিকা-লন্ডন-সিরিয়া-পাকিস্থান ভ্রমন করিবার ফ্রি সু্যোগ পাইতেছে। আমি ঘষেটি মাতার বিধর্মী হীরকসন্তান বলিয়া এই ফার্মে যুক্ত হইতে না পারিয়া ডুকরাইয়া উঠি। আবার বেনামে সিভি প্রদান করিয়া সুযোগ পাইয়া দিন দশেকে নাসিকা ভাঙিয়া যা বুজিবার বুঝিয়া লইলাম। দিন দশেকে বুঝা ওমর খলিফা সুফীদের এইসব সফটওয়্যার ফার্মের বাহ্যিক কার্যক্রমের আড়ালে কতটা সাইবার অপরাধ চলমান তাহা আমাদের ডিজিটাল প্রশাসন দশ বছরেই বুঝিতে পারিল না, পারিবেও না। তবে পাব্লিক প্রশাসন সকলেই ইহা বুঝে এইসব অপরাধ রোধে খেয়ালিপনায় মজিয়া ৫৭, ৫৪, ৫৩ সহ কিছু ধারা উদ্ভব হইয়াছে।
শেষ লাইনটি পড়ে যদি আপনার আক্কেল গুড়ুম হইয়া যায়, তাহলে ধরে নিতে বাধ্য হইবেন এই দেশে আপনি ভুল করে একশ বছর অগ্রসর করিয়া ফেলাইয়াছেন! পৃথিবীর আর কোন দেশের দণ্ডবিধিতে এই একবিংশ শতাব্দে এমন চিত্তাকর্ষক দ্বিতীয় কোন ধারা খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। কেন চিত্তাকর্ষক সেই প্রসঙ্গে নাহি গেলাম বরং যে অপরাধের শাস্তির জন্যে এই ধারাটি বরাদ্ধ সেই অপরাধটি কারা করিতেছে তাই লইয়া একটু কর্নপাত করিতেছিলাম।
আজ বহুদিন পর বিদ্যালয় জীবনের ভাব সম্প্রসারনের কথা মনে পড়িয়া গেল। অন্তরের মধ্যখানি থেকে হইতে অনুভব করিলাম কিছু শব্দের ব্যবচ্ছেদ করা প্রয়োজন। ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর আমাদের বাঙালী ধার্মিক মুসলমান, হালকা-ধার্মিক মুসলমান এবং মডারেট মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি স্ফুলিঙ্গ দিয়া মসজিদ, পাড়ার চায়ের দোকান, রাস্তায় মিছিলের মাধ্যমে প্রকাশ পাইতে লাগিলো। তাহারা সর্বত্র ডাব্লিউ বুশকে সন্ত্রাসী এবং বিন লাদেনকে নিরামিষাশী আখ্যা দিয়া মানসিক প্রশান্তি খুজিইয়া পাইলো। অবিরত অভিশাপ আর বদ-দোয়ার মিসাইলে বুশ দ্বিতীয় মেয়াদের বেশী ক্ষমতায় থাকিতে পারিলেন না। এই ধর্মীয় অনুভূতির স্ফুলিঙ্গ পরিবারের ধার্মিক ব্যক্তি থেকে শুরু করিয়া শৈশব পার হওয়া কিশোরদের কচি হৃদয়ও আক্রমন করলো। সেই সময় আমাদের বিদ্যালয়ে একদল ফেরিওয়ালা অনুভূতিকে কিশোরকন্ঠ নাম দিয়া স্কুলে স্কুলে কুইজ প্রতিযোগিতা করিয়া বিক্রি করিতে শুরু করিল। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামাজিক সুবোধ পরিচয়, অধিকাংশই নির্ঝঞ্ঝাট থাকিতে ভালোবাসেন, ধার্মিক সাধু এমন মানসিকতায় তাহারা এইসব কুইজের ব্যাপারে কর্নপাত করিলেন না। বোধদয় হইলো তখন একসাথে ষষ্ঠজন ছাত্র বিদ্যালয় আসার নাম করিয়া নিখোজ হইয়া গেল যখন। তাহারা ইসলামের পথে জিহাদ করিতে এগোইতেছে বলিয়া মুঠোফোনে জানাইলে সকলের পিতার বুক গর্বে ফুলিয়া ঊঠিল। অবশেষেঃ বীনার মর্ম ভেদিয়া আফগানিস্থানগামী ট্রলার মিস করিয়া তথাপি বিদ্যালয়ের তোরজোরে পুলিশের হাতে ধরা পড়িয়া পতেঙ্গা বন্দর হইতে জেহাদী সৈনিকেরা সদর্পে ফেরত আসিলো। আর্থিক কারনে পিতার পকেট, মায়ের পার্স ফাকা করিলেও ছিচকে চোর অপবাদ না দিয়া তাহাদের নিয়া চারিদিকে "ব্রাভো ব্রাভো" শব্দাবলী উচ্চারিত হইতে লাগিলো। পাড়া মহল্লায় তৌহিদি জনতা বেঙ্গল টাইগার জন্তু উপাধি দিয়া পিঠ চাপড়াইয়া দিলেন।
সময় গিয়াছে,নেশা অনন্তকাল থাকেনা । তাই বাস্তবতার ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পাইলো। খেজুর পাতার চাটাই হইতে পা ফসকাইয়া আজ জিহাদী সৈনিকের অনেকেই সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা হইতে বঞ্চিত । আবার অনেকেই পূর্বের ধুলিকর্দমে চেতিয়া উঠিয়া বিভিন্ন মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্টীর সহিত সম্পৃক্ত হইয়াছে। ধর্মের সেবকর্মের ভিত্তিতে একটি সফটওয়্যার ফার্মে নিযুক্ত হইবার পর অ্যানোমিয়াসের মত হ্যাকার গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত হইয়া জার্মান-আমেরিকা-লন্ডন-সিরিয়া-পাকিস্থান ভ্রমন করিবার ফ্রি সু্যোগ পাইতেছে। আমি ঘষেটি মাতার বিধর্মী হীরকসন্তান বলিয়া এই ফার্মে যুক্ত হইতে না পারিয়া ডুকরাইয়া উঠি। আবার বেনামে সিভি প্রদান করিয়া সুযোগ পাইয়া দিন দশেকে নাসিকা ভাঙিয়া যা বুজিবার বুঝিয়া লইলাম। দিন দশেকে বুঝা ওমর খলিফা সুফীদের এইসব সফটওয়্যার ফার্মের বাহ্যিক কার্যক্রমের আড়ালে কতটা সাইবার অপরাধ চলমান তাহা আমাদের ডিজিটাল প্রশাসন দশ বছরেই বুঝিতে পারিল না, পারিবেও না। তবে পাব্লিক প্রশাসন সকলেই ইহা বুঝে এইসব অপরাধ রোধে খেয়ালিপনায় মজিয়া ৫৭, ৫৪, ৫৩ সহ কিছু ধারা উদ্ভব হইয়াছে।
শেষ লাইনটি পড়ে যদি আপনার আক্কেল গুড়ুম হইয়া যায়, তাহলে ধরে নিতে বাধ্য হইবেন এই দেশে আপনি ভুল করে একশ বছর অগ্রসর করিয়া ফেলাইয়াছেন! পৃথিবীর আর কোন দেশের দণ্ডবিধিতে এই একবিংশ শতাব্দে এমন চিত্তাকর্ষক দ্বিতীয় কোন ধারা খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। কেন চিত্তাকর্ষক সেই প্রসঙ্গে নাহি গেলাম বরং যে অপরাধের শাস্তির জন্যে এই ধারাটি বরাদ্ধ সেই অপরাধটি কারা করিতেছে তাই লইয়া একটু কর্নপাত করিতেছিলাম।
আঘাতহীন অনুভূতি
ভাবছিলাম একটি নিরপেক্ষ, অরাজনৈতিক ও অনুভূতিতে আঘাতহীন লিখা লিখবো যাতে তেলে তেলতেলে আঘাতপ্রবন ব্যাক্তিরও বিন্দুমাত্র আঘাত না লাগে। বর্তমানে প্রগতিশীল লেখকরাও " নাস্তিকরা কেন কেবল ধর্ম আর ঈশ্বর নিয়া পড়িয়া থাকে?"ফেবু অনেক যুক্তিবাদীদের যুক্তি কেড়ে নেয়! আমরা ভুলে যাই যুক্তি বুদ্ধি আমাদের নিজেদের আছে! পুনশ্চঃ মানসিক ব্যাধির জগতে কিছুদিন পূর্বে শিলং-এ নতুন তত্ব আবিস্কার হইয়াছে। মানসিক রোগীর কিছুই মনে রাখতে না পারিলেও স্ত্রীর ফোন নাম্বার মনে থাকে। ইহা একটি বিবাহতান্ত্রিক অনুভূতি হইতে পারে !!
আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে।
বিভিন্ন অনুভূতির বিস্তর ক্ষেত্রে পেলেও ধর্মানুভূতির কোনো সঙজ্ঞায়ন করা হয় নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধর্মীয় অনুভূতি প্রতিটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষেরই আছে। যদি সে অর্থেই আসাদকে গ্রেফতার করা হয়, তবে কেনো কিছুদিন আগে নৃশংসতায় ভাঙা মন্দির, পোড়া মসজিদ, ছিন্নভিন্ন প্রতিমা ধর্মানুভূতিকে আঘাত করবে না? তবে কেনো তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিলো না? আপনি শুনতে না চাইলেও আপনাকে শুনতে হবে কারন এটা ধর্মানুভূতি নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বক্তব্য। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে ‘ধর্মানুভূতি’ এবং ‘ভাবমূর্তি’ দুইটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হয়, কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ভাবমূর্তি’ বিপন্ন হয়। এবং সব সরকারের আমলেই বিপন্ন হয় আমাদের মতিষ্ক, আমাদের আত্ম-পরিচয়, বাঙালি হিশেবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের মহাকাব্যিক আখ্যান, আমাদের সংসদ- লুই কানের অমোঘ সৃষ্টি, আমাদের জাতীয়তাবোধ, বঙ্গবন্ধু- আমাদের নেতা, জয় বাঙলা- আমাদের স্লোগান এবং আমরা, বাঙালীরা। বড় বিপন্ন বোধ করি চব্বিশ ঘণ্টা, সাত দিন, ত্রিশ দিন তিনশত পঁয়ষট্টি দিন.. ..এবং এইভাবে বিপন্ন বোধ করছি দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর। যদিও ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হবার বিরুদ্ধে আজ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ব্লগারকে। এতে অনেকেই খুশি হয়েছেন, বিজয় মিছিলের খবর যদিও মেলেনি। তবুও শুনতে পাই, নখ-দন্ত বিকশিত শকুনেরা না কি তৃপ্তি লাভ করেছে। উচ্চমার্গীয় সারমেয়রা না কি এটাকেও মনে করছে একটা ‘আই ওয়াশ’। সত্যি! আজকাল সারমেয়-শকুনদের তৃপ্ত হবার উপাদান বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনাটিতে স্বস্তি পাই নি আমি, আর আমার টেবিল জুড়ে ধ্রুবতারার মতোন জ্বলতে থাকা একটি বই। বইটির নাম- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা দুজন মিলে বেশ বুঝেছি যে- এদেশে এখন সবাই অস্থির; এখানে নাস্তিকরা ভালো নেই, সংশয়বাদীরা ভালো নেই, আস্তিকরা ভালো নেই, নিবিড় ধর্মানুরাগীরাও ভালো নেই। সবাই অস্থির হয়ে আছেন, কারণ নাস্তিক ব্যাতীত সবাই চাই আস্তিকতার মোড়কে নিরাপত্তার সনদ জাহির করতে। আস্তিকদের কাউকে দেখি নি ইমাম গাজ্জালী’র দর্শন নিয়ে কোনো লেখা তৈরি করতে, গৌতম বুদ্ধের জীবনীর আলোকে একটি অসাধারণ না হোক, সাধারণ ছোটোগল্প লিখতে, ইসলামের শেষ নবী এবঙ দার্শনিক মোহাম্মদের বিদায় হজ্বের ভাষণের দার্শনিক আলোচনা কিঙবা কোরআনের কাব্যিক মাধুর্য নিয়ে কোনো লেখা আমার চোখে পড়ে না, ব্লগে কিংবা ফেসবুকে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের আদেশটি পড়া হলে দেখা যায়, সেখানে ‘ধর্মানুভূতির’ কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কেবল এক চোখ দিয়ে দেখা ‘ধর্মানুভূতি’। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় রাষ্ট্রযন্ত্র ধর্ম বলতে কেবল ইসলাম ধর্মকেই বোঝে এবং সেই মর্মেই আদেশটি দেয়া হয়েছে। তাহলে ‘ধর্মানুভূতি’ শব্দটির ব্যবহার কেনো? ফেসবুক খুঁজলে দেখা যাবে- সেখানে অজস্র পেইজ রয়েছে যেগুলো ক্যাথলিক ধর্মানুসারীদের কটাক্ষ করছে, অনেকগুলোতেই দেখা যাবে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে উপহাস এমনকি যৌন-বিষয়ক গল্পেও তার ব্যবহার করা হচ্ছে; আদালত কী সে বিষয়ে কিছু বলবে না? যদি না বলে, তবে ধরেই নিতে হবে, আদালত কেবল একটি ধর্ম দিয়েই গোটা ‘ধর্মানুভূতির’ কনসেপ্টকে বিচার করতে চাইছে, যেটা ‘ধর্ম’ শব্দটির মূল ভাবগত অর্থের সাথে সাঙঘর্ষিক। আদালত একচোখা আদেশ করেছে, এবঙ আদেশটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তবুও আমরা আইন-আদালতকে সমীহ করি।সম্ভবত আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে।
ফেসবুকে অন্তত একশ পেইজের নাম বলে দেয়া যাবে- যেগুলোর নামই নারীদের জন্যে অপমানজনক। প্রতিমুহূর্তে সেই পেইজগুলোর মাধ্যমে বাঙালি নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অশালীনতা আর অশোভনতা প্রকাশ পায়। এগুলো একদিকে যেমন আমাদের সঙস্কৃতির স্নিগ্ধ প্রদীপে অসুরের বাতাস দিচ্ছে, অন্যদিকে বাঙালি নারীকে উপস্থাপন করছে বিকৃতরূপে। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ওইসব পেইজের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে আরও কিছু পেইজের বক্তব্য, যারা ফটোশপে ছবি সম্পাদনা করে হাস্যকরভাবে স্রষ্টার মাহাত্ম্য বাড়াতে চায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে- যারা ইসলামকে উচ্চ করার নামে বুলি সর্বস্ব পেইজ খুলছে, তারাই আবার ইসলাম-পর্দা-শরীয়তের দোহাই দিয়ে বাঙালি নারীদের অপমানজনক ছবি প্রকাশ করছে এবং অশালীন মন্তব্যও করছে। অথবা ধর্মের চাড়ালরা যখন বাউলের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলে মিছিল করে, তখন বাউল গান প্রেমী বাংলার জনগন 'ইসলাম'কেই তো দোষারোপ করবে, তাই না? এরপরও আপনি যদি এখানেও ইঙ্গ-মার্কিন ষড়যন্ত্র তত্ব খুঁজতে আসেন, তাহলে সেটা কি আপনারই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে না? এবার যদি সমীকরণের বামপক্ষ আর ডানপক্ষ মেলাই, তবে দেখা যাবে, গোটা সমীকরণটা আসলে একটি ধর্ম-কেন্দ্রীক উগ্র-জঙ্গীগোষ্ঠী বা তাদের অন্তর্বাস সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য। হায় গণিত! রাষ্ট্রযন্ত্র সবই বুঝলো, গণিত বুঝলো না। শতাব্দী ভবের পঙত্তিটি যথার্থই মনে হয় " আইনটা এক বিশাল বড় বাড়া, জায়গামত শিথীল বেজায়গায় খাড়া"।
আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক জীবন ব্যাবস্থায় দর্শন ও মানবতা এমনই স্তরে পৌঁছে গেছে, যে প্রাচীন এই ধর্ম নামক অ-ব্যাবস্থা খানায় ধীরে ধীরে ব্যাক্তির ভরসা কমে যাচ্ছে।জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই মানতে পারিনি! কিন্তু অনেকটাই চোখ বন্ধ করে মেনে গেছি! আশা করি আমার উত্তরপুরুষ মানবে না!সেই অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে আসতে সাতচল্লিশ বছরের, এই বাঙলাদেশ, এখন দিকভ্রান্ত এবং মানুষকে প্রতিনিয়ত আরও বিভক্ত দিকভ্রান্ত করে তোলা হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতালাভের লালসায় । যদি এখনই প্রতিরোধ না করেন, যদি এখনও মনে করেন, সামনের আকাশটা নীল- তবে ভুল করছেন, ভুল ভাবছেন। আর যদি না পারেন, দয়া করে নিজের সন্তানদের হত্যা করুন। মানব-মানবীর কোনো অধিকার নেই, জোড়া দেহে শীর্ষ অনুভূতির পরিমলে পরিভ্রমণের ফলস্বরূপ একটি মানবসন্তানকে পৃথিবীতে এনে, অতঃপর তাকে নরককুণ্ডে নিক্ষেপ করবার।
আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে।
বিভিন্ন অনুভূতির বিস্তর ক্ষেত্রে পেলেও ধর্মানুভূতির কোনো সঙজ্ঞায়ন করা হয় নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধর্মীয় অনুভূতি প্রতিটি ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষেরই আছে। যদি সে অর্থেই আসাদকে গ্রেফতার করা হয়, তবে কেনো কিছুদিন আগে নৃশংসতায় ভাঙা মন্দির, পোড়া মসজিদ, ছিন্নভিন্ন প্রতিমা ধর্মানুভূতিকে আঘাত করবে না? তবে কেনো তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কোনো ব্যবস্থা নিলো না? আপনি শুনতে না চাইলেও আপনাকে শুনতে হবে কারন এটা ধর্মানুভূতি নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের বক্তব্য। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনে ‘ধর্মানুভূতি’ এবং ‘ভাবমূর্তি’ দুইটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হয়, কোনো সরকারের আমলে আমাদের ‘ভাবমূর্তি’ বিপন্ন হয়। এবং সব সরকারের আমলেই বিপন্ন হয় আমাদের মতিষ্ক, আমাদের আত্ম-পরিচয়, বাঙালি হিশেবে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামের মহাকাব্যিক আখ্যান, আমাদের সংসদ- লুই কানের অমোঘ সৃষ্টি, আমাদের জাতীয়তাবোধ, বঙ্গবন্ধু- আমাদের নেতা, জয় বাঙলা- আমাদের স্লোগান এবং আমরা, বাঙালীরা। বড় বিপন্ন বোধ করি চব্বিশ ঘণ্টা, সাত দিন, ত্রিশ দিন তিনশত পঁয়ষট্টি দিন.. ..এবং এইভাবে বিপন্ন বোধ করছি দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছর। যদিও ‘ধর্মানুভূতি’ বিপন্ন হবার বিরুদ্ধে আজ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে ব্লগারকে। এতে অনেকেই খুশি হয়েছেন, বিজয় মিছিলের খবর যদিও মেলেনি। তবুও শুনতে পাই, নখ-দন্ত বিকশিত শকুনেরা না কি তৃপ্তি লাভ করেছে। উচ্চমার্গীয় সারমেয়রা না কি এটাকেও মনে করছে একটা ‘আই ওয়াশ’। সত্যি! আজকাল সারমেয়-শকুনদের তৃপ্ত হবার উপাদান বেড়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ঘটনাটিতে স্বস্তি পাই নি আমি, আর আমার টেবিল জুড়ে ধ্রুবতারার মতোন জ্বলতে থাকা একটি বই। বইটির নাম- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা দুজন মিলে বেশ বুঝেছি যে- এদেশে এখন সবাই অস্থির; এখানে নাস্তিকরা ভালো নেই, সংশয়বাদীরা ভালো নেই, আস্তিকরা ভালো নেই, নিবিড় ধর্মানুরাগীরাও ভালো নেই। সবাই অস্থির হয়ে আছেন, কারণ নাস্তিক ব্যাতীত সবাই চাই আস্তিকতার মোড়কে নিরাপত্তার সনদ জাহির করতে। আস্তিকদের কাউকে দেখি নি ইমাম গাজ্জালী’র দর্শন নিয়ে কোনো লেখা তৈরি করতে, গৌতম বুদ্ধের জীবনীর আলোকে একটি অসাধারণ না হোক, সাধারণ ছোটোগল্প লিখতে, ইসলামের শেষ নবী এবঙ দার্শনিক মোহাম্মদের বিদায় হজ্বের ভাষণের দার্শনিক আলোচনা কিঙবা কোরআনের কাব্যিক মাধুর্য নিয়ে কোনো লেখা আমার চোখে পড়ে না, ব্লগে কিংবা ফেসবুকে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের আদেশটি পড়া হলে দেখা যায়, সেখানে ‘ধর্মানুভূতির’ কথা বলা আছে। কিন্তু সেটা কেবল এক চোখ দিয়ে দেখা ‘ধর্মানুভূতি’। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় রাষ্ট্রযন্ত্র ধর্ম বলতে কেবল ইসলাম ধর্মকেই বোঝে এবং সেই মর্মেই আদেশটি দেয়া হয়েছে। তাহলে ‘ধর্মানুভূতি’ শব্দটির ব্যবহার কেনো? ফেসবুক খুঁজলে দেখা যাবে- সেখানে অজস্র পেইজ রয়েছে যেগুলো ক্যাথলিক ধর্মানুসারীদের কটাক্ষ করছে, অনেকগুলোতেই দেখা যাবে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে উপহাস এমনকি যৌন-বিষয়ক গল্পেও তার ব্যবহার করা হচ্ছে; আদালত কী সে বিষয়ে কিছু বলবে না? যদি না বলে, তবে ধরেই নিতে হবে, আদালত কেবল একটি ধর্ম দিয়েই গোটা ‘ধর্মানুভূতির’ কনসেপ্টকে বিচার করতে চাইছে, যেটা ‘ধর্ম’ শব্দটির মূল ভাবগত অর্থের সাথে সাঙঘর্ষিক। আদালত একচোখা আদেশ করেছে, এবঙ আদেশটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। তবুও আমরা আইন-আদালতকে সমীহ করি।সম্ভবত আইন আদালত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র স্থান, যেখানে কোনো রোম্যান্টিকতা নেই, থরোথরো কেঁপে ওঠার মতো শিহরণ নেই, তারপরও মানুষ তার খবর রাখে।
ফেসবুকে অন্তত একশ পেইজের নাম বলে দেয়া যাবে- যেগুলোর নামই নারীদের জন্যে অপমানজনক। প্রতিমুহূর্তে সেই পেইজগুলোর মাধ্যমে বাঙালি নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অশালীনতা আর অশোভনতা প্রকাশ পায়। এগুলো একদিকে যেমন আমাদের সঙস্কৃতির স্নিগ্ধ প্রদীপে অসুরের বাতাস দিচ্ছে, অন্যদিকে বাঙালি নারীকে উপস্থাপন করছে বিকৃতরূপে। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে, ওইসব পেইজের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে আরও কিছু পেইজের বক্তব্য, যারা ফটোশপে ছবি সম্পাদনা করে হাস্যকরভাবে স্রষ্টার মাহাত্ম্য বাড়াতে চায়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে- যারা ইসলামকে উচ্চ করার নামে বুলি সর্বস্ব পেইজ খুলছে, তারাই আবার ইসলাম-পর্দা-শরীয়তের দোহাই দিয়ে বাঙালি নারীদের অপমানজনক ছবি প্রকাশ করছে এবং অশালীন মন্তব্যও করছে। অথবা ধর্মের চাড়ালরা যখন বাউলের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলে মিছিল করে, তখন বাউল গান প্রেমী বাংলার জনগন 'ইসলাম'কেই তো দোষারোপ করবে, তাই না? এরপরও আপনি যদি এখানেও ইঙ্গ-মার্কিন ষড়যন্ত্র তত্ব খুঁজতে আসেন, তাহলে সেটা কি আপনারই নির্বুদ্ধিতার পরিচয় হবে না? এবার যদি সমীকরণের বামপক্ষ আর ডানপক্ষ মেলাই, তবে দেখা যাবে, গোটা সমীকরণটা আসলে একটি ধর্ম-কেন্দ্রীক উগ্র-জঙ্গীগোষ্ঠী বা তাদের অন্তর্বাস সংগঠনগুলোর মূল বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্য। হায় গণিত! রাষ্ট্রযন্ত্র সবই বুঝলো, গণিত বুঝলো না। শতাব্দী ভবের পঙত্তিটি যথার্থই মনে হয় " আইনটা এক বিশাল বড় বাড়া, জায়গামত শিথীল বেজায়গায় খাড়া"।
আজকের এই আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক জীবন ব্যাবস্থায় দর্শন ও মানবতা এমনই স্তরে পৌঁছে গেছে, যে প্রাচীন এই ধর্ম নামক অ-ব্যাবস্থা খানায় ধীরে ধীরে ব্যাক্তির ভরসা কমে যাচ্ছে।জীবনে চলার পথে অনেক কিছুই মানতে পারিনি! কিন্তু অনেকটাই চোখ বন্ধ করে মেনে গেছি! আশা করি আমার উত্তরপুরুষ মানবে না!সেই অন্ধকার থেকে বের হয়ে আসতে আসতে সাতচল্লিশ বছরের, এই বাঙলাদেশ, এখন দিকভ্রান্ত এবং মানুষকে প্রতিনিয়ত আরও বিভক্ত দিকভ্রান্ত করে তোলা হচ্ছে রাষ্ট্র ক্ষমতালাভের লালসায় । যদি এখনই প্রতিরোধ না করেন, যদি এখনও মনে করেন, সামনের আকাশটা নীল- তবে ভুল করছেন, ভুল ভাবছেন। আর যদি না পারেন, দয়া করে নিজের সন্তানদের হত্যা করুন। মানব-মানবীর কোনো অধিকার নেই, জোড়া দেহে শীর্ষ অনুভূতির পরিমলে পরিভ্রমণের ফলস্বরূপ একটি মানবসন্তানকে পৃথিবীতে এনে, অতঃপর তাকে নরককুণ্ডে নিক্ষেপ করবার।
একটা ফিউচার ফ্যান্টাসী
ধর্মের গন্ধ লেগে আছে এমন কিছু নিয়ে লিখতে গেলে কেমন জানি পেটে গুড়গুড় করে উঠে। অনেকটা হেরাফেরি সিনেমায় সরল সিধা সুনীল শেঠী কোনো গন্ডগোলে পড়ার আগে তার কানে গান বেজে উঠতো, আমারো তেমন। রাজশাহীর একটা কথা আছে - কারে লাইড়তে কাকে লাইড়ছো মামুর ব্যাটা !! আমার মনে এমন সাবধানবাণী বাজে। স্যাটায়ার করার জন্য ধর্মীয় উপকথা খুব রিস্কি এলিমেন্ট। ট্রাই নাইট্রো গ্লিসারিনের মত, সামান্যতেই দুম করে বার্স্ট !! আর মাশাল্লাহ, আমাদের দেশ তো এখন ধর্মের বীজতলা অনেক আগে থেকে বানানো। কে কোন সময় কুচ করে গলাটা নামায়ে ফেলে বাকি হাড্ডি হাড্ডি শরীরটা পুড়ায়ে ফেলে দেশী মুরগীর টিক্কা কাবাব বলে বেচে দিবে এর নাই ঠিক।
আমি একটা ফিউচার ফ্যান্টাসী বলি বরং। যারা বেহেস্ত-দোজখ, স্বর্গ-নরক, আদি-অন্ত অনন্ত নিয়া ভাবেন তারা ইন্টারেস্টিং ভাববেন। ভবিষ্যতের সাথে সামান্য যন্ত্রপাতি আর গণিত মিশাইতে পারলে, গল্পটাকে সায়েন্স ফিকশানই বলা যাইতো। কিন্তু এই গল্পে স্রষ্টা আছে, তবে তা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের স্রষ্টা না। তাই গল্পটাকে ফ্যান্টাসীর গল্পই বলি।
পৃথিবী ধ্বংস হয়েছে। স্রষ্টা মোটামুটি সন্তুষ্ট। মানুষ বানানো এবং তাকে পৃথিবীতে পাঠানোর এক্সপেরিমেন্ট মোটের উপর খারাপ হয় নাই। বেশ এক্সাইটিং রেজাল্ট আসছে। মনে করলেই স্রষ্টার ভাল্লাগে। নাহ, জিনিস খারাপ বানান নাই । বহু কাহিনী করে, স্রষ্টার নিষেধ না মেনে এ্যাপলের কঞ্জুমার হয়ে গেল ( আইফোন এক্স এর লোভে না কিন্তু ) স্রষ্টা তাদের গেট লস্ট বলে এক্সপেল করে প্ল্যানেট আর্থে পাঠায়ে দিলেন। এর পর সাড়ে চার বিলিয়ন বয়সের সেই প্ল্যানেটে স্রষ্টার বানানো সেই মানুষ কত কী-ই না করলো। পেট আর চ্যাট এই দুই এর পীছে এত বিভোর হয়ে গেল সেই প্রজাতিটা যে প্রেডিক্টেবল ধংস ডেকেই আনলো একসময়। তবে এর মধ্যে এক্সেপশান ছিল। কনশাসনেস বলে একটা জিনিস স্রষ্টা দিয়ে দিয়েছিলেন এই প্রজাতিটার মধ্যে। সেটার যে কত দারুন ইউজ দেখালো এই প্রজাতিটা। নিজের কাজে স্রষ্টার মন ভাল হয়ে যায়। যাক এখন হাতের কাজ শেষ করতে হবে, বিচার টিচার করে দুষ্ট মানুষ আর ভাল মানুষ কে যার যার প্রাপ্য বুঝায়ে দিয়ে হেভেন আর হেলে একোমোডেট করে দিবেন।
বিচার শেষ। কিছুদিন পর স্রষ্টার আবার মনে হয়, ধুর, কাজকর্ম নাই এভাবে হয় নাকি ? গ্রেট ইউনিভার্সের একমাত্র অলমাইটি তিনি। ছোট ছোট সৃষ্টি, বানায়ে বিলীন করে আবার না বানালে সময় কাটে না তো। এই মানুষ বানানোর আগে ফায়ার ফর্ম দিয়ে ফাইভ ডাইমেনশনাল ক্রিয়েচার "জীন" বানানোর এক্সপেরিমেন্টটাও বেশ ভেজাইল্লা ছিল। আগেরবারের ফায়ার স্পেশিস খুব বেয়াড়া চীজ ছিল। তাই পরের বার মডেল বানানোর সময় ফায়ার ইউজ না করে মাটি ইউজ করসেন। ফায়ার স্পেশিস বিগড়াইলে খুব খতরনাক হয়। ভেজাল করে। তার চেয়ে মাটি মুটি দিয়ে বানানো সেইফ।প্রতিবার এক্সপেরিমেন্ট থেকে পরের ব্যাচে তিনি কিছু কারেকশান করে নেন। সেটার রেজাল্ট এক্সপেটেশান মীট করে কিনা দেখার অপেক্ষাটায় বেশ আরাম আছে কিন্তু। স্রষ্টা ছাড়া এমন সুখ পাবার সুযোগ তো আর কারো নাই। স্রষ্টার হঠাত মনে হল, এক কাজ করলে কেমন হয় ? গতবারের এক্সপেরিমেন্টকে রিএ্যারেঞ্জ করে আবার রান করলে কেমন হয়?
যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ।
আবার একটা প্ল্যানেট বানানো হল। আগুন দিয়ে, বাতাস দিয়ে, পানি দিয়ে সেটাকে টেম্পার করা হল। সব রকম সাপোর্টিভ স্পেশিস দিয়ে সেই প্ল্যানেট ভরা হল। এবং ফাইনালী সেই বিশেষ স্পেশিস "হিউম্যান" আবার বানানো হল। তবে এবার বুকের হাড্ডি ফাড্ডি না। স্রষ্টা খুব কায়দা করে আগেরবারের মূল সমস্যাটা এবার ক্র্যাক করে দিলেন। স্পেশিস টা আগের মতই হল। দুইটা ফর্ম। মেইল আর ফিমেল। রি প্রোডাকশান প্রসেসের জন্য মেইল বডি স্পার্ম ক্যারী করবে । আর ফিমেল বডি ওভারী। তবে আগেরবারের সব গ্যাঞ্জামের সুত্রপাত যেই স্পার্ম এর থলি থেকে, সেই বলজোড়া , যা আগের বার মানবজাতীর এক অংশের সব গর্ব আর দাপটের প্রতিক হয়ে দাড়াইছিলো, সেগুলাকে প্রিইন্সটল করে দিলেন না। আগের বার হাড্ডি ম্যাচ করা থিউরী কাজ করে নাই এটা ইনভিজিবল বা হিডেন ছিল বলে, এইবার সেরকম কিছুর চান্সই দেয়া যাবে না। এইবার এ্যাডাম ভারশান ২.০ এর মেশিন তিনি ধরায়ে দিলেন ঈভ ভারশান ২.০ এর হাতে। ইন্সট্রাকশানও দিলেন খুবই ক্লিয়ার । ভারশান ২.০ মডেলের জোড়াকে এলাইভ করে দিয়ে স্রষ্টা গলা খাকারী দিয়ে পরিষ্কার করে বল্লেন -
শোনো বালক ও বালিকা,
তোমাদের যা দরকার সব সহ তোমাদের পৃথিবীতে পাঠাচ্ছি। তোমরা অনেক বড় উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবা, তুচ্ছ মোহময় চিন্তায় নিজেকে করাপ্ট করে ফেইলো না। আর ডেভিল নাস্তিক মাদার ফাকার যতই বুঝাক, নিজের ইন্সটিংক্ট বুইঝা কাজ করবা। কনশাসনেস কাজে লাগাবা। এত কিছু বলতেসি, বাট আই নো ইউ গাইজ উইল ফরগেট সুন, তাই ফর দা সিকিউরিটি রিজন এ্যাডাম ২.০ এর মেশিন থাকবে ঈভ এর কাছে। যখন এ্যাডাম ঈভকে রিয়েলাইজ করাইতে সক্ষম হবে যে সে মেশিন আর মেশিনের বিয়ারিং ডিজার্ভ করে, অনলি দেন, ঈভ তাকে মেশিন ইন্সটল করে দিবে। তারপর রিপ্রোডাকশান বা প্লেজার পারপাস মেশিন রান করা যাবে। আর এক মেশিন একাধিক ঈভ রিসিভ ও করবে না, কোড না মিললে মেশিন শুধু ইউরিনেশান পারপাসে হ্যাং হয়ে থাকবে। বাই দা ওয়ে, লাস্টবার এডাম এর বংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করসে প্ল্যান্টদের। নানা উসিলায় গাছ কাটসো, হিসাব ছাড়া, এই বানাবো, ওই বানাবো, রাস্তা বানাবো। আর প্রসেস ইজি বলে যেখানে সেখানে, রাস্তার পাশে দেয়াল পেলেই মুতসো। তাই এইবার তোমাদের ইউরিন, প্ল্যান্ট ফ্রেন্ডলি করে দিলাম। যেখানেই মুতবা, গাছ গজাবে। এই নিয়ম এ্যাডাম পরবর্তি সব মেইল স্পেশিস এর জন্য প্রযোজ্য হবে। ওকে ? লাস্ট টাইম প্রি-ইনস্টল্ড মেশিন নিয়া খুব ক্যাচাল করসো তোমরা। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ক্যাওস দিস টাইম ইন দিস ইশু।
শয়তান দুরে বসে চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো কঠিন প্যারাডক্স হয়ে গেল। ক্যামনে কি ? মেশিনই যদি না চলবে তাহলে ক্যাওস লাগানোর কী পাওয়া যাবে কোথায় ? শুধু পেটের খিদাকে উপলক্ষ করে এই ছোট্ট একটা প্ল্যানেটে ২০৮ দেশ আর ৬০০ কোটি মানুষের মাঝে অস্তিত্ব রাখমু কেম্নে ? আর বিলিয়ন বিলিয়ন স্পেসিমেন্ট এর মধ্যে ক্রাইম রেট স্টেডি রাখার ও তো একটা চ্যালেঞ্জ আছে। ধুর এইডা কিছু হইল ? মালই যদি মাথায় না উঠাইতে পারলাম তাইলে শয়তানীটা করমু কেমনে ?
হঠাত শয়তান খেয়াল করলো তার মাথায় একটা অদ্ভূত মেশিন ইন্সটল্ড হয়ে গেল। সে দেখলো তার মাথায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির চিন্তা সিষ্টেম সফটওয়্যারের মত ইনস্টলড। সে ভাবলো যেহেতু আমি স্রষ্টার সিষ্টেমে চলি সেহেতু দুষ্টামি করাই আমার ধর্ম। আর সেই ধর্মের বাহানায়, মাটির পুতুলের পুরুষ মূর্তি, নানা রকম ফায়দা ফিকির বের করে এর নারী মূর্তি অংশকে জব্দ করে রাখলো। বলা যায় এর আলটিমেট ডেসটিনেশানের মানেই ঘুরায়ে ফেলল কয়েক বার। মাটির পুতুল, পুরুষ মূর্তি, নানা রকম ফায়দা ফিকির, ইবাদত বন্দেগী বের করে নারী অংশকে জব্দ করে রাখলো। সাথে দিল প্লেজার সিকিং এর ধান্ধা। বলা যায় এর আলটিমেট ডেসটিনেশানের মানেই ঘুরায়ে ফেলল । আর এইগুলার মার্কেটিং ইউনিক। আবার ভাবলো তয় স্রষ্টার মহাগ্রন্থগুলা কী ? কেন আইলো ? এইটা দিয়া কি করুম; আবার ভাবলো আমার লাইগ্যাই কি আইলো ?
দুর থেকে স্রষ্টার হাসি শোনা গেল।
ডেভিল, উত্তর খুইজা লাভ নাই, তোমার মেশিন অটোমেটেড; ইয়্যুর থিঙ্কিং ইজ অলওয়েজ অন ইয়্যুর রাইট ট্র্যক। তোমার কোনো ম্যাচ নাই। তুমি নিজেই প্লাগ, নিজেই সকেট। এপ্লাই অন ইউরসেলফ।
আমি একটা ফিউচার ফ্যান্টাসী বলি বরং। যারা বেহেস্ত-দোজখ, স্বর্গ-নরক, আদি-অন্ত অনন্ত নিয়া ভাবেন তারা ইন্টারেস্টিং ভাববেন। ভবিষ্যতের সাথে সামান্য যন্ত্রপাতি আর গণিত মিশাইতে পারলে, গল্পটাকে সায়েন্স ফিকশানই বলা যাইতো। কিন্তু এই গল্পে স্রষ্টা আছে, তবে তা নির্দিষ্ট কোনো ধর্মের স্রষ্টা না। তাই গল্পটাকে ফ্যান্টাসীর গল্পই বলি।
পৃথিবী ধ্বংস হয়েছে। স্রষ্টা মোটামুটি সন্তুষ্ট। মানুষ বানানো এবং তাকে পৃথিবীতে পাঠানোর এক্সপেরিমেন্ট মোটের উপর খারাপ হয় নাই। বেশ এক্সাইটিং রেজাল্ট আসছে। মনে করলেই স্রষ্টার ভাল্লাগে। নাহ, জিনিস খারাপ বানান নাই । বহু কাহিনী করে, স্রষ্টার নিষেধ না মেনে এ্যাপলের কঞ্জুমার হয়ে গেল ( আইফোন এক্স এর লোভে না কিন্তু ) স্রষ্টা তাদের গেট লস্ট বলে এক্সপেল করে প্ল্যানেট আর্থে পাঠায়ে দিলেন। এর পর সাড়ে চার বিলিয়ন বয়সের সেই প্ল্যানেটে স্রষ্টার বানানো সেই মানুষ কত কী-ই না করলো। পেট আর চ্যাট এই দুই এর পীছে এত বিভোর হয়ে গেল সেই প্রজাতিটা যে প্রেডিক্টেবল ধংস ডেকেই আনলো একসময়। তবে এর মধ্যে এক্সেপশান ছিল। কনশাসনেস বলে একটা জিনিস স্রষ্টা দিয়ে দিয়েছিলেন এই প্রজাতিটার মধ্যে। সেটার যে কত দারুন ইউজ দেখালো এই প্রজাতিটা। নিজের কাজে স্রষ্টার মন ভাল হয়ে যায়। যাক এখন হাতের কাজ শেষ করতে হবে, বিচার টিচার করে দুষ্ট মানুষ আর ভাল মানুষ কে যার যার প্রাপ্য বুঝায়ে দিয়ে হেভেন আর হেলে একোমোডেট করে দিবেন।
বিচার শেষ। কিছুদিন পর স্রষ্টার আবার মনে হয়, ধুর, কাজকর্ম নাই এভাবে হয় নাকি ? গ্রেট ইউনিভার্সের একমাত্র অলমাইটি তিনি। ছোট ছোট সৃষ্টি, বানায়ে বিলীন করে আবার না বানালে সময় কাটে না তো। এই মানুষ বানানোর আগে ফায়ার ফর্ম দিয়ে ফাইভ ডাইমেনশনাল ক্রিয়েচার "জীন" বানানোর এক্সপেরিমেন্টটাও বেশ ভেজাইল্লা ছিল। আগেরবারের ফায়ার স্পেশিস খুব বেয়াড়া চীজ ছিল। তাই পরের বার মডেল বানানোর সময় ফায়ার ইউজ না করে মাটি ইউজ করসেন। ফায়ার স্পেশিস বিগড়াইলে খুব খতরনাক হয়। ভেজাল করে। তার চেয়ে মাটি মুটি দিয়ে বানানো সেইফ।প্রতিবার এক্সপেরিমেন্ট থেকে পরের ব্যাচে তিনি কিছু কারেকশান করে নেন। সেটার রেজাল্ট এক্সপেটেশান মীট করে কিনা দেখার অপেক্ষাটায় বেশ আরাম আছে কিন্তু। স্রষ্টা ছাড়া এমন সুখ পাবার সুযোগ তো আর কারো নাই। স্রষ্টার হঠাত মনে হল, এক কাজ করলে কেমন হয় ? গতবারের এক্সপেরিমেন্টকে রিএ্যারেঞ্জ করে আবার রান করলে কেমন হয়?
যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ।
আবার একটা প্ল্যানেট বানানো হল। আগুন দিয়ে, বাতাস দিয়ে, পানি দিয়ে সেটাকে টেম্পার করা হল। সব রকম সাপোর্টিভ স্পেশিস দিয়ে সেই প্ল্যানেট ভরা হল। এবং ফাইনালী সেই বিশেষ স্পেশিস "হিউম্যান" আবার বানানো হল। তবে এবার বুকের হাড্ডি ফাড্ডি না। স্রষ্টা খুব কায়দা করে আগেরবারের মূল সমস্যাটা এবার ক্র্যাক করে দিলেন। স্পেশিস টা আগের মতই হল। দুইটা ফর্ম। মেইল আর ফিমেল। রি প্রোডাকশান প্রসেসের জন্য মেইল বডি স্পার্ম ক্যারী করবে । আর ফিমেল বডি ওভারী। তবে আগেরবারের সব গ্যাঞ্জামের সুত্রপাত যেই স্পার্ম এর থলি থেকে, সেই বলজোড়া , যা আগের বার মানবজাতীর এক অংশের সব গর্ব আর দাপটের প্রতিক হয়ে দাড়াইছিলো, সেগুলাকে প্রিইন্সটল করে দিলেন না। আগের বার হাড্ডি ম্যাচ করা থিউরী কাজ করে নাই এটা ইনভিজিবল বা হিডেন ছিল বলে, এইবার সেরকম কিছুর চান্সই দেয়া যাবে না। এইবার এ্যাডাম ভারশান ২.০ এর মেশিন তিনি ধরায়ে দিলেন ঈভ ভারশান ২.০ এর হাতে। ইন্সট্রাকশানও দিলেন খুবই ক্লিয়ার । ভারশান ২.০ মডেলের জোড়াকে এলাইভ করে দিয়ে স্রষ্টা গলা খাকারী দিয়ে পরিষ্কার করে বল্লেন -
শোনো বালক ও বালিকা,
তোমাদের যা দরকার সব সহ তোমাদের পৃথিবীতে পাঠাচ্ছি। তোমরা অনেক বড় উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবা, তুচ্ছ মোহময় চিন্তায় নিজেকে করাপ্ট করে ফেইলো না। আর ডেভিল নাস্তিক মাদার ফাকার যতই বুঝাক, নিজের ইন্সটিংক্ট বুইঝা কাজ করবা। কনশাসনেস কাজে লাগাবা। এত কিছু বলতেসি, বাট আই নো ইউ গাইজ উইল ফরগেট সুন, তাই ফর দা সিকিউরিটি রিজন এ্যাডাম ২.০ এর মেশিন থাকবে ঈভ এর কাছে। যখন এ্যাডাম ঈভকে রিয়েলাইজ করাইতে সক্ষম হবে যে সে মেশিন আর মেশিনের বিয়ারিং ডিজার্ভ করে, অনলি দেন, ঈভ তাকে মেশিন ইন্সটল করে দিবে। তারপর রিপ্রোডাকশান বা প্লেজার পারপাস মেশিন রান করা যাবে। আর এক মেশিন একাধিক ঈভ রিসিভ ও করবে না, কোড না মিললে মেশিন শুধু ইউরিনেশান পারপাসে হ্যাং হয়ে থাকবে। বাই দা ওয়ে, লাস্টবার এডাম এর বংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করসে প্ল্যান্টদের। নানা উসিলায় গাছ কাটসো, হিসাব ছাড়া, এই বানাবো, ওই বানাবো, রাস্তা বানাবো। আর প্রসেস ইজি বলে যেখানে সেখানে, রাস্তার পাশে দেয়াল পেলেই মুতসো। তাই এইবার তোমাদের ইউরিন, প্ল্যান্ট ফ্রেন্ডলি করে দিলাম। যেখানেই মুতবা, গাছ গজাবে। এই নিয়ম এ্যাডাম পরবর্তি সব মেইল স্পেশিস এর জন্য প্রযোজ্য হবে। ওকে ? লাস্ট টাইম প্রি-ইনস্টল্ড মেশিন নিয়া খুব ক্যাচাল করসো তোমরা। আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি ক্যাওস দিস টাইম ইন দিস ইশু।
শয়তান দুরে বসে চিন্তায় পড়ে গেলো। এতো কঠিন প্যারাডক্স হয়ে গেল। ক্যামনে কি ? মেশিনই যদি না চলবে তাহলে ক্যাওস লাগানোর কী পাওয়া যাবে কোথায় ? শুধু পেটের খিদাকে উপলক্ষ করে এই ছোট্ট একটা প্ল্যানেটে ২০৮ দেশ আর ৬০০ কোটি মানুষের মাঝে অস্তিত্ব রাখমু কেম্নে ? আর বিলিয়ন বিলিয়ন স্পেসিমেন্ট এর মধ্যে ক্রাইম রেট স্টেডি রাখার ও তো একটা চ্যালেঞ্জ আছে। ধুর এইডা কিছু হইল ? মালই যদি মাথায় না উঠাইতে পারলাম তাইলে শয়তানীটা করমু কেমনে ?
হঠাত শয়তান খেয়াল করলো তার মাথায় একটা অদ্ভূত মেশিন ইন্সটল্ড হয়ে গেল। সে দেখলো তার মাথায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির চিন্তা সিষ্টেম সফটওয়্যারের মত ইনস্টলড। সে ভাবলো যেহেতু আমি স্রষ্টার সিষ্টেমে চলি সেহেতু দুষ্টামি করাই আমার ধর্ম। আর সেই ধর্মের বাহানায়, মাটির পুতুলের পুরুষ মূর্তি, নানা রকম ফায়দা ফিকির বের করে এর নারী মূর্তি অংশকে জব্দ করে রাখলো। বলা যায় এর আলটিমেট ডেসটিনেশানের মানেই ঘুরায়ে ফেলল কয়েক বার। মাটির পুতুল, পুরুষ মূর্তি, নানা রকম ফায়দা ফিকির, ইবাদত বন্দেগী বের করে নারী অংশকে জব্দ করে রাখলো। সাথে দিল প্লেজার সিকিং এর ধান্ধা। বলা যায় এর আলটিমেট ডেসটিনেশানের মানেই ঘুরায়ে ফেলল । আর এইগুলার মার্কেটিং ইউনিক। আবার ভাবলো তয় স্রষ্টার মহাগ্রন্থগুলা কী ? কেন আইলো ? এইটা দিয়া কি করুম; আবার ভাবলো আমার লাইগ্যাই কি আইলো ?
দুর থেকে স্রষ্টার হাসি শোনা গেল।
ডেভিল, উত্তর খুইজা লাভ নাই, তোমার মেশিন অটোমেটেড; ইয়্যুর থিঙ্কিং ইজ অলওয়েজ অন ইয়্যুর রাইট ট্র্যক। তোমার কোনো ম্যাচ নাই। তুমি নিজেই প্লাগ, নিজেই সকেট। এপ্লাই অন ইউরসেলফ।
অনুভূতিতে আঘাত পাওয়া হাল আমলের ধর্মীয় ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে।
অনুভূতিতে আঘাত পাওয়া হাল আমলের ধর্মীয় ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। আর এ ফ্যাশনের ডিজাইনার মুসলমান ধর্মের অনুসারী উগ্রবাদী গোষ্টীসমূহ। অন্য ধর্মের দাদারাও কম যান না। ধর্মীয় অনুভূতি জিনিসটি আসলে কি বস্তু? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে আসলে কি হয়? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলে কি তার ধর্ম চুরমার হয়ে যায়? সে আর ধর্মের পথে, সৎ পথে চলতে পারেনা? নাকি তার দৃষ্টি শক্তি, শ্রবন শক্তি চলে যায়, মাথা ঘুরতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের দেশে হাতে গুনে গুনে হলেও বেশ কিছু মানুষের লেখা বিপুল সংখ্যক মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। কেমন আছে তারা? ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবার পর তাদের মধ্যে কতজন পক্ষাঘাত গ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, অঙ্গহানী হয়েছিল ঠিক কতজনের, কতজনকে নিদেন পক্ষে সাইকিয়াট্রিকের চেম্বারে গিয়ে কড়ি খসিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরতে হয়েছে? কতজন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গিয়েছে?
যদি সংবাদ মাধ্যম গুলো টাকা খেয়ে সত্য চেপে না যেত তবে খবরে আসতো, নিশ্চয়ই আসতো আজ নিশিপুর গ্রামের আজমত আলী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। খবরে প্রকাশ থাকে মাঠে খড়ের আাঁটি বাঁধার সময় আচমকাই এই আঘাত আসে এবং সেখানেই তিনি পড়ে গিয়ে গোঙাতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তার মুখে ফ্যাঁপড়া উঠতে শুরু করলে গ্রামবাসী তাকে নিকটস্থ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিংবা ধরুন তুফান শেখের কথা, বাজারে চা খেতে খেতে একটা পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিলেন সেই সময় তার চোখে পড়ে নাস্তিকদের একটা লেখা। লেখার কয়েকলাইন পড়া মাত্র তাঁর ধর্মীয় অনুভূতিতে এত প্রচ- আঘাত লাগে যে তিনি চিৎকার দিয়ে মাটিতে পড়ে যান। কাটা মুরগির মত তিনি ছটফট করতে থাকেন, তখন পার্শ্ববর্তী সহৃদয়রা তাঁকে নিকটস্থ ডিসপেন্সারীতে নিয়ে যায়। অথবা মরিয়ম বেগম, যিনি টিভিতে অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা কোন মেগা সিরিয়াল দেখছিলেন হঠাৎ করেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেয়ে তার হাত থেকে টিভি রিমোট পড়ে যায়। চোখ কপালে তুলে তিনি সোফার উপরেই এলিয়ে পড়েন আর তার মুখ দিয়ে ফেনা কাটতে থাকে। বাড়ীর মেয়েরা কলসি কলসি পানি মাথায় ঢেলেও জ্ঞান ফেরাতে পারেননা। ক্রিকেট খেলছিল স্বপন, সেঞ্চুরী করবার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল সে আচমকা হাত থেকে ব্যাটটা খসে পড়ে, হাঁটু ভেঙ্গে সে পড়ে যায় পিচের ওপর। সবাই ভাবে বল লেগেছে কোথাও কিন্তু না তার কচি তরুণ মনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতেই সে জখম হয়ে পড়ে যায়। তার আর সেঞ্চুরী করা হলোনা। এখন এই আজমত আলী, তুফান শেখ, মরিয়ম বেগম আর স্বপনের পরিবারের উপর নেমে এলো শোকের কালো ছায়া। আজমত আলী খেটে খাওয়া মানুষ ধর্মীয় অনুভ’তিতে আঘাতের ফলে সে পঙ্গু হয়ে পড়ায় আর খাটতে পারেনা। আজমত আলীর পরিবারকে রীতিমত ভিক্ষা করে দানাপানি জোটাতে হয়। অবস্থা একই তুফান শেখের বাড়িতেও, তার ব্যবসা বানিজ্য দেখভালের অভাবেই লাটে উঠেছে, অসুস্থ তুফানকে চিকিৎসার খরচ দেবারও কেউ নেই। মরিয়ম বেগম পক্ষাঘাতে স্থবির হয়ে গেছেন আর বসে টিভি দেখতে পারেননা। সাত ছেলে মা মা করে বিস্তর কান্না কাটি করেছে, ছোট ছেলেটা মাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে চায় কিন্তু অন্য ভাইরা মনে করে এ অবস্থায় মায়ের জার্নির ধকল সইবেনা। আর স্বপন, সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। স্বপন বিছানায় শুয়ে শুয়ে অনর্গল অশ্রু বিসর্জন করে সে আর কখনওই মাঠে নামতে পারবেনা। জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার স্বপ্নটা স্বপ্ন মাত্রই থেকে গেল স্বপনের। এ খবর গুলো আসেনি আমাদের টিভিতে বা খবরের কাগজে কিন্তু কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন। ধর্মীয় আঘাতের পরিনাম ঠিক এই রকম বা আরো ভয়াবহ না হলে কি কেউ কুপিয়ে মানুষ মারতে যায়।
সবাই বলেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া উচিত নয়, বলেন ধর্ম নিয়ে হাসি ঠাট্টার পরিনাম ভালো হয়না। বলেন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে সহ্য করা হবেনা। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে আহত মানুষ গুলোর ভয়াবহ যন্ত্রনার ছবি নিয়ে সামনে এগিয়ে আসেননা, চেপে যান। কেন এই চেপে যাওয়া? তবে কি এই আঘাত টাঘাত বানোয়াট কথা? অন্তত দৈহিক ভাবে এই আঘাত কেউ অনুভব করেছেন এরকম দৃষ্টান্ত এখনও পাওয়া যায়নি। তবে কি এই আঘাতটা মানসিক একটা আঘাত? মানসিক আঘাত হলে তার গভীরতা কতখানি? এ আঘাতে কি স্মৃতি শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অথবা আহত ব্যক্তি কি মানসিক প্রতিবন্ধীতে রূপান্তরিত হয়ে যায়?
যারা বিশ্বাস করেন তাদের ধর্মই একমাত্র সত্য ধর্ম তাদের ভয় পাবার কি আছে। যত সমালোচনাই করা হোক সত্য হলে ধর্মের তাতেতো বিন্দু মাত্র ক্ষতি হবার কথা নয়। একমাত্র একটা মিথ্যাকেই পাহারা দিয়ে রাখতে হয়।কিন্তু নিজের কাছেই যদি নিজের বিশ্বাসকে খেলো মনে হয়, নিজের ধর্মের উপর বিশ্বাস করতে নিজেরই মনের জোর আসেনা বা এরকম মনে হয় যে যাতে বিশ্বাস করা হচ্ছে তা একটা কোমল, বায়বীয়, স্পর্শকাতর ধোঁয়াটে একটা বস্তু যা একটুখানি প্রশ্ন বা যুক্তির ফু-য়ের বাতাসেই তছনছ হয়ে যাবে একমাত্র সেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত পেলে আঘাতকারীকে নিশ্চুপ করিয়ে দিতে চাইবে কারন এছাড়া তার ধর্মকে, মিথ্যা বিশ্বাসকে সে কিছুতেই টিকিয়ে রাখতে পারবেনা।
সত্যি করে বলুন তো এমন স্বামী কি আপনি চান ?
জন্মসূত্রে আপনি হয়তো এক হিন্দু নারী, ছোটবেলা থেকে রামায়ণ মহাভারতের গল্প শুনে এসেছেন। রাম-লক্ষ্মণ সীতা থেকে যুধিষ্ঠির-দুযোধন দুঃশলাদের কথা জানেন। আপনি হয়তো এক গরীব পরিবারের মেয়ে, স্কুলে এইট-নাইন অব্দি পড়ার পর আর পড়া হয়নি , তারপর কোনরকমে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। কিংবা মোটামুটি স্বচ্ছল এক পরিবারে আপনার জন্ম গ্রাজুয়েট হয়েছেন ; একটি ছোট স্কুলে চাকরিও করছিলেন, এমন সময় বিয়ের সম্বন্ধ আসায় বা নিজে দেখেশুনেই, একজনকে বিয়ে করলেন - চাকরিটা হয়তো ছাড়তে হ’ল – বা কোনরকমে চাকরিটা করেও গেলেন। অথবা আপনি একজন উচ্চশিক্ষিতা - হয়তো বা ডাক্তার, কিংবা ইঞ্জিনিয়ার, কিংবা অধ্যাপিকা ; নিজে ভালবেসে বা বাড়ীর যোগাযোগে একজনকে বিয়ে করেছেন। কিংবা হয়তো অন্যধরনের কিছু, কিন্তু সদ্য বিবাহিতা ।
বিয়ের কিছুদিন পরে দূরে কোথাও বেড়াতে গেছেন - হয়তো বা শৈলশহর, কিংবা সমুদ্রতট অথবা জঙ্গলে ঘেরা মনোরম জায়গা। দু’জন মিলে বেড়াচ্ছেন - এমন সময় কেউ একজন আপনার স্বামীকে বোকা বানিয়ে বা কপোকাৎ করে, আপনাকে ধরে নিয়ে পালিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আপনার স্বামী জানতে পারলেন, কোন এক অভিজাত ব্যক্তিই আপনাকে অপহরণ করেছেন। এবং সমানে আপনাকে বিয়ে করার চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আর তার পরিচিত মেয়েদের বসিয়েছে আপনার পাহারায় যাতে আপনি পালাতে না পারেন।
কিন্তু একদিন পুলিশ আর বন্ধুবান্ধদের সাহায্য নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে আপনার স্বামী আপনাকে ঐ বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করলেন। দীর্ঘদিন পরেস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের পুলকে আপনি তখন তীব্র আনন্দ আর বেদনায় ভাসছেন। কিন্তু ঐ সময় ঐখানেই আপনার ঐ প্রিয়তম স্বামী আপনাকে বলেন ঐ বন্দিদশায় আপনি যে সতী ছিলেন অর্থাৎ যৌনমিলন করেন নি, তার প্রমাণ দিতে হবে, ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে হবে - তাঁরা আপনার যোনি পরীক্ষা করবেন, প্রয়োজনে প্রস্রাব পরীক্ষা করে গর্ভবতী কিনা জানবেন ইত্যাদি। তখন আপনার কেমন লাগবে?
আপনি নিশ্চিত যে বন্দিদশায় আপনার সঙ্গে কারোর যৌনমিলন হয় নি। তবু আপনি রাজি হলেন এবং ডাক্তারেরা রায় দিলেন - না, আপনি ধর্ষিতা নন। একমাত্র তখনই আপনার স্বামী আপনাকে গ্রহণ করলেন।
এরপর সবাই মিলে বারি এলেন। বেশ সুখে ঘরসংসার করছেন। এর পর আপনার গর্ভে এলো আপনাদের সন্তান। কিন্তু ঐ সময় একদিন আপনার স্বামীর কানে এল - পাড়ার লোকেরা, আত্মীয়স্বজন আপনাকে সন্দেহ করছে। দীর্ঘদিন বন্দি অবস্থায় আপনার যৌনজীবন সম্পর্কে তারা সন্দিহান। কারন আগের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা তারা জানেন না, বা জানলেও তাদের সামনে করা হয়নি বলে তারা সন্দিহান। মনে করা যাক আপনার স্বামী একজন জনপ্রতিনিধি, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন জনসমক্ষে তার ইমেজ ঠিক রাখতে হবে। কিংবা একজন সাধারন মানুষ তাই চাই চারপাশের মানুষদের সন্তুষ্ট রাখতে চান। আপনার দেবরকে ডেকে বল্লেন, “যাও, বৌদিকে এ ঘর থেকে দূর করে অন্য কোথাও রেখে এস।” কিংবা বাপের বাড়ীতেই পাঠিয়ে দিতে বল্লেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে দুঃখ পেলেন, তা-ও আপনি জানেন। তবু এভাবে বিতাড়িত হবার পর আপনার কেমন লাগবে ? তা সত্ত্বেও, স্বামীর সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে আপনি দিন কাটাতে থাকলেন। সন্তান হল। ঘটনাচক্রে একদিন শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ হল । ছেলের খবর শুনে স্বামী আর থাকতে পারলেন না। সসম্মানে, ভালবাসায় আপনাদের ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু এতদিন তো আপনি ঘরছাড়া। তাই আপনার স্বামী (এবং হয়তো বা পাড়ার লোকজন বা বন্ধুবান্ধবদের চাপে) আবার চাইলেন আপনার চরিত্রের শুদ্ধতা যাচাই তথা ডাক্তারি পরীক্ষা ইত্যাদি। না, আপনার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আপনি ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করলেন।
আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো এমন স্বামী কি আপনি চান ? দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যে পরিবার থেকেই আপনি আসুন না কেন – ঠিক এমন, যেমন ব্যবহার তখনকার দিনে শ্রীরামচন্দ্র নিজের স্ত্রী সীতা-র প্রতি করেছিলেন, তেমন ব্যবহার কি আপনার কাম্য ? আপনি রামায়ণ পড়েছেন। তাই রামের এমন ব্যবহার আপনার জানা, আপনি যদি জানেন যে আপনার ভাবী স্বামী ঐ রামেরই মত ব্যবহার আপনার সঙ্গে করবেন, তবে কি আপনি ঐ ব্যক্তিকে বিয়ে করবেন ? সত্যি কথা বলুন।
লেখাটি ভবানী প্রসাদ সাহু’র রচনাবলী থেকে সংগ্রহিত সংক্ষিপ্ত রূপ।
বিয়ের কিছুদিন পরে দূরে কোথাও বেড়াতে গেছেন - হয়তো বা শৈলশহর, কিংবা সমুদ্রতট অথবা জঙ্গলে ঘেরা মনোরম জায়গা। দু’জন মিলে বেড়াচ্ছেন - এমন সময় কেউ একজন আপনার স্বামীকে বোকা বানিয়ে বা কপোকাৎ করে, আপনাকে ধরে নিয়ে পালিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আপনার স্বামী জানতে পারলেন, কোন এক অভিজাত ব্যক্তিই আপনাকে অপহরণ করেছেন। এবং সমানে আপনাকে বিয়ে করার চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আর তার পরিচিত মেয়েদের বসিয়েছে আপনার পাহারায় যাতে আপনি পালাতে না পারেন।
কিন্তু একদিন পুলিশ আর বন্ধুবান্ধদের সাহায্য নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে আপনার স্বামী আপনাকে ঐ বন্দিদশা থেকে উদ্ধার করলেন। দীর্ঘদিন পরেস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের পুলকে আপনি তখন তীব্র আনন্দ আর বেদনায় ভাসছেন। কিন্তু ঐ সময় ঐখানেই আপনার ঐ প্রিয়তম স্বামী আপনাকে বলেন ঐ বন্দিদশায় আপনি যে সতী ছিলেন অর্থাৎ যৌনমিলন করেন নি, তার প্রমাণ দিতে হবে, ডাক্তারি পরীক্ষা দিতে হবে - তাঁরা আপনার যোনি পরীক্ষা করবেন, প্রয়োজনে প্রস্রাব পরীক্ষা করে গর্ভবতী কিনা জানবেন ইত্যাদি। তখন আপনার কেমন লাগবে?
আপনি নিশ্চিত যে বন্দিদশায় আপনার সঙ্গে কারোর যৌনমিলন হয় নি। তবু আপনি রাজি হলেন এবং ডাক্তারেরা রায় দিলেন - না, আপনি ধর্ষিতা নন। একমাত্র তখনই আপনার স্বামী আপনাকে গ্রহণ করলেন।
এরপর সবাই মিলে বারি এলেন। বেশ সুখে ঘরসংসার করছেন। এর পর আপনার গর্ভে এলো আপনাদের সন্তান। কিন্তু ঐ সময় একদিন আপনার স্বামীর কানে এল - পাড়ার লোকেরা, আত্মীয়স্বজন আপনাকে সন্দেহ করছে। দীর্ঘদিন বন্দি অবস্থায় আপনার যৌনজীবন সম্পর্কে তারা সন্দিহান। কারন আগের ডাক্তারি পরীক্ষার কথা তারা জানেন না, বা জানলেও তাদের সামনে করা হয়নি বলে তারা সন্দিহান। মনে করা যাক আপনার স্বামী একজন জনপ্রতিনিধি, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন জনসমক্ষে তার ইমেজ ঠিক রাখতে হবে। কিংবা একজন সাধারন মানুষ তাই চাই চারপাশের মানুষদের সন্তুষ্ট রাখতে চান। আপনার দেবরকে ডেকে বল্লেন, “যাও, বৌদিকে এ ঘর থেকে দূর করে অন্য কোথাও রেখে এস।” কিংবা বাপের বাড়ীতেই পাঠিয়ে দিতে বল্লেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে দুঃখ পেলেন, তা-ও আপনি জানেন। তবু এভাবে বিতাড়িত হবার পর আপনার কেমন লাগবে ? তা সত্ত্বেও, স্বামীর সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে আপনি দিন কাটাতে থাকলেন। সন্তান হল। ঘটনাচক্রে একদিন শ্বশুরবাড়ীর লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ হল । ছেলের খবর শুনে স্বামী আর থাকতে পারলেন না। সসম্মানে, ভালবাসায় আপনাদের ফিরিয়ে নিলেন। কিন্তু এতদিন তো আপনি ঘরছাড়া। তাই আপনার স্বামী (এবং হয়তো বা পাড়ার লোকজন বা বন্ধুবান্ধবদের চাপে) আবার চাইলেন আপনার চরিত্রের শুদ্ধতা যাচাই তথা ডাক্তারি পরীক্ষা ইত্যাদি। না, আপনার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আপনি ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করলেন।
আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো এমন স্বামী কি আপনি চান ? দরিদ্র, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত যে পরিবার থেকেই আপনি আসুন না কেন – ঠিক এমন, যেমন ব্যবহার তখনকার দিনে শ্রীরামচন্দ্র নিজের স্ত্রী সীতা-র প্রতি করেছিলেন, তেমন ব্যবহার কি আপনার কাম্য ? আপনি রামায়ণ পড়েছেন। তাই রামের এমন ব্যবহার আপনার জানা, আপনি যদি জানেন যে আপনার ভাবী স্বামী ঐ রামেরই মত ব্যবহার আপনার সঙ্গে করবেন, তবে কি আপনি ঐ ব্যক্তিকে বিয়ে করবেন ? সত্যি কথা বলুন।
লেখাটি ভবানী প্রসাদ সাহু’র রচনাবলী থেকে সংগ্রহিত সংক্ষিপ্ত রূপ।
আমরা কেন ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি।
ট্রেনের ভিতরের জানালায় লিখা ছিল Rauchen verbote। যার বাংলা প্রতিশব্দ করলে দাঁড়ায় ধূমপান নিষিদ্ধ। শেষ স্টেশনের আগের স্টেশন থাকায় Fächer(বগি)-এ ৩০-৩৫ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন না। আর তখনি এক মেক্সিকান লোক সিগারেট ধরালো। লোকটা বেশ উচু আর মোটাসোটা, টিভিতে দেখা পরাক্রমশালী রাবনের মত ছিল তাই কেউ অযথা ঝামেলায় জড়াতে চাইলো না। কিছুক্ষন পর এটেন্ডেন্স এসে লোকটাকে প্রশ্ন করলো চলন্ত ট্রেনে যে ধূমপান নিষেধ ত কি সে জানে না। এছাড়া Rauchen verbote লেখা আছে তাও কি সে দেখেনি। লোকটা বললো I can't read or Write German. এবার এটেন্ডেন্স আমাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো How people you are, Der Mann hätte verboten werden sollen,অর্থাৎ আমরা কেন লোকটাকে নিষেধ করলাম না। নির্ভেজাল লোকগুলো কেউ কোন উত্তর দেয়নি, এরাএস্টাবলিশমেন্টের পক্ষের লোক বলে মনে হয় হয়তো । এ্যান্টিএস্টাবলিশমেন্ট একটা সামগ্রিক ব্যাপার।
নেমে একটাই প্রশ্ন বারবার মাথায় ঘুরপাক খচ্ছিলো, রিপোর্টটা কে করেছিল। অনেক্ষন ভেবে খেয়াল হলো, সিগারেট ধরানোর পর বাচ্চা সাথে এক মহিলা অন্য Fächer এ চলে গিয়েছিলেন। বোধহয় ঐ মহিলাই রিপোর্ট করেছিলেন। ভেবে লজ্জাই হচ্ছিলো। আমাদের সমস্যা এটাই যতক্ষন পর্যন্ত নিজেরা সমস্যার মুখোমুখি না হই ততক্ষন ঐ বিষয়ে নূন্যতম প্রতিবাদ করি না।
এবার আসি যে প্রলাপ পড়িয়াছেন তা টেনে আনার কারন প্রসঙ্গে। "আমরা কেন ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি" এমন প্রশ্নবানে নিয়মিত জর্জরিত হই। এমনতো নয় যে, ধর্ম কোন সুন্দরী উর্বশী তাকে টিজ করবো অথবা ধর্মের সাথে আমার পৈত্রিক ঋণাত্মক যোগসূত্র।
প্রথমত, ধর্মের উপকারিতা থাকলেও তা বিশেষ ব্যক্তিনির্ভর। ধর্মের ব্যাখ্যা ও প্রচারণা দেশ-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন নয়। ধর্মের কোন পরিবর্তন, বিবর্তন নেই। পরিবর্তন আর বিবর্তনে ধর্মের ভয়। যে অন্ধকারে ধর্মের উৎপত্তি, সেই অন্ধকার থেকে ধর্ম বের হতে চায় না, ধর্ম নিজেই এর বিবর্তন ও পরিবর্তনকে নিষিদ্ধ করে।ধর্ম মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, ধর্মগ্রন্থ আর ধর্মীয় আচারগুলো এর প্রমাণ। আধুনিক শিক্ষা থেকে যারা যত বেশী দূরে, ধর্ম তাদের ঠিক ততটাই কাছে। একারণেই, ধর্ম সেইসব পরিবেশে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।ধর্মের স্বরূপ, সংজ্ঞা বা এদের মূল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ধর্ম স্বাভাবিকভাবেই, নিজের স্বরূপগত কারনেই মানুষের অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। বাট্রার্ন্ড রাসেল তাঁর “Why I Am Not A Christian” বইতে বলেছেন –“Religion is based, I think, primarily and mainly upon fear”. বর্তমান সময়ে আমরা পোশাক নিয়ে কিঞ্চিত দুশ্চিন্তায় আছি, অথচ আমাদের অগ্রজ কিছুকাল আগেই বলেছিলেন "সকল বাঙালী পল্লীবাসীর পোশাক পরিচ্ছদ অলংকারপত্র প্রসাধন দ্রব্য প্রভৃতি আগেও অভিন্ন ছিল, কিঞ্চিত উন্নতির পর এখনও অভিন্ন আছে [সূত্র : লোকায়ত সমাজ ও বাঙালী সংস্কৃতি আবু জাফর শামসুদ্দীন]"
স্বিতীয়ত,দ্ব্যার্থহীনভাবে বলা যায় ধর্ম নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য অবশম্ভ্যাবী হয়ে পড়ে। যতক্ষন পর্যন্ত ধর্ম আমার বাকে, শ্বসনে চেপে ধরছে না ততক্ষন পর্যন্ত ততক্ষন পর্যন্ত আমি মৌন থাকি। যতক্ষন আমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করছে, তখনও কেউ এর বিরুদ্ধাচারন করছে না। আমি কি খাবো, কি পরবো, আমার প্যাশান কি হবে তা নিয়ে জোলাপ না তুলছে; মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করছে, ছোট্ট কচিকাচাদের চিন্তচেতনার উপর জোর করে সত্য বলে চাপিয়ে দেয়া না হচ্ছে রুপকথার গালগল্পগুলো; ধর্ষন, অশ্লীলতা কে ইনিয়ে বিনিয়ে ধর্মের পুথিসাহিত্যের আদলে বৈধতা না দিচ্ছে; যতক্ষন না আমার আদি সংস্কৃতিকে ধর্মের ছাঁচে ঢেলে পরিবর্তিত করে নিচ্ছেন; আমার অর্জিত সাফল্যকে এক মহাশক্তিশালী স্রষ্টার দয়া বলে চাপিয়ে না দিচ্ছে ততক্ষন কেউ কিছু বলছে না। আর যখনি এসব ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ ঘটছে আমার নৈতিক দ্বায়িত্ব তাকে বেদম প্রহারের উপর রাখা। সময় এসেছে ধর্মচর্চার ধরন পাল্টানোর ; প্রথাগত ধর্মের দাপট চূর্ণ করে মানব ধর্মের পথ প্রসারের।
আমরা মুখ্য সুখ্য মানুষ বাবু কিছুই বুঝি না......
মসজিদ মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার নিরপেক্ষতা প্রমানে দেশব্যাপী চালু হচ্ছে মন্দিরভিত্তিক শিক্ষা প্রকল্পের ৫ম পর্যায়। কোথায় শিক্ষা কোথায় সাম্প্রদায়িকতার পাঠ দেয়া হয় তা বোধহয় আমাদের শিক্ষা বিশেষজ্ঞেরাই ভালো জানেন। রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের অধীনে এসব প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কোটি টাকা গচ্ছা দিয়ে মসজিদ-মন্দির-মাদ্রাসাভিত্তিক তৃনভোজী শিক্ষা দানে রাষ্ট্রের কি বিধ্বংসী উন্নতি হচ্ছে? উন্নতি হোক না হোক শিক্ষার মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে দিয়ে মানুষকে আরো ধর্মপ্রান করে তোলা যাচ্ছে। ধার্মিক বাঙালি হলো জরা গ্রস্থ এইডস রোগীর মত। সামান্য ঠাণ্ডা তেও কাহিল অবস্থা। আর তাতে করে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নিজেদের ইচ্ছেমত রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার পথে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে কাজে লাগাচ্ছে।
একটি পরিসংখ্যান দেখা যায়,২০০১ সাল পরবর্তী ১৩ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০ হাজারেরও বেশি।২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে এক হাজার ছয়শ নিরানব্বইটি। কেবল গত বছরই সহিংসতা হয়েছে ১৭০০ টি। বিনিময়ে গত ১৩ বছরে বরং যা হয়েছে, তাকে বলা যায় নিরবচ্ছিন্ন ঠোঁটসেবা। আবার অনেকে এই শ্রেষ্ঠতম অনুভূতিটিকে নিজের দলের জন্য কাস্টমাইজ করে নেয়। বাংলাদেশে গত দুই-আড়াই দশকে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতে হয় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি জিতেছে। একটি দল একবার হারলে আরেকবার জেতার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনেই একটি পক্ষ বারে বারে হেরেছে—সেই পক্ষটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাই সাম্প্রদায়িকতার কারণ খুঁজতে পরিশ্রম করতে হয় না—এসব এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।
সো লেটস ওয়াক ফর হিস্ট্রি অব দিজ বিগোট্রি পলিটিক্স...। ১৭৫৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারতীয় উপমহাদেশ দখলের পর থেকে কিভাবে ঔপনিবেশিক দেশটিতে শাসন ও শোষণে মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় এই নিয়ে নানা পরিকল্পনা আটে। এর জন্য যে অস্ত্রটি দিয়ে সফলকাম হয় সেটি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। শোষণ, লুন্ঠন ছাড়াও অমানসিক অত্যাচার, নির্যাতনের পরও এর বিপরীতে যাতে করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলতে না পারে সেই পরিকল্পনা স্বরুপ এ মহাদেশে হিন্দু, মুসলমান সহ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সম্প্রীতির বন্ধনকে উগ্রসাম্প্রদায়িকতাকে কাজে লাগিয়ে বিছিন্ন করে দেয়। ভারতীয় ঔপনিবেশকালে বিভিন্ন সময়ে অঞ্চল ভিত্তিক স্বদেশী আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন সহ যে ছোট ছোট বিদ্রোহ গড়ে উঠে তা বানচাল করে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশরা এই অস্ত্রটিকেই সুপরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করেছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময়কার বর্বর চিত্রের ইতিহাসও রাজনীতিতে আজও ব্যবহৃত হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে মান্যতা দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ‘সেক্যুলার’ ঘরানার রূপ দিতে তখনকার আইনপ্রণেতারা চেষ্টা করেছিলেন আন্তরিকভাবেই, কিন্তু রাজনীতিতে তার চর্চা শুরু থেকেই অনুপস্থিত। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর পর তথাকথিত ইসলামী ভাবাদর্শ দ্রুত ভিত গড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি ভাবাদর্শ বিতাড়িত করা যায়নি, বরং ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির পালে হাওয়া লাগে সেই সময়ে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা সংহত করার জন্য আপস করলেন পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। ধর্মভাবাপন্ন পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে সংবিধানে ধর্মীয় ভাব নিয়ে আসা হয়। আর ‘কপট’ ধার্মিক এরশাদ তো সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন করেন।
আগের সংশোধনী বাতিল ও নতুন সংশোধনী ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম’ পরস্পর বিরোধী প্রপঞ্চ পাশাপাশি রেখেছে। আওয়ামী লীগও ধর্মের ‘ব্যাটন’ নিয়ে চলেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল কেতাবি বিষয় হয়েই আছে বাংলাদেশে।
পরে সময়ে সময়ে রাষ্টীয় আইন তৈরি করে সাম্প্রদায়িকতাকে ফোর্স করা হয়েছে। আইনগতভাবে? হ্যাঁ, এটিও একটি বড় প্রশ্ন বটে। আমি বহু পুরনো কিন্তু সদা জীবন্ত একটি আইনের কথা বলি। ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। আসলে শত্রু সম্পত্তি আইন যা পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান ১৭ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জারি করে এ দেশে বাংলা পরম্পরায় বসবাসরত কোটি কোটি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নাগরিকের বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বসতবাটি প্রভৃতি শত্রু সম্পতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ব্যবস্থা করে তাদের দেশদ্রোহী বলে কার্যত ঘোষণা করে দেশত্যাগী হতে বাধ্য করেছিল তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে। আজ তারপর প্রায় অর্ধ শতাব্দী চলে যাচ্ছে। প্রায় ৪৭ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিতে পরিবর্তন সাধন করে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান নামক ইসলামী রিপাবলিকের স্থানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করেন এবং চার মৌলনীতির অন্যতম হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করেন। সংবিধানে আরো বলা হয় এই রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গগত কারণে কোনো নাগরিক বৈষম্যের শিকার হবেন না রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই। আরো বলা ছিল পাকিস্তান আমলের যে সব আইন বাংলাদেশের মৌলনীতিসমূহের সংঘাতপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে সেগুলোর অস্তিত্ব আপনাআপনি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। কিন্তু কার্যত কী দেখলাম? সম্ভবত ১৯৭৩ সালে শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৫-এর নাম পরিবর্তন করে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন, ১৯৬৫’ বলে নতুন নামকরণ করে শত্রু সম্পত্তি আইনের সব ধারা উপধারা অব্যাহত রাখা হলো। ফলে ওই সম্পত্তিগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেল। মালিকরা ফেরত পেলেন না এবং বিস্ময়ের ব্যাপার আজো তা ফেরত পাননি। পাবেনও না।
সাম্প্রদায়িক চেতনা মূলত সামন্ততান্ত্রিক সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য। এখনো বিশ্ববাস্তবতা হচ্ছে- ধর্মকেন্দ্রিক জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়। এবং একটি ধর্মকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে অন্যকোনো ধর্মকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের লোকেদের খারাপ/ফালতু ভাবাটা হচ্ছে ট্রেন্ড।
বিষয়টিকে একটু সহজ করে ব্যাখ্যা করা যায়, যেমন আমরা সচারচর বলে থাকি কুমিল্লা-নোয়াখালি-চাঁদপুর-বরিশাল অঞ্চলের লোক খারাপ। অর্থাৎ এরকম বলাটা হচ্ছে একটা ট্রেন্ড। এই অভিধায় বিশ্বাস করে না, এরকম অনেক লোকও কিন্তু ঢালাওভাবে কখনো কখনো মন্তব্য করে ফেলে। অর্থাৎ সমাজের অভ্যাস ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় ব্যক্তির অজান্তে।
শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার অন্তর্ভূক্তি শিক্ষার্থীর অজান্তেই তাদের মানসিকতাকে প্রতিক্রিয়াশীল করে দেয়। শিশু কি কিছু বোঝে এসব? তারপরেও দেখা যায় একজন শিশু সাম্প্রদায়িক আচরণ করে। এর কারণ হচ্ছে ঐ ট্রেন্ড। সমাজের এই ট্রেন্ড বা ঝোঁক কিন্তু ব্যক্তিমানুষ পরিবর্তন করতে পারেব না। গুটিকতক মানুষও পারবে না, চাইলেও পারবে না। বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করে সমাজের এই বিধ্বংসী ঝোঁক থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হয়।এর দায় নিতে হয় রাষ্ট্রের, কারন আইনের অসারতায়-ই জন্ম নিয়েছিল ধর্ম। কিন্তু রাষ্ট্র কি নিবে?
বরং সময়ে সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার নেশায় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদের স্তব্দ করা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে। আর তাতে যতটা না লাভ হয়েছে মৌলবাদীদের তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। এতে সরকার গাছেরটা খেয়েছে তলেরটাও কুড়িয়েছে। লেখার সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ সম্পৃক্ত থাকে বলে সবসময়ই তা বিতর্কের জন্ম দেয়৷ এ কথা নতুন নয় এবং এমন বিতর্ক আগেও ঘটেছে৷ তবে প্রশ্ন জাগে, অনন্ত অভিজিতরা কি এই অশ্লীল রাজনীতির বলি !!! সবই হয়ত কার্যত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায়৷
সব সরকার ও ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে মিথ্যা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। সরকারমাত্রই ষড়যন্ত্রপ্রবণ। চিন্তন, মনন ও শিক্ষামূলক চর্চা সর্বদাই বিতর্কিত ৷ সেটা ‘সেন্সারশিপ'-এর হাতকড়া পরিয়ে থামানো যায় না৷ বলা বাহুল্য, এটা সুস্থ সমাজ চেতনার পরিপন্থি৷ একথাও অনস্বীকার্য যে, ধর্ম মানুষের জীবনকে যেভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে তাতে একটা লক্ষণরেখা থাকা উচিত। এই সুন্দর পৃথিবীতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়ারও নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আছে।
একটি পরিসংখ্যান দেখা যায়,২০০১ সাল পরবর্তী ১৩ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০ হাজারেরও বেশি।২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে এক হাজার ছয়শ নিরানব্বইটি। কেবল গত বছরই সহিংসতা হয়েছে ১৭০০ টি। বিনিময়ে গত ১৩ বছরে বরং যা হয়েছে, তাকে বলা যায় নিরবচ্ছিন্ন ঠোঁটসেবা। আবার অনেকে এই শ্রেষ্ঠতম অনুভূতিটিকে নিজের দলের জন্য কাস্টমাইজ করে নেয়। বাংলাদেশে গত দুই-আড়াই দশকে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোতে হয় আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি জিতেছে। একটি দল একবার হারলে আরেকবার জেতার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু প্রতিটি নির্বাচনেই একটি পক্ষ বারে বারে হেরেছে—সেই পক্ষটি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তাই সাম্প্রদায়িকতার কারণ খুঁজতে পরিশ্রম করতে হয় না—এসব এখন সবার কাছেই স্পষ্ট।
সো লেটস ওয়াক ফর হিস্ট্রি অব দিজ বিগোট্রি পলিটিক্স...। ১৭৫৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারতীয় উপমহাদেশ দখলের পর থেকে কিভাবে ঔপনিবেশিক দেশটিতে শাসন ও শোষণে মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় এই নিয়ে নানা পরিকল্পনা আটে। এর জন্য যে অস্ত্রটি দিয়ে সফলকাম হয় সেটি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা। শোষণ, লুন্ঠন ছাড়াও অমানসিক অত্যাচার, নির্যাতনের পরও এর বিপরীতে যাতে করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলতে না পারে সেই পরিকল্পনা স্বরুপ এ মহাদেশে হিন্দু, মুসলমান সহ বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর সম্প্রীতির বন্ধনকে উগ্রসাম্প্রদায়িকতাকে কাজে লাগিয়ে বিছিন্ন করে দেয়। ভারতীয় ঔপনিবেশকালে বিভিন্ন সময়ে অঞ্চল ভিত্তিক স্বদেশী আন্দোলন, নীল বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ, তেভাগা আন্দোলন সহ যে ছোট ছোট বিদ্রোহ গড়ে উঠে তা বানচাল করে দেওয়ার জন্য ব্রিটিশরা এই অস্ত্রটিকেই সুপরিকল্পিত ভাবে ব্যবহার করেছে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সময়কার বর্বর চিত্রের ইতিহাসও রাজনীতিতে আজও ব্যবহৃত হয়।
ধর্মনিরপেক্ষতাকে মান্যতা দিয়ে বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। ‘সেক্যুলার’ ঘরানার রূপ দিতে তখনকার আইনপ্রণেতারা চেষ্টা করেছিলেন আন্তরিকভাবেই, কিন্তু রাজনীতিতে তার চর্চা শুরু থেকেই অনুপস্থিত। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর পর তথাকথিত ইসলামী ভাবাদর্শ দ্রুত ভিত গড়তে শুরু করে বাংলাদেশে। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি ভাবাদর্শ বিতাড়িত করা যায়নি, বরং ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির পালে হাওয়া লাগে সেই সময়ে।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতা সংহত করার জন্য আপস করলেন পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলেন। ধর্মভাবাপন্ন পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে সংবিধানে ধর্মীয় ভাব নিয়ে আসা হয়। আর ‘কপট’ ধার্মিক এরশাদ তো সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজন করেন।
আগের সংশোধনী বাতিল ও নতুন সংশোধনী ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম’ পরস্পর বিরোধী প্রপঞ্চ পাশাপাশি রেখেছে। আওয়ামী লীগও ধর্মের ‘ব্যাটন’ নিয়ে চলেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল কেতাবি বিষয় হয়েই আছে বাংলাদেশে।
পরে সময়ে সময়ে রাষ্টীয় আইন তৈরি করে সাম্প্রদায়িকতাকে ফোর্স করা হয়েছে। আইনগতভাবে? হ্যাঁ, এটিও একটি বড় প্রশ্ন বটে। আমি বহু পুরনো কিন্তু সদা জীবন্ত একটি আইনের কথা বলি। ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। আসলে শত্রু সম্পত্তি আইন যা পাকিস্তানের আইয়ুব সরকার ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান ১৭ দিনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জারি করে এ দেশে বাংলা পরম্পরায় বসবাসরত কোটি কোটি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান নাগরিকের বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, বসতবাটি প্রভৃতি শত্রু সম্পতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে তা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ব্যবস্থা করে তাদের দেশদ্রোহী বলে কার্যত ঘোষণা করে দেশত্যাগী হতে বাধ্য করেছিল তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশকে। আজ তারপর প্রায় অর্ধ শতাব্দী চলে যাচ্ছে। প্রায় ৪৭ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মৌলনীতিতে পরিবর্তন সাধন করে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান নামক ইসলামী রিপাবলিকের স্থানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বলে ঘোষণা করেন এবং চার মৌলনীতির অন্যতম হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করেন। সংবিধানে আরো বলা হয় এই রাষ্ট্রে ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গগত কারণে কোনো নাগরিক বৈষম্যের শিকার হবেন না রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই। আরো বলা ছিল পাকিস্তান আমলের যে সব আইন বাংলাদেশের মৌলনীতিসমূহের সংঘাতপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে সেগুলোর অস্তিত্ব আপনাআপনি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। কিন্তু কার্যত কী দেখলাম? সম্ভবত ১৯৭৩ সালে শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৫-এর নাম পরিবর্তন করে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন, ১৯৬৫’ বলে নতুন নামকরণ করে শত্রু সম্পত্তি আইনের সব ধারা উপধারা অব্যাহত রাখা হলো। ফলে ওই সম্পত্তিগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেল। মালিকরা ফেরত পেলেন না এবং বিস্ময়ের ব্যাপার আজো তা ফেরত পাননি। পাবেনও না।
সাম্প্রদায়িক চেতনা মূলত সামন্ততান্ত্রিক সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য। এখনো বিশ্ববাস্তবতা হচ্ছে- ধর্মকেন্দ্রিক জাতিসত্তা বা সম্প্রদায়। এবং একটি ধর্মকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত থেকে অন্যকোনো ধর্মকেন্দ্রিক সম্প্রদায়ের লোকেদের খারাপ/ফালতু ভাবাটা হচ্ছে ট্রেন্ড।
বিষয়টিকে একটু সহজ করে ব্যাখ্যা করা যায়, যেমন আমরা সচারচর বলে থাকি কুমিল্লা-নোয়াখালি-চাঁদপুর-বরিশাল অঞ্চলের লোক খারাপ। অর্থাৎ এরকম বলাটা হচ্ছে একটা ট্রেন্ড। এই অভিধায় বিশ্বাস করে না, এরকম অনেক লোকও কিন্তু ঢালাওভাবে কখনো কখনো মন্তব্য করে ফেলে। অর্থাৎ সমাজের অভ্যাস ব্যক্তির অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় ব্যক্তির অজান্তে।
শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার অন্তর্ভূক্তি শিক্ষার্থীর অজান্তেই তাদের মানসিকতাকে প্রতিক্রিয়াশীল করে দেয়। শিশু কি কিছু বোঝে এসব? তারপরেও দেখা যায় একজন শিশু সাম্প্রদায়িক আচরণ করে। এর কারণ হচ্ছে ঐ ট্রেন্ড। সমাজের এই ট্রেন্ড বা ঝোঁক কিন্তু ব্যক্তিমানুষ পরিবর্তন করতে পারেব না। গুটিকতক মানুষও পারবে না, চাইলেও পারবে না। বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করে সমাজের এই বিধ্বংসী ঝোঁক থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হয়।এর দায় নিতে হয় রাষ্ট্রের, কারন আইনের অসারতায়-ই জন্ম নিয়েছিল ধর্ম। কিন্তু রাষ্ট্র কি নিবে?
বরং সময়ে সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাবার নেশায় ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন তাদের স্তব্দ করা হয়েছে রাজনৈতিক স্বার্থে। আর তাতে যতটা না লাভ হয়েছে মৌলবাদীদের তার চেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে। এতে সরকার গাছেরটা খেয়েছে তলেরটাও কুড়িয়েছে। লেখার সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগ সম্পৃক্ত থাকে বলে সবসময়ই তা বিতর্কের জন্ম দেয়৷ এ কথা নতুন নয় এবং এমন বিতর্ক আগেও ঘটেছে৷ তবে প্রশ্ন জাগে, অনন্ত অভিজিতরা কি এই অশ্লীল রাজনীতির বলি !!! সবই হয়ত কার্যত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায়৷
সব সরকার ও ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে মিথ্যা বলে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। সরকারমাত্রই ষড়যন্ত্রপ্রবণ। চিন্তন, মনন ও শিক্ষামূলক চর্চা সর্বদাই বিতর্কিত ৷ সেটা ‘সেন্সারশিপ'-এর হাতকড়া পরিয়ে থামানো যায় না৷ বলা বাহুল্য, এটা সুস্থ সমাজ চেতনার পরিপন্থি৷ একথাও অনস্বীকার্য যে, ধর্ম মানুষের জীবনকে যেভাবে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে তাতে একটা লক্ষণরেখা থাকা উচিত। এই সুন্দর পৃথিবীতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী পিঁপড়ারও নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আছে।
রামচন্দ্র কি পুরুষাকারের-এর আদর্শ প্রতীক?
রামচন্দ্র কি পুরুষাকারের-এর আদর্শ প্রতীক?
এই প্রশ্নটা উঠে এলো....কারণ বর্তমানে রামকে কেন্দ্র করে (বলা ভালো,হাইজ্যাক করে) দেশজুড়ে যে লাফালাফি শুরু হয়েছে,তাতে বীররত্তের ঘাটতি থাকলেও,বীভৎস রসের অভাব নেই!! কিন্তু আমরা যে রামচন্দ্র সম্পর্কে অতটা উল্লসিত হতে পারছি না!! একজন আদর্শ পুরুষ কেমন হতে পারেন?বিশ্বজোড়া গ্রহণযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে ব'লা যায়....
তিনি হবেন স্থিতধী!তিনি হবেন কৃতকর্মা!তিনি হবেন ব্যক্তিত্ববান!এবং সর্বোপরি তিনি হবেন পরিবার পরিজন,বিশেষত নারীর প্রতি মর্যাদাশীল এবং দায়িত্বসম্পন্ন!কিন্তু রামচন্দ্র-কে যে আমরা এই গুণাবলীর সার্চলাইট-এর তলায় ফেলে দেখলে কিছুটা হতাশ-ই হই! স্থিতধী না হ'বার কারণে তিনি প্ররোচিত হয়ে অন্যায়ভাবে বালী-কে বধ করেছিলেন। অপেক্ষাকৃত হীনবল সুগ্রীব রামচন্দ্র কে লেলিয়ে দিয়ে চতুরভাবে নিজের কাজ হাসিল করে ফেলেছিলেন!রামচন্দ্র বুঝেছিলেন এ বড় অন্যায়....তা-ও নিজের স্বার্থের জন্য দুরাচারী সুগ্রীব-এর হাতটি তিনি শক্ত করেই ধরেছিলেন!(বর্তমান রাজনীতির সারমর্ম)
....এ কি কোনও কৃতকর্মা পুরুষের কাজ!!সর্বশেষে এবং সর্বোপরি, যে অন্যায় কাজটি তিনি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে করেছিলেন,তার জন্য তিনি চিরকাল নিন্দিত হয়ে থাকবেন। তা হলো স্ত্রীরত্নের প্রতি অবিশ্বাস এবং নির্মমতা!! নিজের স্ত্রীকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা ক'রতে অক্ষম হ'য়ে যে গর্হিত কাজ তিনি ক'রেছিলেন,তার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিলো সীতার চরিত্রের তথা নিজের সন্তানের জন্মবৃত্তান্তের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিনিক্ষেপ-এর মাধ্যমে! পারিপার্শ্বিক-এর চাপে (পড়ুন কুমন্ত্রণায়) যে পুরুষ(?) অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে, নিঃসহায় এবং দুঃখিনী স্ত্রী-কে চরিত্রের শুদ্ধতা প্রমাণের জন্য লেলিহান বহ্নিশিখায় নিক্ষেপ করেন,তিনি আর যেই হোন না কেন,আদর্শ পুরুষ রূপে আদৌ পরিগণিত হতে পারেন না কক্ষনো!
নারীর সম্মান কি এতই ঠুনকো!বরং,সেদিক থেকে দেখলে রাবণ সম্পূর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সীতার সম্মানহানি না ক'রার সুবাদে,অধিক সম্মানের পাত্র অবশ্যই! আজ যখন সর্বত্র দিকে দিকে নারীর অধিকার ও সম্ভ্রম সুনিশ্চিত করার দাবীতে আওয়াজ উঠছে,সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারীর অসম্মানের পথিকৃৎ রামচন্দ্রের আরাধনা কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে বৈকি! তবে কি রামায়ণে আদর্শ চরিত্র বলতে কেউই নেই! অবশ্যই আছেন....তিনি ভরত! মিলিয়ে দেখুন....উপরোক্ত গুণাবলীর সঙ্গে মিল পাবেন অবশ্যই!কিন্তু রাম?....নৈব নৈব চ!
এই প্রশ্নটা উঠে এলো....কারণ বর্তমানে রামকে কেন্দ্র করে (বলা ভালো,হাইজ্যাক করে) দেশজুড়ে যে লাফালাফি শুরু হয়েছে,তাতে বীররত্তের ঘাটতি থাকলেও,বীভৎস রসের অভাব নেই!! কিন্তু আমরা যে রামচন্দ্র সম্পর্কে অতটা উল্লসিত হতে পারছি না!! একজন আদর্শ পুরুষ কেমন হতে পারেন?বিশ্বজোড়া গ্রহণযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে ব'লা যায়....
তিনি হবেন স্থিতধী!তিনি হবেন কৃতকর্মা!তিনি হবেন ব্যক্তিত্ববান!এবং সর্বোপরি তিনি হবেন পরিবার পরিজন,বিশেষত নারীর প্রতি মর্যাদাশীল এবং দায়িত্বসম্পন্ন!কিন্তু রামচন্দ্র-কে যে আমরা এই গুণাবলীর সার্চলাইট-এর তলায় ফেলে দেখলে কিছুটা হতাশ-ই হই! স্থিতধী না হ'বার কারণে তিনি প্ররোচিত হয়ে অন্যায়ভাবে বালী-কে বধ করেছিলেন। অপেক্ষাকৃত হীনবল সুগ্রীব রামচন্দ্র কে লেলিয়ে দিয়ে চতুরভাবে নিজের কাজ হাসিল করে ফেলেছিলেন!রামচন্দ্র বুঝেছিলেন এ বড় অন্যায়....তা-ও নিজের স্বার্থের জন্য দুরাচারী সুগ্রীব-এর হাতটি তিনি শক্ত করেই ধরেছিলেন!(বর্তমান রাজনীতির সারমর্ম)
....এ কি কোনও কৃতকর্মা পুরুষের কাজ!!সর্বশেষে এবং সর্বোপরি, যে অন্যায় কাজটি তিনি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে করেছিলেন,তার জন্য তিনি চিরকাল নিন্দিত হয়ে থাকবেন। তা হলো স্ত্রীরত্নের প্রতি অবিশ্বাস এবং নির্মমতা!! নিজের স্ত্রীকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা ক'রতে অক্ষম হ'য়ে যে গর্হিত কাজ তিনি ক'রেছিলেন,তার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছিলো সীতার চরিত্রের তথা নিজের সন্তানের জন্মবৃত্তান্তের প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিনিক্ষেপ-এর মাধ্যমে! পারিপার্শ্বিক-এর চাপে (পড়ুন কুমন্ত্রণায়) যে পুরুষ(?) অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে, নিঃসহায় এবং দুঃখিনী স্ত্রী-কে চরিত্রের শুদ্ধতা প্রমাণের জন্য লেলিহান বহ্নিশিখায় নিক্ষেপ করেন,তিনি আর যেই হোন না কেন,আদর্শ পুরুষ রূপে আদৌ পরিগণিত হতে পারেন না কক্ষনো!
নারীর সম্মান কি এতই ঠুনকো!বরং,সেদিক থেকে দেখলে রাবণ সম্পূর্ণ সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সীতার সম্মানহানি না ক'রার সুবাদে,অধিক সম্মানের পাত্র অবশ্যই! আজ যখন সর্বত্র দিকে দিকে নারীর অধিকার ও সম্ভ্রম সুনিশ্চিত করার দাবীতে আওয়াজ উঠছে,সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নারীর অসম্মানের পথিকৃৎ রামচন্দ্রের আরাধনা কিছুটা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে বৈকি! তবে কি রামায়ণে আদর্শ চরিত্র বলতে কেউই নেই! অবশ্যই আছেন....তিনি ভরত! মিলিয়ে দেখুন....উপরোক্ত গুণাবলীর সঙ্গে মিল পাবেন অবশ্যই!কিন্তু রাম?....নৈব নৈব চ!
(রুদ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখার মূলভাব)
Thursday, July 5, 2018
কাঁঠালের আমসত্ত্ব
প্রায় সকল মানব সমাজেই ঈশ্বর অতি আদরের উপকরণ। রাজ-দন্ডের মালিক চিরদিনই ঈশ্বরের একান্ত সেবক, রক্ষক ও প্রমোটার। তাই সাধারন মানুষের চিন্তাধারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যাওয়া কখনই সহজ ছিল না। প্রাচীনকালে যখন ধর্মীয় আদি পুস্তক রচিত হয় তখন এর শত্রু-মিত্র-নায়ক সকলেই ছিল রক্ত মাংসের মানুষ। কালে কালে এই গ্রন্থগুলোর চরিত্রগুলো যতই বিকশিত হতে থাকে ততই তার নায়কেরা হতে থাকেন মহান চরিত্র আর শত্রুপক্ষ পরিণত হয় রাক্ষস খোক্কস কিংবা ভূতুমের রূপকথায় জিব্রাইল, শয়তানের মত। মূলত এরা প্রাচীন লেখকদের হাতে পেয়েছেন অর্ধদেবত্ব আর মধ্যযুগের লেখকদের হাতে পেয়েছেন পূর্ণ দেবত্ব কিংবা সর্বশক্তিমানের খেতাব। এর ফলে আল্লা-মোহাম্মদ-বান্দর-ভগবান সকলেই হয়ে উঠেন বেসুমার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী।
তবে এইসকল গ্রন্থে শুধু একজন মাত্র থেকে যান রক্ত-মাংস-আবেগের মৌলিক মানুষ। সেটা হলো লেডিস কারেক্টর। রামায়নে বাপে ফেলে দেয়া- শত্রুতে টেনে নেয়া- স্বামীতে তাড়িয়ে দেয়া সীতা... অথবা মহাভারতের দ্রৌপদী অথবা আয়েশা ধর্ষণ অথবা...। সাধারন মানুষ ছোট খাটো মিথ্যা বলতেই ভয় পায় , যদি বলে ফেলেও খুব তাড়াতাড়ি তা ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু কোন লোক যদি প্রকান্ড মিথ্যা কথা বলে তাহলে সাধারন মানুষ তা বিশ্বাস করার আগে প্রচন্ড রকম চমকে যায়। আর তাদের সামনে দুটো পথ মাত্র খোলা থাকে – এক. হয় লোকটাকে পাগল বা উন্মাদ সাব্যাস্ত করা, অথবা দুই. তার কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করা। আর একবার যদি কিছু লোক তাকে বিশ্বাস করে বসে তাহলে তাদের পক্ষে লোকটার যাবতীয় সবকিছুই বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করতে হবে অন্ধের মত। তাই কোরাণে মোহাম্মদ এগুলো নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে অনেক নির্দেশ পয়দা করেছেন। নিজে বিয়ে করে দাসী বাদী রেখেছেন আর এর বৈধতা দিতে শত শত আয়াত বানিয়েছেন। এদিকে থেকে ঋষি ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে কিন্তু বাধা ছিলই না। আমি খুব কম ঋষিকে সরাসরি কোনো বামুন কন্যা বিয়ে করতে দেখেছি। ঋষিরা বরং পুরো স্বাধীন ছিলেন স্ত্রী গ্রহণ করতে। বিয়ের ক্ষেত্রে জাতপাক কাস্ট এগুলা আরো বহু পরের সংযোজন। অন্যদিকে আয়েশার লজ্জা ঢাকতে মোহাম্মদ যেমন কোরাণে অনেক বোরকা হিজাব পড়িয়েছেন তেমনি কৃত্তীবাস বহু অলৌকিক কল্পকাহিনীর হিজাব-বোরখাও পড়িয়েছেন রাম অবতারের বৌয়ের ইজ্জত ঢাকার জন্য। ভগবানের বৌয়ের ইজ্জত রক্ষার দরকার!!! মহান কাজ !
এই সকল কারিগরিই হয়েছে মূলত ভগবান রামের ঘরের ইজ্জত রক্ষার জন্য; সীতার জন্য না। কারণ নারীর জাত তার স্বামীর জাতেই নির্ধারিত হয়; বামুনে বিয়ে করলে বামনি; চাষায় করলে কিষাণী আর চাড়ালে করলে চণ্ডালিকা... । সীতাকে ভরতের কাছে দান করে দিতেও আমার আপত্তি নাই; কথায় কথায় রামের মুখে এই রকম কথা দিয়ে রামায়ণে সীতার যে জীবনী শুরু হয় সেটা গিয়ে শেষ হয় সীতারে কুত্তায় চাটা ঘি বলে। আদি পুস্তকের পরতে পরতে সীতার এইরকম গঞ্জনা-অপমান গ্রন্থিত করলেও বাল্মিকী অন্তত সীতার আত্মসম্মানরে এক চুল পরিমাণও নীচে নামাননি। এই কাজটা করছেন মূলত অবতারবাদী ভক্তের দল। তারা রাবণের ছোঁয়া থেকে রামের স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে রীতিমতো নরক ঢেলে দিছেন সীতার আত্মমর্যাদার উপর।
একজন ধর্ষিতা নারীর স্বামীকে ভগবান বানানো তো ভক্তের জন্য কঠিন। তাই ভক্তরা প্রথম রাবণের উপর রম্ভা কাহিনি চাপিয়ে ব্রহ্মার অভিশাপ যোগ করে বুঝাইতে চাইলেন যে নিজের জানের ভয়েই রাবণ সীতারে ছুঁতে পারে নাই। সতীত্ব ছাড়া নারীর সম্পদ নাই; স্বামী ছাড়া নারীর গতি নাই; এই কনেসেপ্টে বিশ্বাসী সকলেই সীতার মাথা নত করে তারে নিয়া তুলেছেন একটার পর একটা পরীক্ষা। ব্যক্তি সীতার দিকে কেউই তাকায়নি। সীতা অনেক মুখরা প্রত্তুৎপন্নামতী নারী হলেও দরকারি কথায় কিন্তু সীতা নির্বোধের মতো নিশ্চুপ থাকেন।
রাবণে বান্দরে ব্রাহ্মণে সকলেই যখন সীতারে অপবিত্র বলছেন এবং স্বয়ং সীতারাই যখন মেনে নেন তখন আমি আর বিষয়ের গভীরে যাব না।কথাগুলো বলছিলাম এই কারনে যে, একটি মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী হয়ে কীভাবে নারীবাদী হয় আমার মাথায় ঢুকে না। আল্লা আর তার রাসুল নারীকে মানুষ হিসেবে তো স্বীকারই করেনি। ভোগপণ্য শস্যক্ষেত্ররা কী করে নারীবাদী হবার অবকাশ পায়? এটি ধর্মদ্রোহীতা নয়? এসব ধর্মদ্রোহীরা কি সুবিধেবাদী, জেগে ঘুমায় নাকি কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানায়?
তবে এইসকল গ্রন্থে শুধু একজন মাত্র থেকে যান রক্ত-মাংস-আবেগের মৌলিক মানুষ। সেটা হলো লেডিস কারেক্টর। রামায়নে বাপে ফেলে দেয়া- শত্রুতে টেনে নেয়া- স্বামীতে তাড়িয়ে দেয়া সীতা... অথবা মহাভারতের দ্রৌপদী অথবা আয়েশা ধর্ষণ অথবা...। সাধারন মানুষ ছোট খাটো মিথ্যা বলতেই ভয় পায় , যদি বলে ফেলেও খুব তাড়াতাড়ি তা ধরা খেয়ে যায়। কিন্তু কোন লোক যদি প্রকান্ড মিথ্যা কথা বলে তাহলে সাধারন মানুষ তা বিশ্বাস করার আগে প্রচন্ড রকম চমকে যায়। আর তাদের সামনে দুটো পথ মাত্র খোলা থাকে – এক. হয় লোকটাকে পাগল বা উন্মাদ সাব্যাস্ত করা, অথবা দুই. তার কথা বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করা। আর একবার যদি কিছু লোক তাকে বিশ্বাস করে বসে তাহলে তাদের পক্ষে লোকটার যাবতীয় সবকিছুই বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করতে হবে অন্ধের মত। তাই কোরাণে মোহাম্মদ এগুলো নিয়ে প্রশ্ন না তুলতে অনেক নির্দেশ পয়দা করেছেন। নিজে বিয়ে করে দাসী বাদী রেখেছেন আর এর বৈধতা দিতে শত শত আয়াত বানিয়েছেন। এদিকে থেকে ঋষি ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে কিন্তু বাধা ছিলই না। আমি খুব কম ঋষিকে সরাসরি কোনো বামুন কন্যা বিয়ে করতে দেখেছি। ঋষিরা বরং পুরো স্বাধীন ছিলেন স্ত্রী গ্রহণ করতে। বিয়ের ক্ষেত্রে জাতপাক কাস্ট এগুলা আরো বহু পরের সংযোজন। অন্যদিকে আয়েশার লজ্জা ঢাকতে মোহাম্মদ যেমন কোরাণে অনেক বোরকা হিজাব পড়িয়েছেন তেমনি কৃত্তীবাস বহু অলৌকিক কল্পকাহিনীর হিজাব-বোরখাও পড়িয়েছেন রাম অবতারের বৌয়ের ইজ্জত ঢাকার জন্য। ভগবানের বৌয়ের ইজ্জত রক্ষার দরকার!!! মহান কাজ !
এই সকল কারিগরিই হয়েছে মূলত ভগবান রামের ঘরের ইজ্জত রক্ষার জন্য; সীতার জন্য না। কারণ নারীর জাত তার স্বামীর জাতেই নির্ধারিত হয়; বামুনে বিয়ে করলে বামনি; চাষায় করলে কিষাণী আর চাড়ালে করলে চণ্ডালিকা... । সীতাকে ভরতের কাছে দান করে দিতেও আমার আপত্তি নাই; কথায় কথায় রামের মুখে এই রকম কথা দিয়ে রামায়ণে সীতার যে জীবনী শুরু হয় সেটা গিয়ে শেষ হয় সীতারে কুত্তায় চাটা ঘি বলে। আদি পুস্তকের পরতে পরতে সীতার এইরকম গঞ্জনা-অপমান গ্রন্থিত করলেও বাল্মিকী অন্তত সীতার আত্মসম্মানরে এক চুল পরিমাণও নীচে নামাননি। এই কাজটা করছেন মূলত অবতারবাদী ভক্তের দল। তারা রাবণের ছোঁয়া থেকে রামের স্ত্রীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে রীতিমতো নরক ঢেলে দিছেন সীতার আত্মমর্যাদার উপর।
একজন ধর্ষিতা নারীর স্বামীকে ভগবান বানানো তো ভক্তের জন্য কঠিন। তাই ভক্তরা প্রথম রাবণের উপর রম্ভা কাহিনি চাপিয়ে ব্রহ্মার অভিশাপ যোগ করে বুঝাইতে চাইলেন যে নিজের জানের ভয়েই রাবণ সীতারে ছুঁতে পারে নাই। সতীত্ব ছাড়া নারীর সম্পদ নাই; স্বামী ছাড়া নারীর গতি নাই; এই কনেসেপ্টে বিশ্বাসী সকলেই সীতার মাথা নত করে তারে নিয়া তুলেছেন একটার পর একটা পরীক্ষা। ব্যক্তি সীতার দিকে কেউই তাকায়নি। সীতা অনেক মুখরা প্রত্তুৎপন্নামতী নারী হলেও দরকারি কথায় কিন্তু সীতা নির্বোধের মতো নিশ্চুপ থাকেন।
রাবণে বান্দরে ব্রাহ্মণে সকলেই যখন সীতারে অপবিত্র বলছেন এবং স্বয়ং সীতারাই যখন মেনে নেন তখন আমি আর বিষয়ের গভীরে যাব না।কথাগুলো বলছিলাম এই কারনে যে, একটি মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী হয়ে কীভাবে নারীবাদী হয় আমার মাথায় ঢুকে না। আল্লা আর তার রাসুল নারীকে মানুষ হিসেবে তো স্বীকারই করেনি। ভোগপণ্য শস্যক্ষেত্ররা কী করে নারীবাদী হবার অবকাশ পায়? এটি ধর্মদ্রোহীতা নয়? এসব ধর্মদ্রোহীরা কি সুবিধেবাদী, জেগে ঘুমায় নাকি কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানায়?
Tuesday, July 3, 2018
আচ্ছা আপনার মানুষের রক্ত দেখতে কেমন লাগে???
কয়েকদিন ধরে বিছানায় আরাম করে ঘুমাতে পারছি না। প্রতিদিন রাত্রে বিছানায় যাওয়ার পর কি যেন কুট কুট করে কামড়ায়। রাতেই ঘুম থেকে উঠে বাতি জ্বালিয়ে দেখি ছোট ছোট অনেক গুলো পোকা। একটা পোকা মেরে দেখি পেট ভরতি রক্ত। রক্ত দেখলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে। এমন রক্তখেকো পোকা আমি আগে কখনো দেখিনি। পরেরদিন সকাল বেলা মাকে ফোনে বললাম- মা বলল পোকা গুলোর নাম ছার পোকা। এরা রক্ত খায়। দিনের আলোয় আমার আর পোকাদের কথা মনে থাকে না। রাতে বিছানায় যাওয়ার পোকার কামড় খেয়ে রক্তখোকা পোকার কথা মনে পড়ে। সামান্য ছোট ছোট পোকা গুলোর জন্য মাস ধরে ঘুমাতে পারছি না। ছারপোকা সিমিসিডে গোত্রের একটি ছোট্ট পরজীবী পতঙ্গবিশেষ।ইংরেজিতে বলে: Bed bug । এটি রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।মূলতঃ এ পোকাটি বিছানা, মশারী, বালিশের এক প্রান্তে বাসা বাঁধলেও ট্রেন কিংবা বাসের আসনেও এদের দেখা মেলে।পুরোপুরি নিশাচর না হলেও ছারপোকা সাধারণত রাতেই অধিক সক্রিয় থাকে এবং মানুষের অগোচরে রক্ত চোষে নেয়। মশার ন্যায ছোট্ট কামড় বসিয়ে এরা স্থান ত্যাগ করে।
এরপর বিরক্ত হয়ে বালিশ তোষক সব সরিয়ে দেখি- এক-দুই না, পাঁচ -সাত ডজন ছারপোকা। এই ভারি তোষক তেরো তলার ছাদে নিয়ে গিয়ে রোদে দেওয়া সম্ভব নয়। এই ছোট পোকা গুলো আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছে। আরে...রক্ত খাবি খা, কামড়ানর কি দরকার। কামড়ানোর পর লাল হয়ে ফুলে থাকে সারাদিন। আমার বোন বলে, টাকা পয়সা বেশি হলে ঘরে ছারপোকার উপদ্রপ হয়। আমার হয়েছে ঠিক উল্টো। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে শত শত ছারপোকা মেরে ওদের প্রতিহত করতে পারছি না। রাতে পোকা গুলো আমার শরীরের উপরে হাঁটা হাটি করে- আমার রক্ত খাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে আমি স্পষ্ট টের পাই। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে হাসপাতাল থেকে এক ব্যাগ রক্ত কিনে এনে বাটিতে করে ওদের খেতে দেই। কিন্তু তাতে এদের পোষাবে না,এদের চাহিদা তাজা রক্ত।
এরা আমার পিছু নিয়েছে কেন বুঝি, কিন্তু বুঝি না?একদিন এক পাজি ছারপোকা কানের ভেতরে ঢুকে গেল। হঠাত দেখি মোবাইল চার্জ হচ্ছে না, কারন অনুসন্ধান করে দেখি- মোবাইলের ভেতরে তিন টা ছার পোকা। ছারপোকা শুধু আমার বাসায় না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা হলে হাজার হাজার ছারপোকা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনের প্রতিটা ব্র্যাকে হাজার হাজার ছারপোকা। আওয়ামী-বিএনপি-কমিউনিষ্টদের অফিসেও এদের দৌরাত্ব্য। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে ১৭টি। এমন কি অনেক সরকারী হাসপাতাল এবং অফিসেও হাজার হাজার ছারপোকা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছি- এখন সব জাগায় ছারপোকা। সচিবালয় থেকে আজকাল দামী এসি বাসে অনেক ছারপোকা পাওয়া যায়। চারপাশে এত ছারপোকার অস্থিত্ব আমায় অবাক করে।
একদিন খবরের কাগজে দেখি- "বাসের সিটে ছারপোকার উৎপাত ঠেকাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেদিন রাগে দুঃখে মধ্যেরাত্রে সুনীলের একটি কবিতা মনে পড়ল- আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/এই কী মানুষজন্ম?/আমি আক্রোশে হেসে উঠি না,/ আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি,/ মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সঙ্গে;/খাঁটি অন্ধকারে স্ত্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে/আজকাল আমার নিজের চোখ দুটোও মনে হয় একপলক সত্যি চোখ। /এরকম সত্য পৃথিবীতে খুব বেশী নেই আর।" আমি আর বেশী দিন বাচবো না। এই ছারপোকা আমাকে অতিষ্ট করে দিয়েছে। মদ্যপ ঈশ্বরের কি দরকার ছিল- ছারপোকা বানানোর?
আচ্ছা ঈশ্বর আপনার মানুষের রক্ত দেখতে কেমন লাগে ???
Subscribe to:
Posts (Atom)