Monday, August 27, 2018

আমাদের নিজেদের মানুষ ভাবার জন্য এই শিক্ষাব্যবস্থা কি যুক্তিযুক্ত?

মানুষ এক প্রকার জীব।
জানেন তো সবাই, ক্লাস থ্রি তে পড়েছেন। ভোলার কথা না।
বিশ্বাস করেছিলেন ?
সবাই করতে পারে নাই।
দেশের সবগুলা শিক্ষা পর্ব উতরানো সার্টিফিকেটধারী কিছু হনুমান আছে যারা ক্লাস থ্রিতে পড়া ওই শিক্ষাটা নিতে পারে নাই। তাদের কনসেপ্টে মানুষ এক নয়, দুই প্রকারের জীব।
নর মানুষ, নারী (ঊন) মানুষ।
এরা আর কোন জীবের বেলায় বৈষম্য করে উঠতে পারে না। মানুষের বেলায় পারে।
মানুষ জগতের অন্য জীবের বেলায় কিভাবে আলাদা ?
সব জীব জন্ম থেকে মরা পর্যন্ত র‍্যাশনাল ভ্যালুজ প্র্যাকটিস করে, কিভাবে বাঁচতে হবে, খেতে হবে, বংশ বিস্তার করতে হবে। ব্যাস ।
শুধু মানুষ র‍্যাশনাল ভ্যালুজের উপরে গিয়ে ইমোশনাল ভ্যালুজের চর্চা করে। সেসবকে আমরা মানুষের সভ্য গুণ বলি।
গুণ কি অন্য প্রাণীর নাই ? আছে। কুকুর প্রভুভক্ত , বিশ্বাসী হয় ।
গরিলা সাহসী হয়।
চিতা দ্রুত হয়
শিয়াল চালাক হয়।
মজার ব্যাপার কি জানেন ? এইসব গুণ কিন্তু ঐ প্রজাতির জীবের নর- নারী প্রভেদে আমরা বিচার করি না
সব কুকুর ই বিশ্বাসী বলে আমরা মেনে নেই
সব শিয়ালই চালাক বলে আমরা ভাবি।
শুধু মানুষের বেলায় একটা কাহিনী আছে
সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বীরত্ব, ধৈর্য্য এমন ইউনিসেক্স গুণাবলীর বাইরে খুবই স্পর্শকাতর একটা ফেইক গুণ আমরা বানিয়েছি। এই গুনের দুষ্ট শিক্ষা এখন আমাদের বোঝার সময় আসছে।
এই গুনের নাম "ভার্জিনিটি" বা সতীত্ব ।
মানুষের ভেতর শুধু মেয়েদের এই গুনে গুণবতী হতে হয়।
পুরুষ জাতির এই গুনের দায় নাই।
এই এক কুশিক্ষা মাথায় ভরে আমরা দেশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু মনুষ্যত্ব ধরতে পারছি না।
এখানে ওখানে কাছে দুরে, পরিচিত অপরিচিত অমানুষের দেখা পেয়ে যাচ্ছি।
ধর্ষণ এর মত সামাজিক সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের একটু গোড়ার দিকে তাকালে আমরা বুঝতাম সমস্যা একা ধর্ষকের না। সমস্যা আমাদের সামাজিক শিক্ষায়।
এই সমাজ আমাদের শেখায়, মেয়েরা বিয়ের আগ পর্যন্ত নিজের শারীরিক সঙ্গী বেছে নেয়ার অধিকার রাখে না। যৌনতা যেখানে একটা প্রাকৃতিক নিয়ম, এর আবেদনে নর-নারী উভয়েই সাড়া দিতে চাইবে, সেখানে ভার্জিনিটির লোড একা নারী কেন মাথায় রাখতে হবে ? কেউ বুঝাতে পারবে ?
পুরুষের কেন ভার্জিনিটির প্রেশার নিতে হয় না ?
নারীকে সম্ভোগের স্বাধীনতা না দিয়া, নারীকে সম্ভোগের পণ্য বিবেচনা করার এই নিয়ম যতদিন আছে ততদিন হাজার আইন কানুন, হাজার সভ্য বচনে নারীসম্মান রক্ষা করার চেষ্টা কাজ করার কথা না।
পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য নারী যৌনকর্মী আছে, নারীর কি চাহিদা নাই ? তাহলে পুরুষ যৌন পল্লী নাই কেন ?
যদি সমান সমান বিবেচনা করার শিক্ষা আমাদের থাকতো, তাহলে প্রতিটা ধর্ষনের পর কিছু হনুমান প্রতিবার বলতে পারতো না
- কাপড় ছোট পরসে বলে ধর্ষিত হইসে
- রাতে একা ছিল বলে ধর্ষিত হইসে
- ছেলেদের সাথে মিশছিল বলে ধর্ষিত হইসে
- মেয়েটাকে আকর্ষনীয় লাগতেসিল বলে ধর্ষিত হইসে

নারী কেন ধর্ষিত হয় ?
নারী দূর্বল বলে ? কেন , সব পুরুষ কি সবল ? কই, কোন ক্ষীনকায় পুরুষ তো সন্ধ্যার পর শর্টস পরে সিগারেট কিনতে নামার পর দুই তিনজন বলিষ্ট নারী দ্বারা ধর্ষিত হয় নাই।
নারী আকর্ষনীয় বলে ?
কখনো শুধু বেশি হ্যান্ডসাম বলে কোন ছেলের পাছায় চিপ দিয়েছে কোন মেয়ে লিফটের ভেতরে ?
নারীসংগ বিরল বলে ?
হ্যাঁ, এইটার বেলায় বলতে হয়, নারী বর্জিত স্থানে পুরুষও অন্য পুরুষের ভোগ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

বিকৃত শিক্ষাকে ধর্মীয় যুক্তি দিয়ে মোড়ক জড়ায়ে আমরা যেই সামাজিক শিক্ষাকে বৈধতা দিচ্ছি, সেই শিক্ষাই মেয়েদেরকে শেখাচ্ছে তার ভার্জিনিটির উপযুক্ত মূল্য দিতে একটা ছেলেকে অনেকদূর দৌড়াতে হবে, তার কাছে এমন কিছু আছে যা খুবই মূল্যবান, পুরুষ কে অনেক সাধনা করে সেই সম্পদ অর্জন করতে হবে। তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আনএভেইলেবল হয়ে থাকতে হবে। তার যৌনাঙ্গ পাহারা দিয়ে রাখার ভার তার নিজের কাঁধে।
আর ছেলেদের শেখাচ্ছে, তার যৌনাঙ্গ স্বাধীন, যৌনসংগী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তার যে কোন পন্থা অবলম্বন করার চেষ্টা অস্বাভাবিক না, কারণ সে নিজে কখনো বিপরীত লিঙ্গের নির্বাচিত যৌনসংগী হবার কপাল রাখে না । তাকে যে কোন ভাবে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে যৌনসংগী লাভ করতে হবে।

আনোথারাইজড সেক্স আর মিউচুয়াল সেক্স এর মাঝখানে শুধু একটা হ্যাঁ এবং না এর ফারাক।
আর যতদিন এই অনুমতির জন্য শুধু বিয়েই হবে একমাত্র চাবি, ততদিন এই সমস্যার আসলে খুব একটা পরিবর্তন হবে না। বিয়ের মতন ব্যায়বহুল, দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্তের বিপরীতে জোর করে "না" কে দুমড়ে মুচড়ে সাময়িক চাহিদা মেটানোর বিকৃত সিদ্ধান্তের পথে আসলে সামাজিক শিক্ষাই এক শ্রেণীকে ঠেলে দেয়।

সামাজিক শিক্ষার পরিবর্তন না হলে,
নারীকে সীসার বাক্সে ভরেন, আর  নারীবাদীরা ধর্ষকের লিঙ্গ কেটে হাতে ধরিয়ে দেয়ার কথা যারা বলেন, কোন পক্ষই সুফল পাবেন না। এই সমাজে রেপ হবেই। ধর্ষকের যৌনাঙ্গ কাটলে লাভ নাই। তার মস্তিষ্কটাই যৌনাঙ্গ হয়ে আছে ভুল সামাজিক শিক্ষায়। আর সবচেয়ে বড় আশংকার কথা হল, ধর্ষক হচ্ছে এই একই ভাবধারায় চিন্তা করা একটা বড় গোষ্টির প্রতিনিধি, যে শেষমেষ ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলে কোনোভাবে। বাকিরা যারা তা পারেনা। তারা শিয়ালের পালের মত রেপিস্টের দোষ ঢেকে মেয়েটার উপর রেপের যতখানি দায় ঠেলে দেয়ার চেষ্টায় নেমে পড়ে।

সেক্সুয়াল এডুকেশানের কথা অনেকে বলেন, কিন্তু সেই এডুকেশানেও শেখানো হয় শুধু  কিভাবে যৌনসম্পর্কে সন্তান জন্ম নেয়। তা সামাজিক জীবনে খুব একটা কাজে দেয় না। এটা এমনিতেই মানুষ শিখে যায়। যেটা দরকারি সেটা না শিখে,  বেশিরভাগ মানুষের সেক্স এডুকেশান হয়ে দাঁড়ায় পর্নগ্রাফী। আর সেটা দাঁড়ানো বিশাল একটা ভুল তত্বের উপর। তীব্র পুরুষতান্ত্রিক যৌনতার পার্স্পেক্টিভে।
টিন এইজে বিকৃত সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসীতে ভোগা কিশোরকে কেউ কখনো শেখায় নাই, যে অর্গাজমিক প্লেজার যদি তুলনার বিষয় হয়, একটা মেয়ের ক্ষমতা একটা ছেলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। যদি একটা ছেলে এই প্লেজারের জন্য একটা মেয়েকে জোর করে, একটা মেয়ে চাইলে কয়েকটা ছেলেকে জোর করতে পারবে, প্রকৃতিই তাকে সেই ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে।

যারা ধর্মীয় যুক্তিতে নারীর দূর্বলতার পক্ষে প্রমাণ কুড়িয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করে যে, একটা রেপে মেয়েটারও দোষ আছে, তারা আদম এর বংশজাত মানুষ বলেও নিজেদের দাবী করা উচিত না। তাদের বিশ্বাসের গোড়ায় আদম কে প্রথম সৃষ্টি করার পর আদমের তেঁতুলের নেশা মেটানোর জন্য হাওয়াকে বানানো হইয়েছিলো, এমন কোন ধর্মবাণী কি আছে ?  

No comments:

Post a Comment