Saturday, September 1, 2018

একটি বিস্মৃত মানব দেহ, যার আত্মার মৃত্যু হয়নি , কিন্তু পরিচিতির মৃত্যু ঘটেছে।

তবারক নাই হইয়া যাইতে পারে।
নাই হইয়া যাওয়া মানে মুখের কথা না। আবার নাই হইয়া যাওয়া মানে মইরা যাওয়া ও না। মানুষ কিভাবে নাই হয় ? মানে নাই হইয়া যাওয়া বলতে কি বুঝায় ? কোনো জিনিস শেষ হইয়া গেলে আমরা বলি নাই। কিন্তু মানুষ তো ডিব্বায় রাখা মুড়ি বা অর্ধেক খাইয়া পলিথিনের প্যাকেটের মুখ মোড়াইয়া রাখা বিস্কিট না যে নাই বলা যায়।তবারকের মৃত্যু হইসে এমন কথাও কেউ শুনে নাই। কিন্তু  বাঁইচা থাইকাও তবারক নাই হইয়া যাইতে পারে এটাও বা কেমন ব্যাপার ?

তবারক নাই হয়া যাইব !! করসে কি  ? মিনুরে এসিড মারসে? কারো মাথায় বারি মারসে?  কাউরে বলতকার করসে?। যদি এসব কিসু না করে  তাইলে তবারক নাই হইয়া যাইতে পারে  কেন? আসলে তবারক করসেটা কি ? তবারক দরমো লইয়া বিটলামী করসে। কি বিটলামী করসে?
  সে কইসে "ধৃ + মন প্রত্যয় থেকে ধর্মের উৎপত্তি হইসে। ধৃ অর্থ ধারণ করা আর মন অর্থ হৃদয়। পরশ্ন হইলো হৃদয়ে কি ধারন করবো মানুষ ? যা ধারন করলে মানব তথা জগতের কল্যাণ হয় তা ধারন করতে বলসে। আর তাই অইলো ধর্ম। আরো বলসে সকাল সইন্ধ্যা পূজা আর পাঁস ওয়াক্ত নামাজ নামাজ পড়িয়া দোয়া দূরুত মুখস্থ করলে মানবসভ্যতার কি উন্নতি হইবো?
এই ভাবনাটা আসলে তবারকের নিজস্ব। এই কথাগুলা বলার পর তার সাথে কাছের মানুষগুলা দূরত্ব  বজায় রাইখা চলে। নিজেদের  ম্যাস মেন্টালিটিই সীমানা টেনে বেঁধে দিয়েসে এসব কাছের মানুষদের। নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ,  দিন দিন কইমা ঝাপসা হইয়া যাইতেসে বইলা তবারকের এমন মনে হয়। মাঝে মাঝে তবারকের মনে হয় সে কি আসলেই আছে ? তাহলে তারে কেউ দেখে না কেন?
এই পৃথিবীতে এখন তবারকের অস্তিত্বের প্রমাণ শুধুমাত্র ঋণে। চাকুরীর অন্নে যদি সে নির্ভরশীল না থাকতো, অফিসও হয়ত তবারকের থাকা, না থাকা নিয়া মাথা ঘামাইতো না। যদি তার কিছু ঋন না থাকতো তাহলে  তারাও খেয়াল করতো না তবারক আছে নাকি নাই। কয়েকবছর যে কয়টা জায়গায় তবারক চাকরীর ইন্টারভিউ দিসিলো, যেখানে তার চাকরী হয় নাই, অনেক গুলায় তো ইন্টার্ভিউও হয় নাই, সেই সব জায়গায় কেউ জানেনা তবারক আছে নাকি নাই। সামনের দিনগুলায় ও তবারক যেসব জায়গায় চাকরীর জন্য ইন্টার্ভিউ দিবে তারাও জানেনা তবারক নামের কেউ আছে নাকি নাই। যাদের সাথে তবারক স্কুলে, কলেজে পড়সিলো, তারা কোথায় আছে তবারক যেমন বলতে পারে না। তারাও জানেনা তবারক কোথায় আছে। এমনকি যারা তবারকের ঘাড়ে পা মাড়াইয়া নিজেদের নাম ফলাইসে তাদের কারো মনে পড়ে না তবারক বইলা কেউ ছিল। একই কথা তবারকের যে গুটিকয় আত্মীয় আছে, তাদের বেলায়ও খাটে।  মাঝে মাঝে তারা নিজেরা ফেসবুকে নিজেদের ছবি দেয়। নিজেদের যাপিত জীবনের নানা উপলক্ষ বা বিনা উপলক্ষে ছবি আপ করে, তাদের পরিচিত কেউ সেসবে লাইক দেয়। তারা টের পায় তারা আছে, তাদের পরিচিত কেউ আছে, অন্তত তাতেই তো তাদের ছবিতে লাইক পড়ে। তারা কেউ খেয়াল করে না ফেসবুকে তবারক বলে তাদের এক সহপাঠি বা আত্মীয় কোনো ছবি দেয় নাই, কারো ছবিতে লাইক দেয় নাই, কারো কোনো ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করে নাই। এই যে অন্য সবার মত ফেসবুকে নাই বইলা তবারকের জীবন নিয়া তাদের কোন উতসুক হবার ও চেতনা নাই।
তবারকের জীবন আছে, কিন্তু উপলক্ষ বা বিনা উপলক্ষে ছবি বা ফেসবুক পোষ্ট নাই বইলা, কারো বার্থডে, ডেথডে, তেলডে উইশ করেনা বইলা তবারক সামাজিক জীবনের স্বাদ গন্ধ ও ভুইলা যাইতেসে। তবারক নিমন্ত্রিত হয় না, তবারকের প্রশংসা বা নিন্দা হয় না, কেউ তবারককে মিস করে না। তবারক যে প্রতিদিন খাবার খায়, আদৌ কি খায় কিনা, এইটা কেউ জানেনা। কারন ফেসবুকে সেটার কোনো প্রমাণ নাই। তবারক কোথাও যায় কিনা, কিছু কিনে কিনা, কারো সাথে দেখা হয় কিনা, কেউ জানেনা। তবারকের পরিচিত কারো বিয়ে, জন্মদিন, পার্টি, মৃত্যু,  দাফন , জানাজা, কুলখানী কিছু হয় কিনা তাও কেউ জানেনা। এই পৃথিবীটা তবারকের সুন্দর লাগে কিনা, কোনো ঘটনায় তার খুশি, বিরক্ত, রাগ বা হতাশা হয় কিনা কেউ জানেনা। তবারক কখনো একটা সুন্দর ভোর বা সূর্যাস্ত দেখসে কিনা তাও কারো জানা নাই। তবারকের কোনো মেয়েরে ভাল লাগে কিনা, কারো জন্য তার বুকে হু হু করে কিনা বা কারো বাহুতে তবারকের আবেগ মিশ্রিত আশ্রয় হয় কিনা তাও কেউ জানে না। সবচেয়ে বড় কথা তবারকের চেহারা কেমন হইসে এখন, দুই মাস আগে চুল কাটার পর, তাও কেউ জানেনা। তবারক শেষ কবে সিনেমা দেখসে বা একটা গল্পের বই পড়সে তা কারো জানা নাই। মোদ্দা কথা এই পৃথিবী, এই দেশ, শহর বা সমাজ যাই বলি না কেন, কেউই জানেনা তবারক আছে নাকি নাই। আর কে কে জানে তবারক আছে, এটা অনেকে যেমন জানে না, তবারক ও জানেনা।

কেউ যখন খোজ করে না, মনে করে না এমন একটা মানুষ মৃত হইলে ঠিক আছে, কিন্তু জীবিত হইলে, এই অনুভুতিটা ভুতের মতন তারে অনুসরণ করে। ভর দুপুরেও, অন্ধকার অমাবস্যার রাতে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের মাঝখানে পথহারা মানুষের মতন আতংকগ্রস্থ কইরা তোলে। মাঝে মাঝে তবারকের ইচ্ছা করে চৌরাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়া জোরে চিতকার দিতে। তাও যদি কয়েকটা মানুষ ঘুইরা তার দিকে তাকায়। আশে পাশের এত এত মানুষ তাও তবারকের সাথে যোগাযোগ হইয়া উঠার মত মানুষ নাই, এটা দিন দিন তারে নাই কইরা দিতেসে।


তবারক একটা বিস্মৃত মানব দেহ, যার আত্মার মৃত্যু হয় নাই, কিন্তু পরিচিতির মৃত্যু ঘটসে।

No comments:

Post a Comment