Wednesday, August 22, 2018

পর্দা আড়লের সেলেব্রেটি

ইলিশমাছের ঝাল চচ্চড়ির সাথে ডাল দিয়া ভাত খাবার সময় যদি সাথে এক টুকরা লেবু থাকে, বাংগালীর ভেতরের রাক্ষস জেগে উঠে। ভাত খাওয়ার আর লিমিট থাকে না। নীল অপরাজিতা-এর বস্তু জগতের নাম সংগীতা আক্তার। দেশের বাড়ি বরিশাল আর বর্তমান অবস্থান ভুতের গলির হোস্টেল। চিপা দিয়ে ঠেলে ঠুলে ফলিত পদার্থবিদ্যায় একটা অনার্স শেষ করে বিসিএস এর চেষ্টায় আছেন। যেহেতু বিসিএস দিবেন তাই সাধারন জ্ঞানের কথা চিন্তা করে দুটো টিউশনি করেন। মাথায় ব্যপক বুদ্ধি আছে, বুদ্ধি কাজে লাগানোর চিপা বুদ্ধি আরো বেশি আছে। ফেসবুকের ময়দানে নিজেকে তেলাপোকা হিসাবে না দেখায়ে কিভাবে বাজপাখি হয়ে যাইতে হয় সেই আইডিয়া তার ভালই আছে।  তার সব স্ট্যাটাস লেখার ঢং আছে । তিনি খুব সেয়ানা মানুষ।  ব্যাক্তিগত কথা বার্তা, কাজ কর্ম ইত্যাদি নিয়া কিছু পোষ্ট দেন না, এতে পাঠকদের শ্রদ্ধা কমে যাবে। তবে নিজের বিভিন্ন সমাবেশে উপস্থিতির ছবি শেয়ার করেন। জনসমক্ষে প্রকাশিত তিনার আদর্শ বিরোধী কিছু লিখলে মারদাংগা উত্তর নিয়ে হাজির হন। যেকোন চলমান ইশু নিয়া ধারালো কথাবার্তা লেখে, মানুষের বাহবা কুড়ায়।

লাস্ট চুমু খাওয়া খাওয়ি নিয়া তার স্ট্যাটাস তো দুই দিন আগে দেয়া। এই স্ট্যাটাস তো লাইক শেয়ার কমেন্ট পড়ে বেশ হিট । প্রতিটি চুমুই স্বর্গীয়, উকি মেরে দেখার অনেক কিছু আছে । শালার, ইশুর এখন কোন মাপ ঝোক নাই। সিজন ভালো। একের পর এক ইশু আসতেসে। একটু যে আরাম করে থাকবো তার উপায় নাই। কম্পিটেটর অনেক।
কয়দিন আগেও এমন হয়েছিল,ছাত্র পড়াচ্ছেন, ডাবমাথা ছাত্র। কিভাবে যে সে স্ট্যান্ডার্ড সিক্সে উঠসে, তার মাথায় ধরে না। সোশ্যাল সায়েন্সে কোশ্চেন হল
- name a freedom fighter, how you know him/her ?
গাধার বাচ্চা, বুদ্ধি খাটাবি না ? বদলের ঘরের বলদ উত্তর লেইখা রাখছে
- our driver selim mia was a freedom fighter. i know him since i born. i'm very proud for him...
আরে গাধা নিজের দাদা বা নানার নাম লেখতে পারোস না ? ড্রাইভার যুদ্ধে গেসে কিনা, কে জানতে চাইসে তোর কাছে? সৃজনশীল প্রশ্নের মানে বুঝে না। এইগুলারে পড়ায়া আরাম আছে ?
এমন টশটশে ইশু নিয়া লেখতে দেরী হয়ে গেল। শালা এই লাইনেও এখন কম্পিটিশান বেড়ে গেসে। দুই মিনিট চোখ সরালেও ইশু ঝেড়ে দেয় পাবলিক। মাঝে মাঝে মন চায় তাদের স্ট্যাটাসের তলে গিয়া কমেন্টে গু-মুত ঢাইলা আসতে। কিন্তু নিজের ইমেজের কথা মাথায় রেখে করা হয় না। নীল অপরাজিতা ফেলনা ফেসবুকার না। নিতান্তই কেউ নিজের স্ট্যাটাসে মতামতের জন্য না ট্যাগাইলে সে লেখে না। যাক সেই কথা। কেউ একজন তারে কয়লা লোপাটের স্ট্যাটাসের নীচে ট্যাগাইয়া লেখসে,নীল অপরাজিতা, নীরব কেন ? আপনি কি চুপ করে থাকবেন ?
খুবই চিন্তার কথা, চুপ থাকা যাবেনা। যার ফলোয়ার - ফ্রেন্ড মিলায়ে ৯০ হাজারের বাহিনীরে চাঙ্গা রাখতে হয়। তার তো চুপ থাকা মানায় না।  এইসব ইশুতে একটু ক্রিয়েটিভ হইতে হয়, যেহেতু কোনো স্পেসিফিক এটাকিং পয়েন্ট নাই, তাই তীক্ষ্ণ আক্রমন ও নাই। হালকা ভাসা ভাসা হওয়াই ভালো। তিনি লিখলেন
কেউ খেয়ে দেয় কয়লা
কেউ দিয়ে যায় বাঁশ
বাকিটা ইতিহাস ...
সেলুকাস......।
এভাবেই তিনি ভার্চুয়াল জগতে বেচে থাকেন। সম্ভবত এই গল্পটার আড়ালে প্রারম্ভিক অথবা শেষ গল্প  নীল অপরাজিতাদের জানা থাকেনা বলেই নিজেদের ফেম কিনতেই অনলাইনে (ফেসবুকে) আসেন । বাট সাফাইস ট্যু স্যা দ্যাট  এইসব ওল্ডস্কুল এলিমেন্ট এখন আর নাই। স্মার্টনেস থাকে কর্মে আর আচরনে। যারা ভেবে থাকেন স্মার্টনেস পোষাকে-চাপাবাজিতে তাদের মস্তিস্কে বিদ্যার তারতম্য আছে।
 লিটারেলী চোখে পানি নিয়ে কিবোর্ড চাপতেসি।  লজ্জায় নাকি গর্বে জানিনা। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমার হাতে থাকা পেয়াজের মত, আমি নিজে  বাচ্চাদের মত বোকা হয়ে তাকায়ে থাকতে থাকতে চোখে পানি চলে আসছে।  ফ্যান ফলোয়ারের একটা বিশাল সংঘবদ্ধ গ্রুপ থাকে আইডি প্রমোট করতে। এই ধারণা নিয়ে রাস্তায় নামা অচেনা শক্তি কারা আমি বলবোনা। পলিটিকাল ভন্ডামী থেকে ধার করে নেয়া হয় এসকল ধারনা।এতদিন যেসকল সেলেব ইশুকে টিস্যুর লেভেলে ব্যাবহার করেছেন সময়মত তারাও আবার ছবিতে ইশ্যু হয়ে যাবেন। DW-তে ২০১৫ তে এ নিয়ে একটা লেখা দেই। প্রকাশের ১৩ দিন পর সরিয়ে ফেলা হয়। মাইনাসে মাইনাস প্লাস খেলা খেলতে ছাগু  গ্রুপে দিতেই তারা লুফে নেয়। কিন্তু দূর্ভাগ্য ঐদিনই কে বা কারা যেন আমার আইডিখানা ডেস্ট্রয় করে দেয়।

ভেজা কয়লা আগুনে পোড়ালে কেমন জানি একটা টক টক গন্ধ হয় । পোড়া কয়লার গন্ধ অনেকের কাছে কটু লাগে। কাঠ কয়লা ভেজা হলে ধোঁয়া হয় বেশি, সেই ধোঁয়া টুকু আবার ঝাঁঝালো। একটা সময় রাস্তায় চলতে গিয়ে হুট করেই কোনো কিছু পোড়া ধোঁয়া নাকে গেলেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে উঠে। আমাদের বুকের কষ্টের চেয়ে ফেসবুকে কষ্ট বেশি নয়। আমার মনের হাসির চাইতে ফেসবুকের খুশি মূল্যবান নয়। আমাদের কেবল ভিতরের এই চিত্রপটের দিকে ভালো করে তাকাবার অবসর থাকে না। তাই সাধারন হয়ে থাকুন, সাধারন হয়ে বেচে থাকাই অসাধারন কাজ।

No comments:

Post a Comment