Saturday, August 18, 2018

প্রেম জিনিসটা বড় অদ্ভুত
কারণে বা বিনা কারণে আবেগ চিন্তাকে ছেয়ে ফেলে। তারপর সমস্ত একাগ্রতা এক হয়ে প্রেমের পরিণতির দিকে ঠেলে দেয় পাত্র বা পাত্রীকে। বিলিয়ন মানুষের এই পৃথিবীতে বিলিয়ন প্রেম কাহিনী অন্তত তাই বলে। তবে দেশপ্রেমের বেলায় ওয়ার্কিং প্রসেস টা উল্টা। আগেই পরিণতি, তারপর এর সাথে ধীরে ধীরে আবেগ যুক্ত হয়। মানে আরেকটু খুলে বললে ব্যাপারটা এরকম, যে আমরা যেমন অনেক মানুষের ভীড়ে আগে একজনকে দেখে মুগ্ধ হই, তারপর তার এটা ভাল্লাগে, ওইটা সুন্দর লাগে, তার জন্য মন টানে, তারে না দেখলে উচাটন লাগে। তারপর তাকে আপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশের বেলায় আগে বাছাবাছি করা ছাড়াই একটা দেশে জন্ম নিতে হয়। তারপর দেশের এই টা , ওইটা ভালোবেসে দেশকে আপন করার মধ্যে দিয়ে দেশপ্রেম গভীর হয়।

যদি জন্ম নেয়ার আগে দেশপ্রেম দেখায়ে দেশ পছন্দ করে জন্ম নেয়ার সুযোগ থাকতো তাহলে অবস্থাটা কি হইত ? কল্পনা করতে পারি না। তবে কোনো দেশে ঢুকতে গেলে ভিসা ইন্টারভিউ বা ইমিগ্রেশানে যেভাবে কথা বলে দেশে ঢোকার অনুমুতি নিতে হয়। যদি তেমন ব্যাবস্থা হত তাহলে কি রকম হতে পারতো আন্দাজ করা যায়।


ধরা যাক, জনৈক জন্মপূর্ব আত্মা বসে আছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশান কাউন্টারে। জন্ম নেয়ার আগে আলমানেক ঘেঁটে বাংলাদেশকে পছন্দ হয়েছে আত্মার। তিনি এখন জন্ম নেয়ার আগে ফাইনাল ইন্টারভিউতে এসেছেন।
 তাদের মধ্যে কথা হচ্ছে......
অফিসার জিজ্ঞেস করলো
- আপনি শিওর আপনি বাংলাদেশে জন্মাতে চান ?
- হুমম, ঠিক শিওর না, ভালই তো লাগে, ট্রপিকাল কান্ট্রি। থাকার জন্য আরামদায়ক হবার কথা না !!...?
- কান্ট্রি ট্রপিকাল, কিন্তু পপুলেশান কিন্তু হাই ডেন্সড। ১৭০ মিলিওন, টেম্পারেচার ৩৫-৩৮ ডিগ্রী রাউন্ড দা ইয়ার, তবে বাতাসে ডাস্ট, কেমিকেল পার্টিকেল, কার্বন মনোক্সাইড কিন্তু অনেক বেশি।কোন গ্রিন পলিসি নাই। গাছ কেউ লাগায় না, কাটে শুধু। যাবেন ?
- ইয়ে মানে, ম্যানেজ করা যাবে তো এসি ফ্যান চালায়ে,
- আরে রাখেন মিয়া, ইলেক্ট্রিসিটি নিয়া হিমশিম অবস্থা। এখন পর্যন্ত কার্যকর প্রোডাকশান পলিসি হয় নাই, জোড়া তালি দিয়া চলতেসে। বাই দা ওয়ে, ট্রান্সপোর্টেশানের অবস্থা কিন্তু ভাল না বলে দিচ্ছি।
- কেন ? রাস্তা ঘাট নাই ?
- আছে, তবে সেটায় গাড়ি চালাইবেন, নাকি নৌকা চালাইবেন এইটা আপনার বিবেচনা। জ্যাম চিনেন ?  জ্যামেই কাইটা যাবে আয়ুর ৪ ভাগের এক ভাগ।
- আচ্ছা সেইটা বুঝলাম। কষ্ট করে হাটবো কিছুদিন, তারপর কাজকর্ম করে, ভাল একটা গাড়ি কিনে ফেললে তো আর ঝামেলা নাই, কি বলেন ?
- হেঃ মাথা খারাপ নাকি আপনার? হাটবেন ফুটপাতে, পাছার ভিতরে মটর সাইকেলের চাকা ঢুকে যাবে। হর্নে কান বয়রা হয়ে যাবে, আর রাস্তা পার হইতে গেলে অনাবিল, আবাবিল, সালসাবিল, জাবালে নুর, পিপড়ায় গুড়, হরতন, রুইতন, ইস্কা , টেক্কা , এনা, হানিফ, জালিম, কলিম নানা রকম বাস ক্যাত করে পিষে চ্যাপ্টা করে দিবে। আর গাড়ি কিনবেন ? চালাবেন কি দিয়া ? তেলের পাম্পে ওজন আর কোয়ালিটির মনিটরিং নাই, গ্যাসের পাম্পে লাইন দিয়ে থাকতে হয় ৩ ঘন্টা । মাঝে মাঝে গ্যাস থাকে না। চালাতে পারবেন কম, চললেও গর্তে গর্তে আছাড় খাবেন, পুটকী ফেটে আট টুকরা হয়ে যাবে, বসে বসে গ্যাস পোড়ায়ে সরকারকে ট্যাক্স দিতে থাকবেন। বাই দা ওয়ে, গাড়ি কিনবেন ও কিন্তু আড়াইগুণ দামে, মাইন্ড ইট অটোমোবাইল প্রোডাকশান হয় না।
- ধুর আপনে শুধু শুধু ভয় দেখাচ্ছেন। এত খারাপ হয় নাকি ? সুন্দর সবুজ একটা দেশ। নদী নালা আর মাঠ ঘাটে ভরা, খেতের ফসল আর নদীর মাছ খেয়ে তো সব দুঃখ ভুলে যাবার কথা।
- আরে, স্ক্রু ঢিলা নাকি ? নদীর মাছ !!! ফরমালিন চিনেন ? ফসল ? কার্বাইডের নাম শুনছেন ? একদম শরীরের ইয়ে হয়ে যাবে পেটে গেলে পরে । ইটের গুড়া দিয়ে মশলা, টিশুপেপার দিয়ে ছানার সন্দেশ খাবার জন্য কোন লেভেলের জিহবা লাগে, আইডিয়া আছে ?  খাল বিলের নাম ও মুখে আইনেন না। অইসব দখল হয়ে দোকানপাট হয়ে গেসে। আর মাঠ বলে কিছু নাই। দুই তিনটা আছে, সেগুলায় জাতীয় দল ক্রিকেট খেলে। ভাল কথা, শিক্ষা,  চিকিৎসা ব্যাবস্থা নিয়া জানার আছে কিছু ?
- বলেন শুনি
- ওকে, শিক্ষার কথা বলি। টাকা থাকলে ডিগ্রী আসতেই থাকবে। টাকা আর পাওয়ারই ঠিক করে দিবে, আপনি আর আপনার বংশধর কোন স্কুলে পড়বে, কত জিপিএ পাবে, কতদুর উচ্চশিক্ষা নিবে। মেধা না থাকলেও সমস্যা নাই। ক্লাস ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিসিএস পর্যন্ত কোচিং আছে, আর সব পরীক্ষার প্রশ্ন পর্যন্ত আউট হবার ব্যাবস্থা আছে। মেধা ম্যাচ না করলে অন্য দেশে মাইগ্রেশানের রাস্তা খোলা আছে। কেউ আটকাবেনা । আর চিকিৎসা ? মনে করেন যতক্ষণ সৃষ্টিকর্তা আপনাকে জানে না মারতেসে, ততক্ষণ বাংলাদেশের কোনো ডাক্তার আপনাকে মারতে পারবেনা । মেডিসিনে কিছু অনুমোদিত দুই নাম্বারী আছে, তবে সার্জারীর রিস্ক নিতে পারেন, এ্যাডভেঞ্চার ভাইবা।
- মানে এই দুইটাও খারাপ ? এনিওয়ে , কি আর করা । তবে খুব কালচার্ড নেশান জানতাম।
- ও , কালচার ? হেঃ হেঃ আছে কিছু। পয়লা বৈশাখে খুব মজা মাস্তি হয়, তবে আপ্নার ওয়াইফকে একটু সামলায়ে রাখতে হবে।  মানে পোলাপাইন টাইনা শাড়ি টাড়ী খুলে ফেলে মজা করে। কাপড়চোপড় নিয়া বেগানা অফবাদ আসতে পারে মাঝেমধ্যে। আর এন্টি পার্টি বোম টোম ফুটায়ে দেয়, সেদিকটাও মাথায় রাখতে হবে।সারা বছর উৎসব লেগেই আছে, তবে কার উৎসবে, কে গেল, কেন গেল, কোন উৎসব সঠিক, কোনটা বেঠিক এসব নিয়া ক্যাচাল আছে কিছু। আর উৎসবের সময় বাজার খরচা সামান্য বেড়ে যাবে বুঝছেন্না ?
- অহ আচ্ছা। চুপচাপ নিজের মত করে থাকা তো যাবে, নাকি ?
- চুপ থাকবেন মানে ? চুপ থাকলেই তো তলায়ে যাবেন। ক্রমাগত দাবী করে যাবেন, এই দাও , ওই দাও, এরে মারো, ওরে ঝুলাও, এরে চাইনা, ওরে আনো, তুই নেস কেন ? আমারে দে।। ইত্যাদির ভেতরে নিজেকে যুক্ত করতে হবে। অর এলস।
- অর এনিথিং এলস ?
- অর এলস আপনি কাউন্টার পার্টির ট্যাগ খাইয়া যাবেন। হয় ছাগু নয় নাস্তিক, হয় বলদ নয় সুশীল, ঘাগু নাইলে মঘা কিছু একটা বলে অপজিশন আপনাকে টিপে দিবে।
- কি বলেন ? পার্সোনাল স্কেলেও এত অপজিশান ?
- আরে বলেন কি মিয়া । আমাদের বাংলাদেশে আমরা নিজেও নিজের অপজিশান । ২০ মেগাবাইট ইন্টারনেট কিনে অর্ধেক দিয়া ন্যাংটা মেয়ের ছবি দেখি, বাকিটুক দিয়া গরম কোনো হুজুরের ওয়াজ শুনি। মুখে বলি সোনার বাংলা, হাতে পাইলে টান মেরে সোনা ছিড়ে ... ইয়ে মানে, বুঝেনই তো.....
- সিকিউরিটির খুব অভাব নাকি ?
- সামান্য থাকলেই না অভাব মাপা যাই। সিকিউরিটি ধরে নেন কাগজে আছে, রিয়েলিটিতে নাই। যে কোনো বয়সে মেয়েরা রেপড হয়ে যাবে। যে কোনো ইশুতে মারা খেয়ে যাবেন, সিকিউরিটি চাইতে গেলে, ল এন্ড অর্ডার এত বড় এক ডান্ডা ভরে দিবে যে, মুখ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে।সিকিউরিটি নিয়া বেশি হাউকাউ ও করলে অসুবিধা ক্রসফায়ার বলে কঠিন সিকিউরিটি দেখায় দিবে।
- এত এত সমস্যা নিয়া গভর্মেন্ট কি করে ?
- এইবার আসছেন আসল কথায় ।
বাংলাদেশের গভর্মেন্ট মাঝে মাঝে পুরান খেতা বের করে কান্দে,
আর কিছু গদীদখল করা খাটাস দাঁত দেখায়ে হাসে।
আর কিছু করেনা।
- এই দেশটাকে ভালোবাসার মত একটা জিনিসও কি নাই ?
- আছে, হাতে হাতুড়ী নিয়া পলিটিক্স এ নাইমা যাবেন। পুরা দেশটারে নিজের সম্পত্তি মনে হবে। আর নিজের জিনিস কে না ভালোবাসে বলেন?

ভীত সন্ত্রস্ত আত্মা খুব কাচুমাচু করে বলে
- ভাই, আমি তো না বুঝে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে ফেলসিলাম, আন্ডু করার ব্যাবস্থা আছে ?
- একবার সিলেক্ট করে ফেল্লে আন্ডু করা যায় না। তবে বাই পাস নিতে পারেন। নরকে !
সেটাও খারাপ না। মাল্টিপল টর্চারের চেয়ে ওয়ান ওয়ে টর্চার বরং বেটার।
হাতে নরকের এন্ট্রি পাস নিয়ে খুশি মনে আত্মা বলে
- থ্যাংক ইউ ভাই। বাঁচাইলেন।

No comments:

Post a Comment