আমি খেলাধুলা কম পারি।
মাঠে ঘুমাইতাম বলে খেলতে গেলে আমাকে দুধভাত নেয়ার ব্যাপারে দুই পক্ষের দলপতির ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাইতো। মুল খেলায় দুধভাত হয়ে থাকার অনেক পেইন আছে। দল জিতলেও মন ভরে না পুরাপুরি। তাই আমি ক্রিকেট বা ফুটবল কোনোটাই বেশি খেলি নাই। সুযোগ পাই নাই বলে খেলা হয় নাই, তাই আগ্রহ ও কিঞ্চিত কম।
টিভির কল্যানে এখন খেলা যতটা না মাঠে, তার চেয়ে অনেক বেশি ঘরের ভেতরে। ক্রিকেটের আইপিএল, বিপিএল, কাউন্টি আর ফুটবলে চ্যাম্পিয়ান্স লীগ, স্প্যানিশ লীগ আর নানা লীগ চলে। তুমুল উত্তেজনার খেলা চলে, উম্মাদনা চলে, কিন্তু সেই উত্তেজনা আর উম্মাদনায় কি সুন্দর মাত্রা টানা থাকে। পেস বোলারের বাউন্সার যখন ব্যাটসম্যানের হেলমেটে বাড়ি মারে, বোলার দৌড়ে গিয়ে ব্যাটসম্যানের পীঠে চাপড় মেরে মিষ্টি হাসে। প্রতিদ্বন্ধীতা যতই থাকুক শত্রুতা তো নাই, তাই প্রচলিত একটা আচরণ আছে, সেটা হল -
নাথিং পার্সোনাল !
ল্যাং মেরে উপ্তা করে ফেলা দেয়া স্ট্রাইকারকে হাত বাড়ায়ে টেনে তুলে ডিফেন্সের প্লেয়ার মাথায় একটু হাত বুলায়ে দিয়ে অই আশ্বাস দেয় - নাথিং পার্সোনাল।
দুই জন একসাথে লাফ দিল হেড করার জন্য, একজন কায়দা করে হেড টা মেরে দিল অন্য জনের বুকে। বুকভাংগা প্লেয়ারকে জড়ায়ে ধরে ঠুয়া মারা প্লেয়ার লাজুক মিষ্টি হেসে জানায় নাথিং পার্সোনাল।
শেখার আছে কত কিছু !!
আমাদের দেশেও এখন লীগ চলে। ধার্মিকলীগের নিজেদের মধ্যে এই খেলায় কওমী মাওলানারা ইচ্ছা মত আবজাব বয়ান করে যাইতেসে, ফাউল করতেছে। রেফারির বাঁশি আর বাজেনা। সরকার লীগ নানা রকম ভাবে এ্যাটাকে যাইতেসে ঠেলে ঢুকে যাইতেসে হেফাজতের ডি বক্সের ভেতর। কাটায়ে নিয়ে যাইতেসে হেফাজতের ডিফেন্স। মাঝে মাঝে শুধু নাগরিক দাবী বা ধর্মযুক্তিতে কিছু আম পাবলিক কোপ খাইয়া সাইজ হয়ে গেলে মিষ্টি হাসি সহ নাথিং পার্সোনাল জেসচার দেখায়ে আবার আগের নিয়মে খেলা চলতেসে।
ঘাড়ের উপর মাথা একটাই। পড়ে গেলে কেউ ধরবেনা। কোপ মারা পাবলিক নাথিং পাররসোনাল বলে হেটে চলে যাবে। কেউ তাকে আটকাবে না। সমাজ সংস্কৃতি নিয়েও বলতে ভাল্লাগে না। মাথার দিকেই ব্যাথা করে। এই যে হেফাজত লীগ চলতেসে, এই টারময়েলিং ওয়েদারে মুখ বন্ধ করে খেলার লাস্ট বাঁশি পর্যন্ত বইসা থাকাই মনে হয় সুবিবেচকের কাজ হবে।
তবু মাথায় কত জিনিস আসে। আমাদের ধর্মটার নাম ইসলাম কেন ? ক্লাস ফাইভে পড়সিলাম ইসলাম মানে শান্তি। কিন্তু দেশে ধর্মের যেই গরম লু হাওয়া দেখতেছি, এই হাওয়ায় ঘোড়সাওয়ার সেনাদের এই যে এত রকম জিনিস নিয়ে চুলকানী, তা দেখে আসলে বিশ্বাস করা কঠিন- এরা শান্তির ধর্মের অনুসারী। গতকাল খবর দেখলাম। বিরুদ্বমতাবলম্বীদের কতল করা নাকি ওয়াজিব হয়ে গেসে বলে ফতোয়া আসছে। বাহ! কতল না করলে আর শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছেই না , তাই না ?
আল্লাহ পাকের অশেষ দয়া, যে এই জীবন আচার টার একটা নির্দিষ্ট নাম ঠিক করে দেয়া হইসে, আর তা পালটানোর সুযোগ নাই। নাইলে সময়ের প্রয়োজনে এই নব্য ইসলামের সেবকরা এই ধর্মের নাম পাল্টায়া দ্বীনে কতল ( প্রাণ সংহারী ধর্ম) বা দ্বীনে সাইফ ( তরবারীর ধর্ম) নাম দিয়ে ফেলতো। শান্তি মান্তি প্রচারে এদের খুব একটা মন দিল নাই। জুত করে মনের কথা বলতে পারে না।
উনাদের গুর্দা বড়, উনারা ধর্ম হেফাজত করেন, রক্ষা করেন, ধর্ম লাড়েন চাড়েন, ধর্ম নিয়া খেলেন। লীগে বড় বড় ম্যাচে নাইমা ২/১ গোলে আগে পিছে পড়েন তারপর ফাউল করা ওয়াজিব বইলা আগে বাড়েন। নাথিং পার্সোনাল।
সবই ধর্মের লাইগা।
কঠিন এই খেলায় আমরা সবাই দুধভাত...
No comments:
Post a Comment