Sunday, August 26, 2018

মীথ

সীতার মেজাজ খারাপ।
মেজাজ খারাপ হবার যথেষ্ট কারণ আছে। কথা নাই বার্তা নাই, দুম করে রাবণ তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসছে। প্রাসাদ ভরা রাণী, বিনোদিনী তারপরেও এত ঝাই ঝামেলা করে জংগল থেকে তাকে তুলে আনসে রাবণ। প্রথমে সীতা ভাবসিলো রাবণের মনে খারাপ মতলব আছে। কিন্তু কিছু সময় যাবার পর সীতা বুঝতে পারসে রাবণ তার সাথে মেক আউট টাইপ কিছু করার ধারে কাছে নাই।  সীতার হাজবেন্ডের সাথে পুরানা গ্যাঞ্জাম আগুন দিয়ে চাংগা করার জন্য তাকে কিডন্যাপ করসে। শালা গবেট। বউ উঠায়ে আনসে, এখন বইসা বইসা মোঁচে তা দিতেসে জামাই আসবে উদ্ধার করতে, আর সে জামাইরে কইষা চিপা দিবে। আরে বালটা, তোর গ্যাঞ্জাম রামের সাথে। হ্যাডম থাকলে বস্তার মধ্যে রামরে ভইরা তুইলা আনতি। সাথে সুতা বান্ধা লক্ষণ আর ল্যাঞ্জা বান্ধা হনুমান ও আইসা পড়তো। কাজ পায়না। সীতা প্ল্যান করে ফেলসে। আজকে ডিনার দিতে আসবে যখন, চৌকীর পায়া ভাংগা কাঠ দিয়ে বাইড়াইয়া কাজের বেটিরে বেহুশ করে, সীতা পালানোর একটা ট্রাই করবে। ক্যাওস বাঁধায়ে দেয়ার জন্য আগুন লাগানোর উপর জিনিস হয় না। সীতা অলরেডী এক গার্ডের কাছ থেকে ম্যাচ মাইরা দিয়ে লুকায়ে রাখসে। একবার রুম থেকে বের হইতে পারলে জানালার পর্দায় আগুন লাগায়া দিবে, হাউকাউ শুরু হবে, এই চান্সে সীতা কালটি মেরে ভাইগা যাবে। রামের আশায় বইসা থাকার কোনো মানে নাই।

রাম যতক্ষনে লংকা এটাক করে রাবণের ফোর্ট দখল নিসে নানা সিস্টেম করে, হনুমানের ল্যাজের আগুন, বিভীষণের স্পায়িং ইত্যাদি করে, ততক্ষনে সীতা ফ্রি জোনে। রাবন রে ধইরা রাম যখন কলার ধইরা ঝাঁকাইয়া জিগাইলো "হয়্যার ইজ মাই ওয়াইফ?" রাবণ খ্যাক খ্যাকাইয়া হাইসা কইলো, "ইউ আর লেট ম্যান। তোমার বউ ম্যালা ফাস্ট, একাই ভেগে গেসে তুমি আসার আগে। গো ফাইন্ড সামহয়্যার এলস"। রাম মাথা চুলকায়ে ভাবতেসে বউ কই যাইতে পারে...

ট্রয় শহরের বাইরে, আগামেনন তার চৌদ্দ গুষ্টি নিয়া ঘিরা দিয়া বইসা আছে।
আগামেননের ভাই মেনেলাউসের বউ হেলেন ভাইগা আইসা পড়সে ট্রয়ের যুবরাজ প্রেমিক প্যারিসের লগে। মহল্লায় মুখ দেখানোর উপায় নাই। আগামেনন মহল্লার সব হ্যাডমরে একসাথে নিয়া মেশিন মুশিন সহ আসছে প্যারিসের মহল্লা এটাক করতে। হালার পো ডরপুক প্যারিস দরজা মরজা আটকাইয়া খাটের তলে হান্দাইয়া বইসা আছে। টাইম যাইতাসে, খরচা বাড়তাসে আগামেননের মেজাজ ফরটিনাইন।
ট্রয়ের রাজদরবারে মিটিং বসছে। প্যারিসের কাজিন হেক্টর একটু চাঙ্গা মাঙ্গা আছে। হ্যাডম ও আছে। সে আগামেননের মহল্লার একিলিস রে চ্যালেঞ্জ কইরা বইসে ওয়ান টু ওয়ান ফাইট করার লাইগা। যেয় জিতবো হেয় ডিসাইড কইরবো হেলেন কার বউ। সবাই মিউ মিউ কইরা মাইনা ও নিসে।
হেলেন এতক্ষন কিচ্ছু কয় নাই। ফাইজলামী করে নাকি এরা? আরে আমার মন চাইসে আমি আগের জামাইয়ের সাথে থাকুম না, এই নিয়া মহল্লা ধইরা পোলারা ক্যাচাল করবে। তারা তারা মারামারি কইরা ডিসাইড করবে। এইডা মাইনা নেয়া যায় কেমনে? হেলেন উইঠা দাঁড়ায়া কইলো "থামেন "
মেনেলাউসের বউ ছিলাম আমি। আমারে নিতে আইসা আগামেনন গুষ্টি সুদ্ধা লোকজন নিয়া গ্যাঞ্জাম করতেসে। আপনেরাও এই গ্যাঞ্জামে হান্দাইবেন কেমনে চিন্তা করতেসেন। এইসব বাদ দেন। ওয়ান টু ওয়ান আমি কথা কমু মেনেলাউসের লগে। গেট খুলেন।
ট্রয়ের গেটের বাইরে আগামেননের লোকজন চা চু খাইতেসিল। গেট খুইলা হেলেন বাইর হইয়া আইলো একা। আগামেনন চিল্লাইয়া কইলো " ঐ মেনেলাউস তোর বউ বাইরাইসে, উডাইয়া লইয়া দৌড় দে"
হেলেন কইলো "তুই চুপ কর বলদ"
তারপর মেনেলাউসের দিকে তাকায়া কইলো
"তোর শরম করে না ? তোর বউ তোরে ফালাইয়া আইসা পরসে, আর তুই মহল্লার গুষ্টি যোগার কইরা আইছস পীছে পীছে ? বিচি আছে তোর ? বউ রে ভালোবাসতে বিচি লাগে। বুঝছস ? ভালোবাসতে পারলে আইজকা আমি হেলেন তোর লগে তোর প্যালেসে থাকতাম। প্যারিস আমারে ভালোবাসে, আমি প্যারিস রে বাইছা নিসি। তুই এক্ষন তোর পোলাপাইন লইয়া এইখান থেকে যাবি। গুন্ডা পান্ডা লইয়া বউ উঠাইতে আইছস। শরমে মইরা যাওয়া উচিত তোর।

মেনেলাউস মাথা নীচু কইরা আগামেনন রে কইলো "ভাই চল যাইগা। এলাকার মানুষের সামনে বেইজ্জত কইরা দিল" । একিলিস মাথা চুলকায়া কইলো "ক্যাম্নে কি ? হেক্টর হম্মুন্দীর পুতে যে আমারে চ্যালেঞ্জ দিল হেই গ্যাঞ্জাম ফাইনাল করুম না ? এমনেই যামুগা ? এই মেনেলাউসের বউ এর দুইডা চিল্লান খাওনের লাইগা এদ্দুর আইসি নাকি ? আমি যামুনা । হেক্টর রে ঘাড়ামু তারপর এহেন্তে লড়ুম"

হেলেন কইলো " খুব সেয়ানা হইসো ? গ্যাঞ্জাম করতে চাও করবা, আমার ইশু বাদ দিয়া সারাদিন তুমি আর হেক্টর কুস্তা কুস্তি কর । মানা করসে কে ? আমি প্যারিসের বউ, আমি এই গ্যাঞ্জামের ইশু না । ওকে ? যাও গা বাই "


... যদি এমন হইত মীথ, এমন হত ইতিহাস। তাহলে আমাদের মনে হয় আলাদা করে  এক একটা দিবস লাগতো না।  এনিওয়ে এতদিন হয় নাই । সামনে হবে ।

No comments:

Post a Comment