ইদানীং আমার সবকিছু কেমন যেন সুররিয়েল হয়ে গেছে... উট, রাজহাঁস, জীবরাঈল, জিরাফ - কত কিছুর যে আনাগোনা শুরু হয়েছে রিসেন্টলি তা গুনলে শেষ হবে না। জানি ওরা নেই- তবুও কেন জানি ওরা বারবার ফিরে আসে আমার জগতে। মাঝে মাঝে মগজ গলে বৃষ্টি নামে দেহের ভেতরের লুকোনো সাগরে। আবার সেখানে জেগে ওঠে ছোট্টো একটা সেন্টমার্টিন...
যাই হোক, এসব নিয়ে আজ সাফাতের সাথে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় খুঁজে পেলাম নতুন একটা দর্শন। উফফ.. নতুন কিছু- কতদিন পরে..
সম্প্রতি এক রিসার্চে দেখা গেছে যে প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য কোন প্রাণীর পারসেপশনকে যে রিয়েলিটির সাথে মিলতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মাঝে মাঝে উল্টোটাই বেটার। মানে, এতদিন আমরা যা ভাবতাম- একটা প্রাণী তার পরিবেশকে যত বেশী "একুরেটলি" সেন্স করতে পারবে, সে তত ভাল টিকে থাকবে - সেটা আসলে সত্যি না। একটা হাইপোথিটিকাল উদাহরণ দেই- একটা জায়গায় যদি গভীর পানি থাকে, আপনি ডুবে মারা যাবেন, পানি না থাকলে তৃষ্ণায় মারা যাবেন, আর ভাল থাকবেন পরিমিত পানিতে। ধরেন, চোখ ছাড়া পানি মাপার আর কোন ইন্দ্রিয় একটা প্রাণীর নেই। এখন কেউ যদি সব ডেপথের পানিকে একই রঙ এ দেখে- সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যেটা দরকার- পানির গভীরতা বুঝতে পারা- তা পারবে না। সুতরাং টিকে থাকতে পারবে না বেশীদিন। এখন, যে কম পানিকে হাল্কা নীল, পরিমিত পানিকে গাড় নীল আর গভীর পানিকে বেগুনী দেখে, সে কিন্তু বেঁচে থাকবে বেশ ভালভাবে। কিন্তু এর জন্য তিনটি কালার আলাদা করে চিনতে পারতে হবে তাকে। অর্থাৎ, ব্রেন ও চোখের ক্ষমতা প্রথমজনের থেকে অনেক বেশী হতে হবে। ডেটা প্রোসেসিং করতে শক্তিও খরচ হবে বেশী ( জাস্ট আইডিয়াল কেস)
ধরি, আরেকজন কেউ আছে, যে কম পানি এবং গভীর পানি - দুটোকেই লাল দেখে আর পরিমিত পানিকে দেখে নীল। সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য দ্বিতীয় জনের ফুল সুবিধাই পাচ্ছে। বরং কনফিউশনের চান্স আরো কম এবং ব্রেন, চোখ অত উন্নত হবার দরকার নেই ( দুটো অপোজিট কালার ডিটেক্ট করতে হবে) এবং রিসোর্সও লাগবে কম।
অর্থাৎ সে ইভোলুশনের চোখে বেশী যোগ্য। যদিও সে দুনিয়াকে দেখে খুবই "ভ্রান্তভাবে"। কম পানি-বেশী পানি দুটোই সে সেম ভাবে দেখে.. যা সত্যি না।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সুররিয়েল এই দৃষ্টিই তৃতীয় জনের টিকে থাকার শক্তি। পরের প্রজন্মে এর জিনই বেশী ছড়াবে।
হয়ত হয়েছেও তাই..
তারমানে কি এটা যে আমরা যেভাবে পৃথিবীকে দেখছি, সে আসলে তেমন না? ফর রিয়েল/ ফিজিক্যালি সে একেবারে আলাদা? আমরা কি তাহলে আজীবন পুরোপুরি ভ্রান্তভাবে বেশ কিছু ব্যাপার পারসিভ করে যাই?
আমাদের চোখ আর কানের কাছে কম ফ্রিকুয়েন্সি আর বেশী ফ্রিকুয়েন্সি কিন্তু একই- অস্তিত্বহীন। শব্দের কথা ধরি- ফ্রিকুয়েন্সি কম- আমরা শুনি না। বাড়তে বাড়তে একটা লেভেলে আসলো- খুব ভোঁতাভাবে শুনতে শুরু করলাম, এরপর ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ে, তীক্ষ্ণতাও বাড়ে। কিন্তু একটা পর্যায়ের পরে এভাবে আর আগায় না, একসময় ফ্রিকুয়েন্সি বাড়লেও আবারও কমে নাই হয়ে যায় শব্দটা..
অর্থাৎ, আমাদের শব্দের ফীলিংসটা আসলে পুরোপুরি "রিয়েল" না। রিয়েল না দেখার ফীলিংসও।
কত্তো জোস না ব্যাপারটা?
তাহলে কি "আল্টিমেট" পারসেপশন বলে কিছু আছে?
উহু... পারসেপশনের ক্ষেত্রেও সবই আপেক্ষিক।
তাহলে রিয়েলিটি টা আসলে কেমন? কে জানে সেটা?
সত্য হল আমরা কেউ তা জানি না.. একই জগৎ কে একেক জন একেক ভাবে দেখে, শোনে, বোঝে..আমরা সবাই শুধু সাঁতার কাটি সুররিয়েল একটা জগতে.. সারাটা জীবন ধরে..
No comments:
Post a Comment