Sunday, January 13, 2019

বেহেশতে পাক-ভারত রাজনীতি আলোচনা

বেহেশতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এক পাকিস্তানের কট্টরপন্থাতেই পুরো দক্ষিণ এশিয়া অস্থির। এখন আবার ভারতে নতুন কট্টরপন্থার ঢেউ। দেবদাস চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্টে বসে টিভির খবর শোনে। এক কট্টর নেতা বলছে যারা রামের সন্তান নয় ঐ –দের ভারতে থাকা নিষেধ। ঠিক যেভাবে পাকিস্তানের জামাত নেতা মওদুদী থেকে আজকের চুনোপুঁটি বলে যাচ্ছে, যারা সাচ্চা মুসলমান নয় তাদের পাকিস্তানে থাকার অধিকার নাই। ভারতের আরেক বিজেপি নেতা বলছে,

তাজমহলের জায়গায় আগে মন্দির ছিলো; মানে আরেক বাবরী মসজিদের কুরুক্ষেত্রের রেসিপি। পাকিস্তানে তো সব মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে চক্ষুলজ্জায় গুরুমন্দির  রেখে দিয়েছে এই লোকগল্পে, সম্রাট আকবর যোধা বাঈকে নিয়ে হানিমুনে এসে এই মন্দিরে সময় কাটিয়েছিলেন। দেবুদার প্রেশার বেড়ে যায়। চন্দ্রমুখী কাগজী লেবুর শরবত করে দেয়।
দেবুদা মেজাজ বিগড়ে বলে, এরশাদের মত করে বলে "আমরা কী এই ভারত চেয়েছিলাম"।
চন্দ্রমুখী টিভির ভলিয়ুম বাড়িয়ে দেয়, বিজ্ঞানমন্ত্রী বলছেন, জ্যোতিষশাস্ত্রই আসল বিজ্ঞান।
দেবুদাতো জাস্ট হা হয়ে যায়।
সুচরিতাসু সুষমা বলছে গীতাকে জাতীয় গ্রন্থ ঘোষণা করা হবে।
চন্দ্রমুখী বলে, মোদী না বললে, টয়লেট ফার্স্ট টেম্পল লেইটার।
দেবুদা বিষণ্ণ হয়ে বলেন, হয়তো এই টিভি বাইটগুলোই আধুনিক টয়লেটের সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে!
গান্ধীজীর ফোন আসে, দেবু একটু চট করে চলে এসো। কাজের সময় নেহেরুকে পাইনা। আর জিন্নাতো খালি মিন মিন করে।
দেবুদা বলেন, গান্ধীজী বড় বড় নেতাকে বিপদে আপদে পাননা; তখন দেবুকে মনে পড়ে!
গান্ধীজী হেসে বলেন, অভিমান কোরোনা; চলে এসো; পরিস্থিতি গুরুতর।
দেবুদা বের হতে যাবে এমন সময় চন্দ্রমুখী বলে, তুমি বদলে গ্যাছো দেবুদা।আমার জন্য কোন সময় নেই তোমার।
দেবুদা বিব্রত হয়, চন্দ্র ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।
চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে বলে, আমি জানি তুমি এক বোকার হদ্দ।

গান্ধীজীর বাসায় ঢুকেই দেবুদা দেখে বাল থ্যাকারেকে বেহেশতের পুলিশ প্যারোলে নিয়ে এসেছে। থ্যাকারে হাসি হাসি মুখে বসে গ্রীণ টি আর টোস্ট বিস্কিট খাচ্ছে।
গান্ধীজী ঠান্ডা গলায় বলেন, এ তুমি কী মৌলবাদের বীজ পুঁতে এলে থ্যাকারে!
থ্যাকারে বিনয়ের সঙ্গে বলে, বাপু পুরো ভারতবর্ষটার মাটিতে আয়োডিনের খুব অভাব। ফলে ভারতবাসীর বুদ্ধাংক খুব নীচের দিকে। আপনি এদের নিয়ে বৃথা চেষ্টা করেছিলেন। নেহেরু-জিন্নাহ জানতেন ভারতবর্ষের মানুষ ডিভাইডেড হবার জন্য প্রস্তুত।ইংরেজ যেটা কাজে লাগিয়েছে; এমনি তো লাগায়নি। এই যে  ব্যাটা নাথুরাম গডসেই যে এখন আপনার পা টিপছে; ওর আয়োডিন ঘাটতি আছে।
নরক থেকে ডেপুটেশানে গান্ধীজীর আশ্রমে এসেছে নাত্থু; সে গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এখন প্রায়শ্চিত্ত করে গান্ধীজীর পা টিপে।
থ্যাকারে বলেন, এই নাত্থুকে আপনি যদি এখন নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন; ভূমিধস বিজয় এনে দেবে। কারণ ভোটাররা এখন নাত্থুবাদী।
গান্ধীজী অবাক। মানে হোয়াট ইজ নাত্থুবাদ!
থ্যাকারে বলেন, নির্বোধ হিংস্রতা। পাকিস্তান-ভারত দু’দেশেই এখন অশিক্ষা,ধর্ম প্রদর্শন আর পশ্চাদপদতাই ভোটারদের পছন্দ।
গান্ধীজী বলেন, তাহলে আর দেশ বিভাগের কী দরকার ছিলো!
থ্যাকারে হাসেন, হিন্দু-মুসলমান কট্টরপন্থী নাত্থুরা দুটো দেশ চালাচ্ছে মন্দ কী!
গান্ধী গম্ভীরতর হয়ে বলেন, তুমি তো নিজেই এর জন্য দায়ী; আর ঐ মওদুদীব্যাটা।
--বাপু আপনিই যুগের হাওয়া বোঝেননি। নেহেরু-জিন্না বুঝেছিলেন। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র আয়োডিন অভাবজনিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হবে; এতো সোজা হিসাব।
গান্ধীজী বলেন, কিন্তু পাকিস্তান থেকে অন্যধর্মের মানুষ উচ্ছেদের পর ওরা তো এখন শিয়া-সুন্নী লড়ে চলেছে!
থ্যাকারে বলেন, ভারতেও মুসলমান উচ্ছেদ হয়ে গেলে লড়াইয়ের সাবজেক্টের অভাব হবেনা। আয়োডিনের অভাব লড়াইয়ের সাবজেক্ট দেয় মাথায়।
দেবুদা বলেন, কালচারাল ক্ল্যাশ তো আছেই ভারতের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্ চিমে।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ রুষ্ট চিত্তে চুপচাপ এসে বসেন।
গান্ধীজী সেই পুরোনো প্রশ্নটা আবার করেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আপনি এই শিক্ষা দিলেন!
--আমি শিক্ষা দিয়েছিলাম জন্য এরা মঙ্গলে নভোযান পাঠিয়েছে!
দেবুদা ফোড়ন কাটে, কিন্তু মোদীজি বলেছেন, সেই অনেক আগে গণেশের মাথা হিসেবে হাতির মাথা প্রতিস্থাপনই নাকি ভারতের প্রথম প্লাস্টিক সার্জারীর প্রমাণ।
আজাদ নাত্থুকে বলেন, নাত্থু একটু মাথা ব্যথার ওষুধ এনে দিতে পারো।
নাত্থু অনুতাপ করে বলে, আমি অভিশপ্ত আমি যে কোন ওষুধ এনে দিলে তাতে আপনার মাথা ব্যথা বেড়ে যাবে।
বেহেশতের পুলিশ জিজ্ঞেস করে, বাল থ্যাকারের প্যারোলের সময় বাড়াবে কীনা!
দেবুদা বলেন, রাখুন; প্রেসক্লাবে একটা গোলটেবিলে রাখতে চাই উনাকে।
পুলিশ জানিয়ে দেয়, দেববাবু আপনাকে প্রেসক্লাবের ভি আইপি লাউঞ্জ ভাড়া দেয়া উপরের নিষেধ আছে।
--এই উপরের নিষেধ আছে কথাটা কবার বলেছেন জীবনে?
--পুলিশদের এটা প্রায়ই বলতে হয়।
গান্ধীজী খানিকটা সলিলকির ভঙ্গিতে বলেন, মানুষ কেন মানুষ পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকে না; তাকে কেন হিন্দু-মুসলমান পরিচয় নিয়ে এতো উতলা হতে হয়! ধর্ম নিয়ে দেশে দেশে উতলা হচ্ছে মানুষ। জার্মানীতে খ্রিস্টীয় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতা পাকা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসে কট্টর খ্রীস্টিয় রিপাবলিকানরা জাঁকিয়ে  বসেছে।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসলামের গৌরবগাথা নিয়ে ভারতের মোদীর মতই আলুথালু; আর ইজরায়েলে ইহুদীদের শৌর্য্যবীর্যের প্রতীক হয়ে নেতানিয়াহু প্যালেস্টাইনে জেনোসাইড চালাচ্ছে; সৌদী রাজবংশ নারীদের ওপর চড়াও হয়েছে; মেহরাম ছাড়া তারা রেষ্টুরেন্টেও যেতে পারবেনা। আর আল-কায়েদার ভায়রা ভাই ইসলামিক স্টেট ওরফে আই এস আর এক এবোলা ভাইরাস ধর্মের হাটবাজারে। কী ক্যাডাব্যারাস অবস্থা!
দেবুদা বাল থ্যাকারেকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর সব দেশের মাটিতেই কী আয়োডিনের অভাব!
থ্যাকারে দমার পাত্র নয়। মুচকি হেসে বলে, শীতের দেশে রোদের ভিটামিন ডির অভাব। আরব দুনিয়ায় অক্সিজেনের অভাব; বৃক্ষ নাই যে!
--এতোই যখন বোঝেন তো আপনি রাইট উইঙ্গার হলেন কেন শ্রীযুক্ত থ্যাকারে!
--পলিটিকস ইজ আ বিজনেস। নাথিং ইজ আনফেয়ার ইন লাভ এন্ড পলিটিকস।
দেবুদা খানিকটা বিব্রত হয়ে বলেন, লাভ ইজ বেটার দ্যান পলিটিকস।
মওলানা আজাদ বলেন, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো অন্ততঃ এটুকু এগিয়েছে যে তারা জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলেনা।
দেবুদা বলেন, ওদের জ্যোতিষীর সংখ্যা কম বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশী; আর আমাদেরতো কোন বিজ্ঞানী নাই সব জ্যোতিষী। টিভি টকশো খুললেই দেখা যায়  সংবাদ-জ্যোতিষীরা ঝগড়া করছে। জ্যোতিষ শাস্ত্রই আমাদের মূল শক্তির জায়গা।

এমন সময় পার্বতীর ফোন আসে, হ্যালো শোনো টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম।জ্যোতিষী যোগেশ মিশ্র। আমায় একটু নিয়ে যাবে। আমি জানতে চাই  আমাদের বিয়েটা টিকবে কীনা!
দেবুদা ফোন বন্ধ করে দেয়। মাথা হেট করে বসে থাকে। ঘরেই যার কুসংস্কারের রাণী; তার কী এতো বড় বড় কথা বলা সাজে!
গান্ধীজী অশ্রুসজল চোখে বলেন, নাই নাই এ আঁধার থেকে ফেরার পথ নাই।
দেবুদা গান্ধীজীর বাড়ী থেকে বের হয়ে চন্দ্রমুখীকে একটা ফোন দেয়। চন্দ্র শপিং-এ বেরিয়েছে। সুষমার বক্তৃতা শোনার পর তার মনে হয়েছে বাসায় একটা গীতা থাকা দরকার।
দেবুদা ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে নিজের মাথাটা দুবার বাড়ি দেয়।
এরপর নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে রাশান বান্ধবী আনা চেয়ারে বসে।
দেবুদা ম্লানকন্ঠে বলে, আমি এই ভারতীয় সভ্যতার সূর্যাস্ত সহ্য করতে পারছিনা আনা!
আনা দেবুদার কাঁধে হাত রেখে বলে, সূর্যাস্ত মানেই হয়তো আরেকটি সূর্যোদয়ের সম্ভাবনা।

No comments:

Post a Comment