বেহেশতে এসে দেবুদা সারাক্ষণ ইভেন্ট করে বেড়ায়। আজ এই হয়েছে তো কাল সেই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শরত বাবুর ফেসবুক আইডিতে মেসেজ পাঠান, দেবুর হয়েছেটা কী! শরতবাবু উত্তর দেন, গান্ধীজীর ব্যামো।
দেবু বেহেশতের সাম্যবাদী ও কাম্যবাদী দলের বাইরে একটি থার্ড ফোর্স তৈরী করতে চায়। দলে জনপ্রিয় লোকদের ভেড়ানোর জন্য দিনরাত ছুটে বেড়ায় জনপ্রিয়দের পেছনে। শরতবাবু ফোন করে ধমক দেন, দেবু তোমার কী খেয়ে দেয়ে কাজ নেই। পার্বতীর সঙ্গে বিয়ের জন্য এতো যে আকুল হয়েছিলে; রোজরাতে এসে ঘ্যান ঘ্যান করতে, ও দাদা পারুর সঙ্গে বে থা করিয়ে দেন; নইলে বাঁচবো না। তো এখন তো বেশ পার্বতীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে; থাকো সুখে। এই পলিটিক্যাল ডার্ট-এর মধ্যে যাচ্ছো কেন?
দেবুদার ভীষণ রাগ হয়।শরত বাবুকে দুকথা শুনিয়ে দেয়। দাদা আজ আমার সব ক্ষোভ আপনার উপর। এই পারুর মতো মেয়ের সঙ্গে আপনিই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। সারাক্ষণ হিন্দী সিরিয়াল দেখে। আজকালতো বাংলা বলা ছেড়েই দিয়েছে। রান্নাঘরে সে যায়না। বাঙ্গালী খাবার তার মুখে রুচে না। খালি পিটযা আর পাস্তা অর্ডার করে।
শরত বাবু টুক করে ফোনের লাইনটা কেটে দেন। মনে মনে ভাবেন বানশালী বেটাকে হিন্দীতে দেবদাস ফিল্ম বানাতে দেয়াই ভুল হয়েছে। পার্বতীর মধ্যে একটা উটকো বড়লোকি ভাব এসে গেছে।
দেবুদা একটা ট্যাক্সি নিয়ে উত্তম কুমারের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ট্যাক্সিচালক আনন্দে উথলে ওঠে। দেবুদাও বিস্মিত। চুনিলাল। কতদিন পরে দেখা! চুনিলাল দেবুদাকে জড়িয়ে ধরে। দেবুদা জিজ্ঞেস করে, তুমি বেহেশতে চান্স পেলে কীভাবে! যে ফক্কর লোক ছিলে তুমি। চুনি ফিক ফিক করে হাসে, প্রথমে জায়গা মতোই পাঠিয়েছিল। একেবারে হাবিয়াহ দোজখে। পরে উপায়ান্তর না দেখে চন্দ্রমুখীদিকে ফোন করলাম। উনি বেহেশতের ইমিগ্রেশন দপ্তরকে ধরে আমাকে বেহেশতে আনার ব্যবস্থা করেছে। তবে আমার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে; আঙ্গুরের রস স্পর্শ করলেই আবার হাবিয়াতে ফেরত পাঠানো হবে। আজ কাজও দিয়েছে ট্যাক্সি চালানোর। তবে আমি খুশী দেবুদা। নরক যন্ত্রণার চেয়ে ট্যাক্সি চালানো ভালো। আর নরকে যত ফোরটোয়েন্টি করাপ্ট পলিটিক্যাল লিডার, ক্যাডার, আমলা, ব্যবসায়ী, পুলিশ। এদের সঙ্গে কী থাকা যায়!
মহানায়ক উত্তম কুমার বাড়ীর বাগানে বসে হলিউডের অড্রে হেপবার্ণের সঙ্গে গল্প করছেন আর চুকচুক করে রুহ আফজা খাচ্ছেন। দেবুদা মনে মনে ভাবে, ভুল সময়ে এসে পড়লাম নাকি। কারণ ভি আই পিরা সবচেয়ে বিরক্ত হন বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করার সময় কেউ এলে।
দেবুদা নমস্কার বলে চুনিলাল সহ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে। উত্তম কুমার একটি সিগ্রেট ধরিয়ে স্লো মোশানে টানছিলেন। মহানায়কের এই মন্থর ভাবভঙ্গীতে অড্রে হেপবার্ণ বেশ ইমপ্রেসড মনে হচ্ছে। উত্তম কুমার ঘাড় একশো পঁচিশ ডিগ্রী ঘুরিয়ে মিষ্টি হাসেন। ভুবন ভোলানো হাসি।
দেবুদা মুগ্ধ হয়ে যায়; এই না হলে মহানায়ক; আজকাল কীসব নায়ক জুটেছে অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাওয়া লোকজন। চুনিলালের রুহ আফজা দেখেই হয়ে গেছে। সে চেষ্টা করে এ জিনিস নজরে না আনতে। উত্তম কুমার বলেন, কই দেবুদা ঢালো। চুনিদাকে বেশী করে দিও। চুনিলাল ইতস্ততঃ করে। ইয়ে মানে মহানায়ক আমার ওসব খেতে বারণ।
অড্রে হেপবার্ণ অবাক, খেতে বারণ মানে!
দেবুদা ব্যাপারটা ম্যানেজ করে, না মানে চুনিদা তার আবে হায়াতের কোটা মর্ত্যেই শেষ করে ফেলেছেন।
উত্তম কুমার নিজেই উঠে যান চুনিলালের জন্য চা বানাতে। দেবুদা স্তম্ভিত হয়ে যায়; যে উত্তমদার বেশীরভাগ ফিল্মে উনি শুয়ে বসে সিগ্রেট ফুঁকতেন; আর ঘর গুছানো থেকে সব কাজ সুচিত্রা সেনকে করতে দেখা যেতো; তিনি আজ নিজ হাতে চা বানাচ্ছেন। এও কী সম্ভব! হেপবার্ণ বলেন, আজকাল হেলপ করতে চাইলেও উত্তম নেয় না। ও বলে নিজের কাজ নিজে না করে সুচিত্রার উপর নির্ভরশীল হবার কারণে জীবনে সব নারীই ওর হৃদয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এখনো সুচিত্রা ফোন করে বলে, লিখে রেখো এক ফোটা দিলেম শিশির।
দেবুদা বলে, আমারও একি অবস্থা। পার্বতীতো আজকাল একটা কাঠি ভেঙ্গে দু’ভাগ করেনা। আমাকে সারাক্ষণ হুকুম করে। ফুটফরমায়েশ খাটার ভয়েই বাড়ীর বাইরে বাইরে থাকি।
উত্তম চা এগিয়ে দেন চুনিলালের দিকে।
চুনি মুচকি হেসে বলে, মহানায়কের তৈরী করা চায়ে চুমুক দেবার আগেই টিপসি লাগছে!
দেবুদা কথা শুরু করেন, মহানায়ক; আজকাল একটা ট্রেন্ড দেখছি, গায়ক-অভিনেতা এরা সব কাম্যবাদী দলে চলে যাচ্ছে।
চুনিলাল যোগ করে, জীবনমুখী গান গাওয়া লোকজন মরণমুখী রাজনীতি শুরু করেছে।
অড্রে হেপবার্ণ বলেন, আর তোমাদের ওখানে গায়ক-টায়কের নাম ডাক হলেই গয়না-গাটি পরে। আজকাল মেয়েদেরও তো এমন গয়নার বাক্স নেই মনে হয়।
মহানায়ক বলেন, দেখো বেহেশতে যে রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন; এরা ছিলেন নেতা। লিডার যাকে বলে।বঙ্গবন্ধু- জ্যোতিবসু। সব আইকনিক ফিগার। মানুষের সেবা করাটাই ছিলো তাদের ব্রত। আর এখন রাজনীতিতে সেবা বলে কিছু নেই; সবই সেবার অভিনয়; তাই প্রয়োজন অভিনেতা।
অড্রে রিনিঝিনি হেসে বলেন, থার্ড ক্লাস অভিনেতারাই রাজনীতিতে আসে; রোনাল্ড রেগান থেকে আর্নল্ড সোয়ার্জনিগার পর্যন্ত যা দেখছি; আর এরা সব কেন যেন রাইট উইং গার।
মহানায়ক বিস্ময় প্রকাশ করেন, একজন শিল্পী রাইট উইং গার হয় কীভাবে। সেকুলারিজমই তো শিল্পের গোড়ার কথা।
দেবুদা মুখ পাংশু করে বলে, কী আর বলবো দাদা লতা মাঙ্গেশকারের মতো গায়িকা মোদীর ব্রান্ড এমব্যাস্যাডর হয়েছেন।
চুনিলাল বলে, ভারতীয় উপমহাদেশে বুড়ো বয়েসে মৃত্যুভয় থেকে একটা ভীমরতি ধরে সবার। আর শিল্পীদের রাজ-শিল্পী হবার রাজ রোগ সব যুগেই ছিল।
উত্তম কুমার বলেন, কই সত্যজিত রায়ও তো বুড়ো হয়েছিলেন; কোনই পরিবর্তন দেখিনি। আসলে শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারটাই মূখ্য।
দেবুদা হাসেন, শিক্ষা দিয়ে আর কী হবে! এখন ভারতীয় উপমহাদেশে ক্ষমতায় যাবার পূর্বশর্ত অশিক্ষিত হতে হবে।কারো কারো সার্টিফিকেট আছে; কিন্তু শিক্ষাটা নেই।
উত্তম জিজ্ঞেস করেন, আজকাল শুনলাম এলিটিস্ট ফিল্ম হচ্ছে!
চুনিলাল ফোড়ন কাটে, বাংলা-ইংজিরি-হিন্দী মিশিয়ে কিছু ছেঁড়া ছেঁড়া ডায়ালগ, মেয়ে গুলো বিলিতি মেমের মতো জামা-কাপড় পরা, কথায় কথা রবীন্দ্র সঙ্গীতের সব্বনাশ করে ছাড়া; একটা বড়লোকির মধ্যে কী যেন নেই; কী যেন নেই; লাইফ ইজ মিনিংলেস ভাবসাব নিয়ে ঘোরা।
অড্রে হেপবার্ণ বলেন, ওরা হয়তো এলিয়েনেশনের রোগী; নাগরিক বিচ্ছিন্নতা ফুটিয়ে তুলতে চায়।
দেবুদা ক্ষিপ্ত হয়, দেশের মানুষের জীবনে সমস্যার তো শেষ নেই; এখন টিকেট কেটে কতগুলো উতচিংড়ে এংলো-ইন্ডিয়ান ভাবসাবের বার্গার সমাজের সমস্যা দেখে নতুন হতাশা বাধানোর দরকার কী!
মহানায়ক বলেন, এগুলোকে সেলফি ফিল্ম বলা যায়; একটু এফলুয়েন্স শো অফ করা। দেখবে এদের চেহারা-পত্তরের ভূগোল বেশ করুণ; সেটাকেই এসব আগড়ুম বাগরুম জিনস-টিশার্ট-হ্যাট কিংবা ডার্ক আই-শ্যাডো দিয়ে ঢেকে রাখা।
অড্রে হেপবার্ণ রিনর ঝিনি হেসে বলেন, এই রোগ এমেরিকায় ১৯২০ থেকে ৩০ সালের মধ্যে বেড়েছিল; প্রায় একশো বছর পর এরোগ ভারতে।
মহানায়ক বলেন, নাগরিক বিচ্ছিন্নতার কথা তিরিশেই পাঁচজন কবি লিখে গেছেন। কই তাদেরকে টেক্সাসের কাউ বয় সেজে ঘুরতে দেখেনি কেউ!
হঠাত বেহেশতের কিছু পুলিশ এসে উপস্থিত। একজন মহানায়কের দিকে তাকিয়ে বলে, সরি স্যার খুব বিব্রত বোধ করছি। দেবদাসের একটা গ্রেফতারী পরোয়ানা আছে।
উত্তম বিস্মিত, সে কী কেন। ওতো হার্মলেস লোক। দেবু আমি কী আসবো তোমার সঙ্গে!
দেবুদা পুলিশকে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার।
-চলুন থানায় গিয়েই কথা হবে।
চুনিলাল অভ্যাস বশতঃ কিছু টাকা গুঁজে দিতে চেষ্টা করে পুলিশের পকেটে।
পুলিশ ধমক দেয়, এটা কী আপনার দক্ষিণ এশিয়া পেয়েছেন মশাই; এটা বেহেশত, এখানে ঘুষ ফুষ চলেনা।
পুলিশ দেবুদাকে নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে দেখে পার্বতী বসে।
থানার দারোগা চোখে সুরমা দিতে দিতে বলে, এই মহিলাই আপনার বিরুদ্ধে ডায়েরী করেছেন। অভিযোগ গুরুতর; তাই আপনাকে গ্রেফতার করতে হয়েছে।
দেবুদা পার্বতীকে জিজ্ঞেস করে, কী ব্যাপার আমি আবার কী করলাম!
--কী করলাম মানে! আমি তোমাকে পঁই পঁই করে বললাম একটা পাখী ড্রেস কিনে দিতে; তুমি কানেই তুললে না। দিয়েছিক কেস ঠুকে।
দারোগা ভ্রু কাঁপিয়ে বলে, আপনার সঙ্গে পারুর ফেসবুক ইনবক্স চ্যাটিং-এর স্ক্রিণ শট জমা দিয়েছেন উনি।আপনিতো হার্টলেস মশাই। পারু আপনাকে সিল্কের পাঞ্জাবী, হাল ফ্যাশানের ধুতি, নক্সী স্যান্ডেল কত কিছু গিফট করেছে; আর আপনি কীনা একটা পাখি ড্রেস কিনে দিতে পারেননি। আপনি কী পাষন্ড মশাই!
Thursday, January 17, 2019
Tuesday, January 15, 2019
গোলাম আযম পরিদর্শন।
বেহেশতে খবর রটে যায় গোলাম আজম দোজখে এসেছে। দেবুদার ইচ্ছা হয় প্রাণীটাকে দেখতে যাবে। দেবুদা ফোন করে বেহেশতের এক আধিকারিককে। সে খেঁকিয়ে ওঠে,
--আপনি কী বাচ্চা ছেলে মশাই; এমন বায়না ধরেছেন যেন চিড়িয়াখানা দেখতে যাবেন।
দেবুদা দমে যায়।বেহেশতের কর্মকর্তারা দেবুদার থার্ড ফোর্স মুভমেন্টের জন্য বেশ বিরক্ত। সাম্যবাদী আর কাম্যবাদী দুটো দলতো আছেই; এইখানে জনপ্রিয়তাহীন তৃতীয় শক্তি নিয়ে হাজির হবার দরকার কী!
এর আগে বেহেশতের প্রেসক্লাবে সেমিনার করে হিটলারকে এনে তাকে নিয়ে দেবুদা যে সিনক্রিয়েট করেছিল; এরপর দেবুদা আর প্রেসক্লাবের বুকিং পায়না।
দেবুদা সাম্যবাদী দলের নেতা গান্ধীজীকে ফোন করে,
-গান্ধীজী কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম দোজখে এসেছে শুনলাম। একটু দেখে আসতে চাই জিনিসটাকে।
গান্ধীজী ব্যস্ত ছিলেন লায়লা আর জুলিয়েটকে অহিংস মতবাদ শেখাতে। পার্বতী এই সেশানে আসার সময় পায়না; ভীষণ ব্যস্ত স্টার জলসার নাটক দেখতে। বেহেশতে আসার পর লায়লা-মজনু; রোমিও-জুলিয়েট;দেবদাস-পার্বতীকে বিয়ে দিয়ে বিরাট ঝামেলায় পড়েছে কতৃপক্ষ। গান্ধীজী সেই ম্যারেজ কাউন্সেলিং করছেন। দেবুদার ফোন পেয়ে গান্ধীজী বুঝতে পারেন দেবুর মাথায় রাজনীতির পোকাটা চিরস্থায়ী হয়ে গেছে। যার স্ত্রী সারাক্ষণ টিভিসোপ দেখে আর খিল খিল করে হাসে; সে হয় দার্শনিক হবে বা রাজনীতিক হবে এতো জানা কথা।
গান্ধীজী ফোন করে দেবুদার জন্য দোজখের টিকেট জোগাড় করে দেন। সঙ্গে চুনিলালও যাবে। চুনি বেহেশতে ট্যাক্সি চালায়। দেবুদার তাবত একটিভিজমে চুনিদা আছেই।
দেবুদাকে চন্দ্রমুখী ফোন করে, তুমি নাকি দোজখে যাচ্ছো!
--একেবারে যাচ্ছি না;মানব সভ্যতার শত্রু কিছু ঘৃণ্য ঘাতককে দেখতে যাচ্ছি।
--তুমি এসব আজেবাজে লোক দেখতে এতদূর যেতে পারো; আর আমার এপার্টমেন্টে আসার সময় পাওনা।
--রাখি চন্দ্র।
দেবুদার আজকাল পারু-চন্দ্র দুজনের সঙ্গে কথা বললেই কেমন ভয় ভয় লাগে। অনেক দেরীতে হলেও দেবুদা বুঝে গেছে; নারী মূলতঃ টেনশান সেন।
চুনি লাল যথাসময়ে তার ট্যাক্সিক্যাব নিয়ে পৌঁছে যায়। অনেক দিন পর লং ড্রাইভ। চুনিলালের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে; বেহেশতে সে রুহ আফজা স্পর্শ করতে পারবে না। আজ অনেক দিন পর যেন মুক্তির আনন্দ। দোজখের চেকপোস্ট পার হবার পর চুনিদা লেগে যায় তার হোমিওপ্যাথ পরিসেবায়। দেবুদাও একটু গলা ভিজিয়ে নেয়।
দোজখের একজন সহকারী কমিশনার দেবুদাকে রিসিভ করে। বেশ হাসিখুশী লোক।
--দেবুদা পশুগুলি রেডি।চলেন ভিজিট শুরু করা যাক।
চুনিলাল টলতে টলতে তার হ্যান্ডিক্যাম অন করে।
গোলাম আজমকে একটি বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। পাশে হেলান দিয়ে বসে পিয়াস করিম।
দেবুদা বলে, গোলাম সাহেব কেমন লাগছে!
গোলামের চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে, এখানে খুব খাওয়ার কষ্টে আছি; দিনগুলি মোর পোলাও খাঁচায় রইলো না।
পিয়াস করিম বলে, এইখানে আমি একটা কাউন্টার হেজিমোনি দিতে চাই; এই পোলাও-ই আমার কোলেস্টেরল বেড়ে যাবার কারণ।
চুনিলাল জিজ্ঞেস করে,কাউন্টার হেজিমোনি কী দাদা!
পিয়াস বলে, আমাদের পুরোজীবনটা হেজিমোনির বৃত্তে আটকানো। কার্ল মার্কস এই হেজিমোনি চলতে দিতে চেয়েছেন। যেমন আপনি বেহেশতে থাকেন আমি দোজখে এটা প্যারালাল হেজিমোনি। কিন্তু আমাদের একটা ডায়ালগ দরকার তাইতো আপনারা এখানে।
চুনিলালের মাথা বোঁ বোঁ করে ঘুরে।
--ও দেবুদা এ যে ইংরেজীতে গালাগাল করছে।
পিয়াস বলে, গালাগাল বলে কিছু নেই; সবটাই ডিসকোর্স।
দেবুদা গোলামকে জিজ্ঞেস করে এই লোক কে!
গোলাম বলে, মার্ক্সিস্ট পিয়াস।
দেবুদার অবাক লাগে। মার্ক্সিস্ট আবার বসে আছে গোলামের সাথে।
দেবুদা কার্ল মার্ক্সকেএকটা ফোন দেয়।
--স্যার মার্ক্সিস্ট পিয়াস বলে কাউকে চেনেন!
--কোথাকার সে!
--আজ্ঞে বাংলাদেশ।
--শোন দেবু সূর্যসেন আর প্রীতিলতা ছাড়া আর কাউকে চিনিনা। এ কী তোমার কাছে চাঁদা চাইছে; আমার নামে আজকাল চাঁদাবাজি করে অনেকে; সাবধান।
ওদিকে পিয়াস থেমে নেই,এই যে দোজখ ও বেহেশতের কনসেপ্ট; এটি ইক্যুয়ালিটির মূল সূত্রকে অবজ্ঞা করে। আপনি আমাকে সাব-অল্টার্ণ বলতে পারেন; কিন্তু দাবীর প্রশ্নে আমি ভীষণ একরোখা।
চুনিদা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে,থামুন মশাই; গেলোতো রুহ আফজার মৌতাত কেটে; কীসব কঠিন কথা বলেন!
দেবুদা গোলামকে জিজ্ঞেস করে, আপনার আদর্শ কে!
--হিটলার এবং মওদুদী।
--একাত্তরের গণহত্যার জন্য অনুতাপ হয়না!
--কিসের অনুতাপ; আমিতো শান্তিপ্রিয় কমিটিতে ছিলাম।
--তাহলে হিটলার আপনার আদর্শ কেন!
পিয়াস কথা কেড়ে নেয়, ধরে নিন হিটলার যদি যুদ্ধটা জিতে যেতো তাহলে ওয়ার্ল্ড পলিটিক্সে একটা ইকুইলিব্রিয়াম তো আসতো।
দেবুদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,সিক্স মিলিয়ন মানুষ হত্যা কিছু নয় আপনার কাছে।
এমন সময় সহকারী কমিশনারমনে করিয়ে দেন এদের ইলেকট্রিক শক ও লাঞ্চের সময় হয়েছে।
দেবুদা গোলামের ঘর থেকে বেরুতেই একলোক লম্বা সালাম দেয়।
চুনিদা কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, এই কাদেরই সেই কাদের।
দেবুদা জিজ্ঞেস করে,কেমন আছেন!
কাদের বলে, দেবুদা আপনারতো অনেক প্রভাব; আমাকে বেহেশতে একটা ডেপুটেশান জোগাড় করে দেন; না হয় শহীদুল্লাহ কায়সার সাহেবের বাসায় মেঝে ধোওয়া-মোছার কাজ করবো।
দেবুদা বিরক্ত হয়।
--দেখুন তদবির করবেন না;আর যুদ্ধাপরাধীদের বেহেশতে ডেপুটেশানের নিয়ম নেই।
কাদের চোখ মুছতে মুছতে এগিয়ে যায়; জলন্ত কয়লায় ওপরে হাঁটার সেশানে।
দেবুদা অবাক হয়, এইলোক গুলোর কোন অনুতাপ নেই তিন মিলিয়ন মানুষ খুন করে। কী পিশাচ এরা।
ঘরের মধ্যে থেকে পিয়াস বলে, আমাকে কিছু বললেন!
সহকারী কমিশনার আঙ্গুলনির্দেশ করেন, ঐ যে দেখুন মওদুদী তাকে ফাঁটা বাঁশের চিপায় নাচানো হচ্ছে।
--এতো আদিবাসী নৃত্য।
--নাচতে জানলে আদিবাসীনৃত্য; না জানলে কষ্টের ব্যাপার।
হিটলারকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে উলটো করে। মাথার কাছে বার বি কিউ চুলো।
সহকারী কমিশনার জানায়,ধাপে ধাপে গোলামকেও এসব পানিশমেন্ট দেয়া হবে।
চুনিদা জিজ্ঞেস করে, ঐ জটিল করে কথা বলা লোকটার কী করবেন!
--ওর জন্য জিলাপী গ্রাউন্ড তৈরী করা হচ্ছে; মোটা শরীর নিয়ে জিলাপীর প্যাঁচে প্যাঁচে এক্সট্রা ড্রিল করালেই ঠিক হয়ে যাবে।
দেবুদা সহকারী কমিশনারকে ধন্যবাদ দেয় দোজখে ট্যুর করানোর জন্য। জিজ্ঞেস করে,
--এরা কী খায়!
--সেদ্ধ করলা, কাঁকরোল ভাত, ঠান্ডা নানরুটি, আধা সিদ্ধ কচু ইত্যাদি।
--বাহ বেশ হেলদি ফুড।
সহকারী কমিশনার রসিকতা করে, খাবেন নাকি!
--না থাক।
বারান্দায় বেরিয়ে পিয়াস দেবুদাকে বলে; দুটো ভিন্ন থট প্রসেসের মাঝে ডায়ালগের আয়োজন করুন। কারণ বেহেশত-দোজখের মধ্যে ইন্টেলেকচুয়াল এক্সচেঞ্জ জরুরী।
চুনিদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,আপনার একটা কথারও মানে বুঝিনা। আপনি কোন ভাষায় কথা বলেন?
--একাডেমিশিয়ানের ভাষায়;অনেকগুলো স্কুল অফ থটকে একসঙ্গে নিয়ে চলি। পোস্ট মডার্ণ এপ্রোচে দেখি কনফ্লিক্টপয়েন্টগুলো।
দেবুদা সহকারী কমিশনারের কাছে জিজ্ঞেস করে, আপনার কাছে কী মাথা ব্যথার কোন ওষুধ আছে।
পিয়াস ঔষুধ এগিয়ে দেয়, আমি পকেটেই রাখি; কারণ আমার সঙ্গে কথা বলার পর সবাই মাথা ব্যথার ওষুধ চায়।
#২০১৫
Sunday, January 13, 2019
বেহেশতে পাক-ভারত রাজনীতি আলোচনা
বেহেশতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এক পাকিস্তানের কট্টরপন্থাতেই পুরো দক্ষিণ এশিয়া অস্থির। এখন আবার ভারতে নতুন কট্টরপন্থার ঢেউ। দেবদাস চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্টে বসে টিভির খবর শোনে। এক কট্টর নেতা বলছে যারা রামের সন্তান নয় ঐ –দের ভারতে থাকা নিষেধ। ঠিক যেভাবে পাকিস্তানের জামাত নেতা মওদুদী থেকে আজকের চুনোপুঁটি বলে যাচ্ছে, যারা সাচ্চা মুসলমান নয় তাদের পাকিস্তানে থাকার অধিকার নাই। ভারতের আরেক বিজেপি নেতা বলছে,
তাজমহলের জায়গায় আগে মন্দির ছিলো; মানে আরেক বাবরী মসজিদের কুরুক্ষেত্রের রেসিপি। পাকিস্তানে তো সব মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে চক্ষুলজ্জায় গুরুমন্দির রেখে দিয়েছে এই লোকগল্পে, সম্রাট আকবর যোধা বাঈকে নিয়ে হানিমুনে এসে এই মন্দিরে সময় কাটিয়েছিলেন। দেবুদার প্রেশার বেড়ে যায়। চন্দ্রমুখী কাগজী লেবুর শরবত করে দেয়।
দেবুদা মেজাজ বিগড়ে বলে, এরশাদের মত করে বলে "আমরা কী এই ভারত চেয়েছিলাম"।
চন্দ্রমুখী টিভির ভলিয়ুম বাড়িয়ে দেয়, বিজ্ঞানমন্ত্রী বলছেন, জ্যোতিষশাস্ত্রই আসল বিজ্ঞান।
দেবুদাতো জাস্ট হা হয়ে যায়।
সুচরিতাসু সুষমা বলছে গীতাকে জাতীয় গ্রন্থ ঘোষণা করা হবে।
চন্দ্রমুখী বলে, মোদী না বললে, টয়লেট ফার্স্ট টেম্পল লেইটার।
দেবুদা বিষণ্ণ হয়ে বলেন, হয়তো এই টিভি বাইটগুলোই আধুনিক টয়লেটের সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে!
গান্ধীজীর ফোন আসে, দেবু একটু চট করে চলে এসো। কাজের সময় নেহেরুকে পাইনা। আর জিন্নাতো খালি মিন মিন করে।
দেবুদা বলেন, গান্ধীজী বড় বড় নেতাকে বিপদে আপদে পাননা; তখন দেবুকে মনে পড়ে!
গান্ধীজী হেসে বলেন, অভিমান কোরোনা; চলে এসো; পরিস্থিতি গুরুতর।
দেবুদা বের হতে যাবে এমন সময় চন্দ্রমুখী বলে, তুমি বদলে গ্যাছো দেবুদা।আমার জন্য কোন সময় নেই তোমার।
দেবুদা বিব্রত হয়, চন্দ্র ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।
চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে বলে, আমি জানি তুমি এক বোকার হদ্দ।
গান্ধীজীর বাসায় ঢুকেই দেবুদা দেখে বাল থ্যাকারেকে বেহেশতের পুলিশ প্যারোলে নিয়ে এসেছে। থ্যাকারে হাসি হাসি মুখে বসে গ্রীণ টি আর টোস্ট বিস্কিট খাচ্ছে।
গান্ধীজী ঠান্ডা গলায় বলেন, এ তুমি কী মৌলবাদের বীজ পুঁতে এলে থ্যাকারে!
থ্যাকারে বিনয়ের সঙ্গে বলে, বাপু পুরো ভারতবর্ষটার মাটিতে আয়োডিনের খুব অভাব। ফলে ভারতবাসীর বুদ্ধাংক খুব নীচের দিকে। আপনি এদের নিয়ে বৃথা চেষ্টা করেছিলেন। নেহেরু-জিন্নাহ জানতেন ভারতবর্ষের মানুষ ডিভাইডেড হবার জন্য প্রস্তুত।ইংরেজ যেটা কাজে লাগিয়েছে; এমনি তো লাগায়নি। এই যে ব্যাটা নাথুরাম গডসেই যে এখন আপনার পা টিপছে; ওর আয়োডিন ঘাটতি আছে।
নরক থেকে ডেপুটেশানে গান্ধীজীর আশ্রমে এসেছে নাত্থু; সে গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এখন প্রায়শ্চিত্ত করে গান্ধীজীর পা টিপে।
থ্যাকারে বলেন, এই নাত্থুকে আপনি যদি এখন নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন; ভূমিধস বিজয় এনে দেবে। কারণ ভোটাররা এখন নাত্থুবাদী।
গান্ধীজী অবাক। মানে হোয়াট ইজ নাত্থুবাদ!
থ্যাকারে বলেন, নির্বোধ হিংস্রতা। পাকিস্তান-ভারত দু’দেশেই এখন অশিক্ষা,ধর্ম প্রদর্শন আর পশ্চাদপদতাই ভোটারদের পছন্দ।
গান্ধীজী বলেন, তাহলে আর দেশ বিভাগের কী দরকার ছিলো!
থ্যাকারে হাসেন, হিন্দু-মুসলমান কট্টরপন্থী নাত্থুরা দুটো দেশ চালাচ্ছে মন্দ কী!
গান্ধী গম্ভীরতর হয়ে বলেন, তুমি তো নিজেই এর জন্য দায়ী; আর ঐ মওদুদীব্যাটা।
--বাপু আপনিই যুগের হাওয়া বোঝেননি। নেহেরু-জিন্না বুঝেছিলেন। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র আয়োডিন অভাবজনিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হবে; এতো সোজা হিসাব।
গান্ধীজী বলেন, কিন্তু পাকিস্তান থেকে অন্যধর্মের মানুষ উচ্ছেদের পর ওরা তো এখন শিয়া-সুন্নী লড়ে চলেছে!
থ্যাকারে বলেন, ভারতেও মুসলমান উচ্ছেদ হয়ে গেলে লড়াইয়ের সাবজেক্টের অভাব হবেনা। আয়োডিনের অভাব লড়াইয়ের সাবজেক্ট দেয় মাথায়।
দেবুদা বলেন, কালচারাল ক্ল্যাশ তো আছেই ভারতের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্ চিমে।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ রুষ্ট চিত্তে চুপচাপ এসে বসেন।
গান্ধীজী সেই পুরোনো প্রশ্নটা আবার করেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আপনি এই শিক্ষা দিলেন!
--আমি শিক্ষা দিয়েছিলাম জন্য এরা মঙ্গলে নভোযান পাঠিয়েছে!
দেবুদা ফোড়ন কাটে, কিন্তু মোদীজি বলেছেন, সেই অনেক আগে গণেশের মাথা হিসেবে হাতির মাথা প্রতিস্থাপনই নাকি ভারতের প্রথম প্লাস্টিক সার্জারীর প্রমাণ।
আজাদ নাত্থুকে বলেন, নাত্থু একটু মাথা ব্যথার ওষুধ এনে দিতে পারো।
নাত্থু অনুতাপ করে বলে, আমি অভিশপ্ত আমি যে কোন ওষুধ এনে দিলে তাতে আপনার মাথা ব্যথা বেড়ে যাবে।
বেহেশতের পুলিশ জিজ্ঞেস করে, বাল থ্যাকারের প্যারোলের সময় বাড়াবে কীনা!
দেবুদা বলেন, রাখুন; প্রেসক্লাবে একটা গোলটেবিলে রাখতে চাই উনাকে।
পুলিশ জানিয়ে দেয়, দেববাবু আপনাকে প্রেসক্লাবের ভি আইপি লাউঞ্জ ভাড়া দেয়া উপরের নিষেধ আছে।
--এই উপরের নিষেধ আছে কথাটা কবার বলেছেন জীবনে?
--পুলিশদের এটা প্রায়ই বলতে হয়।
গান্ধীজী খানিকটা সলিলকির ভঙ্গিতে বলেন, মানুষ কেন মানুষ পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকে না; তাকে কেন হিন্দু-মুসলমান পরিচয় নিয়ে এতো উতলা হতে হয়! ধর্ম নিয়ে দেশে দেশে উতলা হচ্ছে মানুষ। জার্মানীতে খ্রিস্টীয় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতা পাকা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসে কট্টর খ্রীস্টিয় রিপাবলিকানরা জাঁকিয়ে বসেছে।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসলামের গৌরবগাথা নিয়ে ভারতের মোদীর মতই আলুথালু; আর ইজরায়েলে ইহুদীদের শৌর্য্যবীর্যের প্রতীক হয়ে নেতানিয়াহু প্যালেস্টাইনে জেনোসাইড চালাচ্ছে; সৌদী রাজবংশ নারীদের ওপর চড়াও হয়েছে; মেহরাম ছাড়া তারা রেষ্টুরেন্টেও যেতে পারবেনা। আর আল-কায়েদার ভায়রা ভাই ইসলামিক স্টেট ওরফে আই এস আর এক এবোলা ভাইরাস ধর্মের হাটবাজারে। কী ক্যাডাব্যারাস অবস্থা!
দেবুদা বাল থ্যাকারেকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর সব দেশের মাটিতেই কী আয়োডিনের অভাব!
থ্যাকারে দমার পাত্র নয়। মুচকি হেসে বলে, শীতের দেশে রোদের ভিটামিন ডির অভাব। আরব দুনিয়ায় অক্সিজেনের অভাব; বৃক্ষ নাই যে!
--এতোই যখন বোঝেন তো আপনি রাইট উইঙ্গার হলেন কেন শ্রীযুক্ত থ্যাকারে!
--পলিটিকস ইজ আ বিজনেস। নাথিং ইজ আনফেয়ার ইন লাভ এন্ড পলিটিকস।
দেবুদা খানিকটা বিব্রত হয়ে বলেন, লাভ ইজ বেটার দ্যান পলিটিকস।
মওলানা আজাদ বলেন, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো অন্ততঃ এটুকু এগিয়েছে যে তারা জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলেনা।
দেবুদা বলেন, ওদের জ্যোতিষীর সংখ্যা কম বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশী; আর আমাদেরতো কোন বিজ্ঞানী নাই সব জ্যোতিষী। টিভি টকশো খুললেই দেখা যায় সংবাদ-জ্যোতিষীরা ঝগড়া করছে। জ্যোতিষ শাস্ত্রই আমাদের মূল শক্তির জায়গা।
এমন সময় পার্বতীর ফোন আসে, হ্যালো শোনো টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম।জ্যোতিষী যোগেশ মিশ্র। আমায় একটু নিয়ে যাবে। আমি জানতে চাই আমাদের বিয়েটা টিকবে কীনা!
দেবুদা ফোন বন্ধ করে দেয়। মাথা হেট করে বসে থাকে। ঘরেই যার কুসংস্কারের রাণী; তার কী এতো বড় বড় কথা বলা সাজে!
গান্ধীজী অশ্রুসজল চোখে বলেন, নাই নাই এ আঁধার থেকে ফেরার পথ নাই।
দেবুদা গান্ধীজীর বাড়ী থেকে বের হয়ে চন্দ্রমুখীকে একটা ফোন দেয়। চন্দ্র শপিং-এ বেরিয়েছে। সুষমার বক্তৃতা শোনার পর তার মনে হয়েছে বাসায় একটা গীতা থাকা দরকার।
দেবুদা ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে নিজের মাথাটা দুবার বাড়ি দেয়।
এরপর নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে রাশান বান্ধবী আনা চেয়ারে বসে।
দেবুদা ম্লানকন্ঠে বলে, আমি এই ভারতীয় সভ্যতার সূর্যাস্ত সহ্য করতে পারছিনা আনা!
আনা দেবুদার কাঁধে হাত রেখে বলে, সূর্যাস্ত মানেই হয়তো আরেকটি সূর্যোদয়ের সম্ভাবনা।
তাজমহলের জায়গায় আগে মন্দির ছিলো; মানে আরেক বাবরী মসজিদের কুরুক্ষেত্রের রেসিপি। পাকিস্তানে তো সব মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়ে চক্ষুলজ্জায় গুরুমন্দির রেখে দিয়েছে এই লোকগল্পে, সম্রাট আকবর যোধা বাঈকে নিয়ে হানিমুনে এসে এই মন্দিরে সময় কাটিয়েছিলেন। দেবুদার প্রেশার বেড়ে যায়। চন্দ্রমুখী কাগজী লেবুর শরবত করে দেয়।
দেবুদা মেজাজ বিগড়ে বলে, এরশাদের মত করে বলে "আমরা কী এই ভারত চেয়েছিলাম"।
চন্দ্রমুখী টিভির ভলিয়ুম বাড়িয়ে দেয়, বিজ্ঞানমন্ত্রী বলছেন, জ্যোতিষশাস্ত্রই আসল বিজ্ঞান।
দেবুদাতো জাস্ট হা হয়ে যায়।
সুচরিতাসু সুষমা বলছে গীতাকে জাতীয় গ্রন্থ ঘোষণা করা হবে।
চন্দ্রমুখী বলে, মোদী না বললে, টয়লেট ফার্স্ট টেম্পল লেইটার।
দেবুদা বিষণ্ণ হয়ে বলেন, হয়তো এই টিভি বাইটগুলোই আধুনিক টয়লেটের সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে!
গান্ধীজীর ফোন আসে, দেবু একটু চট করে চলে এসো। কাজের সময় নেহেরুকে পাইনা। আর জিন্নাতো খালি মিন মিন করে।
দেবুদা বলেন, গান্ধীজী বড় বড় নেতাকে বিপদে আপদে পাননা; তখন দেবুকে মনে পড়ে!
গান্ধীজী হেসে বলেন, অভিমান কোরোনা; চলে এসো; পরিস্থিতি গুরুতর।
দেবুদা বের হতে যাবে এমন সময় চন্দ্রমুখী বলে, তুমি বদলে গ্যাছো দেবুদা।আমার জন্য কোন সময় নেই তোমার।
দেবুদা বিব্রত হয়, চন্দ্র ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য।
চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে বলে, আমি জানি তুমি এক বোকার হদ্দ।
গান্ধীজীর বাসায় ঢুকেই দেবুদা দেখে বাল থ্যাকারেকে বেহেশতের পুলিশ প্যারোলে নিয়ে এসেছে। থ্যাকারে হাসি হাসি মুখে বসে গ্রীণ টি আর টোস্ট বিস্কিট খাচ্ছে।
গান্ধীজী ঠান্ডা গলায় বলেন, এ তুমি কী মৌলবাদের বীজ পুঁতে এলে থ্যাকারে!
থ্যাকারে বিনয়ের সঙ্গে বলে, বাপু পুরো ভারতবর্ষটার মাটিতে আয়োডিনের খুব অভাব। ফলে ভারতবাসীর বুদ্ধাংক খুব নীচের দিকে। আপনি এদের নিয়ে বৃথা চেষ্টা করেছিলেন। নেহেরু-জিন্নাহ জানতেন ভারতবর্ষের মানুষ ডিভাইডেড হবার জন্য প্রস্তুত।ইংরেজ যেটা কাজে লাগিয়েছে; এমনি তো লাগায়নি। এই যে ব্যাটা নাথুরাম গডসেই যে এখন আপনার পা টিপছে; ওর আয়োডিন ঘাটতি আছে।
নরক থেকে ডেপুটেশানে গান্ধীজীর আশ্রমে এসেছে নাত্থু; সে গান্ধীকে হত্যা করেছিল। এখন প্রায়শ্চিত্ত করে গান্ধীজীর পা টিপে।
থ্যাকারে বলেন, এই নাত্থুকে আপনি যদি এখন নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন; ভূমিধস বিজয় এনে দেবে। কারণ ভোটাররা এখন নাত্থুবাদী।
গান্ধীজী অবাক। মানে হোয়াট ইজ নাত্থুবাদ!
থ্যাকারে বলেন, নির্বোধ হিংস্রতা। পাকিস্তান-ভারত দু’দেশেই এখন অশিক্ষা,ধর্ম প্রদর্শন আর পশ্চাদপদতাই ভোটারদের পছন্দ।
গান্ধীজী বলেন, তাহলে আর দেশ বিভাগের কী দরকার ছিলো!
থ্যাকারে হাসেন, হিন্দু-মুসলমান কট্টরপন্থী নাত্থুরা দুটো দেশ চালাচ্ছে মন্দ কী!
গান্ধী গম্ভীরতর হয়ে বলেন, তুমি তো নিজেই এর জন্য দায়ী; আর ঐ মওদুদীব্যাটা।
--বাপু আপনিই যুগের হাওয়া বোঝেননি। নেহেরু-জিন্না বুঝেছিলেন। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র আয়োডিন অভাবজনিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হবে; এতো সোজা হিসাব।
গান্ধীজী বলেন, কিন্তু পাকিস্তান থেকে অন্যধর্মের মানুষ উচ্ছেদের পর ওরা তো এখন শিয়া-সুন্নী লড়ে চলেছে!
থ্যাকারে বলেন, ভারতেও মুসলমান উচ্ছেদ হয়ে গেলে লড়াইয়ের সাবজেক্টের অভাব হবেনা। আয়োডিনের অভাব লড়াইয়ের সাবজেক্ট দেয় মাথায়।
দেবুদা বলেন, কালচারাল ক্ল্যাশ তো আছেই ভারতের উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্ চিমে।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ রুষ্ট চিত্তে চুপচাপ এসে বসেন।
গান্ধীজী সেই পুরোনো প্রশ্নটা আবার করেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আপনি এই শিক্ষা দিলেন!
--আমি শিক্ষা দিয়েছিলাম জন্য এরা মঙ্গলে নভোযান পাঠিয়েছে!
দেবুদা ফোড়ন কাটে, কিন্তু মোদীজি বলেছেন, সেই অনেক আগে গণেশের মাথা হিসেবে হাতির মাথা প্রতিস্থাপনই নাকি ভারতের প্রথম প্লাস্টিক সার্জারীর প্রমাণ।
আজাদ নাত্থুকে বলেন, নাত্থু একটু মাথা ব্যথার ওষুধ এনে দিতে পারো।
নাত্থু অনুতাপ করে বলে, আমি অভিশপ্ত আমি যে কোন ওষুধ এনে দিলে তাতে আপনার মাথা ব্যথা বেড়ে যাবে।
বেহেশতের পুলিশ জিজ্ঞেস করে, বাল থ্যাকারের প্যারোলের সময় বাড়াবে কীনা!
দেবুদা বলেন, রাখুন; প্রেসক্লাবে একটা গোলটেবিলে রাখতে চাই উনাকে।
পুলিশ জানিয়ে দেয়, দেববাবু আপনাকে প্রেসক্লাবের ভি আইপি লাউঞ্জ ভাড়া দেয়া উপরের নিষেধ আছে।
--এই উপরের নিষেধ আছে কথাটা কবার বলেছেন জীবনে?
--পুলিশদের এটা প্রায়ই বলতে হয়।
গান্ধীজী খানিকটা সলিলকির ভঙ্গিতে বলেন, মানুষ কেন মানুষ পরিচয়ে সন্তুষ্ট থাকে না; তাকে কেন হিন্দু-মুসলমান পরিচয় নিয়ে এতো উতলা হতে হয়! ধর্ম নিয়ে দেশে দেশে উতলা হচ্ছে মানুষ। জার্মানীতে খ্রিস্টীয় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতা পাকা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসে কট্টর খ্রীস্টিয় রিপাবলিকানরা জাঁকিয়ে বসেছে।তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসলামের গৌরবগাথা নিয়ে ভারতের মোদীর মতই আলুথালু; আর ইজরায়েলে ইহুদীদের শৌর্য্যবীর্যের প্রতীক হয়ে নেতানিয়াহু প্যালেস্টাইনে জেনোসাইড চালাচ্ছে; সৌদী রাজবংশ নারীদের ওপর চড়াও হয়েছে; মেহরাম ছাড়া তারা রেষ্টুরেন্টেও যেতে পারবেনা। আর আল-কায়েদার ভায়রা ভাই ইসলামিক স্টেট ওরফে আই এস আর এক এবোলা ভাইরাস ধর্মের হাটবাজারে। কী ক্যাডাব্যারাস অবস্থা!
দেবুদা বাল থ্যাকারেকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবীর সব দেশের মাটিতেই কী আয়োডিনের অভাব!
থ্যাকারে দমার পাত্র নয়। মুচকি হেসে বলে, শীতের দেশে রোদের ভিটামিন ডির অভাব। আরব দুনিয়ায় অক্সিজেনের অভাব; বৃক্ষ নাই যে!
--এতোই যখন বোঝেন তো আপনি রাইট উইঙ্গার হলেন কেন শ্রীযুক্ত থ্যাকারে!
--পলিটিকস ইজ আ বিজনেস। নাথিং ইজ আনফেয়ার ইন লাভ এন্ড পলিটিকস।
দেবুদা খানিকটা বিব্রত হয়ে বলেন, লাভ ইজ বেটার দ্যান পলিটিকস।
মওলানা আজাদ বলেন, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো অন্ততঃ এটুকু এগিয়েছে যে তারা জ্যোতিষ শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলেনা।
দেবুদা বলেন, ওদের জ্যোতিষীর সংখ্যা কম বিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশী; আর আমাদেরতো কোন বিজ্ঞানী নাই সব জ্যোতিষী। টিভি টকশো খুললেই দেখা যায় সংবাদ-জ্যোতিষীরা ঝগড়া করছে। জ্যোতিষ শাস্ত্রই আমাদের মূল শক্তির জায়গা।
এমন সময় পার্বতীর ফোন আসে, হ্যালো শোনো টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম।জ্যোতিষী যোগেশ মিশ্র। আমায় একটু নিয়ে যাবে। আমি জানতে চাই আমাদের বিয়েটা টিকবে কীনা!
দেবুদা ফোন বন্ধ করে দেয়। মাথা হেট করে বসে থাকে। ঘরেই যার কুসংস্কারের রাণী; তার কী এতো বড় বড় কথা বলা সাজে!
গান্ধীজী অশ্রুসজল চোখে বলেন, নাই নাই এ আঁধার থেকে ফেরার পথ নাই।
দেবুদা গান্ধীজীর বাড়ী থেকে বের হয়ে চন্দ্রমুখীকে একটা ফোন দেয়। চন্দ্র শপিং-এ বেরিয়েছে। সুষমার বক্তৃতা শোনার পর তার মনে হয়েছে বাসায় একটা গীতা থাকা দরকার।
দেবুদা ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে নিজের মাথাটা দুবার বাড়ি দেয়।
এরপর নিজেকে আবিষ্কার করে হাসপাতালে। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখে রাশান বান্ধবী আনা চেয়ারে বসে।
দেবুদা ম্লানকন্ঠে বলে, আমি এই ভারতীয় সভ্যতার সূর্যাস্ত সহ্য করতে পারছিনা আনা!
আনা দেবুদার কাঁধে হাত রেখে বলে, সূর্যাস্ত মানেই হয়তো আরেকটি সূর্যোদয়ের সম্ভাবনা।
Thursday, January 10, 2019
প্রত্যাবর্তন
বেহেশতে দক্ষিণ এশীয় নাগরিকেরা নরক রচনা করায় সিদ্ধান্ত হয় ভারতীয় উপমহাদেশের নেতারা পুরো দক্ষিণ এশিয়া ঘুরে এই জনপদের মানুষের নৈতিক বিচ্যুতির কারণ অনুসন্ধান করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। দেবদাসের গান্ধীজীর সঙ্গে ভারতে নৈতিকতা অবক্ষয়ের কারন অনুসন্ধানে যাবার কথা থাকলেও তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গান্ধীজী মুচকি হেসে দেবুদাকে বলেন, মুখ ফুটে বললেই হয় আমার সঙ্গে সময় কাটাতে বোরিং লাগে। শুধু নীতিকথা বলি বলে।
দেবদাস লাজুক হেসে বলেন, কী যে বলেন বাপু! আমি ঢাকাটা ঘুরেই দিল্লীতে আপনার সঙ্গে যোগ দেবো।
বঙ্গবন্ধু দেবুদাকে বলেন, সৈয়দ আশরাফের সদ্য বেহেশতে এসেছে; আমরা তার কাছ থেকে আগে গতিপথ সম্পর্কে জানবো। অন্য কোথাও গেলে আমাদের ভুত ভেবে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সৈয়দ আশরাফই আমাদের এই বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।
--তা ভদ্রলোক কেমন! বঙ্গবন্ধু।
--কাছে গেলেই বুঝবেন। নৈর্ব্যক্তিক একটা অভিমত পাওয়া যাবে।
বেহেশতে নতুন অতিথিদের দরজার কাছে বঙ্গবন্ধুকে দেখে সৈয়দ আশরাফ আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। চোখের অশ্রু সংবরণ করে বঙ্গবন্ধু দেবুদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ধ্রুপদী নায়ক দেবদাসকে পেয়ে খুবই খুশী হন সৈয়দ আশরাফ। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন আপ্যায়নের জন্য।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা কিন্তু কাজে এসেছি। দাওয়াত খেতে আসিনি। হেভেনে ফিরে গিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের যারা হেভেনে আছে তাদের ভবিষ্যত। আর অবশ্যই ভবিষ্যতে যারা হেভেনে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রবেশাধিকার পাওয়া-না পাওয়া।
--মানে।
--হেভেনের পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। তুমি সদ্য এসেছো, তাই আমরা জানতে এসেছি এখানকার অবস্থা। কেন এতো এতো বিষাক্ত লোকজন তৈরী হচ্ছে এই জনপদে।
সৈয়দ আশরাফ একটু নার্ভাস বোধ করেন। ভূমিবাস্তবতার যে অবস্থা; তাতো বর্ণনাতীত। জীবনে এতো বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন তা কখনো ভাবেন নি।
--আপনি আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
--দেখো আমি পারসোনাল এবং প্রফেশনাল ব্যাপার আলাদা রাখতে চাই।
দেবুদা হেসে বলেন, বঙ্গবন্ধু তারমানে আমাদের এই সফরে কী কোন আনন্দ থাকবে না। গান্ধীজীর মতো সিরিয়াস থাকবে সবকিছু।
বঙ্গবন্ধু স্বভাবসুলভ হাসিতে ফেটে পড়েন। সৈয়দ আশরাফ একটু নার্ভাসনেস কাটিয়ে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর আমাদের কাছে আছে । আমরা শুধু মিলিয়ে নেবো।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আমি কী এখানকার থার্ড ফোর্সের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবো।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, নিশ্চয়ই দেবুদা, আপনাকে সেন্টার ফর পারু ডার্লিং (সিপিডি)-তে আমি নিয়ে যাবো।
বঙ্গবন্ধু হাসেন, সৈয়দ আশরাফ তোমাকে বলতে ভুলে গেছি; দেবুদা হেভেনে থার্ড ফোর্সের আহবায়ক। সাম্যবাদী এবং কাম্যবাদী দলের মনোপলি ভেঙ্গে রাজনীতি ভালোই চালিয়ে যাচ্ছেন।
--তাহলে তো প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে উনার ইন্টারভিউ দেয়া জরুরী হবে।
দেবুদা বলেন, আহা এটা তো আমাদের সিক্রেট মিশন। ইন্টারভিউ কী করে দিই! তবে বঙ্গবন্ধু যদি অনুমতি করেন, আমার আপত্তি নাই।
বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেন, মিডিয়ার কী অবস্থা আশরাফ!
--পাঠকের চেয়ে সংবাদপত্র বেশী, দর্শকের চেয়ে টিভি বেশী, খবরের চেয়ে টকশো বেশী, কাজের চেয়ে উত্তেজনা বেশী, সাংবাদিকের চেয়ে নেতা বেশী।
--আর সংবাদের মান!
--কেউ সারাক্ষণ তৈলব্রতে তো কেউ সারাক্ষণ এসিড ব্রতে।
--নৈর্ব্যক্তিকতা, নিরপেক্ষতা বলে কী কিছু নেই!
--না নেই; হয় আওয়ামী লীগের নেতা সাংবাদিক; নইলে বিএনপির নেতা সাংবাদিক; নয়তো জামায়াতের হুজুর সাংবাদিক। এদের নীচে পিষ্ট সৎ নৈর্ব্যক্তিক সাংবাদিকেরা।
দেবুদা বলেন, সাংঘাতিক বিষয় মশাই!
--সাংবাদিকদের এদেশে সাংঘাতিকও বলা হয়।
--আর শিক্ষকদের কী অবস্থা!
--একই।
--শিল্প-সাহিত্যের লোকজন!
--সবই টিক চিহ্ন দিয়ে নেবার ব্যাপার।
দেবুদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, দেখেছেন বঙ্গবন্ধু আমি হেভেনে ঠিক এই জিনিসটার প্রতিবাদী হয়েছিলাম। মানুষ কেন দলদাস হবে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আর রাজনৈতিক আদর্শ।
সৈয়দ আশরাফ উত্তর দেন,বেশ জগাখিঁচুড়ি অবস্থা। সাম্যবাদ ও কাম্যবাদ মিলে মিশে একাকার।
--অন্যধর্মের মানুষের ওপরে নির্যাতন করছে কারা।
--ব্যাপারটা সর্বদলীয় মস্তিষ্কেই ঢুকে গেছে। গবেষণা-পরিসংখ্যান তাই বলছে।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আমার জন্য বাংলাদেশ কী নিরাপদ হবে; নাকী ভারত চলে যাবো। এখানকার লিবেরেল বুদ্ধিজীবীরাও বলেন শুনেছি, হিন্দুদের এক’পা বাংলাদেশে তো আরেক’পা ভারতে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, দেবুদা আমরা তো গোপনে চলাফেরা করবো। নইলে শুধু আপনি কেন; আমিও তো নিরাপদ নই।
বঙ্গবন্ধু সৈয়দ আশরাফকে জিজ্ঞেস করেন, আর “সততা” ব্যাপারটা কী আছে সমাজে!
--ওটাতো আপনাদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা হয়ে গেছে।
--তা আমার মৃত্যুদিবসকে ঘিরে চাঁদাবাজি কেমন চলছে!
--চলুন ছাদ থেকে দেখাই ব্যাপারটা। বঙ্গবন্ধু আর দেবুদাকে নিয়ে সৈয়দ আশরাফ ছাদে যান। সেখান থেকে নিচে দেখা যায় নানা রকম ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাম দিকে কোণায়। সামনে সব বিরাট বিরাট তালেবরের ছবি।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা বড় বড় করে লেখা দেখছি “শোক দিবস”; তা মারা গেছে কী সামনের লোকটি!
বঙ্গবন্ধু হো হো করে হেসে ওঠেন। সৈয়দ আশরাফ হাসবেন না কাঁদবেন তা বুঝতে পারেন না। সৈয়দ আশরাফ বলেন, মুজিব কোট অনেক বিক্রি হচ্ছে; আপনার পোস্টারও।
দেবুদা টিপ্পনী কাটে, বঙ্গবন্ধু আপনি দেখছি সেলিব্রেটি হয়ে গেলেন!
বঙ্গবন্ধু হাসেন, আমার তো ফেসবুকে ফলোয়ারও নেই; ভেরিফায়েড পেজও নেই; আমি সেলিব্রেটি হই কীভাবে!
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আপনাকে নিয়ে পেজ-টেজও আছে। রীতিমত পেজ খোলার প্রতিযোগিতাও আছে।
--তা আমাকে নিয়ে লেখা বইপুস্তক কী কেউ পড়ে।
--বই বিক্রিটা কম হয়। বই উপহার দিলে এক দুই লাইন পড়ে ফেসবুকে “রিডিং বঙ্গবন্ধু” লিখে দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিদ হয়ে পড়ে কেউ কেউ ।
দেবুদা বিস্মিত হন, এতো দেখছি সব রোদ্দুর রায়ের মতো প্রতিভা মশাই! সে যেমন রবীন্দ্রবিদ হয়ে কবিগুরুর সব্বোনাশ করেছে।
বঙ্গবন্ধু সৈয়দ আশরাফকে জিজ্ঞেস করেন, তা আমার মৃত্যুদিবস পালন করছে কারা কারা!
--এটা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এটা পালনের সুযোগই পাছে না। পালন করছে বারো রকম লীগ।
--বারো রকম লীগ মানে। প্রধান দু’তিনটার নাম বলো।
--সাইড কিক লীগ, ছুটা বুয়া লীগ, জন্মদিন লীগ ইত্যাদি।
--সাইড কিক লীগ মানে!
--এরা সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ। জয়ের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় যাদের আছে, তারা সুচিন্তিতভাবে গড়ে তুলেছে এই সেলফি ফাউন্ডেশন। জয় থাকে তথ্যপথ্য নিয়া; আর এরা বসে নাম বিক্রি করে বা নেম ড্রপিং করে ক্ষমতা দেখায় এবং টাকা-পয়সা চুরির সিন্ডিকেট তৈরী করেছে।
---ঐ যে সেই চোরের খনির লেটেস্ট সংস্করণ আর কী!
--আর ছুটা বুয়া লীগটা কী!
--এরা ঐ সাইড কিক লীগের পক্ষে ফেসবুকে নৈর্ব্যক্তিক মানুষদের গালাগাল করে বেড়ায়। কাভারে আপনার ছবি থাকে।
দেবুদা আক্ষেপ করেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির প্রচ্ছদ লাগিয়ে এমন গালাগাল করে বেড়ালে যে নেতারই অপমান হয়; এটা বোঝে না ছুটা বুয়া লীগ।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ঐ কমনসেন্স সাইড কিক লীগ, ছুটা বুয়া লীগ এদের কারোরই নেই। কমনসেন্স থাকলে তো কিছু করে খেতে পারে মানুষ। নইলে চোরের খনি আর চাটার দলে কী কেউ নাম লেখায়!
বঙ্গবন্ধু হাসেন, সাইড কিক লীগ আর ছুটা বুয়া লীগ তাহলে চোরের খনি আর চাটার দলের সমন্বয়ে একটি “চোরচাট্টা” প্রজাতি।
দেবুদা মন্তব্য করেন, বঙ্গবন্ধু এদের সঙ্গে মুশতাক প্রজাতির মিল পাওয়া যাচ্ছে। এরা মুজিববাদী সেজে থাকলেও আসলে মুশতাকবাদী।
বঙ্গবন্ধু মাথা নাড়েন, এই মুশতাকবাদীরা আমাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করতে মরিয়া এতো বোঝাই যাচ্ছে।
তো আশরাফ আরেকটা কী লীগ বললে!
--জন্মদিন লীগ।
দেবুদা খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, পাগল হয়েছেন মশাই! বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিনে জন্মদিন লীগের কাজ কী!
--কাজ আছে। ঐদিন এই জন্মদিন লীগ জন্মদিন পালন করে।
--কার জন্মদিন!
--খালেদা জিয়ার।
--এও কী সম্ভব! বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে জন্মদিন পালন।
--কয়েকটা দিন ঢাকায় থাকলেই বুঝবেন দেবুদা এখানে আর কী কী সম্ভব!
বঙ্গবন্ধু বলেন,
যাই সম্ভব হোক দেবদাস আমার আর এখানে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়; চল ফির্যা যাই।
দেবদাস লাজুক হেসে বলেন, কী যে বলেন বাপু! আমি ঢাকাটা ঘুরেই দিল্লীতে আপনার সঙ্গে যোগ দেবো।
বঙ্গবন্ধু দেবুদাকে বলেন, সৈয়দ আশরাফের সদ্য বেহেশতে এসেছে; আমরা তার কাছ থেকে আগে গতিপথ সম্পর্কে জানবো। অন্য কোথাও গেলে আমাদের ভুত ভেবে অজ্ঞান হয়ে যাবে। সৈয়দ আশরাফই আমাদের এই বাংলাদেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যাপারটা বুঝতে পারবে।
--তা ভদ্রলোক কেমন! বঙ্গবন্ধু।
--কাছে গেলেই বুঝবেন। নৈর্ব্যক্তিক একটা অভিমত পাওয়া যাবে।
বেহেশতে নতুন অতিথিদের দরজার কাছে বঙ্গবন্ধুকে দেখে সৈয়দ আশরাফ আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। চোখের অশ্রু সংবরণ করে বঙ্গবন্ধু দেবুদার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ধ্রুপদী নায়ক দেবদাসকে পেয়ে খুবই খুশী হন সৈয়দ আশরাফ। ব্যস্ত হয়ে ওঠেন আপ্যায়নের জন্য।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আমরা কিন্তু কাজে এসেছি। দাওয়াত খেতে আসিনি। হেভেনে ফিরে গিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের যারা হেভেনে আছে তাদের ভবিষ্যত। আর অবশ্যই ভবিষ্যতে যারা হেভেনে যেতে ইচ্ছুক তাদের প্রবেশাধিকার পাওয়া-না পাওয়া।
--মানে।
--হেভেনের পরিবেশ বিষাক্ত করে তুলেছে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ। তুমি সদ্য এসেছো, তাই আমরা জানতে এসেছি এখানকার অবস্থা। কেন এতো এতো বিষাক্ত লোকজন তৈরী হচ্ছে এই জনপদে।
সৈয়দ আশরাফ একটু নার্ভাস বোধ করেন। ভূমিবাস্তবতার যে অবস্থা; তাতো বর্ণনাতীত। জীবনে এতো বড় পরীক্ষার মুখোমুখি হবেন তা কখনো ভাবেন নি।
--আপনি আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
--দেখো আমি পারসোনাল এবং প্রফেশনাল ব্যাপার আলাদা রাখতে চাই।
দেবুদা হেসে বলেন, বঙ্গবন্ধু তারমানে আমাদের এই সফরে কী কোন আনন্দ থাকবে না। গান্ধীজীর মতো সিরিয়াস থাকবে সবকিছু।
বঙ্গবন্ধু স্বভাবসুলভ হাসিতে ফেটে পড়েন। সৈয়দ আশরাফ একটু নার্ভাসনেস কাটিয়ে ওঠেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর আমাদের কাছে আছে । আমরা শুধু মিলিয়ে নেবো।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আমি কী এখানকার থার্ড ফোর্সের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবো।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, নিশ্চয়ই দেবুদা, আপনাকে সেন্টার ফর পারু ডার্লিং (সিপিডি)-তে আমি নিয়ে যাবো।
বঙ্গবন্ধু হাসেন, সৈয়দ আশরাফ তোমাকে বলতে ভুলে গেছি; দেবুদা হেভেনে থার্ড ফোর্সের আহবায়ক। সাম্যবাদী এবং কাম্যবাদী দলের মনোপলি ভেঙ্গে রাজনীতি ভালোই চালিয়ে যাচ্ছেন।
--তাহলে তো প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে উনার ইন্টারভিউ দেয়া জরুরী হবে।
দেবুদা বলেন, আহা এটা তো আমাদের সিক্রেট মিশন। ইন্টারভিউ কী করে দিই! তবে বঙ্গবন্ধু যদি অনুমতি করেন, আমার আপত্তি নাই।
বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেন, মিডিয়ার কী অবস্থা আশরাফ!
--পাঠকের চেয়ে সংবাদপত্র বেশী, দর্শকের চেয়ে টিভি বেশী, খবরের চেয়ে টকশো বেশী, কাজের চেয়ে উত্তেজনা বেশী, সাংবাদিকের চেয়ে নেতা বেশী।
--আর সংবাদের মান!
--কেউ সারাক্ষণ তৈলব্রতে তো কেউ সারাক্ষণ এসিড ব্রতে।
--নৈর্ব্যক্তিকতা, নিরপেক্ষতা বলে কী কিছু নেই!
--না নেই; হয় আওয়ামী লীগের নেতা সাংবাদিক; নইলে বিএনপির নেতা সাংবাদিক; নয়তো জামায়াতের হুজুর সাংবাদিক। এদের নীচে পিষ্ট সৎ নৈর্ব্যক্তিক সাংবাদিকেরা।
দেবুদা বলেন, সাংঘাতিক বিষয় মশাই!
--সাংবাদিকদের এদেশে সাংঘাতিকও বলা হয়।
--আর শিক্ষকদের কী অবস্থা!
--একই।
--শিল্প-সাহিত্যের লোকজন!
--সবই টিক চিহ্ন দিয়ে নেবার ব্যাপার।
দেবুদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, দেখেছেন বঙ্গবন্ধু আমি হেভেনে ঠিক এই জিনিসটার প্রতিবাদী হয়েছিলাম। মানুষ কেন দলদাস হবে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, আর রাজনৈতিক আদর্শ।
সৈয়দ আশরাফ উত্তর দেন,বেশ জগাখিঁচুড়ি অবস্থা। সাম্যবাদ ও কাম্যবাদ মিলে মিশে একাকার।
--অন্যধর্মের মানুষের ওপরে নির্যাতন করছে কারা।
--ব্যাপারটা সর্বদলীয় মস্তিষ্কেই ঢুকে গেছে। গবেষণা-পরিসংখ্যান তাই বলছে।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আমার জন্য বাংলাদেশ কী নিরাপদ হবে; নাকী ভারত চলে যাবো। এখানকার লিবেরেল বুদ্ধিজীবীরাও বলেন শুনেছি, হিন্দুদের এক’পা বাংলাদেশে তো আরেক’পা ভারতে।
বঙ্গবন্ধু বলেন, দেবুদা আমরা তো গোপনে চলাফেরা করবো। নইলে শুধু আপনি কেন; আমিও তো নিরাপদ নই।
বঙ্গবন্ধু সৈয়দ আশরাফকে জিজ্ঞেস করেন, আর “সততা” ব্যাপারটা কী আছে সমাজে!
--ওটাতো আপনাদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা হয়ে গেছে।
--তা আমার মৃত্যুদিবসকে ঘিরে চাঁদাবাজি কেমন চলছে!
--চলুন ছাদ থেকে দেখাই ব্যাপারটা। বঙ্গবন্ধু আর দেবুদাকে নিয়ে সৈয়দ আশরাফ ছাদে যান। সেখান থেকে নিচে দেখা যায় নানা রকম ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাম দিকে কোণায়। সামনে সব বিরাট বিরাট তালেবরের ছবি।
দেবুদা জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা বড় বড় করে লেখা দেখছি “শোক দিবস”; তা মারা গেছে কী সামনের লোকটি!
বঙ্গবন্ধু হো হো করে হেসে ওঠেন। সৈয়দ আশরাফ হাসবেন না কাঁদবেন তা বুঝতে পারেন না। সৈয়দ আশরাফ বলেন, মুজিব কোট অনেক বিক্রি হচ্ছে; আপনার পোস্টারও।
দেবুদা টিপ্পনী কাটে, বঙ্গবন্ধু আপনি দেখছি সেলিব্রেটি হয়ে গেলেন!
বঙ্গবন্ধু হাসেন, আমার তো ফেসবুকে ফলোয়ারও নেই; ভেরিফায়েড পেজও নেই; আমি সেলিব্রেটি হই কীভাবে!
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আপনাকে নিয়ে পেজ-টেজও আছে। রীতিমত পেজ খোলার প্রতিযোগিতাও আছে।
--তা আমাকে নিয়ে লেখা বইপুস্তক কী কেউ পড়ে।
--বই বিক্রিটা কম হয়। বই উপহার দিলে এক দুই লাইন পড়ে ফেসবুকে “রিডিং বঙ্গবন্ধু” লিখে দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু বিদ হয়ে পড়ে কেউ কেউ ।
দেবুদা বিস্মিত হন, এতো দেখছি সব রোদ্দুর রায়ের মতো প্রতিভা মশাই! সে যেমন রবীন্দ্রবিদ হয়ে কবিগুরুর সব্বোনাশ করেছে।
বঙ্গবন্ধু সৈয়দ আশরাফকে জিজ্ঞেস করেন, তা আমার মৃত্যুদিবস পালন করছে কারা কারা!
--এটা নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এটা পালনের সুযোগই পাছে না। পালন করছে বারো রকম লীগ।
--বারো রকম লীগ মানে। প্রধান দু’তিনটার নাম বলো।
--সাইড কিক লীগ, ছুটা বুয়া লীগ, জন্মদিন লীগ ইত্যাদি।
--সাইড কিক লীগ মানে!
--এরা সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ। জয়ের সঙ্গে আলাপ-পরিচয় যাদের আছে, তারা সুচিন্তিতভাবে গড়ে তুলেছে এই সেলফি ফাউন্ডেশন। জয় থাকে তথ্যপথ্য নিয়া; আর এরা বসে নাম বিক্রি করে বা নেম ড্রপিং করে ক্ষমতা দেখায় এবং টাকা-পয়সা চুরির সিন্ডিকেট তৈরী করেছে।
---ঐ যে সেই চোরের খনির লেটেস্ট সংস্করণ আর কী!
--আর ছুটা বুয়া লীগটা কী!
--এরা ঐ সাইড কিক লীগের পক্ষে ফেসবুকে নৈর্ব্যক্তিক মানুষদের গালাগাল করে বেড়ায়। কাভারে আপনার ছবি থাকে।
দেবুদা আক্ষেপ করেন, বঙ্গবন্ধুর ছবির প্রচ্ছদ লাগিয়ে এমন গালাগাল করে বেড়ালে যে নেতারই অপমান হয়; এটা বোঝে না ছুটা বুয়া লীগ।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, ঐ কমনসেন্স সাইড কিক লীগ, ছুটা বুয়া লীগ এদের কারোরই নেই। কমনসেন্স থাকলে তো কিছু করে খেতে পারে মানুষ। নইলে চোরের খনি আর চাটার দলে কী কেউ নাম লেখায়!
বঙ্গবন্ধু হাসেন, সাইড কিক লীগ আর ছুটা বুয়া লীগ তাহলে চোরের খনি আর চাটার দলের সমন্বয়ে একটি “চোরচাট্টা” প্রজাতি।
দেবুদা মন্তব্য করেন, বঙ্গবন্ধু এদের সঙ্গে মুশতাক প্রজাতির মিল পাওয়া যাচ্ছে। এরা মুজিববাদী সেজে থাকলেও আসলে মুশতাকবাদী।
বঙ্গবন্ধু মাথা নাড়েন, এই মুশতাকবাদীরা আমাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করতে মরিয়া এতো বোঝাই যাচ্ছে।
তো আশরাফ আরেকটা কী লীগ বললে!
--জন্মদিন লীগ।
দেবুদা খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, পাগল হয়েছেন মশাই! বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিনে জন্মদিন লীগের কাজ কী!
--কাজ আছে। ঐদিন এই জন্মদিন লীগ জন্মদিন পালন করে।
--কার জন্মদিন!
--খালেদা জিয়ার।
--এও কী সম্ভব! বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে জন্মদিন পালন।
--কয়েকটা দিন ঢাকায় থাকলেই বুঝবেন দেবুদা এখানে আর কী কী সম্ভব!
বঙ্গবন্ধু বলেন,
যাই সম্ভব হোক দেবদাস আমার আর এখানে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়; চল ফির্যা যাই।
Wednesday, January 9, 2019
বেহেশতের দেবদাস
দেবদাসকে সেই সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল পার্বতীর বাড়ির গেটের কাছে মরে পড়ে থাকতে। কী যে ছিল এই পারুর মাঝে! দেবদাস যে কী পেয়েছিল তা আমার মাথায় ঢোকে না। যেখানে চন্দ্রমুখী আছে; তার ঔদার্য আছে; বুকের গহীনে দেবুদার জন্য ভালবাসা আছে; সেই খানে এই এক পার্বতী, যে দেবদাসকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এক বড়লোক জমিদারকে বিয়ে করলো; যার নাম পার্বতী তার বিয়ে হবে মোহরের পর্বতের সঙ্গে এ আর বিচিত্র কী! পারু অন্ততঃ একবার যদি বলতো সে সুইসাইড করবে তবু বুঝতাম; একটু ফস ফস করে কেঁদে প্রেমের গভীরতা কী বোঝানো যায়! অন্যদিকে কিছুই চায়নি চন্দ্রমুখী;চাঁদের আবার চাওয়ার কী আছে!
দেবদাসের মৃত্যুর পর সৃষ্টিকর্তা বেহেশতে একটি “দেবদাস কোটা” চালু করেন হিন্দুদের জন্য। মুসলমানদের জন্য মজনু কোটা; খ্রিস্টানদের জন্য রোমিও কোটা আগেই ছিল। ফলে দেবদাস বেহেশতে ঐ পার্বতীর টাকার পাহাড় হাবির চেয়ে বড় বাড়ি-গাড়ি-ব্যাংক ব্যালেন্স পেয়ে যায়।আর সেই দেব প্রাসাদের সামনে রামজলের রঙ্গিন ফোয়ারা।
এর মাঝে ধরাধাম ত্যাগ করে বেহেশতে আসে পার্বতী। দেবদাসকে বেহেশতের এক আধিকারিক জানায়;আপনার বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে। দেবুদার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। মস্কোর আনা কারেনিনার সঙ্গে তার মন দেয়া নেয়া চলছে; আনা থার্ড ফোর্সের অনেক ইভেন্ট ম্যানেজ করে। পার্বতী তো এসব কিছুই পারে না। বেহেশতের একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবদাসকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পার্বতীর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় দেবুদাকে।
আনা দেবুদাকে ফোন করে বলে, ইউ বেঙ্গলি লায়ার; আই হেট ইউ।
শুরু হয় দেবুদা আর পার্বতীর সংসার। বেহেশতে গৃহকর্মী দেয়া হয় শুধু যারা হুর প্রত্যাশী তাদের। ৭০ জন হুর বাড়ির সব কাজ করে দিলে বেহেশত বাসী মোল্লা-পুরুতেরা খুব আরামে থাকে খায় ঘুমায় মর্ণিং ওয়াক করে হুরদের নিয়ে। সে এক রঙ্গিন জীবন। এরা পৃথিবীতে চার বিবি বা আশ্রমের চার গোপিনী নিয়ে হেভেনে থাকে। বেহেশতে এসে ৭০ জন জীবন উৎসবসঙ্গী।কপাল তাদের! কিন্তু দেবদাস এসেছে প্রেমিক কোটায়। সে জন্য পার্বতী এসে হাজির হবার আগে পর্যন্ত বেহেশত বাসিনীর সঙ্গে একটু প্রেম করার অনুমতি ছিল। সেই সূত্রে মস্কোর মেয়ে আনাই রেঁধে বেড়ে খাওয়াতো। দেবদাসের অনুরোধে আনাকে ভাত,ডাল, থানকুনি পাতার ঝোল, ইলিশ ভাজা এসব রেসিপি শিখতে হয়েছে। এখন আনা নাই। দেবদাস ভোরবেলায় উঠে থার্ড ফোর্সের বাইরে যাবার আগে পাউরুটি-কলা খেয়ে যায়। পারু নাক ডেকে ঘুমায়। সাবেক জমিদারের বউ। সে রান্নাঘরে যায় কী করে। বেহেশতের প্রেসক্লাবে সাম্যবাদী ও কাম্যবাদী উভয়ের বিরুদ্ধে কিছু গরম বক্তৃতা দিয়ে বাড়ী ফেরে দেবু। পারু তখন বসে টিভি সিরিয়াল দেখছে। পারু ধমক দিয়ে বলে, এতো দেরী হলো যে; যাও আমার জন্য একটু ভাত রান্না করো; ডিম ভাজি করো, ফ্রিজে ডাল আছে ঐটা গরম করে দিও। সেমিনারে পাওয়া বিরিয়ানীর প্যাকেটটা পারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেবুদা খুব মন খারাপ নিয়ে ব্যালকনীতে বসে চিপস খায়, সঙ্গে একটু পুরনো আঙ্গুরের রস।
হঠাত অপরদিকে সামনের ব্যালকনীতে দেখে চন্দ্রমুখী দাঁড়িয়ে। সে হাত নাড়ে। দেবদাসের কান্না পায়। আহারে চাঁদ পানা মুখখানা।পারু বিরিয়ানী খেয়ে সোফায় কাত হয়েছে। ধমক দিয়ে ডাকে, দেবু এইদিকে আসো পা টিপে দাও। ভদ্রলোকেরা বউদের পা টিপে দেয়। কিছু শেখো। গবেট কোথাকার। দেবুদা একটা টুলে বসে পারুর পা টেপে। মেয়েটা আনন্দে শিশুদের মতো ঘুমিয়ে যায়। দেবদাস টুক করে বেরিয়ে যায়। চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্টে বেল বাজায়। চন্দ্র দরজা খোলে। হঠাত যেন জ্যোৎস্না নেমে আসে। চন্দ্র হাত ধরে দেবুকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসতে দেয়। দৌড় ঝাঁপ করে লুচি-ভাজি-সন্দেশ-রসগোল্লা খেতে দেয়। চন্দ্র চেয়ে থেকে দেবুর খাওয়া দেখে। চন্দ্র একটু কাগজী লেবুর সরবত দেয়।
--বেশী আঙ্গুরের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালনা; তুমি ওগল্যা খায়োনা দেবুদা!
চন্দ্র দেবদাসের কপালে হাত রাখে। চুলের মধ্যে ফালি ফালি নরম আঙ্গুলে বিলি কেটে দেয়। দেবদাস ঘুমিয়ে যায়। চন্দ্রমুখী বেহেশতে আসার পর তার একটাই চাওয়া ছিলো, দেবুদার বাড়ীর উল্টোদিকে একটা ছোট্ট এপার্টমেন্ট। সৃষ্টিকর্তা বেহেশতে নারীদের জন্য কোন হুর রাখেন নি। কারণ এরা সবাই প্রেমের কোটায় আসা। আর নারীদের ওসব বাজে আগ্রহ নাই। ফলে তারাই এই ঝামেলা বাদ দিয়েছে। জগতের জেলহাজতে সারাজীবন সংসারের ঘানি টেনে আসার পর কে চায় বেহেশতের নতুন জিগলোর পাল্লায় পড়তে। তবে প্রেমের অনুমতি আছে। জীবনানন্দ দাশ, আবুল হাসান এসব কোমল কবি যাদের জীবদ্দশায় মেয়েরা কষ্ট দিয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রেমে বাধা নেই বেহেশতে। কিন্তু চন্দ্রমুখী জীবনে লুজার দেবদাসকে এতোই ভাল বেসে ফেলেছে যে আর কাউকে ভালো লাগে না তার। চন্দ্রের মত মেয়েরা খুব রোমান্টিক হয়। এরা সারাজীবন হয়তো কিছুই নাহি পাবো; তবুও তোমায় আমি দূর থেকে ভালোবেসে যাবো গেয়ে কাটায়। মোবাইল ফোনের তীব্র আওয়াজে দেবদাসের ঘুমভাঙ্গে। আর কে পার্বতী !!!
দেবু আসার সময় একটা পিটজা নিয়ে এসো।প্রতিদিন দেশী ফুড ভালো লাগে না।
দেবুদা অনেক দুঃখ চেপে কান্না লুকিয়ে বলে, চন্দ্র এবার তবে যাই।
চন্দ্র দেবুদার গালে একটা সুগন্ধী লেবু বাগানের চুমু দিয়ে বলে, যাই না আসি বলতে হয়।
দেবদাসের মৃত্যুর পর সৃষ্টিকর্তা বেহেশতে একটি “দেবদাস কোটা” চালু করেন হিন্দুদের জন্য। মুসলমানদের জন্য মজনু কোটা; খ্রিস্টানদের জন্য রোমিও কোটা আগেই ছিল। ফলে দেবদাস বেহেশতে ঐ পার্বতীর টাকার পাহাড় হাবির চেয়ে বড় বাড়ি-গাড়ি-ব্যাংক ব্যালেন্স পেয়ে যায়।আর সেই দেব প্রাসাদের সামনে রামজলের রঙ্গিন ফোয়ারা।
এর মাঝে ধরাধাম ত্যাগ করে বেহেশতে আসে পার্বতী। দেবদাসকে বেহেশতের এক আধিকারিক জানায়;আপনার বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে। দেবুদার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে। মস্কোর আনা কারেনিনার সঙ্গে তার মন দেয়া নেয়া চলছে; আনা থার্ড ফোর্সের অনেক ইভেন্ট ম্যানেজ করে। পার্বতী তো এসব কিছুই পারে না। বেহেশতের একজন সহকারী পুলিশ কমিশনার দেবদাসকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পার্বতীর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় দেবুদাকে।
আনা দেবুদাকে ফোন করে বলে, ইউ বেঙ্গলি লায়ার; আই হেট ইউ।
শুরু হয় দেবুদা আর পার্বতীর সংসার। বেহেশতে গৃহকর্মী দেয়া হয় শুধু যারা হুর প্রত্যাশী তাদের। ৭০ জন হুর বাড়ির সব কাজ করে দিলে বেহেশত বাসী মোল্লা-পুরুতেরা খুব আরামে থাকে খায় ঘুমায় মর্ণিং ওয়াক করে হুরদের নিয়ে। সে এক রঙ্গিন জীবন। এরা পৃথিবীতে চার বিবি বা আশ্রমের চার গোপিনী নিয়ে হেভেনে থাকে। বেহেশতে এসে ৭০ জন জীবন উৎসবসঙ্গী।কপাল তাদের! কিন্তু দেবদাস এসেছে প্রেমিক কোটায়। সে জন্য পার্বতী এসে হাজির হবার আগে পর্যন্ত বেহেশত বাসিনীর সঙ্গে একটু প্রেম করার অনুমতি ছিল। সেই সূত্রে মস্কোর মেয়ে আনাই রেঁধে বেড়ে খাওয়াতো। দেবদাসের অনুরোধে আনাকে ভাত,ডাল, থানকুনি পাতার ঝোল, ইলিশ ভাজা এসব রেসিপি শিখতে হয়েছে। এখন আনা নাই। দেবদাস ভোরবেলায় উঠে থার্ড ফোর্সের বাইরে যাবার আগে পাউরুটি-কলা খেয়ে যায়। পারু নাক ডেকে ঘুমায়। সাবেক জমিদারের বউ। সে রান্নাঘরে যায় কী করে। বেহেশতের প্রেসক্লাবে সাম্যবাদী ও কাম্যবাদী উভয়ের বিরুদ্ধে কিছু গরম বক্তৃতা দিয়ে বাড়ী ফেরে দেবু। পারু তখন বসে টিভি সিরিয়াল দেখছে। পারু ধমক দিয়ে বলে, এতো দেরী হলো যে; যাও আমার জন্য একটু ভাত রান্না করো; ডিম ভাজি করো, ফ্রিজে ডাল আছে ঐটা গরম করে দিও। সেমিনারে পাওয়া বিরিয়ানীর প্যাকেটটা পারুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেবুদা খুব মন খারাপ নিয়ে ব্যালকনীতে বসে চিপস খায়, সঙ্গে একটু পুরনো আঙ্গুরের রস।
হঠাত অপরদিকে সামনের ব্যালকনীতে দেখে চন্দ্রমুখী দাঁড়িয়ে। সে হাত নাড়ে। দেবদাসের কান্না পায়। আহারে চাঁদ পানা মুখখানা।পারু বিরিয়ানী খেয়ে সোফায় কাত হয়েছে। ধমক দিয়ে ডাকে, দেবু এইদিকে আসো পা টিপে দাও। ভদ্রলোকেরা বউদের পা টিপে দেয়। কিছু শেখো। গবেট কোথাকার। দেবুদা একটা টুলে বসে পারুর পা টেপে। মেয়েটা আনন্দে শিশুদের মতো ঘুমিয়ে যায়। দেবদাস টুক করে বেরিয়ে যায়। চন্দ্রমুখীর এপার্টমেন্টে বেল বাজায়। চন্দ্র দরজা খোলে। হঠাত যেন জ্যোৎস্না নেমে আসে। চন্দ্র হাত ধরে দেবুকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসতে দেয়। দৌড় ঝাঁপ করে লুচি-ভাজি-সন্দেশ-রসগোল্লা খেতে দেয়। চন্দ্র চেয়ে থেকে দেবুর খাওয়া দেখে। চন্দ্র একটু কাগজী লেবুর সরবত দেয়।
--বেশী আঙ্গুরের জুস খাওয়া শরীরের জন্য ভালনা; তুমি ওগল্যা খায়োনা দেবুদা!
চন্দ্র দেবদাসের কপালে হাত রাখে। চুলের মধ্যে ফালি ফালি নরম আঙ্গুলে বিলি কেটে দেয়। দেবদাস ঘুমিয়ে যায়। চন্দ্রমুখী বেহেশতে আসার পর তার একটাই চাওয়া ছিলো, দেবুদার বাড়ীর উল্টোদিকে একটা ছোট্ট এপার্টমেন্ট। সৃষ্টিকর্তা বেহেশতে নারীদের জন্য কোন হুর রাখেন নি। কারণ এরা সবাই প্রেমের কোটায় আসা। আর নারীদের ওসব বাজে আগ্রহ নাই। ফলে তারাই এই ঝামেলা বাদ দিয়েছে। জগতের জেলহাজতে সারাজীবন সংসারের ঘানি টেনে আসার পর কে চায় বেহেশতের নতুন জিগলোর পাল্লায় পড়তে। তবে প্রেমের অনুমতি আছে। জীবনানন্দ দাশ, আবুল হাসান এসব কোমল কবি যাদের জীবদ্দশায় মেয়েরা কষ্ট দিয়েছে, তাদের সঙ্গে প্রেমে বাধা নেই বেহেশতে। কিন্তু চন্দ্রমুখী জীবনে লুজার দেবদাসকে এতোই ভাল বেসে ফেলেছে যে আর কাউকে ভালো লাগে না তার। চন্দ্রের মত মেয়েরা খুব রোমান্টিক হয়। এরা সারাজীবন হয়তো কিছুই নাহি পাবো; তবুও তোমায় আমি দূর থেকে ভালোবেসে যাবো গেয়ে কাটায়। মোবাইল ফোনের তীব্র আওয়াজে দেবদাসের ঘুমভাঙ্গে। আর কে পার্বতী !!!
দেবু আসার সময় একটা পিটজা নিয়ে এসো।প্রতিদিন দেশী ফুড ভালো লাগে না।
দেবুদা অনেক দুঃখ চেপে কান্না লুকিয়ে বলে, চন্দ্র এবার তবে যাই।
চন্দ্র দেবুদার গালে একটা সুগন্ধী লেবু বাগানের চুমু দিয়ে বলে, যাই না আসি বলতে হয়।
Tuesday, January 8, 2019
যাত্রী পরিচয়
ঢাকার রাস্তার পথচারী নিয়ে গত কিস্তি লিখে হালকা খিস্তির ভয়ে আছি, অনেকে ধরেই নিবে আমি নির্দয়, পথচারী বিদ্ধেষী মানুষ। ওকে !!!! ব্যাপার না। এই পর্বে আসেন আপনাদের যাত্রী চিনাই। কাটাকাটি হয়ে যাক। তবে, পথচারীর চেয়ে যাত্রীর ক্লাসিফিকেশন এনালাইসিস করা কঠিন। পথচারীদের যেমন মিডিয়াম এক্টাই, রাস্তা পার। বাদ বাকি সব আচরণগত বিভেদ। যাত্রীর বেলায় বিষয়টা এত্ত সোজা না। একই যাত্রী ভিন্ন ভিন্ন বাহনে সওয়ার হলে এ্যাটিচ্যুড পাল্টায়ে যায়। তবুও চেষ্টা করলে হাল্কা দাগে প্যাটার্নটা বোঝার চেষ্টা করা যায়।
যাত্রী যখন রিকশায়ঃ
তাদের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে বাস ড্রাইভাররা, খালি হুদাই চাপায় ! রিকশায় বসা যাত্রীর ধারনা, রাস্তায় শুধু রিকশারা চললেই ভালো মানায়, যিনি কাজের তাড়ায় রিকশায় উঠেন, তিনি ভুলে জান যে, এই বাহনের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিমি। অধৈর্য হয়ে চালককে টিপ্পনি দেন - ঐ মিয়া কি চালাও তোমারে ওভারটেক করে কেমনে ? বাসের ডাইনে দিয়া আগে যাও না। আরে প্রাইভেটরে সাইড দিলে যাইবা কেম্নে ? ইত্যাদি। যারা প্রেমিকা সহ উঠেন, তারা ঠিক উলটা, - মামা দেখে শুনে আস্তে আস্তে যান, কোনো তাড়া নাই। রিকশার যাত্রী নিজের চালকের ভুলের দায়ে কাধ মিলিয়ে নেন অবলীলায়, সেটা পাশের রিকশার চাকার সঙ্গে চাকা বেধে যাওয়াই হোক, বা উলটা রাস্তায় রিকশা ঢুকে গিয়ে জ্যাম লাগিয়ে দেয়াই হোক, ব্যাপার না। আমার রিকশা অলওয়েজ রাইট !!!! পথচারী থাকা অবস্থায় যেই স্পিডব্রেকারের কারনেই রাস্তাটা পার হতে পারেন, রিকশায় বসে সেই স্পিড ব্রেকারকেই গালি দেন জোরসে।যেই রাস্তায় রিকশা চলা মানা, সেই রাস্তায় ঢুকে গেলে যাত্রীরা একধরনের রোমাঞ্চ অনুভব করতে শুরু করেন। নিজের রিকশাওয়ালার প্রতি গোপন গর্ব এসে পড়ে। এইত্ত মামা চাল্লু আছে, চামে দিয়া আগায়া গেল !!!! ভিআইপি রোডে সাই সাই করে ছুটে চলা গাড়ির রাস্তায় একটা রিকশার যাত্রী হবার ভিতরে বিন্দুমাত্র গ্লানি নাই !!
যাত্রী যখন বাসেঃ
নিজে একবার উঠতে পারলেই হোল, তারপর নিজেকে বাসের মালিক, রাস্তার মালিক, দেশের মালিক ভাবা শুরু। ধুর, বার বার দাড়াইয়া দাড়াইয়া যাত্রী উডায় ক্যান। ধুর ! সিগনাল দিল ক্যান। ধুর ! পীছের বাস আগে গেল কেন। ড্রাইভার ঘন ঘন ব্রেক করে ক্যান। সবশেষে ধুরো বা* এত্ত রিকশা ক্যান !!!! উঠায়া দেয় না ক্যান রিকশাগুলা। বামে মোড় নেয়ার লেনে ঢুকে বাসটা কেন আর একটু এগিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ায় না, বেকুব ড্রাইভার। মোট কথা, পুরা পৃথিবী তখন অন্য ডাইমেনশানে চলে। ট্রাফিক পুলিশ দাড়া করালো, ড্রাইভারের কাগজ নাই, তাতে কী। ছেড়ে দেয় না কেন টাকা নিয়ে। অফিস যাওয়া লাগবে তো !!! ভার্সিটি বাস হলে তো কথাই নেই। বাস ভরা সব গ্ল্যাডিয়েটর !! আমাদের বাস, আমাদের মামা যেখান দিয়ে খুশি সেখান দিয়ে যাবে, কোনো প্রব্লেম ???? !!!! যেহেতু বাস হচ্ছে ঢাকার রাস্তার রাজা, তাই বাসের যাত্রীও রাজা গোত্রের। কোত্থেকে উঠবে, কোথায় নামবে সে নিজে ঠিক করবে। তাকে উঠাতে বা নামাতে গিয়ে ড্রাইভারের ইচ্ছা করে মাঝ রাস্তায় বাস বাকা করে দিয়ে পীছনের দুনিয়া বন্ধ করে দেয়ায় কোন পাপ নেই। ইচ্ছা হল ফ্যাচাত করে কফ বা সর্দি ঝেড়ে ফেল্ল জানালা দিয়ে, মাথা ঘুরান্টি দিলো, দাও বমি করে। কার গায়ে পড়লো কী আসে যায়? রাস্তার মালিকের কফ, রাস্তায়ই তো ফেলার নিয়ম। পাশের দামী প্রাইভেট কারের ভেতরে আরামে বসে যাওয়া যাত্রীর প্রতি এ এক সরব প্রতিবাদ। সবচেয়ে খারাপ হল, বাসের সামনে পথচারীর প্রতি বাসের যাত্রীর কোন করুনা , ক্ষমাবোধ থাকেনা। " হালায় আতকা আইলো ক্যান বাসের সামনে, দিতেন ডইলা। না মারলে এগো শিক্ষা হইব না" আহ ! কি স্পষ্ট বিবেচনা।
যাত্রী যখন ব্যাক্তিমালিকানাধীন গাড়িতেঃ
কেউ আইন মানেনা !!! এমন হলে কিভাবে হবে, এই ড্রাইভার ডানে থাকো, সাইড দিও না। টেনে যাও সিগনালে পড়বা। ঐ রিকশা ওয়ালাটাকে মারো এক চড় !! নেমে গিয়ে এই ব্যাটাকে কানটা ধরে জিজ্ঞেস করতো, এভাবে রাস্তা পার হয়? এদের কথা হল, চৌরাস্তা কেন হয় ? সব রাস্তায় ফ্লাইওভারের মতন হাইস্পিড ট্র্যাক কেন হয় না। কেন পথচারী রাস্তা পার হয়, আন্ডার, ওভার কিছু একটা দিয়ে সব সময় পার হতে পারে না কেন? যেখানে ফুটওভার ব্রীজ নাই, সেখানে পার হবারই বা দরকার কী ??? বাসগুলা বেয়াদব ড্রাইভারে চালায়, রিকশাওয়ালাগুলা দুনিয়ার হারামী, অন্য গাড়ির ড্রাইভাররাই শুধু বামে চাপ দেয় এই ধারনার বাইরে এসে নিজের দোষ এরা দেখতে পায় না কখনোই।ভীম ভীড়ের রাস্তার পাশে টুপ করে নেমে শপিং মলে ঢুকে যাবার সময় এরা একবারও ভাবে না, তার গাড়িটাই আটকে দিল একটা আস্ত লেন। আর যদি হয় সরকারী গাড়ি !!! তাহলে তো রাস্তার দুই পাশই রাইট, সিগনালে সব বাতিই গ্রিন। এশুধু প্রাইম মিনিস্টারের বেলায় হবার কথা ছিল, কিন্তু এই সুবিধা ৩য় শ্রেণীর স্টাফবাসের যাত্রীদেরও প্রাণের দাবী।
যাত্রী যখন সিএনজিতেঃ
জোরে, আরো জোরে, আরো... ৪০ মিনিটের পথে ২ মিনিট আগে যেতে পারলেও তো জীবনে একটা লাভ হল, এই ধারনা মনে হয় সব সিএনজি যাত্রীরই আছে। ২ হাত চিপা পেলে গায়ে তেল মেখে সিএনজিটা সেই চিপা গলে বের হয়ে যাবে এই ধারনা চালকের মতন যাত্রীরও থাকে। ওঠা আর নামার জন্য যে কোন অবস্থানই সিএনজি যাত্রীর জন্য বৈধ। সামনে জ্যাম? ব্যাপারনা, গাড়ি ঘুরিয়ে ঢুকিয়ে দাও রংরোডে, সিএনজি যাত্রীর ধৈর্য মনে হয় সব থেকে কম। শেয়ারের সিএনজী যাত্রীদের দেখলে এটা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়। বনানী সৈনিক ক্লাব টু মিরপুর ১০ নাম্বারের সিএনজি যাত্রীরা একটা সিএঞ্জিতে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে, এক দরজা দিয়ে জন ঢুকে ঠেলা মেরে অন্য দরজা দিয়ে সামনের ২ জন কে ফেলে দিয়ে জন টিকে যায়। তারপর জামা ঠিক করে ভদ্রলোকের মতন ড্রাইভারকে বলে, টান দাও। আর যারা পড়ে যায়, তারাও ভদ্রলোক, কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে "স্টুপিড নাকি !!" এইটুক বলে ছুটে যায় পরের সিএনজি ধরতে।
যাত্রী যখন দুরন্ত, চ্যাম্পিয়ান ইত্যাদি নামক নব্য টেম্পুতেঃ
এরা শুধু মনে মনে আল্লাহকে ডাকে কত দ্রুত এই যাত্রা শেষ হবে। এরা সাধারনত কোন কিছুতে অভিযোগ করার অবকাশ পায়না। ৪ বছরের বাচ্চার বসার সাইজের যায়গায় এর নিজেদের দেহটাকে কোনোমতে আটিয়ে নিয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকে, ভাড়া দেবার জন্য মানিব্যাগে হাত ঢোকানোর উপায় নাই বলে মাঝে মাঝে হেল্পারের সঙ্গে ঝাড়ি, বড়জোড় এইটুকুই।
বাহন যায় হোক, যাত্রী মাত্রই এক সংকল্প, আমি আগে যাব, ব্যাস!!! গোল্লায় যাক বাকি দুনিয়া। গোল্লায় যাক সিস্টেম। নিজেকে আগে নেবার জন্যে যাত্রীদের এই ব্যাকুলতার চাপ পড়ে চালকের উপর। ফলে সেই চাপ রাস্তার সব নিয়মকে করে এলোমেলো। আপাত দৃষ্টিতে রাস্তার জ্যাম তৈরীতে যাত্রীর সরাসরি হাত না থাকলেও ভুমিকা খারাপ না।
যাত্রী যখন রিকশায়ঃ
তাদের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে বাস ড্রাইভাররা, খালি হুদাই চাপায় ! রিকশায় বসা যাত্রীর ধারনা, রাস্তায় শুধু রিকশারা চললেই ভালো মানায়, যিনি কাজের তাড়ায় রিকশায় উঠেন, তিনি ভুলে জান যে, এই বাহনের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিমি। অধৈর্য হয়ে চালককে টিপ্পনি দেন - ঐ মিয়া কি চালাও তোমারে ওভারটেক করে কেমনে ? বাসের ডাইনে দিয়া আগে যাও না। আরে প্রাইভেটরে সাইড দিলে যাইবা কেম্নে ? ইত্যাদি। যারা প্রেমিকা সহ উঠেন, তারা ঠিক উলটা, - মামা দেখে শুনে আস্তে আস্তে যান, কোনো তাড়া নাই। রিকশার যাত্রী নিজের চালকের ভুলের দায়ে কাধ মিলিয়ে নেন অবলীলায়, সেটা পাশের রিকশার চাকার সঙ্গে চাকা বেধে যাওয়াই হোক, বা উলটা রাস্তায় রিকশা ঢুকে গিয়ে জ্যাম লাগিয়ে দেয়াই হোক, ব্যাপার না। আমার রিকশা অলওয়েজ রাইট !!!! পথচারী থাকা অবস্থায় যেই স্পিডব্রেকারের কারনেই রাস্তাটা পার হতে পারেন, রিকশায় বসে সেই স্পিড ব্রেকারকেই গালি দেন জোরসে।যেই রাস্তায় রিকশা চলা মানা, সেই রাস্তায় ঢুকে গেলে যাত্রীরা একধরনের রোমাঞ্চ অনুভব করতে শুরু করেন। নিজের রিকশাওয়ালার প্রতি গোপন গর্ব এসে পড়ে। এইত্ত মামা চাল্লু আছে, চামে দিয়া আগায়া গেল !!!! ভিআইপি রোডে সাই সাই করে ছুটে চলা গাড়ির রাস্তায় একটা রিকশার যাত্রী হবার ভিতরে বিন্দুমাত্র গ্লানি নাই !!
যাত্রী যখন বাসেঃ
নিজে একবার উঠতে পারলেই হোল, তারপর নিজেকে বাসের মালিক, রাস্তার মালিক, দেশের মালিক ভাবা শুরু। ধুর, বার বার দাড়াইয়া দাড়াইয়া যাত্রী উডায় ক্যান। ধুর ! সিগনাল দিল ক্যান। ধুর ! পীছের বাস আগে গেল কেন। ড্রাইভার ঘন ঘন ব্রেক করে ক্যান। সবশেষে ধুরো বা* এত্ত রিকশা ক্যান !!!! উঠায়া দেয় না ক্যান রিকশাগুলা। বামে মোড় নেয়ার লেনে ঢুকে বাসটা কেন আর একটু এগিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ায় না, বেকুব ড্রাইভার। মোট কথা, পুরা পৃথিবী তখন অন্য ডাইমেনশানে চলে। ট্রাফিক পুলিশ দাড়া করালো, ড্রাইভারের কাগজ নাই, তাতে কী। ছেড়ে দেয় না কেন টাকা নিয়ে। অফিস যাওয়া লাগবে তো !!! ভার্সিটি বাস হলে তো কথাই নেই। বাস ভরা সব গ্ল্যাডিয়েটর !! আমাদের বাস, আমাদের মামা যেখান দিয়ে খুশি সেখান দিয়ে যাবে, কোনো প্রব্লেম ???? !!!! যেহেতু বাস হচ্ছে ঢাকার রাস্তার রাজা, তাই বাসের যাত্রীও রাজা গোত্রের। কোত্থেকে উঠবে, কোথায় নামবে সে নিজে ঠিক করবে। তাকে উঠাতে বা নামাতে গিয়ে ড্রাইভারের ইচ্ছা করে মাঝ রাস্তায় বাস বাকা করে দিয়ে পীছনের দুনিয়া বন্ধ করে দেয়ায় কোন পাপ নেই। ইচ্ছা হল ফ্যাচাত করে কফ বা সর্দি ঝেড়ে ফেল্ল জানালা দিয়ে, মাথা ঘুরান্টি দিলো, দাও বমি করে। কার গায়ে পড়লো কী আসে যায়? রাস্তার মালিকের কফ, রাস্তায়ই তো ফেলার নিয়ম। পাশের দামী প্রাইভেট কারের ভেতরে আরামে বসে যাওয়া যাত্রীর প্রতি এ এক সরব প্রতিবাদ। সবচেয়ে খারাপ হল, বাসের সামনে পথচারীর প্রতি বাসের যাত্রীর কোন করুনা , ক্ষমাবোধ থাকেনা। " হালায় আতকা আইলো ক্যান বাসের সামনে, দিতেন ডইলা। না মারলে এগো শিক্ষা হইব না" আহ ! কি স্পষ্ট বিবেচনা।
যাত্রী যখন ব্যাক্তিমালিকানাধীন গাড়িতেঃ
কেউ আইন মানেনা !!! এমন হলে কিভাবে হবে, এই ড্রাইভার ডানে থাকো, সাইড দিও না। টেনে যাও সিগনালে পড়বা। ঐ রিকশা ওয়ালাটাকে মারো এক চড় !! নেমে গিয়ে এই ব্যাটাকে কানটা ধরে জিজ্ঞেস করতো, এভাবে রাস্তা পার হয়? এদের কথা হল, চৌরাস্তা কেন হয় ? সব রাস্তায় ফ্লাইওভারের মতন হাইস্পিড ট্র্যাক কেন হয় না। কেন পথচারী রাস্তা পার হয়, আন্ডার, ওভার কিছু একটা দিয়ে সব সময় পার হতে পারে না কেন? যেখানে ফুটওভার ব্রীজ নাই, সেখানে পার হবারই বা দরকার কী ??? বাসগুলা বেয়াদব ড্রাইভারে চালায়, রিকশাওয়ালাগুলা দুনিয়ার হারামী, অন্য গাড়ির ড্রাইভাররাই শুধু বামে চাপ দেয় এই ধারনার বাইরে এসে নিজের দোষ এরা দেখতে পায় না কখনোই।ভীম ভীড়ের রাস্তার পাশে টুপ করে নেমে শপিং মলে ঢুকে যাবার সময় এরা একবারও ভাবে না, তার গাড়িটাই আটকে দিল একটা আস্ত লেন। আর যদি হয় সরকারী গাড়ি !!! তাহলে তো রাস্তার দুই পাশই রাইট, সিগনালে সব বাতিই গ্রিন। এশুধু প্রাইম মিনিস্টারের বেলায় হবার কথা ছিল, কিন্তু এই সুবিধা ৩য় শ্রেণীর স্টাফবাসের যাত্রীদেরও প্রাণের দাবী।
যাত্রী যখন সিএনজিতেঃ
জোরে, আরো জোরে, আরো... ৪০ মিনিটের পথে ২ মিনিট আগে যেতে পারলেও তো জীবনে একটা লাভ হল, এই ধারনা মনে হয় সব সিএনজি যাত্রীরই আছে। ২ হাত চিপা পেলে গায়ে তেল মেখে সিএনজিটা সেই চিপা গলে বের হয়ে যাবে এই ধারনা চালকের মতন যাত্রীরও থাকে। ওঠা আর নামার জন্য যে কোন অবস্থানই সিএনজি যাত্রীর জন্য বৈধ। সামনে জ্যাম? ব্যাপারনা, গাড়ি ঘুরিয়ে ঢুকিয়ে দাও রংরোডে, সিএনজি যাত্রীর ধৈর্য মনে হয় সব থেকে কম। শেয়ারের সিএনজী যাত্রীদের দেখলে এটা সবচেয়ে ভালো বোঝা যায়। বনানী সৈনিক ক্লাব টু মিরপুর ১০ নাম্বারের সিএনজি যাত্রীরা একটা সিএঞ্জিতে যেভাবে ঝাপিয়ে পড়ে, এক দরজা দিয়ে জন ঢুকে ঠেলা মেরে অন্য দরজা দিয়ে সামনের ২ জন কে ফেলে দিয়ে জন টিকে যায়। তারপর জামা ঠিক করে ভদ্রলোকের মতন ড্রাইভারকে বলে, টান দাও। আর যারা পড়ে যায়, তারাও ভদ্রলোক, কাপড় ঝাড়তে ঝাড়তে "স্টুপিড নাকি !!" এইটুক বলে ছুটে যায় পরের সিএনজি ধরতে।
যাত্রী যখন দুরন্ত, চ্যাম্পিয়ান ইত্যাদি নামক নব্য টেম্পুতেঃ
এরা শুধু মনে মনে আল্লাহকে ডাকে কত দ্রুত এই যাত্রা শেষ হবে। এরা সাধারনত কোন কিছুতে অভিযোগ করার অবকাশ পায়না। ৪ বছরের বাচ্চার বসার সাইজের যায়গায় এর নিজেদের দেহটাকে কোনোমতে আটিয়ে নিয়ে ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকে, ভাড়া দেবার জন্য মানিব্যাগে হাত ঢোকানোর উপায় নাই বলে মাঝে মাঝে হেল্পারের সঙ্গে ঝাড়ি, বড়জোড় এইটুকুই।
বাহন যায় হোক, যাত্রী মাত্রই এক সংকল্প, আমি আগে যাব, ব্যাস!!! গোল্লায় যাক বাকি দুনিয়া। গোল্লায় যাক সিস্টেম। নিজেকে আগে নেবার জন্যে যাত্রীদের এই ব্যাকুলতার চাপ পড়ে চালকের উপর। ফলে সেই চাপ রাস্তার সব নিয়মকে করে এলোমেলো। আপাত দৃষ্টিতে রাস্তার জ্যাম তৈরীতে যাত্রীর সরাসরি হাত না থাকলেও ভুমিকা খারাপ না।
পথচারী সমাচার
ঢাকা শহরের জনগণকে, চলাচলের ভিত্তিতে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
পথচারী, যাত্রী ও চালক।
এই ৩ ভুমিকাতেই মাশাল্লাহ আমরা স্বীয় মেধা খাটায়ে রাস্তার অবস্থা ১২ টা বাজায়ে ফেলি। যখন যেই ভুমিকাতে থাকি, তখন সেই ভুমিকা থেকে সব কিছু বিচার করে নিজের পক্ষে সুবিধা আদায় করার জন্য শিক্ষা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, প্রাণ সবকিছু বাজি ধরতে আমরা ওস্তাদ।
অনেকদিন আগে নো-ম্যানস ল্যান্ড মুভিটাতে দেখেছিলাম যুদ্ধরত দুই দেশের দুই সৈনিক, এক বন্দুক নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। যখন যার হাতে বন্দুক থাকে, সে অন্যজনের দিকে বন্দুক ধরে ধমক মেরে স্বীকার করায় এই যুদ্ধের জন্য তা্র দেশ দায়ী। আমরাও রাস্তায় নামলে এই কাজ করি।
প্রথমে আসি পথচারীর ভুমিকায়
যখনই আমরা কোন যানবাহনে থাকিনা, তখনই আমরা রাস্তায় হাঁটার সময় ভুলে যাই, নিয়ম -কানুন বলে একটা জিনিস আছে, সেটা সব মানুষের জন্য।
বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, কাকলি তে রাস্তা পার হবার ফুটওভার ব্রীজে এস্কেলেটর থাকার পরও অধিকাংশ শিক্ষিত চাকুরীজীবি বা ছাত্র-ছাত্রী চলমান গাড়ির সামনে ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে কেন রাস্তা পার হয়, তার কোন ব্যাখ্যা আছে ? কষ্টটাও তো করতে হয়না ফুট ওভার ব্রীজে পার হতে । তার উপর ঐ রাস্তার ট্রাফিক ফ্লো এমন , যে একটা গাড়ির গতি রোধ করে দিলে তার পেছনে ৫০টা গাড়ি থমকে যায়। এমনিতেই ঐ রাস্তায় ট্রাফিক ফ্লো মেনুয়ালী মেইন্টেইন করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের জান বের হবার দশা হয়। তার উপরে একা-দোকা পার হবার খায়েশ নিয়ে ইচ্ছা মতন গাড়ির মুখে দাঁড়িয়ে পড়ে গর্বিত নাগরিক!!! রাস্তা এদের বাপ দাদার। এদের যখন যেমন খুশি পার হবে।
ফুটওভার ব্রীজ এর নীচ দিয়ে পার হওয়া প্রথম শ্রেণীর নাগরিকদের চেয়েও পাওয়ারফুল একটা ক্যাটাগরী আছে। আমার কলিগ রকি'র ভাষায় যারা ম্যাট্রিক্সের 'নিও এন্ডারসন' এর কাজিন। এরা ৬০ কিমি গতির গাড়ির ২০ ফুট সামনে অবলীলায় বুক চিতিয়ে নেমে পড়ে এক হাত গাড়ির দিকে থামার ইশারা করে বাড়িয়ে। যেন এদের হাতের পাওয়ারে গাড়ির অটো ব্রেক হয়ে যাবে। এই বলদ প্রজাতি সুস্থ দেহে বাড়ি ফিরে শুধু মাত্র চালক শ্রেণীর উতকর্ষতায়।
কিছু আছে সিগনাল প্রতিবন্ধী। এরা বুঝে না সিগনালে কখন পার হতে হয়। মিরপুর ১০ নাম্বার মোড়ে প্রতিদিন প্রায় শ খানেক এই প্রজাতি দেখা যায়। এরা দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির লেনের পাশের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকে। যেই সিগনাল ছাড়া হয়, তখন এদের মনে পড়ে রাস্তা পার হবার কথা, দেয় গোল্লাছুট খেলা শুরু করে।
একটা প্রজাতি আছে হলোম্যান মানিয়ায় আক্রান্ত। এরা রাস্তা আড়াআড়ি পার হয় না। বড় ডেয়ারিং এই পদের মানুষরা ভীম গতির রাস্তায় নেমে লম্বালম্বি হাটতে থাকে। দুই গাড়ির লেনের মাঝখানে এমন ভাবে দাঁড়ায় যেন তার দেহ প্রস্থ শুন্য!! হাত সোজা করে পাছা চিপ্পি দিয়ে দুই বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ ভাবে জানিনা।
কিছু কিছু সিগ্নালে দেখা যায় বিপ্লবী দল। এরা একা পার হয় না। ১০ -১৫ জন একসঙ্গে হলে, আইন নিজের হাতে তুলে পিপড়ার দলের মত নেমে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশের সিগ্নালে থোড়াই কেয়ার এদের। এই দলে স্কুল ফেরত বা স্কুলগামী সচেতন!!!! অভিভাবক সমাজের সংখ্যা বেশি। এরা মনে হয় সন্তানকে শিক্ষা দেন- এই দেশে তোরে কেউ রাস্তা ছাইড়া দিবেনা, নিজের রাস্তা নিজে বানায়া নিবি !!!!!
কিছু আছে কনফিউজড। রাস্তায় নামে, গাড়ির গতি আর দিক দেখে ডিসিশান নিতে পারে না, এরা কি নিজে দাঁড়াবে, নাকি এগিয়ে গিয়ে গাড়িকে যেতে দিবে। সিডি প্লেয়ারে আটকে যাওয়া গানের শব্দের মত আগপীছ করতে করতে এরা চালককে নার্ভাস করে দিয়ে শেষ মূহুর্তে এক লাফে সামনে বা পীছনে যায়। তারপর চালকের দিকে বোকা বোকা হাসি দেয়। মাঝে মাঝে এরা দলে থাকে, একজন আগায় তো আরেকজন পিছায়। তখন আবার সামনের জন ব্যাক করার ডিসিশান নেয়। বড়ই বিরিছিরি কারবার।
ফুটপাথের চেয়ে মূল রাস্তায় হাটাকে অনেকেই ব্যাপক হ্যাডমের সঙ্গে নিজের অধিকার মনে করে। এদের পেছনে গাড়ি জ্যাম লাগলেও এরা পথ ছাড়বে না। হর্ন দিলেও ফুটপাথে উঠবে না।
মীরপুরের রাস্তায় কিছু আছে, এরা নাইট ক্রলার। রাস্তার বাতিতে এরা রাস্তা পার হবে না। যখন রাস্তা ফাকা, তখন এরা আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। কোনো গাড়ি আসতে থাকলে এরা সেই গাড়ির আলোতে দেখে নেয়, রাস্তায় ভাংগা, বা পানি আছে কিনা, তারপর পার হবার এটেম্পট নেয়।
বাস থেকে নেমেই যারা সদ্য পথচারী হয়। এদের অর্ধেকের প্রিয় অভ্যাস হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে উলটা দিকে যাওয়া। এদের মাথায় কাজ করেনা, দাঁড়িয়ে থাকা বাসটার ডান দিকে কোনো গাড়ি বেশ গতি নিয়ে চলার অধিকার রাখে।
সবশেষে বলি, যেসব পথচারীরা যাত্রী হতে ইচ্ছুক। এরা হচ্ছেন নবাবজাদা সলিমুল্লাহ'র ডাইরেক্ট বংশধর। "আমি যেখানে দাড়াই সেখান থেকেই পথের শুরু" এমন একটা ভাব এদের। এরা বাসের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে পড়েন মাঝ রাস্তায়, ঐ সিএঞ্জি !!!! বলে প্যারা জাম্প করে বসেন প্রাইভেট কারের বনেটের সামনে।
প্রতিদিন রাস্তায় পথচারী ভুমিকায় লাখ লাখ মানুষ। এত এত বিচিত্র আচরণ, কোনো আইন করে ঠিক করা যাবে বলে আমার ধারণা নাই। এই আচরণে প্রতিদিন ক্ষতি হয় আরো লাখ লাখ মানুষের লাখ লাখ কর্মঘন্টা। ধীর রাস্তায় পুড়ে কোটি কোটি টাকার জ্বালানী। পথের ভোগান্তি বাড়াতে যোগ হয় এমন নিত্যনতুন অবিবেচক আচরণ।
পথচারী, যাত্রী ও চালক।
এই ৩ ভুমিকাতেই মাশাল্লাহ আমরা স্বীয় মেধা খাটায়ে রাস্তার অবস্থা ১২ টা বাজায়ে ফেলি। যখন যেই ভুমিকাতে থাকি, তখন সেই ভুমিকা থেকে সব কিছু বিচার করে নিজের পক্ষে সুবিধা আদায় করার জন্য শিক্ষা, বিবেক, মনুষ্যত্ব, প্রাণ সবকিছু বাজি ধরতে আমরা ওস্তাদ।
অনেকদিন আগে নো-ম্যানস ল্যান্ড মুভিটাতে দেখেছিলাম যুদ্ধরত দুই দেশের দুই সৈনিক, এক বন্দুক নিয়ে কাড়াকাড়ি করে। যখন যার হাতে বন্দুক থাকে, সে অন্যজনের দিকে বন্দুক ধরে ধমক মেরে স্বীকার করায় এই যুদ্ধের জন্য তা্র দেশ দায়ী। আমরাও রাস্তায় নামলে এই কাজ করি।
প্রথমে আসি পথচারীর ভুমিকায়
যখনই আমরা কোন যানবাহনে থাকিনা, তখনই আমরা রাস্তায় হাঁটার সময় ভুলে যাই, নিয়ম -কানুন বলে একটা জিনিস আছে, সেটা সব মানুষের জন্য।
বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, কাকলি তে রাস্তা পার হবার ফুটওভার ব্রীজে এস্কেলেটর থাকার পরও অধিকাংশ শিক্ষিত চাকুরীজীবি বা ছাত্র-ছাত্রী চলমান গাড়ির সামনে ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে কেন রাস্তা পার হয়, তার কোন ব্যাখ্যা আছে ? কষ্টটাও তো করতে হয়না ফুট ওভার ব্রীজে পার হতে । তার উপর ঐ রাস্তার ট্রাফিক ফ্লো এমন , যে একটা গাড়ির গতি রোধ করে দিলে তার পেছনে ৫০টা গাড়ি থমকে যায়। এমনিতেই ঐ রাস্তায় ট্রাফিক ফ্লো মেনুয়ালী মেইন্টেইন করতে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের জান বের হবার দশা হয়। তার উপরে একা-দোকা পার হবার খায়েশ নিয়ে ইচ্ছা মতন গাড়ির মুখে দাঁড়িয়ে পড়ে গর্বিত নাগরিক!!! রাস্তা এদের বাপ দাদার। এদের যখন যেমন খুশি পার হবে।
ফুটওভার ব্রীজ এর নীচ দিয়ে পার হওয়া প্রথম শ্রেণীর নাগরিকদের চেয়েও পাওয়ারফুল একটা ক্যাটাগরী আছে। আমার কলিগ রকি'র ভাষায় যারা ম্যাট্রিক্সের 'নিও এন্ডারসন' এর কাজিন। এরা ৬০ কিমি গতির গাড়ির ২০ ফুট সামনে অবলীলায় বুক চিতিয়ে নেমে পড়ে এক হাত গাড়ির দিকে থামার ইশারা করে বাড়িয়ে। যেন এদের হাতের পাওয়ারে গাড়ির অটো ব্রেক হয়ে যাবে। এই বলদ প্রজাতি সুস্থ দেহে বাড়ি ফিরে শুধু মাত্র চালক শ্রেণীর উতকর্ষতায়।
কিছু আছে সিগনাল প্রতিবন্ধী। এরা বুঝে না সিগনালে কখন পার হতে হয়। মিরপুর ১০ নাম্বার মোড়ে প্রতিদিন প্রায় শ খানেক এই প্রজাতি দেখা যায়। এরা দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির লেনের পাশের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকে। যেই সিগনাল ছাড়া হয়, তখন এদের মনে পড়ে রাস্তা পার হবার কথা, দেয় গোল্লাছুট খেলা শুরু করে।
একটা প্রজাতি আছে হলোম্যান মানিয়ায় আক্রান্ত। এরা রাস্তা আড়াআড়ি পার হয় না। বড় ডেয়ারিং এই পদের মানুষরা ভীম গতির রাস্তায় নেমে লম্বালম্বি হাটতে থাকে। দুই গাড়ির লেনের মাঝখানে এমন ভাবে দাঁড়ায় যেন তার দেহ প্রস্থ শুন্য!! হাত সোজা করে পাছা চিপ্পি দিয়ে দুই বাসের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এরা কিভাবে নিজেদের নিরাপদ ভাবে জানিনা।
কিছু কিছু সিগ্নালে দেখা যায় বিপ্লবী দল। এরা একা পার হয় না। ১০ -১৫ জন একসঙ্গে হলে, আইন নিজের হাতে তুলে পিপড়ার দলের মত নেমে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশের সিগ্নালে থোড়াই কেয়ার এদের। এই দলে স্কুল ফেরত বা স্কুলগামী সচেতন!!!! অভিভাবক সমাজের সংখ্যা বেশি। এরা মনে হয় সন্তানকে শিক্ষা দেন- এই দেশে তোরে কেউ রাস্তা ছাইড়া দিবেনা, নিজের রাস্তা নিজে বানায়া নিবি !!!!!
কিছু আছে কনফিউজড। রাস্তায় নামে, গাড়ির গতি আর দিক দেখে ডিসিশান নিতে পারে না, এরা কি নিজে দাঁড়াবে, নাকি এগিয়ে গিয়ে গাড়িকে যেতে দিবে। সিডি প্লেয়ারে আটকে যাওয়া গানের শব্দের মত আগপীছ করতে করতে এরা চালককে নার্ভাস করে দিয়ে শেষ মূহুর্তে এক লাফে সামনে বা পীছনে যায়। তারপর চালকের দিকে বোকা বোকা হাসি দেয়। মাঝে মাঝে এরা দলে থাকে, একজন আগায় তো আরেকজন পিছায়। তখন আবার সামনের জন ব্যাক করার ডিসিশান নেয়। বড়ই বিরিছিরি কারবার।
ফুটপাথের চেয়ে মূল রাস্তায় হাটাকে অনেকেই ব্যাপক হ্যাডমের সঙ্গে নিজের অধিকার মনে করে। এদের পেছনে গাড়ি জ্যাম লাগলেও এরা পথ ছাড়বে না। হর্ন দিলেও ফুটপাথে উঠবে না।
মীরপুরের রাস্তায় কিছু আছে, এরা নাইট ক্রলার। রাস্তার বাতিতে এরা রাস্তা পার হবে না। যখন রাস্তা ফাকা, তখন এরা আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে। কোনো গাড়ি আসতে থাকলে এরা সেই গাড়ির আলোতে দেখে নেয়, রাস্তায় ভাংগা, বা পানি আছে কিনা, তারপর পার হবার এটেম্পট নেয়।
বাস থেকে নেমেই যারা সদ্য পথচারী হয়। এদের অর্ধেকের প্রিয় অভ্যাস হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে উলটা দিকে যাওয়া। এদের মাথায় কাজ করেনা, দাঁড়িয়ে থাকা বাসটার ডান দিকে কোনো গাড়ি বেশ গতি নিয়ে চলার অধিকার রাখে।
সবশেষে বলি, যেসব পথচারীরা যাত্রী হতে ইচ্ছুক। এরা হচ্ছেন নবাবজাদা সলিমুল্লাহ'র ডাইরেক্ট বংশধর। "আমি যেখানে দাড়াই সেখান থেকেই পথের শুরু" এমন একটা ভাব এদের। এরা বাসের দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে পড়েন মাঝ রাস্তায়, ঐ সিএঞ্জি !!!! বলে প্যারা জাম্প করে বসেন প্রাইভেট কারের বনেটের সামনে।
প্রতিদিন রাস্তায় পথচারী ভুমিকায় লাখ লাখ মানুষ। এত এত বিচিত্র আচরণ, কোনো আইন করে ঠিক করা যাবে বলে আমার ধারণা নাই। এই আচরণে প্রতিদিন ক্ষতি হয় আরো লাখ লাখ মানুষের লাখ লাখ কর্মঘন্টা। ধীর রাস্তায় পুড়ে কোটি কোটি টাকার জ্বালানী। পথের ভোগান্তি বাড়াতে যোগ হয় এমন নিত্যনতুন অবিবেচক আচরণ।
সুররিয়েল জগত
ইদানীং আমার সবকিছু কেমন যেন সুররিয়েল হয়ে গেছে... উট, রাজহাঁস, জীবরাঈল, জিরাফ - কত কিছুর যে আনাগোনা শুরু হয়েছে রিসেন্টলি তা গুনলে শেষ হবে না। জানি ওরা নেই- তবুও কেন জানি ওরা বারবার ফিরে আসে আমার জগতে। মাঝে মাঝে মগজ গলে বৃষ্টি নামে দেহের ভেতরের লুকোনো সাগরে। আবার সেখানে জেগে ওঠে ছোট্টো একটা সেন্টমার্টিন...
যাই হোক, এসব নিয়ে আজ সাফাতের সাথে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় খুঁজে পেলাম নতুন একটা দর্শন। উফফ.. নতুন কিছু- কতদিন পরে..
সম্প্রতি এক রিসার্চে দেখা গেছে যে প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য কোন প্রাণীর পারসেপশনকে যে রিয়েলিটির সাথে মিলতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মাঝে মাঝে উল্টোটাই বেটার। মানে, এতদিন আমরা যা ভাবতাম- একটা প্রাণী তার পরিবেশকে যত বেশী "একুরেটলি" সেন্স করতে পারবে, সে তত ভাল টিকে থাকবে - সেটা আসলে সত্যি না। একটা হাইপোথিটিকাল উদাহরণ দেই- একটা জায়গায় যদি গভীর পানি থাকে, আপনি ডুবে মারা যাবেন, পানি না থাকলে তৃষ্ণায় মারা যাবেন, আর ভাল থাকবেন পরিমিত পানিতে। ধরেন, চোখ ছাড়া পানি মাপার আর কোন ইন্দ্রিয় একটা প্রাণীর নেই। এখন কেউ যদি সব ডেপথের পানিকে একই রঙ এ দেখে- সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যেটা দরকার- পানির গভীরতা বুঝতে পারা- তা পারবে না। সুতরাং টিকে থাকতে পারবে না বেশীদিন। এখন, যে কম পানিকে হাল্কা নীল, পরিমিত পানিকে গাড় নীল আর গভীর পানিকে বেগুনী দেখে, সে কিন্তু বেঁচে থাকবে বেশ ভালভাবে। কিন্তু এর জন্য তিনটি কালার আলাদা করে চিনতে পারতে হবে তাকে। অর্থাৎ, ব্রেন ও চোখের ক্ষমতা প্রথমজনের থেকে অনেক বেশী হতে হবে। ডেটা প্রোসেসিং করতে শক্তিও খরচ হবে বেশী ( জাস্ট আইডিয়াল কেস)
ধরি, আরেকজন কেউ আছে, যে কম পানি এবং গভীর পানি - দুটোকেই লাল দেখে আর পরিমিত পানিকে দেখে নীল। সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য দ্বিতীয় জনের ফুল সুবিধাই পাচ্ছে। বরং কনফিউশনের চান্স আরো কম এবং ব্রেন, চোখ অত উন্নত হবার দরকার নেই ( দুটো অপোজিট কালার ডিটেক্ট করতে হবে) এবং রিসোর্সও লাগবে কম।
অর্থাৎ সে ইভোলুশনের চোখে বেশী যোগ্য। যদিও সে দুনিয়াকে দেখে খুবই "ভ্রান্তভাবে"। কম পানি-বেশী পানি দুটোই সে সেম ভাবে দেখে.. যা সত্যি না।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সুররিয়েল এই দৃষ্টিই তৃতীয় জনের টিকে থাকার শক্তি। পরের প্রজন্মে এর জিনই বেশী ছড়াবে।
হয়ত হয়েছেও তাই..
তারমানে কি এটা যে আমরা যেভাবে পৃথিবীকে দেখছি, সে আসলে তেমন না? ফর রিয়েল/ ফিজিক্যালি সে একেবারে আলাদা? আমরা কি তাহলে আজীবন পুরোপুরি ভ্রান্তভাবে বেশ কিছু ব্যাপার পারসিভ করে যাই?
আমাদের চোখ আর কানের কাছে কম ফ্রিকুয়েন্সি আর বেশী ফ্রিকুয়েন্সি কিন্তু একই- অস্তিত্বহীন। শব্দের কথা ধরি- ফ্রিকুয়েন্সি কম- আমরা শুনি না। বাড়তে বাড়তে একটা লেভেলে আসলো- খুব ভোঁতাভাবে শুনতে শুরু করলাম, এরপর ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ে, তীক্ষ্ণতাও বাড়ে। কিন্তু একটা পর্যায়ের পরে এভাবে আর আগায় না, একসময় ফ্রিকুয়েন্সি বাড়লেও আবারও কমে নাই হয়ে যায় শব্দটা..
অর্থাৎ, আমাদের শব্দের ফীলিংসটা আসলে পুরোপুরি "রিয়েল" না। রিয়েল না দেখার ফীলিংসও।
কত্তো জোস না ব্যাপারটা?
তাহলে কি "আল্টিমেট" পারসেপশন বলে কিছু আছে?
উহু... পারসেপশনের ক্ষেত্রেও সবই আপেক্ষিক।
তাহলে রিয়েলিটি টা আসলে কেমন? কে জানে সেটা?
সত্য হল আমরা কেউ তা জানি না.. একই জগৎ কে একেক জন একেক ভাবে দেখে, শোনে, বোঝে..আমরা সবাই শুধু সাঁতার কাটি সুররিয়েল একটা জগতে.. সারাটা জীবন ধরে..
যাই হোক, এসব নিয়ে আজ সাফাতের সাথে কথা হচ্ছিল। কথায় কথায় খুঁজে পেলাম নতুন একটা দর্শন। উফফ.. নতুন কিছু- কতদিন পরে..
সম্প্রতি এক রিসার্চে দেখা গেছে যে প্রকৃতিতে টিকে থাকার জন্য কোন প্রাণীর পারসেপশনকে যে রিয়েলিটির সাথে মিলতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং মাঝে মাঝে উল্টোটাই বেটার। মানে, এতদিন আমরা যা ভাবতাম- একটা প্রাণী তার পরিবেশকে যত বেশী "একুরেটলি" সেন্স করতে পারবে, সে তত ভাল টিকে থাকবে - সেটা আসলে সত্যি না। একটা হাইপোথিটিকাল উদাহরণ দেই- একটা জায়গায় যদি গভীর পানি থাকে, আপনি ডুবে মারা যাবেন, পানি না থাকলে তৃষ্ণায় মারা যাবেন, আর ভাল থাকবেন পরিমিত পানিতে। ধরেন, চোখ ছাড়া পানি মাপার আর কোন ইন্দ্রিয় একটা প্রাণীর নেই। এখন কেউ যদি সব ডেপথের পানিকে একই রঙ এ দেখে- সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যেটা দরকার- পানির গভীরতা বুঝতে পারা- তা পারবে না। সুতরাং টিকে থাকতে পারবে না বেশীদিন। এখন, যে কম পানিকে হাল্কা নীল, পরিমিত পানিকে গাড় নীল আর গভীর পানিকে বেগুনী দেখে, সে কিন্তু বেঁচে থাকবে বেশ ভালভাবে। কিন্তু এর জন্য তিনটি কালার আলাদা করে চিনতে পারতে হবে তাকে। অর্থাৎ, ব্রেন ও চোখের ক্ষমতা প্রথমজনের থেকে অনেক বেশী হতে হবে। ডেটা প্রোসেসিং করতে শক্তিও খরচ হবে বেশী ( জাস্ট আইডিয়াল কেস)
ধরি, আরেকজন কেউ আছে, যে কম পানি এবং গভীর পানি - দুটোকেই লাল দেখে আর পরিমিত পানিকে দেখে নীল। সে কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য দ্বিতীয় জনের ফুল সুবিধাই পাচ্ছে। বরং কনফিউশনের চান্স আরো কম এবং ব্রেন, চোখ অত উন্নত হবার দরকার নেই ( দুটো অপোজিট কালার ডিটেক্ট করতে হবে) এবং রিসোর্সও লাগবে কম।
অর্থাৎ সে ইভোলুশনের চোখে বেশী যোগ্য। যদিও সে দুনিয়াকে দেখে খুবই "ভ্রান্তভাবে"। কম পানি-বেশী পানি দুটোই সে সেম ভাবে দেখে.. যা সত্যি না।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে সুররিয়েল এই দৃষ্টিই তৃতীয় জনের টিকে থাকার শক্তি। পরের প্রজন্মে এর জিনই বেশী ছড়াবে।
হয়ত হয়েছেও তাই..
তারমানে কি এটা যে আমরা যেভাবে পৃথিবীকে দেখছি, সে আসলে তেমন না? ফর রিয়েল/ ফিজিক্যালি সে একেবারে আলাদা? আমরা কি তাহলে আজীবন পুরোপুরি ভ্রান্তভাবে বেশ কিছু ব্যাপার পারসিভ করে যাই?
আমাদের চোখ আর কানের কাছে কম ফ্রিকুয়েন্সি আর বেশী ফ্রিকুয়েন্সি কিন্তু একই- অস্তিত্বহীন। শব্দের কথা ধরি- ফ্রিকুয়েন্সি কম- আমরা শুনি না। বাড়তে বাড়তে একটা লেভেলে আসলো- খুব ভোঁতাভাবে শুনতে শুরু করলাম, এরপর ফ্রিকুয়েন্সি বাড়ে, তীক্ষ্ণতাও বাড়ে। কিন্তু একটা পর্যায়ের পরে এভাবে আর আগায় না, একসময় ফ্রিকুয়েন্সি বাড়লেও আবারও কমে নাই হয়ে যায় শব্দটা..
অর্থাৎ, আমাদের শব্দের ফীলিংসটা আসলে পুরোপুরি "রিয়েল" না। রিয়েল না দেখার ফীলিংসও।
কত্তো জোস না ব্যাপারটা?
তাহলে কি "আল্টিমেট" পারসেপশন বলে কিছু আছে?
উহু... পারসেপশনের ক্ষেত্রেও সবই আপেক্ষিক।
তাহলে রিয়েলিটি টা আসলে কেমন? কে জানে সেটা?
সত্য হল আমরা কেউ তা জানি না.. একই জগৎ কে একেক জন একেক ভাবে দেখে, শোনে, বোঝে..আমরা সবাই শুধু সাঁতার কাটি সুররিয়েল একটা জগতে.. সারাটা জীবন ধরে..
আইন-গাইন
ছোট বেলায় হুজুরের কাছে আরবী বর্ণ চিতকার করে শেখার সময় একজোড়া বর্ণ পড়তে গিয়ে হাসি আসতো। আইন-গাইন । হাসি আসতো কারণ, আইন বলে একটা বাংলা শব্দ আছে। গাইন বলে কিছু নাই। হাসতাম আর বলতাম - গাইন আবার কী !
বাচ্চা বয়স তাই জানতাম না, বড় হবার পর ঠোক্কর খেতে খেতে শিখসি, আইন আর গাইন দুইটাই দেশে আছে।
আইন হচ্ছে যা সংবিধিবদ্ধ ভাবে সকলের জন্য নির্ধারিত নির্দেশ। আর গাইন হচ্ছে এমন কিছু ব্যাবস্থা যা সংবিধিবদ্ধ না, কিন্তু আমরা দিনের পর দিন মেনে নিচ্ছি, মেনে চলছি।
দেশে রাস্তা আছে, রাস্তায় চলার আইন আছে। রাজপথের বাম পাশ দিয়ে গাড়ি চলবে, এটা আইন। বাম পাশ ভীড় জমে স্থির হয়ে গেলে, ডান পাশ দিয়ে বুক ফুলায়ে সরকারী গাড়ি ছুটবে এটা গাইন।
গাড়িপ্রতি বাতসরিক হাজার পাচেক টাকা রাস্তার কর, পনেরো, ত্রিশ বা লাখ টাকা অগ্রীম আয়কর দিয়ে হালনাগাদ থাকতে হবে, এটা আইন।
ধরা খেলেই ২০০ টাকা নগদে দিলে গাড়িতে আপনি থাকলেই হবে, কাগজপাত্তি থাকলো কিনা, তার চিন্তা নাই, এটা গাইন।
রাজপথের পাশে ভবনে, পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং এর ব্যাবস্থা রাখতেই হবে, এটা আইন।
পার্কিং বিহীন ভবনে বাধ্য হয়ে গিয়ে, গাড়িতে রেকার ক্লিপ খেয়ে ১২০০ টাকা গচ্চা দেয়া হচ্ছে গাইন।
সময় মত অফিসে ঢুকতে হবে, দেরী হলে তিন দিন লেট এর জন্য এক দিনের বেতন কাটা হবে, এটা আইন।
কিন্তু সেই অফিস থেকেই কখন আপনি বের হবেন তার নাই ঠিক ঠিকানা, ছুটির দিনেও আধা রাত পর্যন্ত খেটে খেটে জিহবা ঝুলায়ে ফেলেও দেখবেন কেউ হিসেব করার নাই, এটা গাইন।
সরকার সংসদে বসে এক বাজেট বিবরণীতে বলে দেবে, এই খাতে, অই খাতে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত করা হল, এটা আইন।
কিন্তু ভ্যাট চালানের নামগন্ধ বিহীন বিক্রেতাও বেশ মোঁচে তা দিয়ে ভ্যাট সহ দাম ধরে জিনিস বেচে দিবে, ভ্যাটের টাকা পকেটে ঢুকে যাবে, এটা হচ্ছে গাইন।
শিক্ষাক্রমের বই ক্লাসে পড়িয়ে শেখাবেন, এই মর্মে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হচ্ছে আইন।
কিন্তু ক্লাস ৯ মাস হলেও, না বুঝতে পারা সেই বই কোচিং-এ ৩ মাসে শিখিয়ে দেয়া হয়, এর নাম গাইন।
অন্যের সম্পদ, মানে বাড়ি গাড়ি ইত্যাদিতে আক্রমণ, ক্ষতিসাধন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা আইন।
আমাদের নেতাকে সালাম দেয় নাই কেন,
গতকালের ফাঁস হওয়া প্রশ্নে আজকে পরীক্ষা নেয়া হল না কেন, এই জাতীয় দাবীতে বিক্ষোভ করে রাস্তায় নেমে, সামনে যেই গাড়ি পাওয়া যাবে তা ধুনে দিয়ে ভর্তা করে দেয়া হবে, এটা গাইন।
শহরের রাস্তায় সরকারপ্রধান চলাচলের সময় সাধারণের চলাচল
বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এটা আইন।
কিন্তু অভাগা এই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিনে যাবার মোটে তিনটা পথ
(নিউমার্কেট- গাবতলী সড়ক, ফার্মগেট- মিরপুর ১২ পর্যন্ত রোকেয়া স্মরণী, শাহবাগ - উত্তরা টঙ্গী সড়ক)
তিনটা পথকেই বন্ধ করে সরকার প্রধান আবাসস্থল থেকে কর্মস্থলে যাবেন এটা গাইন।
লিখতে গেলে সারা রাত এমন
অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
এই দেশে আইন আর গাইন দুইই সমান মাপে বিদ্যমান।
দেশে সরকার আসে যায়, নতুন নতুন আইন হয়, কিন্তু গাইন দুর হয় না।
উন্নত জাতি হতে হলে, আইনের প্রয়োগ আর গাইনের বিলোপ না হলে হবে না।
আইন গাইনের চিপায় শ্বাস রুদ্ধ নাগরিকের জন্য আরবীতে একটাই দোয়া -
ইয়া নাফসী! ইয়া নাফসী!!
বাচ্চা বয়স তাই জানতাম না, বড় হবার পর ঠোক্কর খেতে খেতে শিখসি, আইন আর গাইন দুইটাই দেশে আছে।
আইন হচ্ছে যা সংবিধিবদ্ধ ভাবে সকলের জন্য নির্ধারিত নির্দেশ। আর গাইন হচ্ছে এমন কিছু ব্যাবস্থা যা সংবিধিবদ্ধ না, কিন্তু আমরা দিনের পর দিন মেনে নিচ্ছি, মেনে চলছি।
দেশে রাস্তা আছে, রাস্তায় চলার আইন আছে। রাজপথের বাম পাশ দিয়ে গাড়ি চলবে, এটা আইন। বাম পাশ ভীড় জমে স্থির হয়ে গেলে, ডান পাশ দিয়ে বুক ফুলায়ে সরকারী গাড়ি ছুটবে এটা গাইন।
গাড়িপ্রতি বাতসরিক হাজার পাচেক টাকা রাস্তার কর, পনেরো, ত্রিশ বা লাখ টাকা অগ্রীম আয়কর দিয়ে হালনাগাদ থাকতে হবে, এটা আইন।
ধরা খেলেই ২০০ টাকা নগদে দিলে গাড়িতে আপনি থাকলেই হবে, কাগজপাত্তি থাকলো কিনা, তার চিন্তা নাই, এটা গাইন।
রাজপথের পাশে ভবনে, পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিং এর ব্যাবস্থা রাখতেই হবে, এটা আইন।
পার্কিং বিহীন ভবনে বাধ্য হয়ে গিয়ে, গাড়িতে রেকার ক্লিপ খেয়ে ১২০০ টাকা গচ্চা দেয়া হচ্ছে গাইন।
সময় মত অফিসে ঢুকতে হবে, দেরী হলে তিন দিন লেট এর জন্য এক দিনের বেতন কাটা হবে, এটা আইন।
কিন্তু সেই অফিস থেকেই কখন আপনি বের হবেন তার নাই ঠিক ঠিকানা, ছুটির দিনেও আধা রাত পর্যন্ত খেটে খেটে জিহবা ঝুলায়ে ফেলেও দেখবেন কেউ হিসেব করার নাই, এটা গাইন।
সরকার সংসদে বসে এক বাজেট বিবরণীতে বলে দেবে, এই খাতে, অই খাতে ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত করা হল, এটা আইন।
কিন্তু ভ্যাট চালানের নামগন্ধ বিহীন বিক্রেতাও বেশ মোঁচে তা দিয়ে ভ্যাট সহ দাম ধরে জিনিস বেচে দিবে, ভ্যাটের টাকা পকেটে ঢুকে যাবে, এটা হচ্ছে গাইন।
শিক্ষাক্রমের বই ক্লাসে পড়িয়ে শেখাবেন, এই মর্মে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হচ্ছে আইন।
কিন্তু ক্লাস ৯ মাস হলেও, না বুঝতে পারা সেই বই কোচিং-এ ৩ মাসে শিখিয়ে দেয়া হয়, এর নাম গাইন।
অন্যের সম্পদ, মানে বাড়ি গাড়ি ইত্যাদিতে আক্রমণ, ক্ষতিসাধন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা আইন।
আমাদের নেতাকে সালাম দেয় নাই কেন,
গতকালের ফাঁস হওয়া প্রশ্নে আজকে পরীক্ষা নেয়া হল না কেন, এই জাতীয় দাবীতে বিক্ষোভ করে রাস্তায় নেমে, সামনে যেই গাড়ি পাওয়া যাবে তা ধুনে দিয়ে ভর্তা করে দেয়া হবে, এটা গাইন।
শহরের রাস্তায় সরকারপ্রধান চলাচলের সময় সাধারণের চলাচল
বন্ধ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, এটা আইন।
কিন্তু অভাগা এই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিনে যাবার মোটে তিনটা পথ
(নিউমার্কেট- গাবতলী সড়ক, ফার্মগেট- মিরপুর ১২ পর্যন্ত রোকেয়া স্মরণী, শাহবাগ - উত্তরা টঙ্গী সড়ক)
তিনটা পথকেই বন্ধ করে সরকার প্রধান আবাসস্থল থেকে কর্মস্থলে যাবেন এটা গাইন।
লিখতে গেলে সারা রাত এমন
অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
এই দেশে আইন আর গাইন দুইই সমান মাপে বিদ্যমান।
দেশে সরকার আসে যায়, নতুন নতুন আইন হয়, কিন্তু গাইন দুর হয় না।
উন্নত জাতি হতে হলে, আইনের প্রয়োগ আর গাইনের বিলোপ না হলে হবে না।
আইন গাইনের চিপায় শ্বাস রুদ্ধ নাগরিকের জন্য আরবীতে একটাই দোয়া -
ইয়া নাফসী! ইয়া নাফসী!!
Friday, January 4, 2019
ঘৃণা...
আমি পৃথিবীকে ঘৃণা করি।
আমি ঘৃণা করি এর আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা ইঞ্চিকে...
ঘৃণা করি হেলমেট-বুট আর কাগজে ছাপা এর ফাঁপা শীর্ষকে,
ঘৃণা করি জীবনের শিকড়ে লেপ্টে থাকা ওই শ্রেষ্ঠত্বের যুদ্ধকে-
যাকে তুমি "প্রকৃতি" বলে পূজো কর...
.
আমি ঘৃণা করি জীবন নামক সংক্রামক অসুখটাকে, ঘৃণা করি বেঁচে থাকা সবকটা অসুস্থ মানুষকে-
যারা না বুঝেই কাটিয়ে দেয় বিশাল একটা অসুখী জীবন...
সে জীবনেও হর্ষ আছে।
হর্ষ আছে নির্বোধ সুন্দর প্রকৃতিতে,
হর্ষ আছে বিছানার নির্বোধ মানুষটিতে..
কিন্তু সুখ নেই...
আর নেশার ঘোর বেশীদিন থাকে না...
.
আমি ঘৃণা করি সমস্ত সৃষ্টিকে।
ঘৃণা করি অযত্নে বেড়ে ওঠা এর প্রতিটি নির্লিপ্ত নিয়মকে।
যে নিয়মে তুমি খুন কর প্রতিদিন- শুধুই বেঁচে থাকার জন্য..
.
আমি সেদিন স্বেচ্ছায় জন্মাইনি,
জন্মাতাম না কোনদিনই- যদি তা আমি পারতাম।
কিন্তু সে ক্ষমতা আমার নেই, নেই আমাদের কারোরই।
আর তাই এই বিশাল জেলখানাটায় প্রতিদিন আসে নতুন কিছু মানুষ - অবুঝ কিছু কান্নায়..
আরো আসে গুলি খাওয়া কিছু হাঁস, জবাই হওয়া গরু আর গলা কাটা কিছু মোরগ।
জেল খেটে যায় সবাই- বিনা দোষে- সারাটি জীবন,
আর আজীবন মুখবাঁধা রিমান্ডে পড়ে থাকে প্রতিবন্ধী কিছু শিশু..
.
আমি তোমাকে ঘৃণা করি স্রষ্টা।
ঘৃণা করি সবথেকে বেশী- যদি তুমি থাকো,
যদি তুমি কষ্ট দিয়ে সুখ পাও,
অথবা দাবী কর আত্মভোলা বিশাল কোন অমানুষ হবার।
তুমি অথর্বই...
জীবন সৃষ্টির কোন অধিকার তোমার নেই।
কখনো ছিলও না...
.
মাঝে মাঝে মায়া লাগে, জানো?
মায়া লাগে অসহায়, বন্দী এই সত্ত্বাগুলোর জন্য,
যখন তারা ক্লান্ত হয় জীবনের জাজ্বল্যমান শৃংখলকে ভুলে থাকার ব্যর্থ প্রয়াসে,
যখন তারা হাল ছেড়ে মাথা নোয়ায় সময়ের নির্বিকার স্রোতের কাছে,
যখন তারা দিন শেষে আঁধারে হাঁটু গেড়ে কাঁদে...
আমি ঘৃণা করি এর আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা ইঞ্চিকে...
ঘৃণা করি হেলমেট-বুট আর কাগজে ছাপা এর ফাঁপা শীর্ষকে,
ঘৃণা করি জীবনের শিকড়ে লেপ্টে থাকা ওই শ্রেষ্ঠত্বের যুদ্ধকে-
যাকে তুমি "প্রকৃতি" বলে পূজো কর...
.
আমি ঘৃণা করি জীবন নামক সংক্রামক অসুখটাকে, ঘৃণা করি বেঁচে থাকা সবকটা অসুস্থ মানুষকে-
যারা না বুঝেই কাটিয়ে দেয় বিশাল একটা অসুখী জীবন...
সে জীবনেও হর্ষ আছে।
হর্ষ আছে নির্বোধ সুন্দর প্রকৃতিতে,
হর্ষ আছে বিছানার নির্বোধ মানুষটিতে..
কিন্তু সুখ নেই...
আর নেশার ঘোর বেশীদিন থাকে না...
.
আমি ঘৃণা করি সমস্ত সৃষ্টিকে।
ঘৃণা করি অযত্নে বেড়ে ওঠা এর প্রতিটি নির্লিপ্ত নিয়মকে।
যে নিয়মে তুমি খুন কর প্রতিদিন- শুধুই বেঁচে থাকার জন্য..
.
আমি সেদিন স্বেচ্ছায় জন্মাইনি,
জন্মাতাম না কোনদিনই- যদি তা আমি পারতাম।
কিন্তু সে ক্ষমতা আমার নেই, নেই আমাদের কারোরই।
আর তাই এই বিশাল জেলখানাটায় প্রতিদিন আসে নতুন কিছু মানুষ - অবুঝ কিছু কান্নায়..
আরো আসে গুলি খাওয়া কিছু হাঁস, জবাই হওয়া গরু আর গলা কাটা কিছু মোরগ।
জেল খেটে যায় সবাই- বিনা দোষে- সারাটি জীবন,
আর আজীবন মুখবাঁধা রিমান্ডে পড়ে থাকে প্রতিবন্ধী কিছু শিশু..
.
আমি তোমাকে ঘৃণা করি স্রষ্টা।
ঘৃণা করি সবথেকে বেশী- যদি তুমি থাকো,
যদি তুমি কষ্ট দিয়ে সুখ পাও,
অথবা দাবী কর আত্মভোলা বিশাল কোন অমানুষ হবার।
তুমি অথর্বই...
জীবন সৃষ্টির কোন অধিকার তোমার নেই।
কখনো ছিলও না...
.
মাঝে মাঝে মায়া লাগে, জানো?
মায়া লাগে অসহায়, বন্দী এই সত্ত্বাগুলোর জন্য,
যখন তারা ক্লান্ত হয় জীবনের জাজ্বল্যমান শৃংখলকে ভুলে থাকার ব্যর্থ প্রয়াসে,
যখন তারা হাল ছেড়ে মাথা নোয়ায় সময়ের নির্বিকার স্রোতের কাছে,
যখন তারা দিন শেষে আঁধারে হাঁটু গেড়ে কাঁদে...
Subscribe to:
Posts (Atom)