Sunday, November 18, 2018

বিবর্তন

টানা বেশ কিছুদিন সময় পেলেই হাইপোথিসিস আর আন্সল্ভড থিওরীর ভিডিও দেখতেসি। ইউটিউব এর বিশাল খনি। এক একটা টপিক নিয়ে ডিগ করতে শুরু করলে থামা যায় না। হাজার হাজার রেফারেন্স আর লাখ লাখ মিনিটের ডকুমেন্টারীতে ডুবতে ডুবতে একসময় বিশাল এক প্রশ্নবোধকের সামনে গিয়ে চিন্তা শেষ হয়।

সিভিলাইজেশান আর নলেজ নিয়ে হাজার হাজার হাইপোথিসিস এর মধ্যে খুব শক্তিশালী একটা ধারা হচ্ছে, আমাদের সভ্যতার ক্রমবিকাশে ভিন গ্রহের উন্নত প্রজাতির অবদান থাকার বিশ্বাস। মিসর, মেসোপটেমিয়া, সুমেরিয়ান সভ্যতা, ব্যাবিলন এই সব বিলুপ্ত সভ্যতার যা কিছু প্রাপ্ত উপাদান, নিদর্শন আছে, সেসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নানা মূণি  নানা মতে হেটে এসে একটা কমন ধারনায় ঠেকে যায়, যে, এইসব সভ্যতায় উন্নত বিজ্ঞান এর সমন্বয় ঘটায়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তারার সন্তান ( ভিন্ন সৌরজগত থেকে আসা উন্নত প্রজাতি) দের অবদান স্পষ্ট। বিশেষ করে জ্যোতির্বিদ্যার বিকাশ হবার মত যথেষ্ট সুযোগ বা প্রয়োজন না থাকার সময়ে আকাশে দেখা তারার অবস্থান, হিসাব, গুরুত্ব মাথায় রেখে নক্ষত্রমন্ডলী চিহ্নিত করার কাজটার আর কোনো ব্যাখ্যা নাই। 
কেইভ পেইন্টিং এর সময়ে মানুষের জীবন কেমন ছিল, এমন একটা প্রাথমিক ধারণা আমরা স্কুলের বইতেই পেয়ে আসছি। গুহাবাসী মানব বললেই আমাদের চোখে ভাসে, স্কুলের পরিবেশ পরিচিতি সমাজ বই এর ইলাস্ট্রেশান। গায়ে বড় বড় লোমওয়ালা, কিছুটা গরিলা সদৃশ চেহারার মানব মূর্তি। যারা মাত্র খড় কুটা থেকে আগুন জ্বালানো শিখেছে।মূলত জীবন যাপন করার চেয়ে, জীবন ধারণ করার প্রতিদিনের পরীক্ষাই তাদের নিত্যভ্যাস। খেতে হবে তাই শিকার করা, মাথা গোজার জন্য গুহা খুজে বের করা, শিকারের সুবিধার জন্য পাথর, হাড়, গাছের ডাল দিয়ে অস্ত্র বানানো, আগুন জ্বালানো, সেই আগুনে খাবার পুড়িয়ে খাওয়া। এই সব প্রাথমিক ধারার বাইরে তাদের কোন প্রযুক্তি বা বিজ্ঞান চর্চা ছিল এমন কথা কেউ কখনো ভাবেনা।গুহাবাসী সেই মানুষরা বহু ঝক্কি ঝামেলা করে বল্লম টল্লম দিয়ে একটা বাইসন বা এল্ক মেরে সেটার আধপোড়া মাংস চাবাতে চাবাতে আকাশের দিকে তাকায়ে হুদাকামে জোতির্বিদ্যা চর্চা শুরু করার কথা না। সেই সময় জ্ঞান বা প্রযুক্তি চর্চাই করা হত যেটা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক প্রয়োগ করা সম্ভব। সেই গুহাবাসী মানবেরা ৩০ -৪০ হাজার বছর টেকসই হবার মত করে রং ব্যবহার করে আঁকা ছবিতে নক্ষত্রমন্ডলির স্পষ্ট উপস্থাপনকে কাকতালীয় মনে হতেই পারে। গ্রেট বিয়ার, দ্যা বুল বা ওরাইয়নের মত নক্ষত্রমন্ডলিকে হাজার বছরের ব্যবধানে নানা সভ্যতায় বার বার উপস্থাপন করার বিষয়টা আসলেই ভাববার মত। ঘোড়া না চিনেই, গোল চাকা ব্যাবহার করে পরিবহন সুবিধা বুঝে উঠার আগেই মিসরীয় সভ্যতায় নিখুত জোতির্বিদ্যা, বিশাল পিরামিড বানায়ে ফেলা বা অদ্ভুত সব ধর্মাচার এর পেছনে কি কারণ হতে পারে ? ব্যাখ্যা নাই কোনো। সব প্রাচীন সভ্যতায় দেখা যায়, মানুষ দৈনন্দিন জীবনের উপযোগীতার বাইরেও হঠাত হঠাত অদ্ভুত কিছু প্রযুক্তি আর জ্ঞান নিয়ে মাথা ঘামায়ে হাজার হাজার বছর ব্যস্ত ছিল। মায়ান সভ্যতায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার বিজ্ঞান নিয়ে অগ্রগতি হবার আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানে হাত পাকায়ে ফেলাটা খুব একটা মনে খটকা লাগার মত জিনিস না ? কেন ? বার বার, হাজার হাজার বছর ব্যবধানে মানুষ আকাশ, জ্যোতিষ্ক, তারা আর ব্যাখ্যাতীত ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগে কেন ব্যস্ত ছিল ? কিসের টানে ? 
যাইহোক, আমরা মানুষরা অন্য নক্ষত্রের উন্নতজীবদের হাত ধরে এই পৃথিবীতে আসছি, নাকি আমরা হাফ বানর টাইপ জীব হয়ে বনে বাদারে ঘোরাঘুরি করার সময় সসার দিয়ে নেমে আসা এলিয়েনরা আমাদেরকে কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর জ্ঞান দিয়ে এক লাফে কয়েক মিলেনিয়াম আগায়ে দিয়ে রেখে চলে গেছে, এসবের কোন মিমাংসা নাই। হাজার হাজার ধরনের হাইপোথিসিস আছে। 
তবে একটা ভাবে চিন্তা করলে আগে কি হয়েছে জানার উপায় যেমন নাই, সামনে কি হবে, সেটা কল্পনা করতে গেলেও কিন্তু সমীকরণটা একটা চক্রে এসেই ঠেকে যাবে। 
মানুষের সভ্যতা গত ৩০ হাজার বছরে যতটুকু গড়ে উঠসে, তার শেষ দুই হাজার বছরের প্রামাণ্য দলিল আছে, সভ্যতা আর আর তার সাথে হাত ধরে আগানো জ্ঞান এর চর্চা, আবিষ্কার আর প্রযুক্তিগত প্রয়োগ এর ক্রমবিকাশ খুব সুন্দর করে চোখের সামনে আছে আমাদের। 
শেষ ২০০ বছরে এই অগ্রগতির এমন গতিশীল হল, জ্ঞান এমন পৌনপুণীক ভাবে বিকশিত হল, প্রযুক্তি আর উতকর্ষ এমন জোরালো হল যে আগের সব কিছুকে এক পলকে লং লস্ট মনে হয়। শেষ দুই শতাব্দীর আবিষ্কার বিগত ৩০ হাজার বছরের মোট আবিষ্কারের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। 
মানুষ আগুনের মত প্রাথমিক শক্তিকে আকড়ে ধরে কত শত বা হাজার বছর টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হয়েছে সেই অংকটা এক কথায় কেউ দিতে পারবে না। 
কিন্তু এখন,  মানুষ শক্তির কতরকম বিকল্প আর কত রকমের উপযোগীতা বের করে প্রতিনিয়ত আগায়ে যাচ্ছে সেটা দেখে কল্পনা করতেও কষ্ট হয়, আদী মানবের টানা ১০ প্রজন্ম হয়ত আগুনের দিকেই তাকায়ে তাকায়ে জিন্দেগী পার করে ফেলসে।
আর আমাদের সময়ে এসে আমাদের আগের ৫ম পুরুষ ঘোড়া, গরুর গাড়ি চড়তো, তার পরের পুরুষ স্টিম ইঞ্জিনের স্টিমারে।তার পরের প্রজন্ম জ্বালানীতেলের পরিবহনে, এখন গুটিগুটি পায়ে ইলেক্ট্রিক এনার্জির উপর নির্ভরতা আগাচ্ছে, নিউক্লিয়ার এনার্জী হাতে আছে, প্রয়োগের উপযোগীতা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলতেসে। 
গত ২০ বছরে প্রযুক্তি যে গতিতে বিবর্তিত হয়ে নতুন নতুন সম্ভাবনা খুলে দিচ্ছে, এখন, খুব কঠিন এটা বলা বা ভাবা, যে আগামী ১০ বছর পর আমাদের একেক্টা দিন কেমন হবে, কিভাবে কাটবে, আমরা কি খাব, কিভাবে খাব, কি করবো, কিভাবে করবো, আমাদের চিন্তা কি হবে? 
মানুষ গত ৩০ হাজার বছরে জ্ঞান এর বিকাশ করে জীবনযাত্রায় আমূল বিবর্তন এনে ফেলসে। যদিও দৈহিকভাবে আমরা দৃশ্যমান বিবর্তনের চিহ্ন খুব বেশি দেখিনা। এই ৩০ হাজার বছরের বিকশিত জ্ঞানের উপর ধারণা রেখেই আমরা এখন বুঝি, এই গ্রহে আমরাই প্রভু। আমাদের জ্ঞান আমাদেরকে বাকি সব প্রজাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিসে। নবজাতক শিশু ১ বছর পার করার পর দাঁত উঠতে শুরু করলে যত্র তত্র কামড়ায়। নিজের হাত পায়ের আঙ্গুল কামড়ায়। এটাকে বলে টিদিং প্রবলেম। সভত্যার বিচারেও মানবজাতি টিদিং প্রবলেমে আছে। তাই প্রযুক্তি আর উতকর্ষের প্রাথমিক প্রয়োগ হচ্ছে নিজের প্রজাতির মধ্যে নিজের শক্তি সামর্থ্য প্রদর্শন। মানবজাতি নানা ভাগে ভাগ হয়ে ভুখন্ডের সীমারেখা টেনে বিভাজিত স্বত্বা একে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্বের হুমকী দিচ্ছে। 
ডায়নোসর কোনো রকম জ্ঞান বা প্রযুক্তির বিকাশ ছাড়াই শুধুমাত্র দৈহিক সামর্থ্যের উপর ভর করে পৃথিবীতে টিকেছিল ১৬৫ মিলিয়ন বছর। মানুষের বয়স টেনে টুনে ৬০ হাজার বছর হবে কিনা তাও সন্দেহ। আর এই ২০১৮ তে দাড়ায়ে কেউ যদি একবার ভাবে ২ লাখ বছর পর মানব সভ্যতা আসলে কেমন হতে পারে, তাহলে কি মনে হয় ? 
অলরেডি, মানুষ যেটুকু জ্ঞান রপ্ত করে ফেলসে, যেভাবে একজন সাধারণ মানুষের নিত্যদিন কাটে, তা যদি ৪০০ বছর আগের একটা মানুষকে বলা হত, তাহলে সে পাগল বলে উড়ায়ে দিত। 
এমনটা ভাবা কি খুব দোষের হবে? যদি বলা হয় জ্ঞান ও প্রযুক্তির এই পৌনপূনিক অগ্রগতি একময় মানব জাতিকে নিজেদের ভেতর গুতাগুতি বাদ দিয়ে সামগ্রিকভাবে আরো বড় শ্রেষ্ঠত্বের দিকে আগ্রহী করবে। 
পদার্থ, রসায়ন, গনিত, প্রকৌশল, চিকিতশা, এইসব বিজ্ঞান ধারায় আগামী ১০ , ২০ বা ৫০ হাজার বছরে কি পরিমান অগ্রগতি হতে পারে কারো কোনো ধারণা আছে ? আজ থেকে ৫০ হাজার বছর পর মিলিয়ন মিলিয়ন লাইট ইয়ার দূরত্বের কোনো গ্রহে মানবজাতি নিজেদের বিস্তৃত করবেনা, এই কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। 
মানুষের হাতে বর্তমান শক্তি যা আছে সেসবের চেয়ে বহুগুণ উন্নত নবায়নযোগ্য শক্তি আসবেনা, বলার উপায় নাই। নভোবিজ্ঞান উন্নত হয়ে শুধু দুরত্ব অতিক্রম করার পরিবহনে আটকে না থেকে সময় আর দুরত্ব সমান ভাবে ট্র্যাভেল করার ক্ষমতা আসবেনা, তাও বলা যায় না। জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নত হয়ে, মানুষ নিজেই নতুন নতুন জীব উতপাদনে হাত দিবে এমন ও হতে পারে। খুব অল্প কথায় বললাম, আমি বিজ্ঞানের লোক না। হাইপোথিসিস দেখতে দেখতে আমারো সামান্য কল্পনাবিলাসী হতে ইচ্ছা হল শুধু
আমার মনে হয় এখন থেকে ৫০ হাজার বছর পর মানুষ মিলিয়ন মিলিয়ন লাইট ইয়ার দুরত্বের কোনো নক্ষত্রের পাশে কোনো গ্রহে গিয়ে যদি দেখে, আদর্শ আবহাওয়ায় সেখানেও মানব সদৃশ কোনো প্রজাতি মাত্র বিকশিত হয়ে নিজেকে টিকায়ে রাখার জন্য প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করছে। মাত্র আগুন টাগুন জ্বালানো শিখছে, তাদের সামনে পকেট থেকে ছোট্ট পারমানবিক পিস্তল দিয়ে গুলি করে একটা পাহাড় উড়ায়ে দিলে, অথবা খুব প্রাথমিক ভাইরাল ডিজিজে আক্রান্ত কাউকে হাইপার এন্টিবায়োটিক দিয়ে সুস্থ করে দিয়ে, প্রাথমিক কিছু জ্ঞান তাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে চলে আসলে, সেই গ্রহের সেই প্রজাতিও গরুর হাড্ডী চাবাইতে চাবাইতে পাথরে খোদাই করে মিল্কি ওয়ে গ্যালেক্সীর সান এর পাশের ৩ নাম্বার গ্রহ থেকে যাওয়া উন্নত প্রজাতিকে নিজের স্রষ্ঠা বা প্রভু ভেবে উপাসনা করার চিন্তা করতেই পারে। অভাবনীয় জ্ঞানের বিকাশ সমৃদ্ধ একটা প্রজাতি, আপাত অনুন্নতদের চোখে প্রভুত্ব অর্জন করে নেয় সেটা তো আমরা জানিই। 
আমরা পোষা কুকুর, বিড়াল এর প্রভু হই। 
কুকুর বা বিড়াল মানুষ পুষতে পারে না। এই নিয়ম কেউ করে দেয় নাই। বিজ্ঞান আর চিন্তাই এই সীমা নির্ধারণ করে দিসে। যদি কোনো বিড়াল কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বড় কোন পরিবর্তন করার ক্ষমতা পেতো, তাহলে সে কুকুর পুষতে পারতো, এমনকি মানুষও পুষতে পারতো হয়তো।
যদি বর্তমান জ্ঞান এর উপর আস্থা রেখে বলা যায় ১০ ২০ হাজার বছর পর আমরা আসলে বর্তমান অবস্থার চেয়ে অকল্পনীয় মাত্রায় উন্নত বিজ্ঞানআশ্রয়ী একটা প্রজাতী হব। তাহলে মানব জাতীর চেয়ে মাত্র ১ লাখ বছর আগে জ্ঞান বিকশিত হওয়া একটা প্রজাতিকে ১০ হাজার বছর আগে দেখতে পেলে তাকে স্রষ্ঠা বা প্রভু ভেবে ফেলায় তো কোন হিসাবের ভুল নাই। 
১ হাজার বছর আগেও মানব জাতি ভাবতো পৃথিবী হচ্ছে সমান। গোল ভাবার মত জ্ঞান তখন ছিলনা। 
৫০০ বছর আগে মানুষ ভাবতো পৃথিবী স্থির, সূর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে। গ্যালিলিও সে ধারনায় পানি ঢেলে দেয়। 
বর্তমান মানুষ জানে আমাদের জগত ত্রিমাত্রিক। সময়কে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা মানুষের নাই। 
১০০০ বছর পর মানুষ কি ভাববে আমরা জানি ? 
হয়ত চতুর্মাত্রিক বিজ্ঞানের জগতে থাকা কেউ আজকের আমাদের কথা হয়ত ভাববে এভাবে, ২০০০ সালে মানুষ কি বোকা ছিল !!! ফসিল ফুয়েলের ইঞ্জিন ইউজ করে মাটিতে সারি বেধে চলতো, আর পথ না পেলে পোঁ পোঁ করে হর্ন বাজাতো। হা হা হা 
আকাশ থেকে নেমে আসা প্রভুর কথা নানা সভ্যতায় নানা ভাবে বলা আছে। ধর্মেও প্রভুর অবস্থান আকাশে। প্রভুর সান্নিধ্যে স্বর্গ। তার অবস্থান ও নক্ষত্রের মত আকাশে। নিজের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাবান কাউকে প্রভু ভেবে এই এত হাজার বছর পার করা মানব জাতি হয়ত কোনো এক সময়ে অন্য কোন এক প্রজাতির চোখে প্রভুত্ব অর্জন করে নিবে।

No comments:

Post a Comment