Saturday, November 24, 2018

সত্যায়ন মিথ্যায়ন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য সরকারী চাকুরীর জন্য ছবি এবং ডকুমেন্টে ‘সত্যায়ন’ এর যে বাধ্যবাধকতা তা প্রকৃতপক্ষে একটি অপ্রয়োজনীয় এবং হয়রানিমূলক কার্য।
ছবি ও কাগজপত্রের অধিকাংশ সত্যায়ন আদতে মিথ্যায়নের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়। বাংলাদেশের অন্য প্রান্ত থেকে যে ছেলেটি বা মেয়েটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এলো সে এখানে এই মুহূর্তে সত্যায়নকারী বিসিএস ক্যাডার কোথায় খুঁজে পাবে? পেলেই বা কী? সেই বিসিএস ক্যাডারের কী এমন ঠেকা পড়েছে এই অচেনা- অজানা ভর্তিচ্ছুকে সত্যবাদী ঘোষনা দেওয়ার? দুরু দুরু বুকে প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে পা রাখা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীটি কি পরীক্ষার শেষ প্রস্তুতি নেবে নাকি বিসিএস ক্যাডারের পেছনে রুদ্ধশ্বাস দৌড়াবে? মূল্যবান সময় ও শ্রমের কী নিদারুণ অপচয়!
সরকার আর প্রতিষ্ঠান নানান ভাবে সত্যায়নের নামে মিথ্যায়ন করতে ছাত্রছাত্রীদের বাধ্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাও?- সনদপত্র-ছবি সত্যায়িত চাই, ভর্তি হয়ে ফাইনাল পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে চাও?- বিভাগীয় শিক্ষক কর্তৃক সত্যায়িত চাই, চাকরি পেতে চাও?- প্রথম শ্রেনীর সরকারী কর্মকর্তা কর্তৃক ‘চরিত্র’ প্রত্যায়িত চাই, যোগ্যতার সনদপত্র সত্যায়িত চাই !
সত্যায়নকারী, প্রত্যায়নকারী প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার হলেই হল- সে নিজে চরিত্রবান কিনা, সত্য বলছে কিনা তাঁর কোন দায় নেই- অফিসার সাহেব সাইন আর সিল সাপ্পর মেরে দিলেই কারো চরিত্র হয়ে যাবে ফুলের মতো পবিত্র! তদুপরি এই গেজেটেড ‘প্রথম শ্রেণী’র দেখা মেলা বড় ভার- সত্যায়ন করাতে গেলে বেশিরভাগ বিরক্ত হন-‘সিল নাই’ বলে পত্রপাঠ বিদায় আর সত্যিকার সত্যায়ন প্রার্থীর বিড়ম্বনা, দৌড়াদৌড়ি, নাভিশ্বাস।
Necessity Knows No Law. সহজ-সরল একটা সমাধান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও চাকুরি প্রার্থীরা এর মধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছেন। ৪০-৫০ টাকা দিয়ে একজন প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড অফিসার বা সরকারি কলেজের শিক্ষক বা মেডিকেল অফিসারের নামে সিল বানিয়ে নিলেই খেল খতম, তারপর ধর তক্তা, মার পেরেক অর্থাৎ আবেদনকারী নিজেই নিজের কাগজপত্র সত্যায়ন করছে ! ‘মিথ্যা সত্যায়ন’ তাই বাস্তবতা।
আইনের দৃষ্টিতে নি:সন্দেহে এটি ‘জোচ্চুরি’ এবং প্রতারণা। সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরোনো শিক্ষার্থীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা শুরু করতে বাধ্য করা হচ্ছে মিথ্যা আর প্রতারণা দিয়ে! এই সত্যায়নের আসলে আইনি ভিত্তি কী? নানান আইন আর বই পত্র ঘেঁটেও আমি এর কোন আইনি উৎস বা ভিত্তি খুঁজে পেলাম না।
আমার মতে- এটি স্রেফ একটি উপনিবেশিক প্রথা, শাসকশ্রেণীকে সুপিরিয়রিটি আর শাসিত কে ইনফিরিয়রিটির মেসেজ দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়, এটি বৈষম্যমূলক, বর্ণবাদী, নাগরিক মর্যাদার প্রতি অবমাননামূলক, দুর্নীতি আর অনৈতিকতার আঁতুড়ঘর।

No comments:

Post a Comment