পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের নাম হইলো কনডম। হাইসেন না। কনডম না
থাকিলে পৃথিবীর অলিগলি সব জায়গা ফার্মগেইট অথবা নিউমার্কেট মোড় হইয়া
যাইতো। ওরস্যালাইন আপনার ডায়রিয়ার স্রোত নিরাময় করে,পিল নিয়ন্ত্রন করে
প্রোডাসন। কিন্তু ওরস্যালাইন এর সাথে কোনভাবে কনডমের তুলনা চলে না।
কারন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন করার জন্য কনডমের মত সরাসরি অংশগ্রহনকারী কোন
পণ্য নাই।
বলা হয়ে থাকে “সব পুরুষই কখনও না কখনও কনডম কিনেছেন”। কনডম কিনেন নাই
এমন পুরুষ সম্পর্কে এক মহান কনডম বিজ্ঞানী বলেছেন “যে কখনও কনডম কিনেনি সে
হয় হাজার বাচ্চার বাপ, না হয় তার ইয়ে নাই”। ব্যাপারটা অস্বীকার করার
কিছুই নেই। আলেয়া নামক এক দস্যি নারীর স্বোয়ামির নাম ছিলো আলম।
আলমের আবার বিরাট চক্ষুলজ্জা ছিলো। চক্ষুলজ্জা থাকলেও গোপন চাহিদা লজ্জা
ছিলো না। টানা তিন বছর তিনবার তার বৌকে পোয়তি করেছে। এর মধ্যে একবারতো
জমজ বাচ্চা আসলো। আলেয়ার ঘর আলম এমনভাবে আলোকিত করা শুরু করলো যে আলেয়া
আলোকে আলেয়া দেখতেছিলো।
পরিস্থিতি যখন এমন তখন আলম-আলেয়ার সংসার
হাহাকার করে উঠলো। আলেয়ারও “আর পারিনা দশা”। কিন্তু উপায় নেই আলম
হোসেন। সে যে কনডম কিনতে লজ্জা পায়। “থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নম্বর”
সিনেমার তপুর মত কতবার কনডম কিনতে গিয়ে ওরস্যালাইন,সিভিট,মাথা ব্যাথার বরি
কিনে ঘরে আসছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
এতে অবশ্য আলমের তেমন কোন
মাথা ব্যাথাও ছিলো না। কারন কনডম কিনতে গিয়ে সে অনেকবার মাথা ব্যাথার
ট্যাবলেট নিয়ে আসছিলো। তাই নিজ গরজে ফার্মেসির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো
আলেয়া। রওনা দিলেইতো হবে না। এই জিনিস কেনার জন্য চাই অভিজ্ঞতা।
হাজার
হাজার অলিগলি পেরিয়েও আলেয়া কোন ফার্মেসিতে কোন মহিলা দোকানদার পেলো না।
অতএব খালি হাতেই বাসায় ফিরে আসলো। ঘরে মহা উৎসাহে, মহা আগ্রহে আলম বসে
ছিলো। সে ঘরে বসে থ্রী ইডিয়ট হিন্দী সিনেমাটি দেখছিলো। সেখানে আমির খানের
“আজ কুছ নয়া শিখতা হ্যায়” ডায়ালটা খুব পছন্দ হলো।
সত্যিই আজ
কিছু নতুন শিখবে সে। আলেয়া ঘরে ঢোকার সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো
“আনছো আনছো?
আলেয়া এমন কাপুরুষ জীবনেও দেখে নাই। ঘরে বইসা ডিমপাড়া এর চাইতে ভালো।
আল্লাহ তারে না দিছে কনডম কেনার ক্ষমতা না দিছে ডিম কেনার ক্ষমতা। খালি
পারে বছর বছর বাপ হইতে।
-জীবনে কোনদিন আমারে আর ছুইবানা। যতদিন কনডম আনতে পারবা না ততদিন আমি
তোমার কাছে হারাম।
নতুন কিছু শেখার কপালে এমন বাঁশ পড়বে আলম ভাবেনি। প্যান্টের ভিতর
জাঙ্গিয়া পরে আলম ফার্মেসির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যা থাকে কপালে, আজ না
কিনে ফিরবে না সে।
প্রথম দোকানে গিয়ে দেখলো দোকানে দাড়িওয়ালা এক
লোক বসে আছে। একজন মুরব্বি থেকে কনডম কেনার মত বেয়াদবি করতে না পেরে
পরের দোকানে গিয়ে দেখলো ফার্মেসী ঔষুধ কিনতে আসছে এক তরুনী। ছি ছি কি
লজ্জার। তরুনী বুঝে ফেলবে আলম কনডম কিনবে, সে লজ্জায় দ্বিতীয় দোকানও বাদ
দিলো।
রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ততক্ষনে জুতোর তলা প্রায় ক্ষয়ে গেছে।
হঠাৎ চোখের সামনে একটা ফার্মেসি পড়লো। ইয়ং একটা ছেলে বসে আছে। আর কেউ নাই। এইতো মোক্ষম সুযোগ।
-ভাই একটা কনডম দ্যানতো
-একটা হয় না,এক প্যাকেট
আলম ভাবলো এক প্যাকেট দিয়ে সে কি করবে? এত ক্ষমতাতো তার নাই।
তবুও উপায় নেই
-আচ্ছা দেন একপ্যাকেট
-ভাই কোনটা দিবো?
-আরে ভাই দেরী হইয়া যাইতাছে। রাজা-প্রজা একটা দেন।
-ভাই এখনতো রাজা চলে না।
-ওহো রাজা-বাদশাহর শাসনতো খালি সৌদি আরবে। ঠিক আছে আমারে একটা প্রধানমন্ত্রী দেন।
আমগো এইখানেতো গণতন্ত্র।
অতঃপর আলম হোসেন আধুনিক কনডম কিনে তার ঘরের আলোর বানে বাঁধ দিলেন। এই
গল্প বলার কোন অর্থ নাই। আসুন এইবার রাজার ব্যাপারে আলোচনা করি। ছোট
বেলায় রাজা ছিলো আমাদের খেলার সঙ্গী।
দোকানে গিয়ে এক টাকা দিয়ে
দুইটা রাজা কিনে মুখ দিয়া ফুলাইতাম (আপচুচ কি দেয়ার কথা কি দিতাম)। এখন
না বুঝি কত রাজা নষ্ট করেছিলাম সিংহাসন না দিয়েই! যে আমি দোকানে গিয়া
বিনা দ্বিধায় খুশী মনে রাজা কিনতাম আজ সেই আমি ফার্মেসীতে তিনবার চক্কর
দিয়েই লজ্জায় লাল হয়ে সেনসেশন কিনি। এটাইতো দিন বদলের গান। আগে রাজা
ফুলিয়ে আকাশে ভাসাতাম। এখন না ফুলিয়েই নিজে ভাসি।
এবার আসি আরেক
গল্পে।
তখন কলেজে পড়ি। এক বন্ধু তার প্রেমিকারে পোয়াতি বানায়া দিছে। কাহিনী
টের পাইছি যখন বিপদ বন্ধুর মাথার উপরে তখন। মাইয়ারেতো এভয়েশন করা লাগবে।
ঔষুধের খরচসহ বিরাট একটা এমাউন্ট। এত টাকা কই পাই। টাকার জন্য একান ও কান
করতে করতে পুরা কলেজের সবকানে হেডফোনের মাধ্যমে পৌছে গেল। পুরা কলেজে রব
উঠলো “ওমুক এই কামের জন্য চান্দা তুলতাছে”। ঘটনার জল ঘোলা হইতে হইতে
বুড়িগঙ্গা হয়ে গেল।
আমি বললাম “বুঝ ঠ্যালা জল দেয়ার সময়
মাথায় রাখতে হয়ে”। যাই হোক শেষ পর্যন্ত কয়েকহাজার টাকা খরচ করে রক্ষা
পেল বন্ধু। কলেজ বাজারে নতুন খবর খুব জনপ্রিয় হইলো “ওমুক ২ টাকা বাচাইতে
গিয়া ৪ হাজার টাকা গচ্চা দিছে”। কাহিনী কিছুটা বানানো হইলেও একেবারে
মিথ্যা না। আহারে ছোটবেলার রাজা নিয়ে খেলার কথা মনে পড়ে গেল।
বন্ধুরে ঝাড়লাম। বললাম “শালা যদি ছোটবেলায় দুএকটা রাজা জমিয়ে রাখতি তবে
এই ঘটনা ঘটতো না”। বন্ধু চিৎকার করে বললো “আমাকে একটা রাজা দাও,একটা রাণী
দাও। আমি তাহলে কোন রাজকুমার বা রাজকুমারী না দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে
ভুমিকা রাখব”।
রাজার গুরুত্ব তখনও বুঝি নাই।
এখন বুঝি। নাম রাজা হোক,রাণী
হোক,হিরো হোক নামে কি আসে যায়। প্লিজ রাজা হিরো যেইটাই ব্যবহার করেন না
কেন “দ্যাশটারে ফার্মগেইট বানানো থেকে বিরত থাকেন”
।
Friday, September 10, 2021
পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস
Sunday, September 5, 2021
বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিষিদ্ধ বই
খুব সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ বই হচ্ছে, নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ”!
সেটি প্রকাশিত এবং মঞ্চস্থ হবার সাথে সাথে দেশময় তুমুল আলোচনার বন্যা আসে।
যার ফলে এক ধরনের ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ঝাঁঝ পাওয়া যায় দেশময়,যা ইংরেজরাও টের না পেয়ে পারেনি। কিন্তু ইংরেজদের পক্ষে এই কিষাণদের কথ্য ভাষায় রচিত নাটকের যথাযথ রসাহরন করা সম্ভব ছিলো না,তাই ইংরেজরা গিয়ে ধরলো পাদ্রী জেমস লঙকে। কিন্তু পাদ্রী লঙ সাহেব নিজেও এর অনুবাদের কাজে খুব একটা এগুতে পারলেন না; কেননা কিষাণদের চলতি গ্রাম্য কথ্য ভাষায় লেখা এই নাটকের লক্ষ্যই ছিলো গ্রামের মানুষের বুকে বসে যাওয়া! যা কোন ইউরোপিয়ানের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে তুলে এনে অনুবাদ করা কষ্টসাধ্য খুবই।
পাদ্রী লঙ অনুরোধের ঢেঁকী গিলে শরণাপন্ন হলেন এমন এক বাঙ্গালীর যার কিনা বাংলা বা ইংরেজী উভয়ই ভাষাতেই অত্যন্ত দক্ষতা আছে। সে সময়ে এই রকম যোগ্যতার লোক বলার মতো একজনই ছিলেন,তার কথা অনুমান করতে থাকুন-কে হতে পারে; ততক্ষনে বাকিটুকু শেষ করি।
ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হলো নাটকের ১৮৬১ সালে; অনুবাদের বইয়ে কোন নাম নেই অনুবাদকের! পাদ্রী লঙ সাহেব নাটকের শুরুতে ভুমিকা লিখে জানালেনঃ কোন এক সুহৃদ “নেটিভ” এর বদান্যতায় এই অনুবাদ করা হয়েছে।
ইংরেজ সরকার এবার যথাযথ স্বাদ পেলো এই নাটকের,তাদের টনক নড়লো! কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে,কেননা ইংরেজী অনুবাদ হাতে রেখে ইউরোপের হরেক ভাষায় এর অনুবাদ হতে লাগলো,জনপ্রিয় হতে লাগলো আরো এই নাটক।
“নীল দর্পণ” নাটকের ভিলেনদের (নীলকরদের) এবার শরীর জ্বলে গেলো,তারা মামলাই করে বসলো,অনুবাদকের নাম পেয়ে আদালত ডেকে পাঠালেন পাদ্রী লঙ সাহেবকেই। কিন্তু তিনি আদালতে বা কোনভাবেই আসল অনুবাদকের নাম প্রকাশে রাজী হলেন না। ফলে বিচারে খোদ পাদ্রী লঙ সাহেবেরই এক হাজার টাকা জরিমানা এবং সাথে এক মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় "নীল দর্পণ",কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই নিষেধাজ্ঞা টিকে নি!
তিনি একমাসের কারাদন্ড থেকে রেহাই পাননি ঠিকই,কিন্তু তার অর্থদন্ড আদায়ের সময় দেখা গেলো একজন “নেটিভ” তার নিজের থেকেই এক হাজার টাকা অযাচিতভাবেই দিয়ে গেছেন।
এই ব্যক্তিটি হচ্ছে কালীপ্রসন্ন সিংহ।
আর শুরুতে যার কথা হচ্ছিল,যিনি দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” প্রথম ইংরেজী অনুবাদ করেন তিনি আর কেউ নন,তিনি একসময়ের ““ওয়ানা বি” ইংরেজী সাহিত্যিক” মাইকেল মধুসূদন দত্ত!
তথ্যসূত্রঃ
- নীল দর্পন, দীনবন্ধু মিত্র
- https://bn.wikipedia.org
Tuesday, August 31, 2021
মাথার পিছন দিয়া ভাত খাইতে গেলে ইঁদুরের লাভ হয়, কিন্তু মালিকের আর ভাত থাকেনা।
"ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, যাবৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ।" অর্থাৎ ঋণ করে হলেও ঘি খাও, যতদিন বাঁচো সুখে বাঁচো।
মালিশ করতে তেল ভালো হইলেও খাওয়ার জন্য ঘি সেরা। আর এই কারণেই হয়ত প্রাচীন প্রবাদের জন্ম হইছিলো 'ঋণ করে হলেও ঘি খাও'। এইটা শুধু উপমহাদেশে নয় বর্তমানে ঘিয়ের কদর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। হয়ত প্রবাদ পরিবর্তিত হয়ে 'দরকার হলে ক্রেডিট কার্ড দিয়েও ঘি কিনো হইবে! সন্তুষ্টিই আসল কথা। সাধারন মানুষের কাম্য হইলো সুখভোগ, জীবনের চরম লক্ষ্য সুখভোগ। হাল জামানায় ব্যাংকগুলা বেশ ভালোভাবেই এ তত্ত্ব জনসাধারণকে গেলাইতে সক্ষম হইছে। টাকা নেই তো কী হইছে? ব্যাংকের কাছে আসুন। লোন নেন, সুদের টাকায় আমাকে ঋদ্ধ করুন। আর ফাঁকে আপনি জীবনকে উপভোগ করুন। লোন নেন গাড়ি কিনুন, লোন নেন বাড়ি কিনুন, লোন নেন অমুক কিনুন তমুক কিনুন। যার ফলে লোন সবকিছুতে লোন নেয়া পান্তাভাত। বিয়া করতে লোন, বাচ্চা পয়দা করতে লোন, বাচ্চা মানুষ করতে লোন, বাচ্চার বিয়া দিতে লোন। লিভ টুগেদার করতে লোন, ডিভোর্স করতে লোন। পুরা দেশবাসী টিকে আছে লোনের উপরে। কিন্তু লোনের উপরে তো টিকে থাকন যায়না। শান্তির ঘুম হয় না।
লোনের নিশ্চয়তা না হইলে তো মানুষের তিনটি বেসিক কাজ করেনা। খাওন যায় না, শোওন যায় না, নিজেরে রক্ষা করণ যায় না। আর এই তিনটা বেসিক কাজ না করতে পারলে মানুষ বাইচ্চা থাকতে পারে না, চিন্তাও করতে পারে না। পেটে ভাত না থাকলে, চিন্তা করার কোন টাইম নাইক্কা, মাগার চিন্তা না করলে পরের দিনের ভাতের ব্যবস্থা অনিশ্চিত হয়া যায়। আবার পেটে ভাত না থাকলে শোওন আসে না।
ঠিকমত শোওন না হইলে নিজেরে রক্ষা করার বুদ্ধি খুলে না। আবার যে নিজেরে রক্ষা করতে পারে না তার তো কোন বেইল ই নাই। সে নিজের ক্ষমতা কেমনে বাড়াইবো। আর যার এই তিনটা হয়া গেসে সে চিন্তা করবো তার জিনিসগুলা যাতে “চিরকাল এমন থাকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ”। এর লাইগা সে অন্য ঘরের সম্পদ চুরি করবো, দখল নিব, ভেজাল লাগাইবো এবং ফাইনালি অসৎ উপার্জনের পথ বেচে নিব সোজা হিসাব।
অতঃপর প্রথমে মোটা ভাত খাইয়া বামাল হইবো তারপর নিজের জমি, পানির দখল নিতে পারবো। কিন্তু ১০ কেজি গ্যাস যদি বড়বাবু ভাগেভোগে লুটেপুটে ল্যায় তো ঘরের ইঁদুরটা না হয় একটু মোটাই হইবো। চামে চিকনে সাদা ইঁদুরের লগে ইস্টু কুলু কুলু করপে ভদ্র হয়ে থাকপে। কিন্তু মালিকের কাজ তো ইঁদুর পোষা নয়। মালিকের কাজ ঘরের খুঁটি শক্ত করা।
দেশের ভাত চাল নিরাপদ রাখা। তাহলে মালিককে ক্ষমতায় টিকে থাকতে আর বড় বাবুর ঘরে যেতে হবে না। ইঁদুরের কথা শুনলে ভাত মাথার পিছন দিয়ে ঘুরিয়ে খেতে হবে। ইঁদুর এটা বলে কারণ, মাথার পিছন দিয়ে ভাত খেতে গেলে মালিক অনেক ভাত ছিটায়, তার খাইতে সুবিধা হয়।
ইস্টু কুলু কুলু। এগুলা খেয়ে ইঁদুর আরো বড় হবে ধাড়ী হবে সারাদিন ইস্টু কুলু কুলু করবে আরো ইঁদুর পয়দা করবে, তাদের আরো ক্ষূধা লাগবে তারা আরো খাবে। কিন্তু ইস্টুকুলুকুলু করতে যেয়ে তারা প্লেগ আনবে আর প্লেগে ঘরের সব লোক মারা যাবে। তখন তো মালিকের কোন বেইল থাকবে না।
ফলে ভাত সোজা ভাবে খেতে হবে, ঘরের মধ্যেই খেতে হবে। আর ঘরের মধ্যে বুদ্ধি আর পেশী দুইটাই বাড়াতে হবে নাহলে ঘরের বেড়ার ফুটো অনেক বেড়ে যাবে, পানি ঢুকবে, শরীরে পচন ধরবে। ইজ্জতও থাকবে না, ইজ্জত করার জন্য দেহটাও থাকবে না। ফলে আসেন সবাই টোকাই হই আর ভাত সোজাভাবে খাওয়ার পেট্টিস করি।
যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে
শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।
ঘটনা তেমন জটিল কিছু না। মানে এই দেশে বসবাস কইরা বাইচ্চা থাকতে হইলে যে
পরিমাণ মগজের ব্যবহারের দরকার হয়, সেই বুদ্ধি দিয়া বিশ্বের অনেক দেশে
কোটপতি হওন যায়।
Thursday, August 12, 2021
জ্যোতিষবিদ্যা ও অপবিজ্ঞান
আমি ছোটবেলায় সন্ধ্যা অবধি বাইরে খেলা, বৃষ্টিতে ভেজা, খাবারে অনিয়ম এসব কারনে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তাম। আমার মা এতে খুবই চিন্তিত থাকতেন এবং ডাক্তার দেখানোর পরও যখন আমি অনিয়ম করতাম তাই ডাক্তারি পথ্য কোন কাজই করতো না। আমাদের বাসায় নিয়মিত এক সন্ন্যাসী গোছের লোক ভিক্ষে নিতে আসতো। একদিন সে মাকে বোঝালো আমার রাশিতে নাকি রাহুর দশা আছে, আর তা থেকে পরিত্রান পেতে গ্রহপূজা করতে হবে। লোকটা মায়ের কাছ থেকে গ্রহপূজার নাম করে অনেক টাকাপয়সা নিয়েছিলো অথচ যার জন্য রাহু-কেতু-গ্রহ গতিপথ বদলে ফেলছে সেই আমিই কিছু জানতাম না। রাহু কেতুর গতিপথ পরিবর্তন হলো কি না জানিনা কিন্তু অনেকদিন পরও আমার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় মা বিষয়টি বাসার সবাইকে বলেন। বছরখানেক পর সেই লোককে আমি রাস্তায় পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি এবং হাস্তরেখা দেখিয়ে বলি রাহুর দশা কি কেটেছে, লোকটি হ্যা বললে তার গালে জোরে থাপ্পড় মারি এবং বলি আমার রাহুর দশা কেটে গেলেও তোমার শনির দশা কাটেনি। যে জ্যোতিষি নিজের ক্ষেত্রে শনির দশা রদ করতে পারলেন না তিনি অন্যদের সাফল্য কি করে আনবেন ?
আমার গল্প বলার কারণ এইসব ভাগ্যের কারবারীদের হাতে কত মানুষ সর্বসান্ত হচ্ছে ভাবা যায় না । ছেলেদের মধ্যে তাবিজ-কবজ-মাদুলি কানে দুল, হাতে অষ্টধাতু-রত্ন বালা পরার ধুম বেড়েছে। টিভি খুললেই ধনলক্ষী যন্ত্র হনুমান চল্লিশা , পাওয়ার ব্রেসলেটসহ অনেক যন্ত্রের বিজ্ঞাপনে দুর্বল মানুষ সব হারাচ্ছে । কাগজে এদের বিজ্ঞাপন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ধনতন্ত্রের জাতাকলে মানুষের সমস্যা বাড়ছে আর মানুষ দুর্বল থেকে দুর্বল হচ্ছে , পরিবেশ দূষণের জন্য রোগ ব্যাধি বাড়ছে , অসহায় মানুষ এদের কাছে যাচ্ছে আর সর্বসান্ত হচ্ছে। মানুষ ধীরে ধীরে কুসংস্কারের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়ছে । মানুষও বর্তমানের থেকে বেশি করে ভবিষ্যতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছে ।
এসবের প্রতিবাদ করলেই গোবিন্দ পানেসর ও নরেন্দ্র দাভেলকরদের মত যুক্তিবাদী মানুষদের নাগপুর ও মুম্বাইয়ের প্রকাশ্য স্থানে মরতে হয় হিন্দু মৌলবাদীদের গুলিতে বা মুসলিম –খ্রীস্টান মৌলবাদীদের হাতে। ঢাকার রাজপথে অভিজিত রায়কে মুসলিম মৌলবাদীদের গুলিতে মরতে হয় । এতে বোঝা যায় সামন্ত ও ধনতন্ত্রের প্রভুরা বিরোধীতা পছন্দ করেনা । যাদের বাঁচিয়ে রাখে এইসব অপবিজ্ঞান কুসংস্কার ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিরা । সব ধর্মের মৌলবাদীরা একই রকম হিংস্র জন্তুর মত , বিরোধিতা করলেই নখ দাত নিয়ে ছিড়ে ফেলতে চায় ।
আমাদের দেশে বেদ ও উপনিষদের কর্ম ও জ্ঞানের দার্শনিক বলিষ্ঠতা হারিয়ে যেদিন থেকে গণমানসে নিয়তিবাদ চেপে বসল , সেদিন থেকে এই জ্যোতিষবিদ্যা প্রসার লাভ করল । নিয়তি বা অদৃষ্টবাদের দার্শনিক অভিজ্ঞান ভারতীয় বিদ্যায় নতুন ধারার সঞ্চার করেছিল, যা পরিপূর্ণ রূপ পেল গীতায় ।যেখনে মানুষের সমগ্র জীবনই যেন পূর্বনির্ধারিত নিয়তির নির্দেশে পরিচালিত হয়। সমগ্র ধর্মগ্রন্থে পুরানে শুধু ব্রাহ্মণ , দেবদেবী আর রাজা্র পূজা, শূদ্রদের জন্য শুধু ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের সেবা অর্থাৎ উচ্চবর্ণের মানুষের জন্য শ্রমদান । আর সব কিছুই যেন নিয়তি নির্দিষ্ট । মানুষের প্রচেষ্টা বা পরিশ্রমজাত ফলাফল ছিল মানুষের নিয়ন্ত্রণহীণ ও পূর্বনির্ধারিত। মানুষের ব্যাক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের প্রচেষ্টা, উদ্যম বা অনুসন্ধিৎসার কোন ভূমিকা ছিলনা । ফলে উদ্যমহীনতা ও অণ্বেষণহীনতায় সংক্রামিত ভারতীয়দের জীবনে শুধু হতাশা আর পরমাত্মায় বিলীনের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আর কিছু ছিলনা । সেটা বোঝা যায় সুদূর উত্তর গোলার্ধ থেকে এসে ক্যাপ্টেন কুক দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করল এবং দখল করে নিল , আর ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দারা দেশের বাইরে বেরিয়ে কি আছে দেখল না কারণ কালাপানি পেরনো নিষেধ আছে ধর্মগ্রন্থে । এই উপমহাদেশের উর্বর জমি ও একটি কারণ এই নিস্পৃহতার । একসময় সমগ্র ইউরোপকেও একসময় গ্রীকদেশীয় অদৃষ্টবাদ গ্রাস করেছিল । যীশুখ্রীস্ট এই অদৃষ্টবাদের মূলে আঘাত করে ইউরোপের মানুষের জীবনবোধে প্রথম পরিবর্তন নিয়ে আসে। ভারতীই উপমাহাদেশে বুদ্ধের পরবর্তীকালে সেইরকম কোন মহামানব না আসার ফলে একদিকে দুঃখ, দুর্দশা বিপরীতে শ্রমহীন পরজীবীদের বিলাসী জীবন সবই ছিল নিয়তি নির্দিষ্ট। সামগ্রিকভাবে এই নিয়তিবাদী দর্শণ বিজ্ঞানের ভবিষ্যত পরিপন্থী। এক অদ্ভুত বিষন্নতা নিস্পৃহ নির্লিপ্ত অলস জীবনবোধে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ। ব্রিটিশদের হাত ধরে পাশ্চাত্য শিক্ষা না এলে বিশ্বকে জানার যতসামান্য উৎসাহই সৃষ্টি হতোনা । ভারতীয় রাজশক্তি এই অপবিজ্ঞানকে লালন পালন করেছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে। যদিও সেকালেই গণৎকারকে রাজার কেটে ফেলার গল্প তৈরি হয়েছিল। এক রাজার রাজসভার জ্যোতিষী একদিন সবার হাত দেখছে এবং তাদের আয়ু বলে দিচ্ছে , এভাবে রাজার হাত দেখে রাজাকে বললেন , মহারাজ আপনার আয়ু আর বেশী দিন নেই। রাজা খুব চিন্তায় পড়ে গেল , ঠিক সেই সময় সেনাপতি এসে রাজার এমন চিন্তার কারণ জানতে চাইলো , রাজা তাকে জ্যোতিষীর কথা বললেন । তৎক্ষণাৎ সেনাপতি জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করলেন , গণৎকার আপনার আয়ু কতোদিন? গণৎকার বললেন আমার আয়ু এখনো অনেকদিন। সেনাপতি খাপ থেকে তলোয়ার বার কর সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতিষীর মাথা কেটে দিল। এবং রাজাকে বললেন মহারাজ এইসব জ্যোতিষ বিদ্যা সব বুজরুকিতে ভরা , এগুলিতে বিশ্বাস করলেই ঠকবেন ।
আদিম মানুষকে সব থেকে বেশী প্রভাবিত করেছিল আকাশ। একদিকে তার অসীম দান, অপর দিকে বজ্রপাত ঝড়ঝঞ্ঝা তুষারপাত বন্যা খরা সাইক্লোন সবই আকাশ থেকে সৃষ্টি। সুতারাং মানুষের কল্পনায় জিবনে বিপর্যয় বা সৌভাগ্যর রহস্যটা লুকিয়ে আছে দীপ্তিমান সূর্য আর নক্ষত্রখচিত বিশাল আকাশের অপার রহস্যে। প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন প্রয়াসের শ্রেষ্টতম স্রোতের সাথে ভাগ্য গণনার বিপরীতমুখী উদ্যমহীন নিয়তিবাদী ধারাটিও মিলে মিশে একাকার হয়েছিল অনুসন্ধানের সেই অনগ্রসর স্তরে ।প্রাচীন মানুষের কাছে টেলিস্কোপ বা ঐ ধরণের কোন যন্ত্র ছিল না। ফলে জ্যোতিষবিদ্যা কয়েক হাজার বছর ধরে শ্রেষ্ঠ মেধা, অসাধারণ মননশীল চিন্তানায়ক মনীষীদের অনুসন্ধানের এবং সস্নেহ প্রশ্রয়ে মানুষের বিশ্বাসের গভীরে শিকড় ছড়াতে পেরেছিল । চার্বাক ঋষিরা , টলেমি , গ্যলিলিও , কোপার্নিকাস , কেপলার জিওনার্দো ব্রুনো এরা এই বিশ্বাসের গোড়ায় আঘত হানে ।যদিও ধর্মভীরু টলেমি পরে মত পালটে ফেলেছিলেন। ভারতে চার্বাক গোষ্ঠী প্রথম এই অদৃষ্টবাদের গোড়ায় আঘাত হানে। গ্যলিলিওকে কারাগারে , জিওনার্দো ব্রুনোকে জ্যন্ত পুড়িয়ে আর চার্বাকদের হত্যা করে সত্যের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ক্রুশে বিদ্ধ জিওনার্দো ব্রুনোর সেই উক্তি আমাকে জ্যন্ত পুড়িয়ে মারলে বা না মারলে ও পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরবে। বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া আর ডিগ্রী অর্জন করার জন্য পড়ার মধ্যে আকাশ –পাতাল ফারাক। সুতারাং আমাদের দেশে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী , চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার আইনজীবী শিক্ষক অধ্যাপকেরা মনু খনা শ্রীভৃগুদের কাছে কবজ মাদুলি আংটির জন্য লাইন দেবে এতে আর আশ্চর্য কি !
মূলত জ্যোতিষবিদ্যা এবং জ্যোর্তিবিদ্যা এক নয় তা অনেক শিক্ষিত লোকই জানে না ।
আমরা টেলিস্কোপ ও উপগ্রহের ছবি থেকে জানি সূর্যকেন্দ্রীক এই সৌরমন্ডল ।মহাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি আছে । আমাদের একটা গ্যালাক্সিতে কোটী কোটী নক্ষত্র আছে । প্রতিটি গ্যালাক্সি গতিশীল ।কিন্তু জ্যোতিষে পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের বর্ণণা আছে ।নব গ্রহে সূর্য চন্দ্র বৃহস্পতি , মঙ্গল , শুক্র , শনি , বুধ রাহু কেতু ইত্যাদি গ্রহ , আজকের দিনে মানুষ মহাকাশে পৌঁছনোর পরে ভাবতে পারেন সূর্য-চন্দ্র-রাহু-কেতু গ্রহের মধ্যে পড়ে? আরো নতুন কতো গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে এবং এখনো অনাবিষ্কৃত অনেক গ্রহ হয়তো আছে । আর পৃথিবী কেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থা এখনো মেনে নিতে হবে? আমাদের বিজ্ঞানী ডাক্তার শিক্ষক অধ্যাপক মহাশয়েরা একবারও এগুলি ভাবেন না যখন পাথর আংটি কবজ মাদুলি ধারণ করেন ।সূর্য পরিক্রমারত পৃথিবীর একটুকরো আকাশকে ক্রান্তিবলয় ধরা হয় । এই জ্যোতিষশাস্ত্রে পৃথিবী স্থির ও পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ রত জ্যোতিষ শাস্ত্রে নির্দেশিত গ্রহরাও ভিন্ন ভিন্ন গতিতে এই বলয় ধরে বহমান । কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে ক্রান্তিবলয়ের ওপর মাত্র ২৭ টি নক্ষত্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে । এরা হল অশিনী, কৃত্তিকা রোহিণী পুনর্বসু পুষ্যা অশ্লেষা মূলা পূর্বষাঢ়া অনুরাধা চিত্রা ভরণী মৃগশিরা আর্দ্রা মঘা পূর্ব ফাল্গুনি , উত্তর ফাল্গুনী , হস্ত্য, স্বাতী , বিশাখা , অনুরাধা , জ্যাষ্ঠা , শ্রাবণা , ধনিষ্ঠা , শতভিষা , পূর্বভাদ্রপদ , উত্তর ভাদ্রপদ , রেবতী ইত্যাদি । । নিরক্ষীয় বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রীকে ১২টি ভাগ করা হয়েছে । যে ছবি ঠিকুজিতে থাকে ।এই ১২টি ভাগের এক একটিকে একটি রাশি ধরা হয়েছে ।রাশিচক্রের পথে ভিন্ন গতিতে আবর্তমান নয়টি গ্রহ ।এক একটি রাশিতে যে নক্ষত্রগুলির অবস্থান তাদের বিন্যাস বৈশিষ্ট্যে মানুষের কল্পনা জন্তু বা অবয়বের ছায়া ফুটে উঠত তাদের দোষগুণের বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখা হয় । এগুলিকেই এক একটি রাশি বলে । এই শাস্ত্রে জন্ম সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ , মানুষের জন্ম মুহূর্তে গ্রহ নক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থান তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে ।জাতকের জন্মের সময় যে নক্ষত্রটি পুব আকাশে থাকে সেটি হয় জন্মলগ্ন এবং সে মুহূর্তে যে রাশিতে চন্দ্র অবস্থান করে সেটি হল জন্মরাশি । জ্যোতিষবিদরা বলেন প্রত্যেক গ্রহ নক্ষত্রের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও একটি বিশেষ ধরণের বিকিরণ ক্ষমতা আছে, এই বিকিরণ প্রভাব বিস্তার করে মানুষের জীবনে। সংক্ষেপে আমি জ্যোতিষবিদ্যা সম্পর্কে বললাম । এই তত্ত্বের অসাড়তাগুলি নিচের অল্প কয়েকটি প্রশ্নে বিদ্যমান -----
১। মহাকাশের কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে কেন মাত্র ২৭ টিকে ধরা হবে ? আমেরিকান বিজ্ঞানী হাবেলের পরীক্ষায় ধরা পড়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটী গ্যালাক্সি আছে , প্রতিটি গ্যালাক্সিতে কোটি কোটি নক্ষত্র আছে । ব্রহ্মাণ্ড প্রতিদিন বাড়ছে । তাহলে মানুষের ভাগ্য গণনার ক্ষেত্রে শুধু ২৭ টি নক্ষত্রকে ধরা হবে কেনো ?
২। আমরা জানি মহাকাশের কোনো কোনো নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে আসতে ৪/৫ বছর লাগে , তাহলে জাতকের জন্ম মুহূর্তে যে নক্ষত্র দেখা যায় তা থেকে অনেক আগেই বিকিরণ শুরু হয়েছে , তাহলে সেই নক্ষত্রকে জ্যোতিষে জাতকের জন্মরাশি ধরা হবে কেন ?বা যে নক্ষত্র মারা গেছে অথচ তার আলো জাতকের জন্ম মুহূর্তে দেখা গেছে তাকে জাতকের জন্মরাশি কি ধরা হবে ?
৩। নবগ্রহে সূর্য চন্দ্র রাহু কেতু ইত্যাদি গ্রহ – আপনি আজকের দিনে বিশ্বাস করেন কি ? অথচ ইউরেনাস নেপচুন প্লুটো ভল্ক্যান প্রভৃতি গ্রহকে হিসাবে ধরা হবে না কেন ?
৪। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে একসাথে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় । প্রত্যকের জন্মরাশি এক নয় , একসাথে জন্ম না হওয়া সত্বেও একসাথে মৃত্যু হয় কেন? সুনামিতে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে , তারা সবাই এক বয়সী নয় , তা সত্বেও সবাই একসাথে মরলো কেনো ?
৫) পৃথিবী কেন্দ্রীক ব্যবস্থাই এখনো জ্যোতিষের মূল ভিত্তি । তাহলে আজকের দিনে ওনারা যা বলেন তা ডিগ্রীধারী পণ্ডিতেরা কি করে বিশ্বাস করেন ?
এরকম আরো অনেক যুক্তির অবতারণা করা যায় । আমার খারাপ লাগে শুধু মুনাফার জন্য প্রচার মাধ্যম জ্যোতিষবিদ্যার গুন , পাথর , কবচ মাদুলি এদের আধুনিক রূপ পাওয়ার ব্রেসলেট হনুমান চাল্লিশা ধনলক্ষী যন্ত্রের প্রচার করে সমগ্র সমাজকে নিয়তির দাস করে চলেছে এবং বিভ্রান্ত করছে । এর মাধ্যমে রত্ন ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়ছে আর সাধারণ মানুষ সর্বসান্ত হচ্ছে। হাবিজাবি শিল্পীরা এইসব ঠগেদের বিজ্ঞাপন দিতে পারে , তা বলে অমিতাব বচ্চন এইসব লোক ঠকানোর বিজ্ঞাপন দেবে ! আসলে ভোগবাদে সবাই টাকায় বিক্রী হয় ।
গোবিন্দ পানেসর দাভালকার অভিজিৎ রায়দের মেরে যুক্তিবাদী আন্দোলন শেষ হবে না । সামন্ত্রতন্ত্রের এবং ধনতন্ত্রের কুফল মানুষ ভোগ করছে । হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা কুসংস্কার মানুষের মনে গেঁথে আছে । মেটারিয়ালিটি শিল্পায়নের ফলে দ্রুত পরিবর্তন হয় কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া স্পিরিট দ্রুত পরিবর্তন হয় না । জানি এর উৎপাটন হওয়া এত সোজা নয় এত তাড়াতাড়ি । আশাবাদী হতে ক্ষতি কি ?
Sunday, July 25, 2021
অনেকদিন অভুক্ত
অনেকদিন কিছু লেখা হয় না। অনেকদিন
অভুক্ত থাকি যেন-
অনন্তকাল এইটা ভাবতে ভাবতেই পেরিয়ে যাই,
যে আসলে করছিটা কি লিখে!
ভেবে, এই লাইনে লেখাটা শেষ
করে আবার
একটু কার্বনডিঅক্সাইড ছেড়ে যাই পৃথিবীতে।
কবিতা যারা লেখেন বা লেখেন না
কবিতা যারা লেখেন, এমনিতে তাদের কোনো দুর্নাম নেই কারণ তাঁরা আকাশের থেকে বড়। কবিতা যারা লেখেন এমনিতে তাদের লোকে চেনে, কিন্তু আরেকটু পাড়াগাঁ মফস্বলে এসে তলিয়ে যান তারা। কবিতা যারা লেখেন, তারা ভাবেন যে সমাজ একদিন তাঁদের পড়বে এবং বুঝবে, এক দুজন হলেও বুঝবে যে কতখানি গভীর গার্হ্যস্থ অসুখ ঘিরে ধরে আছে। কবিতা যারা লেখেন সাধারণত তারা ছাতা ব্যবহার করতে ভুলে যান বর্ষায়, এবং মনে করেন এই ভুলে যাওয়াটা কী সামাজিক, রাজনৈতিক না বাস্তবিক! কবিতা যারা লেখেন তাঁরা বারবার হয়ত "কবিতা যারা লেখেন" বলে এভাবেই বিরক্ত করে যান; কিন্তু কবিতা যারা লেখেন তাঁরা গোপনেও জানেন, কিছু লোক অন্তত এদ্দুর আসতে পেরেছে; যেভাবে কয়েকটা পাখি ঘরে এসেছিল, যেভাবে কয়েকটা পরিযায়ী শ্রমিক... কবিতা যারা লেখেন তাঁরা আসলে কদাচিত মহান হন; এমনিতেও মহান মানুষদের লোকে পোঁছেনা; তাই, কবিতা যারা লেখেন তারা আসলে সময় নষ্ট করেন বলে মনে হয়। কবিতা যারা লেখেন তাদের সকলে উত্তরীয় সভাঘর আলোকমালাময় গদগদ শুভেচ্ছা না পেলেও গলায় চড়িয়ে নেন বিনয়ের উত্তরীয়। আসলে, কবিতা যারা লেখেন তারা খুব শান্তভাবে সরে যান এসব থেকে, সরে যান কবিতারই কাছে; যেমন ভাবে এতক্ষণে সরে গেছে ঘড়ির কাঁটা, নদীর জল, ভাইরাসের সংখ্যা, হিংসের পরিধি, এবং, কবিতা যারা লেখেন না, তাদের একাংশ।
কবিতা যারা লেখেন না; আমার কোনো ব্যক্তিগত দায় নেই তাঁদের সাথে আপনাদের
পরিচয় ঘটানোর। অথবা কবিতা যারা লেখেন, আমি এক মিতব্যয়ী মানুষ, বিনয়ের
জোছনায় তাহাদের করতল পদতল সুস্নিগ্ধকরণও আমার নিকট ধৃষ্টতা। অতঃপর...