Sunday, September 5, 2021

বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিষিদ্ধ বই



খুব সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ বই হচ্ছে, নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ”!

সেটি প্রকাশিত এবং মঞ্চস্থ হবার সাথে সাথে দেশময় তুমুল আলোচনার বন্যা আসে।
যার ফলে এক ধরনের ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ঝাঁঝ পাওয়া যায় দেশময়,যা ইংরেজরাও টের না পেয়ে পারেনি। কিন্তু ইংরেজদের পক্ষে এই কিষাণদের কথ্য ভাষায় রচিত নাটকের যথাযথ রসাহরন করা সম্ভব ছিলো না,তাই ইংরেজরা গিয়ে ধরলো পাদ্রী জেমস লঙকে। কিন্তু পাদ্রী লঙ সাহেব নিজেও এর অনুবাদের কাজে খুব একটা এগুতে পারলেন না; কেননা কিষাণদের চলতি গ্রাম্য কথ্য ভাষায় লেখা এই নাটকের লক্ষ্যই ছিলো গ্রামের মানুষের বুকে বসে যাওয়া! যা কোন ইউরোপিয়ানের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে তুলে এনে অনুবাদ করা কষ্টসাধ্য খুবই।
পাদ্রী লঙ অনুরোধের ঢেঁকী গিলে শরণাপন্ন হলেন এমন এক বাঙ্গালীর যার কিনা বাংলা বা ইংরেজী উভয়ই ভাষাতেই অত্যন্ত দক্ষতা আছে। সে সময়ে এই রকম যোগ্যতার লোক বলার মতো একজনই ছিলেন,তার কথা অনুমান করতে থাকুন-কে হতে পারে; ততক্ষনে বাকিটুকু শেষ করি।
ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হলো নাটকের ১৮৬১ সালে; অনুবাদের বইয়ে কোন নাম নেই অনুবাদকের! পাদ্রী লঙ সাহেব নাটকের শুরুতে ভুমিকা লিখে জানালেনঃ কোন এক সুহৃদ “নেটিভ” এর বদান্যতায় এই অনুবাদ করা হয়েছে।
ইংরেজ সরকার এবার যথাযথ স্বাদ পেলো এই নাটকের,তাদের টনক নড়লো! কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে,কেননা ইংরেজী অনুবাদ হাতে রেখে ইউরোপের হরেক ভাষায় এর অনুবাদ হতে লাগলো,জনপ্রিয় হতে লাগলো আরো এই নাটক।
“নীল দর্পণ” নাটকের ভিলেনদের (নীলকরদের) এবার শরীর জ্বলে গেলো,তারা মামলাই করে বসলো,অনুবাদকের নাম পেয়ে আদালত ডেকে পাঠালেন পাদ্রী লঙ সাহেবকেই। কিন্তু তিনি আদালতে বা কোনভাবেই আসল অনুবাদকের নাম প্রকাশে রাজী হলেন না। ফলে বিচারে খোদ পাদ্রী লঙ সাহেবেরই এক হাজার টাকা জরিমানা এবং সাথে এক মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় "নীল দর্পণ",কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই নিষেধাজ্ঞা টিকে নি!
তিনি একমাসের কারাদন্ড থেকে রেহাই পাননি ঠিকই,কিন্তু তার অর্থদন্ড আদায়ের সময় দেখা গেলো একজন “নেটিভ” তার নিজের থেকেই এক হাজার টাকা অযাচিতভাবেই দিয়ে গেছেন।
এই ব্যক্তিটি হচ্ছে কালীপ্রসন্ন সিংহ।

আর শুরুতে যার কথা হচ্ছিল,যিনি দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” প্রথম ইংরেজী অনুবাদ করেন তিনি আর কেউ নন,তিনি একসময়ের ““ওয়ানা বি” ইংরেজী সাহিত্যিক” মাইকেল মধুসূদন দত্ত!

তথ্যসূত্রঃ 

  • নীল দর্পন, দীনবন্ধু মিত্র
  •  https://bn.wikipedia.org

                 

No comments:

Post a Comment