"যদি বেঁচে যাও এবারের মতো
যদি কেটে যায় মৃত্যু ভয়,
জেনো বিজ্ঞান একা লড়েছিল
মন্দির মসজিদ নয়"
কথা
গুলো নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। অনেকে একে ব্লাসফেমি মনে করছে, উদ্ধত্য মনে
করছে এই উক্তিতকে। আসলেই কী তেমন মনে করার সুযোগ আছে? আমার মনে হয় না। তবে
কথাটা আমার কাছে সম্পূর্ণ মনে হয়নি। বিজ্ঞান একা লড়েছে ঠিক আছে, তবে মসজিদ
মন্দির একাই যে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তা না, লড়াই শব্দটার সাথে যা যা জড়িত
সেই সবও তাকিয়ে দেখছে শুধু। কোটি কোটি ডলারের মারণাস্ত্র, নিমিষে দুনিয়া
ধ্বংস করে দেওয়ার মত পারমানবিক বোমা, যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, কামান,
গোলা- বারুদ এই সমস্ত কিছুও অকেজো হয়ে পরে রইছে।
এখন মসজিদ মন্দির
নয় বলাতে অনেকেই একে ধর্ম বিরোধী বলে মনে করছেন। ধর্ম আর মসজিদ মন্দির এক
জিনিস কী না তা আগে আমাদের বুঝা উচিত। মসজিদ বলতে আমরা যে ঝাঁ চকচকে শানদার
দালান বুঝি তা আসলেই বুঝায় কিনা বা মন্দির বলতেই ধর্ম বুঝায় কিনা তা জানা
দরকার। আমার তা মনে হয় না। ঈশ্বর আর মসজিদ মন্দির এক জিনিস না। এখন মসজিদ
বা মন্দির বন্ধ আছে, তাতে ধর্ম নষ্ট হয়ে যায়নি, যাওয়ার কথাও না। নবী খেজুর
পাতার ছাউনিতে নামাজ পড়ে ধর্ম প্রচার করেছেন আর আমাদের এখন এসি মসজিদ ছাড়া
নামাজ পড়া যায় না।
তবে লেখাটায় মসজিদ মন্দিরকে যে চ্যালেঞ্জ করা
হয়েছে বা বলা যায় কটাক্ষ করা হয়েছে তা মিথ্যা না। এর কারন আমার কাছে যা মনে
হয়েছে তাই বলছি। এখন যখন আমরা সকলেই বিজ্ঞানের একটা ব্রেক থ্রুর জন্য
অপেক্ষা করছি তখন প্রশ্ন জাগতেই পারে আমরা বিজ্ঞান চর্চার জন্য কী করেছি?
কত টাকা দেওয়া হয় গবেষণার জন্য? অন্যদিকে মসজিদ মন্দির বা ধর্ম চর্চার জন্য
কত টাকা খরচ করে সরকার? আমি আমার দেশের কথাই বলছি। সারা পৃথিবীর বড় বড়
বিশ্ববিদ্যালয় গুলো যখন জোরেশোরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভাইরাসের ঠিকুজি
উদ্ধারে তখন আমাদের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে
ফলাও করে তা প্রচার করছে! হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়ে দোষ করেনি, মানুষের
উপকারই করেছে, গবেষণার জন্য যে টাকা পায় তাতে এরা যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার
বানাতে পেরেছে তাই অনেক!
আচ্ছা, তুলনাটা করেই ফেলি তাহলে। ২০১৯/২০
অর্থ বছরে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে ইউজিসির গবেষণা বাবদ
বরাদ্দ ছিল ৮০৮৮ কোটি টাকা। আর ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার কেবল একটি
প্রকল্প, মডেল মসজিদ প্রকল্পতে বরাদ্দ দেয় ৮৭৮৮ কোটি টাকা। বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় আশি কোটি টাকা। অন্যদিকে (২০১৯
সালে) ঢাকেশ্বরী মন্দির সহ সারা দেশের মন্দির সংস্কারের জন্য বরাদ্দ ছিল
২২৮ কোটি টাকা।চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার কী অবস্থা দেশে? সবচেয়ে বেশি
বরাদ্দ পেয়েছে সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। টাকার অংক শুনে হাসা যাবে না
আগেই বলে দিলাম। তিন কোটি টাকা! খোঁজ নিয়ে দেখা যাবে সিলেটের পাড়া মহল্লার
ওয়াজ মাহফিলে এর চেয়ে কয়েক গুন টাকা খচর হয়।
তো? সংকটকালে যাদের
দিকে সকলেই তাকিয়ে রয়েছে তাদেরকে আমরা এতদিন কী দিয়ে এসেছি বুঝা যাচ্ছে?
সারা দেশে ৩৬০ মসজিদ বানানোর জন্য যে আট হাজার কোটি টাকার ওপরে দেওয়া হল তা
থেকে এই মুহূর্তে কী পাওয়া যাচ্ছে? এমন তো না যে এই ৩৬০ মসজিদ না হলে
আমাদের দেশে নামাজ পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আমরা বিজ্ঞানকে থোড়াই
কেয়ার করি।বিজ্ঞান চর্চা হুদা জিনিস।ফালতু খরচ সব!
আচ্ছা, এই
ক্রান্তিকালীন সময়ে যদি মসজিদ কে এগিয়ে আসতে বলা হয়, তারা কী আসবে? কয়েক
লাখ মসজিদ আছে দেশে। যদি বলা হয় মসজিদ গুলোকে আইসলেসন সেন্টার হিসেবে
ব্যবহার করা হোক। সবাই মেনে যাবে? আমাকে লাফ দিয়ে ধরার আগে আরেকবার ভাবুন।
মসজিদ কমিটি লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য খাটিয়া দেয় নাই, এমন খবর দুইদিন আগেই
পাইছি আমরা!
যদি পুরো বিশ্বের হিসেব করি তাহলে আমাদের মত রুগ্ন
অবস্থা হয়ত দেখব না। কিন্তু খুব যে ভাল অবস্থা তাও না। সেখানে তুলনা আসবে
মসজিদ মন্দিরের সাথে না। সেখানে আসবে পৃথিবী চোদ্দ বার করে ধ্বংস করে দেওয়া
মারণাস্ত্র বানানোর বাজেটের সাথে। এই ক্রান্তিকালীন সময় কেটে যাবে। হয়ত
নতুন পৃথিবীর দেখা পাব আমরা। । যেখানে আগামী পৃথিবীর দুর্যোগ সামাল দেওয়ার
জন্য আমরা তৈরি থাকব। সেই আশায় থাকলাম।।
No comments:
Post a Comment