মড়ক উছিলায় ঘরবন্দী আপনি। স্বজাতি দেখলে আতকায়া উঠেন। ভিতরে করোনা নাই
তো? মিডিয়ায় ফেনা তুলেন। বাইত তাহুইন, বাইত তাহুইন। স্টে হোম, স্টে
হোম। বাট হাউ ফানি, অনেকের হোম নাই এই শহরে। ভরসা নাই ভাসানচরে। এলাহী
ভরসায় তারা ছুটে গ্রামে। গ্রাম যেখানে, হোম সেখানে। এই গণ মুভমেন্টে আপনার
রাগ উঠে। হোয়াট দ্য গ্রাম? এত বুঝানোর পরেও অশিক্ষিত গাইয়াগুলা
যে কী করে, পিটা ওগো। পিটায়া ছাল তুল অসভ্যগুলার। চাইয়া দ্যাখ, কেমনে পিটা
দিতাছে পুলিশ-আর্মি। কত তাদের ক্ষমতা। প্রমাণস্বরূপ ভিডিও শেয়ার দেন। ফলে
অনেকে পিটা খায়। পিতার জন্মশতবর্ষে।
করোনার কান নাই। তাই
জনস্বার্থে যারা পিটা খায়, তাদের কান্না শুনতে পায় না সে। সে ব্যস্ত তার
মলিকিউলার কারবারিতে। তবু আপনি যে ভাইরাস থেকে সভ্য+আশরাফ+বহুকোষী প্রাণী,
তা বুঝাইতেও রাগ জারি রাখতে হয়।
কিন্তু কার উপর যে রাগ, বুইঝা উঠেন
না। খালি বুঝেন, উপনিবেশ থেইকা মুক্তি নাই। ছিল ব্রিট্রিশ। তার রেপ্লিকা ও
হ্যাংওভার। এখন করোনা। করোনা ছোট। সাবান-কোহল দিয়া কচলাইলে সে মইরা
যায়। ফলে, করোনার উপর রাগ কইরা মাটিতে ভাত খাইলে তা প্রবাদের অপমান।
বড়জোড় করতে পারেন বিরাগ।
তবে রাগ করা যায় সভ্যতার উপর। সে আকারে
বেশ বড়। ফলে, বড় রাগ করা জায়েজ। কী আজব এই সভ্যতা, আপনি ভাবেন। মানুষ যত না
স্বজাতির জন্য, তার চেয়ে বেশি অ্যান্টিভাইরাস বানাইয়া গেছে কম্পিউটারের
জন্য। এখন করোনা সামলাও। রাগে-দুঃখে, পারলে এখনই, ডেটল বা ক্লোরোকুইন
খান দুই বেলা। ভাইরাস না মরুক, নিজে তো মইরা বাঁচবেন!
অথবা, ধরেন,
মাথায় মার্কিন ক্যারা উঠলে, রাগ উঠে চীনের উপর। চীন নিয়া যত গুজব পান,
ছড়ান। যথা, এক, এইটা ল্যাবপ্রসূত; এইটা তাদের জৈবিক অস্ত্র মামলা। দুই,
এইটা তাদের বাণিজ্যযুদ্ধের গুপন কৌশল। সারা দুনিয়ায় উহান ভাইরাস ছড়াইয়া,
ফাঁকতালে আম্রিকা-ইয়ুরোপের শেয়ার কিন্না, সে নিরোগ হয়। করোনা বিস্তারের
এই ন্যারেটিভ বুঝতে হাত পাতেন মিডিয়ায়। পান আখখেচরা সংখ্যা ও পরিসংখ্যা।
তাতে রাগ কমে। আবার মিডিয়া দেয় স্বজাতি মরার সংবাদ। তাতে রাগ বাড়ে। সভ্যতা
শিখাইছে, রাগ মেদের মতো। তা ঝাড়তে হয়। কার উপর তা ঝাড়বেন?
ইয়েস।
সরকার। তার প্রতি আপনার বহুতল প্রতি+আশা। আপনি চান, সে হোক আপনার লোকাল
ঈশ্বর। যেহেতু ভোট বা ভ্যাট দিছেন। যেহেতু নগরের নাগর আপনি। ফলে বুকভরা
আশা নিয়া শুনেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ। শুইনা হতাশ হন। ভাবেন, ইস, বৈশ্বিক এই
সমরকালে বেসামরিক যন্ত্রের যাবতীয় গাফিলতির দায় স্বীকার কইরা একবার যদি
তিনি, মাত্র একবার যদি তিনি মন থেইকা সরি বলতেন, আপনার স-অ-ব রাগ নাইমা
যাইতো। সবাই তাইলে হাতে-হাত-না-মিলাইয়া হু মোতাবেক স্টে হোম করতো।
তাতে বাঁইচা যায় ঘরের বুড়া মা-মুরুব্বি-বাপ। বাঁচতো অসুখে ভোগা অসুখী
পরিবার। সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস সমাধান। কত সহজে করোনা খেদানো যায় বাকি
সবাই ঘরে বইসা থাকলে। ঘরে বইসা কফি লাটে খাইতে খাইতে তা ভাবেন।
কিন্তু
চাকরি-ব্যবসা সব লাটে উঠায়া কতকাল ঘরে বইসা থাকতে হবে? হু নৌজ? মেইবি হু
নোজ। তখন চিঠি খসড়া করেন হু বরাবর। হু জানে কচু। সে জানে না আপনার কামাই
কেমনে হবে। সে জানে না আগামী মন্দায় আপনার খাওন কে জুটাবে। কথা তার একটাই:
এইটা মড়ক। ঘরে মটকা মাইরা থাকতে হবে অনির্দিষ্টকাল। তাইলে স্বাস্থ্যসেবা
সামলানো যাবে। কার্ভ ফ্ল্যাট হবে। ইত্যাদি। ফলে হু নিয়া আপনার হুতাশ বাড়ে।
বহুকোষী রাগ ফিরা আসে। সভ্যতা শিখাইছে, রাগ মেদের ম...
রাগ কমলে আবার বুঝেন, আপনার লাইগ্যা স্টে হোম অনিবার্য। ফলে ধারদেনা কইরা হইলেও তড়িঘড়ি কিনেন বাড়তি
চালডালসাবান। আর অচেনা লোকের দেখাদেখি অচেনা স্যানিটাইজার। ঘরে তো আর
অনির্দিষ্টকাল না খাইয়া, হাইগা-হাত-না-ধুইয়া থাকা যায় না। সেইটা অসভ্যতা।
সদাই শেষে ফেসবুকে আইসা দেখেন, সভ্যতর লোকেরা এই কিনাকাটার নাম দিছে,
প্যানিক বাই। চিরকাল আপনার দৌড় টাটাবাইবাই বা শুচিবাই পর্যন্ত। এই প্যানিক
বাই নামের গালি মায়ের জন্মে শুনছেন নাকি, মনে করতে থাকেন আপনি। ফলে আপনি
প্যানিক ইটিং শুরু করেন। সাতদিনের খানা তিনদিনে শেষ। আর টেনশন কমাইতে
প্যানিক স্মোকিং। সভ্যতা বলে, জনস্বাস্থ্যের পক্ষে তা ক্ষতিকর।
জন
ও স্বাস্থ্যের মায়েরে বাপ। খুব তো দেখলেন দুনিয়াজোড়া জনস্বাস্থ্যের
সার্কাস, বিশ্বমুরুব্বিদের বাহাদুরি। টাট্টিখানায় হাগতে হাগতে এইসব ভাবেন।
হাগায় রাগা কমে। তখন আবিস্কার করেন, পৃথিবীতে টাট্টিখানাই সবচেয়ে
ইনক্লুসিভ; আপন; সভ্যতার বড় কেরামত। কারণ, সে বিচার করে না কে অসভ্য আর কে
সভ্য। নিজেরে উদাম করা যায়। কান্নাকাটি করা যায়। করোনার মতো সে
নির্বিচারে সবাইরে আপন কইরা নিতে পারে।
আপনি আরও টের পান : এই
বানায়া তোলা সভ্যতা — যা না শিখলে অপমানিত হন আর "নোংরা অপর" হওয়ার
উপলব্ধিতে অপরাধবোধে ভুগেন — সে নিজেই একটা ব-অ-ড় ভাইরাস; প্যারাসাইট। যতই
ঘরে বইসা নিরাপদ মনে করেন, আপনারে এই নভেল সভ্যতাভাইরাস রোগে ধরছে। আপনি
নিজেই তার বাহক পোষক তোষক যা-তা। এমনকি যাদের উপর আপনার এত রাগ, তারাও
একইভাবে সংক্রমিত।
বালের দোহাই, বেয়াদবি মাফ কইরেন,
আপনার+স্বজাতির দরকার একটা অসভ্য নভেল অ্যান্টিভাইরাস। যতদিন না পান তারে,
সাবান ডলেন। কম খান। আর স্টে হোম। যেহেতু সভ্যতা বলছে, হোমো স্যাপিয়েন্স
আপনি।
No comments:
Post a Comment