Friday, July 19, 2019

বিচ্ছিন্ন ঘটনা

ছিন্ন ভিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাইড়া গিয়া দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও আগের তুলনায় ভালো হইয়া, দেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র আসার পর এখন বাজারঘাট করতে আগের মত আর ভয় লাগে না তালেবান মিয়ার।
আগে বাজারে আসলে তালেবান মিয়ার কলিজা, হাতে ধরা কুচকাইন্না পুরানা বাজারের ব্যাগেটার মত ভাঁজ খাইয়া যাইতো। আগে তালেবান মিয়া বাজারে ঢুকতে গেলে খুব হুঁশিয়ারে কশাই’র দোকান পাশ কাটাইয়া, মাছ বাজারের কোনা এড়াইয়া ঘেডি নীচা কইরা সিধা হান্দাইয়া যাইতো সবজীর বাজারে। লতি, কচু, মুলা, শাক এইসব ছাতা মাথাই কিনার চেষ্টায় সব্জীবাজার টা পুরা দুই চক্কর দিয়া ফালাইতো দাম দস্তুর আর তাজা-বাসী খুঁজতে গিয়া। ক্যামিকেল যুদ্ধের বাজারে সব কিছুই কেমিকেল দেয়া, তার ভিতরে তুলনামূলক কম দামী জিনিসে কেমিকেল এর হামলা কম। তালেবান মিয়া মোটামুটি সস্তা সবজী খাইতে খাইতে পেটে আর মনে চরা ফালাইয়া দিতেসিলো। অবশেষে বাজার ঘুরসে, এখন আর আলু-মুলা খাইয়া বাচতে হবে না অন্তত। বাজারে মাংস-মাছের ভালা যোগান আসতেসে। দাম ও ম্যালা কম।
স্বর্নের চেয়ে বেশী দামে বুড়া ইন্ডিয়ান বলদের গোস্ত এখন আর বাজারে খুইজাও পাবে না কেউ। বাজার ভরা কচি দেশী মাংসের সাপ্লাই। তালেবান মিয়া বুক ফুলাইয়া ঢুইকা পড়ে বাজারের কসাই গলিতে। আহা কি সুন্দর দৃশ্য। সারী সারী মাংসের চাক ঝুলতাসে। দাম জিগাইলে মনে শান্তি আরো বাইড়া যায় হু হু কইরা। পানির চেয়ে সস্তা। তালেবান মিয়া হালকা ধাক্কা দিয়া টুপিটা উচা কইরা দুই হাত পীছে নিয়া শিনা টান কইরা ঢুইকা পড়ে মাংসের গলিতে। দুই পাশ থেইকা কসাইরা ৪২ দাত বাইর কইরা হাসতে হাসতে চাপাতি উচা কইরা ঘুরাইতে ঘুরাইতে ডাকে তালেবান মিয়ারে। বাজারে মাংসের সাপ্লাই ভাল। শুধু মাংশ না। মগজ, কলিজা, গুর্দা, কিমা সবই আছে। তালেবান মিয়া মাংস বাজারের ভীড় দেইখা বিরক্ত লাগার বদলে হালকা খুশিই হয়। সব তার মতন লোকজন, গরীব, আধা গরীব মানুষজনে গিজ গিজ করতেসে বাজার। এই বাজারে হাইটাও শান্তি !! আগে এই পদের লোকজনের আনাগোনা আছিল না এই মাংসের বাজারে। ফেতরা, জাকাত আর সদকা খাইয়া যাদের পেট ভরতো তারা এখন বড় বড় ব্যাগ নিয়া বাজারে আসে, কি বুক ফুলাইয়া বাজার করে। কারো কারো বাজার টানতে মিন্তি লাগে।
সবচেয়ে সস্তা যাইতেসে নাস্তিকের মগজ। পাবলিকও হুমড়ি খাইয়া পড়তেসে। তালেবান মিয়া মগজের দোকানের কাছেই যাইতে পারলো না ভীড়ের ঠেলায়। দুরের থেকে দেখলো এক লোকে ৫ পিছ মগজ কিনলো। কসাই হাসতে হাসতে তার ব্যাগে আরেক পিস নাস্তিকের মগজ ভইরা দিল ফ্রি-তে। কাস্টোমার টাকা সাধসে, কসাই নিতেসে না। হাসতে হাসতে দাম ফিরাইয়া দিতেসে। আহারে ! এই না হইলে বাজার !!! দোকানদারে দাম নিতে চায়না। এমন বাজারের স্বপ্নই তো তালেবান মিয়া দেখতো । বলগারের গোস্তের দোকানে বেচাকেনা ভাল। কসাই আবার একটা ব্যানার লেইখা টাঙ্গাইয়া থুইসে।
“মাংসের অর্ডার নেয়া হয়। এইখানে অর্ডার করলে, চিহ্নিত কচি বলগারের মাংস একদিনে সরবরাহ করা হয়।”
বলগারের শিনার মাংস, ঘাড়ের মাংস টিপা টুপা দেখতেসে এক মুরুব্বী। দোকানদার রে ধামকী দিয়া কইলো
কিরে ব্যাডা বলগার তো বুড়া। গোস্ত শক্ত লাগে কা ?
কসাই রেতি দিয়া চিরিক চিরিক কইরা ঘইসা চাপাতি শান দিতে দিতে কয়
মুরুব্বী এইটা কি কইলেন ? এক্কেরে কচি বলগার। মাত্র ৮ টা পোস্ট দিসে। ঢাকা শহরের কফি, বার্গার খাওয়া বলগার আছিল না। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহের গৃহস্ত বাড়ির বলগার। আইজকা সকালে নিজে জবাই দিসি।
ঃধুর ব্যাডা তোগো বিশ্বাস নাই। বলগার কইয়া ফেসবুকারের গোস্ত ধরাইয়া দেস। গত মাসে নিসিলাম অই সাইডের কসাইয়ের দোকানতে। বিবিসাবে রানতে গিয়া দেখে মাংস সিদ্ধ হয় না। আইয়া চিপ দিয়া ধরসি পরে স্বীকার গেছে- বলগার আছিল না, ফেসবুকারের গোস্ত দিসিলো। তাও ম্যালা বুড়া । ৮ বছরের পুরানা প্রোফাইল ওয়ালা ফেসবুকার। এইগিলি খাওয়া যায় ? তুই ক ?
কসাই জিব্বা কাইটা হাসতে হাসতে মাথা দুই দিকে নাড়ে। মুরুব্বীর কথায় সায় দেয়। নাহ। এইডা একদম মানা যায় না। দেশে দুইনম্বরী কমা উচিত। যেখানে বলগার পাওয়া যাইতেসে এত সস্তায়, সেখানে ভেজাল বেচার দরকার কী? ফেসবুকার, লাইকার বেইচা কাস্টোমারের বাজার খারাপ করনের কোন মানে হয় না।
তালেবান মিয়া চিন্তা করে, একঘুরা দিয়া বাজারটা দেইখা বলগারের গোস্ত নিবে ফিরা আইসা। সামনের দোকানে মুক্তমনা আর বিজ্ঞান গবেষকের পায়া টাল দেয়া আছে। তালেবান মিয়ার আবার খুব নলী খাওনের শখ। নলী খাওনের জন্য মুক্তমনার উপরে জিনিস নাই। এইগুলা মাথা খাটাইয়া মগজ ঝাজড়া কইরা ফেলে। এগোর মগজে স্বাদ নাই। পা চালায় কম তাই এগো পায়ায় চর্বী থাকে। নলী রানলে তেল ছাড়ে!

রেপ কেইসের কলিজা বেচতেসে আরেক দোকানদার। ইদানিং সাপ্লাই বাড়ার পর এই কাঁচা বাজারেও ব্র্যান্ডিং শুরু হইসে। এই যে এই ব্যাডা কলিজার কসাই গত কয়দিন ধইরা সব কলিজা নুসরাতের কলিজা কইয়া বেচতেসে। কাস্টমারের চাহিদা। এমনে রেপ কেইসের কলিজা পইড়া থাকে কেউ উল্টাইয়াও দেখে না। নুসরাতের কলিজা খুইজা কাস্টোমারের ভীড় লাগোনের পর তে কসাই এখন সব কলিজা নুসরাতের নামে বেচে। আগে অবশ্য কিছুদিন তনুর নামে বেচাবিক্রি ভালো হইতো।
আরেক দিকে কশাই আর কাস্টোমারের তর্ক চলতেসে প্রফেসারের মাথার মাংস নিয়া। কাস্টোমার খুজতেসে ঢাকার প্রফেসারের মাথা, কশাইয়ের কাছে আছে রাজশাহীর প্রফেসারের। কশাই খুব বুঝানোর চেষ্টা করতেসে, প্রফেসার রাজশাহীর হইলেও মাথা খারাপ না।
গোস্তের বাজারে তালেবান মিয়া চক্কর কাটে কত ভ্যারিয়েশান রে বাবা। শিয়া, কাদীয়ানী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ফাদার, সাধু, মুয়াজ্জিন, ইমাম, সমকামী, পীরের মুরিদ, লেখক, প্রকাশক কিসের মাংস নাই বাজারে !!! দেশি এত পদের পাশাপাশি বিদেশী মাংস ও আছে কিছু। তালেবান মিয়া পা চালায় মাছ বাজারের দিকে।
চুনা পুটি, গুড়া কাচকী আর শিং মাগুরের সেই বাজার আর নাই। এখন মাছের বাজার রমরমা। নতুন চাষের মাছ আইসা পড়সে। জামাতী লীগ নামের এক হাইব্রিড পাঙ্গাসে বাজার উপড়াইয়া পড়তেসে। লীগ কাতলা আছে বিশাল বিশাল সাইজের। কিছু ফাইনানশিয়াল বোয়ালের সাইজ এত বড় যে তালেবান মিয়া মাথা ঘাড়ের এই পাশ থেকে অইপাশে পুরা প্যান করা লাগলো বোয়ালের সাইজ দেখতে। আগে মাছ বাজারে ধুয়া উঠছিল ফরমালিনের। ভেজালের দিন শেষ। এখন ফরমালিন লাগে না। মিনিস্টার নামের এক জাতের ভেটকী মাছ বাইর হইসে, এইগুলা পানি ছাড়াই বাইচা থাকতে পারে। তাই মরেও না। পচার তো কাহিনীই নাই। সারাক্ষন মুখ হা কইরা বাতাস টানতেসে। এমন কি মাছ কাটার কাটারীরা যখন বড় বটির উপর ফালাইয়া বডি আর মাথা আলাদা কইরা ফেলতেসে, তখন ও মিনিস্টার মাছের মুখ হা করা, নড়ে চড়ে।
প্রশ্নফাঁস নামের কই এর ঝাঁক খলবল করতেসে বিরাট ঝাঁকায়। সোনালী জাতের গজার মাছ আছে, ব্যাংকে চাষ হয়। আগে মাছ বেচতো খুচরা দোকানদাররা। কত হাত ঘুইরা মাছের দাম যাইতো বাইড়া। এখন বড় খামারীরা সরাসরি মাছ সাপ্লাই কইরা বাজার ভরাইয়া দিছে। মাছের দামে আগের সেই জৌলুশ নাই। এক প্যাকেট বেনসনের দামে একজোড়া পুলিশ ইলিশ পাওয়াই যায় আরামে। তালেবান মিয়া মাছ কিনে।
মাছের বাজারের পাশেই ডিমপট্টি।
পোল্ট্রি লীগের ডিম আছে, ডিজিটাল উন্নতির ডিম আছে। একটু পুরান ডিমও আছে কিছু। সেতু ডিম এগুলা, মাঝে মাঝে পচা পড়ে।
তালেবান মিয়া ভাবলো এত কিছু নিলাম যখন, খাবার হজম হবার জন্য একটা পাল্টিদই নেই। বাজারে নাকি ইদানীং মুফা নামে পাল্টিদই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এর আগে তালেবান মিয়ার পিনাকী, সানিউর আর আসিফ নজরুল নামের টকদইও ভাল লেগেছিল।
তালেবান মিয়ার ব্যাগ প্রায় উপচায়া পড়তেসে। নানান পদের মাছ -মাংস আর তরি তরকারী দিয়া। বাজার থেকে ফিরতে মন চাইতেসে না। কিন্তু না ফিরাও উপায় নাই। তালেবান মিয়ার ব্যাগে আর জায়গা নাই। বাজার থেকে বের হওনের মুখে তালেবান মিয়ার দেখা হয় হেফাজত মিয়ার লগে। হেফাজত মিয়ার মাথায় বিশাল বস্তা। তালেবান মিয়া অবাক হয়। এই বাজারে এত সস্তায় ভ্যারাইটির সদাই পাতি থুইয়া হেফাজত কিসের বস্তা লইয়া ছুটতেসে জানতে মন চায়। তালেবান মিয়া পীছন থেকে পাঞ্জাবির কোনা ধইরা টান মাইরা থামায় হেফাজত মিয়ারে। জিগায় “তোর বস্তায় কীরে ??” হেফাজত পান খাওয়া লাল দাঁত বাইর কইরা হাসতে হাসতে কয়
আলু!!
এই বাজারে এত এত সস্তার জিনিস থুইয়া তুই এতডি আলু লইয়া কই যাস ?
আরে বেক্কল, আলু পাইসি মাগনা। পাবলিক নামের নতুন আলু । আড়তে মাগনা দিতাসে। একবস্তা আলু মাগনা, বুঝতাছস ?
তালেবান মিয়ার খটকা তাও যায় না। বুঝলাম পাবলিক আলু মাগনা। তাই বলে মাছ মাংস বাদ দিয়া আলু খাইতে হবে কেন ?
হেফাজত মিয়া বুদ্ধিমানের মতন দাড়ি নাড়তে নাড়তে বলে...
আরে বেটা ! আলু হইল একটা নেয়ামত! এই আলু সব কিছুর লগেই যায় । নাস্তিকের মাংসে ও যায়। শেয়ার মার্কেটের বোয়ালের লগেও যায়। সুশীল কচু আর ওলামালীগের ডিমের তরকারী কোনটা বাদ থাকে ক ? আলু ছাড়া সারাবছর আরাম আছে খাইয়া দাইয়া ?
তালেবান মিয়া এইবার ভাবনায় পইড়া যায়। আসলেই তো। পাবলিকের উপর জিনিস নাই। আলু না নিয়া বাজার থেকে ফিরা যাওয়া মনে হয় ঠিক হইতেসেনা।
তালেবান মিয়া ঘুইরা হাটা দেয় বাজারের ভেতর। একবস্তা পাবলিক আলু নিয়াই যাওয়া দরকার। মাগনাই তো !!

No comments:

Post a Comment