Friday, July 19, 2019

স্যাপিওসেক্সুয়াল

মানুষ যখন কারও প্রেমে পড়ে তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই সে চেহারা, বাহ্যিক সৌন্দর্য ইত্যাদি দেখেই প্রেমে পড়ে। কিন্তু এমন কিছু মানুষও রয়েছেন যারা চেহারা কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য নয়, শুধু বুদ্ধিমত্তা দেখেই প্রেমে পড়েন। বিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় ‘স্যাপিওসেক্সুয়াল’।
স্যাপিওসেক্সুয়ালদের প্রেম ও যৌনতার অনুভূতি আবর্তিত হয় মস্তিষ্ককে ঘিরে। শারীরিক সৌন্দর্য বা সামাজিক অবস্থানের চেয়ে তাদের কাছে অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায় উল্টোদিকের মানুষটির বুদ্ধিমত্তা। অপরদিকের মানুষটির গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার মানসিকতা তাদের প্রচণ্ড আকৃষ্ট করে। মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক আলোচনা থেকে তারা রসদ সংগ্রহ করেন। এরা মনে করেন কারো যৌন আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং তার মেধায় লুকিয়ে থাকে। আপনিও কি এমন? মিলিয়ে নিন।

স্যাপিওসেক্সুয়ালেরা কখনোই হুটহাট প্রেমে পড়েন না। যেহেতু শারীরিক সৌন্দর্য তাদের টানে না, তাই প্রেমে পড়তে তাদের সময় লাগে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে বন্ধুত্ব হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ও বৌদ্ধিক সংযোগ হলে তবেই আসে প্রেমের প্রশ্ন। মেধা বা বুদ্ধির আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি হলেও শারীরিক আকর্ষণ যে একেবারেই নেই, তা নয়। কিন্তু স্যাপিওদের কাছে শারীরিক আকর্ষণটা খুবই সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য কখনোই চেহারাটা বড়ো হয়ে দাঁড়ায় না তাদের কাছে। স্যাপিওদের কাউকে পছন্দ মানে সত্যিই পছন্দ। এর একটা কারণ স্যাপিওদের সহজে কাউকে পছন্দ হয় না, অনেকটা সময় লাগে। উল্টোদিকের মানুষটার সঙ্গে মেধা ও বৌদ্ধিকভাবে সংযোগ স্থাপনের পরই আসে তাকে ভালোলাগার প্রশ্ন। ফলে যখন কাউকে তাদের ভালো লাগে, তখন সেটা বেশ সিরিয়াসই হয়।
স্যাপিওসেক্সুয়ালদের সব সম্পর্কই শুরু হয় বন্ধুত্ব দিয়ে, সেখানে প্রেমের ছিটেফোঁটাও থাকে না। তাই যখন আপনার মনে প্লেটোনিক স্তর পেরিয়ে প্রেমের সূত্রপাত হয়, তখন আপনার বন্ধুও একইরকম ভাবছেন কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। ফলে বন্ধুকে মনের কথা বলবেন কি বলবেন না, তা নিয়ে আপনার মনে সংশয় তৈরি হয়। যারা অতিরিক্ত চিৎকার, মেজাজ দেখানো, কিংবা বোকামি করে তারা স্যাপিওদের দু’চক্ষের বিষ। যারা নিজেদের অনুভূতিকে যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করতে পারেন, যারা চট করে মেজাজ হারান না, জটিল পরিস্থিতিকেও শান্তভাবে সমাধান করার চেষ্টা করেন, সেরকম মানুষকেই পছন্দ করেন স্যাপিওরা।
খুব বেশি মানুষের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা হয় না সচরাচর। প্রেমের সংখ্যাও আপনার খুবই কম। সাধারণতঃ নিজের ছোট বৃত্তেই থাকতে পছন্দ করেন আপনি। তাই আশপাশের অনেকেই আপনাকে অহঙ্কারী বলে ভুল করেন। তাতে কিন্তু মোটেও বিচলিত হবেন না। নিজের পছন্দ আর ধ্যানধারণায় আপনি স্থির থাকুন।

নারী মুক্তির প্রিভিউ

কোন্ এক বিদেশি পাইলট নাকি ব্যঙ্গ করে বলেছিল : “বাংলাদেশে সবচাইতে সস্তা হল মেয়ে মানুষ। মাত্র 10$ এর বিনিময়ে সারা রাত একটা মেয়েকে ভোগ করা যায়”। বাংলাদেশের মেয়ে হোক কিংবা ভারত, পাকিস্তান হোক কিংবা আমেরিকার মেয়ে – তাতে কী ফারাক পড়ে ! নারী বাঙালি নাকি জার্মানি – তাতেই-বা কী এসে যায় ! ১০ ডলার, নাকি ১০০ ডলার – তাতেই-বা কী এসে যায় ! চিত্রটা কি খুব বদলায় ! নারী নিজেকে বিক্রি করে, নারী বিক্রিত হয়। বিনিময় ছাড়া একজন পুরুষও নারীসঙ্গ পেতে পারে না (আজকাল অবশ্য কিছু নারী নিজের গাঁটের কড়ি খরচা করে পুরুষ-সঙ্গ প্রাপ্ত হচ্ছে।)।
অবচেতন মনে নারী কবেই নিজেকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছে, তা নারীরা নিজেই জানে না। তাই নারী ‘মানুষ’ হতে পারছে না। নারী পণ্য হতে পেরেছে। অজ্ঞানতায় অথবা সজ্ঞানতায় নারী নিজেকে ‘খাদ্য’ ছাড়া কিছুই নির্মাণ করে উঠতে পারেনি। শরীর সর্বস্বই নারীর অস্তিত্ব। তাই নারীর বেশিরভাগ কাজের জগৎ নারীর শরীরকে ঘিরে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। প্রয়োজনে (?) নারীকে শরীর খুলে দিতে হবে – এই শর্তে অনেক সিনেমা-সিরিয়ালে চুক্তি-সই করতে হয়। প্রেমে শরীরসমর্পণ এক কথা, বিনিময়ে শরীরসমর্পণ নারীকে মানুষ হতে বাধা দেয়। নারীর শরীর বিক্রি হয়, সেই শরীর বিক্রির চড়া বাজারও হয়। সেদিন একটি পুলিসের ফাইল পড়ছিলাম – সেখানে দেখা যাচ্ছে সিনেমা-সিরিয়ালে অভিনেত্রী হওয়ার জন্য ডিরেক্টরের বিছানায় নিজের শরীর ঢেলে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বহু নারী। শুধু একটা চান্স ! আমার এক আত্মীয় মডেল ফোটোগ্রাফার, তাঁর মুখ থেকে শুনেছি – “মাঝরাতে মেয়েরা আমার হোটেরঘরে কড়া নাড়ায়, উদ্দেশ্য তাঁর ছবিগুলি যেন মাস্টারপিস হয়। সেই কারণে তাঁর ‘চর্চিত’ শরীর ভেট দিতেও প্রস্তুত। শরীর মেলে ধরে ফোটোগ্রাফারকে বশ করতে চায়।”
স্খলিত পুরুষ বধ হয়, বিনিময়ে সে নারীর স্বপ্নপূরণ করার ব্রতী হন। নারীর অস্তিত্ব কি কেবল শরীরেই ! যোগ্যতা-গুণ থাকতে শরীর কেন ? সিঁড়ি অতিক্রম করতে নারীশরীর কেন ব্যবহৃত হবে ? মিডিয়ার কর্পোরেট হাউসগুলি বিজ্ঞাপন সংগ্রহের মতো পেশায় মেয়েদের নিয়োগ করা হয় এই কথা মাথায় রেখেই। বহু বেসরকারি ড্রিল হয়ে যায় মেয়েদের শরীরকে ব্যবহার করেই। নারী ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে নারীমাংসের চাহিদার জোগান দেন নারীরাই। নারীর মর্যাদাহানি হয়। নারীমুক্তি মানে কি শুধুই যৌনমুক্তি !
নারীশরীরকে যে পুরুষরা ব্যবহার করছে, সেটা নারী বোঝে না ? নারী কেন পণ্য হয় ? তাই কি নারীকে পণ্যের মতো নিজেকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতে হয় ? সঙ সাজতে হয় ? নারীর রুমাল ক্ষুদ্র হয়, নারীর ছাতা ক্ষুদ্র এবং পলকা হয়, নারীর জুতো পর্যন্ত পলকা, নারীর পোশাক ক্ষুদ্র হতে থাকে। নারী আরও মোহময়ী হয়। যে যার সাধ্যমতো কসমেটিক ঘসে ঘসে মোহময়ী হয়ে উঠতে চায় প্রতিদিন। নারীর কোনো নিজস্বতা নেই। নারী নকল ও কৃত্রিমতায় অভ্যস্ত। নারী জানে, নারী সব জানে। সঙ সাজার সংস্কার থেকে নারী বেরতে পারে না, বেরতে চায় না। কে যেন বলেছিল নারীর চাইতে পুরুষ প্রকৃতিভাবে সুন্দর। পুরুষকে সাজতে হয় না, নারীকে সাজতে হয়। সাজতেই হয়। নারী এত রং মাখে কেন !
নারী প্রসঙ্গে দুটো কথা প্রচলন আছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। একটি শ্রদ্ধার, নারী মায়ের জাত। আর-একটি অনুকম্পার, নারী পরের ভাগ্যে খায়। দেশভেদে তারতম্য থাকলেও পুরুষদের ধারণা দেওয়া হয় যে, তারা নারীদের ঊর্ধ্বতন এবং নারী তাদের অধস্তন ব্যক্তি। বিলীয়মান সামান্য কিছু মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই এই পুরুষতন্ত্র বিরাজমান হয়ে আছে। যেখানে নারী নিজের ভাগ্যে খায় আর পুরুষ নারীর ভাগ্যে বা তার অর্জনে খায় সেখানে কেবল পুরুষতন্ত্রের মহিমায় কোনো পুরুষ কি ঊর্ধ্বতন মর্যাদা দাবি করতে পারবে ? ধর্ম নারীকে পিষে মেরেছে। পুরুষ শাস্ত্রকারদের চিরন্তন অধস্তনতার বিধানে নারী আমৃত্যু পিতা, স্বামী ও পুত্রের অধীন-অভিভাবকত্বে থাকবে। এমন অবস্থা শুধু হিন্দু সমাজে নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল পিতৃতান্ত্রিক সমাজে প্রচলিত ছিল। “বাল্যে পিতুর্বশে তিষ্ঠেৎ পাণিগ্রাহস্য যৌবনে।/পুত্রাণাং ভর্তরি প্রেতে ন ভজেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্রতাম্” ।। স্ত্রীলোক বাল্যাবস্থায় পিতার অধীনে থাকবে, যৌবনকালে পাণিগ্রহীতার অর্থাৎ স্বামীর অধীনে থাকবে এবং স্বামীর মৃত্যু হলে পুত্রদের অধীনে থাকবে। (পুত্র না থাকলে স্বামীর সপিণ্ড, স্বামীর সপিণ্ড না-থাকলে পিতার সপিণ্ড এবং পিতার সপিণ্ড না থাকলে রাজার বশে থাকবে), কিন্তু কোনও অবস্থাতেই স্ত্রীলোক স্বাধীনতা লাভ করতে পারবে না। (৫/১৪৮)। কেন এই প্রহরা ? কীসের প্রহরা ? নারীর, না নারীর শরীরের ? পুরুষ-কেন্দ্রিকতায় নারীর প্রতি এই সম্পত্তি-ধারণা থেকেই হয়তো পুরুষের নারীসংরক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ভূত। অসতর্ক হলেই এ সম্পত্তি নষ্ট বা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই মনুশাস্ত্রে উক্ত হয় : “অস্বতন্ত্রাঃ স্ত্রিয়ঃ কার্যাঃ পুরুষৈ স্বৈর্দিবানিশম্।/বিষয়েষু চ সজ্জন্তঃ সংস্থাপ্যা আত্মনো বশে”।। স্ত্রীলোকদের আত্মীয় পুরুষগণের (অর্থাৎ পিতা, স্বামী, পুত্র প্রভৃতি যে সব পুরুষ স্ত্রীলোককে রক্ষা করার অধিকারী, তাদের) উচিত হবে না, দিন ও রাত্রির মধ্যে কোনও সময়ে স্ত্রীলোককে স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করতে দেওয়া (অর্থাৎ স্ত্রীলোকেরা যে নিজেদের ইচ্ছামতো ধর্ম, অর্থ ও কামে প্রবৃত্ত হবে তা হতে দেবে না)। স্ত্রীলোকেরা গান-বাজনা প্রভৃতি বিষয়ে আসক্ত হতে থাকলে তা থেকে তাদের নিবৃত্ত করে নিজের বশে রাখতে হবে। (৯/২)। ইসলাম ধর্মের পুরুষরা নারীকে এমন কিছু অধিকার দিয়েছিলেন, যেগুলি হিন্দু, খ্রিস্ট-ইহুদি ধর্মে দেয়নি। আবার নারীকে দাসী বানানোর প্রশ্নে পৃথিবীর সব ধর্মরেই এক রা।
“পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন…….স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং তাদের প্রহার করো।”(সুরা নিসা : ৩৪) “তোমাদের স্ত্রী তোমাদের শস্যক্ষেত্র, তাই তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে খুশি প্রবেশ করতে পারো।” (সুরা নিসা : ২২৩) “বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাদের ভালো লাগে দুই, তিন অথবা চার।”(সুরা নিসা : ৪) একদা বহুবিবাহ সব ধর্মেই ছিল। ১৯৫২ সালে হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট চালু করার আগে হিন্দু পুরুষরা একাধিক নারীকে বিয়ে করতে পারত। তার জন্য পূর্বের স্ত্রীর কোনো অনুমতি লাগত না। কৌশল্যা, কৈকেয়ী, সুমিত্রা – এই তিন নারী দশরথের স্ত্রী ছিলেন। দ্রৌপদ রাজার একমাত্র কন্যা দ্রৌপদী, কৌরব্যনাগের কন্যা উলুপী (ইনি পূর্ব-বিবাহিতা ছিলেন), মণিপুররাজ চিত্রবাহনের কন্যা চিত্রাঙ্গদা এবং কৃষ্ণ ভগিনী সুভদ্রা – এই চার নারী অর্জুনের স্ত্রী ছিলেন। কৃষ্ণের স্ত্রী তথা মহিষীদের মধ্যে আটজন ছিলেন প্রধান, যাদের ‘অষ্টভার্যা’ নামে অভিহিত করা হয়। এঁরা হলেন রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দি, মিত্রবৃন্দা, নগ্নাজিতি, ভদ্রা এবং লক্ষণা। এছাড়া কথিত আছে, কৃষ্ণ ১৬১০০ নারীকে নরকাসুর নামক অসুরের কারাগার থেকে উদ্ধার করে তাদের সম্মান রক্ষার্থে তাদের বিবাহ করেন। কুন্তির নির্দেশে ভীম স্ত্রী দ্রৌপদী থাকা সত্ত্বেও হিড়িম্ব রাক্ষসকে হত্যা করে রাক্ষসী হিড়িম্বাকে বিয়ে করেন। অবশ্য মহাভারত-রামায়ণের যুগে পুরুষরা যেমন একাধিক নারীকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করতে পারতেন, তেমনি নারীরাও একাধিক পুরুষকে বিবাহ করতে পারতেন। নিদেনপক্ষে একাধিক পুরুষের সঙ্গে দেহসম্ভোগ করতে পারতেন তারা। কুন্তি এমনই এক আদর্শ নারী, যিনি বিয়ে না-করেও একাধিক পুরুষের সঙ্গে দেহসম্ভোগে লিপ্ত হয়েছেন। সূর্যের ঔরসে কানীন কুন্তির গর্ভে কর্ণের জন্ম হয়, ধর্মের ঔরসে যুধিষ্ঠিরের জন্ম হয়, বায়ুর ঔরসে ভীম এবং ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুনের জন্ম হয়। সতীন মাদ্রী কুন্তীর এমন সিদ্ধান্তে উৎসাহিত হয়ে পড়ল। স্বামী পাণ্ডুর যৌন-অক্ষমতার কারণে মাদ্রীও সে সুযোগ ছাড়লেন না। তিনিও অশ্বিনীর বীর্য শরীরে ধারণ করে দুই পুত্র সহদেব ও নকুলকে জন্ম দেন। দিলীপের স্ত্রী সুদক্ষিণাও ঋষির বাড়িতে গিয়ে গর্ভধারণ করে রাজাকে পুত্রসন্তান উপহার দেন। রামায়ণ-মহাভারতের যুগ শেষ হয়ে গেল মনুসংহিতার যুগে এসে। মনু নারীকে ‘দেবী’, ‘সম্রাজ্ঞী’, ‘মা-বোনের জাত’ বলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে চার দেয়ালের মধ্যে ঢুকিয়ে দারজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন। রামায়ণ-মহাভারতের মানুষ-নারী মনুযুগে এসে দাসী-নারীতে রূপান্তরিত হল। “স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী ফলমূলের স্বল্পাহার দ্বারা দেহ ক্ষয় করবে, তবু পরপুরুষের নাম করবে না।”(মনুসংহিতা – ৫ : ১৫৭) “স্ত্রীর মৃত্যু হলে দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে স্বামী পুনরায় বিয়ে করবে।”(মনুসংহিতা – ৫ : ১৬৮) “লাঠি দিয়ে মেরে নারীকে দুর্বল করা উচিত,যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপরে আর কোনো অধিকার না থাকে।”(বৃহদারণ্যক উপনিষদ – ১ : ৯ : ২ : ১৪) নারী তো শুধু দাসীই নয়,ভয়ংকরীও বটে ! “তুলাদণ্ডের একদিকে যম, বায়ু,মৃত্যু, পাতাল, বাড়বানল, ক্ষুরধার বিষ, সাপ এবং আগুন রেখে অপরদিকে নারীকে ওজন করলে ভয়ানকত্বে সমান সমান হবে।”(মহাভারত – অনুশাসনপর্ব : ৩৮) “নারীরা জোঁকের মতো, সতত পুরুষের রক্তপান করে থাকে। মূর্খ পুরুষ তা বুঝতে পারে না, কেন-না তারা নারীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে স্ত্রী মনে করে, সেই স্ত্রী সুখসম্ভোগ দিয়ে বীর্য এবং কুটিল প্রেমালাপে ধন-মন সবই সবই হরণ করে নেয়।”(দেবীভাগবত – ৯ : ১) এখন প্রশ্ন : আপনি কি আস্তিক বা ধর্মবেত্তা ? আপনি নিশ্চয় মনে করেন এগুলি সঠিক নির্দেশ ? নির্দেশ সঠিক নয় ! তাহলে তো আপনি নাস্তিক। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই চান নারী মানুষের মর্যাদায় পদাভিষিক্ত থাক। এবং নির্দেশগুলি অবশ্যই অমান্য করবেন। আর যদি আপনি মৌলবাদকে মেনে নেন, তবে নিশ্চয় জানেন মৌলবাদ হল মানুষের বিকাশের বিরোধী। মৌলবাদ যেহেতু পীড়নবাদ, তাই নারীও তার পীড়নের একমাত্র লক্ষ্য। আপনি চাইলে শক্ত ঘাঁটি গাড়তে পারে মৌলবাদ। কারণ মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে নারীর মুখ আর দেখা যাবে না। হিজাব বা বোরখা বা একহাত ঘোমটায় কিম্ভুতকিমাকার হয়ে যাবে নারী। দেখা যাবে না বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে, দেখা যাবে কর্মস্থল থেকে কর্মস্থলে। নারী হবে নিষিদ্ধ এবং সবকিছুই নিষিদ্ধ হবে নারীর।
১৮৮৪ সালে ফ্রেডারিক এঙ্গেলস্ তাঁর ‘দ্য ওরিজিন অব দ্য ফ্যামিলি’, ‘প্রাইভেট প্রপার্টি অ্যান্ড দ্য স্টেট’ গ্রন্থে বলেন, শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে যেসব সমাজ প্রতিষ্ঠিত, যেখানে জনজাতির সবাই শ্রম দান করে এবং সব সম্পত্তি সম্প্রদায়ের মালিকানাভুক্ত, সেখানে নারী কোনো দ্বিতীয় স্থান ভোগ করত না। তিনি উল্লেখ করেন, ”নারীর অধস্তনতার অভ্যুদয় ঘটে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে যখন নির্দিষ্ট শ্রেণিসমাজ গড়ে ওঠে। এঙ্গেল্স্ এই মত পোষণ করেন যে, পুরুষ প্রাধান্য কম-বেশি বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতায় পরিলক্ষিত হয়, তা দুই লিঙ্গের মধ্যে কোনো দেহগত বৈশিষ্ট্যের জন্য নয়, বরং কালক্রমে তা ঐতিহাসিকভাবে নির্ধারিত হয়ে গেছে। শ্রেণীবিভক্ত সমাজে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরুষের ওপর বর্তালে নারীর অধস্তনতা বিকাশ লাভ করে।”
সময় বদলেছে, সমাজ কি বদলেছে ? মানুষ আধুনিক থেকে আধুনিকতম হচ্ছে, তবু কেন নারী দ্বিতীয় স্থানে ? কে দায়ী ? পুরুষ জাতি ? পুরুষতন্ত্র ? পুরুষতন্ত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নারীরা আর কতদিন নারীবাদী আন্দোলন করবেন ? নারীরা কী চাইছেন ? সমানাধিকার ? সমানাধিকার কে দেবে ? পুরুষ ? কেন, পুরুষ কেন দেবে ? অধিকার, স্বাধীনতা কি দেওয়ার জিনিস ? অর্জন করে নিতে পারবেন না ? লেডিস ট্রেন, লেডিস বাস, লেডিস টোটো, লেডিস কম্পার্টমেন্ট, মহিলা পুলিশ, মহিলা থানা, মহিলা সিট নারীকে কোন্ সমানাধিকার দিতে পারে ! এগুলি কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীকে পিছিয়ে রাখার হারিয়ে রাখার ফসল নয় ? নারী অবলা, নারী দুর্বল – নারীবাদীরা কী এইসব বিশেষণে খুশি ? খুশি না-হলে স্বতন্ত্র সুযোগগুলি ভোগ করেন কেন ? কেন প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি ? একদিকে অধিকার চাইতে চাইতে মুখে ফেনা তুলছেন, অন্যদিকে নারীর জন্য তৈরি করা স্পেশাল সুযোগগুলি ভোগ করছেন। স্পেশাল ? একদিকে “স্পেশাল” হয়ে থাকতে চাইবেন, উলটোদিকে সমানাধিকার চাইবেন। কোথায় পাবেন ? পৃথিবীর প্রচুর মহিলা কত কিছু করে ফেলেছে এবং ফেলছে। তাঁরা কোন্ “স্পেশাল” সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন সমাজের কাছ থাকে ? পাশাপাশি জাতিগঠনে নারীকে অংশগ্রহণ করতে হবে। সবকিছু বাবা-দাদা-স্বামী-পুরুষরা করে দেবে – এই প্রত্যাশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সদিচ্ছাপূর্বক নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ(যোগ্যতার বিচারে)। অন্যদিকে নারী-পুরুষ সম্পর্কে পরিবর্তন আনতে হবে। নারী-পুরুষের সম্পর্ককে অধঃস্তন-মনিব না-ভেবে একে অপরের শরিক হিসাবে গণ্য করলে নারী-পুরুষ উভয়ই উপকৃত হবে। তার জন্য দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে নারীকে। নারীদের সমানাধিকারের দাবিতে বিয়ের আইনটার বদলেও দাবি তুলতে হবে। বলুন ভরণপোষণর দায়িত্ব উভয়ের, কেবলই পুরুষের নয়। খোরপোশ উভয়েরই থাকবে, একতরফা কেন ? বিয়ে মন্ত্রে কেন বর একাই দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করবে ? সমানাধিকার মানে কি শুধুই নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার অধিকার ? এ পরিবর্তনে যেমন পুরুষকে পরিবারের গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালনের ভাগিদার হতে হবে, তেমনি নারীকেও সংসার পরিচালনার দায়িত্ব নিতে হবে। সমানাধিকার দায়িত্ব এড়াবেন কেন ? একজন পুরুষ যদি সংসার-স্ত্রী-সন্তানের দায়িত্ব পালনে উদাসীন থাকে এবং তা যদি আইনত দণ্ডনীয় হয়, নারীর ক্ষেত্রে তা নয় কেন ? কাঁধে কাঁধ মেলাবেন কীভাবে ? অসমান কাঁধ মিলবে কেন ?
নারী অধিকার প্রশ্নে বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ডেভিড বারস্ মিয়ানের সঙ্গে আলাপচারিতায় নোম চোমস্কি (Noam Chomsky) ) বলেন, “আপনি যদি আমার ঠাকুরমাকে জিজ্ঞাসা করতেন তিনি নিপীড়িত কি না, আপনি কী বলছেন তিনি সে কথা বুঝতে পারতেন না। আপনি যদি আমার মাকে জিজ্ঞাসা করতেন, তিনি জানতেন যে তিনি নিপীড়িত এবং তিনি ক্ষুব্ধ, কিন্তু প্রকাশ্যে এ নিয়ে প্রশ্ন করতেন না। তিনি আমার বাবা ও আমাকে রান্নাঘরে যেতে দিতেন না, কারণ সেটা আমাদের কাজ ছিল না। আমাদের কাছ থেকে আশা করা হতো লেখাপড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তিনি অন্য সব কাজ করবেন। এখন আপনি আমার কন্যাদের জিজ্ঞাসা করুন যে, তারা নিপীড়িত কিনা, তারা কোনো আলাপ করবে না। তারা সোজা বাড়ি থেকে আপনাকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দেবে”। পারবেন লাথিটা দিতে ? আমেরিকার ওই কন্যাটি আর আপনি নিজেকে এক মনে করেন?
জগতে পুরুষই রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, ধর্মে, অধর্মে, সমাজে, সংসারে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি, বিছানাতে মহান মস্তান হয়ে বসে আছে। এই রীতিনীতিগুলি পুরুষময় করে রাখার জন্য পুরুষেরা ভয়ংকর রকম অ্যাকটিভ। অপরদিকে নারীগণ রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, ধর্মে, অধর্মে, সমাজে, সংসারে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি, বিছানাতে ভয়ানকভাবে প্যাসিভ। প্যাসিভ ভূমিকায় কতটুকু পাওয়া যায় স্বাধীনতার স্বাদ ? পুরুষ বা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যুগ যুগ ধরে নারীর মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দিয়েছে ত্যাগী হওয়ার মন্ত্র। নারীর ত্যাগই পুরুষের সবচেয়ে বেশি প্রার্থনীয়। নারী তার নিজস্বতা, তার পৃথক অস্তিত্ব, তার সাধ, তার সুখ সবই সানন্দে ত্যাগ করবে এবং এই ত্যাগকেই পুরুষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভোগ করবে। নারীর ত্যাগের মতো এতো সুস্বাদু আর উপাদেয় কোনও খাদ্য এ জগতে আর নেই। সেই যুপকাষ্ঠে বলি দিয়েছেন “মা” নামক একটি নারী। মহান মহান সব বক্তৃতা সংরক্ষিত হয়ে আছে মাকে ঘিরে। পৃথিবীর সব নারীই অবশেষে “মা”। স্যাক্রিফাইসের পরাকাষ্ঠা। নারী তথা মা রূপী স্থায়ী দাসী -- স্বামীর কাছে, সন্তানের কাছেও। সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে “স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে – “উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্যের গৌরব অধিক, একশত আচার্যের গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।” ‘‘মাতৃ দেব ভব''৷ অর্থাৎ মা দেবী স্বরূপিনী, জীবন্ত ঈশ্বরী৷ তা ছাড়া হিন্দুধর্মে মহাশক্তি, আদিশক্তি, রক্ষাকর্ত্রীর ভূমিকায় আমরা যাঁদের পেয়েছি, তাঁদের কিন্তু আমরা মাতৃরূপেই চিনেছি৷ এ জন্য কুসন্তান বলা হলেও, কুমাতা কখনও বলা হয় না৷ ইসলামে নবি মোহাম্মদ বলেছেন ‘মায়ের পায়ের নীচে বেহেস্ত' পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। নারীর সব অধিকার, সব স্বাধীনতা মায়ের রোলেই পরিসমাপ্তি ঘটে যায়। মাতৃ-মাহাত্ম্যেই নারীর স্বর্গ। নারীর ক্ষমতায়নের খতম। মাহাত্ম্য মহিমায় মায়েদের বন্দিদশা, বাবারা মুক্ত।
বাংলাদেশের বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান এক প্রবন্ধে লিখেছেন, “সাম্যবাদ সূচনালগ্ন থেকে নারীমুক্তির কথা বলে আসছে এবং সে সঙ্গে এও বলেছে যে, পুঁজিবাদী সমাজ নির্মূল না হলে নারী-অধস্তনতা দূর করা যাবে না। নারীবাদ ও সাম্যবাদের মধ্যে কিছু সাদৃশ্য থাকলেও দুই মতবাদের বিশ্বধারণা দুই রকম। এ ক্ষেত্রে মানবসমাজ লিঙ্গভেদে স্বতন্ত্র ও পৃথক, অন্য ক্ষেত্রে পার্থক্য বৈষম্য সামাজিক শ্রেণিবন্ধতার কারণে। নারীবাদ তার আন্দোলন স্বতন্ত্র রাখতে চায়। তার আশঙ্কা সাম্যবাদ পুরুষতন্ত্রের আর-এক রূপ”। দেশ নাকি এগোচ্ছে। কীভাবে এগোচ্ছে ? কোথায় এগোলো ? মজবুত উন্নয়নের কথা বলি তাহলে আমাদের সামনে উঠে আসে ‘অর্থনৈতিক সমতা’, ‘সামাজিক সমতা’ এবং ‘পরিবেশগত সমতা’-র কথা। আর এই তিন সমতা পুরোপুরি নির্ভর করে দেশের নারী এবং পুরুষের সমান অংশগ্রহণের উপর। দেশ যদি সত্যিই এগিয়ে থাকে তাহলে এবার প্রশ্ন করা যাক, আমাদের সমাজের নারী এবং পুরুষের কি এখনও সমান অংশীদারিত্ব রচিত হয়েছে ? ড. স্টিভেন নামের এক অর্থনীতিবিদ মোড়ল দেশগুলির অর্থনৈতিক অচলাবস্থার প্রশ্নে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি দিকে আলোকপাত করেছেন এই । তিনি গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে, পুঁজিবাদী এই বিশ্ব ধাক্কা খাওয়ার অন্যতম কারণ হল দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরুষ প্রধানের অর্থনীতির ভুলের কারণে এই ধস সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু নারীরা ওই অর্থে ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষে অবস্থান করেনি তাই নারীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিকই হোক আর অপ্রাতিষ্ঠানিকই হোক -- সকলক্ষেত্রে নারীদের জ্ঞানত এবং অজ্ঞানত পিছিয়ে থাকার কারণেই এইসব নানামুখী সমস্যা। ঠিক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে যে প্রশ্নটি উত্থিত হয়, তা হল -- আত্মনির্ভরশীল নারী এবং নারীর স্বাধীনতা কি একই বিষয় ? উপেক্ষিত পরনির্ভরশীল নারী কি আত্মনির্ভরশীল মর্যাদাপূর্ণ নারী উন্নীত হবেন না ? নাকি প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে সিগারেট ফোকা, মদ্যপান করে রাজপথে বেলাল্লাপনা করা, অর্ধনগ্ন হয়ে বিচরণ করা এবং মুঠোমুঠো এমার্জেন্সি পিল গলার্ধকরণ করার নারী স্বাধীনতা ভোগ করবেন !
‘নারীর অধিকার’ বিষয়টিও পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক। কারণ পুরুষই সেই অধিকারগুলি নারীর জন্য ঠিক করে দিচ্ছে, যে অধিকারগুলি একবিংশ শতাব্দীর এই সন্ধিক্ষণে নারীদের দিলেও পুরুষের ক্ষমতাতান্ত্রিকতায় কোনো ছেদ পড়বে না,উলটে নারীকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যাবে। এই নারী অধিকারের অন্তর্নির্হিত মনোজাগতিক দাসত্বের সোজাসাপটা উদাহরণ আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন চলচ্চিত্র-বিজ্ঞাপনী চিত্রে দেখতে পাই। নগ্ন নারীর ছড়াছড়ি। কথায় কথায় কাপড় খুলে ফেলছেন। নারী ক্রমশ নিজেকে অসম্মানিত করছে, ঘৃণিত করছে। কিংবা বলা ভালো, পুঁজিবাদী ব্যবস্থা তার নিজের শরীরের একটি অংশ হিসাবে নারীকে গ্রহণ করছে সত্যি। কিন্তু সেই নারীকেও অধিকারের প্রশ্নে পণ্য বানিয়ে দিচ্ছে, যাতে সেই পণ্য-নারী পুঁজি-পুরুষের বিরুদ্ধে মাথা তুলে না-দাঁড়াতে পারে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে আদতেই ‘নারীর অধিকার’ নারীর আত্মনির্ভরশীলতা এবং তার স্বাধীনতা অর্জনের পথে কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়।
স্বাধীনতার বিষয়টি মূলত লৈঙ্গিক নয়। পুঁজি তার স্বার্থে স্বাধীনতাকে বিভিন্ন মাত্রায় দেখায়, যারই মূর্তরূপ নারী স্বাধীনতা কিংবা পুরুষ স্বাধীনতা। যে কারণে মানুষের স্বাধীনতা দরকার, সেই একই কারণেই নারীরও স্বাধীনতা দরকার। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মাত্রই নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হবেন। একজন নারীদের বন্দি করে রাখার মানে একজন মানুষকে বন্দি করে রাখা। সর্বোপরি আত্মনির্ভরশীলতা নয়, নারী স্বাধীনতা নয় -- মানুষ হিসাবে একজন নারীও স্বাধীন। রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ব্যাপারে সব নাগরিকের সমান সুযোগ থাকবে এবং কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক রাষ্ট্রের কর্মে নিয়োগ বা কর্ম লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না অথবা তাঁর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। যে আইনের বিধান বা পরিণতি চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে তা অন্যায্য এবং অযৌক্তিক হলে সংবিধানের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশের নারী মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন চেয়েছিলেন সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশ নারীসমাজকে শিক্ষায়, জ্ঞানে বিজ্ঞানে আলোকিত করতে, সামাজিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকাকে দৃঢ়তর করতে। নারীদের নিয়ে তার সকল কর্মকাণ্ড ও সাহিত্যে সে কথার প্রতিফলন ঘটে। তিনি লিখেছেন – “আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কী রূপে ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খুঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ ও আমাদের স্বার্থ ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবন আদর্শ ও লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই”। কিন্তু দুঃখের বিষয় সমস্ত কূপমণ্ডূকতা থেকে নারী মুক্তির জন্য তার কঠোর সংগ্রামকে আজ নারী স্বাধীনতার নামে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে একশ্রেণির মানুষ। যারা পাশ্চাত্য ধ্যান ধারণাকে, সংস্কৃতি, উশৃঙ্খলতা, বেপরোয়া জীবনযাপন ও পোশাক-পরিচ্ছদকেই নারী স্বাধীনতার মানদণ্ড ধরে নিয়ে বেগম রোকেয়ার অনবদ্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিশ্রিত করে এক জগাখিচুরি অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তাদের সঙ্গে বেগম রোকেয়ার উদ্দেশ্য ও আদর্শের কোনো মিল নেই এবং কোনো-কোনো ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত।
ভার্জিনিয়া উলফ্ তাঁর “এ রুম অফ ওয়ান্স ওন” বলেছেন, কেন ছেলেরা মদ্যপান করে মেয়েরা নয় ? কেন যৌন পার্থক্যে একাংশ গৌরবান্বিত অন্য অংশ হীন ? বস্তুত দাসসমাজ ধ্বংস হওয়াতে দাসেরা মুক্ত হয়েছে, নারীরা হয়নি। সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদের উত্তরণ ঘটলে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক মানসিকতা দেখা দিল। কিন্তু নারী যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ ঘটার পরেও শ্রমিকশ্রেণি রাজনৈতিক মুক্তি লাভ করেছে, নারীমুক্তি অর্জিত হয়নি। ব্যতিক্রম দু-একজন নারীর কোনো কোনো দেশে রাজনৈতিক কর্তৃত্বে আসার অর্থ হল পুরুষতন্ত্রের রথের নারী-সারথী মাত্র।রাশিয়ায় প্রায় ১০০ বছর হল লেনিন নারীদের সম-অধিকারের আইনগত ও সমাজগত নিশ্চয়তা সৃষ্টি করে থাকলেও আজও রাজনৈতিক নেতৃত্বে সামরিক কর্তৃত্বে নারীর ভূমিকা প্রায় অনুপস্থিত। আমেরিকায় নারীমুক্তি আন্দোলনের বিরাট ইতিহাস বহু অধিকার লাভকে বাস্তবায়িত করেছে। কিন্তু আজও কোনো নারী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা রাষ্ট্রপতি হতে পারেনি। সেখানকার সুপ্রিম কোর্টে আজও কোনো নারী বিচারক পাওয়া যায়নি। মুক্তমনা প্রাবন্ধিক হুমায়ুন আজাদ তাঁর “নারী” গ্রন্থে অবতরণিকায় লিখেছেন – পৃথিবী জুড়েই মানুষ নিজের কাঠামোতে বাঁচে না ; বেঁচে থাকতে বাধ্য হয় অন্যের কাঠামোতে; ওই কাঠামো তাকে বন্দী করে রাখে। অন্যের কাঠামোতে সবচেয়ে বেশি বাস করে নারী; অন্যের কাঠামোতে বাস করে নারী বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।
তাহলে নারীমুক্তি কীভাবে আসবে ? মার্গারেট মিউ তাঁর “সেক্স অ্যান্ড টেম্পারমেন্ট” গ্রন্থে বলেছেন, স্ত্রী-পুরুষ বৈষম্যের সীমারেখাকে ভেঙে দিয়ে তাকে শ্রেণিগত বিরোধের সীমারেখায় পরিবর্তিত করা প্রকৃত অগ্রসর অগ্রসর পদক্ষেপ নয়। সিমন দ্য বোভেয়ার তাঁর “সেকেন্ড সেক্স”-এ নারীমুক্তি আন্দোলনের এক অন্য দিশা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “পুরুষ-বিরোধিতার নারীত্ব নিয়ে আর বিবাদের দরকার নেই। এখন প্রয়োজন পরস্পরকে বোঝা”। তাহলে কেন সমাজের অতি ক্ষুদ্র অংশ সমস্ত রকম সুবিধাভোগকারী কিছু নারীদের ‘নারীবাদ’ ‘নারী স্বাধীনতা’ বলে চিৎকার-চেঁচামেচি করা ছাড়া একটা বৃহৎ অংশে সেই বার্তা বা সেই সুসমাচার পৌঁছে দেওয়া যায়নি। মহিলা সংরক্ষিত ট্রেন, মহিলা সংরক্ষিত ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট, মহিলা সংরক্ষিত বাস, মহিলা সংরক্ষিত বাসের সিট বা বসার আসন, টিকিট কাউন্টারে মহিলাদের আলাদা ব্যবস্থা, বাসের কডাক্টার ‘আস্তে লেডিস’ বললে আপত্তি না-তোলা – এসব ব্যবস্থা যতদিন-না নির্মূল হবে ততদিন পর্যন্ত অবস্থার কোনো বদল আসবে না। আসতে পারে না। আধুনিকা নারী তো দূরের কথা, আমি চরম নারীবাদী মহিলাকেও দেখেছি ‘আস্তে লেডিস’ উপভোগ করে। সুবিধা পাওয়ার আনন্দে তিনি ভুলেই যান, এই ‘আস্তে লেডিস’ শব্দযুগল কতটা অপমানের, কতটা লজ্জার ! ‘আস্তে লেডিস’ শুধু শব্দযুগলই নয় – ‘আস্তে লেডিস’ মানে দুর্বল, অশক্ত, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী। প্রতিবাদ করুন। সমীহ আদায় করুন সমাজের। মেয়েরা যদি কন্ডোম শিল্পে কন্ডোম তৈরিতে পারদর্শী হতে পারে, স্বাস্থ্যজগতে নার্সিং সার্ভিসে শুধুই নারী কেন ? পুরুষ কেন নয় ? ছেলেদের স্কুলে মেয়েরা শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হলে, মেয়েদের স্কুলে পুরুষ-শিক্ষক নিযুক্ত হবে না কেন ? মৌরসীপাট্টা থাকবে কেন ?আসলে ট্যাবু। ট্যাবু ভেঙেও বেরতে হবে। ট্যাবু ভেঙে বেরতে না-পারলে দাসত্ব মানতেই হবে পুরুষকেও, নারীকেও। মুক্তি শুধু নারীই প্রয়োজন নেই, মুক্তির প্রয়োজন নারী-পুরুষ উভয়রেই। পুরুষতন্ত্রই যেহেতু নারীর শোষক, তাই সামাজিক বিপ্লবের ফলে পুরুষ কিছুটা মুক্তি পেলেও, নারী কিছুই পায় না।
মার্কসীয় ধারণায় – পুঁজিবাদ এবং পুরুষতন্ত্র অবিচ্ছেদ্য। একটি আর-একটিকে শক্তিশালী করে। ব্যক্তিমালিকানার বিলুপ্তির দ্বারাই নারী-শোষণ বন্ধ করা সম্ভব। শোষণের সমাজকাঠামো পালটে মানুষের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলেই সম্ভব নারী-পুরুষের সাম্য। সমাজকাঠামো পালটালে নারীমুক্তি এমনিই আসবে। মার্কসীয় নারীবাদে পরিবার সংগঠনটির মৌলিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। পরিবারের সমস্ত রকম আর্থিক দায়-দায়িত্ব বহনের ভার রাষ্ট্রের। ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মালিক ও দাসীর হবে না। সাম্যবাদে এক স্বামী-স্ত্রীর পরিবার থাকবে। তবে তা থাকবে সামাজিক একক হিসাবে। সাম্যবাদের বিবাহে থাকবে না কোনো আর্থিক চুক্তি, না-থাকবে কোনো ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার চুক্তি।
মোদ্দা কথা হল, নারীকে মুক্ত হতে হলে সমাজের সবরকম কর্তৃত্বে নির্দ্বিধায় অংশ নিতে হবে। গভীর আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়েই আসবে স্বাধীনতা। পৃথিবী থেকে বেশ্যাবৃত্তিকে হয় নির্মূল করতে হবে,নয় তাঁদেরকে সম্মানিত করতে হবে। সমাজের যে অংশ যৌনবৃত্তি করে সেই অংশ কখনো সম্মানিত হতে পারে না। "নারী নরকের দ্বার" হিসাবেই ঘৃণিত হতে থাকবে। শুধু যৌনতা নয়, মেধা এবং মননশীলতা দিয়ে সমাজের সবাইকে আকৃষ্ট করতে হবে। দক্ষতায় অগ্রদূত এবং অপরাজেয় হতে হবে। প্রশাসনিক বিভাগ, পুলিশ, মিলিটারির মতো ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে অংশগ্রহণ করতে হবে।সেক্ষেত্রে (কোনো ক্ষেত্রেই নয়) নারী বলে কোনোপ্রকার অতিরিক্ত সুযোগ নেওয়া চলবে না। রিজার্ভে নয়, সরাসরি ময়দানে নেমে কাজ করতে হবে নারীদেরকে। শুধুমাত্র মেয়ে অপরাধীদের জন্য নয়, নারী পুলিশকে কাজ করতে হবে সকলের জন্য। কোনো অভিযানে ১০ জন পুলিশ বেরলে তার মধ্যে কম করে ৫ জন মহিলা থাকবে। মানবজাতির অর্ধেক মস্তিষ্ক সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির ভূমিকায় প্রায় নিষ্ক্রিয়। তাকে যদি সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করানো যায় তবে পৃথিবীতে যে পরিবর্তন ঘটবে তা হবে মানব-ইতিহাসে যে-কোনো বিপ্লবের চাইতে বৃহৎ ঘটনা। মুক্ত দুনিয়ার আকাশের নীচে পরস্পরের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে পরিপূর্ণ দুটি সত্তা – নর ও নারী। অধিকার, কর্তব্য, দায়িত্ব বিষয়ে যতদিন-না নারীদের সচেতনতা আসবে ততদিন পর্যন্ত “নারী স্বাধীনতা” শুধুমাত্র সেমিনারে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েই থাকবে, প্রয়োগ হবে না – মুক্তিও আসবে না। বিপ্লব চাই, বিপ্লব।
মুক্তি কি আসেনি ? কতটুকু এসেছে ? কীভাবে হল নারীর মুক্তি, নারীর উত্থান ? কেউ দয়া করে হাতে তুলে দেননি। নারীরা এককভাবে নারীর ইতিহাস রচনা ছাড়াও নারীর ইতিহাস রচনায় প্রথম দলবদ্ধ প্রচেষ্টা ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে 'ইউনাইটেড ডটার্স অফ দ্য কনফেডারেসি' থেকে। এই সময়ে যখন পুরুষ ঐতিহাসিকরা যুদ্ধ ও সেনাপতিদের ইতিহাস রচনায় ব্যস্ত। 'ইউনাইটেড ডটার্স অফ দ্য কনফেডারেসি' প্রচেষ্টায় নারীদের গল্প সংগ্রহ হতে থাকে। নারীরা নারীবাদী কার্যক্রম,কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বের উপর জোর দেন। তাঁদের প্রতিবেদনে উঠে আসে -- যখন পুরুষেরা যুদ্ধে চলে যায় নারীরা দায়িত্ব গ্রহণ করত, খাদ্য অন্বেষণ করত, ফ্যাক্টরিতে তৈরি পোশাক অপর্যাপ্ত হলে চরকা দিয়ে পোশাক তৈরি করত এবং কৃষি জমি ও উদ্যানের কাজ পরিচালনা করত। পুরুষরা পাশে না-থাকার ফলে তাঁরা বিপদের সম্মুখীন হত।
এরপর ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন আইনে নারীদের সম-অধিকার রক্ষিত হয়েছে। নারীরা যুগ যুগ ধরে গৃহস্থালির কাজ, সন্তান জন্ম ও লালন পালন, সেবিকা, মা, স্ত্রী, প্রতিবেশী, বন্ধু ও শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। যুদ্ধকালীন সময়ে নারীদের দিয়ে শ্রমবাজারে এমন কাজও করানো হয়েছে, যা পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তারা তাদের চাকরি হারায় এবং তাদের পুনরায় গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজে নিয়োজিত হয়।
রাশিয়ায় নারীর ইতিহাস রচনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে জারদের যুগ থেকে। পুশকিনের লেখার মাধ্যমে তা সকলের নজরে আসে। সোভিয়েত যুগে সমতার আদর্শে নারীবাদের সূচনা হয়। কিন্তু এর প্রয়োগে এবং গৃহের কার্যাবলিতে পুরুষদের কর্তৃত্ব প্রদর্শন করতে দেখা যেত। ১৯৯০ এর দশকে নতুন সাপ্তাহিকী, বিশেষ করে "ডায়লগ উইথ টাইম, অ্যাডাম অ্যান্ড ইভ" নারীর ইতিহাস এবং সাম্পতিককালে জেন্ডার ইতিহাস উসকে দেয়। জেন্ডার মতবাদের বিকাশের ফলে নারীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান থেকে লিঙ্গ পার্থক্য ধারণায় নজর চলে আসে। জেন্ডার মতবাদের ইতিহাস লেখনীকে আরও গভীর বিতর্কের দিকে নিয়ে যায়। ব্যক্তিগত, স্থানীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে একত্রিত করে সাধারণ একটি ইতিহাস রচনায় উদ্বুদ্ধ করে । জাপানি নারীদের ইতিহাস ঐতিহাসিক গবেষণায় উঠে আসে বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে। ১৯৪৫ সালের পূর্বে নারীর ইতিহাস নিয়ে কোনো আলোচনা হয়ন। এমনকি এরপরেও অনেক জাপানি ঐতিহাসিকগণ জাপানি ইতিহাসের অংশ হিসাবে নারীর ইতিহাসকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক ছিলেন। ১৯৮০ এর দশকের নারীর প্রতি সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে আসতে থাকে। জাপানি নারীর ইতিহাস লেখনের সুযোগ দেওয়া হয় এবং নারীর ইতিহাসকে একাডেমিক পাঠ্যক্রম হিসাবে গ্রহণ করা হয়।
আধুনিক বিশ্ব মহামন্দা ছড়িয়ে পড়লে পুরুষদের বেকারত্ব, দারিদ্র ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার প্রয়োজনে নারীদের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। নারীদের প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল গৃহস্থালির কাজ করা। পারিবারিক আয়ের কোনো নির্দিষ্ট উৎস না-থাকায় নারীদেরও খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করতে হয়। পরিবারের ভরণপোষণের দিকে নজর দিতে গিয়ে সন্তান না-নেওয়ায় প্রায় সব স্থানে জন্মহার কমতে থাকে। ১৪টি বড়ো দেশে জন্মহারের গড় কমে দাড়ায় ১২%, যেখানে ১৯৩০ সালে প্রতি হাজারে জন্ম হার ছিল ১৯.৩% তা ১৯৩৫ সালে ১৭% নেমে আসে। কানাডায় অর্ধেকের বেশি রোমান ক্যাথলিক নারী চার্চের শিক্ষাকে অমান্য করে এবং জন্মহার রুখতে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে।
এশিয়ার ইতিহাসে নারীর ভূমিকা অল্প, তবে বিশেষজ্ঞরা চিন, জাপান, ভারত, কোরিয়া ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী দেশের নারীদের অবদানের উপর জোর দিয়ে থাকেন। নারীর ইতিহাস হল এমন এক ধরনের শিক্ষা যেখানে নারীরা ইতিহাসে কী ভূমিকা পালন করেছেন এবং কোন্ উপায়ে তা করেছেন তা বিবৃত হয়। লিপিবদ্ধ ইতিহাসে নারীর অধিকার আদায়ের ইতিহাস,একক এবং দলগতভাবে ইতিহাসে নারীদের গুরুত্ব পর্যালোচনা, এবং তাদের উপর ঐতিহাসিক ঘটনাবলির প্রভাব এই শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। নারীর ইতিহাস শিক্ষায় দেখা যায় অনেক রেকর্ড পাওয়া যায় না বা তাদের অবদান এবং তাদের উপর ঐতিহাসিক ঘটনাবলির প্রভাব উপেক্ষা করা হয়। ফলে নারীর ইতিহাসে অনেক ক্ষেত্রেই সংশোধনের প্রয়োজনীতা দেখা যায়।
১৮৭০ সালের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি প্রথম বিভিন্ন পেশায় জড়িত নারীদের সংখ্যা গণনা করে। এতে দেখা যায় ভিক্টোরিয়ান যুগের সকল মার্কিন নারীরা তাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে বা কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ ছিলেন না। মোট কর্মীর মধ্যে নারীর সংখ্যা ১৫% (১২.৫ মিলিয়নের মধ্যে ১.৮ মিলিয়ন)। তাদের এক-তৃতীয়াংশ ফ্যাক্টরির কাজে নিয়োজিত ছিল এবং বাকিরা শিক্ষা দান, কাপড় বোনা, দর্জির কাজে নিয়োজিত ছিল। সে সময়ের দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষক ছিল নারী। তাদের মধ্যে লোহা ও ইস্পাতের কাজে ৪৯৫ জন, খনিতে ৪৬ জন,করাতকলে ৩৫ জন, তেলকূপ ও শোধনাগারে ৪০ জন, গ্যাসের কাজে ৪ জন এবং কাঠকয়লার ভাঁটিতে ৫ জন, জাহাজের কাজে ১৬ জন, টিমস্টার হিসাবে ১৯৬ জন, তার্পিন তেল শ্রমিক হিসেবে ১৮৫ জন, পিতল শ্রমিক হিসাবে ১০২ জন, নুড়ি ও লেদমেশিন নির্মাতা হিসাবে ৮৪ জন, স্টক-হার্ডার হিসাবে ৪৫ জন,বন্দুক ও তালা মিস্ত্রি হিসাবে ৩৩ জন, শিকারি ও ফাঁদপাতার কাজে ২ জন নিয়োজিত ছিল। এছাড়া ৫ জন আইনজীবী, ২৪ জন দন্তবিদ,এবং ২,০০০ জন ডাক্তার ছিল।
পাণ্ডিত্যের প্রায় সবগুলি কেন্দ্রই যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে। যেখানে নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গ সমর্থনকারী ঐতিহাসিকরা সামাজিক ইতিহাসের নতুন প্রগতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। নারী স্বাধীনতায় সক্রিয় কর্মীরা নারীদের অভিজ্ঞতালব্ধ অসমতা ও নিপীড়ন নিয়ে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন তাঁদের পূর্বনারী-প্রজন্মের জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়াটা বাধ্যতামূলক। ইতিহাস মূলত লেখা হয়েছে পুরুষের হাতে এমনকি গণপরিবেশের যুদ্ধ, রাজনীতি, কূটনীতি এবং প্রশাসননীতিতেও পুরুষের সক্রিয়তার গল্পই উঠে এসেছে।
বলাই বাহুল্য, নারীর এ ইতিহাস সম্পূর্ণ নয়,আংশিক। আংশিক ইতিহাস কখনোই পূর্ণাঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করে না। এক্ষেত্রেও করেনি। সত্যিই কি নারীর সত্যিকারের ইতিহাস লেখা হয়েছে ?নাকি নারীর ইতিহাসের মুখোশে যুগপৎ সেই পুরুষেরই ইতিহাস ?

সেকুলার

নতুন বাসায় উঠেছি। কিন্তু এখানে বড্ড বেশি আরশোলা। আমি এমনিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী।কিন্তু আমার দিক থেকে প্রতিরোধের আশংকা না থাকাতে হতভাগাদের সংখ্যা বেড়ে অ্যামন দশা দাঁড়িয়েছে যে বাসাতে হয় আমি থাকবো নাহয় আরশোলা থাকবে। আর আরশোলাদের সর্বত্র অবাধ গতি এবং কিচ্ছুতে অরুচি নেই। সেদিন বই এর সেলফ থেকে একটা কবিতার বই নামাতে গিয়ে দেখি বই এর পাশ দিয়ে আরশোলা বেরোচ্ছে। আরশোলাদের মধ্যে এ ব্যাটা নিশ্চয় সাহিত্য প্রেমিক। তাই ক্ষমা করে দিলুম। যেদিন দেখলাম এডুকেশনাল স্ট্যাটিসটিকসের বই এর মাঝেও ব্যাটারা উঁকি দিচ্ছে,সেদিনও কিছু মনে করিনি।ভাবলাম নির্ঘাত কবিতা পড়ে গা গুলোচ্ছে তাই একটু খানি অঙ্ক কষে মাথাটা সারিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু যেদিন দেখলাম যে ডাইনিং টেবিলের উপর অঢাকা চিকেন তন্দুরিতেও ব্যাটারা চুমু খাচ্ছে,সেদিন আর মাথা ঠান্ডা রাখা গেলোনা। বাজার থেকে আগুন না বেগুন কি একটা স্প্রে কিনে আনলাম। দোকানদার বলল যে স্প্রে করলেই আরোশোলাগুলো দলে দলে এসে সুইসাইড করবে।ঠিক যেমন আমার গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে আপনি সুইসাইড অথবা আমাকে খুন,দুটোর মধ্যে যেকোনো একটা করতে চাইবেন।
আমি মেশিনটার হাল হকিকত বুঝছিলাম। এমন সময় কনক,আমার কাজিন রুমে ঢুকলো।
‘কি ব্যাপার দাদা,সাত সকালে পোকামারা বেগন স্প্রে নিয়ে বসে আছো?’, কনকের জিজ্ঞাসা।
‘দেখছিস না বাসাতে কিরকম আরশোলার উপদ্রব।আরশোলা বিতাড়নের উদ্দেশ্যেই এটা কিনেছি’।আমি উত্তর দিলাম।
কনক স্প্রে’টা হাতে নিল, ‘কিন্তু এটাতে কি কাজ হবে দাদা?’
‘হরবখত হবে।দেখছিস না মাত্র তিন মাসের আগে তৈরী প্রডাক্ট’।আমি ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট টার দিকে দেখালাম।
‘আহা,ওই জন্যই তো বলছি যে কাজ হবে কিনা ভেবে দ্যাখো’।
আমি এমনিতেই বুদ্ধির ব্যাপারে মদন মিত্রের সমগোত্রীয়।।তার উপরে এমন হেয়াঁলি মার্কা উত্তর।বললাম,
‘ঝেড়ে কাশ দেখি’।
‘আরে দাদা,এই স্প্রে'টাতো ভারত থেকে ইম্পোর্ট, হিন্দুদের তৈরী। কিন্তু আরশোলাগুলো যদি অন্য ধর্মের হয়, তাহলে তো বাংলাদেশে এই স্প্রে ডিজেবল।
কিছুই বুঝি না এমন টিউবলাইটের ভাব ধরে বললাম, বুঝিয়ে বল দেখি!!
দেখছো না বিশেষ ধর্ম বাদে অন্য ধর্মের যা কিছু আছে সব বাতিল করে দেয়া হচ্ছে। যেমন এই কয়েকদিন আগেই পহেলা বৈশাখ হিন্দু সংস্কৃতি বলে মোল্লাগিরি চলেছে, দেশেতো ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে ভেঙে ফেলা হচ্ছে, পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু লেখকের লেখা বাদ দেয়ার দাবী উঠছে, শিল্প হারাম, পোষাক হারাম, আইন আদালত সবকিছু কোরান সুন্নাহ আর হারাম-হালালের বোতলে চলছে, আরো কত কিছু...। এই যে কিছুদিন আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেবার অভিযোগে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাই বলছিলাম আর কি...!!!

ধমক দিয়ে বললাম, " জানিসনা এসব কথা শুনলে, চিন্তা করলে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাবি!! ধরে নিবি বাংলাদেশ ও তার স্বাধীনতার ইতিহাসে অমুসলিমদের কোন অবদান নেই, তারা আশ্রিত। এসব না ভেবে এখন যা একটা পেইনকিলার খুজে পাস কি না দেখতো।"
কথাশেষে এবার স্প্রে'টা হাতে নিয়ে দেখি একটিও আরশোলা নেই, সবগুলো পালিয়েছে। অথবা বোধহয় সবগুলো লিবারেলের মুখোশ পড়েছে।

সব দোষ হিন্দুগো।

প্রতিদিন ঘটতে থাকা অঘটনে, পরের দিনের তাজা অঘটনের প্রলেপ পড়ে। আগের দিনের টেনে আসা ক্ষত ঢাকা পড়ে যায় পরের দিনের দগদগে ঘা - এ।
গতকালের আহাজারী ম্লান হয়ে যায় আজকের আর্তচিতকারে।
... এইভাবে বলা যায় । কিন্তু বাস্তবতা হইল, বাসি গু এর গন্ধ উইড়া যায় তাজা গু এর গন্ধে।
ফেসবুকে আগে যে কোন ঘটনায় নাড়া খাইলে কয়েকশ শব্দে লেইখা কিছু একটা উদ্ধার কইরা ফেলা যাইতেসে এমন একটা চেষ্টা করতাম। ইদানিং ক্ষ্যান্ত দিসি। এত জোরে, এত তাড়াতাড়ি উসাইন বোল্টের মতন ফাস্ট ইশ্যু আইসা, নাকের সামনে দিয়া পার হয়, আরেক ইশ্যুর ধাওয়া খাইয়া, গুছাইয়া বিছাইয়া লেখতে লেখতে দেখা যায় মানুষ ভুইলাও গেসে গা কিসের কথা কইতে আইসি। শীতের লেপ বানানি শেষ করতে করতে গরম কাল আইসা পড়ার মত অবস্থা।
এই যে দেশে হিন্দু জাতটা আছে, এরা বিশাল ভেজাইল্লা। দুই দিন পরপরই এদের নিয়া কাইজ্যা লাগে। এগোরে এয় মারে, ওয় ** , এ আগুন দেয়, সে ঘর লুট করে, অমুকে দাম দেয় না। তমুকে ইজ্জত নিয়া যায় গা। মানে !!!!! এগোরে নিয়া সমিস্যার শেষ নাই। এগোরে নিয়া এত কাইজ্যা কেন ?
এক হাতে তো তালি বাজে না। হিন্দু গুলা চুপ চাপ ভোলা সাইজা বইসা থাকলে কি হইব এরা কি ধোয়া তুলসি পাতা নি ? নিচ্চয়ই এরা কিছু না কিছু করে।
আমি ছোট বেলায় ছুট্টি মুট্টি ছিলাম। (ছোট বেলায় তো সবাই ছোটই থাকবে , তাই না ? বলার কি আছে ? তবে আমি বেশি কৃষকায় ছিলাম) বাইরে কারো কাছে ধুনা খাইয়া গালে মালে চোট নিয়া, শার্টের বোতাম , পকেট ছেঁড়া নিয়া বাসায় আসলে আম্মা আমারে ক্যাক কইরা ধইরা জিগাইতো কি হইসে? আমি কইতাম - অমুকে মারসে,
আম্মা কইতো - তুই কি করসিলি ? তুই কিছু করস নাই ? তোরেই মারলো কেন? ক্লাসে আর পোলাপাইন পায় নাই ?
কথায় যুক্তি আছে।
কিছু না করলে ঘাড়ায় কেন ? কিছু না কিছু তো করে, কি করে ?
হিন্দুরা কত্ত খারাপ হইলে, আল্লাহ পাক কেয়ামত পর্যন্ত টেকসই ধর্মটা দুনিয়ায় নাজেল করসেন, তা কেয়ামতের আগেই ধংস করে ফেলতে চায়।
হিন্দুরা কি জানেনা, ইসলাম গত ১৪০০ বছরের হেদায়েতে বয়স হইয়া দুর্বল হইয়া আসছে ? মানুষ বুড়া হইলে কি হয় ? খিটখিটা হয় না ? ভাল কথায় ও ঘ্যাঁত কইরা উঠে না ? ধর্মও তো বুড়া হইসে, কত সহ্য করবো ? নাজুক হইয়া আসছে না বয়সের সাথে ?
কিছুদিন আগের কথাই বলি। সেই ইব্রাহীম নবীর আমলের কাবা শরীফ। তার মাথার উপরে শিবের ছবি বসাইয়া দিলে ইসলামের যে কত বড় ক্ষতি তা হিন্দুরা বুঝে না ?
হিন্দুগোরে যত নিরীহ মনে হয়, এরা কি তত নিরীহ ? অবশ্যই না!!
দেখলে মনে হয় ঠিক কইরা স্মার্ট ফোন চালাইতে পারে না এমন হিন্দু বেডায় ফটোশপ কইরা কাবা শরীফের অবমাননা কইরা ফেলাইতে পারে কিন্তু ! হু !!!!
এইযে দুইদিন আগে কুবির শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার (ইনাদের শিক্ষক বলতে সংকোচ হয়) পর্যন্ত দাড়িয়ে গেলেন তাতে কি বুঝা যায়?? ঈমানখানা কত শক্ত হয়েছে দেশের অনুভূতি চাষীদের, যে শিক্ষক ছাত্রের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যান। যে ছেলের ফ্রেন্ড লিস্টে কয়েক শ এর উপরে ফ্রেন্ড নাই। তার এই পোস্টে কয়েক ঘন্টায় কয়েক হাজার লাইক শেয়ার কইত্তে আসে বুঝেন না ? সব ভারতের চক্রান্ত। ইসলাম টারে নষ্ট কইরা দেয়ার লাইগা এই হিন্দু গুলা ভারতের কুটি কুটী টেকা খাইয়া দেশে ছোটমোট ভাঙ্গা বাড়ি ঘরে ঘাপটি মাইরা থাকে । দেখলে বুঝা যায় না।
এই হিন্দুগুলা দেশে আছেই খালি কাইজ্জা লাগনের লাইগা। এগো বারি ঘরে আছে টা কি ? কয়েকটা কাঁসার থালাবাডি আর দুই এক তোলা স্বর্ণ । এইত ? এইডি লইয়া গেলেও কি ? থাকলেও কি ? দেশে কত কত মোসলমানের লাখ লাখ কুটি কুটী টেকা এদিক ওদিক কামড়াইয়া খামচাইয়া খাইয়া দেয় কত জনে, তারা কি এমন কান্দা কাটি করে ?
আসলে এই হিন্দুগুলা বেশরম । এত মাইর খায়, এত গুতা, উষ্টা খায়, লড়েও না, মরেও না।
দেশের অবস্থা এমনেই বেশি ভাল না।
কড়া বিদেশী ইসলাম আনতে গিয়া কত দ্বীনি মুমিন, গুলি মুলি খাইয়া শাহাদাত নিল। দেশে কড়া ইসলাম আইলো না । আফসোসের সীমা নাই । ইসলাম আগের মত পাইনশা রইয়া গেল। এই নাজুক ইসলামে এখন ফুলের টোকা লাগলেও ইমানে ডং কইরা ঘন্টা বাইজা উঠে। এইটা হিন্দুরা কি বুঝবো ?
হিন্দুর কান্ধে বন্দুক থুইয়া কেউ কি হরিণ শিকারে নামসে নি এইটা বিবেচনা করার কি আমাগো এখন টাইম আছে ?
অবশ্য বিবেচনার কি আছে ? এক মিনিস্টার গুয়ে পিছল খায়া তো তামাসা ঘুরাইয়া দিসে । তার মুখের কথা টাইনা এখন সেকুলারিটির ঝান্ডা উড়াইতে হবে না ???
ইসলাম হেফাজতের মিছিলের সামনে হিন্দু হেফাজতের মিছিল বাইর হইলে আমার কথা ঘুরাইয়া নিমু। তার আগ পর্যন্ত আমার আম্মার মতন চিন্তা করি।
সব দোষ এই হিন্দু গো । নাইলে বার বার এরাই ধুনা খায় কেন ?...

বিচ্ছিন্ন ঘটনা

ছিন্ন ভিন্নভাবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাইড়া গিয়া দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও আগের তুলনায় ভালো হইয়া, দেশে স্থিতিশীল গণতন্ত্র আসার পর এখন বাজারঘাট করতে আগের মত আর ভয় লাগে না তালেবান মিয়ার।
আগে বাজারে আসলে তালেবান মিয়ার কলিজা, হাতে ধরা কুচকাইন্না পুরানা বাজারের ব্যাগেটার মত ভাঁজ খাইয়া যাইতো। আগে তালেবান মিয়া বাজারে ঢুকতে গেলে খুব হুঁশিয়ারে কশাই’র দোকান পাশ কাটাইয়া, মাছ বাজারের কোনা এড়াইয়া ঘেডি নীচা কইরা সিধা হান্দাইয়া যাইতো সবজীর বাজারে। লতি, কচু, মুলা, শাক এইসব ছাতা মাথাই কিনার চেষ্টায় সব্জীবাজার টা পুরা দুই চক্কর দিয়া ফালাইতো দাম দস্তুর আর তাজা-বাসী খুঁজতে গিয়া। ক্যামিকেল যুদ্ধের বাজারে সব কিছুই কেমিকেল দেয়া, তার ভিতরে তুলনামূলক কম দামী জিনিসে কেমিকেল এর হামলা কম। তালেবান মিয়া মোটামুটি সস্তা সবজী খাইতে খাইতে পেটে আর মনে চরা ফালাইয়া দিতেসিলো। অবশেষে বাজার ঘুরসে, এখন আর আলু-মুলা খাইয়া বাচতে হবে না অন্তত। বাজারে মাংস-মাছের ভালা যোগান আসতেসে। দাম ও ম্যালা কম।
স্বর্নের চেয়ে বেশী দামে বুড়া ইন্ডিয়ান বলদের গোস্ত এখন আর বাজারে খুইজাও পাবে না কেউ। বাজার ভরা কচি দেশী মাংসের সাপ্লাই। তালেবান মিয়া বুক ফুলাইয়া ঢুইকা পড়ে বাজারের কসাই গলিতে। আহা কি সুন্দর দৃশ্য। সারী সারী মাংসের চাক ঝুলতাসে। দাম জিগাইলে মনে শান্তি আরো বাইড়া যায় হু হু কইরা। পানির চেয়ে সস্তা। তালেবান মিয়া হালকা ধাক্কা দিয়া টুপিটা উচা কইরা দুই হাত পীছে নিয়া শিনা টান কইরা ঢুইকা পড়ে মাংসের গলিতে। দুই পাশ থেইকা কসাইরা ৪২ দাত বাইর কইরা হাসতে হাসতে চাপাতি উচা কইরা ঘুরাইতে ঘুরাইতে ডাকে তালেবান মিয়ারে। বাজারে মাংসের সাপ্লাই ভাল। শুধু মাংশ না। মগজ, কলিজা, গুর্দা, কিমা সবই আছে। তালেবান মিয়া মাংস বাজারের ভীড় দেইখা বিরক্ত লাগার বদলে হালকা খুশিই হয়। সব তার মতন লোকজন, গরীব, আধা গরীব মানুষজনে গিজ গিজ করতেসে বাজার। এই বাজারে হাইটাও শান্তি !! আগে এই পদের লোকজনের আনাগোনা আছিল না এই মাংসের বাজারে। ফেতরা, জাকাত আর সদকা খাইয়া যাদের পেট ভরতো তারা এখন বড় বড় ব্যাগ নিয়া বাজারে আসে, কি বুক ফুলাইয়া বাজার করে। কারো কারো বাজার টানতে মিন্তি লাগে।
সবচেয়ে সস্তা যাইতেসে নাস্তিকের মগজ। পাবলিকও হুমড়ি খাইয়া পড়তেসে। তালেবান মিয়া মগজের দোকানের কাছেই যাইতে পারলো না ভীড়ের ঠেলায়। দুরের থেকে দেখলো এক লোকে ৫ পিছ মগজ কিনলো। কসাই হাসতে হাসতে তার ব্যাগে আরেক পিস নাস্তিকের মগজ ভইরা দিল ফ্রি-তে। কাস্টোমার টাকা সাধসে, কসাই নিতেসে না। হাসতে হাসতে দাম ফিরাইয়া দিতেসে। আহারে ! এই না হইলে বাজার !!! দোকানদারে দাম নিতে চায়না। এমন বাজারের স্বপ্নই তো তালেবান মিয়া দেখতো । বলগারের গোস্তের দোকানে বেচাকেনা ভাল। কসাই আবার একটা ব্যানার লেইখা টাঙ্গাইয়া থুইসে।
“মাংসের অর্ডার নেয়া হয়। এইখানে অর্ডার করলে, চিহ্নিত কচি বলগারের মাংস একদিনে সরবরাহ করা হয়।”
বলগারের শিনার মাংস, ঘাড়ের মাংস টিপা টুপা দেখতেসে এক মুরুব্বী। দোকানদার রে ধামকী দিয়া কইলো
কিরে ব্যাডা বলগার তো বুড়া। গোস্ত শক্ত লাগে কা ?
কসাই রেতি দিয়া চিরিক চিরিক কইরা ঘইসা চাপাতি শান দিতে দিতে কয়
মুরুব্বী এইটা কি কইলেন ? এক্কেরে কচি বলগার। মাত্র ৮ টা পোস্ট দিসে। ঢাকা শহরের কফি, বার্গার খাওয়া বলগার আছিল না। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহের গৃহস্ত বাড়ির বলগার। আইজকা সকালে নিজে জবাই দিসি।
ঃধুর ব্যাডা তোগো বিশ্বাস নাই। বলগার কইয়া ফেসবুকারের গোস্ত ধরাইয়া দেস। গত মাসে নিসিলাম অই সাইডের কসাইয়ের দোকানতে। বিবিসাবে রানতে গিয়া দেখে মাংস সিদ্ধ হয় না। আইয়া চিপ দিয়া ধরসি পরে স্বীকার গেছে- বলগার আছিল না, ফেসবুকারের গোস্ত দিসিলো। তাও ম্যালা বুড়া । ৮ বছরের পুরানা প্রোফাইল ওয়ালা ফেসবুকার। এইগিলি খাওয়া যায় ? তুই ক ?
কসাই জিব্বা কাইটা হাসতে হাসতে মাথা দুই দিকে নাড়ে। মুরুব্বীর কথায় সায় দেয়। নাহ। এইডা একদম মানা যায় না। দেশে দুইনম্বরী কমা উচিত। যেখানে বলগার পাওয়া যাইতেসে এত সস্তায়, সেখানে ভেজাল বেচার দরকার কী? ফেসবুকার, লাইকার বেইচা কাস্টোমারের বাজার খারাপ করনের কোন মানে হয় না।
তালেবান মিয়া চিন্তা করে, একঘুরা দিয়া বাজারটা দেইখা বলগারের গোস্ত নিবে ফিরা আইসা। সামনের দোকানে মুক্তমনা আর বিজ্ঞান গবেষকের পায়া টাল দেয়া আছে। তালেবান মিয়ার আবার খুব নলী খাওনের শখ। নলী খাওনের জন্য মুক্তমনার উপরে জিনিস নাই। এইগুলা মাথা খাটাইয়া মগজ ঝাজড়া কইরা ফেলে। এগোর মগজে স্বাদ নাই। পা চালায় কম তাই এগো পায়ায় চর্বী থাকে। নলী রানলে তেল ছাড়ে!

রেপ কেইসের কলিজা বেচতেসে আরেক দোকানদার। ইদানিং সাপ্লাই বাড়ার পর এই কাঁচা বাজারেও ব্র্যান্ডিং শুরু হইসে। এই যে এই ব্যাডা কলিজার কসাই গত কয়দিন ধইরা সব কলিজা নুসরাতের কলিজা কইয়া বেচতেসে। কাস্টমারের চাহিদা। এমনে রেপ কেইসের কলিজা পইড়া থাকে কেউ উল্টাইয়াও দেখে না। নুসরাতের কলিজা খুইজা কাস্টোমারের ভীড় লাগোনের পর তে কসাই এখন সব কলিজা নুসরাতের নামে বেচে। আগে অবশ্য কিছুদিন তনুর নামে বেচাবিক্রি ভালো হইতো।
আরেক দিকে কশাই আর কাস্টোমারের তর্ক চলতেসে প্রফেসারের মাথার মাংস নিয়া। কাস্টোমার খুজতেসে ঢাকার প্রফেসারের মাথা, কশাইয়ের কাছে আছে রাজশাহীর প্রফেসারের। কশাই খুব বুঝানোর চেষ্টা করতেসে, প্রফেসার রাজশাহীর হইলেও মাথা খারাপ না।
গোস্তের বাজারে তালেবান মিয়া চক্কর কাটে কত ভ্যারিয়েশান রে বাবা। শিয়া, কাদীয়ানী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ফাদার, সাধু, মুয়াজ্জিন, ইমাম, সমকামী, পীরের মুরিদ, লেখক, প্রকাশক কিসের মাংস নাই বাজারে !!! দেশি এত পদের পাশাপাশি বিদেশী মাংস ও আছে কিছু। তালেবান মিয়া পা চালায় মাছ বাজারের দিকে।
চুনা পুটি, গুড়া কাচকী আর শিং মাগুরের সেই বাজার আর নাই। এখন মাছের বাজার রমরমা। নতুন চাষের মাছ আইসা পড়সে। জামাতী লীগ নামের এক হাইব্রিড পাঙ্গাসে বাজার উপড়াইয়া পড়তেসে। লীগ কাতলা আছে বিশাল বিশাল সাইজের। কিছু ফাইনানশিয়াল বোয়ালের সাইজ এত বড় যে তালেবান মিয়া মাথা ঘাড়ের এই পাশ থেকে অইপাশে পুরা প্যান করা লাগলো বোয়ালের সাইজ দেখতে। আগে মাছ বাজারে ধুয়া উঠছিল ফরমালিনের। ভেজালের দিন শেষ। এখন ফরমালিন লাগে না। মিনিস্টার নামের এক জাতের ভেটকী মাছ বাইর হইসে, এইগুলা পানি ছাড়াই বাইচা থাকতে পারে। তাই মরেও না। পচার তো কাহিনীই নাই। সারাক্ষন মুখ হা কইরা বাতাস টানতেসে। এমন কি মাছ কাটার কাটারীরা যখন বড় বটির উপর ফালাইয়া বডি আর মাথা আলাদা কইরা ফেলতেসে, তখন ও মিনিস্টার মাছের মুখ হা করা, নড়ে চড়ে।
প্রশ্নফাঁস নামের কই এর ঝাঁক খলবল করতেসে বিরাট ঝাঁকায়। সোনালী জাতের গজার মাছ আছে, ব্যাংকে চাষ হয়। আগে মাছ বেচতো খুচরা দোকানদাররা। কত হাত ঘুইরা মাছের দাম যাইতো বাইড়া। এখন বড় খামারীরা সরাসরি মাছ সাপ্লাই কইরা বাজার ভরাইয়া দিছে। মাছের দামে আগের সেই জৌলুশ নাই। এক প্যাকেট বেনসনের দামে একজোড়া পুলিশ ইলিশ পাওয়াই যায় আরামে। তালেবান মিয়া মাছ কিনে।
মাছের বাজারের পাশেই ডিমপট্টি।
পোল্ট্রি লীগের ডিম আছে, ডিজিটাল উন্নতির ডিম আছে। একটু পুরান ডিমও আছে কিছু। সেতু ডিম এগুলা, মাঝে মাঝে পচা পড়ে।
তালেবান মিয়া ভাবলো এত কিছু নিলাম যখন, খাবার হজম হবার জন্য একটা পাল্টিদই নেই। বাজারে নাকি ইদানীং মুফা নামে পাল্টিদই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। এর আগে তালেবান মিয়ার পিনাকী, সানিউর আর আসিফ নজরুল নামের টকদইও ভাল লেগেছিল।
তালেবান মিয়ার ব্যাগ প্রায় উপচায়া পড়তেসে। নানান পদের মাছ -মাংস আর তরি তরকারী দিয়া। বাজার থেকে ফিরতে মন চাইতেসে না। কিন্তু না ফিরাও উপায় নাই। তালেবান মিয়ার ব্যাগে আর জায়গা নাই। বাজার থেকে বের হওনের মুখে তালেবান মিয়ার দেখা হয় হেফাজত মিয়ার লগে। হেফাজত মিয়ার মাথায় বিশাল বস্তা। তালেবান মিয়া অবাক হয়। এই বাজারে এত সস্তায় ভ্যারাইটির সদাই পাতি থুইয়া হেফাজত কিসের বস্তা লইয়া ছুটতেসে জানতে মন চায়। তালেবান মিয়া পীছন থেকে পাঞ্জাবির কোনা ধইরা টান মাইরা থামায় হেফাজত মিয়ারে। জিগায় “তোর বস্তায় কীরে ??” হেফাজত পান খাওয়া লাল দাঁত বাইর কইরা হাসতে হাসতে কয়
আলু!!
এই বাজারে এত এত সস্তার জিনিস থুইয়া তুই এতডি আলু লইয়া কই যাস ?
আরে বেক্কল, আলু পাইসি মাগনা। পাবলিক নামের নতুন আলু । আড়তে মাগনা দিতাসে। একবস্তা আলু মাগনা, বুঝতাছস ?
তালেবান মিয়ার খটকা তাও যায় না। বুঝলাম পাবলিক আলু মাগনা। তাই বলে মাছ মাংস বাদ দিয়া আলু খাইতে হবে কেন ?
হেফাজত মিয়া বুদ্ধিমানের মতন দাড়ি নাড়তে নাড়তে বলে...
আরে বেটা ! আলু হইল একটা নেয়ামত! এই আলু সব কিছুর লগেই যায় । নাস্তিকের মাংসে ও যায়। শেয়ার মার্কেটের বোয়ালের লগেও যায়। সুশীল কচু আর ওলামালীগের ডিমের তরকারী কোনটা বাদ থাকে ক ? আলু ছাড়া সারাবছর আরাম আছে খাইয়া দাইয়া ?
তালেবান মিয়া এইবার ভাবনায় পইড়া যায়। আসলেই তো। পাবলিকের উপর জিনিস নাই। আলু না নিয়া বাজার থেকে ফিরা যাওয়া মনে হয় ঠিক হইতেসেনা।
তালেবান মিয়া ঘুইরা হাটা দেয় বাজারের ভেতর। একবস্তা পাবলিক আলু নিয়াই যাওয়া দরকার। মাগনাই তো !!

স্রষ্টা বিষয়ক ভাবনা।

স্রষ্টা বিষয়ক ভাবনাটা আসলে আমাদের কেমন ? যদি চিন্তা করা হয়, কিভাবে এই স্রষ্টা বিষয়ক ধারণাটা বা অনুভুতিটা মানুষের মাথায় আসে ? মানে সবাই তো নিজে থেকেই আপনা আপনি অনুভব করতে শুরু করে না যে স্রষ্টা আছেন কিনা, দেখতে কেমন ? বা তাঁর দয়া কেমন ? রাগ কেমন ? ব্যাপারটাতো বায়োলজিকাল নীড না। মানুষের মাথায় এই স্রষ্টার ধারণাটা প্রোথিত করা হয়। বাইরে থেকে ঢোকানো হয়। ধর্মবাণী, ধর্মাচার, ধর্মানুরাগ থেকে মানুষের মাথায় স্রষ্টা বিষয়ক ধারনা স্পষ্ট হতে থাকে। এইযে বাণী, আচার আর অনুরাগের কথা বল্লাম, এটার কিন্তু কোনো সলিড মাত্রা নাই। এদের ইনটেনসিটি যখন কম বেশি হয়, তখন স্রষ্টা বিষয়ক ধারণার ক্ষেত্রেও সেই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ে। কঠোর ধার্মিকের মনে স্রষ্টা বিষয়ক ভাবনা যতটা স্পষ্ট, দুর্বল ধার্মিকের মনে কিন্তু তেমন স্পষ্ট না। কঠোর ধার্মিক নিজের বিশ্বাসে, স্রষ্টার দয়া, কঠোরতা, বিবেচনার ধারণা পোষণ করেন। কিন্তু কম বিশ্বাসী ধার্মিক হয়ত আবছা ধারনা রাখেন, নিশ্চিত হতে পারেন না স্রষ্টা কতটা দয়ালু বা কঠোর ইত্যাদি। স্রষ্টা বিষয়ক একক ধারনার যে ধর্মীয় মতবাদ আব্রাহামিক ধর্মগুলায় আছে, সেগুলোর দিক থেকে দেখলে স্রষ্টা একক, অক্ষয় অজর বিচারক। কিন্তু এই গুণাগুণ গুলোর ডিটেল যত জানা না যাচ্ছে ধারণা কিন্তু প্রাথমিক স্তরেই থেকে যাচ্ছে।
ধর্ম বিষয়ে অধিক জানা থাকার ফলে স্রষ্টার ইমেজ ( ছবি বুঝাই নাই, চারিত্রিক প্রতিচ্ছবি বুঝাইসি ) স্পষ্ট হতে থাকে। যেমন একজন ধার্মিক ধর্মজ্ঞানের কারণে জানেন যে চুরি করার কারনে স্রষ্টা কতটা শাস্তি দিতে পারেন, আর সেই শাস্তির কঠোরতা আর কষ্টের পরিমাপটাও আন্দাজ থাকে তার। তাই ধার্মিক পাপ কে ভয় পায়। পাপ বলতে সে বোঝে তার ধর্মের স্রষ্টার নিষেধ করা কাজ। আপর দিকে যে চোর, সে মনেই করে, চুরি কাজটাকে লোকে পাপ বললেও কাজটা তার প্রয়োজনীয়। তার মনে পাপবোধের কমতিই তাকে স্রষ্টার কঠোর শাস্তির ভয় থেকে দুরে রাখে। তার মনে স্রষ্টার ইমেজে হয়ত কঠোরতাই কম। হয়ত তার মনে যে স্রষ্টার ইমেজ সেটা হয়ত অন্যদের মাত্রায় অনেক বেশি দয়ালু বা ক্ষমাশীল। হয়ত চোরটার মনের স্রষ্টার যে ধারণা, সেই ধারণায় বিচারকের ভুমিকায় থাকা স্রষ্টাকে অনুনয় বিনয় করলে হয়ত তিনি ক্ষমাই করে টরে দিবেন। কঠোর হবার প্রয়োজনই হয়ত সেই স্রষ্টা করেন না। যেমন চুরি করে ধরা পড়ার পর পা ধরে মাফ টাফ চাইলে অনেকসময় ক্ষমা পাওয়াও যায়।
স্রষ্টা বিষয়ক এইযে ব্যাক্তিগত ধারণার তারতম্যতা, এটা কি তাহলে স্রষ্টার সামগ্রিক ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কী ?
স্রষ্টাকে তো একক বলা হচ্ছে। তার সম্পর্কে পরিমিতিমূলক সংখ্যাও কোথাও দেয়া হয় নাই। স্রষ্টা অসীম দয়ালু আবার চুড়ান্ত কঠোর বিচারক বলা হয়েছে। এই অসীম আর চুড়ান্ত এর কি কোন মাপ ঝোকের বিজ্ঞান আছে ? নাই তো । তাহলে এই অসীম আর চুড়ান্ত এর পরিমাপ হচ্ছে যিনি ভাবছেন তিনি কতটুকু ভাবছেন। একজন কয়েদীর চোখে একটা দেয়াল বিহীন খোলা হ্রদকেও অসীম লাগে। আবার নাবিকের কাছে মহাসুদ্রকেও কখনো অসীম মনে হয় না। তার মানে এই ধারনার পরিমিতি কমেছে বাড়ছে মানুষ ভেদে। তাই এই দুই বিশেষণের ধারণা অভিজ্ঞতা ভেদে ভিন্নতা এনে দিচ্ছে। তাহলে মনে ধর্মবাণীর প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল হবার পরেও, অভিজ্ঞতার ভিন্নতা দুজনের মনে স্রষ্টার ক্ষমতা বিষয়ক ধারণায় ভিন্নতা এনে দিচ্ছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, পৃথিবীতে যতজন আস্তিক আছে, ঠিক ততটাই ভিন্ন ভিন্ন স্রষ্টার ইমেজ আছে ততজন আস্তিকের বিশ্বাসে। এই সংখ্যাটা কাউন্টেবল। এই কাউন্টেবল নাম্বার থেকে ধর্মের ভিন্নতায় ক্যাটোগোরাইজ করলে পরে অল্প কিছু নাম্বারে নেমে আসবে । সে নাম্বারটা হচ্ছে যতগুলা ধর্ম ততগুলা ক্লাস্টার হবে। সেই ক্লাস্টারে বড় বড় অনুসারী গোষ্টির ধর্মগুলার আন্ডারে বিলিয়ন বিলিয়ন স্রষ্টার ইজেম পাওয়া যাবে। একটা ধর্মের একক স্রষ্টারই ইমেজ প্রতিটা মনে কিন্তু সমান মাপে নাই, সমান ইনটেনসিটিতে নাই।
এখন ভেবে দেখা যাক নাস্তিক মনে তাহলে কি আছে ? নাস্তিক বিশ্বাস করে স্রষ্টা নাই, তাই ইমেজও শুন্য। স্রষ্টার ইমেজ যেহেতু শুন্য তাই স্রষ্টা বিষয়ক কর্মবাচক ধারণাও তার নাই। তাই নাস্তিক পরকাল, বিচার, হেভেন, হেল কিছুই বিশ্বাস করে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, নাস্তিকের মনে কি তাহলে পাপবোধ নাই ? সেটা তো আছে, সেটা কোথা থেকে আসলো ? স্রষ্টাই যেহেতু নাই ভাবা হচ্ছে, তাহলে তো স্রষ্টার বিধি নিষেধ বলেও কিছু নাই। তাহলে নাস্তিক মনে পাপ বিষয়ক ধারণা আসে কোথা থেকে? আসলে স্রষ্টা ভাবনা নাই বলে, নাস্তিক মনের এই ধারনার জায়গাটার কোনো অটোমেটেড কমান্ড সিস্টেম তৈরী হয় না। নাস্তিক নিজেই এই ধারণাটার চালক হবার সুযোগ পান। তখন সেই নাস্তিক নিজ চিন্তা থেকে নিশ্চিত করেন তিনি কোন ধরনের সেটস্কিল ফলো করবেন। রাষ্ট্রের আইন আছে, সামাজিক আচার আছে, ব্যক্তিগত জ্ঞান অভিজ্ঞতা, চিন্তা আছে। নিজের মত করেই নাস্তিক ঠিক করেন তিনি কি করবেন, কি বর্জন করবেন। এক্ষেত্রে নাস্তিক মন সীমাবদ্ধতা বিহীন। মদে আসক্তি, মাংসে নিরাসক্তি, পরচর্চা বর্জন, পরপ্রেম হরণ সে কিরবে, কি করবেনা সম্পূর্ণ তার নিজ বিবেচনা। তার মনে দ্বিধা নাই। যদি পরকাল বলে কিছু থাকার ভয়ই না থাকে, তখন চিন্তা ভাবনা তো নগদ।
এদিকে যে কোন পরিমানে ধর্মবিশ্বাস ধারণকারী মানুষ নিজের প্রতিটা কাজেই নিজের ইচ্ছা, ক্ষমতা, অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতেসে কিন্তু ভেতরে স্রষ্টার ধারণার ভিন্নতার জন্য সমান সতর্কতা দেখা যাচ্ছেনা। প্রভুত্বের ধারণা মানুষের মাথায় স্পষ্ট গেঁথে দেয়ার নজীর আছে মিলিটারীতে। প্রতিটা সোলজারের মাথায় স্পষ্ট ইমেজ তৈরী করে দেয়া হয় কমান্ডারের ইমেজ। কমান্ডারের প্রতিটি কথার আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য সবার মনে সমান ইন্টেন্সড ইমেজ তৈরী করা হয়। আর সেকাজ করার জন্য সব সোলজারকে সাম্যতা নিশ্চিত করা হয় সব রকমভাবে। সবার সাম্যতার ধারণা স্পষ্ট না হলে, সবার মনে কমান্ডার বিষয়ক ধারণাও তো সমান স্পষ্ট, সমান ক্ষমতার ইমেজ তৈরী হবে না। প্রতিটা সোলজার ট্রেনিং এর মাধ্যমে বিশ্বাস করতে শুরু করে, সে আর তার ব্যাচমেট সমান। সবভাবে সবদিক থেকে সমান। এই সাম্যতার ধারণাই তার কামান্ডার বিষয়ক আনুগত্যের ধারণাকেও প্রভাবিত করে। তাই মিলিটারীতে কমান্ড এর প্রতি আনুগত্যের স্পষ্ট উদাহরণ দেখা যায়। আর সে কারণেই সবচেয়ে সফলভাবে অর্ডার পালন করে মিলিটারীরা।
আস্তিকদের ঝামেলা হচ্ছে স্রষ্টা বিষয়ক ধারণার ভিন্নতা আসলে তাদের যার যার ধর্মবিশ্বাসের কমান্ড সিস্টেমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভিন্ন ধারণা পোষণ করার কারনেই একই কমান্ড সিস্টেমের নীচে থেকেও একই ধর্মের দুইজনের আচরণের, কর্মের, আনুগত্যের ভিন্নতা। স্রষ্টা বিষয়ক ধারণা ধারণ করার সফলতা আসতো যদি একই ধর্মের কমান্ডের নীচে সবাই সাম্যতার ধারনাটা আগে ধারণ করতে পারতো। সাম্যতার ধারণাই স্রষ্টা বা প্রভুর ধারণাকে এক স্পষ্ট ইমেজে দাড় করাতে পারে, সবার মনে, সমান ভাবে। কিন্তু কনফ্লিকটা হচ্ছে সাম্যতার ধারণা তৈরী হবার ক্ষেত্রে আবার যৌক্তিক ধর্মীয় বাধা আছে। ধর্মপালন আর পাপাচার এর তালিকা সামনে নাড়ানোর কারনে, আগে থেকেই সেলফ এসেস্মেন্ট এর একটা প্রেশার তৈরী হয়ে যায়। সেই প্রিবিল্ডেড প্রেশারের গ্রাউন্ডে স্রষ্টার ইমেজের ফাউন্ডেশানেও তারতম্যতা আসে। তাই সাম্যতা আসেনা, কখনো আসবেও না।
সবাইকে সমান ভাবতে পারলে, নিজের মনের খোদাকেও সবার খোদার সমান ভাবা যেত । যেহেতু সবাইকে নিজের সমান ভাবা যাচ্ছেনা, তাই সবার মনে খোদা হয়ে আছে, তার তার মনের সাইজের। মুখে যদিও সবাই একসমান খোদার কথাই বলতে চাচ্ছে। পৃথিবীর সব আস্তিকরা গোষ্টিবদ্ধ হয়ে নিজের নিজের স্রষ্টার একক যে ইমেজ বানানোর সংজ্ঞা খুজতে ব্যাস্ত তা আসলে সারাজীবনেও শেষ হবেনা কারণ আস্তিকদের মনে সাম্যতার ধারনাই কখনো ঠিকভাবে তৈরী হয়না। যদি চিন্তায় সাম্যতা আসতো, যদি আসলেই মানুষ সার্বিকভাবে সাম্যতার ধারণা ধারণ করতে পারতো, তাহলে ধর্ম এবং স্রষ্টার এত রকম ধারণাই তৈরী হত না। এমনকি আব্রাহামিক ধর্মের স্রষ্টার ধারণার ক্রমবিকাশেরও হয়ত প্রয়োজন হতনা। এই ধারণাটা একটা সার্কুলেটেড চিন্তা। মানুষের মনে স্রষ্টার ধারণা দেয়ার জন্য ধর্ম নামক সাম্যতা ভংগকারী ধারণা জন্ম নিসে। ধর্ম সামগ্রিক সাম্যতাকে ধংশ করে, স্রষ্টার ধারণা দিয়ে নতুন সাম্যতার তত্ব নির্মাণ করে। সাম্যতার ধারণাকে অস্বীকার করলে ধর্ম টিকে, স্রষ্টা টিকেনা, আবার স্রষ্টাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হইলে লাগে সাম্যতা, তাইলে আবার ধর্ম টিকেনা। এই টানাটানিতে মানুষ একটা মাত্র প্রজাতি হয়েও শত শত রকমের স্রষ্টার বিলিয়ন বিলিয়ন আলাদা ইমেজ নিয়ে বেদিশা

সখি ভালবাসা কাহারে কয়।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন। আপনি হয়তো একশত ভাগ আন্তরিক যখন আপনি বলেন, “ আই লাভ য়্যু ” । কিন্তু একথা বলে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি ?
তাই এই লেখাটি পড়ার আগে কাগজ, কলম নিন । নীচের শূন্যস্থান যুক্ত বাক্যটি লিখুন ১০ বার । তারপর শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ করুন -
“যখন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলি তখন আমি তোমাকে বোঝাতে চাই যে --------- ”
কি , কিছু বোঝাতে পেরেছেন ? খুব কষ্ট হবে বোঝাতে । কারন ঐ বাক্যটির অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম অর্থে ধরা দেবে । আপনি হয়তো আপনার স্ত্রী বা স্বামী কিম্বা সন্তান কিম্বা ছেলে বা মেয়ে বন্ধুদের , এমনকি আপনার কলিগদেরও এমন কথা হাজারবার বলেছেন । খুব খেয়াল করে দেখুন , যতোবারই আপনি বলেন, “ আই লভ য়্যু ” তখন একেকবার একেক অর্থে বলেন । ভিন্ন ভিন্ন ভাব বোঝাতে বলেন ।
যে মানুষটি পরিবারের কারো কাছ থেকে জীবনেও কোন ভালোবাসাই পায়নি তার কাছে এই বাক্যটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হবে । আপনি আপনার সন্তানকে কড়া শাসনে রাখেন আবার বলেন, খুব ভালোবাসেন বলেই তাকে এমন শাসনে রাখতে হয় । আপনার সন্তানের কাছে এই ভালোবাসার রূপটি আপনার স্ত্রী বা স্বামীকে ভালোবাসার রূপটি নয় । আবার যৌবনদীপ্ত ছেলে বা মেয়েটি পরিবারের এতো এতো স্নেহ- ভালোবাসা পাওয়ার পরেও অন্যকারো কাছ থেকে “ আই লাভ য়্যু” শোনার জন্যে নির্ঘুম রাত কাটায় । বর্তমানে যা হালচাল, সেখানে ছেলেমেয়েদের বলা “ আই লভ য়্যু” বাক্যটিতে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিতটাই থাকে বড় বেশি । এমন উদাহরন দেয়া যাবে হাজারো ।
আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বাক্যটি অনেক কনফিয়্যুশানের, অনেক বেদনার আবার অনেক আনন্দেরও । আপনি কাগজে ১০ টি শূন্যস্থানে যে ১০টি উত্তর লিখেছেন তা আপনাকে বিভ্রান্তিতেই ফেলে দেবে । এবং সম্ভবত ঐগুলোর কোনটিতেই আপনি একশতভাগ স্বচ্ছ নন । বলুন তো, কোন উত্তরটি আপনি সততার সাথে দিয়েছেন ? আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এর অর্থ এই বাক্যের তিনটি শব্দে নেই । আছে এটা বলার পেছনের আকুতিতে, বলার অনুভবে ।
গ্রীকো-ক্রিশ্চিয়ান মতে এমন “লভ” বা “ ভালোবাসা”র চারটি ধারা রয়েছে । ভালোবাসা বলতে প্রচলিত ধারনায় আমরা যা বুঝি তার নাম -“ ইরোস” (Eros) । ইরোটিক শব্দটি এখান থেকেই জন্ম নেয়া । দর্শন এবং মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ইরোটিক শব্দটির যতো ব্যাখ্যাই থাকনা কেন, আমাদের ধারনায় তা শারীরিক উত্তেজনা । তাই আমাদের ধারনা মতের ভালোবাসায়, শারীরিক একটা আকর্ষণের ব্যাপার - স্যাপার থেকেই যায় জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে।
“ষ্টোর্জ” (Storge) হলো পারিবারিক ভালোবাসা । নিজের ধারে কাছের লোকজনদের প্রতি ভালোবাসা । যেমন সন্তান, ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা । এমন ভালোবাসা এক ধরনের অনুরাগ , স্নেহ জাতীয় আবেগ ।
“ ফিলিয়া” ( philia) হলো বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা । রক্তের সম্পর্কের বাইরে কাউকে আস্থার জায়গায়, বিশ্বাসের জায়গায়, অন্তরঙ্গতার জায়গায় বসানো ।
“ এ্যাগেপ” (agape) হলো স্বার্থহীন ভালোবাসা । এর কোন ব্যাখ্যা নেই, কেন এমনটা হয় । অনেকটা ইউটোপিয়ার মতোন ।
আবার ঈশ্বরেও ভালোবাসা সমর্পিত হয় । এখানে আমাদের সবার ভালোবাসাতে কোনও আলাদা রঙ মনে হয় নেই । এ এক নিখাদ আত্মসমর্পণ । আ ডিভাইন লভ উইথ নো ক্যাটেগরী !
ভালোবাসাকে মানুষ যে কতোভাবেই না শ্রেনীকরণ করেছে । এই সব শ্রেনীভেদের ব্যাখ্যায় আবার আছে হাযারো মতভেদ । দার্শনিকরা বলেন এক , তো মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আরেক ।
ফ্রয়েড সাহেব তো আবার সকল ভালোবাসার মাঝে কামগন্ধ খুঁজে পান ।
সাইকোলোজিষ্ট রবার্ট ষ্টার্ণবার্গ ভালোবাসার একটা ত্রিভুজ থিওরীও দাঁড় করিয়েছেন । প্যাশন (physical arousal), অন্তরঙ্গতা (psychological feelings of closeness) আর কমিটমেন্ট (the sustaining of a relationship). এই তিনটি বাহু দিয়ে নাকি ভালোবাসার ঘরটি বাঁধা হয় ! আবার এ বাহু তিনটির পারম্যুটেশান করে আবার সাত রকমের ভালোবাসাও নাকি হয় । এর ভেতরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভালোবাসা হলো “রোমান্টিক” আর “কনজ্যুমেট লভ” । অন্যগুলো হলো লাইকিং, কমপ্যাশনেট লভ, ইম্পটি(শুন্য) লভ, ফ্যাটিউঅ্যাস লভ আর ইনফ্যাচুয়েশান বা মোহাচ্ছন্ন হওয়া। ষ্টার্ণবার্গ বলেছেন, বিবাহিত দম্পতিদের মাঝে অন্তরঙ্গতাই হলো বিবাহিত জীবনের সন্তুষ্টি ।
যে যা্-ই বলুক আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা এক ও একক, নির্দোষ, অবিচল , স্বয়ংসিদ্ধ, অক্ষয় এক মানসিক অনুভূতি । সকল ভালোর সমন্বয়, একটি সুর । বিশ্বাস এর মূল উপাদান । হুট করে এমনটা হয়না । অনুরাগের কুঁড়ি থেকে ফুল, ফুল থেকে পরাগায়ন হয়ে ফল হয়ে ওঠার দীর্ঘ পরিক্রমায় যেতে হয় তাকে । তারপর জড়িয়ে ওঠা, আত্মার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে, যেখানে শরীরের কোনও জায়গা নেই । নিজের আমিকে (ইগো) অন্যের মাঝে বিলীন করে দেয়াই ভালোবাসার প্রথম শর্ত ।
আবার অবিচ্ছেদ্য হলেই গাঢ় বা সত্যিকার ভালোবাসা হয়না । বিচ্ছেদের পরেও দু’জনে দু’জনার প্রতি বিশ্বাসে অবিচ্ছেদ্য হলেই তবে তা হয় ।
আর রোমান্স হলো ভালোবাসার উপস্থাপনার ঢং । একটি শিল্প । এতে ভালোবাসা বোঝাতে একটি নিবেদন স্পষ্ট করা হয় । এটা বাহ্যিক । যেমন, ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে আপনি একটি ফুটন্ত গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন । আর যদি সবে কুঁড়ি হয়ে ওঠা একটি শিশির স্নাত গোলাপ দু’হাতে তুলে ধরে, হাটু মুড়ে যদি আপনার ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে সমর্পণ করেন তবে তা আরো গাঢ় একটি নিবেদনকেই ঈঙ্গিত করে । একটি সময় ছিলো, যে সময়ে একটি মেয়ে তার ভালোবাসার পাত্রটিকে রুমালে নিজ হাতে ফুল তুলে এমন একটি বাক্য- “ যাও পাখি বলো তারে , সে যেন ভোলেনা মোরে” বা “তুমি মোর বন্ধু বটে , রেখো মোর স্মৃতি” লিখে উপহার দিতো । এগুলো হলো রোমান্টিক রোমান্টিসিজম । ভালোবাসার ক্যানভাসে রঙের কি জেল্লা ধরাবেন সেটা নির্ভর করে আপনার সৃজনশীলতার উপর , আপনার আবেগের গভীরতার উপর , ভালোবাসার জনের প্রতি আপনার অনুরাগের মাত্রার উপর, তাকে চমৎকৃত করার উপায়ের উপর । এটা আপনার ভালোবাসাকে প্রলম্বিত করতে , দৃঢ় করতে সাহায্য করে । করে আবেগাপ্লুত, সুমিষ্ট। দু’জনাকে কাছে টানার রসায়নে এও ভালোবাসার গুরুপাকে একটি পাঁচফোঁড়ন ।
ভালোবাসা যদি হয় নিভৃত এক ফল্গুধারা , তবে রোমান্স তার বয়ে যাওয়ার কুলুকুলু ধ্বনি । ইতিহাসবিদরা বলেন , ইংরেজি “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ফরাসী আঞ্চলিক ভাষা থেকে যা কেবলমাত্র সমাজের উচ্চশ্রেনীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ একটি ধারনা । এটা সে সময়কালের ফ্রেঞ্চ এলিটদের কথা বলা , লেখা আর শৈল্পিক চিন্তার নান্দনিক প্রকাশ । আবার এটাও বলা হয় “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ““রোমান্টিকাস” শব্দটি থেকে যার অর্থ “ রোমান ষ্টাইল” । আমাদের ধারনায় “ রোমান ষ্টাইল” বললেই যেমন আভিজাত্যময় কিছু বুঝি, আসলেও এটা যেন ভালোবাসায় আভিজাত্যের পরাগ মাখানো কিছু।
এই রোমান্সের খেলায় আমি আপনি যেভাবে খেলি তাকেও আবার ছকে ফেলেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা । তারা বলেন , এটা হতে পারে ফ্লার্ট ( Flirt) করা । যেমন , “আহ কি মুক্তো ঝরানো হাসি আপনার।” কাউকে এমনটা বলা ।হতে পারে অন্তরঙ্গতা (Intimacy)- যেমন, চোখে চোখে চাওয়া (Eye contact) । সেই গানটির মতোন - চোখ যে মনের কথা বলে ।
আবার আলতো চুমু খাওয়া (Kissing), আদর করা (Hugging), হাতে হাত রাখা (Holding hands) এগুলোও আরেক ধরনের রোমান্স ।
আবার পারষ্পারিক যোগাযোগের গুটি চেলেও এই রোমান্সের খেলাটি খেলতে পারেন আপনি । একসময়ে প্রেমপত্রের চল ছিলো খুব । নীলখামে চিঠি দেয়া । ডাকপিয়নের অপেক্ষায় বসে থাকা । চিঠি চালাচালি এখন আর নেই বললেও চলে । মোবাইলে মেসেজ চালাচালি সে জায়গাটাকে দখল করে ফেলেছে বেমালুম । অবশ্য এখনকার অস্থিরতার যুগে রোমান্সকে হতে হয় গরম গরম। ডেটিং করা , ফেসবুক চ্যাটিং, ফোন রোমান্স ইত্যাদি হলো চলতি সময়ের পালে লাগা গরম হাওয়া।
ভালোবাসা আর রোমান্স নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা বলেন , রোমান্টিক ভালোবাসা হলো একটি জটিল আবেগ । এ ধরনের ভালোবাসা আবর্তিত হয় দু’টো ধরনে । আসক্তিমূলক (প্যাশনেট) আর অংশীদারীত্বমূলক (কমপ্যাশনেট) । আসক্তিমূলক ভালোবাসা (প্যাশনেট লভ) জন্ম নেয় সক্রিয় আর সুতীব্র একটি আবেগ থেকে যেখানে আপনি মনে করেন , পৃথিবীর সব সুখ এখানেই । কখনও কখনও এটা আপনাকে কষ্টও দেয় । বিজ্ঞানীরা এধরনের ভালোবাসাকে তুলনা করেন , “কোকেন” এর নেশার সাথে । কারন, কোকেন গ্রহনে আপনার মস্তিষ্ক থেকে যেমন “ ডোপামিন” নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয় এবং একটি সুখানুভূতিময় আবেগ সৃষ্টি করে তেমনি প্যাশনেট লভ এর সময় আপনার মস্তিষ্ক থেকে এই “ ডোপামিন” টিই নিঃসৃত হয়ে থাকে । এ ধরনের ভালোবাসা সাধারনত স্বল্পমেয়াদী । যার পরিনতিতে অনেক সময় আপনাকে গাইতে হয় - “ তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো..............”
আর অংশীদারীত্বমূলক ভালোবাসায় (কমপ্যাশনেট লভ)পরষ্পরের মাঝে একটি ধীরস্থির আস্থার জন্ম হয় , জন্ম হয় প্রশান্তির । তখন আপনার গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে ---“ভালোবাসি - ভালোবাসি, জলে স্থলে বাজায় বাঁশি......” ।রোমান্স, ভালোবাসার প্রতি একপ্রকার বিনয়ের প্রকাশ ও বটে । আবার ভালোবাসায় যে রোমান্স থাকতেই হবে এমন কোন কথাও নেই ।
শুরুতেই বলেছি , পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন । সব মিলিয়ে ভালোবাসায় পতিত হওয়া যেন গভীর এক কুয়োর মাঝে পড়ে যাওয়া । যারা সে কুয়ো থেকে জমজমের পানি তুলতে পারেন তারা উৎরে গেলেন । আর যারা পারেন না তাদের হৃদয় ভাঙা জল সে কুয়োর জলকেই বাড়ায় শুধু । তখন মনের ভেতরে এই গান গুনগুনিয়ে ওঠে -“ ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে ......”
এই শ্রেনীর জন্যে একথাটিই বলতে হয় - একটি হাসি দিয়ে ভালোবাসার শুরু । চুম্বনে তা বাড়ে । কিন্তু শেষ হয় চোখের জলে ।
এখনকার যুগে ভালোবাসার এইসব ধারনা পাল্টেছে । লাইলি-মজনু , শিরী-ফরহাদ কিম্বা রোমিও-জুলিয়েটদের দিন পার করে, কেয়ামত সে কেয়ামত তক হয়ে আসা প্রেম-ভালোবাসা, আজ আর ডুব-সাতার দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । প্রেম-ভালোবাসায় সেদিনের সেই লালিত্য আজ যান্ত্রিকতার যাতাকলে পড়ে কর্পোরেট মানসিকতার খোলসে শুধু “গিভ এ্যান্ড টেক” হিসেবে বাজারজাত হয়ে গেছে । যাকে আমরা এই দিনকালে “প্রেম-ভালোবাসা” বলছি তা আসলে “মোহ”, যেখানটা প্রান কিম্বা হৃদয় ছাড়া আর অনেক কিছু দিয়েই সাজানো । অনেকটা যেন হাইব্রীড হয়ে গেছে এর নান্দনিকতাও । গায়ে গতরে বেশ ভারী দেখালেও স্বাদ নেই, সুগন্ধ নেই ।
তাই আজকাল “ভালোবাসা” বললেই অনেকের মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় শারীরিক সম্পর্কের মধুরতা ।ভালোবাসা বলতে যারা বোঝেন - গোলাপী নেশা, শরীরের ঢেউ, উদ্দাম নাচ, সমুদ্র সৈকতে একটি রাত তাদের কাছে ভালোবাসা ধরা দেয় মুহূর্তেই, আবার হারিয়ে যায়ও নিমিশেই । এরা ভালোবাসায় স্নিগ্ধ রোমান্সের বদলে স্পাইসি ডিওডোরান্টের সুবাস মাখেন । এটা ভালোবাসা নয় - মোহ বা কাম ।
সবশেষে বলি , অনেকের কাছেই হয়তো ভালোবাসা একটা ফালতু জিনিষ ।তবু ঐ ফালতু জিনিষটা আমাদের কিছুতেই ছাড়েনা । প্রতিদিনই আমরা বলি , ভালোবাসি - ভালোবাসি, আবার প্রতিদিনই তা বাদামের খোসার মতো ভেঙেও ফেলি । আবার নতুন করে ভালোবাসায় মাতি । এভাবে কতোবার শ্বাস টেনে নিয়েছি তা দিয়েই জীবনটা শুধু মেপে যাই আমরা । কিন্তু ভালোবাসার যে মূহুর্তগুলো আমাদের শ্বাস রূদ্ধ করে দিয়ে গেছে তা পড়ে রয় অবহেলায় । কখনো মেপে দেখিনি ।

বাটারফ্লাই এফেক্ট

একটা সময় লিখলে কিছু কমেন্ট পেতাম। সেখানে বলা হত, আপনি যা জানেন না, তা নিয়ে কেন লিখবেন? শুরুতে ব্যাপারটায় বিরক্ত লাগত। আমি যা ইচ্ছা তাই নিয়ে লিখতে পারি। ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। কিন্তু ধীরেধীরে বয়স বাড়ল। অল্পবিস্তর অভিজ্ঞতা বাড়ল। শেষ মুহুর্তে এসে আমার মনে হল, সেদিনের কথাগুলো সত্য ছিল। আসলেই আমার সব বিষয়ে লেখা উচিৎ নয়, সব বিষয়ে কমেন্ট করাও উচিৎ নয়। কারণ আমার লেখা অনেক মানুষ পড়ছেন। আমাকে যারা পছন্দ করেন তাদের বিশাল একটা অংশ অবশ্যই আমার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন। হতে পারে আমার লজিক্যাল কিন্তু ভুল ব্যাখ্যাও তারা সঠিক ভেবে নিবেন। এরপর এই ভাবনা দ্বারা যতগুলো ভুল কাজ হবে তার পুরো দায়টা কিন্তু আমার। হয়তো তিনি কখনোই বলবেন না, আমার কাছ থেকে জেনে ভুল করছেন। যারা ভুক্তভোগী হবে তারাও হয়তো জানবেন না, এই ভুলের শুরুটা আমিই করে দিয়েছি।
ব্যাক্তিজীবনে যারা আমায় চিনেন তারা জানেন বাটারফ্লাই ইফেক্ট বলে টার্মটা আমি প্রায়ই ব্যবহার করি। ব্রাজিলে একটা প্রজাপতি ডানা ঝাপটালে এর প্রভাবে আমেরিকার টেক্সাসে টর্নেডো হতে পারে কী না! সামান্য প্রজাপতির ডানা কোথায় ঝাপটাচ্ছে (কজ) অথচ তার কতবড় প্রভাব (ইফেক্ট) পড়ছে কতদূরে। দেখতে হাস্যকর কিন্তু সিরিয়াস পর্যায়ের বিজ্ঞানসম্মত এই টার্মের আবিষ্কারক একজন ম্যাথম্যাটিশিয়ান (গণিতবিদ এবং আবহাওয়াবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ)। ম্যাথমেটিকসকে বলা হয় বিজ্ঞানের কংকাল। যারা পুরো ভিত্তিটা তৈরি করে। যাদের ছাড়া বিজ্ঞান অচল। তিনি ম্যাথম্যাটিশিয়ান হয়ে নিশ্চয় বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামের কোন হাস্যকর তত্ব আবিষ্কার করেননি।
ব্যাপারটা খুব সহজ। কোন সিস্টেমে সামান্য ত্রুটি (যেটাকে ত্রুটি হিসেবে গণ্য করতে চাই না আমরা, এতই ক্ষুদ্র ত্রুটি) একদিন পুরো সিস্টেমটাকে বদলে দিতে পারে। লরেঞ্জ আবহাওয়ার পুর্বাভাস দিতে একটা মান ব্যবহার করেছিলেন। মানটি ছিল ০.৫০৬ । দশমিকের পর তিনঘর পর্যন্ত। সংখ্যাটি আরো বড় ছিল। দশমিকের পর আরো অংক ছিল। ০.৫০৬১২৭ । তিনি পূর্বাভাস তৈরি করলেন দশমিকের পর তিন ঘর নিয়ে। আবার ছয় ঘর নিয়ে আরেকটা পূর্বাভাস করলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হল দুটোর রেজাল্ট আসল ভিন্ন। যত কমই হোক না কেন, দুটো রেজাল্টে বিশাল পার্থক্য দেখা গেল। আপাত দৃষ্টিতে এটা ত্রুটি মনে হয়নি। কিন্তু এত সামান্য একটি ঘটনাও ফলাফল বদলে দিতে পারে। [পরবর্তীতে তিনি একটা পেপার লেখেন। সেখানে বাটারফ্লাই ইফেক্টের নাম দিয়েছিলেন- ‘ডিটারমিনিস্টিক ননপিরিয়ডিক ফ্লো’ (Deterministic Non-period Flow)]
আপাত দৃষ্টিতে কিছু ঘটনা ঘটবে। যেগুলো বিশৃংখল। খুবই ছোট ব্যাপার। একটার সাথে আরেকটার যোগ নেই। কিন্তু যেদিন ফলাফল ঘটবে, সেদিন দেখা যাবে এই ঘটনাগুলো আমার ভবিষ্যত কীভাবে আমূলভাবে বদলে দিয়েছে।
আজ ঘুম থেকে জেগে একজন প্রগতিশীল ব্যাক্তির (দীর্ঘদিন আমার টাইমলাইনে আছেন) পোস্ট দেখলাম। তিনি একজন ফিমেল সেলেব্রেটির ছবি দিয়েছেন, আবার পাশেই টেনিসবল বাস্কেটবল জাতীয় কয়েকটা শব্দ লিখেছেন।ব্যাপারটা হয়তো তিনি মজার ছলেই করেছেন।
কিন্তু বাটারফ্লাই ইফেক্ট কী বলছে এখানে? অন্তত দুইশ জন মানুষ তার স্ট্যাটাস দেখবে। বিশজন মানুষ হয়তো কিছুই ভাববে না। কিন্তু বাকীরা? একশজন মানুষ রসিয়ে কমেন্ট করবে। পঞ্চাশজন মানুষ মনে মনে গালিগালাজ করবে কিন্তু কমেন্ট করবে না। বিশজন মানুষ কমেন্টে পর্দা করার কথা বলবে। মনের দুঃখ কমেন্টে খারাপ ভাষায় প্রকাশ করবে। বাকী দশজন হয়তো নিজেদের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আরো বেশি ধর্মান্ধ বা রক্ষনশীল হবে !
বাটারফ্লাই ইফেক্ট আসলেই কী হবে?
এবার কিছু প্রশ্ন করি! আপনাদের ফ্যামিলিতে যদি কোন মহিলার ছবি সোস্যাল মিডিয়া থেকে থেকে সংগ্রহ করে পাশে যৌন উত্তেজক কিছু কথাবার্তা লিখে দেয়া হয় তখন হয়তো তার বাইরে রাস্তায় অথবা বন্ধুমহলে চলাফেরা করতে লাঞ্চিত হতে হয়। এরপর সে সোস্যাল মিডিয়া অথবা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেনা। নিজের স্বাধীন চলাচল অনেকখানি গুটিয়ে ফেলবে। তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্থ হবে।
প্রজাপতির ডানার ঝাপটায় আসলে তারাই।আপনি আজ যেটা না জেনে ছড়িয়ে দিবেন সেটা একদিন মহীরুহ খারাপ হয়ে আপনার পরিবারে আশেপাশে, দূরের এলাকায় ইফেক্ট সৃষ্টি করবে। যদি আপনি এই ধরণের মানুষ হোন, প্লিজ সাবধান হয়ে যান।আপনি আজ যা প্রচার করছেন আপনারই সন্তান একদিন আফসোস করবে। অথচ সে জানলই না, তারই পিতা নিজার অজান্তে বাটারফ্লাই ইফেক্ট তৈরি করেছিল। আদতে যেটা তার পিতা বুঝতেই পারেনি কিন্তু অনেকদিন পর সেটা ঝড়ের মতো ঘটে গেছে।