Friday, September 10, 2021

পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস

পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের নাম হইলো কনডম। হাইসেন না। কনডম না থাকিলে পৃথিবীর অলিগলি সব জায়গা ফার্মগেইট অথবা নিউমার্কেট মোড় হইয়া যাইতো। ওরস্যালাইন আপনার ডায়রিয়ার স্রোত নিরাময় করে,পিল নিয়ন্ত্রন করে প্রোডাসন। কিন্তু ওরস্যালাইন এর সাথে কোনভাবে কনডমের তুলনা চলে না।

কারন ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রন করার জন্য কনডমের মত সরাসরি অংশগ্রহনকারী কোন পণ্য নাই। বলা হয়ে থাকে “সব পুরুষই কখনও না কখনও কনডম কিনেছেন”। কনডম কিনেন নাই এমন পুরুষ সম্পর্কে এক মহান কনডম বিজ্ঞানী বলেছেন “যে কখনও কনডম কিনেনি সে হয় হাজার বাচ্চার বাপ, না হয় তার ইয়ে নাই”। ব্যাপারটা অস্বীকার করার কিছুই নেই। আলেয়া নামক এক দস্যি নারীর স্বোয়ামির নাম ছিলো আলম।

আলমের আবার বিরাট চক্ষুলজ্জা ছিলো। চক্ষুলজ্জা থাকলেও গোপন চাহিদা লজ্জা ছিলো না। টানা তিন বছর তিনবার তার বৌকে পোয়তি করেছে। এর মধ্যে একবারতো জমজ বাচ্চা আসলো। আলেয়ার ঘর আলম এমনভাবে আলোকিত করা শুরু করলো যে আলেয়া আলোকে আলেয়া দেখতেছিলো।

পরিস্থিতি যখন এমন তখন আলম-আলেয়ার সংসার হাহাকার করে উঠলো। আলেয়ারও “আর পারিনা দশা”। কিন্তু উপায় নেই আলম হোসেন। সে যে কনডম কিনতে লজ্জা পায়। “থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নম্বর” সিনেমার তপুর মত কতবার কনডম কিনতে গিয়ে ওরস্যালাইন,সিভিট,মাথা ব্যাথার বরি কিনে ঘরে আসছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

এতে অবশ্য আলমের তেমন কোন মাথা ব্যাথাও ছিলো না। কারন কনডম কিনতে গিয়ে সে অনেকবার মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট নিয়ে আসছিলো। তাই নিজ গরজে ফার্মেসির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো আলেয়া। রওনা দিলেইতো হবে না। এই জিনিস কেনার জন্য চাই অভিজ্ঞতা।

হাজার হাজার অলিগলি পেরিয়েও আলেয়া কোন ফার্মেসিতে কোন মহিলা দোকানদার পেলো না। অতএব খালি হাতেই বাসায় ফিরে আসলো। ঘরে মহা উৎসাহে, মহা আগ্রহে আলম বসে ছিলো। সে ঘরে বসে থ্রী ইডিয়ট হিন্দী সিনেমাটি দেখছিলো। সেখানে আমির খানের “আজ কুছ নয়া শিখতা হ্যায়” ডায়ালটা খুব পছন্দ হলো।

সত্যিই আজ কিছু নতুন শিখবে সে। আলেয়া ঘরে ঢোকার সাথে সাথে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো “আনছো আনছো? আলেয়া এমন কাপুরুষ জীবনেও দেখে নাই। ঘরে বইসা ডিমপাড়া এর চাইতে ভালো। আল্লাহ তারে না দিছে কনডম কেনার ক্ষমতা না দিছে ডিম কেনার ক্ষমতা। খালি পারে বছর বছর বাপ হইতে।

-জীবনে কোনদিন আমারে আর ছুইবানা। যতদিন কনডম আনতে পারবা না ততদিন আমি তোমার কাছে হারাম। নতুন কিছু শেখার কপালে এমন বাঁশ পড়বে আলম ভাবেনি। প্যান্টের ভিতর জাঙ্গিয়া পরে আলম ফার্মেসির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যা থাকে কপালে, আজ না কিনে ফিরবে না সে।

প্রথম দোকানে গিয়ে দেখলো দোকানে দাড়িওয়ালা এক লোক বসে আছে। একজন মুরব্বি থেকে কনডম কেনার মত বেয়াদবি করতে না পেরে পরের দোকানে গিয়ে দেখলো ফার্মেসী ঔষুধ কিনতে আসছে এক তরুনী। ছি ছি কি লজ্জার। তরুনী বুঝে ফেলবে আলম কনডম কিনবে, সে লজ্জায় দ্বিতীয় দোকানও বাদ দিলো। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ততক্ষনে জুতোর তলা প্রায় ক্ষয়ে গেছে।

হঠাৎ চোখের সামনে একটা ফার্মেসি পড়লো। ইয়ং একটা ছেলে বসে আছে। আর কেউ নাই। এইতো মোক্ষম সুযোগ। -ভাই একটা কনডম দ্যানতো -একটা হয় না,এক প্যাকেট আলম ভাবলো এক প্যাকেট দিয়ে সে কি করবে? এত ক্ষমতাতো তার নাই।

তবুও উপায় নেই -আচ্ছা দেন একপ্যাকেট -ভাই কোনটা দিবো? -আরে ভাই দেরী হইয়া যাইতাছে। রাজা-প্রজা একটা দেন। -ভাই এখনতো রাজা চলে না। -ওহো রাজা-বাদশাহর শাসনতো খালি সৌদি আরবে। ঠিক আছে আমারে একটা প্রধানমন্ত্রী দেন।

আমগো এইখানেতো গণতন্ত্র। অতঃপর আলম হোসেন আধুনিক কনডম কিনে তার ঘরের আলোর বানে বাঁধ দিলেন। এই গল্প বলার কোন অর্থ নাই। আসুন এইবার রাজার ব্যাপারে আলোচনা করি। ছোট বেলায় রাজা ছিলো আমাদের খেলার সঙ্গী।

দোকানে গিয়ে এক টাকা দিয়ে দুইটা রাজা কিনে মুখ দিয়া ফুলাইতাম (আপচুচ কি দেয়ার কথা কি দিতাম)। এখন না বুঝি কত রাজা নষ্ট করেছিলাম সিংহাসন না দিয়েই! যে আমি দোকানে গিয়া বিনা দ্বিধায় খুশী মনে রাজা কিনতাম আজ সেই আমি ফার্মেসীতে তিনবার চক্কর দিয়েই লজ্জায় লাল হয়ে সেনসেশন কিনি। এটাইতো দিন বদলের গান। আগে রাজা ফুলিয়ে আকাশে ভাসাতাম। এখন না ফুলিয়েই নিজে ভাসি।

এবার আসি আরেক গল্পে। তখন কলেজে পড়ি। এক বন্ধু তার প্রেমিকারে পোয়াতি বানায়া দিছে। কাহিনী টের পাইছি যখন বিপদ বন্ধুর মাথার উপরে তখন। মাইয়ারেতো এভয়েশন করা লাগবে।

ঔষুধের খরচসহ বিরাট একটা এমাউন্ট। এত টাকা কই পাই। টাকার জন্য একান ও কান করতে করতে পুরা কলেজের সবকানে হেডফোনের মাধ্যমে পৌছে গেল। পুরা কলেজে রব উঠলো “ওমুক এই কামের জন্য চান্দা তুলতাছে”। ঘটনার জল ঘোলা হইতে হইতে বুড়িগঙ্গা হয়ে গেল।

আমি বললাম “বুঝ ঠ্যালা জল দেয়ার সময় মাথায় রাখতে হয়ে”। যাই হোক শেষ পর্যন্ত কয়েকহাজার টাকা খরচ করে রক্ষা পেল বন্ধু। কলেজ বাজারে নতুন খবর খুব জনপ্রিয় হইলো “ওমুক ২ টাকা বাচাইতে গিয়া ৪ হাজার টাকা গচ্চা দিছে”। কাহিনী কিছুটা বানানো হইলেও একেবারে মিথ্যা না। আহারে ছোটবেলার রাজা নিয়ে খেলার কথা মনে পড়ে গেল।

বন্ধুরে ঝাড়লাম। বললাম “শালা যদি ছোটবেলায় দুএকটা রাজা জমিয়ে রাখতি তবে এই ঘটনা ঘটতো না”। বন্ধু চিৎকার করে বললো “আমাকে একটা রাজা দাও,একটা রাণী দাও। আমি তাহলে কোন রাজকুমার বা রাজকুমারী না দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে ভুমিকা রাখব”। রাজার গুরুত্ব তখনও বুঝি নাই।

এখন বুঝি। নাম রাজা হোক,রাণী হোক,হিরো হোক নামে কি আসে যায়। প্লিজ রাজা হিরো যেইটাই ব্যবহার করেন না কেন “দ্যাশটারে ফার্মগেইট বানানো থেকে বিরত থাকেন” ।

Sunday, September 5, 2021

বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিষিদ্ধ বই



খুব সম্ভবত বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম নিষিদ্ধ বই হচ্ছে, নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ”!

সেটি প্রকাশিত এবং মঞ্চস্থ হবার সাথে সাথে দেশময় তুমুল আলোচনার বন্যা আসে।
যার ফলে এক ধরনের ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের ঝাঁঝ পাওয়া যায় দেশময়,যা ইংরেজরাও টের না পেয়ে পারেনি। কিন্তু ইংরেজদের পক্ষে এই কিষাণদের কথ্য ভাষায় রচিত নাটকের যথাযথ রসাহরন করা সম্ভব ছিলো না,তাই ইংরেজরা গিয়ে ধরলো পাদ্রী জেমস লঙকে। কিন্তু পাদ্রী লঙ সাহেব নিজেও এর অনুবাদের কাজে খুব একটা এগুতে পারলেন না; কেননা কিষাণদের চলতি গ্রাম্য কথ্য ভাষায় লেখা এই নাটকের লক্ষ্যই ছিলো গ্রামের মানুষের বুকে বসে যাওয়া! যা কোন ইউরোপিয়ানের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে তুলে এনে অনুবাদ করা কষ্টসাধ্য খুবই।
পাদ্রী লঙ অনুরোধের ঢেঁকী গিলে শরণাপন্ন হলেন এমন এক বাঙ্গালীর যার কিনা বাংলা বা ইংরেজী উভয়ই ভাষাতেই অত্যন্ত দক্ষতা আছে। সে সময়ে এই রকম যোগ্যতার লোক বলার মতো একজনই ছিলেন,তার কথা অনুমান করতে থাকুন-কে হতে পারে; ততক্ষনে বাকিটুকু শেষ করি।
ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হলো নাটকের ১৮৬১ সালে; অনুবাদের বইয়ে কোন নাম নেই অনুবাদকের! পাদ্রী লঙ সাহেব নাটকের শুরুতে ভুমিকা লিখে জানালেনঃ কোন এক সুহৃদ “নেটিভ” এর বদান্যতায় এই অনুবাদ করা হয়েছে।
ইংরেজ সরকার এবার যথাযথ স্বাদ পেলো এই নাটকের,তাদের টনক নড়লো! কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে,কেননা ইংরেজী অনুবাদ হাতে রেখে ইউরোপের হরেক ভাষায় এর অনুবাদ হতে লাগলো,জনপ্রিয় হতে লাগলো আরো এই নাটক।
“নীল দর্পণ” নাটকের ভিলেনদের (নীলকরদের) এবার শরীর জ্বলে গেলো,তারা মামলাই করে বসলো,অনুবাদকের নাম পেয়ে আদালত ডেকে পাঠালেন পাদ্রী লঙ সাহেবকেই। কিন্তু তিনি আদালতে বা কোনভাবেই আসল অনুবাদকের নাম প্রকাশে রাজী হলেন না। ফলে বিচারে খোদ পাদ্রী লঙ সাহেবেরই এক হাজার টাকা জরিমানা এবং সাথে এক মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় "নীল দর্পণ",কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই নিষেধাজ্ঞা টিকে নি!
তিনি একমাসের কারাদন্ড থেকে রেহাই পাননি ঠিকই,কিন্তু তার অর্থদন্ড আদায়ের সময় দেখা গেলো একজন “নেটিভ” তার নিজের থেকেই এক হাজার টাকা অযাচিতভাবেই দিয়ে গেছেন।
এই ব্যক্তিটি হচ্ছে কালীপ্রসন্ন সিংহ।

আর শুরুতে যার কথা হচ্ছিল,যিনি দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” প্রথম ইংরেজী অনুবাদ করেন তিনি আর কেউ নন,তিনি একসময়ের ““ওয়ানা বি” ইংরেজী সাহিত্যিক” মাইকেল মধুসূদন দত্ত!

তথ্যসূত্রঃ 

  • নীল দর্পন, দীনবন্ধু মিত্র
  •  https://bn.wikipedia.org