আমাদের সমাজের অনেকগুলি অপবিজ্ঞানের মধ্যে জ্যোতিষবিদ্যা একটি অন্যতম অপবিজ্ঞান , যা দীর্ঘদিন আমাদের ঘাড়ে চেপে আছে কর্ত্তার ভুতের মতো । সামন্ততন্ত্র ও ধনতন্ত্রের কুফলের সাঁড়াশি চাপে আমাদের সমাজের দুর্বল হয়ে যাওয়া লোকজন জ্যোতিষবিদ্যার বশীকরণের মধ্যে ঢুকে হাঁকপাঁক করছে । শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিচালিত কিছু সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল খুললেই এদের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে । কিছু চ্যানেলতো এই ভন্ড ভবিষ্যৎ বিক্রেতা অসৎ জ্যোতিষীদের রাতদিন বসিয়ে রাখে আপনার ভবিষ্যত বিক্রী করতে । মানুষও যেন বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছে । সামন্ততন্ত্র-ধনতন্ত্রের সাঁড়াশি চাপে দুর্বল মানুষ নিজের উপর আস্থা ক্রমশ হারিয়ে ফেলেছে এবং এই প্রতারক জ্যোতিষিদের শিকার হচ্ছে গায়ে-গঞ্জে-শহরে । এখানে শুধু অশিক্ষিতেরা নয় ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষিতেরা পর্যন্ত প্রতারিত হচ্ছেন ।
আমি ছোটবেলায় সন্ধ্যা অবধি বাইরে খেলা, বৃষ্টিতে ভেজা, খাবারে অনিয়ম এসব কারনে ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়তাম। আমার মা এতে খুবই চিন্তিত থাকতেন এবং ডাক্তার দেখানোর পরও যখন আমি অনিয়ম করতাম তাই ডাক্তারি পথ্য কোন কাজই করতো না। আমাদের বাসায় নিয়মিত এক সন্ন্যাসী গোছের লোক ভিক্ষে নিতে আসতো। একদিন সে মাকে বোঝালো আমার রাশিতে নাকি রাহুর দশা আছে, আর তা থেকে পরিত্রান পেতে গ্রহপূজা করতে হবে। লোকটা মায়ের কাছ থেকে গ্রহপূজার নাম করে অনেক টাকাপয়সা নিয়েছিলো অথচ যার জন্য রাহু-কেতু-গ্রহ গতিপথ বদলে ফেলছে সেই আমিই কিছু জানতাম না। রাহু কেতুর গতিপথ পরিবর্তন হলো কি না জানিনা কিন্তু অনেকদিন পরও আমার কোন পরিবর্তন না হওয়ায় মা বিষয়টি বাসার সবাইকে বলেন। বছরখানেক পর সেই লোককে আমি রাস্তায় পেয়ে বাড়িতে নিয়ে আসি এবং হাস্তরেখা দেখিয়ে বলি রাহুর দশা কি কেটেছে, লোকটি হ্যা বললে তার গালে জোরে থাপ্পড় মারি এবং বলি আমার রাহুর দশা কেটে গেলেও তোমার শনির দশা কাটেনি। যে জ্যোতিষি নিজের ক্ষেত্রে শনির দশা রদ করতে পারলেন না তিনি অন্যদের সাফল্য কি করে আনবেন ?
আমার গল্প বলার কারণ এইসব ভাগ্যের কারবারীদের হাতে কত মানুষ সর্বসান্ত হচ্ছে ভাবা যায় না । ছেলেদের মধ্যে তাবিজ-কবজ-মাদুলি কানে দুল, হাতে অষ্টধাতু-রত্ন বালা পরার ধুম বেড়েছে। টিভি খুললেই ধনলক্ষী যন্ত্র হনুমান চল্লিশা , পাওয়ার ব্রেসলেটসহ অনেক যন্ত্রের বিজ্ঞাপনে দুর্বল মানুষ সব হারাচ্ছে । কাগজে এদের বিজ্ঞাপন মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ধনতন্ত্রের জাতাকলে মানুষের সমস্যা বাড়ছে আর মানুষ দুর্বল থেকে দুর্বল হচ্ছে , পরিবেশ দূষণের জন্য রোগ ব্যাধি বাড়ছে , অসহায় মানুষ এদের কাছে যাচ্ছে আর সর্বসান্ত হচ্ছে। মানুষ ধীরে ধীরে কুসংস্কারের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়ছে । মানুষও বর্তমানের থেকে বেশি করে ভবিষ্যতের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছে ।
এসবের প্রতিবাদ করলেই গোবিন্দ পানেসর ও নরেন্দ্র দাভেলকরদের মত যুক্তিবাদী মানুষদের নাগপুর ও মুম্বাইয়ের প্রকাশ্য স্থানে মরতে হয় হিন্দু মৌলবাদীদের গুলিতে বা মুসলিম –খ্রীস্টান মৌলবাদীদের হাতে। ঢাকার রাজপথে অভিজিত রায়কে মুসলিম মৌলবাদীদের গুলিতে মরতে হয় । এতে বোঝা যায় সামন্ত ও ধনতন্ত্রের প্রভুরা বিরোধীতা পছন্দ করেনা । যাদের বাঁচিয়ে রাখে এইসব অপবিজ্ঞান কুসংস্কার ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিরা । সব ধর্মের মৌলবাদীরা একই রকম হিংস্র জন্তুর মত , বিরোধিতা করলেই নখ দাত নিয়ে ছিড়ে ফেলতে চায় ।
আমাদের দেশে বেদ ও উপনিষদের কর্ম ও জ্ঞানের দার্শনিক বলিষ্ঠতা হারিয়ে যেদিন থেকে গণমানসে নিয়তিবাদ চেপে বসল , সেদিন থেকে এই জ্যোতিষবিদ্যা প্রসার লাভ করল । নিয়তি বা অদৃষ্টবাদের দার্শনিক অভিজ্ঞান ভারতীয় বিদ্যায় নতুন ধারার সঞ্চার করেছিল, যা পরিপূর্ণ রূপ পেল গীতায় ।যেখনে মানুষের সমগ্র জীবনই যেন পূর্বনির্ধারিত নিয়তির নির্দেশে পরিচালিত হয়। সমগ্র ধর্মগ্রন্থে পুরানে শুধু ব্রাহ্মণ , দেবদেবী আর রাজা্র পূজা, শূদ্রদের জন্য শুধু ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের সেবা অর্থাৎ উচ্চবর্ণের মানুষের জন্য শ্রমদান । আর সব কিছুই যেন নিয়তি নির্দিষ্ট । মানুষের প্রচেষ্টা বা পরিশ্রমজাত ফলাফল ছিল মানুষের নিয়ন্ত্রণহীণ ও পূর্বনির্ধারিত। মানুষের ব্যাক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবনের প্রচেষ্টা, উদ্যম বা অনুসন্ধিৎসার কোন ভূমিকা ছিলনা । ফলে উদ্যমহীনতা ও অণ্বেষণহীনতায় সংক্রামিত ভারতীয়দের জীবনে শুধু হতাশা আর পরমাত্মায় বিলীনের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আর কিছু ছিলনা । সেটা বোঝা যায় সুদূর উত্তর গোলার্ধ থেকে এসে ক্যাপ্টেন কুক দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করল এবং দখল করে নিল , আর ভারতীয় উপমহাদেশের বাসিন্দারা দেশের বাইরে বেরিয়ে কি আছে দেখল না কারণ কালাপানি পেরনো নিষেধ আছে ধর্মগ্রন্থে । এই উপমহাদেশের উর্বর জমি ও একটি কারণ এই নিস্পৃহতার । একসময় সমগ্র ইউরোপকেও একসময় গ্রীকদেশীয় অদৃষ্টবাদ গ্রাস করেছিল । যীশুখ্রীস্ট এই অদৃষ্টবাদের মূলে আঘাত করে ইউরোপের মানুষের জীবনবোধে প্রথম পরিবর্তন নিয়ে আসে। ভারতীই উপমাহাদেশে বুদ্ধের পরবর্তীকালে সেইরকম কোন মহামানব না আসার ফলে একদিকে দুঃখ, দুর্দশা বিপরীতে শ্রমহীন পরজীবীদের বিলাসী জীবন সবই ছিল নিয়তি নির্দিষ্ট। সামগ্রিকভাবে এই নিয়তিবাদী দর্শণ বিজ্ঞানের ভবিষ্যত পরিপন্থী। এক অদ্ভুত বিষন্নতা নিস্পৃহ নির্লিপ্ত অলস জীবনবোধে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজ। ব্রিটিশদের হাত ধরে পাশ্চাত্য শিক্ষা না এলে বিশ্বকে জানার যতসামান্য উৎসাহই সৃষ্টি হতোনা । ভারতীয় রাজশক্তি এই অপবিজ্ঞানকে লালন পালন করেছে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে। যদিও সেকালেই গণৎকারকে রাজার কেটে ফেলার গল্প তৈরি হয়েছিল। এক রাজার রাজসভার জ্যোতিষী একদিন সবার হাত দেখছে এবং তাদের আয়ু বলে দিচ্ছে , এভাবে রাজার হাত দেখে রাজাকে বললেন , মহারাজ আপনার আয়ু আর বেশী দিন নেই। রাজা খুব চিন্তায় পড়ে গেল , ঠিক সেই সময় সেনাপতি এসে রাজার এমন চিন্তার কারণ জানতে চাইলো , রাজা তাকে জ্যোতিষীর কথা বললেন । তৎক্ষণাৎ সেনাপতি জ্যোতিষীকে জিজ্ঞেস করলেন , গণৎকার আপনার আয়ু কতোদিন? গণৎকার বললেন আমার আয়ু এখনো অনেকদিন। সেনাপতি খাপ থেকে তলোয়ার বার কর সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতিষীর মাথা কেটে দিল। এবং রাজাকে বললেন মহারাজ এইসব জ্যোতিষ বিদ্যা সব বুজরুকিতে ভরা , এগুলিতে বিশ্বাস করলেই ঠকবেন ।
আদিম মানুষকে সব থেকে বেশী প্রভাবিত করেছিল আকাশ। একদিকে তার অসীম দান, অপর দিকে বজ্রপাত ঝড়ঝঞ্ঝা তুষারপাত বন্যা খরা সাইক্লোন সবই আকাশ থেকে সৃষ্টি। সুতারাং মানুষের কল্পনায় জিবনে বিপর্যয় বা সৌভাগ্যর রহস্যটা লুকিয়ে আছে দীপ্তিমান সূর্য আর নক্ষত্রখচিত বিশাল আকাশের অপার রহস্যে। প্রকৃতির রহস্য উন্মোচনে মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন প্রয়াসের শ্রেষ্টতম স্রোতের সাথে ভাগ্য গণনার বিপরীতমুখী উদ্যমহীন নিয়তিবাদী ধারাটিও মিলে মিশে একাকার হয়েছিল অনুসন্ধানের সেই অনগ্রসর স্তরে ।প্রাচীন মানুষের কাছে টেলিস্কোপ বা ঐ ধরণের কোন যন্ত্র ছিল না। ফলে জ্যোতিষবিদ্যা কয়েক হাজার বছর ধরে শ্রেষ্ঠ মেধা, অসাধারণ মননশীল চিন্তানায়ক মনীষীদের অনুসন্ধানের এবং সস্নেহ প্রশ্রয়ে মানুষের বিশ্বাসের গভীরে শিকড় ছড়াতে পেরেছিল । চার্বাক ঋষিরা , টলেমি , গ্যলিলিও , কোপার্নিকাস , কেপলার জিওনার্দো ব্রুনো এরা এই বিশ্বাসের গোড়ায় আঘত হানে ।যদিও ধর্মভীরু টলেমি পরে মত পালটে ফেলেছিলেন। ভারতে চার্বাক গোষ্ঠী প্রথম এই অদৃষ্টবাদের গোড়ায় আঘাত হানে। গ্যলিলিওকে কারাগারে , জিওনার্দো ব্রুনোকে জ্যন্ত পুড়িয়ে আর চার্বাকদের হত্যা করে সত্যের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ক্রুশে বিদ্ধ জিওনার্দো ব্রুনোর সেই উক্তি আমাকে জ্যন্ত পুড়িয়ে মারলে বা না মারলে ও পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরবে। বিজ্ঞান পড়ে বিজ্ঞান মনস্ক হওয়া আর ডিগ্রী অর্জন করার জন্য পড়ার মধ্যে আকাশ –পাতাল ফারাক। সুতারাং আমাদের দেশে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী , চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার আইনজীবী শিক্ষক অধ্যাপকেরা মনু খনা শ্রীভৃগুদের কাছে কবজ মাদুলি আংটির জন্য লাইন দেবে এতে আর আশ্চর্য কি !
মূলত জ্যোতিষবিদ্যা এবং জ্যোর্তিবিদ্যা এক নয় তা অনেক শিক্ষিত লোকই জানে না ।
আমরা টেলিস্কোপ ও উপগ্রহের ছবি থেকে জানি সূর্যকেন্দ্রীক এই সৌরমন্ডল ।মহাবিশ্বে লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি আছে । আমাদের একটা গ্যালাক্সিতে কোটী কোটী নক্ষত্র আছে । প্রতিটি গ্যালাক্সি গতিশীল ।কিন্তু জ্যোতিষে পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের বর্ণণা আছে ।নব গ্রহে সূর্য চন্দ্র বৃহস্পতি , মঙ্গল , শুক্র , শনি , বুধ রাহু কেতু ইত্যাদি গ্রহ , আজকের দিনে মানুষ মহাকাশে পৌঁছনোর পরে ভাবতে পারেন সূর্য-চন্দ্র-রাহু-কেতু গ্রহের মধ্যে পড়ে? আরো নতুন কতো গ্রহ আবিষ্কার হয়েছে এবং এখনো অনাবিষ্কৃত অনেক গ্রহ হয়তো আছে । আর পৃথিবী কেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থা এখনো মেনে নিতে হবে? আমাদের বিজ্ঞানী ডাক্তার শিক্ষক অধ্যাপক মহাশয়েরা একবারও এগুলি ভাবেন না যখন পাথর আংটি কবজ মাদুলি ধারণ করেন ।সূর্য পরিক্রমারত পৃথিবীর একটুকরো আকাশকে ক্রান্তিবলয় ধরা হয় । এই জ্যোতিষশাস্ত্রে পৃথিবী স্থির ও পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ রত জ্যোতিষ শাস্ত্রে নির্দেশিত গ্রহরাও ভিন্ন ভিন্ন গতিতে এই বলয় ধরে বহমান । কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে ক্রান্তিবলয়ের ওপর মাত্র ২৭ টি নক্ষত্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে । এরা হল অশিনী, কৃত্তিকা রোহিণী পুনর্বসু পুষ্যা অশ্লেষা মূলা পূর্বষাঢ়া অনুরাধা চিত্রা ভরণী মৃগশিরা আর্দ্রা মঘা পূর্ব ফাল্গুনি , উত্তর ফাল্গুনী , হস্ত্য, স্বাতী , বিশাখা , অনুরাধা , জ্যাষ্ঠা , শ্রাবণা , ধনিষ্ঠা , শতভিষা , পূর্বভাদ্রপদ , উত্তর ভাদ্রপদ , রেবতী ইত্যাদি । । নিরক্ষীয় বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রীকে ১২টি ভাগ করা হয়েছে । যে ছবি ঠিকুজিতে থাকে ।এই ১২টি ভাগের এক একটিকে একটি রাশি ধরা হয়েছে ।রাশিচক্রের পথে ভিন্ন গতিতে আবর্তমান নয়টি গ্রহ ।এক একটি রাশিতে যে নক্ষত্রগুলির অবস্থান তাদের বিন্যাস বৈশিষ্ট্যে মানুষের কল্পনা জন্তু বা অবয়বের ছায়া ফুটে উঠত তাদের দোষগুণের বৈশিষ্ট্যগুলি মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে দেখা হয় । এগুলিকেই এক একটি রাশি বলে । এই শাস্ত্রে জন্ম সময়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ , মানুষের জন্ম মুহূর্তে গ্রহ নক্ষত্রের আপেক্ষিক অবস্থান তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে ।জাতকের জন্মের সময় যে নক্ষত্রটি পুব আকাশে থাকে সেটি হয় জন্মলগ্ন এবং সে মুহূর্তে যে রাশিতে চন্দ্র অবস্থান করে সেটি হল জন্মরাশি । জ্যোতিষবিদরা বলেন প্রত্যেক গ্রহ নক্ষত্রের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও একটি বিশেষ ধরণের বিকিরণ ক্ষমতা আছে, এই বিকিরণ প্রভাব বিস্তার করে মানুষের জীবনে। সংক্ষেপে আমি জ্যোতিষবিদ্যা সম্পর্কে বললাম । এই তত্ত্বের অসাড়তাগুলি নিচের অল্প কয়েকটি প্রশ্নে বিদ্যমান -----
১। মহাকাশের কোটি কোটি নক্ষত্রের মধ্যে কেন মাত্র ২৭ টিকে ধরা হবে ? আমেরিকান বিজ্ঞানী হাবেলের পরীক্ষায় ধরা পড়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটী গ্যালাক্সি আছে , প্রতিটি গ্যালাক্সিতে কোটি কোটি নক্ষত্র আছে । ব্রহ্মাণ্ড প্রতিদিন বাড়ছে । তাহলে মানুষের ভাগ্য গণনার ক্ষেত্রে শুধু ২৭ টি নক্ষত্রকে ধরা হবে কেনো ?
২। আমরা জানি মহাকাশের কোনো কোনো নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে আসতে ৪/৫ বছর লাগে , তাহলে জাতকের জন্ম মুহূর্তে যে নক্ষত্র দেখা যায় তা থেকে অনেক আগেই বিকিরণ শুরু হয়েছে , তাহলে সেই নক্ষত্রকে জ্যোতিষে জাতকের জন্মরাশি ধরা হবে কেন ?বা যে নক্ষত্র মারা গেছে অথচ তার আলো জাতকের জন্ম মুহূর্তে দেখা গেছে তাকে জাতকের জন্মরাশি কি ধরা হবে ?
৩। নবগ্রহে সূর্য চন্দ্র রাহু কেতু ইত্যাদি গ্রহ – আপনি আজকের দিনে বিশ্বাস করেন কি ? অথচ ইউরেনাস নেপচুন প্লুটো ভল্ক্যান প্রভৃতি গ্রহকে হিসাবে ধরা হবে না কেন ?
৪। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে একসাথে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় । প্রত্যকের জন্মরাশি এক নয় , একসাথে জন্ম না হওয়া সত্বেও একসাথে মৃত্যু হয় কেন? সুনামিতে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে , তারা সবাই এক বয়সী নয় , তা সত্বেও সবাই একসাথে মরলো কেনো ?
৫) পৃথিবী কেন্দ্রীক ব্যবস্থাই এখনো জ্যোতিষের মূল ভিত্তি । তাহলে আজকের দিনে ওনারা যা বলেন তা ডিগ্রীধারী পণ্ডিতেরা কি করে বিশ্বাস করেন ?
এরকম আরো অনেক যুক্তির অবতারণা করা যায় । আমার খারাপ লাগে শুধু মুনাফার জন্য প্রচার মাধ্যম জ্যোতিষবিদ্যার গুন , পাথর , কবচ মাদুলি এদের আধুনিক রূপ পাওয়ার ব্রেসলেট হনুমান চাল্লিশা ধনলক্ষী যন্ত্রের প্রচার করে সমগ্র সমাজকে নিয়তির দাস করে চলেছে এবং বিভ্রান্ত করছে । এর মাধ্যমে রত্ন ব্যবসায়ীদের মুনাফা বাড়ছে আর সাধারণ মানুষ সর্বসান্ত হচ্ছে। হাবিজাবি শিল্পীরা এইসব ঠগেদের বিজ্ঞাপন দিতে পারে , তা বলে অমিতাব বচ্চন এইসব লোক ঠকানোর বিজ্ঞাপন দেবে ! আসলে ভোগবাদে সবাই টাকায় বিক্রী হয় ।
গোবিন্দ পানেসর দাভালকার অভিজিৎ রায়দের মেরে যুক্তিবাদী আন্দোলন শেষ হবে না । সামন্ত্রতন্ত্রের এবং ধনতন্ত্রের কুফল মানুষ ভোগ করছে । হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা কুসংস্কার মানুষের মনে গেঁথে আছে । মেটারিয়ালিটি শিল্পায়নের ফলে দ্রুত পরিবর্তন হয় কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া স্পিরিট দ্রুত পরিবর্তন হয় না । জানি এর উৎপাটন হওয়া এত সোজা নয় এত তাড়াতাড়ি । আশাবাদী হতে ক্ষতি কি ?