Tuesday, May 21, 2019

ঈশ্বরের সাথে এক অবিশ্বাসীর কথোপকথন।

এক অবিশ্বাসীর বিচার চলছে। আমলনামায় চোখ বুলিয়ে যমকে উদ্দেশ্যে করে ঈশ্বর: এই অবিশ্বাসী-পাপীকে সোজা নরকে নিক্ষেপ করো। 

অবিশ্বাসী: এইডা কোনো কথা কইলা? 
কি এমন অপরাধ করছি আমি? 

ঈশ্বর: তুই আমার কোনো নির্দেশ মানিস নাই। 

অবিশ্বাসী: কোনডা যে তোমার নির্দেশ.......তা তো অহন পর্যন্তও বুঝবার পারলাম না। দুনিয়ায় হাজারটা ধর্ম পাঠাইছিলা তুমি। হাজারটা ধর্মীয় সম্প্রদায় মারামারি-ঠাপাঠাপি করেছে। তুমি যদি মানুষের ভালোই চাইতা, তাইলে এই কাম করতা না।

ঈশ্বর: কস​ কি রে হালার পুত?

অবিশ্বাসী: ঠিকই তো কইছি। তুমি হাজারটা ধর্ম পাঠাইছো এবং প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের মনের মধ্যে ঢুকাইছো যে, তাঁদের ধর্মটাই সঠিক, বাকিটা মিথ্যা। ফলে সব সাম্প্রদায় ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করেছে, নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরা ভাই ভাই, বাকিরা চুদির ভাই। এইটা কোনো কথা হইলো? তাইলে তুমি কোনডা মানতে বলতাছো আমারে? সবই তো খারাপ। লালনের গান হোনো নাই? : ‘বেদ বিধি পদ শাস্ত্র কানা............এক কানা কয় আরেক কানারে, চলো এবার ভবো পাড়ে। নিজে কানা পথ চেনে না পরকে ডাকে বারংবার।’

ঈশ্বর: তুই যে সমাজে জন্মেছিস ওই সমাজের লোকজন যে ধর্ম মানতো, সেইটাই মানতিস। 

অবিশ্বাসী: ওরকম ধর্ম মানার কোনো মূল্য আছে? দুনিয়াতে হাজার বছর ধরে অনেক মিথ্যাই প্রতিষ্ঠিত ছিল। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ জানতো, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে। আমার সমাজ আর পরিবার যদি তোমারে শয়তান বলতে শেখাতো আর আমি যদি তাই মানতাম তাইলে তুমি খুশি হইতা? প্যাগান ধর্মের লোকেরা নাকি শয়তানকে পূজা করতো। ওই ধর্মের অনুসারীদের ঘরে তুমি যে শিশু পাঠাইছো ওই শিশু বড় হয়ে শয়তানকেই পূজা করেছে। ওই শিশুর দোষটা কি?

যাইহোক, এই যে, কিছুক্ষণ আগে কয়েকজনরে স্বর্গে পাঠাইলা, উহারা কোনো মানুষের পর্যায়ে পড়ে? স্বর্গটাকে তো গরু-ছাগলের খোয়ার বানায়া ফেলতাছো। সেটা তোমার রুচি। তোমার রুচির ওপর আমার আস্থা কোনো কালেই ছিল না। তুমি গোলাম আযম-নিযামীরেও স্বর্গে পাঠাইলে অবাক হমু না। 

ঈশ্বর: স্বর্গে যাদের পাঠাইলাম ওরা মানুষ না? সমস্যা কি ওদের? ওরা তো আমারে মানছে। 

অবিশ্বাসী: ওরা যে তোমারে মানছে----ওইটাই তো সমস্যা। জন্মের পর থেকে ওদের সমাজ আর পরিবার বলছে যে, ইশ্বর আছে, ঈশ্বর ভালো, ঈশ্বরের নিয়ম মানতে হবে। তাই ওরা মানছে। ওদের পরিবার-সমাজ যদি বলতো ঈশ্বর নাই বা ঈশ্বর আসলে শয়তান, আর শয়তানই আসলে ঈশ্বর, মহৎ...। ওরা তো তাই-ই মানতো। ওদের তো বিচার বুদ্ধিই নাই। ওয়ারিশ সূত্রে ওরা আস্তিক ছিল। ওদের কোনো ছিদেম (বিচারবুদ্ধি) নাই। ওরা ছাগল ছাড়া আর কি! দুনিয়াতে এই ছাগলগুলোরে নিয়েই ধর্ম ব্যবসায়ীরা খেলেছে। দুনিয়ায় অশান্তি তৈরি করেছে। ওই ছাগলগুলো ছিল ধর্ম ব্যবসায়ীদের ফুটবল। 

তুমি তো দেখছোই, তোমার দেওয়া বহুবিধ ধর্ম দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি ছাড়া কোনো কামে আসে নাই। ইউরোপে খ্রিস্টানরা যখন ধর্মীয় শাসনকে লাত্থি মেরেছে তখনই তারা উন্নতি করেছে। দাসপ্রথা বিলুপ্ত করেছে। গির্জা তাতেও বাধা দিয়েছিল। যাইহোক, গির্জা লাত্থি মারার পর ওরা সব নাগরিককে সম্মান দিতে শিখেছে, উন্নত হয়েছে। যদিও সাম্রাজ্যবাদী ওই দেশগুলো অন্য গরিব দেশের জন্য মঙ্গলজনক ছিল না। তাঁরা পশ্চাদপদ ধর্মীয় প্রভাবিত দেশে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ধর্মকেই ব্যবহার করেছে। তারাই তালেবান বানিয়েছে নিজেদের স্বার্থে। আবার তালেবানরে সন্ত্রাসীও বানিয়েছে, নিজেদের স্বার্থে। সে অন্য বিষয়। পুঁজিবাদী সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে ওই সব দেশের কূট রাজনীতি অন্য দেশের জন্য ক্ষতিকর ছিল। কিন্তু এটা তো মানতেই হবে, ধর্মের বলয় থেকে বের হয়ে উন্নত দেশগুলোর নাগরিকেরা সভ্য হয়েছিল। তারা অন্তত নিজেদের দেশের সব মানুষকে সম্মান করতে শিখেছিল। কিন্তু যে জাতি যত বেশি ধর্মপ্রবণ ছিল ওই জাতি ততো বেশি দুই নম্বর অসৎ ছিল। তা তো তুমি দেখেছোই। লোভ আর ভয় থেকে কখনোই মানুষ নৈতিক হয়নি। 

ঈশ্বর (কিছুক্ষণ চিন্তামগ্ন থাকার পর): বুঝলাম। তুই কোনো ধর্ম না-হয় নাই মানলি, আমারে তো মানবি। বিশ্বাস করবি। নাকি?

অবিশ্বাসী: আরে রাখো তোমার মানা। মানা না মানায় কি আসে যায়? আমি কি তোমার হাত-পা ধরে বলেছিলাম, আমারে দুনিয়ায় পাঠাও? আর দুনিয়াতে তোমার ইজারাদারদের (ধার্মিকেরা) কর্মকাণ্ডে মেজাজটাই তো বিগড়ে ছিল। দুনিয়ায় কোনো কর্মকাণ্ডেই তোমার উপস্থিতি দেখি নাই। একটা শিশু পাপ করার আগেই কানাখোড়া হয়ে কেমনে জন্মায়? ওই শিশুর দোষটা কি? ফিলিস্তিনে ইহুদিরা নারী-শিশুসহ বাড়িঘর-মাজার বোমা মেরে তুলা-তুলা বানায়া ফেলাইছিল। কই আছিলা তহন? .....অাঁটি বান্দিতিছিলানি? যাউকগা, তোমার কাছে একটা প্রশ্ন: কোনো লোক যদি খারাপ উদ্দেশ্যে খারাপ কিছু তৈরি করে তবে সে ভালো না খারাপ? 

ঈশ্বর: অবশ্যই খারাপ। 

অবিশ্বাসী: তাইলে শয়তানরে যে বানাইছে সে কেমন?

ঈশ্বর: তুই একটা বেয়াদব। 

অবিশ্বাসী: আমারেও তো নাকি তুমিই বানাইছো? দুনিয়াতে উচিত কথা বলতাম বলে ভণ্ড সব লোকজন আমারে বেয়াদব কইতো। এহন তুমিও যদি ওই একই কথা কও, তাইলে কেমনে হয়?

ঈশ্বর: দুনিয়াতে তুই আমার নামে আজেবাজে কথা বলেছিস। 

অবিশ্বাসী: আজেবাজে কথাতো কই নাই। সমালোচনা করেছি। তোমার যে চরিত্রের কথা বিশ্বাসীদের মুখে শুনেছি, তাতে সমালোচনা করাটা স্বাভাবিক না? হাগামোতা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে তোমার মন্ত্র পড়তে হবে। সব সময় তোমার পূজা করতে হবে। এসব কোনো কথা হলো? দুনিয়ায় গেছি কি বাল ছেড়ার জন্য? দুনিয়াটা দেখুম না? অলটাইম তোমার নাম নেওয়া আর পূজো করার কি আছে? এসব ফালতু বিধান দেখেই বোঝা যায়, তোমার মানসিকতা অত্যন্ত নিচুমানের। আদিম যুগের মানুষের মতো।

ঈশ্বর: কস কি?

অবিশ্বাসী: ঠিকই কই। ধরা যাক, কাউরে আমি কোনো জিনিস দিলাম। আর আমি মনে মনে চাইলাম ওই ব্যক্তি সারা জীবন আমার নাম নিক এবং আমার স্তুতি করে যাক। আমি কি তাহলে ছোটলোক মানসিকতার লোক নই? যে মানুষটাকে আমি জিনিসটা দিয়েছিলাম, সে যদি জানতে পারে আমার মানসিকতা এ ধরনের তবে ওই মানুষটার ন্যূনতম ব্যক্তিত্ব থাকলে বলবে, তোর এই বালের জিনিস কি আমি চেয়েছিলাম? নে ধর, ফিরিয়ে দিলাম। তোমার যায়গায় আমি হলে এসবে ধুনফুনের কথা কইতাম না। আমি মানুষরে স্বাধীন বানায়া দিতাম। জন্মের সময়ই কাউরো কানা-খুঁড়া-আন্ধা বানাইতাম না। সব মানুষরে সমান অধিকার দিতাম। আর তুমি, যে কয় খান কেতাব পাঠাইছো, ওই কেতাব শান্তি প্রতিষ্ঠা না করে হাজারটা বিভাজন তৈরি করেছে। তুমি যদি মানুষের শান্তিই চাইতা, তাইলে এমন বাণী পাঠাইতা, যা হতো শ্বাশ্বত, চিরন্তন। এবং সবাই মেনে চলতো। 

ঈশ্বর: তাইলে তুই কি কইতে চাস? আমি ভুল করছি?

অবিশ্বাসী: এইডা যদি এহনও না বোঝো, তাইলে কেমনে হয়। তুমি লোভ আর ভয় দেখাইছো। তুমি ক্ষমতার জোরে পূজো আদায় করতে চাও। সম্মান কি জিনিস তাই তো বোঝো না তুমি। আমাকে জানার পর কোনো ব্যক্তির যদি আমাকে পছন্দ হয়, তবে সে মন থেকে সম্মান করবে। ওইটাই প্রকৃত সম্মান। আর আমার ক্ষমতা আছে, তাই ভয়ে কোনো লোক যদি আমারে সম্মান করে তাহলে ওইটা কোনো সম্মান হইলো? তুমি লোভ আর ভয় দেখায়া সম্মান-শ্রদ্ধা এসব আদায় করতে চাইছো। 

ঈশ্বর: তার মানে তুই কি বলতে চাস? কেউ আমারে মন থেকে সম্মান করে নাই? ভয় আর লোভ থেকে সম্মান করে?

অবিশ্বাসী: এ ব্যাপারে আমি তোমারে কোনো কথা কইতে চাই না। তবে তোমারেই একটা প্রশ্ন করি: তুমি যদি বলতে, দুনিয়ার পর সব শেষ, আর কোনো হিসাব-নিকাশ থাকবে না। স্বর্গ-নরক বলে কিছু নেই। তারপরও তোরা মানুষেরা যদি আমার কতোগুলো নির্দেশ পালন করিস, তবে আমি খুশি হবো। তাহলে কি তোমার খুশির মূল্য দিত মানুষ?

ঈশ্বর: তোরা (মানুষ) খারাপ। লোভ আর ভয় না দেখাইলে তোরা ঠিক হইতি না। 

অবিশ্বাসী: হা...হা...হা....হা...। লোভ আর ভয় দিয়ে মানুষ কি ঠিক হইছিল? বরং দুনিয়াতে মানুষের মনের মধ্যে মারাত্মক লোভ ঢুকাইয়া রাখছিলা। লোভ আর ভয়ই ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ জিনিস। 

ঈশ্বর: কেমনে খারাপ?

অবিশ্বাসী: তুমি কইছো দুনিয়াতে মাল (মদ) খাওয়া হারাম। আর স্বর্গে মালের নদী (সারাবুন তাহুরা) বানায়া রাখছো। এইটা কোনো কথার মতো কথা? আবার তুমি কইছো, দুনিয়াতে অবাধে সেক্স করা যাবে না। অথচ বেহেশতে হুরপরী দিয়া ভইরা রাখছো। এসব কি? তুমি বলতে পারতে কামের চাইতে প্রেম উত্তম.......এই জাতীয় নীতিকথা। তুমি এক মুখে দুই কথা কও। দুনিয়াতে যা খারাপ, পরোকালে তাই ভালো। এক মুখে দুই কথা বলে তুমি মানুষের মনে ঢুকায়া দিছ: মাল খাওয়া এবং সেক্স করাটাই আসলে বিরাট সুখের জিনিস। এর উপরে সুখের কোনো জিনিস নাই। এ কারণেই মনে হয়, আরবের বাদশারা তাদের দেশটাকে বাইজি বাড়ি বানায় ফালাইছিল। তেল বেঁচে মদ আর মাইয়া নিয়ে পইড়া ছিল তারা। অথচ দেহ, নাস্তিক অধ্যুষিত ইউরোপের নাগরিকেরা মাল খাইতো পরিমিত, তাঁরা বুঁদ হয়ে থাকে নাই। আর তোমার পেয়ারের লোভী বান্দারা মাল খাইয়া বুঁদ হয়ে পইড়া আছিল। একদিকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনের মানুষরে বোমা মাইরা তুলা-তুলা বানায়া ফেলছিল। আর অন্যদিকে ইহুদিদের সাপ্লাই দেওয়া মদ আর মাইয়া নিয়ে পইড়া ছিল বাইজি বাড়ির বাদশারা। তারা গরীব মুসলিম দেশের শিশু নিয়ে উটের জকি বানায় রাখতো। গরিব মাইয়া নিয়ে তারা কাজের বেটি বানাইতো আর ভোগ করতো। ওইসব গরিব শিশু আর মেয়েদের কি ঈশ্বর ছিল না? তাছাড়া তোমার সৃষ্ট বহুবিধ ধর্ম মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করছে। তুমি নিজেই হিসাব করে বের করো তো, ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী সাম্প্রদায়িকতার কারণে যুগে যুগে দুনিয়ায় কত হানা​হানি আর রক্তপাত ঘটেছে? হিন্দু ধর্মের কঠোর নিয়মকানুন এক কালে কতো পতিতা তৈরি করেছে? তোমার পাঠানো বাণীতে লোকজন বিভ্রান্ত হয়েছে, ঠাপাঠাপি করেছে। 

ঈশ্বর: মানুষ যদি না বুঝে বিভ্রান্ত হয় তাতে আমার কি দোষ? 

অবিশ্বাসী: হা..হা..হা..। তুমি নাকি সর্বশক্তিধর। তুমি মানুষরে শান্তিতে থাকার জন্য যুগে যুগে বাণী পাঠাইছো। অথচ মানুষ ওই বাণীতে বিভ্রান্ত হয়েছে। এটাতো তামার বাণীরই ব্যর্থতা নয় কি?। তুমি কি বুঝতে পারো নাই যে, তোমার বাণীতে ভুল ব্যখ্যার অবকাশ রয়েছে। তোমার বাণীতে ভুল ব্যখ্যার অবকাশ রাখা হলো না কেন? আবার তুমি বাণী পাঠিয়েছে নির্দিষ্ট একটি গোত্রের ভাষায়। সার্বজনীন কোনো ভাষায় নয়। আমি কেন হিব্রু, আরবি, সংস্কৃত পড়তে যাব? তুমি সার্বজনীন কোনো ভাষা তৈরি করে সেই ভাষায় বাণী দিতে পারতা। তাইলেও না হয় বুঝতাম। আর তোমার নির্দেশনার কোনো সার্বজনীনতা নেই। তোমার বাণী চরমভাবে ব্যর্থ।

ঈশ্বর: আমি মানুষরে পরীক্ষা নিতে চাইছি।

অবিশ্বাসী: তুমি কিন্তু কথা ঘুরায়া ফেলতাছো। আমি কইলাম তোমার বাণীর ব্যর্থতার কথা, আর তুমি আনছো পরীক্ষার কথা। আর পরীক্ষা নেওয়ারই বা কি আছে? তার মানে, তুমি পরীক্ষার ফল কি হবে তা জানো না? মানুষ তো ফল জানতো না, তাই পরীক্ষা নিত। আমার এক বন্ধু আমার প্রতি কতোটুকু উপকারী তা জানার জন্য ওই বন্ধুর কাছে আমি কিছু অর্থ চেয়েছিলাম। সে আমাকে অর্থ দিয়েছিল।কিন্তু আমি যদি আগে থেকেই জানতাম, অর্থ চাইলে ওই বন্ধু তা আমাকে দিয়ে দিবে। তবে আমি পরীক্ষার নাটক করতে যাব কেন? এসব নখরামি কেন? কি সব আবোলতাবোল কথা কও?
ঈশ্বর : ঈশ্বরে  বিশ্বাস করতে অন্ধ হওয়া লাগে। তুই যেহেতু আমায় প্রশ্ন করেছিস,  তোর জন্য নরক অবধারিত।

Sunday, May 5, 2019

‘সেক্স এন্ড সেক্সুয়ালিটি ইন ইসলাম’

ইসলামী সমাজে কাম বা সেক্স বিষয়টি একেবারেই অপ্রকাশ্য। সাধারণ মুসলিম সমাজে সেক্স শব্দটি কদাচিত উচ্চারিত বা আলোচিত হয়ে থাকে। হলেও হয় গোপনে, ভয়ে ভয়ে। (দৈব দুর্বিপাকে কোন সমস্যা দেখা দিলে কিংবা কাফেরদের দেশে নারীসম্ভোগের জন্যে গমন করা ছাড়া অন্য সময়ে যৌনবিষয়ক আলাপ-আলোচনা ইসলামী সমাজে নিষিদ্ধই বলা যায়)। ইসলাম ভান করে যেন পুরুষ বা নারীর দেহে যৌনাঙ্গ বলতে কোনকিছুর অস্তিত্ব নাই। একজন মুসলিম রমণীকে তার মাথা হতে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয় আজীবন, তার “আওরাকে” সে এভাবেই আবরণ দিয়ে রক্ষা করে। ইসলামী পরিভাষায় আওরা বলতে নারীর সেই অঙ্গকে বুঝায় যা দেখলে পুরুষ কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং যা নারীর জন্যে লজ্জাস্বরূপ। অর্থাৎ সেক্সুয়াল অর্গান বা যৌনাঙ্গ হচ্ছে নারীদেহের একটি লজ্জাজনক অংশ ! ‘তার সমস্ত দেহটিই একটি লজ্জাজনক বস্তু’ – এই অনুভুতি নিশ্চয়ই নারীদের জন্যে সম্মানের বিষয় নয়।

পুরুষের জন্যেও সিষ্টেমটি চরম অবমাননাকর। কারণ এতে এই প্রমাণ হয় যে, পুরুষজাতি রাস্তায় বিচরণরত বেওয়ারিশ ষাঁড়ের চেয়ে বেশী কিছু নয়, সামনে মেয়ে দেখলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, অপরিসীম যৌনক্ষুধা মিটিয়ে নেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ মুখিয়ে আছে সে। একেবারেই অর্থহীন বাজে একটি ধারণা। এই কাফেরদের দেশে যুগের পর যুগ বাস করছি আমি, নানা বর্ণের নানা বয়েসের লাখ লাখ মেয়ে অহোরাত্র প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। তাদের কারও বেশভুষা শালীন, কারও বেশভুষা প্রচলিত ভাষায় যাকে বলে চরম ‘সেক্সি’। কিন্তু কখনও দেখিনি যে কোন পুরুষ কামতাড়িত হয়ে এমনকি চরম সেক্সি মেয়েটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং পাশবিক ক্ষুধা মিটিয়ে নিল। সেক্স সম্পর্কে ইসলামের ধারণা মুলতঃ বেদুঈন আরব কালচারের উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক সভ্য সমাজের মানদণ্ডে এই কালচার একেবারেই সেকেলে, বর্বর আর অসভ্য বললেও কম বলা হয়। কেন ইসলামেী সমাজে সেক্স শব্দটি চরম নোংরা শব্দ বলে বিবেচিত হয়, কেনই বা এসম্পর্কিত আলোচনা সেখানে একেবারেই নিষিদ্ধ -এই বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে কৌতুহলী করে তুলে। ইসলামের মৌলিক ধর্মীয় রচনাগুলিতে সেক্স সম্পর্কে লিখিত কোন বিধিবিধান আছে কিনা তা খুঁজে বার করতে প্রবৃত্ত হই আমি। আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম তফসির, হাদিস, শরিয়া, ফিক্‌হ্‌ এইসব বিভিন্ন ইসলামী বিষয়ের উপর টন টন রচনা আছে, অথচ সেক্সের উপর যেটুকু তথ্য আছে তা অতীব সামান্য। সুতরাং এ সম্পর্কে কলম চালনা করতে আমাকে ভাসা ভাসা সূত্রের উপর নির্ভর করতে হলো। আরও একটি বড় ধরণের সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল আমার জন্যে। আমি বিস্ময়ের সাথে আবিস্কার করলাম- কামচর্চার নিষেধাজ্ঞাটি পুরুষদের উপর মোটেও কার্যকরী নয় ইসলামে! আপাতঃ নিষেধ বলে যা প্রতীয়মান হয়, তা নেহায়েতই লোকদেখানো মাত্র !

ইসলামী আইনসমূহে অগণিত ছিদ্র রয়েছে। এত ছিদ্র আছে যে ইচ্ছে করলে যে কোন মুসলমান পুরুষ, তা সে বিবাহিত বা অবিবাহিত যাই হোক না কেন, আইনের কানাগলির সুযোগ নিয়ে অপরিমিত যৌনসম্ভোগ করতে পারে। তাকে যা করতে হবে, তা হলো খেলাটি ভালভাবে রপ্ত করা। না জেনে খেলতে গেলে সমুহ বিপদের সম্ভাবনা। সেক্স করার জন্যে ইসলামে এত গুপ্ত উপায়, না বলা এতসব আইনকানুন আছে যে মোল্লারা কখনও সে সম্পর্কে মুখ খুলবে না।

পাঠক। শীতকালে গরম লেপের উষ্ণতা কতোই না আরামদায়ক – তাই না? শেক্সপীয়ারের সনেট, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, অজন্তার গুহাচিত্র কিংবা প্রাচীন গ্রীসের ভাস্কর্য সর্বযুগের সংস্কৃতিপ্রেমী মানবসন্তানের মনে সন্তোষের জন্ম দেয়। কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন যে কিছু বিরল উপাদান আছে যার মাঝে মানুষ তার শারিরিক ও মানসিক তৃপ্তি এক সাথে খুজে পায়? সেক্স। হ্যা, সেক্স হচ্ছে সেই বিরল উপাদানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান যা মানবজাতির (বিশেষ করে পুরুষ প্রজাতির) ড্রাইভিং ফোর্স হিসেবে পরিগনিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই শক্তিশালী উপাদানটিকে কোন্‌ সমাজ কীভাবে হ্যান্ডল করে, তার উপরেই সেই সমাজের প্রাগ্রসরতা কিংবা পরিপক্বতার পরিচয় নির্ভর করে।

এই নিরীখে ইসলাম কীভাবে সেক্সকে হ্যান্ডল করেছে তার পর্যালোচনা করা যাক এবার। ইসলাম মানব প্রজাতির যৌনাচারকে স্ত্রীজাতির মর্যাদার সাথে গুলিয়ে ফেলেছে। অথচ মানুষের স্বাভাবিক যৌন ক্রিয়াকলাপ আর নারীর মর্যাদা সম্পূর্ণ আলাদা দু’টি বিষয়। পৃথিবীতে প্রচলিত আর সব ধর্ম-সামাজিক সিষ্টেমগুলির সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে ইসলাম সেক্স এবং সেক্সুয়াল পিউরিটির উপর অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করে, অথচ এর মাঝে এত বেশী স্ববিরোধিতা রয়েছে যা দেখে মনে হয় নরনারীর স্বাভাবিক যৌনাচার সম্পর্কে ইসলাম বড় বেশী স্পর্শকাতর, বড় বেশী উৎকন্ঠিত। সেক্স সম্পর্কে ইসলামের কপটতা, দ্বিমুখী ও পক্ষপাতদুষ্ট নীতি এবং উদ্ভট ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধের স্বরূপ উন্মোচন করাই বক্ষমান প্রবন্ধের মুল উদ্ধেশ্য। সেই সাথে এটাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো যে যৌথ সম্মতির ভিত্তিতে নরনারীর যৌনতৃপ্তি মেটানোর প্রাকৃতিক অধিকারের উপর কিছু অন্যায় ও অযৌক্তিক বাধানিষেধ আরোপ করে মানুষের উপর অপরিসীম নির্যাতন চালানোর বিধান দেয়া হয়েছে ইসলামে। নরনারীর যৌন সম্পর্ক মানবজীবনের পরম গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। ধরাপৃষ্ঠে জীবকুলের বিকাশ যৌন প্রক্রিয়ারই অবধারিত ফসল। এটি ছাড়া ডারউইনের বিবর্তন বহু আগেই বন্ধ হয়ে যেতো।

পাঠক, আসুন এবার আমরা ইসলামি সেক্সের উপর আলোচনা শুরু করি। ইসলামি সেক্সের প্রথম পাঠ- রঙ্গরস ও কামকেলির জন্যে কুমারী সর্বশ্রেষ্ঠ।

ইসলাম মনে করে- কুমারিত্ব স্ত্রীজাতির শ্রেষ্ঠ ভূষণ। বিয়ের আগে কুমারিত্ব খোয়ানোর সমতুল্য আর কোন পাপ নাই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে! ইসলামি সমাজে যথেষ্ট সাবালিকা মেয়েরাও প্রাক-বৈবাহিক সেক্সের কথা চিন্তা করতে পারে না (পুরুষদের ক্ষেত্রে অবশ্য স্বতন্ত্র নিয়ম। পরবর্তীতে আমরা দেখাব বিয়ের আগেই একজন মুসলমান পুরুষ ক্রীতদাসী অথবা যুদ্ধবন্দিনীদের সাথে যথেচ্ছ যৌনবিহার করতে পারে। তবে মুক্ত নারীদের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সেক্স সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ)। পাঠক মনে রাখবেন, বিবাহ-বহির্ভূত সেক্স ইসলামে একটি গর্হিত অপরাধ বলে গন্য, অপরাধীকে এর জন্যে গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হয়। অপরাধী অবিবাহিত/অবিবাহিতা হলে শাস্তি এক শত দোররা বা বেত্রাঘাত। অপরাধী বিবাহিত (বিবাহিতা) হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃতুøদণ্ড। এই বিধান পবিত্র “হদুদ” আইন নামে পরিচিত; এর অর্থ অপরাধ করে ফেললে এই বর্বর আইনের হাত এড়ানোর কোন উপায় নেই। একবার রায় হয়ে গেলে একে রদ করার ক্ষমতা কারও নেই, যে কোন ভাবে তা কার্যকর করতেই হবে। ইসলামি ক্ষমা আর সহিষ্ণুতার কি অপূর্ব নমুনা ! আমার বক্তব্য যদি কারও নিকট অতিরিক্ত বিদ্ধেষমুলক প্রতীয়মান হয়, তবে তাকে একটি বিষয় স্মরণ করতে বলি। ইসলামের বিধান অনুযায়ী অননুমোদিত সেক্স নরহত্যার চেয়েও বড় অপরাধ। কারণ হত্যাকারী ‘কিয়াস’ (বদলা) বা ‘দিয়া’র (রক্তপণ) বিনিময়ে অপরাধ থেকে ক্ষমা পেতে পারে। কিন্তু যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে এরূপ কোন ক্ষমার সুযোগ নেই! ভালবাসা খুন করার চেয়েও জঘন্য অপরাধ ইসলামে (বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে)! কতো বড় ঘৃণ্য ও অদূরদর্শী আইন, ভাবা যায়!

আমাদের যৌন অঙ্গগুলির ‘প্রকৃত মালিক’ কে? আমরা? না পাঠক, এগুলির প্রকৃত মালিক আমরা নই, এর প্রকৃত মালিক ইসলাম। বিশ্বাস করুন আর না করুন, পৃথিবীতে বিচরণকারী প্রতিটি মুসলমান নরনারীর যৌন প্রত্যঙ্গের মালিক ইসলাম। এর সবকিছুর, এমন কি এর চারপাশে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ যৌনকেশ গজায় তারও একমেবাদ্বিতীয়ম মালিক ইসলাম! নীচের হাদিসটি পড়ুন। পবিত্র সহিহ হাদিস। মেয়েদের যৌনাঙ্গে উদ্‌গত লোমরাশিকে কীভাবে সামলাতে হবে তার নির্দেশনামা।

দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে স্বামী রাত্রে ঘরে ফিরলে স্ত্রী তার যৌনকেশ উত্তমরুপে শেভ করে রাখবে....৭.৬২.১৭৩।

সহি বোখারিঃ ভলিউম-৭, বুক নং-৬২, হাদিস নং-১৭৩:

জাবির বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিতঃ নবী বলেছেন – “যদি তুমি রাত্রিতে (তোমার শহরে) প্রবেশ কর (দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে), সাথে সাথে গৃহে প্রবেশ করো না যে পর্যন্ত না প্রবাসী ব্যক্তির স্ত্রী তার যৌনকেশ শেভ করে এবং আলুলায়িতকুন্তলা তার কেশগুলিকে ভালভাবে বিন্যস্ত করে।” আল্লাহর রসুল আরও বলেন – “হে জাবের, সন্তান লাভের চেষ্টা করো, সন্তান লাভের চেষ্টা করো”।

ফিতরার (সৎকাজ) পাঁচটি অনুশীলনঃ ১। খৎনা করা, ২। যৌনকেশ শেভ করা, ৩। নখ কাটা, ৪। গোঁফকে ছোট করে ছেটে রাখা, ৫। বগলের লোম পরিষ্কার করা.....৭.৭২.৭৭৭।

সহি বোখারিঃ ভলিউম-৭, বুক নং-৭২, হাদিস নং-৭৭৭।

আবু হুরাইরা হতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল বলেছেন – “ফিতরার পাঁচটি নিদর্শনঃ খৎনা করা, যৌনকেশ শেভ করা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছোট করে ছেটে রাখা”।

এখন কেউ হযতো ভাবতে পারেন নরনারীর উরুদ্বয়ের মাঝখানে কি আছে তার প্রতি আল্লাহর এত ইন্টারেস্ট কেন? তার তো জরুরী বহুৎ কাজ থাকার কথা! যদি মনে করে থাকেন যে আল্লাহ আপনাকে যৌনাঙ্গ দিয়েছে আপনার ইচ্ছেমতো সেগুলি ব্যবহার করার জন্যে, তা’হলে সে চিন্তা বাদ দিন। আপনার একান্ত নিজস্ব একান্ত গোপন অঙ্গটি কীভাবে ব্যবহার করবেন তা নির্ধারণের ভার আপনার উপর নেই। জন্ম থেকে মৃতুø পর্যন্ত, শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত, গৃহের নিভৃত কন্দর থেকে সুবিশাল মরুপ্রান্তর পর্যন্ত সর্বত্র তা নির্ধারণ করবে তথাকথিত আল্লাহর আইন নামক একসেট শরিয়া আইন। বিবেকহীন, নিষ্ঠুর, ঘৃণ্য, নিষ্প্রাণ কতগুলো বিধান! এ প্রসঙ্গে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন এসে যায় শরিয়া যদি আল্লাহর আইনই হয় তবে কেন তা মানুষ ছাড়া অন্য জীবজন্তুর যৌনাঙ্গকে কন্ট্রোল করে না? কেন গরু, ছাগল, ঘোড়া, শুয়োর, বাঘ, সিংহ, পাখী, সাপ, কচ্ছপ এক কথায় সমস্ত প্রাণীকুল সম্ভোগ কিংবা প্রজননের জন্যে ইচ্ছেমতো রতিক্রিয়া করতে পারে? দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে পশুদের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের ততটুকু নেই! ভাবুন একবার! আমার প্রইভেট পার্টটি আমার একান্ত নিজস্ব, অথচ আমার এই মৌলিক অধিকারটিও ইসলাম কুক্ষিগত করে নিয়েছে। ইসলামের এই চরম বর্বরতার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য একটাই কৌমার্য রক্ষার অজুহাতে প্রাণীর সহজাত এবং প্রাকৃতিক কাম প্রবণতা ও তজ্জনিত তৃপ্তি থেকে বিশেষভাবে মেয়ে প্রজাতিকে জোর করে বঞ্চিত রাখা। যে ভাবেই হোক, একজন মুসলমান নারীকে তার কুমারিত্ব বজায় রাখতেই হবে। বিবাহবহির্ভূত কোন অনৈসলামিক উপায়ে একজন মুসলমান নারী যৌনতৃপ্তি মেটাবে তা কখনও হতে পারে না। এজন্যে যদি তাকে হত্যা করতে হয় – তব্‌ ভি আচ্ছা।

অক্ষতযোনী কুমারীর প্রতি ইসলামের এই অবসেশন কেন? কাফেরদের দেশে আসার পর এ নিয়ে বিস্তর ভেবেছি আমি। পাপীতাপীদের এই দেশে বারবনিতা, বেশ্যারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরস্পর সম্মতিতে সেক্স এদেশে কোন অপরাধ না, যদিও জোর করে কাউকে ধর্ষণ একটি সিরিয়াস অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এজন্যে এমনকি যাবজ্জীবনও হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে ইসলামি প্যারাডাইজগুলিতে বিপরীত লিঙ্গবিশিষ্ট দু’জন নর­নারীর (কিংবা সম লিঙ্গ বিশিষ্ট) মধ্যে যৌনসম্পর্ক পুরোপুরি হারাম, তা সে পরস্পরের সম্মতিক্রমেই হোক কিংবা একজনের অসম্মতিক্রমেই হোক। সবচেয়ে ইম্পর্টøন্ট যা তা এই যে একজন মুসলিম নারীর বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক একেবারেই নিষিদ্ধ। মুসলিম দেশগুলি হতে যে সমস্ত মুসলমান পাশ্চাত্যে বাস করতে আসে তারা এদেশের নরনারীর স্বচ্ছন্দ ও অবাধ মেলামেশা দেখে তাই বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। তারা এদেশের জীবনবোধ তথা মূল্যবোধ সঠিকভাবে বুঝতে করতে পারে না। তারা দেখে মেয়েরা বিয়ের আগেই অবাধে ছেলে বন্ধুদের সাথে সেক্স করছে। তারা ভাবে এদেশে সব মেয়েই গণিকা, সস্তা পণ্য। একটি ছেলে ও একটি মেয়ের মধ্যে যে সেক্স বহির্ভূত সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, তারা তা ভাবতে পারে না। ফলে চারপাশে বিচরণরত কাফের মেয়েদের সাথে স্বাভাবিক ও প্রফেশনাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে সঙ্কোচ বোধ করে তারা। বিয়ে করার উপযুক্ত হিসেবে যে মেয়েটি একজন খাটি মুসলমানের মন-মানসে ভাসে, সে এক অক্ষতযোনী কুমারী। এইসব কাফের মেয়েদের সাথে এক রাত্রির খেল্‌ চলতে পারে, তাই বলে বিয়ে? নৈব চ নৈব চ। ইসলামের বিধান অনুসারে একজন অবিবাহিত মেয়ে তার প্রজনন যন্ত্রটিকে অবশ্যই তালাচাবি দিয়ে রাখবে। চাবীর মালিক একমাত্র স্বামী, আর কেউ নয়।

আল্লাহ ও ধর্মের নামে মেয়েদেরকে যৌনসুখ বঞ্চিত রাখার কেন এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা তা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। অবশেষে মুসলিম সমাজে সবচেয়ে খাঁটি এবং অথেনটিক বলে পরিচিত সহি বুখারি ও সহি মুসলিম শরীফের কিছু অমুল্য হাদিস হস্তগত হয় আমার। এগুলি পড়ে বুঝতে পারলাম কেন আল্লাহপাক বিয়ের আগ পর্যন্ত মুসলমান মেয়েটির যোনীপ্রদেশ অক্ষত রাখতে এত আগ্রহী। পাঠক, আসুন হাদিস কয়টির উপর একটু চোখ বুলিয়ে নিইঃ

সহি বুখারিঃ ভলিউম-৭, বুক নং-৬২, হাদিস নং-১৬ঃ

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিতঃআমরা একবার নবীর সাথে একটি ‘গাজওয়া’ (বিধর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানকে গাজওয়া বলা হয়) হতে ফিরছিলাম। আমি আমার উটটিকে খুব দ্রুত চলনা করতে চাইলাম। এটি ছিল অত্যন্ত অলস একটি উট। সুতরাং আমার পেছন হতে একজন আরোহী এসে তার হস্তস্থিত বর্শা দ্বারা খোঁচা মারতেই আমার উটটি এত দ্রুত ছুটতে শুরু করলো যে মনে হবে এর চেয়ে দ্রুতগামী উট আর নেই। দেখ! আরোহীটি ছিলেন স্বয়ং নবী। তিনি বললেন – ‘এত তাড়া কীসের তোমার’? আমি বললাম – আমি নূূতন বিয়ে করেছি। তিনি বললেন – ‘তোমার বউ কুমারী না মেট্রন (বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা)’? আমি বললাম – সে একজন মেট্রন। তিনি বললেন – ‘কচি মেয়ে বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তুমি তার সাথে খেলতে পারতে এবং সে তোমার সাথে খেলতে পারত’। যখন আমরা (মদীনায়) প্রবেশ করতে যাচ্ছি, নবী বললেন – ‘অপেক্ষা করো যেন তুমি রাত্রিবেলা (মদীনায়) প্রবেশ করতে পার। তাহলে মহিলা তার অবিন্যস্ত চুল আঁচড়িয়ে নেয়ার অবকাশ পাবে এবং যে নারীর স্বামী অনেকদিন অনুপস্থিত ছিল সে তার যৌনকেশ শেভ করার অবকাশ পাবে’।

সহি বুখারিঃ ভলিউম-৩, বুক নং-৩৮, হাদিস নং-৫০৪ঃ

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিতঃ

আমি নবীর সাথে এক অভিযান থেকে ফিরছিলাম। আমার সওয়ারি উটটি ছিল মন্থর গতিসম্পন্ন এবং সবার পেছনে। [...] যখন আমরা মদীনার সমীপবর্তী হলাম, আমি (দ্রুত) আমার (বাড়ীর) পথ ধরলাম। নবী বললেন – ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ’? আমি বললাম – ‘আমি একজন বিধবাকে বিয়ে করেছি’। তিনি বললেন – ‘তুমি কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তাহলে তোমরা একে অপরের সাথে রঙ্গরস করতে পারতে’। [.....]

সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩৫৪৯ঃ

জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

.....আল্লাহর রসুল (দঃ) আমাকে বললেন – ‘তুমি কি বিয়ে করেছো’? আমি বললাম – হ্যাঁ । তিনি বললেন – ‘সে কি কুমারী না পূর্ব-বিবাহিতা (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)’? আমি বললাম – পূর্ব-বিবাহিতা। তখন তিনি বললেন – ‘কুমারীর সাথে মজা করার স্বাদ থেকে বঞ্চিত রইলে কেন’? শু’বা বলেন – এই ঘটনার কথা আমি আমর বিন দিনারের কাছে উল্লেখ করলে আমর বলেছিলেন – আমিও জাবেরের মুখে বর্ণনাটি শুনেছি। (আল্লাহর রসুল) তাকে বলেছেন – তুমি একজন বালিকা বিয়ে করলে না কেন? তা’হলে তুমিও তার সাথে খেলতে পারতে, সেও তোমার সাথে খেলতে পারত।

উপরের হাদিস তিনটি ভালভাবে পাঠ করুন পাঠক। কী মনে হয় আপনার? কেউ একজন দয়া পরবশ হয়ে বিধবা বিয়ে করলো, মোহম্মদের (দঃ) প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তার অবস্থাটা কী দাড়ালো তা’হলে? তার বিধানকে ফলো করে কেউ যদি অতি অল্পবয়েসী মেয়েকে বিয়ে করার জন্যে ক্ষেপে উঠে, তাকে খুব একটা দোষ দেয়া যায় কি? যৌন নির্যাতনকারী হিসেবে গণ্য করাও মুশকিল, কারণ সে আল্লাহর রসুলের (দঃ) নির্দেশ পালন করেছে মাত্র। স্বয়ং রসুলের (দঃ) হেরেমে এরূপ একজন কুমারী ছিল। তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন যে কম বয়েসী কুমারীর সাথে সহবাসে মজাই আলাদা। বালিকা শিশুদের সাথে সহবাসে আল্লাহপাকেরও নিশ্চয়ই সম্মতি রয়েছে। কোরাণে আছে – আল্লাহ তার বিশ্বাসী বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্যে অক্ষতযোনী কুমারীদের অক্ষয় ভাণ্ডার রেডী করে রেখেছেন। প্রমান স্বরূপ কোরাণ পাকের গোটাকয়েক আয়াত এখানে উদ্ধৃতি দেয়া গেল। মেয়েদের কুমারিত্বের প্রতি আল্লাহপাকের কতটুকু মোহ এ থেকে মোটামোটি তার একটি চিত্র পাওয়া যাবে।

সুরা দুখান (৪৪) ৫১-৫৪ঃ “নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা নিরাপদ স্থানে থাকবে, উদ্যানরাজি ও নির্ঝরিণী সমূহে। তারা ব্যবহার করবে পাতলা ও কিংখাবখচিত রেশমী বস্ত্র, পরস্পর মুখোমুখী হয়ে বসবে। এরূপই হবে এবং তাদের জন্যে রয়েছে আয়তলোচনা স্ত্রীগণ”।

সুরা আর-রহমান (৫৫)৫৪-৫৮: “তারা সেথায় রেশমের আবরণবিশিষ্ট বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে। উভয় জান্নাতের ফল ঝুলবে তাদের সামনে। অতএব তোমাদের পালনকর্তার কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? তথায় থাকবে আয়তলোচনা রমণীগণ, কোন মানব ও জ্বিন পুর্বে তাদেরকে ব্যবহার করে নাই।....প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ”।

৭০-৭৪ঃ “সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ। অতএব তোমাদের পলনকর্তার কোন্‌ অবদানকে অস্বীকার করবে? তাবুতে উপবেশকারী হুরগণ।....কোন মানব ও জ্বিন পুর্বে তাদেরকে স্পর্শ করেনি”।

সুরা ওয়াক্কিয়া (৫৬)ঃ ৩৫-৩৮ঃ “আমি জান্নাতের রমণীদিগকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা। ডান দিকের লোকদের জন্যে”।

সুরা আন্‌-নাবা (৭৮)ঃ ৩১-৩৪ঃ “পরহেজগারদের জন্যে রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুরবীথি। সমবয়স্কা, ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকারী তরুণী এবং পূর্ণ পানপাত্র”।

(কোরানুল করিমঃ মাওলানা মহিউদ্দিন খাঁন কতৃক অনুদিত)

উপরের আয়াতগুলি পড়লে বুঝা যায়, কেন অল্পবয়স্কা কুমারী বিয়ে করা উত্তম। কারণ আল্লাহপাক অল্পবয়েসী কুমারী মেয়ে পছন্দ করেন, তাই তিনি তার প্রিয় বান্দাদের মনোরঞ্জনের জন্যে বেহেশতে তার অঢেল সরাবরাহ নিশ্চিত করেছেন। এজন্যেই বোধ হয় পরস্যের দার্শনিক-কবি উমর খৈয়াম গেয়েছিলেন-“স্বর্গপুরের হর্মে নাকি দেদার হুরি বসত করে, সেথায় দেখ অঢেল সুরার উর্মিমুখর ঝর্ণা ঝরে”। আল্লাহর পাক কালামেও ঠিক অনুরূপ বিবরণই রয়েছে।

এক রাত্রির খেলঃ

কথায় আছে, লাখ কথা খরচ করে একটি বিয়ে হয়। বিয়েতে শুধু যে লাখো কথা আর সুদীর্ঘ সময় লাগে তাই নয়, দেন মোহরের বোঝাটাও কম ভারী নয়। এতসব ঝামেলা এড়াতে অনেককে তাই ‘কুইক সেক্সের’ শরণ নিতে দেখা যায়। পৃথিবীর প্রাচীনতম এই পেশাটিতে রমণীর অভাব কোনকালে ছিল না। এক রাত্রির অতিথিদের আনন্দ দিতে তারা এক পায়ে খাড়া। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এই সেক্সের নাম “এক রাত্রির খেল্‌” – ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই সহজ উপায়টির সমতুল্য বিধান পবিত্র ইসলামেও আছে!

এক রাত্রির খেলার ইসলামি পারিভাষিক নাম – ‘মু’তা’। মু’তা ম্যারেজ। এই বিয়ের নিয়মানুযায়ী একজন পুরুষ কোন মেয়ের সাথে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে বিয়ের চুক্তি করে অনায়াসে তার সাথে সহবাস করতে পারে। যদিও সুন্নী সমাজে এই ধরণের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, শিয়াদের মাঝে এখনও তা চালু আছে। মু’তা বিয়ের মাধ্যমে সন্ধ্যেবেলায় একটি মেয়েকে বিয়ে করে সকালবেলায় কিক আউট করা খুবই সম্ভব। তালাক-ফালাকের কোন ঝামেলা নাই। মু’তা বিয়ে এক সাথে ঘুমানোর একটি চুক্তি মাত্র, এর বেশী কিছু নয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এক সাথে চার জনের বেশী বউ রাখা যদিও শরীয়তে নিষিদ্ধ, তবে মু’তা বা টেম্পোরারী বিয়ের ক্ষেত্রে এই বিধি প্রযোজ্য নয়। কোন বিশেষ সময়ে একজন মুসলমান কত জন অস্থায়ী বউ রাখতে পারবে, তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। আধুনিক ভাষায় এরই নাম ‘ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড’। মু’তা বিয়ের কোন টাইম লিমিট নাই। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ‘এক রাত্রির খেল্‌’ প্রথাটি পুরোপুরি ইসলাম সম্মত। মু’তা বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলমান ইচ্ছে করলে যে কোন সংখ্যক নারীর সাথে দিনরাত সঙ্গমসুখ উপভোগ করতে পারে। কথিত আছে যে নবীর (দঃ) দৌহিত্র হযরত হাসানের (রাঃ) বৈধ স্ত্রীদের অতিরিক্ত তিন শ’ জন সেক্স পার্টনার ছিল (ইসলামী পরিভাষায় অস্থায়ী স্ত্রী)। এদিক বিবেচনা করলে হযরত হাসানকে সে যুগের ইসলামী প্লেবয় আখ্যা দেয়া যেতে পারে। আমার বর্ণনায় আপনার সন্দেহ হচ্ছে? তাহলে নীচের সহি হাদিসটি লক্ষ্য করুন, দেখুন এক রাত্রির খেলের জন্যে সঙ্গিনী বা উপপত্নী যোগাড় করার ইসলামি নিয়ম কী?

সহি মুসলিমঃ বুক নং-০০৮, হাদিস নং-৩২৫৩ঃ

রাবি বিন ছাবরা হতে বর্ণিত হয়েছে যে, মক্কা বিজয়ের সময় তার পিতা রাসুলুল্লাহর (দঃ) সাথে এক যুদ্ধে শরীক হয়। ‘আমরা সেখানে পনের দিন অবস্থান করি। আল্লাহর রসুল (দঃ) আমাদিগকে অস্থায়ী বিয়ের অনুমতি দেন। সুতরাং আমি আমার গোত্রেরই এক লোকের সাথে (মেয়ে খুঁজতে) বেরিয়ে পড়ি। আমার সঙ্গীর চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম, পক্ষান্তরে সে দেখতে ছিল প্রায় কদাকার। আমাদের উভয়েরই পরণে ছিল একটি করে উত্তরীয় (cloak)। আমার উত্তরীয়টি ছিল একেবারেই জীর্ণ, আমার সঙ্গীরটি ছিল আনকোরা নূতন ।..শহরের একপ্রান্তে একটি মেয়ে দৃষ্টিগোচর হলো আমাদের। অল্পবয়েসী চমৎকার একটি মেয়ে, ঠিক যেন মরাল গ্রীবা চটপটে এক মাদী উট। আমরা বললাম – আমাদের মধ্যে একজন তোমার সাথে অস্থায়ী বিয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাই, তা কি সম্ভব? সে বলল – দেনমোহর বাবদ তোমরা আমাকে কী দিতে পার? আমরা উভয়েই তার সামনে আমাদের স্ব স্ব উত্তরীয় মেলে ধরলাম। সে আমাদের উভয়ের উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিল। আমার সঙ্গীও মেয়েটির উপর দৃষ্টি বুলিয়ে নিল এবং বলল – ওর উত্তরীয় ছিড়ে গেছে, পক্ষান্তরে আমার উত্তরীয়টি একেবারে নূতন । মেয়েটি অবশ্য বলল – এই উত্তরীয়টি (পুরাতনটি) গ্রহন করায় ক্ষতি নাই। কথাটি সে দু’তিনবার বলল। সুতরাং আমি তার সাথে অস্থায়ী বিয়ে সম্পন্ন করে ফেললাম এবং যে পর্যন্ত আল্লাহর রসুল প্রথাটি নিষিদ্ধ ঘোষণা না করেন, সে পর্যন্ত এই সম্পর্ক আমি ছিন্ন করিনি।

মু’তা’র শাব্দিক অর্থ উপভোগ। (ডিকশনারী অব ইসলাম – টি.পি.হাফস্‌, পৃঃ-৪২৪)। প্রায়োগিক অর্থ – কিছু অর্থের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে অস্থায়ী বিবাহ। এই ধরণের বিয়ে ইরানে শিয়াদের মাঝে এখনও প্রচলিত আছে (ম্যালকম’স পারশিয়া, ভলিউম-মম, পৃঃ-৫৯১), তবে সুন্নীরা এই ধরণের বিয়েকে অবৈধ বলে থাকে। আওতাস (Autas) নামক স্থানে নবী এই ধরণের বিয়ে করতে অনুমতি দিয়েছিলেন যা নাকি মুসলিম সম্প্রদায়ের নৈতিক মর্যাদার উপর নিঃসন্দেহে এক গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সুন্নীদের দাবী পরবর্তীতে খায়বার নামক স্থানে প্রথাটি বাতিল করে দেন নবী। (মেশকাত, বুক নং-xii, চ্যাপ্টার-iν৯৫৭;) ।

যৌন বিকৃতি/ অন্ধ-মোহগ্রস্থতাঃ

ধরুন রাস্তায় আপনি একটি মেয়ে দেখলেন। অপরূপ সুন্দরী, পুর্ণ যৌবনবতী, সেক্সি। মেয়েটিকে দেখে আপনি দারুণভাবে কামোত্তেজিত হয়ে পড়লেন। কী করবেন আপনি? এই অবস্থায় ইসলামী সমাধান চটপট ঘরে ফিরে গিয়ে স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করুন। বর্তমান যুগে রাস্তা-ঘাট অফিস-আদালত সর্বত্র পর্ণগ্রাফি তথা কামোত্তেজক জিনিসের ছড়াছড়ি। ম্যাগাজিনের শোভন মলাটে নগ্ন নারীমুর্তি দেখে কতবার যে আপনাকে ঘরে দৌড়াতে হয় কে জানে? এ প্রসঙ্গে যে হাদিসটি আছে তার বিবরণঃ

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৮, হাদিস নং-৩২৪০ঃ

জাবির হতে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসুল (দঃ) একবার একজন স্ত্রীলোক দেখতে পেলেন। সুতরাং তিনি তাড়াতাড়ি তার স্ত্রী জয়নবের নিকট গেলেন এবং তার সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেন। জয়নব তখন একটি চামড়া ট্যান করছিলেন। সঙ্গম শেষে রাসুল সাহাবীদের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন – সাক্ষাৎ শয়তান মেয়ের রূপ ধরে আমার কাছে আসল। সুতরাং তোমরা কেউ যদি এরূপ মেয়ের মুখোমুখী হও, তৎক্ষনাৎ নিজের স্ত্রীর নিকট চলে যাবে। এভাবেই কেবল অন্তরের কু-বাসনার নিবৃত্তি সম্ভব।

ফরজ গোসলঃ

যদি কোন ব্যক্তি যৌন বিষয়ক চিন্তার প্রকোপে অত্যাধিক কামোত্তেজিত হয়ে পড়ে তাকে ফরজ গোসল করে পাক-পবিত্র হতে হবে (যৌন সঙ্গমের পর বাধ্যতামুলকভাবে সর্বাঙ্গ ধৌত করার ইসলামী নাম ফরজ গোসল)। একবার ভাবুন, এই নিয়ম ফলো করতে হলে দিনে কতবার আপনাকে ঘরে দৌড়াতে হবে এবং স্ত্রীর যৌনাঙ্গর সাথে আপনার খৎনা করা প্রত্যঙ্গটিকে মিলাতে হবে? যৌনমিলনের পর কীভাবে নিজকে পাকপবিত্র করতে হয়, সে সম্পর্কে একটি হাদিসঃ

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৮৪ঃ

আবু মুসা হতে বর্ণিতঃ এক দল মুহাজির এবং এক দল আনসারের মধ্যে একবার মতবিরোধ দেখা দেয়। (মতবিরোধের কারণ ছিল এই যে) জনৈক আনসার বলেছিল – গোসল ফরজ হবে কেবলমাত্র তখনই যদি (যৌন সঙ্গমের ফলে) বীর্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু মুহজিরগণ বলেন যে মেয়েলোকের সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায় (বীর্যপাত ঘটুক আর নাই ঘটুক, তাতে কিছু এসে যায় না)। আবু মুসা বললেন – ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক নিয়ম বাৎলে দেব। তিনি (আবু মুসা) বলেন – আমি সেখান থেকে উঠে আয়েশার নিকট গেলাম এবং তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থণা করলাম। অনুমতি মিলল এবং আমি তাকে প্রশ্ন করলাম – উম্মুল মোমেনীন, আমি আপনাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই যা বলতে আমারই লজ্জা লাগছে। তিনি বললেন – যে কথা তুমি তোমার জন্মদাত্রী মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেতে না, আমাকেও তুমি তা জিজ্ঞেস করতে পার, আমি তোমার মায়ের মতোই। এ কথার পর আমি তাকে বললাম – একজন পুরুষের উপর গোসল ফরজ হয় কখন? উত্তরে তিনি বললেন – তুমি ঠিক জায়গায়ই এসেছ। রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন – কোন ব্যক্তি যদি (স্ত্রীলোকের) চারটি প্রতঙ্গের উপর সওয়ার হয় এবং খৎনা করা অঙ্গগুলি পরস্পর স্পর্শ করে, তখনই গোসল করা ফরজ হয়ে দাঁড়ায়।

পুরুষটির চরম তৃপ্তি হলো কিন্তু সঙ্গিনীর হলো না (কিংবা বিপরীত ঘটলো-- মেয়েটির অর্গাজম হলো, পুরুষটির হলো না)।

অসমাপ্ত যৌনতৃপ্তির ক্ষেত্রে ইসলামী সমাধান কী, নীচের হাদিস দু’টি হতে তার উত্তর পাওয়া যেতে পারে। পাঠক, হাদিস দু’টি পাঠ করুন এবং আপনার বেড রুমেও কোনদিন এরূপ সমস্যার মুখোমুখী হয়ে থাকলে তার সাথে মিলিয়ে নিন।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৭৭ঃ

উবেই ইবনে ক্কাব হতে বর্ণিতঃ আমি একজন লোক সম্পর্কে রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাছে জিজ্ঞেস করি। লোকটি স্ত্রীর চরম তৃপ্তির আগেই উঠে পড়তো। এ কথা শুনে তিনি (নবী) বললেন – তার উচিৎ স্ত্রীর (যৌনাঙ্গ হতে নিঃসৃত) ক্ষরণ ধুয়ে ফেলা, অতঃপর অজু করে নেয়া ও নামাজ পড়া।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৩, হাদিস নং-০৬৮০ঃজায়িদ বিন খালিদ বলেছেন যে তিনি উসমান ইবনে আফফানকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেছিলেন – একজন লোক স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হলো, কিন্তু স্ত্রী চরম তৃপ্তি পর্যøন্ত পৌছুতে পারল না। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? উসমান বললেন – নামাজের জন্যে সে যেভাবে অজু করে এক্ষেত্রেও তার তাই করা উচিৎ, এবং নিজের যৌনাঙ্গটিও ধুয়ে ফেলা উচিৎ। উসমান আরও বলেন – আমি এ কথা রসুলুল্লাহর (দঃ) মুখ থেকে শুনেছি।

Saturday, May 4, 2019

আমি গণিতবিদ নই – কিন্তু গণিত ভালোবাসি। গণিতজ্ঞদের দিকে তাকাই সম্ভ্রমের চোখে – আর ঠিক এই কারণেই পাশের গ্রামে ফিরোজ, বন্ধু সুমন এরা ছিল আমার ঈর্ষা মিশ্রিত বিষ্ময়ের পাত্র। তাই এই লেখা শুরু করার আগেই সাফাইটা গেয়ে দিই – বলে রাখি যে এই প্রবন্ধ কোন নতুন তথ্য দেবার জন্য নয়, নয় কোন গালভরা গবেষণার গল্প বলার জন্য। এটা নিছকই সেই সব তথ্য, ঘটনা আর নাম সমৃদ্ধ, যা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না। অর্থাৎ ধরুন আপনি নিজের জামাটি রোজ পড়েন, কিন্তু সেই জামায় কয়টা বোতাম আছে তা কখনো খেয়াল করেছেন কি? এই লেখাও তেমন হবে আর কি! কিছু বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে গেলে ভুগতে হয় তথ্যে অপ্রতুলতায় – কিন্তু গণিত নিয়ে লিখতে গেলে ব্যাপারটা উলটো। এখানে তথ্যের প্রাচুর্য্য এতো বেশী যে সংক্ষেপে কিছু লেখাই মুশকিল! প্রচুর বই, রিপোর্ট, জার্নাল ছাড়াও তো আজকাল হাতের কাছে রয়েছে ইন্টারনেট! তাই অনুমান করছি যে এখানে যা লিখব তার অনেক কিছুই আপনারা ইন্টারনেট থেকে যাচাই করে নিতে পারবেন। অনেকের মত আমারও ছিল গণিতবিদদের জীবন নিয়ে একটা কৌতূহল – কেমন করে তাঁরা কাজ করেন, বাস্তবের সাথে তাঁদের যোগ কতখানি বা তাঁদের গবেষণা আমাদের জীবনের সাথে কতটা সরাসরি যুক্ত – এই সব প্রশ্ন ভাবতে ভাবতেই এই লেখার সূত্রপাত।

কোনখান থেকে শুরু করবে বুঝতে পারছি না। সমস্ত বিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁরা গণিতের সাথে যুক্ত তাঁদের নিয়ে এত উপকথা, এত রটনা যে তার থেকে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে খুঁজে বের করাই মুশকিল। তাহলে আসুন একটা গল্প দিয়েই শুরু করা যাক।

এক মনোরম গ্রীষ্মের সকালে তিন বন্ধু মিলে স্কটল্যান্ডের এক গ্রামের ধার দিয়ে ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন। বন্ধুদের মধ্যে একজন ছিলেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানী, এক জন পদার্থবিদ ও অপর জন গণিতজ্ঞ। হঠাৎ ট্রেনের পাশে মাঠে চরতে থাকা একটি কালো ভেড়াকে দেখে জ্যোর্তিবিজ্ঞানী বলে উঠলেন – কি আশ্চর্য!, স্কটল্যান্ডের সব ভেড়াই দেখি কালো। এই কথার প্রতিবাদ করে পদার্থবিদ বলে উঠলেন – না, না – স্কটল্যাণ্ডের কেবল কিছু ভেড়ার রঙ কালো। এইসব শুনে তাঁদের গণিতজ্ঞ বন্ধু আকাশের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলে উঠলেন – এই ভেড়াটা দেখে আমরা কেবল এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, স্কটল্যান্ডে একটা মাঠ আছে ন্যূনতম পক্ষে, সেই মাঠে একটা ভেড়া চড়ে বেড়াচ্ছে, যেই ভেড়ার একটি দিক ন্যূনতম পক্ষে কালো।

গণিতবিদ মানেই খুঁতখুঁতে, বাস্তবের সাথে যোগহীন, আপন ভোলা একটি মানুষের ছবি আমাদের মনে ভেসে ওঠে। এটা অনেক সময় সত্যি – আবার অনেকের ক্ষেত্রে নয়। স্বল্প পরিসরে ইতিহাস বলা সম্ভব নয়, এমন কি বিখ্যাত গণিতজ্ঞদের কেবল নাম মাত্র উল্লেখ করতে গেলেই অনেক জায়গার দরকার হবে। তাই আমরা এই আলোচনতে কেবল ‘সংখ্যাতত্ত্বের’ মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকব। অনেকের মতে গণিতের এই শাখাটাই নাকি সবচেয়ে আকর্ষনীয়। হতেও পারে বা, তবে যেটা অনস্বীকার্য সেটা হল আমাদের জীবনে সংখ্যার অবদান। সেই বিষ্ময়কর সাদৃশ্য নিয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনাতে যাব।

মানুষ চিরকাল ধরে গণিত সমন্ধীয় দুটি অনন্ত জিজ্ঞাসা নিয়ে বসে আছে – গণিতের প্রকৃতি (Nature of Mathematics) আর গণিতের দর্শন (Philosophy of Mathematics)। বিজ্ঞানের যে কোন শাখার এবং তার সাথে গণিতেরও বিশেষ কোন প্রশ্নের উৎপত্তি জানতে হলে আমাদের সেই প্রাচীন যুগে ফিরে যেতেই হবে। এটা বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, যেই সভ্যতা যত উন্নতি করেছে তার মনে ছিল ততই অনুসন্ধিৎসা আর নতুন কিছু খুঁজে বার করার উদগ্র ইচ্ছা। গণিতের উন্নতিতে সেই রকমই প্রাচীন দুটি সভ্যতা ছিল মিশরীয় এবং ব্যাবিলনীয়। সংখ্যাতত্ত্বেই হোক আর জ্যামিতির কোন বিষয়েই হোক, এদের ভিত্তি এখনও অনেক সময় সেই হাজার হাজার বছর আগেই আবিষ্কৃত তত্ত্বের উপর নির্ভর করে। আর ঠিক এখানেই প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অবদানও কম নয়। আমার তো মাঝে মাঝে এখনও শূন্য লেখার সময় অবচেতন মনে গর্বিত হয়ে উঠি এই ভেবে যে এটা আমাদেরই দান! সে যাই হোন, আরও অনেক কিছু সাথে মানুষ জিজ্ঞাসা করে এসেছে যে – গণিত কি উদ্ভাবিত (invent) হয়েছিল নাকি মানুষ কেবল সংখ্যাগুলো আবিষ্কার (discover) করেছিল?

গণিতের উন্নতি কি মানুষের চিন্তাধারার উপর নির্ভর করেই না করেই হয়ে চলেছে? এর উত্তর হয়তো কোনদিনও সম্পূর্ণ ভাবে পাওয়া যাবে না। তবে কোন এক বিখ্যাত মনীষী সুন্দরভাবে বলেছিলেন, “তুমি একজন দার্শনিককে জিজ্ঞাসা কর যে ‘দর্শন’ কি? বা একজন ঐতিহাসিককে ‘ইতিহাস’ কি? এবং তুমি দেখবে যে, এর উত্তর দিতে তাদের কোন অসুবিধাই হচ্ছে না। এদের মধ্যে কেউই তার নিজের বিষয়ে এগোতে পারবে না যদি সে না জানে কিসের সন্ধানে সে ঘুরছে। এবার সেই একই প্রশ্ন কর একজন গণিতবিদকে, ‘গণিত’ কি? সে যদি সত্যিই সৎ উত্তর দেয় তাহলে দেখবে সে বলছে এই প্রশ্নের উত্তর সে জানে না, কিন্তু এই না জানা তাকে গণিত নিয়ে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে না। এর থেকে বড় কথা আর কি হতে পারে?”

আমি হয়তো অঙ্ক তত ভালো জানি না – কিন্তু তাতেও তো এই প্রবন্ধে অঙ্ক নিয়ে ধস্তাধস্তি আটকাচ্ছে না!

এটাতো আমরা সবাই জানি যে, লক্ষ্য ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না – অনন্ত তার জিজ্ঞাসা আর অনন্ত তার উৎসাহ। সেই কবে থেকেই আমরা চলেছি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে। আগে মানুষ প্রকৃতিকে ঈশ্বর বলে পূজা করেছে, তারপর যত দিন গেছে প্রকৃতির খেয়ালিপনার উত্তর খুঁজতে আমরা নিয়োজিত হয়েছি। প্রকৃতি কি সত্যই কোন সূত্র মেনে চলে? সেই প্রাচীনকাল থেকে আজকের Theory of Everything পর্যন্ত আমরা সেই চরম সত্যের সন্ধানে ব্যপৃত। আর সেই সন্ধানে আমাদের হাতিয়ার হল গণিত। খাতার উপর ছোট ছোট আঁকা আঁকি আমাদের বলে দেয় পদার্থের চরম কাঠামো, গ্রহতারার গতিপথ, এমন কি আমাদের দেহের গঠনও। এগুলো সবই ঘটনা আর তার কারণ হতে পারে, কিন্তু ব্যাখ্যা নয়। কেন মেনে চলবে গ্রহ-তারা, অণু-পরমাণু আমাদের গ্রথিত সূত্র? কেন পৃথিবী নাচবে গণিতের সাথে তাল দিয়ে? এগুলো কি কেবলই ঘটনার সমানুপাত, নাকি অন্য কোন গোপন যোগ সত্যি আছে এদের মধ্যে? বাস্তবের একটা অভ্যাসই হল মানুষের কল্পনার সাথে পাল্লা দেওয়া – আমরা যে পরিকল্পনা করেছি তার থেকে বিচ্যুত হওয়া। কিন্তু একমাত্র গণিতি মনে হয় সেই নিয়মের বিষ্ময়কর ব্যতিক্রম যা কিনা নিয়মটাকেই প্রমাণ করে। গণিতের সূত্র মেনেই চারশো বছর পর ধূমকেতু আবার দেখা যায় তার চিহ্নিত জায়গায়। তাহলে নিয়মটি কি? এই সব ভেবেই কি আমরা আজও এই প্রবাদ বাক্যটি ব্যবহার করি – Mathematics is the finest language in the world?

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন সংখ্যা-পাগল গোষ্ঠীর খোঁজ পাওয়া যায় গ্রীসে খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতাব্দীতে। আমরা আধুনিক দুগে কম্পিউটারের সামনে বসেও মাঝে মাঝে সংখ্যার আচরণে ঘাবড়ে যাই, তা হলে সেই প্রাচীনকালে লোকেরা সংখ্যা নিয়ে আদিখ্যেতা করবে এতে আর আশ্চর্য কি? গ্রীসের ঐ প্রাচীন গোষ্ঠীকে বলা হত পিথাগোরিয়ান। এরা সংখ্যার ব্যবহারে এতই চমৎকৃত ছিল যে জীবনের সবকিছুই এরা সংখ্যা দ্বারা চালিত বলে মনে করতে শুরু করে। এদের বিশ্বাস ছিল প্রত্যেক বস্তুই আদতে সংখ্যা এবং এই সব সংখ্যা হল বাস্তবের মূল ভিত্তি। সমস্ত জিনিসই নাকি সংখ্যার সাহায্যে বিশ্লেষণ করা যাবে, কিন্তু সংখ্যাকে আর অন্য কিছু দিয়ে বিশ্লেষণ করা যাবে না! এ সেই অনেকটা ভগবান বিশ্বাসের মত ব্যাপার। সব কিছুই ভগবানের সৃষ্টি – তাহলে ভগবানের সৃষ্টিকর্তা কে? এদের বিশ্বাস মত কেবলমাত্র কোন বিশেষ বস্তু গণিতের সূত্র মেনে চলে তা নয় – সমগ্র জগত, তাতে প্রত্যেক বস্তুই সংখ্যার দ্বারা চালিত। এ পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু এরা এরপর ‘ন্যায়বিচার’, ‘সুযোগ’ – এই সব অ্যাবস্ট্রাক্ট জিনিসও সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করে। এর পর বলাই বাহুল্য এদের পিথাগোরাস ভ্রাতৃসংঘ বেশীদূর এগোয় নি। যদি সত্যই সবকিছু সংখ্যা স্বারা নির্মিত হয়, তাহলে বাস্তবের সঠিক প্রকৃতি বোঝার জন্য আমাদের দরকার হবে সংখ্যাদের চর্চা, তাদের ধর্ম, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি। এগুলো হতেই পারে আমাদের দৈনন্দিন কাজের সাথে সম্পর্ক-বিবর্জিত, যাকে আজকাল Pure Mathematics বলা হয়। তবে পিথাগোরাস সংঘের মূল দূর্বলতা ছিল সংখ্যাদের জীবিত বস্তুর মত বিচার করা।

এর পর আসে Platonism – যে মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন প্লেটো। এর মূল ভিত্তি ছিল তাঁর বিশ্বাস যে, আমরা গণিতের তত্ত্ব আর সত্যতা কেবল খুঁজে বের করি মাত্র। সংখ্যারা আমাদের আবিষ্কার নয় – তারা আগে থেকেই বর্তমান, সেই কোন দ্বীপ আবিষ্কারের মত। এই সব দেখে শুনেই মনে হয় চার্লস ডারউইন মন্তব্য করেছিলেন, “গণিতজ্ঞ একজন অন্ধ ব্যক্তি মাত্র – যে অন্ধকার ঘরে একটি অস্তিত্ত্ববিহীন কালো বেড়াল খুঁজে বেড়াচ্ছে”।

তাহলে সংখ্যদের এমন কি বৈশিষ্ট যে প্রাচীনকাল থেকে মানুষ তার উপর এত আকর্ষণ বোধ করে আসছে? কিছু নমুনা দেওয়া যাক বিশ্লেষণ করে। আসুন একটা সংখ্যা শ্রেণী লিখে ফেলি,

[ক্রমশঃ]

1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, 34, 55, 89 …

চেনা চেনা লাগছে? এই শ্রেণীটিকে বলা হয় Fibonacci’s series। লিওনার্দো ফিবোনাচি এই শ্রেণীটি প্রথম আবিষ্কার করেন। এই শ্রেণীর একটা সংখ্যা পাওয়া যায় তার ঠিক আগের দুটিকে যোগ করে। যেমন, 1 + 1 = 2, 1 + 2 = 3, 3 + 5 = 8, 5 + 8 = 13 ইত্যাদি।

দেখতে এমনিতে সাদামাটা, কিন্তু মজা হচ্ছে কোন সংখ্যাকে তার আগেরটা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যাবেঃ

2/1=2.0, 3/2 = 1.5, 5/3=1.67, 8/5=1.6, 13/8=1.625, 21/13=1.615, 34/21=1.619, 55/34=1.618, 89/55=1.618

সংখ্যাদের মান যত বড় হবে, অনুপাত ততই এগিয়ে আসবে নির্দিষ্ট মানে – যেটা হল 1.618 । এই সংখ্যাটাকে বলা হয় Golden Ratio (স্বর্ণ অনুপাত)। এই সংখ্যা আমাদের জীবনে এবং চারপাশের জিনিসের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে এটাকে মনে করা হয় ভগমানের সৃষ্টি। গাণিতিক উপায়ে পাওয়া যেতে পারে একটা সরলরেখাকে ভাগ করে। একটা সরল রেখাকে বড় আর ছোট ভাগে ভাগ করা হল। ভাগটা এমন ভাবে হওয়া চাই যেন ছোট ভাগের সাথে বড় ভাগের অনুপাত, বড় ভাগের সাথে সম্পূর্ণ সরলরেখার ভাগের অনুপাতের সমান হয়, অর্থাৎ, a/b = (a+b)/a = 1.618 [দেখুন সাথের ছবি 1A]।

<[url=http://postimg.org/image/eib173x6x/][img]http://s28.postimg.org/eib173x6x/Golden_Ratio.jpg[/img][/url]>

<http://s28.postimg.org/6csz8y8y5/Golden_Ratio.jpg>

1.618 সংখ্যাটির মজা হচ্ছে এটি দিয়ে 1 কে ভাগ করলে পাওয়া যায় (1/1.618) = 0.618

প্রাচীন গ্রীসে এই সংখ্যার আকর্ষণ এতই বেশী ছিল যে স্থপতিরা এটি তাদের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করেন। সবচেয়ে বড় উদাহরন হল পার্থেনন। আমরা সবাই এর ধ্বংসাবশেষের ছবি দেখেছি [দেখুন সাথের ছবি 1B]। এখন যদি একটা কল্পিত আয়তক্ষেত্র আঁকা হয় এর সবচেয়ে বাঁ দিকের থাম বা পিলার থেকে ডানদিকের থাম এবং নীচ থেকে চূড়া পর্যন্ত, তাহলে দেখব সেই আয়তক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত প্রায় 1.618। এছাড়া পার্থেননের একদম সামনে কিছু আয়তক্ষেত্র দেখা যায় যাদের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাতও Golden Ratio –র কাছাকাছি।

শুধু স্থাপত্যশিল্প নয়, চিত্রকলাতেও এই অনুপাতের ব্যবহার অনেক। এমন শোনা যায় লিওনার্দো দা ভিঞ্জি নাকি এই ‘অনুপাত’ একান্তই ভালোবাসতেন। তার প্রমাণ পাওয়া যায় অবশ্য সেই বিখ্যাত ‘মোনালিসা’ ছবিতে। ছবিটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 1.618 [দেখুন সাথের ছবি 1C]। তাছাড়া যদি একটি আয়তক্ষেত্র আঁকা হয় মোনালিসার ঠিক মুখমণ্ডলে তবে তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত হবে সেই Golden Ratio। এছাড়া আরো অনেক বিখ্যাত ছবিতেও (যেমন লাষ্ট সাপার, দ্যা সেইন্ট) Golden Ratio ব্যবহার লক্ষণীয়।

এতো না হয় গেল মানুষের এই অনুপাত ব্যবহারের কথা। প্রকৃতিতেও Golden Ratio এত জায়গাতে চোখে পড়ে যে, মাঝে মাঝে সত্যই ভাবতে ইচ্ছে করে ভগবান একজন গণিতজ্ঞ! Golden Ratio মনে হয় প্রকৃতিরও ভালোবাসার সংখ্যা। আর এটাও ঠিক যে, যে সমস্ত আকার Golden Ratio মেনে চলে – সেগুলি বেশ নয়ন সুখকর হয়। কেন? আমি জানি না – হয়ত বা কেউই না!

শামুক, শাঁখ দেখেছেন তো? শাঁখের পেঁচানো আকৃতি তো দেখতে বেশ লাগে। আসুন দেখি যে Fibonacchi series থেকে কি করে এমন আকার আসতে পারে। প্রথমে একক দৈর্ঘ্যের একটি বর্গক্ষেত্র আঁকুন। তারপাশে আরেকটা। তাহলে পাশাপাশি দুটি বর্গক্ষেত্রে মোট দৈর্ঘ হল দুই একক। আবার দুই একক বাহু বিশিষ্ট একটি বর্গক্ষেত্র আঁকুন ঠিক ওদের উপর। তাহলে এখন একটি নতুন বর্গক্ষেত্র হল যার বাহুর দৈর্ঘ্য হল তিন একক। এই ভাবেই এঁকে যান। এবার সাথের ছবি 1D এর মতন কোন গুলি পরস্পর যোগ করুন। কি পাচ্ছেন? একটা শাঁখের আদল না?

আমরা তো পাইন গাছের ফুল দেখেছি (Pine Cone), কেমন সব চক্রাকারে সাজানো থাকে। যদি একটি বিশেষ চক্র (spiral) ধরে গুণতে থাকেন, তাহলে দেখবেন ওরা সংখ্যায় 21, 34, 55 ইত্যাদি – আশ্চর্য্য না? শুধু তাই না – যদি মাছ, ফড়িং, কচ্ছপ, পাখী এদের চারিদিকে একটি আয়তক্ষেত্রে আঁকেন, তাহলে অনেকক্ষেত্রে দেখা যাবে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত 1.618, অর্থাৎ জীবজগতের অনেক প্রাণীর আকারই Golden Ratio অনুযায়ী!
মানুষের এক প্রিয় সহচর ঘোড়া – তার শরীরে তো Golden Ratio-র ছড়াছড়ি।

অন্য অনেক প্রাণির মত মানুষের দেহেও Golden Ratio-র ছাপ রয়ে গেছে। সাথের ছবি 1E থেকে বোঝা যায় আমরা কতখানি সংখ্যার দ্বারা চালিত। কিছু কিছু হলিউডের তারকাকে (বা তাদের মুখের) বিশ্লেষণ করে Perfect Face বলা হয়ে থাকে। সেই Perfect Face-এও স্বর্ণ অনুপাত। মুখের লম্বা ও চওড়ার অনুপাত বিষ্ময়কর ভাবে Golden Ratio মেনে চলে।

কত উদাহরণ দেব? কত সোসাইটি তৈরী হয়েছে যারা এই Golden Ratio-র উপস্থিতি খুঁজে বেড়াচ্ছে আমাদের চারিদিকে এবং আমাদের মধ্যে। যাঁরা এই বিষয়ে বিশদ জানতে ইচ্ছুক তাঁরা কেবল google.com এ গিয়ে Golden Ratio কথাটি টাইপ করে দেখবেন। তথ্যের ঠেলায় অস্থির হয়ে উঠবেন। তবে আন্তরিক পরামর্শ দেব যে, বেশী ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না – ভগবানে বিশ্বাসী না হলে এরপর থেকে বিশ্বাসী হতে শুরু করবেন। আমাদের চারপাশ ঠিক ছিল, কিন্তু আমাদের ভিতর নিয়ে টানাটানি করে তাঁরা কি বের করেছেন তার কিছু উদাহরন দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমাদের কান টেনে দেখানো হয়েছে কানের স্পাইরালটা Fibonacci series থেকে পাওয়া। DNA-এর প্রস্থচ্ছেদ করেছেন – তাতে নাকি Golden Ratio! তবে হৃদয়ের যে ধাক্কাটি সামলাতে পারি নি, সেটা হল Heart Beat এর বিশ্লেষণ! এতেও Golden Ratio [দেখুন সাথের ছবি 1F]। । এঁরা বনে জঙ্গলে তছনছ করে Golden Ratio-র প্রয়োগ খুঁজছেন। হাতের কাছে সূর্যমুখীর spiraling গুণে গুণে দেখিয়েছেন তাতে হয় 34 নয় 55 টা spiral আছে। বাকি কিছু উদাহরন,

৩ পাপড়ি যুক্তঃ লিলি, আইরিস
৫ পাপড়ি যুক্তঃ বাটারকাপ, ওয়াইল্ড রোজ, লার্কস্পার
৮ পাপড়ি যুক্তঃ ডেল্‌ফিরিয়ামাস
১৩ পাপড়ি যুক্তঃ কর্ণ মেরিগোল্ড, সিনেরারিয়া, রোগওয়ার্ট
২১ পাপড়ি যুক্তঃ ব্ল্যাক-আইড সুজান, অ্যাষ্টার
৩৪ পাপড়ি যুক্তঃ প্ল্যান্টেইন, পাইরেথ্রাম

এদের বেশীর ভাগই আমি চোখে দেখি নি, আপনিও না দেখে থাকলে ঘাবড়াবার কিছু নেই, তবে এরা সত্যিই আছে। ছবি দেখতে চাইলে চলে যানঃ

http://www.math.smith.edu/~phyllo/Gallery/Pages/Frameset.htm

সংখ্যা নিয়ে আলোচনায় আবার পরে ফিরে আসা যাবে – এবার একটু মুখ ফেরানো যাক গণিতবিদদের দিকে। এই স্বল্প পরিসরে কারও জীবনী বর্ণনা করা যাবে না আর সেটাই ইচ্ছেও নেই আমার। তাই আসুন কিছু গালগল্প করে সময় কাটানো যাক। এই ইন্টারনেট প্রসারের সাথে সাথে মানুষের একটা প্রবণতা চলে এসেছে ভোটাভুটি করার। কম সময়ে বেশী লোকের কাছে পৌঁছবার কুফল আর কি! সব বিষয়েই ভোট – শতাব্দীর সেরা অভিনেতা, সেরা খেলোয়াড়, সেরা মণীষী, সেরা সব কিছু বেছে নেবার প্রতিযোগীতা। তাই সেরা গণিতজ্ঞ বিষয়টাই বা বাদ থাকে কেন! কিছু কাল আগে নাকি এই রকম একটা ভোটাভুটি হয়েছিল সর্বকালের সেরা তিন গণিতজ্ঞ বেছে নেবার জন্য। এক বাছাটা বেশ বিতর্কিত হয়ে যেত বলেই মনে হয় এই তিনজন বেছে নেওয়া হয়। অনুপান করতে পারেন এই তিনজন কারা হতে পারেন?

সবচেয়ে আশ্চর্য হল এই বেছে নেওয়া নিয়ে বেশী বিতর্ক হয় নি – মানে সিদ্ধান্তটা সর্বসম্মতই বলা যায় আর কি! প্রথম দুজনের নাম অনুমান করা খুব একটা কঠিন নয়। প্রথম জন আর্কিমিডিস (২৮৭ খ্রীঃ পূঃ – ২১২ খ্রীঃ পূঃ), দ্বিতীয় জন নিউটন (১৬৪২-১৭২৭) আর তৃতীয় জন হলেন গাউস বা গস্‌ (১৭৭৭-১৮৫৫)। প্রথম দুজনকে আমরা প্রায় সবাই ছেলেবেলা থেকে নাড়াচাড়া করে আসছি। একদম ছোটবেলায় তাদের গল্প আর তার পরে তাদের আবিষ্কৃত সূত্র নিয়ে আমরা কিছু না কিছু মাথা ঘামিয়েছিলাম। তৃতীয়জন হয়ত তেমন পরিচিত নন আপমর জনসধারণের কাছে। আর্কিমিডিস আর নিউটন নিয়ে নতুন করে বলবার মত গল্প আমার কাছে নেই। তাই গস্‌কে নিয়েই একটু ফেনানো যাক। ও হ্যাঁ, শুধ একটা কথা – বই পত্র পড়ে যা জানা গেছে তাতে করে এই প্রমাণিত হয় আমাদের মনের ভিতর আঁকা গণিতবিদের ছবিটা নিউটনের সাথে ঠিক খাপ খায় না! নিউটন আপন ভোলা ছিলেন না, ছিলেন না অগোছালো। বরং তিনি ছিলেন এর ঠিক উলটো! নিজের কাজ সম্পর্কে অনেক সচেতন ছিলেন তিনি। আর তাঁর গোছালো স্বাভাবের জন্য আখেরে আমাদের লাভই হয়েছে! গোছালো না হলে কেউ কি ‘প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা’র প্রথম পান্ডুলিপি দূর্ঘটনা বশতঃ আগুনে পুড়ে গেলে, আবার নতুন করে পুরোটা লেখেন!

কার্ল ফ্রেডরিক গস্‌ জন্মগ্রহন করেন ১৭৭৭ সাথে এক দরিদ্র পরিবারে। এক কথা প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে যাঁরা পরবর্তী জীবনে অসাধারণ হবেন তাঁরা নাকি ছেলেবেলা থেকেই তার নিদর্শন দিতে শুরু করেন। গস্‌ও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি নাকি মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবার হিসাবের ভুল ধরেছিলেন। তবে সবচেয়ে মজার গল্পটা হল গসের যখন ছয়-সাত বছর বয়স তখন স্কুলের ক্লাসে খুব বদমাইশি করেছিলেন। মাষ্টার মশাই বিরক্ত হয়ে বলেন সব ছেলে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত যোগফল বার করার পর আবার খেলতে যেতে পারবে। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে এই কঠিন অঙ্ক ঐ বাচ্চাদের অনেকক্ষণ ব্যস্ত রাখবে। তাঁকে অবাক করে দিয়ে গস্‌কে খানিক পরেই মাঠে খেলা করতে দেখা যায়। মাষ্টার মশাই জানতে চান গস্‌ যোগ করেছিলান কিনা? দ্রুত জবাব আসে গসের কাছ থেকে যোগফল হল ৫০৫০। বিষ্মিত হয়ে তখন মাষ্টার মশাই জানতে চান এত তাড়াতাড়ি গস্‌ এটা করলেন কিভাবে! গস্‌ নাকি এটা খুবই সোজা ভেবেছিলেন। তিনি যোগ করেছিলেন এই ভাবে –

[ক্রমশঃ]

[url=http://postimg.org/image/eib173x6x/][img=http://s28.postimg.org/eib173x6x/Golden_Ratio.jpg][/url]

http://s28.postimg.org/6csz8y8y5/Golden_Ratio.jpg


প্রথম একটি লাইন ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত লিখে, তারপর ঠিক তলায় ১০০ থেকে ০ পর্যন্ত লিখেছিলেন।

০ ১ ২ --- ৯৮ ৯৯ ১০০
১০০ ৯৯ ৯৮ --- ২ ১ ০

এখন প্রতিটি কলামের যোগফল হচ্ছে ১০০। তাহলে ১০১ টি কলামের মোট ১০১*১০০, আর প্রতিটি কলাম পুনরাবৃত্ত হয়েছে, অতএব ২ দিয়ে ভাগ। এই ভাবে মোট যোগফল (১০১*১০০)/২ = ৫০৫০ – খুবই সহজ!

রহস্যময় আচরণে কিন্তু গস্‌ গণিতজ্ঞ হবার সব শর্তই পূর্ণ করেছিলান। তাঁর মৃত্যুর ৪৩ বছর পর একটি ডায়েরী উদ্ধার করা হয় তাঁর নাতির কাছ থেকে। এই ডায়েরীতে ১৪৬ টি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য লেখা ছিল যেগুলি গস্‌ জীবিত অবস্থায় কোনদিন প্রকাশ করেন নি। পরে দেখা গেছে বিংশ শতাব্দীর অনেক বড় বড় গাণিতিক তত্ত্বই নাকি এই ডায়েরীর সাথে কোন না কোন ভাবে যুক্ত। ডায়েরী প্রকাশ না করে তবে কি গণিতের অগ্রগতি কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছিলেন গস্‌? তাঁর বিস্তৃত অবদান লেখা এখানে সম্ভব নয় লেখা, হয়ত আরো অনেক বছর লাগবে গস্‌কে পরিপূর্ণ ভাবে জানতে। সব ভেবে দেখেই বোধ হয় এই প্রতিভাবানকে Prince of Mathematician বলা হয়ে থাকে। গণিতের অন্য শাখার মত সংখ্যাতত্ত্বেও গস্‌ এর অবদান অবিষ্মরণীয়।

এবার তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে বিজ্ঞানের অন্য শাখায় না হয় কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ নোবেল পুরস্কার আছে, গণিতের বেলায় তেমন কিছু চালু আছে কি? ছোটবেলায় আমরা সবাই জানতাম নোবেল প্রাইজের তালিকায় গণিত বিষয়টি নেই। একটু বড় হবার পড় জানতে ইচ্ছে করত কেন নেই! অনেক গল্প চালু আছে এই নিয়ে। সেগুলির সংক্ষিপ্ত সার হলঃ

• আলফ্রেড নোবেল নাকি গণিত বা Theoretical Science নিয়ে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন না।
• নোবেল পুরস্কার কেবল মাত্র সেই সব আবিষ্কারকেই যাদের সঙ্গে মনুষ্য সভ্যতার Practical যোগ আছে।
• আলফ্রেড নোবেল নাকি প্রেমে ব্যর্থ হয়ে গণিতের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলান। তিনি যাকে ভালোবাসতেন সেই মেয়েটি নাকি একজন গণিতবিদকে বিবাহ করে। তাই নোবেল গণিতকে পুরষ্কারের তালিকার বাইরে রেখেছিলেন।

এই সবের সত্য মিথ্যা হয়তো কোন দিনই যাচাই করা যাবে না, তবে লোকপ্রবাদের পাল্লায় তৃতীয় কারণটাই ভারী!

আর একটু বড় হয়ে জানতে পরেছিলাম যে গণিত শাখায় নোবেল পুরস্কারের সমতূল্য হচ্ছে Field Medal যেটা International Mathematical Union -এর পক্ষ থেকে প্রতি চার বছর অন্তর এক বা একাধিক গণিতজ্ঞকে দেওয়া হয় তাঁদের কৃতিত্বের জন্য।
এছাড়াও অনেক পুরস্কার চালু আছে যেগুলি পাওয়া যেতে পারে কোন একটি বিশেষ সমস্যা সমাধানের জন্য। যাঁরা উৎসাহি তাঁরা এই ওয়েবসাইটে খোঁজ নিতে পারেনঃ

www.claymath.org/millennium-problems

এখানে একটি পুরস্কারের তালিকা আছে যেটিকে বলা হয় Clay Institute Millennium Prize Problems. সমস্যাগুলির মধ্যে Riemann Hypothesis –ও আছে। এটি বর্তমান আধুনিক সভ্যতার একটি বিশেষ অঙ্গ কম্পিউটার এর সাথে যোগ রাখে বলে এটিকে নিয়ে আমরা ঈষৎ নাড়াচাড়া করব। কিছু বছর আগে পর্যন্ত যে তিনটি সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ব্যক্তি মাথা ঘামিয়েছেন, সেগুলি হল Fermat’s Last Theorem, Riemann Hypothesis আর Goldbach Conjecture। এর মধ্যে Fermat’s Theorem কিছু বছর আগে প্রমাণ করেছেন অ্যান্ড্রু ওয়াইল্‌স। তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য পেয়েছেন Wolfskehl Prize – যার পুরস্কার মূল্য ১০০,০০০ জার্মান মার্ক। অনেকেই জানেন Fermat Last Theorem কি – এই নিয়ে প্রচুর লেখালিখি হয়েছে, কিন্তু যাঁরা ভুলে গেছেন তাঁদের একটু মনে করিয়ে দেওয়া যাক। দেখতে কিন্তু এই সমস্যাটি নিতান্তই সরল। Fermat –কে বলা হত Prince of Amateurs, কারণ তিনি ছিলেন আদতে একজন ফরাসী আইনজ্ঞ, যিনি আবসর সময়ে অঙ্ক করতেন। যাইহোক সমস্যাটি হলঃ
Xn + Yn = Zn, যেখানে X, Y, Z, n সবই ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা। n-এর মান 2-এর থেকে বড় হলে (n>2) এর নাকি কোন সমাধান নেই বা উল্টোভাবে বলতে গেলে n>2 হলে X, Y, Z – এর পারস্পরিক সম্পর্কটি সত্যি নয়!

দেখতে প্রচন্ড সরল। কিন্তু এটাই আমাদের ৩০০ বছরের বেশী সময় ব্যস্ত রেখেছিল। সবাই ভেবেছিল এটার প্রমাণ খুবই সহজ আর তার কারণ ছিল Fermatএর নিজের একটি উক্তি। তাঁর বইয়ের মার্জিনে তিনি লিখে রেখেছিলেন এর একটি চমৎকার সমাধান তিনি পেয়েছেন, কিন্তু জায়গার অভাবে তিনি লিখতে পারছেন না। তাই এই ছোট্ট সমস্যাটি সমাধান করতে ওয়াইলস্‌ নিয়েছিলেন প্রথমবার ১৭০-১৮০ পাতা, আর একবার সংশোধনের পর সেটা দাঁড়িয়েছিল ২০০-এর কাছাকাছি।

তবে এই পুরস্কার হাতছাড়া হয়েছে বলে আপনি হতাশ হবেন না। কারন হাতের কাছেই রয়েছে Goldbach Conjecture। এর সমাধান করতে পারলে $ 1,000,000 আসবে আপনার পকেটে – আর তাছাড়া এটা দেখতেও বেশ সহজ। আপনাকে শুধু প্রমাণ করতে হবে, যে কোন জোড় পূর্ণ সংখ্যা (Even Integer) – কে দুটি মৌলিক সংখ্যার (Prime Number) যোগফল হিসাবে লেখা যায়। যেমন,

৪ = ২ + ২
৬ = ৩ + ৩
৫০ = ৩১ + ১৯
১২০ = ৭৯ + ৪১

লেগে পড়ুন – শুধু মনে রাখবেন ১৯৯৮ সালে কম্পিউটারের সাহায্যে দেখানো গেছে সম্পর্কটি ৪০০,০০০,০০০,০০০,০০০ পর্যন্ত সত্যি!

এবার ছোট্ট করে Riemann Hypothesis-এর আলোচনাটি সেরে ফেলা যাক। এটা অপেক্ষাকৃত জটিল। যাঁরা আরো জানতে ইচ্ছুক এর সম্পর্কে তাঁদের জানাই প্রচুর বই পাওয়া যায় – শুধু লাইব্রেরী যাবার অপেখা। না যেতে চাইলে সেই www.google.com এর আশ্রয় নিতে পারেন। আর যাঁরা বাংলায় পড়তে চান তাঁদের জানাই কিছু বছর আগে পুজো বার্ষীকি দেশ পত্রিকায় পথিক গুহ-র লেখা “সুন্দরী, সুধাপাত্র ও অমরত্ব” – এর এই নিয়ে খুব সুন্দর আলোচনা আছে।

মৌলিক সংখ্যার আচরণ আমাদের দীর্ঘদিন বিষ্মিত করেছে। এদের আচরণ কি সত্যি অসংলগ্ন – নাকি এরাও মেনে চলে শৃঙ্খলা! অনেকেই চেষ্টা করেছেন এমন কোন সূত্র আবিষ্কার করতে যা দিয়ে মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস করা যায়! গস্‌ নিজেও চেষ্টা করেছিলেন। এমন কোন সূত্র পাওয়া যাবে কি যা দিয়ে আমরা মৌলিক সংখ্যা গঠন করতে পারব যত বড় ইচ্ছা? কিংবা বলতে পারব দুটি নির্দিষ্ট সংখ্যার মধ্যে কতগুলি মৌলিক সংখ্যা থাকতে পারে? তা নিয়ে রিম্যান এমন একটা সূত্রের প্রস্তাবনা করেছিলেন যা দিয়ে নাকি মৌলিক সংখ্যার আচরণ খুব ঘনিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। সেই Function কে বলা হয় Riemann Zeta Function। এটা প্রমান করা গেলে নাকি সংখ্যাদের তুঘলকি আচরন সব ঠান্ডা করে দেওয়া যাবে।

তা রিম্যান হাইপোথিসিস নিয়ে এত হৈ চৈ করার কি আছে? আসলে Prime Number আর Cryptography পরস্পর নির্ভরশীন। Cryptography নামটা চেনা চেনা লাগছে? এটা আর কিছুই নয়, এটা একটি পদ্ধতি যা দিয়ে গোপনীইয় তথ্যের আদান প্রদান করা হয়। এবং শুধু মাত্র তথ্যের প্রপাকই তার উদ্ধার করতে পারবেন। অর্থাৎ বাকিদের কাছে এটা থাকবে লুকানো। এই যে আমরা ইন্টারনেট-এ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করি তার সুরক্ষাও নির্ভর করে মৌলিক সংখ্যার উপর। ১৯৭৭ সালে তিনজন ছাত্র Ron Rivest, Adi Shamir, আর Leonard Adleman এই ইন্টারনেট সুরক্ষার জন্য Algorithm আবিষ্কার করেছিলেন। এই পদ্ধতিতে দুটি বৃহৎ মোউলিক সংখ্যাকে গুণ করে একটা সংখ্যা পাওয়া যায়, যাকে বলা হয় চাবি (Key)। এই বড় সংখ্যাটাই আমরা ইন্টারনেটে আদানপ্রদান করি। আর এই মৌলিক সংখ্যাগুলি আপনার ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোন তথ্যের সংকেত বহন করে। তাহলে বুঝতে পারছেন পুরো বিষয়টির সুরক্ষা নির্ভর করে কত সহজে ঐ বড় সংখ্যাটিকে (Key) উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে। যত বড় সংখ্যা হবে, তার উৎপাদক বিশ্লেষণ হবে তত কঠিন, অর্থাৎ আপনি তত সুরক্ষিত! তবে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে, যে দুটি মৌলিক সংখ্যা আমরা প্রথমে গুণ করেছিলেন তারা আদৌ মৌলিক কিনা! কি ভাবে পরীক্ষা করব না? আমাদের গর্বের বিষয় যে ভারতের Indian Institute of Technology, Kanpur এর প্রফেসর আগরওয়াল এবং তাঁর ছাত্র নীরজ আর নীতিন এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যা দিয়ে কোন সংখ্যা মৌলিক কিনা যাচাই করা যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন এই পদ্ধতিতে মৌলিক সংখ্যা তৈরী করা যাবে না কিন্তু!

আর বেশী লিখতে পারছি না – তাই এবার আমাদের বাস্তব জীবনে গণিতের বিষ্ময়কর ব্যবহারের উদাহরন দিয়ে লেখা শেষ করব ভাবছি। যাঁরা বিশদে জানতে চান তাঁরা এখানে খোঁজ করতে পারেন - সত্যই অসাধারনঃ

www.ams.org/mathmoments

ধরুণ আপনি যখন বাজার করেন, তখন কোন দ্রব্যের দাম লেখা থাকে তার উপর কয়েকটি সাংকেতিক দাঁড়ির (Bar Code) সাহায্যে এখানে ব্যবহার করা হয় Modular Arithmatic। তারপর এই যে চোখ স্ক্যান করে ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার সময়েও এই গণিত। Probability Theory – র সফল প্রয়োগ। আবার ভাবুন সেই Travelling Sales এর সমস্যাটির কথা। মনে করুন আপনি কতগুলি বিশেষ শহর ভ্রমন করতে চান পৃথিবী জুড়ে। তাহলে কিভাবে ভ্রমন করলে আপনি সব শহরগুলিতেই একবার করে যাবেন, কিন্তু সবচেয়ে কম দূরত্ব অতিক্রম করবেন। সেখানেও গণিত। মানচিত্রে কত রঙের বাহার দেখি আমরা – এক দেশের এক রঙ। তাহলে কতগুলি বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করলে পাশাপাশি দুটি দেশ কখনো এক রঙের হবে না। আমরা যে কাগজ দিয়ে নানা জিনিস বানাই খেলার ছলে (Origami) সেখানেও জ্যামিতিক ভাঁজের খেলা। মহাকাশে বিশাল আয়তনের টেলিস্কোপ পাঠানোর সময় কিভাবে সবচেয়ে ছোট আয়তনে ভাঁজ করা যাবে – উদাহরন দিয়ে শেষ করা যাবে না।

তবে শেষ করা যেতেই পারে এক বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি দিয়ে। কার উক্তি আমি বলব না – এটা আপনার গুগুলের সাহায্য না নিয়ে কার হতে পারে সেটা ভাবুন – কে বা কারা করতে পারে এমন উক্তিঃ

Poets do not go mad, but chess players do; mathematicians go mad, and cashiers; but creative artists very seldom. I am not, as will be seen, in any sense attacking logic; I only say that this anger lie in logic, not in imagination.
সংখ্যা নিয়ে খেলা করলেই কি গণিতবিদ হওয়া যায়? আমরা সবাই তো সংখ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া করি, তাহলে আমরা সবাই কি গণিতজ্ঞ? তা আমি বলতে পারব না, তবে আপনি নিশ্চয় গণিতজ্ঞ যদিঃ

• পাই-এর (Pi) মান পঞ্চাশ দশমিক স্থান পর্যন্ত আপনার মুখস্থা থাকে
• আপনি কোন না কোন সময় Fermat’s Theorem প্রমাণের চেষ্টা করে থাকেন
• আপনি অন্ততঃ দশ রকম ভাবে পিথাগোরাসের উপপাদ্য প্রমাণ করতে জানেন
• আপনার টেলিফোন নম্বর দুটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল
• যদি আপনার স্ত্রীকে আপনি কোন ঘনিষ্ট মুহুর্তে বলেন যে তাঁর চুলগুলি সোজা এবং পরস্পর সমান্তরাম
• গাড়ি কিনতে গিয়ে যদি বিক্রেতাকে বলেন, আমি লাল গাড়িটা অথবা নীল গাড়িটা নেব। এবং তার সাথে যোগ করেন, তবে দুটো গাড়ি একসাথে নয়!

তথ্যসূত্রঃ
1. Men of Mathematics – E.T. Bell
2. Of Men and Numbers: The Story of the Great Mathematicians – Jane Muir
3. Fermat’s Last Theorem – Amir Aczel
4. On the Shoulder of Giants – Stephen Hawking
5. The Emperor’s New Mind – Roger Penrose
6. Pi in the Sky – John D Barrow
7. The Last Problem – E.T. Bell
8. Mathematical Scandals
9. পথিক গুহর লেখা আনন্দবাজার ও দেশে প্রকাশিত প্রবন্ধ সকল।

 [লেখাটি সুকান্ত ঘোষের কাছ থেকে ধার করা]